সাল ২০০২,চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ি।খেলাধুলা বলতে ক্রিকেট কেই বুঝতাম,ফুটবল অত দেখা হইতো না।ক্রিকেট কে এতই ভালবাসতাম যে বাসায় ডিশ ছিল না দেখে সারাদিন কানের কাছে রেডিও নিয়ে ঘুরতাম স্কোর জানার জন্য।কিছুদিনের মধ্যে দেখলাম বাসার আশেপাশে ব্রাজিল,আর্জেন্টিনার পতাকা ঝুলানো হচ্ছে বুঝতে বাকি রইলো না বিশ্বকাপ শুরু হতে যাচ্ছে।বাসায় আব্বু,চাচাতো ভাই সবাই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার আমি তখন ও কোন টিম সাপোর্ট করা শুরু করিনি।
আমি প্রাইভেট পড়তাম বাসার থেকে একটু দূরে স্যার এর ছেলে ছিল না ছিল একটা মেয়ে তখন মনে হয় ক্লাস ১২ এ পড়তো তাই স্যারের বাজার করা,দোকানে যাওয়া এগুলা আমাদের দিয়েই করাইতো।
ঠিক এমন একদিন স্যার আমাকে দোকানে পাঠাইলেন কিছু কেনা কাটার জন্য।তখন কিন্তু প্রায় সব দোকানেই টেলিভিশন ছিল বিশ্বকাপ উপলক্ষে।আমি দোকানে যাওয়ার পর দেখলাম ব্রাজিল বনাম তুরস্কের খেলা হচ্ছে।একজনের খেলা দেখে খুব বেশি ভাল লেগে গেল তিনি হলেন রোনালদিনহো।ব্রাজিলের পিছিয়ে পড়া আর রুস্তুর অসাধারন সব সেভ দেখে খুব মেজেজ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের জয় দেখে মনটাই ভাল হয়ে গেল।ঠিক তখন থেকেই ব্রাজিল সাপোর্ট শুরু আর রোনালদিনহো হয়ে গেল আমার ফুটবল আদর্শ।
এর পর কোনভাবেই ব্রাজিলের খেলে গুলা মিস দিতাম না।কোয়ার্টার ফাইনালে ছিল ইংল্যান্ডের সাথে শুক্রবার,ব্রাজিল ১-০ তে পিছিয়ে পড়লো ঐ দিকে জুম্মার নামাজের টাইম হয়ে গেছিল কিন্তু আব্বু কোন ভাবেই আমাকে নামাজে নিয়ে যাইতে পারলো না,বলে রাখা ভাল আর্জেন্টিনার সাপোর্টার হওয়াই ব্রাজিলের ১-০ তে পিছিয়ে থাকতে দেখে আব্বু খুশি হয়েই নামাজ পড়তে গেল।ঠিক কিচ্ছুক্ষন পরেই রিভালদোর গোল আর রোনালদিনহোর সেই ফ্রি কিকে করা গোল এখনও আমার ফুটবল জীবনের সেরা মুহুর্ত।ঐ দিন থেকেই সাপোর্ট টা আরো বেশী মজবুত হই।যাই হোক নামাজ থেকে আসার পর আব্বুর মুখ টা ছিল দেখার মত।
বাসাই ডিশ না থাকাই বিটিবি তে খেলা দেখা লাগতো কিন্তু চ্যানেলটা ক্লিয়ার ছিল না।তাই চিন্তা করলাম ফাইনাল খেলাটা স্যারের বাসায় দেখব।নর্মালি আমি একটূ ফাকিবাজ ছিলাম কিন্তু ঐ দিন আগে আগে পড়তে যাইতে দেখে আব্বু আম্মু তো রীতিমত অবাক।স্যারের বাসায় যেয়ে স্যারকে অনেক কষ্টে ম্যানেজ করলাম আমরা কইজন মিলে এরপর চোখের সামনে যা দেখলাম সবই ইতিহাস।মে বি ওয়ান অফ ডা হ্যাপিয়েস্ট মোমেন্টস অফ মাই লাইফ।
২০০৬ এ কলেজে ছিলাম আর দুর্ভাগ্য বসত আমি জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি ছিলাম সব গুলা খেলা দেখতে পারলেও কোয়ার্টার ফাইনাল এর টা বেশি রাতে হওয়াই দেখার পার্মিশন পাইলাম না তাই চুরি করে খালিদ হাউজে খেলা দেখতে গেলাম।ঐ দিন হারার পর মনে হই খেলাধুলা নিয়ে আমার চোখে প্রথম কান্না দেখা যাই আর জিদান,হেনরি কে যে কত গালি দিছিলাম তা শুধু আল্লাহ জানে।
২০১০ এ একটু মিক্সড ফিলিংস ছিল কারন ওই বছর টিম হিসাবে অত ভাল ছিল না একটু আন্ডারডগ বলা চলে তারপর ও কাকার লাস্ট মুহুর্তের শট স্টিক্লেনবার্গের সেভ দেখে চোখের পানি আটকাইতে পারিনি।
২০১৪ টিম হিসাবে পুরাই নতুন বলা চলে নাই তেমন অভিজ্ঞ প্লেয়ার তারপর ও ব্রাজিলের প্লেয়ার দের কখনও ক্লাবের পার্ফমন্সের উপর বিচার করবেন না।আপনি হইতো ভাববেন ১০০মিলিয়নের নেইমার বার্সাই কিছুই খেলতে পারে না,হইতো ভাববেন ফ্রেড তো ব্রাজিলিয়ান লিগের খুব নর্মাল একটা স্ট্রাইকার,আর অস্কারের তো ফর্মই নাই কিন্তু মনে রাখবেন ঐ হলুদ জার্সি টা গায়ে দিলে সবার রক্ত গরম হয়ে যাই।
পরিশেষে বরাবরের মতই দূর থেকে ঐ হলুদ দলটার জন্য রইলো শুভ কামনা।
৫ টি মন্তব্য : “ব্রাজিল আমার প্রথম ফুটবল প্রেম”
মন্তব্য করুন
এই লিখাগুলার মজা হলো, পড়তে বসলে চেনা দৃশ্যগুলা আবার ভেষে ওঠে।
খুব ভাল লিখেছো।
কুডোস...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
প্রথম ব্লগের শুভেচ্ছা।সিসিবিতে স্বাগতম।
তোমার স্মৃতিচারণ খুব ভালো লাগলো, বিশেষত ব্রাজিলের সাপোর্টার জেনে। 😀
লেখায় বানানের দিকে একটু নজর দিয়ো।যেমন: হই, যাই হয়ে গেছে হয়, যায় এর জায়গায়।
আরো আরো ব্লগ লিখবে এ আশা করছি।
ব্লগে স্বাগতম 😀
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ব্লগে স্বাগতম আকীব, আশা করি আরো লেখা পাব তোমার কাছ থেকে 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ব্লগে স্বাগতম। লেখা ভাল লেগেছে! 🙂 নামটা পারলে বাঙলায় ও প্রোফাইল অপশনে গিয়ে নামের পাশে সাল (২০০৫-২০১১) যাতে দেখায় সেই অপশনটা চালু করে দিও! লেখা চলুক! :thumbup:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\