২ নম্বুরি রান্না বান্না

আমি একজন খাওয়াদাওয়া বিষয়ক ভুক্তভোগী। আমার এই লেখাটি আমি কিছুটা সমব্যাথী হয়ে লিখছি। এবং বিশেষত যারা আমরা দেশের বাইরে, তাদের যদি কোন উপকারে আসে।

ক্লাস এবং কাজের পর ক্ষুধা থাকলেও রান্নার শক্তি থাকে না, আবার বারবার বাইরে থেকে কিনে খাওয়াও খরচের ব্যাপার। এবং আমরা কেউ ই পারতপক্ষে রোজ রোজ এক ই খাবার খেতে চাই না। এখানে কিছু ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে হওয়া সম্ভব খাবারের তৈরি পদ্ধতি নিয়ে বলবো, খেয়ে খারাপ লাগলে আমাকে বাঁশ মূলক কমেন্ট দিয়েন না কিন্তু 😀 । নিজে খাই, ভালো লাগে, তাই মনে হল শেয়ার করা যায়।

১। চিকেন জাইরোঃ

ইউ এস এ মনে হয় চলেই এসব জাইরো কার্ট এর উপর। প্রতিদিন ৫ টাকা খরচ করার দরকার নাই যদি নিজে বানানো যায়। একটা আস্ত মুরগি সয়াসস,টক দই দিয়ে মাখিয়ে রাখুন ১/২ ঘণ্টা। এরপর পিয়াজ, সামান্য আদা, দারচিনি, তেজপাতা, এলাচ আর সামান্য লবন, এই সব দিয়ে ২০-২৫ মিনিটে মোটামুটি ভাবে মুরগি রান্না হয়ে যাবে, তেল লাগবে যদি ভুলে না যান।সিদ্ধ করার জন্য সামান্য পানি হলেই চলে যেহেতু দই মাখানো। এবার এই মুরগি ১ সপ্তাহের (বা একটু কম) জাইরোর জন্য রেডি।

এবার জাইরোঃ কাটা পেয়াজ কুচি, সামান্য মরিচ কুচি, টমেটো কুচি, বাঁধাকপি কুচি। এই ৪ জিনিসের সাথে একটু টমেটো কেচাপ, খুব সামান্য লবন আর মেয়নেজ। এবার কিছু মাংস ছোট করে কেটে মিশিয়ে একটা পিটা ব্রেড এ রোল করে নেওয়া। শেষ। এবার খাওয়া।
[মুরগি রেডি থাকলে একটা জাইরো বানাতে আমার ১০ মিন লাগে, খেতে লাগে ১ মিনিট, ভরপেট লাঞ্চ ১ টা তেই হয়ে যায়। চাইলে ২ টা খাবেন। ]

২। ডিম এর সালাদঃ

সিদ্ধ ডিম, ১০ মিনিটেই সিদ্ধ হবে। [বেশি ক্ষুধা থাকলে মেনুর সামনের দিকে যাওয়ার ভেজালে যাবেন না, সিদ্ধ ডিম টাই খেয়ে ফেলেন]। যদি সামলাতে পারেন নিজেকে, এবার কিছু পেয়াজ কাটুন, সামান্য মরিচ, বাঁধাকপি, এবং বাজার থেকে কিনে আনা “ক্রুটন্স” মিশিয়ে ফেলুন। ডিম টা বড় বড় কুচি করে দিন। আমরা বাঙ্গালিরা জিহবায় একটু মশলা মশলা ভাব টা না পাইলে হয় না। আমি কিছু ম্যাগি মশলা আর মেয়নেজ দিয়ে মাখিয়ে নেই। এবার খাওয়া। (কেউ চাইলে র‍্যাঞ্চ বা অন্য ড্রেসিং নিতে পারেন, খারাপ লাগে না।)

৩। ভেজিটেবল টেম্পুরা (নামটাই ঢঙের, আসলে শুধুই ভাজা সবজি)ঃ

ব্রকলি পিস পিস করে কাটা, ইফতারে আমরা যেমন কপি ভাজা খাই ওভাবে, কিছু বরবটি কাটা, কিছু গাজর(পারলে আলু ও দিতে পারেন চিকন স্লাইস করে, এতে কার্বোহাইড্রেট এর কাজ ও হয়ে যায়, ভাত-রুটি লাগে না আর)। ৩/৪ মিনিটে ধুয়ে, বড় বড় করে কেটে নিয়ে সিদ্ধ তে দিন, ১০ মিনিট ও রাখতে হবে না। মনে করে সিদ্ধ করার সময় পানিতে লবন দিবেন। যতক্ষণে সিদ্ধ হবে, একটা বাটিতে ডিম ভেঙ্গে বিট করে নিন, সামান্য লবন, এবং কিছু গরম মশলা যদি থাকে, মিশিয়ে নিন। সবজি বেশি হলে ২ টা ডিম নিন, ডিম কম খেতে ইচ্ছা করলে ময়দা সবচেয়ে ভালো সাবস্টিটিউট। কিন্তু ময়দা দিলে লবন একটু দিবেন পরিমান মত। ডিম, ময়দা, লবন, গরম মশলা- রেডি টু গো। পুরোপুরি সিদ্ধ হওয়ার আগেই নামিয়ে নিন। এবার এখানে সবজি ডুবিয়ে ভেজে নিন তেলে। গরম গরম সস দিয়ে খেয়ে ফেলেন। পারলে সাথে এক কাপ দই খেয়ে ফেলেন। এবার অ্যাসাইনমেন্ট করতে বসেন, না থাকলে ঘুমায় যান কিংবা আই এম ডি বি তে জলিল ভাই এর মুভি রেট করেন।

৪। চিংড়ি চিংড়ি চিংড়িঃ

আমার পছন্দের খাবার। কাটা চিংড়ির প্যাকেট কিনে রাখা থাকলে ধুয়ে কেবল মাত্র লবন, একটু সয়াসস, এবং অবশ্যই বেশ কিছু পিয়াজ এবং মরিচ কুচি দিয়ে ১০-১৫ মিন ভেজে নিন তেলে (মাঝে মাঝে বাটার দিয়ে ভাজতে পারেন তেলের পরিবর্তে, মজা একটু বেশি লাগে)। ভাজা হলে নামিয়ে নিন। যে কোন নুডূলস ৩ মিন ওভেনে দিয়ে তৈরি করে নিন। এবার একটু গাজর কুচি, নডুলস, চিংড়ি একসাথে মাখিয়ে নিন। লাগলে বাড়তি সয়াসস নিয়ে নিতে পারেন, তারপর কোপায় খান। বেহেস্তি খাবার লাগে আমার কাছে।

৫। ২ মিনিটের লাচ্ছি কিংবা স্মুদি “smoothy”ঃ

লাচ্ছি খুব ই সোজা। পানি ১ ভাগ, টক দই ৩ ভাগ, সামান্য চিনি। ভালো করে ব্লেণ্ড, গ্লাস এ নিয়ে লেবু চিপে খেয়ে ফেলেন। (লেবু দিয়ে খাইলে ফ্রেস লাগে, লেবু ছাড়াও চলে অবশ্য)। তবে সব কিছুই ঠান্ডা হওয়া আবশ্যক।

স্মুদি’র জন্য কিছু জিনিস লাগে, আইস ক্রিম না থাকলেও চলে যদিও। টক দই, সামান্য চিনি, কাটা ফ্রুটস (আম, স্ট্রবেরি, কলা, ব্লু বেরি, তরমুজ, চেরি), ভ্যানিলা বা স্ট্রবেরি যে কোন ফ্লেভারের সিরাপ। ফ্রুটস বাদে সব কিছু ব্লেন্ড। এবার কাটা ফ্রুটস মিশায় দেন। চা চামুচ নিয়ে বসে পড়েন।

৬। ছোট খাটো ব্যাপার স্যাপারঃ

# কেউ যদি মাছ পছন্দ করেন, বাজার থেকে কিনে আনার পর একটা কাজ করলে এর পর যে কোন রান্না খুব তাড়াতাড়ি করা যায়। মাছ এর ফিলে টা কে কেটে চিকন করে রাখেন, এবং ভিনেগার কিংবা সয়াসস এ মেখে খুব হাল্কা ভেজে একটা মুখ বন্ধ বাটিতে নিয়ে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। এর পর যখন ই খাবেন, শুধু ভেজে বা রান্না করে নিবেন যেভাবে খুশি। সময় কম লাগে।

# কাঁচা পেয়াজ আছে এমন কোন খাবার পরে খাওয়ার জন্য ফ্রিজে রাখবেন না, বাজে গন্ধ হয়ে যায় খাবার টাতে।

# টক দই, মুরগি, নুডুলস, এই ৩ টা জিনিস মোটামুটি ঘরে রাখবেন। পারমুটেসন কম্বিনেসন করে এই ৩ টা জিনিস দিয়েই অনেক কিছু খাওয়া যায়, এবং সে গুলো খুব ফাস্ট রান্না হয়।

[ কলেজে বসে লিখলাম। ২ ক্লাসের গ্যাপ এ ক্ষুধা লাগলো, জাইরো কিনে  খেতে গিয়ে দেখলাম টেস্ট ভালো না। আসে পাশে চাইনিজ গুলা কাঁচা মাছের “সুশি” খাচ্ছে আর চং-বং-পং করে কথা বলতেছে। হতাশায় মানুষ যেভাবে ড্রিঙ্ক করে, আমি ঠিক সেই ভাবে পানির বোতলে পানি খেতে খেতে এই লেখার আইডিয়া আসলো। কারো উপকারে আসলে তো ভালোই, আমাকে একটা থেঙ্কু দিয়ে যাইয়েন। সবার ব্যাচেলর জীবন খাদ্যময় হোক। ]

 

 

৩,৩৩৩ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “২ নম্বুরি রান্না বান্না”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    জনৈকা আমার খাদ্যাভ্যাসের বিপুল পরিবর্তনে অত্যন্ত চিন্তিত। সবকিছু কাঁচা খেয়ে ফেলার চেষ্টা কিংবা পানসে সেদ্ধ আলু উহু আহা করতে করতে একটু বিট লবণ ছিটিয়ে ভাতের বিকল্প হিসাবে খেয়ে ফেলা ইত্যাদি সুস্থ কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় বলে তার ধারনা।

    আমি প্রায়শই একটা ফাঁকিবাজি রান্না চালাই যদিও সেটা কিছুটা সময় সাপেক্ষ।
    ২ কৌটা (প্রতিটি ১৬ আউন্স) কিডনী বিনস (লো সোডিয়াম)
    ১ কৌটা (১৬ আউন্স) টমেটো সস
    ১ কৌটা মাঝারি ঝালের সালসা (১৬ আউন্স)
    মুরগীর মাংসের যেকোন অংশ, টুকরো যেভাবে খুশি।

    ঢেকে রাখা যায় এরকম সুবিধা ওয়ালা বড় সসপ্যানে মুরগী বাদে সব ঢেলে দাও। চেখে দেখ লবন লাগবে কিনা। আরেকটু ঝাল চাইলে একটু গুড়ো মরিচ। একটু ঘুটা দিয়ে মুরগী দিয়ে দাও। ফুটে উঠা শুরু করলে একদম মৃদু আঁচে এক থেকে সোয়া এক ঘন্টা রেখে দাও (টাইমার দিয়ে রাখলে সুবিধা)

    একঘন্টা পর যেটা বের হবে এটার সাথে ভাত, নুডলস সবজি যাহা মনে চায় তা দিয়েই খাওয়া যাবে। ৮-১০ (একটু সচেতন ভাবে খেলে ১২টা বেলা কাভার)

    ফ্রিজে প্রায় অনেকদিন থাকে (৭-৮ দিন)


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. আহমদ (৮৮-৯৪)
    টক দই, মুরগি, নুডুলস, এই ৩ টা জিনিস মোটামুটি ঘরে রাখবেন। পারমুটেসন কম্বিনেসন করে এই ৩ টা জিনিস দিয়েই অনেক কিছু খাওয়া যায়, এবং সে গুলো খুব ফাস্ট রান্না হয়।

    ::salute::


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
    • আহমদ (৮৮-৯৪)

      আমাদের বিয়ের পরে বউ তার পড়াশুনার কারনে হলে থেকেছে প্রায়ই। তখন প্রায়ই রান্না করতে হত। আমার কাছে রান্না করার কাজটা মোটেও খারাপ লাগেনি। অনেক ক্রিয়েটিভ একটা কাজ মনে হয়েছে। বউ হলে যাবার আগে আমার জন্য কয়েকদিনের রান্না করে যেত। আবার বউ হল থেকে বাসায় ফেরার আগে আমি তার জন্য রান্না করে রাখতাম। বলা যায় বিয়ের পরেও অনেকদিন ব্যাচেলারের মত লাইফ ছিল আমাদের।

      তোমার এই লখাটায় বেশ মজা পেলাম। প্রিয়তে যোগ করে রাখলাম। মেনুগুলো পছন্দ হয়েছে। যদিও কোলেস্টেরোলের সমস্যার কারনে জিভে পানি চলে আসলেও করার কিছুই নাই।


      চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

      জবাব দিন
  3. নাফিস (২০০৪-১০)

    কিছুদিন আগে আমার স্পনসর ফ্যামিলির বাসায় আমার রান্না জীবনের অভিষেক হয়ে গেল.. ভাত রান্না করছি। ফাকিবাজি রান্না। যে কেউ ই পারবে। তবুও রান্না শেষ করে নিজেরে বস বস লাগতেছিল। B-) সাথে সাথে আম্মুরে ফোন করে জানাইছি যে আমি ভাত রান্না করে ফেলছি। আম্মু যথারীতি বিশ্বাস করে নাই.. 🙁 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  4. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    খাওয়া-দাওয়া ব্যাপারটাকে আমি বেশ এনজয় করতাম। একটা সময় আমি খুব কুকি পছন্দ করতাম। তারপর দেখি যে আমার বাচ্চারাও খুব কুকি পছন্দ করে। তারপর ফলের স্মুদি খেতে শুরু করলাম। দেখি বাচ্চারাও সেটা পছন্দ করতে শুরু করছে। এখন মূলত বাচ্চাদের কারণে (এবং অবশ্যই বয়সজনিতও) স্বাস্থ্য্সম্মত খাওয়ার চেষ্টা করছি। তোমার চটজলদি রেসিপিগুলো বেশ উপযোগী। তুমি অবশ্য স্যামন মাছের কথা বললে না। লেমন-পেপার দিয়ে সিজনিং করে ফয়েল দিয়ে ঢেকে ১৫-২০ মিনিট ৪০০ ফারেনহাইটে ওভেনে বেক করে নিলেই রেডি।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  5. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    একসময় এই পদ সেই পদ রান্না করতাম, এখন আর সময় পাইনা, এনার্জি পাই না। অল্পের উপর দিয়ে যা হয় আর কি। সেদিন লাউ দিয়ে মুরগী রাঁধলাম, এমন স্বাদ হইছে যে নিজেই মুগ্ধ।

    ভালো খাবারের মধ্যে ডিমের পুডিং একটা। অল্প সময়ে, অল্প কষ্টে প্রোটিন, গ্লুকোজ সব।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ১৮ ঘন্টা কেরামতির পর রসমালাই বানাইসিলাম গত মাসে। সার্থক! তবে নিজে খাইতে পারি নাই। পিকনিকে নিয়া গেসিলাম, বাকি মানুষগুলা খায়া আমার লাইগা ঝোল রাইখা দিসিলো। অতি উৎসাহে বানানোর পরে নিজে একটু খাইতে ভুইলা গেসিলাম! 🙁 🙁 (সম্পাদিত)


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      ডিম খাওয়াকে মাঝে মাঝে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাই ভাই, হাফ বয়েল করে, খোসা পুরা টা না ছিলে ডিম টা কে ফুটা করি, তারপর কেচাপ দেই ডিমের ভিতরে, তারপর খাই।

      (জানি হাস্যকর শুনায়, কিন্তু অমৃত অমৃত )

      জবাব দিন
  6. রাব্বী (৯২-৯৮)

    কাজের পোষ্ট। দুই নম্বরী রান্নার রেসিপির একটা কালেকশন থাকা দরকার।

    আমি একটা দুই নম্বরী জানি - হালকা গরম অলিভওয়েলে টুনা, লাইম, ট্যাবাস্কা সস, কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষন রান্না করে উপরে একটা/দুইটা ডিম দিয়ে দেই। পেঁয়াজও দেওয়া যায় কিন্তু কান্নাকাটি ভাল লাগে না। ব্রেকফাস্টের জন্য বেশি উপযোগী।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।