কুমিল্লা-কোটবাড়ি-কালির বাজার রাস্তা ধরে কালির বাজারের দিকে যেতে থাকলে বাংলাদেশ একাডেমী ফর রুরাল ডেভলপমেন্ট (BARD)’র প্রধান গেট অতিক্রম করে হাতের ডানে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পূর্ব/ডান দিকের প্রাচীর সংলগ্ন স্থানে লোতিকোট মুড়ার অবস্থান। এটি মাঝারি আকারের একটি বৌদ্ধ বিহার। বিহারের পাশ্ববর্তী স্থানে বেশ কয়েকটি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে। এই সবের মধ্যে ভোজ বিহার, রূপবান মুড়া ও ইটাখোলা মুড়া অন্যতম। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ২০০৩ খ্রীঃ বিহারটির খনন কাজ করা হয়। খননে উম্মোচিত অংশ ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধারনা করা হয় বিহারটি সম্ভবতঃ ৮ম-১০ম খ্রীঃ কোন এক সময় নির্মিত।
বিহারটি উত্তরমূখী ফলে এর প্রবেশ তোরনটিও উত্তর দিকে। আয়তকার বিহারটির দৈর্ঘ্য ৪৭.২৩ মিটার ও প্রস্থ ৪৪.৪৯ মিটার। সচারচর বৌদ্ধ বিহারগুলোর যে বৈশিষ্ট্য থাকে অর্থাৎ প্রতিটি বিহারে কমপক্ষে একটি কেন্দ্রীয় মন্দির ও একটি আবাসিক এলাকা থাকে। কিন্তু এই বিহারে কোনো ধরনের মন্দিরই নেই। হতে পারে বিহারটি পার্শ্ববর্তী কোনো বিহারের সম্প্রসারিত অংশ। কিংবা এটি পরবর্তীকালের ভিন্নমার্গীয়দের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোন বিহার। বিহারের চারিদিকে সারিবদ্ধ ৩৩ টি ঘর রয়েছে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পড়ালেখার জন্য সেখানে বসবাস করতেন। ২য় নির্মাণ যুগে বিহারের পূর্ব দেওয়ালের মধ্যভাগে একটি মন্ডপ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
স্থাপত্যের কোন কোন স্থানে সীমিত আকারে সংস্কার কাজ করা হয়েছিল। ধারনা করা হয় ২টি নির্মাণ যুগে বিহারটি প্রতিষ্ঠা/সংস্কার করা হয়। বিহারে কোন ধরনের কারুকাজ ছিল না বলেই অনুমিত হয়। এমনকি উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো প্রত্ন নিদর্শনও এখানে পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গেছে তাও ধর্ম সংক্রান্ত নয়। লোতিকোট মুড়া সম্পর্কে জানতে হলে আরো ব্যাপকভাবে উৎখনন ও পাশাপাশি গবেষণা প্রয়োজন। কে জানে!!! এই মাঝারি আকারের বৌদ্ধ বিহারটিই হতে পারে নতুন কোনো ইতিহাসের সূতিকাগার!
০১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮/ঢাকা-১২৩০/
তথ্যসূত্রঃ
১. কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু, মো. লুৎফুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ জানুয়ারী ২০১৬ খ্রীঃ/
২. ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকীর্তির নাম, রমজান বিন মোজাম্মেল, দৈনিক ইত্তেফাক, ১৩ আগষ্ট ২০০৭ খ্রীঃ/
৩. পুরাতত্ত্বের বাংলাদেশ ঐতিহ্যের বাংলাদেশ, মোহা. মোশাররফ হোসেন, পৃঃ ১৫৮/
৪. গ্রাফোসম্যানের ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা, ড. ছন্দশ্রী পাল, পৃঃ ৯৪/
৫. হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ, পৃঃ ৩৯৯/
৬. প্রাচীন বাংলার ধুলো মাখা পথে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ৬০/
৭. উইকিপিডিয়া/