ক্যাডেট লাইফ এবং স্মৃতিগুলো….

মাঝে মাঝে যখন কোন কাজ থাকে না, চুপচাপ বসে থাকি, তখন অতীতের স্মৃতিগুলো এসে একে একে আমাকে ভাবিয়ে তোলে। হ্যাঁ, সেই অতীত যা আমার আত্মার সাথে মিশে আছে। সেই অতীত যেখানে মিশে আছে আমার লাইফের বেস্ট অধ্যায়গুলো। সেই ক্লাস সেভেন এর কান্নাকাটি, এইটে নতুন আসা স্যারকে সাউন্ড দেওয়া কিংবা জুনিয়রকে পানিশমেন্ট দিয়ে ধরা খাওয়া, নাইনে দোতলার লিডার হওয়া, টেন এ ইডি তে গরম পিচে ক্রলিং করে চামড়া উঠানো, ইলেভেন এর এক হাত পকেটে ঢুকায়ে জুনিয়রদের উপর হম্বিতম্বি করা, টুয়েলভের শকস, ভেস্ট না পড়ে ঘুরে বেড়ানো এবং আরো অনেক না ভোলা স্মৃতি সম্ভার।

আসলে বলে হয়তো শেষ করা যাবে না। কলেজে এমন কিছু নেই যা করিনি। কতো অন্যায় করে ধরা খেলাম, কতো আজিব ধরনের শাস্তির সাথে পরিচিত হলাম। পরিচিত হয়েছিলাম স্টাফদের অদ্ভুতুড়ে গালাগালির ,স্যারদের ইউনিক মুদ্রাদোষগুলোর। আজ কলেজকে এখন খুবই মিস করছি। খুব মনে পড়ছে সেই এক্স ক্যাডেট ভাইগুলোর কথা যারা বলতেন, তারা কলেজের ইট বালিকেও মিস করেন। আর তা শুনে ভাবতাম কবে সেই “কারাগার” থেকে মুক্তি পাবো! হাহাহা! আর আজ মুক্ত হয়েও সেই কারাগারে ফিরে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু তা আর সম্ভব নাহ….

কলেজ থেকে বের হওয়ার দিনটাতে মনে হচ্ছিল ভ্যাকেশনে যাচ্ছি। শুধু পার্থক্য এই ছিল যে ২৫০ জোড়া চোখ ছিল অশ্রুসজল, সব কঠিন কঠিন স্যারের চোখও টলমলে। আর সব থেকে অবাক কাণ্ড আমরা যারা সাংঘাতিক মাইর খেয়েও কাঁদতাম না, তারাই বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিলাম। যাই হোক, কলেজ থেকে বের হলাম। তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না যে চিরদিনের জন্যে ছেড়ে এসেছি কলেজকে। মনে হচ্ছিল যেন ভ্যাকেশনে আসলাম, কিছুতেই কান্নাটা আটকাতে পারছিলাম নাহ….

বাইরের দুনিয়ার সবথেকে বড় ধাক্কাটা খাই সকালের নাস্তা খেতে যেয়ে। বুঝলাম মেস লাইফ খুব একটা সুখের যাবে নাহ (বলা বাহুল্য কোচিং করতে ঢাকায় এসেছিলাম)। খুব ইচ্ছা করছিল সেই ৮ নং ডাইনিং টেবিলে বসতে। নজরুল ভাই, মানিক ভাইদের ঝাড়ি দিয়ে এক্সট্রা পরাটা আদায় করতে 🙁 । কিংবা হাই টেবিলের দয়াল ব্যক্তিগুলোকে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি দেওয়া :p। তা যাই হোক, মেসের খাবার বেশী দেরি করেনি, ঠিক এক সপ্তাহের মাখায় ডাইরিয়াতে শয্যাশায়ী হলাম :p অতঃপর ….

কলেজে বৃহস্পতিবার মানে ছিল ফুর্তি ডে। হাফ ফ্রি ডে সাথে ইম্প্রুভড ডিনার, আর মুভি আওয়ার তো ছিলই । সেইসাথে পরদিন ইচ্ছামতো ঘুমানোর আনন্দে সারারাত জেগে থাকা। এখনো বৃহস্পতিবার আসলে বুকের কোথায় জানি হাহাকার করে উঠে। কমনরুমটার চিত্র মাথায় চলে আসে। এখন আর সেখানে রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে পারবো নাহ। মুভি আওয়ারে একটু পর পর ইমরানের চিৎকার শুনা যাবে না, শোনা যাবে না সাজ্জাদের বিখ্যাত ফানগুলা, শামীমের চিৎকারগুলা, হামিদের জুনিয়রদের কে দেওয়া কমনরুম কাঁপানো শাউট, জিত দাদার “মেটাল”গুলা, রাগীবের ভয়েস নকল করা! বিলিভ মি গাইজ চোখে পানি এসে যায়….

এমনি আরো অনেক স্মৃতিরা প্রতিদিন ই ঘুরে ফিরে কষ্ট দিয়ে যায়। হতে পারে তা রাতের বেলা স্লিপিং শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট না পরতে পারার দুঃখের মতো ক্ষুদ্র বিষয় কিংবা গভীর রাত্রে জুনিয়রদের ভয় দেখানো। কিছু কিছু হয়তো কাঁদায়, কিছু কিছু হাসায়। তবে সব ই আমাদের মনে করিয়ে দেয় ওই ৬টি বছর কী ছিল এবং আজীবন আমাদের জীবনে কী হয়ে থাকবে….

১,৪৯৫ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “ক্যাডেট লাইফ এবং স্মৃতিগুলো….”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।