আমাদের বাপ ও বেটারা

আমাদের ব্যাচে তিনজন স্যারের পোলা ছিল। তাদের মধ্যে ২জন স্যার আবার আমাদের ২ফর্মের ফর্ম মাস্টার ছিল। এই সুযোগটা কলেজ লাইফে আমরা বহু কাজে লাগিয়েছি। যে কোন আবদার (অন্য কথায় অন্যায় আবদার যাকে বলে ) করলে আমাদের স্যাররা তা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের ব্যাচকে যদি কোন সিনিয়র বেশী পাংগাইছে তো তার খবর হইয়া গেছে…ইত্যাদি,ইত্যাদি,

যা হোক দুই ফর্মমাস্টার আবার বিপরীতধর্মী, একজনকে কিছু বললে, ডাইরেক্ট এ্যাকশন নিতেন আর অন্যজনকে কিচ্ছু বললে, সে বলতো: “মেনে নাও,মেনে নাও”। আমরাতো আর মেনে নেবার পাত্র ছিলাম না…তাই সরাসরি দুই ফর্মের পোলাপানের সকল আর্জি ছিল ডাইরেক্ট এ্যাকশন স্যারের কাছে।আর একজন ছিলেন আমার হাউসের হাউস টিউটর অংকের স্যার। যাহোক এইতো ছিল আমাদের সুবিধা আর ওদের(৩জন)টা কি? তাতো আপনারা কমবেশী বুঝতেই পারছেন?

এবার আসি আমার ব্যক্তিগত দুইটা সুবিধা(!) গ্রহনের কাহিনী……তাদের দ্বারা!

১. ক্লাশ নাইনে ফর্ম change হবার পর,আমি “বি” ফর্মে এসে পড়লাম,সাথে ছিল আর্টস নেয়া পার্টি ও বিজ্ঞানের মানবিক পার্টি (যাদের জীববিজ্ঞান নাই) । এই ফর্মে সকল স্যারের পোলারা এসে পড়ল।আর ফর্মমাস্টার “মেনে নেও” স্যার। তার পোলা আমার পাশের ডেস্কে বসত, আর পরীক্ষা সময় স্যার যেদিন গার্ড থাকতো সেদিন ছিল আমার পোয়াবার…পুরা ডেস্ক খুলে Full Exam.. তবে কন্ডিশন একটাই..প্রথমে তার পোলা ডেস্ক খুলতো তার পর আমি বা আমরা…..যাহোক এই পদ্ধতিতে বেশ যাচ্ছিল…আমার।
বিপত্তিটা ঘটে ক্লাশ ইলেভেনের ১ম র্টামে। আমরা স্টাফরুম থেকে আগে স্যারদের ডিউটি লিস্ট পেয়েছিলাম। পদার্থ পরীক্ষার দিন ছিল আমার কাংখিত ফর্মমাস্টাররে দিন। একেতো নতুন ইলেভেন তার পর এই গার্ড..এই খুশিতে পড়ালেখা টোটালি বন্ধ করে দিলাম।যা হোক পরীক্ষার দিন এলো, আমরা পরীক্ষা দিতে বসলাম প্রশ্ন দেখেতো আমার চোখছানা বড়া। স্যার প্রত্যেকটা প্রশ্নে আবার ৩টা করে “অথবা”। কিন্তু হায় কপাল আমি ১টা প্রশ্নের ফুলসেটের উত্তর আমার জানা নেই।কোন টার “ক”,কোন টার “খ” আবার কোনটার “গ”.। আবার ১টা মাত্র পাক্ষিক হয়েছে তাতে পাইছি মাত্র ২, সুতরাং গড় ২। পাশ করতে লাগবে ৩১। ভরসা একমাত্র ডেস্ক আর সাহস জোগাচেছ গার্ড ফর্মমাস্টার। যাহোক, ডেস্ক খুল্লাম এদিক সেদিন আর না তাকিয়ে…হঠাৎ দেখি সামনে স্যার। আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে একটা উদ্দেশ্যমূলক হাসি দিলাম, যার অর্থ এই দাড়ায়” স্যার, এটা আবার নতুন কি?”
স্যার আমার দিকে হাসি দিয়ে :আজ আর হবেনা এই সব..আর একবার দেখলে খাতা নিতে বাধ্য হব।আমার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল স্যারের এই পরির্বতন কেন? এই উত্তর খুজতে পরীক্ষার পর আমি হাসপাতালে গেলাম তার পোলার কাছে,সব শুনে ও একটু মুচকি হাসি দিয়ে “বুঝিস না আমি যে হাসপাতালে….”

২. এটাও একই সময়ের কাহিনী…ক্লাশ ইলেভেন,১ম টার্ম শেষ পরীক্ষা ছিল অংক। একই সমস্যা কিছুই পারিনা যে…… এই বার একদিন অংক স্যারের পোলাকে একটু ফাঁকা যায়গায় কাছে নিয়া, বিনয়ের সাথে “দোস্ত, তুইতো অংক ভালো পারিস*, যদি আমাকে একটা এই পরীক্ষার জন্য শর্ট সাজেশন দিস, তাইলে দোস্ত এই বারের মত পাশ করতে পারি। আর এর বদলে দোস্ত ১ প্যাকেট গোল্ডলিফ পাবি…প্লিজ দোস্ত……”
ও একটু চিন্তা করে…ঠিক আছে, তবে শর্ত একটাই….কেউ যেন বিষয়টা না জানে…আর সাজেশনও কেউ না জানে। আমি রাজি হয়ে গেলাম……..ও আমার অংক বই নিয়ে গেল..কিছুক্ষণ পর…নতুন বই এ অল্প কিছু অংক আর জ্যামিতিতে লাল দাগ দেখতে পেলাম।আমি বই হাতে পেয়ে বসে পড়লাম….সাথে গাইড নিয়ে…সব গুলোকে কষতে কষতে একেবারে কলমস্থ করে ফেললাম। পরীক্ষার দিন এলো..অংক স্যারই গার্ড পড়লো..এই সুযোগে..স্যারের পোলা ডেস্ক চেন্জ করে আমার পাশে বসে পড়লো…প্রশ্ন হাতে পেয়ে আমি খুশিতে আট খানা।

*পরীক্ষার কিছু সময় পার হবার পর স্যারের পোলা ” এই আরিফ সব পারছিসতো?”
আমি: হ দোস্ত,
পোলা: তাইলে এত নম্বর দেখা..এ
(এই ভাবে একের পর এক ও দেখতে লাগলো……………)

পরীক্ষার পর আমি “কিরে শালা সবতো কমন..তুই পারছিলিনা কেন?
ও: আরে আমি জানিতো তুই সব করে আসবি…আর আগে থেকেই এও জানতাম আজ গার্ডতো বাপ..সুতরাং…………………

পুনশ্চ: এই লেখাটা অফিস টাইমে (কাজ ফাকি দিয়ে) লিখছিলাম….হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেকি পেছনে বস দাড়িয়ে আমার মনিটরের দিকে তার চোখ….আমি তাকে দেখে…আমতা আমতা করে…”আসলে বস্ ….বাংলা টাইপ শিখছি আরকি…. তখন বস্ বললো: আরিফ, আমিতো সব বুঝি আর বলতে হবেনা……….

১,৫১২ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “আমাদের বাপ ও বেটারা”

  1. সামিয়া (৯৯-০৫)

    কামরুল ভাইকে কোট করি...

    লেখা চাওয়ার পরদিনই লেখা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এই না হইলে বড় ভাই। ছোট ভাইদের(এক্ষেত্রে বোন) সব আবদার যেভাবেই হউক পুরন করতেই হবে।

    লিখা পড়ে মজা পেলাম , বেশি মজা পেলাম বসের ঘটনায়:))

    জবাব দিন
  2. মঞ্জুর (১৯৯৯-২০০৫)

    '

    মনিটরের দিকে তার চোখ….আমি তাকে দেখে…আমতা আমতা করে…”আসলে বস্ ….বাংলা টাইপ শিখছি আরকি…. তখন বস্ বললো: আরিফ, আমিতো সব বুঝি আর বলতে হবেনা……….'
    😀 😀
    জবাব দিন
  3. মরতুজা (৯১-৯৭)

    তোমাদের ব্যাচটাকে খুব ভাল মত মনে আছে শুধুমাত্র এই কারনে। তবে আমার জানা ছিলনা এত কিছু। ওই স্যাররা তাদের পুত্রদেরকে নিজ রুমে নিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন সেটা জানতাম, কিন্তু এতটা সুবিধা দিতেন তা জানতাম না। তবে আমি অনুরোধ করব এই বিষয়টা নিয়ে না লেখার জন্য। ক্যাডেটদের সম্পর্কে বাইরের লোকদের অনেক খারাপ ধারনা আছে সেটা আমরা সবাই কম বেশি জানি। পরীক্ষায় অন্যায় সুবিধা নেয়া তার মধ্যে অন্যতম। যদিও আমরা সবাই জানি এর কোনটাই আমাদের দরকার নেই সাফল্য পাবার জন্য। কিন্তু এইসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘটনাগুলো সেই সব সাফল্যকে ম্লান করে দেবার জন্যে যথেষ্ট। পাবলিক ব্লগে এই বিষয়টা আনলে সেই ধারনাটা আরো শক্ত হবে বলেই আমার ধারনা। আশা করি বুঝতে পেরেছ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।