শূরী বংশের প্রতিষ্ঠাতা ও ভারতবর্ষের সম্রাট শেরশাহ শূর (১৫৪০ খ্রীঃ – ১৫৪৫ খ্রীঃ) সুলতানী বাঙলার রাজধানী সোনারগাঁও থেকে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুলতান পর্যন্ত ৪,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘সড়ক-ই-আযম’ বা ‘গ্র্যান্ড ট্রাক রোড’ নামে এক মহাসড়ক নির্মাণ করেছিল। আমরা সবাই জানি, তিনিই প্রথম ঘোড়ার ডাকের ব্যবস্থা করেছিলেন। দ্রূত সংবাদ আদান-প্রদান, পথচারীদের নিরাপত্তা ও রাত্রিযাপন, সংবাদবাহকের ঘোড়া বদল ইত্যাদি কারণে এই সড়কে কিছু দূর পর পর তার প্রশাসন নিরপত্তা চৌকি ও তৎ-সংলগ্ন সরাইখানা স্থাপন করেছিল। কোন কোন সূত্রে উল্লেখ আছে, সড়ক-ই-আযম কারওয়ান বাজারের পাশ দিয়ে অথবা কোন সংযোগ সড়কের মাধ্যমে এই বাজারের সাথে সংযুক্ত ছিল। সেখানে যে সরাইখানাটি ছিল মানে ‘ক্যারাভাঁ’ সেটা থেকেই ক্যারভাঁন বাজার/কারওয়ান বাজার নামকরণ হয়েছে।
বাঙলার মুঘল সুবাহদার মীর মুহাম্মদ সায়ীদ আর্দিস্তানী মীর জুমলা ১৬৫৯/৬০ খ্রীঃ বর্তমানে ভারতের ঝাড়খন্ড প্রদেশের সাহেবগঞ্জ জেলার রাজমহল মহাকুমা থেকে বাঙলার রাজধানী ২য় বারের মত ঢাকায় স্থানান্তর করেন। সেই সময় ঢাকার ‘বাগ-ই-বাদশাহী’ মানে বাদশাহের বাগান যা ‘‘পুরোনো হাইকোর্ট ভবন থেকে নিয়ে বর্তমান সড়ক ভবন পর্যন্ত’’ বিস্তৃত ছিল সেখান থেকে টঙ্গী পর্যবেক্ষণ চৌকী/দূর্গ পর্যন্ত মীর জুমলা একটি রাস্তা তৈরী করেন। হয়ত মীর জুমলা সড়ক-ই-আযম সড়কটির এই অংশ সংস্কার করেন, নতুবা একটি সংযোগ সড়কের মাধ্যমে তা সংযুক্ত করেন। তার অব্যবহতির পর পরবর্তী সুবাহদার আমীর-উল-উমারা নওয়াব মির্জা আবু তালিব ওরফে শায়েস্তা খান (১৬৬৪ – ১৬৭৮ খ্রীঃ এবং ১৬৮০ – ১৬৮৮ খ্রীঃ) এই রাস্তার উপর শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে নিরাপত্তা চৌকীর সাথে পর্যটক/মুসাফিরদের সুবিধার্থে রাষ্ট্রীয় খরচে একটি সরাইখানা স্থাপন করেন। শায়েস্তা খান আগের সরাইখানাটি সংস্কার করেও পুনরায় তা চালু করে থাকতে পারেন।
নিরাপত্তা চৌকি থাকার কারণে, যারা এই পথে শহরে প্রবেশ করতে চাইতেন তাদের সকলকে এখানে তল্লাশী করা হত। বুড়িগঙ্গার শাখা পান্ডু নদী/জেমস রেনেলের তথ্যানুযায়ী নেড়ি নদী আর মুঘল আমল থেকে স্থানীয়দের কাছে কারওয়ান নদী দিয়ে স্থলপথের পাশাপাশি নৌপথেও এখান থেকে শহরের ভিতর যাতায়াতের সুবিধা ছিল। বর্তমানে যে রাস্তাটি পান্থপথ নামে পরিচিত তাই ছিল এক সময়ের পান্ডু নদী। যাহোক, সরাইখানার কারণেই সম্ভবত পান্ডু ও কারওয়ান নদীর (পান্ডু নদীর শাখা) তীর ঘেষে সেখানে একটি বাজার বসে। ফার্সী ভাষায় পর্যটক দল/যাত্রীদল বা ভ্রমণকারী বা মুসাফির অর্থ ‘কারওয়া’ – সেজন্য বাজারটির নাম হয় কারওয়ান বাজার।
তৎকালীন ঢাকার প্রবেশ দেউড়ীর উত্তরে, বর্তমান তেজগাঁও থানার ৩৯ নং ওয়ার্ডের অধীন কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ এর কাওরান (কারওয়ান) বাজারে শায়েস্তা খানের খোজাদের প্রধান মালিক আম্বর শাহ ১৬৭৯ – ১৯৮০ খ্রীঃ/১০৯০ হিজরী সনে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। খোজা আম্বর শাহের নামে মসজিদটির নাম হয় খাজা আম্বর/মালিক আম্বর মসজিদ। সহজে যাতে মুসল্লীরা মসজিদে যেতে পারেন সেজন্য আম্বর শাহ পান্ডু নদীর উপর মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি সেতুও তৈরী করে দেন, যা খাজা আম্বরের পুল নামেই ৬০/৭০ বছর আগেও সকলে চিনতেন।
মূল মসজিদের সামনের দিকে (বা পশ্চিম দিকে) একটি খালী আঙিনা আছে। সেই আঙিনার কোল ঘেঁষে ৩.৬৬ মিটার উঁচু ইটের তৈরী নিরেট মঞ্চের উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে পূর্ব দিকের সিঁড়ি পেরিয়ে, ইটের তৈরী তোরন অতিক্রম করতে হবে, এই প্রবেশ তোরনটির চৌকাঠ পাথরের ও খিলানাকৃতির। এরপর প্রাচীরঘেরা মসজিদের পশ্চিমদিকে নামাজ কক্ষে প্রবেশ করা যাবে। মসজিদে মোট ৫টি দরজা রয়েছে, উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে ২টি ও পূর্ব দেওয়ালে ৩টি করে দরজা আছে। কেন্দ্রীয় দরজাটি পূর্ব দেওয়ালের মাঝখানে এবং তা কালো ব্যাসল্ট পাথরের তৈরী। বাকী ৪টিরও খিলান পাথরের দ্বারা সজ্জিত। মেঝে মোজাইকের টাইলস করা। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের উভয় দরজার দু’পাশে ১টি করে ২টি কুলু্ঙ্গি আছে। পূর্ব দেওয়ালের ৩টি দরজার বিপরীতে পশ্চিম দেওয়ালে ৩টি অর্ধ-অষ্টকোণাকার মিহরাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি অপর ২টি মিহরাব অপক্ষা বড় এবং তা কালো ব্যাসল্ট পাথরের তৈরী। অপরদিকে, অন্য ২টি মিহরাবের খিলানদ্বয় পাথরের তৈরী হলেও এর বাকী অংশ ইটের তৈরী। মসজিদের মিম্বারটি কেন্দ্রীয় মিহরাবের উত্তরে অবস্থিত এবং তা পাথরের তৈরী। প্রবেশপথসমূহ ও মিহরাবসমূহ রীতিবদ্ধভাবে বাইরের দিকে সামান্য উৎগত। পশ্চিম দেওয়ালে বাহিরের দিকে এক চিলতে বারান্দা রয়েছে। এমন বারান্দা মোহাম্মদপুরের ‘সাত গম্বুজ মসজিদেও’ দেখা যায়, কিন্তু এর উদ্দেশ্য জানতে পারি নাই।
মূল মসজিদটি আয়তকার এবং দেওয়ালগুলো বেশ পুরু। বাহিরের দিকের দৈর্ঘ্য ১৩.৪ মিটার ও প্রস্থ ৬.৭১ মিটার। ৪ কোণায় ৪টি অষ্টভূজাকৃতির মিনার রয়েছে। মিনারগুলো ছাদের ছাদবেড়ি ছাড়িয়ে বাংলার শাশ্বত চালা ঘরের কোণার বাঁশের খুটির উপরের অংশের ন্যায় উর্দ্ধমুখে প্রসারিত। মসজিদের ভিতরের অংশ ৩টি বে-তে ভাগ করা যার মাঝেরটি বর্গাকার হলেও বাকী দু’অংশ আয়তকার। বর্গাকার বে-টির প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৪.২৭ মিটার এবং আয়তকার অংশের তুলনায় তা খানিকটা বড়। বে-তিনটির উপরের অংশে অর্থাৎ ছাদে এভাবে মুঘল স্থাপত্যকলা প্রয়োগ করে ৩টি গম্বুজ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে জ্যামিতিক নকশার স্বাভাবিক নিয়মে মাঝের গম্বুজটি অন্য ২টি থেকে খানিকটা বড় হয়ে থাকে – এখানেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
মসজিদটি কারুকাজখচিত ছিল। এর ভিত্তি মঞ্চটির উপর এক সারি বদ্ধ-পদ্ম-পাপড়ির নকশাকাটা যার চার কোণায় রয়েছে অষ্ট-কোণাকার অনুচ্চ ৪টি মিনার, মিনারগুলো আবার কলস নকশা ভিত্তির উপর দন্ডায়মান এবং এর শীর্ষদেশ ছোট গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত, মূল মসজিদের দেওয়ালগুলো খোপ-নকশাকাটা, ছাদের উপর অষ্টকোণাকার পিপা আকৃতির ভিত্তিমূলের উপর নির্মিত কন্দাকারাকৃতির গম্বুজগুলোর চুঁড়াদন্ডে কলস-নকশা দ্বারা শোভিত, গম্বুজ ও ছাদের বপ্র বদ্ধ-পদ্ম-পাঁপড়ি নকশার সারি দিয়ে অলংকৃত, কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলান, ফুলেল নকশা যেমন লতা ও গোলাপ, ব্যান্ড ও বদ্ধ-পদ্ম-পাঁপড়ি দ্বারা শোভিত। ইমারতের ছাদের চারিদিকে রীতিবদ্ধ ঠেকন (Bracket) বিহীন মুঘলামলের ছাদের প্রলম্বিত অংশ সরল রেখায় নির্মিত যা চকবাজার শাহী মসজিদ ও লালবাগ দূর্গের মসজিদের মুঘল স্থাপনার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপাদানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ন।
পূর্ব দিকের পূর্বে উল্লিখিত সিঁড়ির ডান দিকে একটি কুয়া ছিল যা এখন ভরাট করে ফেলা হয়েছে। সম্ভবতঃ কুয়ার পানি খাবারের জন্য ব্যবহার করা হত কেননা এখানে একটি পুকুরও ছিল যা দিয়ে মুসল্লীরা ওযু-গোসলসহ অন্যান্য কাজ করে থাকতেন। এখনো এখানে দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। খাজা আম্বরের মৃত্যুর পর মসজিদের উত্তর দিকে তাকে সমাধিস্ত করা হয়। কেবলমাত্র পাথরের একটি ফলক দিয়ে সমাধিটি চিহ্নিত করে রাখা হয়েছিল কিন্তু এখন তা ইটের দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে।
১৮৮৫ খ্রীঃ দিকে স্থানটি জনশূণ্য হয়ে পড়ে ফলে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মসজিদটি অযত্ন আর অবহেলায় বেহাল দশায় পরিনত হয়। মুনশী রহমান আলী তায়েশের তথ্য থেকে জানা যায়, সেই সময় স্থানীয়রা আলোর ব্যবস্থা করে নামাজ ও আযান চালু রেখেছিলেন। ঢাকার নবাব খাজা আহসানউল্লাহ যখন মসজিদের রক্ষণাবেক্ষনের জন্য কিছু জমি ওয়াকফ করে দেয় সে সময় স্থানীয়রা চাঁদা তুলে মসজিদের সংস্কার কাজ করান। এরপর ১৯৬০ খ্রীঃ এর ব্যাপক সংস্কার কাজ করা হয়। শুরুতে মসজিদে কোন বারান্দা না থাকলেও এই সময় পূর্ব দিকে ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা সংযোজন করা হয় যা দূর থেকে দেখলে মনে হত পাশাপাশি দু’টি মসজিদ। এই বারান্দারই পূর্বদিকে আদি মসজিদের সম্প্রসারিত অংশে ১৯৮০ খ্রীঃ বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয় যেখানে এখন মসজিদের পাশাপাশি মাদ্রাসা, এতিমখানা, মার্কেট ও গ্রন্থাগার হয়েছে। আর সংস্কারের উদ্দেশ্যে এসব পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে গিয়েই মসজিদের আদিরূপটি নির্মমভাবে বিসর্জন দিতে হয়েছে। যেমন, দেওয়ালের খোপ-নকশার জায়গায় এখন সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। শুরুতে দেওয়ালের রং লাল হলেও পরে সাদা, সবুজ এবং এখন হলুদ রং করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ২০১৮ খ্রীঃ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী মসজিদের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। নতুন মসজিদ ভবনের উত্তরে যে প্রবেশ তোরন তৈরী করা হয়েছে মসজিদে ঢুকতে সবাই এখন সেটাই ব্যবহার করে থাকেন।
মসজিদের কেন্দ্রীয় মিহরাবের উপর একটি শিলালিপি আছে যেখানে পবিত্র কোরআনের বাণী উৎকীর্ণ আছে এবং কেন্দ্রীয় দরজার উপরে ফার্সীভাষায় অপর আরেকটি শিলালিপি রয়েছে যেখানে শায়েস্তা খানের প্রধান খোজা খাজা আম্বর কর্তৃক ১৬৮০ খ্রীঃ একটি মসজিদ ও একটি সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ধারনা করা হয় বর্তমান সোনারগাঁ হোটেলের আশে পাশে কোন এক জায়গায় পান্ডু নদীর উপরই ছিল খাজা আম্বরের ইট দ্বারা নির্মিত সেই পুলটি যা এখন অস্তিত্বহীন। শাহবাগের দিক থেকে মসজিদে গেলে আগে সেতু পরে মসজিদ দেখা যেত। রেনেলের মানচিত্রে নদীটি দেখা যায় না, কিন্তু দু’পাশে নদীর সুস্পষ্ট চিহ্ন দেখে এর অস্তিত্বটি বোঝা যায়। ষাটের দশকে যখন ঢাকা-মংমনসিংহ রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্তকরন করা হয় তখন এই সড়কের প্রথম নির্মিত সেতুটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। নিঃসন্দেহে তৎকালীন ঢাকার স্থাপত্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক মিহরাব ও চারকোণাকার খিলান বিশিষ্ট আম্বর সেতু শুধু অবদানই রাখে নাই বরং এটি ঢাকাবাসীর উচ্চাবিলাসী মননের ল্যান্ডমার্কও ছিল বটে।
শায়েস্তাখানের সময় স্থাপনার যে স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য দেখতে পাওয়া যায় যেমনঃ উচুঁ মঞ্চ/তাহখানা, মুঘল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য যেমনঃ দেওয়ালের প্রশস্ততা সুলতানি মসজিদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম হওয়া কিংবা পোড়ামাটির অলংকরণের পরিবর্তে পলেস্তরার উপর খোপনকশা কাটা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যসমূহের সাথে ঢাকার লালবাগ দূর্গ মসজিদ, হাজী খাজা শাহবাজ মসজিদ, মোহম্মদপুরের সাত গম্বুজ মসজিদ, খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ, মুসা খান মসজিদ, করতলব খান মসজিদ ও চকবাজার শাহী মসজিদের সাথে এর সাদৃশ্য রয়েছে। এমনকি এর পূর্বদিকের প্রবেশপথে প্রক্ষেপনের দু’প্রান্তে যে আলংকারিক মিনার রয়েছে তা এই মসজিদেই প্রথম নকশা করা হয় এবং পরবর্তীতে অন্যান্য মুঘল স্থাপনায় তা বিস্তার লাভ করে। এদিক থেকে এই মসজিদটি নিঃসন্দেহে অতীব মূল্যবান এক ঐতিহ্যময় সম্পদ।
ঢাকার প্রাচীন মসজিদের তালিকায় ২২তম স্থান ধারন করে থাকা খাজা আম্বর মসজিদ নির্মাণের সময় কুয়া, পুকুর ও বাগান ছিল। ফুলে-ফুলে ভরা সুসজ্জিত বাগান নিশ্চই মুসল্লীদেরকে বিমল আনন্দ দিতো, কিন্তু কুয়া-বাগান-পুকুর সবই আজ স্মৃতি। বর্তমানে এর চারপাশে এমনভাবে বিল্ডিং গড়ে উঠেছে যে বাগানের সৌন্দর্য্য দূরে থাক, মসজিদটিই সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। আহমেদ হাসান দানী বেশ বলেছেন, ‘‘মসজিদ সংলগ্ন বিশাল বিশাল অট্টালিকা সত্যিকার অর্থেই এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে”। সেই পুকুরটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এমনকি মসজিদের আশে পাশে বেশ খানিকটা জমি যে স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে মসজিদের অধীন ছিল, আজ তার অনেকখানিই বেহাত। পশ্চিম পাশের খোলা জায়গায় বেশ আয়োজন করে গাড়ী পার্কিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ঢাকার যে ৯৩টি স্থাপনা ‘সংরক্ষিত’ হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এই মসজিদ তার একটি, ফলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা নির্দেশনা ছাড়া এসব স্থাপনায় এখন থেকে আর ভাঙ্গা, সংস্কার, বিক্রি বা বিকৃতি করা যাবে না – সবাই তা বুঝলেই হয়!
কারওয়ান বাজার ঢাকার পুরোনো বাজারগুলোর অন্যতম। শুরু থেকে মসজিদের দক্ষিণ দিকে মূল বাজারটি বসত। আশেপাশের গ্রামের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে শাক-সব্জি, স্থানীয় কামার-কুমোরদের গড়া তৈজসপত্র, প্রতিমা ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় সামানা নিয়ে বনিক, মহাজন, মাঝি-মাল্লা, ক্রেতা-বিক্রেতারা ভীড় করত। ক্রমে লোকসমাগম বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্ব পেতে থাকলে নবাব আহসানউল্লাহর ওয়াকফকৃত জমিতে বাজারটি সম্প্রসারিত হয়। খুচরা বেচাবিক্রির পাশাপাশি পাইকারির কারবার শুরু হলে বাজারটি ঢাকার অন্যতম আড়ত বা মোকামে পরিনত হয়। আজকের কাওরান বাজারে বিভিন্ন সংস্থার বাণিজ্যিক সদর দপ্তর, অফিস-আদালত, ইন্সুরেন্স-বীমা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল আর হোটেল-মোটেলের যে সমাহার তা কি খানদানি কারওয়ান বাজারের অতীত গৌরবের স্বাক্ষ্য বহন করে না!!!
———————————————————————————————————————————————–
০১ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রীঃ/ঢাকা-১২৩০/mamun.380@gmail.com
———————————————————————————————————————————————–
তথ্যসূত্রঃ
বই
১. ইতিহাসে বাংলাদেশ, সুব্রত বড়ুয়া, দিব্যপ্রকাশ, ফেব্রূয়ারী ২০০৫ খ্রীঃ, পৃঃ ৩১/
২. ঐতিহাসিক ঢাকা মহানগরীঃ বিবর্তন ও সম্ভাবনা, সম্পাদনাঃ ইফতিখার-উল-আউয়াল, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ডিসেম্বর ২০০৩ খ্রীঃ, পৃt ১৫১/৩৩৬/৩৩৭/
৩. গৌড় ও পান্ডুয়ার স্মৃতি, খান সাহেব আবেদ আলী খান, চৌধুরী শামসুর রহমান অনূদিত ও সম্পাদিত, দিব্যপ্রকাশ, ফেব্রূয়ারী ১৯৮৫ খ্রীঃ, পৃt ৪৫/
৪. তাওয়ারিখে ঢাকা, মুনশী রহমান আলী তায়েশ, অনুবাদঃ এ.এম.এম. শরফুদ্দীন, পৃt ১৮২/
৫. ঢাকা অভিধান, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, ঐতিহ্য, ফেব্রূয়ারী ২০১৪ খ্রীঃ, পৃt ১৪২/
৬. ঢাকার কথা, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, পৃt ৪৮/৫২/৭২/৭৩/
৭. ঢাকার খেরোখাতা ইতিহাস ও ছবিতে, মুন্সী আরমান আলী, জ্ঞান বিতরণী, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪ খ্রীঃ, পৃt ৪৬/১৩১-১৩২/
৮. ঢাকার প্রাচীন নিদর্শন, স্যর চার্লস ডয়লী, ভাষান্তরঃ শাহ মুহাম্মদ নাজমুল আলম, পৃঃ ১০৪/
৯. ঢাকার পুরোনো কথা, মনোয়ার আহমদ, মাওলা ব্রাদার্স, জুন ২০০৮ খ্রীঃ, পৃঃ ১৫/৩৫/৩৬/
১০. ঢাকাঃস্মৃতি বিস্মৃতির নগরী, মুনতাসীর মামুন, অনন্যা, ১৯৯৩ খ্রীঃ, পৃঃ ৫৬/
১১. প্রাচীন বাংলার আনাচে কানাচে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পার্ল পাবলিকেশন্স, একুশে বই মেলা ২০০৯ খ্রীঃ, পৃঃ ২৩২/
১২. প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পার্ল পাবলিকেশন্স, একুশে বই মেলা, ২০০৭ খ্রীঃ, পৃঃ ২৪২/ ২৪৯/
১৩. বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, দিব্যপ্রকাশ, ১৯৮৪ খ্রীঃ, পৃঃ ৩৯/৪২/৫৫০/
১৪. বাঙলার ইতিহাস, চার্লস স্টুয়ার্ট, আবু জাফর অনূদিত, হাক্কানী পাবলিশার্স, ফেব্রূয়ারী ২০০৯ খ্রীঃ, পৃঃ ২৬১/
১৫. বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, রওশন আরা রুশনী, পৃঃ ৪৬/
১৬. বাংলাদেশের মুসলিম পুরাকীর্তি, ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, মাওলা ব্রাদার্স, ফেব্রূয়ারী ২০০১ খ্রীঃ, পৃঃ ১৭১-১৭২/
১৭. বাংলার প্রাচীন সভ্যতা ও পুরাকীর্তি, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, শিখা প্রকাশনী, বইমেলা ২০০০ খ্রীঃ, পৃঃ ২৩১/
১৮. বাংলায় ভ্রমণ, ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে (১৯৪০), শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ, ১৯৪০ খ্রীঃ, পৃঃ ২৭০/২৭২/
১৯. বৃহত্তর ঢাকার প্রাচীন কীর্তি, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, দিব্যপ্রকাশ, ফেব্রূয়ারী ২০১০ খ্রীঃ, পৃঃ ১৭২-১৭৫/
২০. মুসলিম বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আব্দুল করিম, বাংলা একাডেমী ঢাকা, জানুয়ারী ১৯৯৪ খ্রীঃ, পৃঃ ৭৪/
২১. সেকালের ঢাকা, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, শোভা প্রকাশ, একুশে বইমেলা ২০১২ খ্রীঃ, পৃঃ ৩৮/৪২/
২২. DHAKA A record of Its Changing Fortunes, Ahmad Hasan Dani, Editor Abdul Momin Chowdhury, Asiatic Society of Bangladesh, First Edition 1956, পৃt ৩/১৯৩/
২৩. DHAKA PAST PRESENT FUTURE, Editor Sharif Uddin Ahmed, পৃঃ ৩৭-৩৮/৪৭/৫৩/৬২/৬৫/ ৩২৭/৩৩২/৩৪৫/৩৫০/৩৫৩/৩৫৪/৩৬০/৩৬৩/
দৈনিক পত্রিকা
২৪. আম্বর শাহ মসজিদের সংস্কারে প্রথম আলোর আর্থিক সহযোগিতা, দৈনিক প্রথম আলো, ৮ আগষ্ট ২০১৮ খ্রীঃ/
২৫. কীর্তিতে উজ্জ্বল শায়েস্তা খান, একেএম শাহনাওয়াজ, দৈনিক যুগান্তর, ২১ অক্টোবর ২০১১ খ্রীঃ/
২৬. কারওয়ান বাজার ও আম্বর শাহ মসজিদ, দৈনিক প্রথম আলো/
২৭. কাহানি কারওয়ান বাজার কা, আপেল মাহমুদ, ছুটিরদিনে, দৈনিক প্রথম আলো/
২৮. খাজা আম্বর শাহ মসজিদঃ সভ্যতার আড়ালে ঢেকে আছে ঐতিহ্য, মিরাজ রহমান, ১১ জুলাই ২০১৭ খ্রীঃ, প্রিয়.কম/
২৯. ঢাকার ৯৩টি স্থাপনা ও সাত এলাকা সংরক্ষিত ঘোষণা, কয়েকটি নষ্ট করা হয়েছে, কিছু বেদখল, দৈনিক প্রথম আলো, ২৩ মার্চ ২০০৯ খ্রীঃ/
৩০. ঢাকার পুনরুজ্জীবনে মীর জুমলা, একেএম শাহনাওয়াজ, দৈনিক যুগান্তর, ০৭ অক্টোবর ২০১১ খ্রীঃ/
৩১. ঢাকায় মোঘল স্থাপত্য-৪, একেএম শাহনাওয়াজ, দৈনিক যুগান্তর, ১৩ ফেব্রূয়ারী ২০১২ খ্রীঃ/
৩২. প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো মসজিদ, বিডি২৪লাইভ.কম, ২৯ মার্চ ২০১৮ খ্রীঃ/
৩৩. বায়ান্ন বাজারের একটি হলো কারওয়ান বাজার, রমজান বিন মোজাম্মেল, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ জুলাই ২০০৭ খ্রীঃ/
৩৪. মসজিদের গায়ে ঢাকার ইতিহাস হাজি আম্বর শাহ মসজিদ, দৈনিক প্রথম আলো, ২৯ আগষ্ট ২০১০ খ্রীঃ/
৩৫. সহজিয়া কড়চা কারওয়ান নদী ও আম্বর সেতু, সৈয়দ আবুল মকসুদ, দৈনিক প্রথম আলো, ০১ এপ্রিল ২০১৪ খ্রীঃ/
উম্মুক্ত উৎস
৩৬. বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত মসজিদগুলির তালিকা/
৩৭. বাংলাপিডিয়া/