তারা আমাদের সিনিয়র ক্লাশ এইট…..

ভাইরা তোমরা কোথায় আছো? কেমন আছো?যে যেখানে থাকো ভালো আছো তো? এখানে আমরা আমাদের জীবনের ছয়টা বছরের নানা সুখ,দু:খ,আনন্দ বেদনার কথা বলি, বিশেষ করে ক্লাশমেটদের সাথে আমাদের যাপিত-দিনলিপি, একজন ক্যাডেট হয়ে বেড়ে ওঠার কাহিনী, ডাইনিং এর কাহিনী,কলেজের প্রতিটি ইমারতের, মুর্হুতের কাহিনী, কত না স্মৃতি আমাদের এই জীবনে………..।

কিন্তু একবারো কি আমি পিছনে ফিরে তাকাই? আমি কিভাবে এই ক্যাডেট লাইফ পেলাম? কি ভাবে আমি কলেজের নিয়ম কানুন শিখলাম? কি ভাবে বন্ধুদের সাথে চলতে হবে? কি ভাবে স্যারদের টিজ্ করতে হবে? কি ভাবে ডাইনিং এ খেতে হবে? আমি যে এত স্মৃতি হাতড়িয়ে চলছি কাদের বদৌলতে? কারন তোমরা….

আমি যে বড় অকৃতজ্ঞ….. আমি তোমাদের অবদান স্বীকার করিনা। কলেজেও করিনি, এখনও করিনা………তোমরা কে?
শুধু পানিশমেন্ট আর ঝাড়ি দিয়েছ…এটাই শুধু মনে আছে আমার…….আমি ভুলে গিয়েছি…..এই সব তোমরাও ভাবতে পারো?

ভাবাটাও স্বাভাবিক….

সেভেনে আমার শক্ত পরাটা নিজে কেটে দেওয়া ,প্লেটে ভাত তুলে দেওয়া, হাসপাতালে ভর্তি হলে নিজের হাতে সবকিছু গুছিয়ে পৌছে দেওয়া, নিজের জুনিয়র রুমমেট,টেবিলমেটের দোষ, নিজের ব্যাচের অন্যদের হাত থেকে মিথ্যা বলে বাঁচানো, আমার ভেতরে সুপ্ত কি আছে সেটা সবার মাঝে প্রকাশ করার চেষ্টা, আমার সাফল্যে আনন্দিত হওয়া, আমার ব্যার্থতায় লজ্জা পাওয়া,আমার বহু অন্যায় আবদার মেটানো,আমার মন খারাপের সময় নিজে গান করে শোনানো,আমি কিছু ভুলিনি…তবুও …আমি লজ্জা পায় তোমাদের কথা বলতে…..কলেজে লজ্জা পেয়েছি এইভেবে, “কেউ দেখে ফেললে ভাববে তেল মারছি” ইত্যাদি ইত্যাদি….

আর বের হয়ে..তোমরা যে অনেকে দুরে হারিয়ে গেছ…………..

কলেজ জীবনে ক্লাশমেটের পর তোমরাতো ছিলে সবচেয়ে কাছের…৫টা বছর নানা হাসি-কান্নার সাক্ষী যে তোমরা, এটাকি আমরা কখনো মনে করি? তোমাদের সাথে কি আমাদের কম স্মৃতি জড়িত? এইটা কি কখনো মনে করি?………

আজ আমি বলবো..বলতে আমার কোনো লজ্জা নাই,কোন দ্বিধা নাই…….তোমরা আমাদের জীবনে কি ছিলা,সেটা আমি প্রথম বুঝতে পেরেছি যেদিন তোমরা কলেজ থেকে চলে যাও…..তোমাদের কে জড়িয়ে ধরে আমাদের হাঁউহাঁউ কান্না…..সেদিন সারারাত হাউসকে মনে হয়েছে একটা মৃতপুরি,তোমাদের ফাঁকা রুমগুলো দিকে তাকানোর সাথে সাথে আমার বুকের ভিতর যে একপ্রকার শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছিলো তা আমি এখনও অনুভব করি কিন্তু তা আমি কোন দিনও লিখে বা বলে কাউকে বোঝাতে পারিনি আর পারবোনা……..

তোমরা যে যেখানে থাকো এই ছোটদের অকৃতজ্ঞতা ক্ষমা করো, কারন তোমরাই তো আমাদের সবচেয়ে কাছের বড় ভাই…….
ক্লাশ সেভেনে আমাদের ভূল গুলা যে ভাবে ক্ষমা করতে, এবারো সেই ভাবে ক্ষমা করো…ভালো থেকো,আমাদের মনে রেখ……

(এখানে সকলের ইমিডিয়েট সিনিয়র ব্যাচের প্রতি ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা রইল…বিশেষ করে বিসিসি ১৭তম ব্যাচ,আরও বিশেষ করে বিসিসি ১৭তম ব্যাচ শরিয়তউল্লাহ্ হাউসের ক্যাডটদের.. )

২,১৩৮ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “তারা আমাদের সিনিয়র ক্লাশ এইট…..”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমার লকার পার্টনার ইব্রাহিম ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল...

    …..সেদিন সারারাত হাউসকে মনে হয়েছে একটা মৃতপুরি,তোমাদের ফাঁকা রুমগুলো দিকে তাকানোর সাথে সাথে আমার বুকের ভিতর যে একপ্রকার শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছিলো তা আমি এখনও অনুভব করি কিন্তু তা আমি কোন দিনও লিখে বা বলে কাউকে বোঝাতে পারিনি আর পারবোনা……..

    ক্লাস ১২ হিসেবে প্রথম দিন,যেদিন বড় ভাইরা চলে গেলেন...আজো মনে পড়ে...মনে হয়েছিল মাথার উপর থেকে ছায়াদানকারী ছাদ কেউ সরিয়ে নিল...

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আরিফ,
    ক্যাডেট - ক্যাডেট সম্পর্কের দারুন একটা দিক তুলে ধরেছ যেটা কখনো তোমার মতোন করে ভাবিনি। সত্যিই তো, ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইদের অবদান তো বলে শেষ করার মতোন নয়। তোমার লেখাটা পড়তে পড়তে কয়েকটা মুখ সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মতোন সামনে দিয়ে ঝিলিক মেরে গেল। হাসি আনন্দ দুঃখ বেদনা মিশ্রিত বিভিন্ন ঘটনাসহ সেই ফ্ল্যাশব্যাকে ১৪ তম ব্যাচের শেরে বাংলা হাউসের সিনিয়র ভাইদের মনে পড়েছে।

    সেভেনে আমার শক্ত পরাটা নিজে কেটে দেওয়া ,প্লেটে ভাত তুলে দেওয়া, হাসপাতালে ভর্তি হলে নিজের হাতে সবকিছু গুছিয়ে পৌঁছে দেওয়া, নিজের জুনিয়র রুমমেট,টেবিলমেটের দোষ, নিজের ব্যাচের অন্যদের হাত থেকে মিথ্যা বলে বাঁচানো, আমার ভেতরে সুপ্ত কি আছে সেটা সবার মাঝে প্রকাশ করার চেষ্টা, আমার সাফল্যে আনন্দিত হওয়া, আমার ব্যার্থতায় লজ্জা পাওয়া,আমার বহু অন্যায় আবদার মেটানো,আমার মন খারাপের সময় নিজে গান করে শোনানো

    অনবদ্য অনুভূতি। চালিয়ে যাও ভাই।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. আরিফ (৯৫-০১)

    সিরাজ ভাই,আপনাদের ব্যাচের সাথে আমাদের যে সর্ম্পক তা,কোন কোন ক্ষেত্রে আপন ভাইয়ের থেকেও বেশী কিছু...আমি এখানে বাহবা পেতে কিছু লিখিনি..যাকিছু তা আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ। যা হিসাবে খুবই...নগন্য..ভালো থেকেন.

    জবাব দিন
  4. অর্চি (৯৯-০৫)

    আমিও কখনো ভাবিনি এভাবে...বিশেষ করে আমার জন্য আমার গাইড আপা, টেবিল গাইড আপা যে কত বকা খেয়েছেন তার কোনো হিসাব নাই! 🙁 (এখনি ওনাদের ফেসবুকে ১টা থ্যাঙ্ক ইউ নোট পাঠাবো)

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।