রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে থাকাকালীন সময় কোন দিন মন এবং যোগ দুটোকে একসাথে বসিয়ে ক্লাস করেছি কিনা তার উত্তর খুঁজে বের করলাম যে, আমার প্রিয় ক্লাস বা যা আমার এখনও মনে পড়ে সেটা শামসুল হক স্যারের ক্লাস। আমাদের তিনি বাংলার ক্লাস নিতেন। আমি প্রথম ক্লাস থেকেই মন্ত্রমুগ্ধ। পরের সারিতে যাদের রাখা যায় তারাও বাংলার জয়নুল আবেদীন আর একরামুল হক। আমি অনেক হিসেব কষে দেখলাম তারা আসলেই উচ্চমানের ক্লাস নিতেন। আমি কলেজের অনন্যা সময় ক্লাস করছি নাম মাত্র ক্লাসে ঘুমানো, টয়লেটের সামনে আড্ডাবাজী এক ক্লাসে অন্য ক্লাসের পড়া করে কলেজ লাইফ শেষ করেছি। একজন বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে বিজ্ঞানকে ভালবাসতে শেখায় এমন একজন শিক্ষকও পাইনি। আফসোস এখানেই করি। গণিতের যে শিক্ষা আমরা জাহিদুল ইসলাম *অনেক কলেজেই উনি হিট- কাছ থেকে পেয়েছি তা ঠিক ভালো অর্থে নয় মন্দের দিকে অনেক বেশি। তার অপকর্মকাণ্ডের একটিও কোন ক্যাডেট ভুলতে পারবে না। আর ‘পাঞ্জেরী’ স্যার কি পড়াবেন আমাদের কাছেই তো বাজারের সব গাইড থাকতো। তবে এনামুল হক স্যার এমন কান মলা দিয়ে সম্পাদ্য উপপাদ্য করাতেন কোনও ক্যাডেট না পেরে যেত না। আর যাই ভুল করি না কেন সম্পাদ্য উপপাদ্য ভুলেও ভুল হবে না।
এতক্ষণ কলেজে ছিলাম এবার একটু বাইরের দুনিয়ায় আসি। বাংলাদেশে আমি ক্লাস করি এক সেমিস্টার তাই পড়ার চেয়ে ভার্সিটি লাইফ এঞ্জয় করতেই কিছু বুঝে উঠতে পারি নাই। তবে যারা সিভিলে ছিল সবাই ড্রয়িং এ ধরা খাওউয়া। ঘুম নাই একদিকে ঘাম মুসি অন্যদিকে ড্রয়িং এ একফোঁটা পড়লেই মাথায় হাত। রিপিট কনফার্ম। এতো ঝক্কির মধ্যেও ক্লাস শেষে আনন্দ ছিল আড্ডা ছিল। এখন আর নেই।
আজ ৩ বছর হল দেশের বাইরে, আমার মনে হয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব বহল সময় কাটাচ্ছি। ব্যাপারটা একটু হাস্যকর সারাজীবন ফাঁকির উপর দিয়া আইসি এখন ধরা, কোন মনিষী বলুক আর না বলুক কথা সত্য, যে ফাঁকিবাজ তার তো মাসুল দিতেই হবে। মাসুলের বর্ণনাই আমার আজকের গল্প। বিদেশে পড়ার খুব একটা শখ আমার একসময় না থাকলেও আমি পরিস্থিতি বা নিয়তির টানে এখানে। আমার কথার লাইন অন্যদিকে যাচ্ছে , আবার ফিরে আসি। ভাষা যদি নতুন হয় তাহলে নিজের চারপাশের সবকিছু একটা সাদা কাগজের মত কোন ব্যাখ্যা নেই, কাউকে বোঝানও যায় না কিছু করাও যায় না। কিন্তু এখানেই ‘টিচিং’ শুরু। আমার প্রথম টিচার ছিলেন এক ইসরাইলী মহিলা। নাম সেবনাম( বাংলা বললে শবনাম)। ইংরেজি খুব ভাল না তার, কিন্তু আমি জানি আমি গ্রামার শিখেছি , নতুন ভাবে কথা বলতে শিখেছি ‘তাদের’ মত করে। টিচাররের পার্থক্য দু মাস পরে ধরতে পারলাম। কারণ তিনি উপরের শ্রেণীর ক্লাস নেন, যারা নেয় তাদের কোন আগা মাথায় আমি ধরতে পারি না। যাই হোক সেকালের সমাপ্তি হল। আসলাম ভার্সিটিতে। এবার সবাই আসা করি নেড়ে চেড়ে বসবেন।
এক বছর পরের কথা। আমার ভার্সিটিতে প্রথম বছর ডিপার্টমেন্ট এর কোন ক্লাস ছিল না সব হাবিজাবি ভরা। আসল ভার্সিটি বুঝতে লাগলাম। একটা মুভির সাথে অনেকটা মিল আছে , সম্প্রতি ফেসবুকের কাহিনী সম্বলিত মার্ক জুকারবার্গ চরিত্র নিয়ে একটা সিন আছে যে, মাইক্রোপ্রসেসরের ক্লাসে স্যার নিশ্চিন্ত মনে ছাত্রকে চেলেঞ্জ করে মার্ক তোমার চেয়েও মেধাবী এই ক্লাসে ‘ফেল’ করেছে। ভার্সিটিতে এই নতুন না কিন্তু এর অনেক অরথ আছে। এতো দিনে বুঝলাম এইযে এতো বিশ্ববিদ্যালয় এদের পার্থক্য কোথায়; কেন আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এতো চাহিদা, সব কিছুর বিচার করতে পারব না কারণ আমি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমার দৃষ্টিকোন থেকে এদের বা আমাদের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হল এখানকার ছাত্র যে প্রকৌশল সমস্যার সমাধান করতে পারবে অন্যরা পারবেনা। হোলও তাই, সবাই ঘুমায় আমার রুমে আমার ঘুমানোর সময় নেই। আমি না আমার ইলেক্ট্রনিক ডিপার্টমেন্টের কমবেশি সবাই । কোন সময় মনে হয় ভুল জায়গায় প্রবেশ এর কারণ আসলে তা না বাকিদেরও একই অবস্থা মাথানষ্ট হবার উপক্রম। কিন্তু ভাল কি খারাপ জানি না ডিপার্টমেন্টের প্রায় কোন ক্লাসেই কেউ নেই। স্যার সবাইকে মুক্ত করে দিয়েছেন কোন নাম ধরে ডাকা নেই। যে যত খুশ পরীক্ষা দাও। কারণ কবে সফল হবে কেউ জানে না।
খারাপ জিনিস হল এতো দূরে এসে যখন আবার বাজে ক্লাস করি তখন খারাপ লাগে। অধিকাংশ স্যার আধা পাগলা। কোন স্যার এর অ্যাসিস্ট্যান্ট আরও পাগলা। পড়ানোর ক্ষমতা কম। নিজের বিদ্যা সাগর কিন্তু বঝাতে পারে না কিছুই। ‘এমআইটি’ তে সার্চ দিয়ে দেখলাম সেরকম ভালো ক্লাস। মন আবার শান্ত করব ভেবে ক্লাস নিলাম ‘এমআইটি’ থেকে পিএইচডি করা স্যার এর ম্যাথ ক্লাস। ও ম্যা একি উনি ক্লাসে পরান তুর্কী ভাষায়। মাথায় যথারীতি বাঁশ। একদিন অনেক সাহস নিয়ে প্রশ্ন করলাম স্যার এটা তো ক্লিয়ার করলেন না। স্যার বললেন তোমরা তাহলে কি করবা ইন্টারনেট আছে হাজার হাজার বই আছে সমাধান করবা। বলে রাখা ভালো, আমার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মটও হল, তুমিই নিজের প্রথম টিচার এখানে তুমি তোমাকে শেখাবে।
এখানের শেখানোর কাজ অনেকটা এরকম যে, এমন প্রোজেক্ট দেবে যাতে বুঝতে পারো পরীক্ষায় কেমন জিনিস অপেক্ষা করছে *(বাঁশ)। কত জানতে হবে তা প্রশ্ন দেখলেই আইডিয়া করে ফেল। সব জান্তার অজানা থাকলেও তোমার অজানা যেন না হয় অনেকটা এই ভাব। ক্যাডেট কলেজের মতো একটা ফাঁকি দিয়ে পার হবার স্বপ্ন আমার স্বপ্নই এখন। ধরা খাচ্চি ডেইলি।
এখনও আমি মনের মতো টিচার খুঁজি, অনেক দূর থেকে হলেও আমার একজনের ক্লাস মিস হয়না উনি ‘এমআইটি’ ইলেক্ট্রনিক ডিপার্টমেন্টের ক্লাস নেন। ‘আনাথ আগার্অ্যাল’ আমি তো শুধু অবাকই হই ভিডিও লেকচার দেখেই। যারা তার সামনে বসে ক্লাস করে তারা কি করে জানি না।
কি অবস্থা আব্দুল্লাহ???? তুমি যে বেশ বিপদে আছো তা লেখা পড়েই বুঝতে পারতেসি।
:clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
শিশির ভাই দোয়া করবেন, যে কজন ক্যাডেট এখান থেকে বের হইসে তারা সেরকম ভাল আমি তাই একটু ভয়ে আছি।
আরে ব্যাটা ভয়ের কি আছে????? ক্যাডেটদের আবার ডর-ভয় বলতে কিছু আছে নাকি?? সেই পাঠ তো ক্লাস সেভেনেই শেষ। 😀
😕
জাহিদুল ইসলাম, এনামুল কবির (হক না)...এনাদের ক্লাস আমরাও পাইসি।
এনাম স্যার তো এমন ডলা দিতেন, লাঞ্চ টাইম পর্যন্ত কানে আর কিছু শুনতাম না।
লেখা পরে মনে হচ্ছে আপনি তো ভাই বিশাল ঠ্যালার উপ্রে আছেন।
ব্যাপান্না, কিপ গোয়িং... :thumbup: :thumbup:
আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।
😀 @ nafis
সংশোধনী দিলাম স্যারদের নাম ভুল করার জন্য দুঃখিত।
১/ শামসুল হক না শামসুল আলম
২/ জয়নুল আবেদিন না জয়নাল আবেদিন
৩/ এনামুল হক না এনামুল কবির