কুমিল্লা

প্রাচীন বাঙলা রাষ্ট্রের অখন্ড সীমানা নির্ণয় করা দুস্কর – এ যেমন সত্য, তেমনি প্রাচীন বাঙলা যে ১৬ টি জনপদ নিয়ে গঠিত হয়েছিল আর সমতট যে এর মধ্যে অন্যতম এও সত্য। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাঙলায় ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনা ও বাঙলার মধ্যাঞ্চল বিশেষ করে মেঘনা নদীর পূর্বাঞ্চলের সমতল নিম্নভূমি যা বঙ্গ ও সমতট নামে পরিচিত ছিল তা ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, খুলনা, যেশোহর, বরিশাল, নোয়াখালী, ফেনী ও সমগ্র কুমিল্লা এবং ভারতের ২৪ পরগনা ও ত্রিপুরা রাজ্যের বৃহৎ অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছিল। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত বাঙলার বিখ্যাত এই ভৌগলিক অঞ্চল ইতিহাসের পাতায় সময়ের প্রেক্ষাপটে কখনো কখনো একক স্বত্ত্বা হারিয়ে ফেলেছে, তাই আমরা এই একই ভূখন্ড কখনো বঙ্গ আবার কখনো সমতট নামে দেখতে পাই। ৪র্থ শতকে যেমন একটি স্বতন্ত্র রাজ্য হিসাবে এটি পরিগনিত হয়েছে তেমনি, আবার ৬ষ্ঠ শতকের আগে-পরে বৃহত্তর এই অঞ্চল রাজনৈতিক বিবেচনায় পুনরায় আলাদা হয়ে ‘বঙ্গ’ ও ‘সমতট’ নাম ধারন করেছে। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততায় হরিকেল (শ্রীহট্ট/সিলেট) ও মায়ানমারের আরাকানও কালের মাহেন্দ্রক্ষণে সমতটের অন্তর্ভূক্ত হয়। আমরা জানি, কুমিল্লার প্রাচীন নাম সমতট (সমুদ্র তটের সমান) আর সমতট একটি সংস্কৃত শব্দ, সম্ভবতঃ আর্যদের দ্বারাই এই নাম প্রবর্তিত হয়েছিল।

মেঘনা, গোমতি, তিতাস, ডাকাতিয়া আর ছোট ফেনী নদী বিধৌত পলিমাটি দ্বারা গঠিত কুমিল্লা অঞ্চলের সাধারন ভূমি। কিন্তু কুমিল্লা শহরের ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে আনুমানিক ১৭.৬০ কিলোমিটার উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত ও সর্বোচ্চ ২.৫-৩.০ কিলোমিটার প্রশস্ত এক অনুচ্চ (গড় উচ্চতা আনুমানিক ১৫ মিটার ও সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩০ মিটার) ও অপ্রশস্ত এক পাহাড়-শ্রেণি রয়েছে। ভূমি গঠন (প্লাইস্টোসিন কালের পলি দ্বারা গঠিত, আনুমানিক ১০,০০০–১০,০০,০০০ বছরের প্রাচীন) বিবেচনায় সারা বাংলাদেশের প্রাচীনতম ৩টি স্থানের একটি ও পুরো কুমিল্লা অঞ্চলের এটিই একমাত্র পর্বতশ্রেণি (২৩°২’-২৩°২৯’৪৮” উত্তর-অক্ষাংশ থেকে ৯১°৬’৪৮”-৯১°৯’১২” পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) যেখানে সাকুল্যে ৩৫৬টি ছোট-বড় পাহাড়/টিলা রয়েছে যার উপরিতল প্রায় সমতল ও লাল পুরোনো পললে গঠিত। পাহাড় শ্রেণির উত্তরের অংশ ‘ময়নামতি পাহাড়’ আর দক্ষিণের অংশ ‘লালমাই পাহাড়’ নামে পরিচিত। কুমিল্লা সদর ও বরুড়া উপজেলাধীন এই পাহাড়দ্বয়কে ভেদ করে বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ত ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে। ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ে প্রাপ্ত প্রস্তরীভূত কাঠ আর নব্য-প্রস্তর যুগের বসতি ও অস্ত্র-শস্ত্র, প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির হাতিয়ার, সাঁওতাল ও টিপরা সম্প্রদায়ের আবাসস্থল ইত্যাদি প্রমাণ নিঃসন্দেহে এর ভূমি গঠন লক্ষ-লক্ষ বছর পূর্বে বলেই নিশ্চিত করে।

ময়নামতি পাহাড় আর লালমাই পাহাড়ের নামকরণ নিয়ে আছে নানা কিচ্ছা-কাহিনী। অনেক অনেক কাল আগে এখানে বাস করতেন এক রাজা। তার ছিল দুই মেয়ে – এক মেয়ের নাম ময়নামতি আরেক মেয়ের নাম লালমতি। রাজকুমারীদের নাম থেকেই পাহাড়দ্বয়ের নামকরণ হয়েছে যথাক্রমে ময়নামতি পাহাড় আর লালমাই পাহাড়।

বাংলার প্রসিদ্ধ চন্দ্র রাজবংশের (আনুমানিক ৮৬৫-১০৫৫ খ্রীঃ) রাজা মানিকচন্দ্রের (আনুমানিক ৯০০–১০০০ খ্রীঃ) স্ত্রীর নাম ময়নামতি। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, ঐ একই রাজবংশের রাজা লহরচন্দ্র/লডহচন্দ্রের (আনুমানিক ১০০০-১০২০ খ্রীঃ) স্ত্রী ও রাজা গোবিন্দচন্দ্রের (আনুমানিক ১০২০-১০৫৫ খ্রীঃ) মায়ের নাম ছিলো ময়নামতি। বিদূষী ও যোগী এই কিংবদন্তী মহিলার নামানুসারেই ময়নামতি নামকরণ করা হয়েছে। গোরক্ষ বিজয় পুঁথির নায়িকা ময়নামতি, বাংলা লোক/নাথ সাহিত্যে বিশেষ করে ১৭-১৮ শতাব্দীতে প্রচলিত মানিকচন্দ্র, গোপীচন্দ্রের গান ও অন্যান্য পুঁথিতে সমহিমায় উজ্জ্বল। সঙ্গত কারণেই মনে হয়, লালমাই-ময়নামতি পাহাড় শ্রেণির লালমাই অপেক্ষা এই অংশের ময়নামতি নামকরণ তাই বেশ পরবর্তীকালের।

লালমাটির লাল রংয়ের কারণে এলাকাটি লালমাই নাম ধারন করেছে। চন্দ্রবংশীয় রাজগণের একাধিক তাম্রশাসনে এই অঞ্চলের নাম ‘রোহিতগিরি’ উল্লেখ থাকায় এবং নামের সাদৃশ্য দেখে লালমাই নামের প্রাচীনতা সহজেই বোঝা যায়, কেননা রোহিত অর্থ লাল বর্ণ আর গিরি মানে পাহাড়। ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এই মতকে সমর্থন করেন এবং তার মতে লালমাই-এর সংস্কৃত রূপই হলো রোহিতগিরি।

লালমাই নামকরণে রামায়নের (আনুমানিক খ্রীঃপূঃ ৪র্থ শতাব্দী) একটি কাহিনী স্থানীয়দের মাঝে বেশ প্রচলিত আছে। লঙ্কাদ্বীপের রাজা রাবন সীতাকে অপহরন করে নিয়ে গেলে রাম ও লক্ষন দু’ভাই মিলে সীতার উদ্ধার অভিযানে বের হয়। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে রামের ছোট ভাই লক্ষন যুদ্ধাস্ত্র শক্তিশেলের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে ডাকা হয় রাজ বৈদ্যকে। রাজ বৈদ্য আশংকা নিয়ে পথ্য দিলেন – ‘ক্ষতস্থানে বিশল্যাকরনী গাছের পাতার নির্যাস সূর্যোদয়ের পূর্বে না লাগালে রোগীকে বাঁচানো যাবে না’। কোথায় পাওয়া যাবে সেই গাছ? লঙ্কা থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে হিমালয় পর্বতের গন্ধমাদন পর্বত ছাড়া পাওয়া যাবে না সেই গাছ। তাহলে উপায়? রামভক্ত হনুমান তড়িঘড়ি করে বাতাসে ভর করে ছুটলো হিমালয় পানে। হিমালয়ে পৌঁছলে পর সে আর গাছ চিনতে পারে না, তাই পুরো গন্ধমাদন পর্বতকে মাথায় তুলে হাজির হলো। রাজ বৈদ্য গাছ বেছে নিলে হনুমান আবার সেই পাহাড় মাথায় করে ফিরতি পথ ধরলো। পথি মধ্যে এক জায়গায় প্রাকৃতিক শোভায় মোহিত হয়ে সে আনমনা হয়ে পড়ায় পাহাড়ের খানিকটা অংশ সেখানেই খসে পড়লো। যেখানে ঐ অংশটুকু পড়লো সেখানে ছিল ‘লমলম’ সাগর। সাগরে পাহাড় পড়ায় সাগর আর সাগর থাকলো না, হয়ে গেল অনুচ্চ পাহাড় – সেই পাহাড়ই লালমাই পাহাড়/লালম্বী বন।

পাহাড় শ্রেণির সর্ব উত্তরে রানীর বাংলোর পাহাড় আর সর্ব দক্ষিণে চন্ডীমুড়া মন্দির পাহাড় অবস্থিত। এর মাঝখানে রয়েছে বিভিন্ন সময়ের প্রত্ন-নিদর্শন। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে পর্যায়ক্রমে রাণীর বাংলো/ময়নামতি প্রাসাদ, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের পাহাড়, চারপত্র মুড়া, বৈরাগীর মুড়া, কুটিলা মুড়া, অদুনা-পদুনা মুড়া, আনন্দ বিহার, ভোজ বিহার, ইটাখোলা মুড়া, খিলা মুড়া, পাক্কা মুড়া, রূপবান মুড়া, শালবন বিহার, উজিরপুর মুড়া, বলাগাজী মুড়া ও চন্ডি মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই সব স্থাপনার ফাঁকে ফাঁকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য দিঘীর উপস্থিতি এক সম্মৃদ্ধ, জনবহুল, স্থায়ী জনপদেরই ইঙ্গিত বহন করে। এই সবের মধ্যে আনন্দ রাজার দিঘী, শালবন রাজার দিঘী, পদুয়ার দিঘী, দ্বিতীয়ার দিঘী, মহীর দিঘী, হবলুয়া দিঘী, সঙ্গু দিঘী, জয়ঠমের দিঘী, ভোজ রাজার দিঘী, লাল দিঘী ও ধৈন্যাখোলার দিঘী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২য় বিশ্ব যুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রীঃ) সময় বৃটিশ সেনাবাহিনীর ১৪ ডিভিশনের সৈন্যদের জন্য সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হলে প্রত্ন-স্থাপনাটি ১৯৪৩-১৯৪৪ খ্রীঃ দিকে সকলের গোচরে আসে। মূলতঃ ১৮০৩ খ্রীঃ রাজা রণবঙ্কমল্ল শ্রীহরিকেলদেবের (আনুমানিক ১২০৪-১২৩০ খ্রীঃ) কোটবাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত ‘কোটবাড়ির তাম্রলিপি’, ১৮৭৫ খ্রীঃ কুমিল্লা-কালির বাজার রাস্তা তৈরীর সময় ‘পোড়ামাটির ফলক, নকশা করা ইট আর গোটা একটা দেওয়ালের অংশ’, রূপবান মুড়ার ‘৭টি পাত্র, ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত ছোট ছোট বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ-মূর্তি’ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের প্রত্নতাত্বিক খনন কাজে উৎসাহ জোগায়। ১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দেই ‘ইস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক গেজেটিয়ার’-এ এই সব লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার প্রথমে ১৫টি ও ১৯৫৫-৫৬ খ্রীঃ ৫৪টি প্রত্ন-স্থান চিহ্নিত করে সবশেষে ২০টি স্থানকে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

চিহ্নিত ৫৪ টি প্রত্ন-স্থানের মধ্যে ২৩টি স্থান খননযোগ্য বলে বিশেষজ্ঞরা একমত পোষন করেন। ফলে ১২টি প্রত্ন-স্থানের খনন কাজ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা করা হয়েছে, বাকীগুলোও হয়তো পর্যায়ক্রমে খনন করা হবে। ১৯৫৫-১৯৬৮ খ্রীঃ আনুষ্ঠানিকভাবে বেশ কয়েকবার খনন কাজ পরিচালনা করা হলে বাঙলার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। মাটির নীচ থেকে একে একে বের হয়ে আসে শালবন বিহার, ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, লোতিকোট মুড়া, ভোজ বিহার, আনন্দ বিহার, চারপত্র মুড়া, কুটিলা মুড়াসহ নানা স্থাপনা। সেই সাথে ‘মহারাজা শ্রীবৈন্য গুপ্তস্য’ লেখা বৈন্যগুপ্তের তাম্রলিপি, ‘শ্রীমৎদেবখড়গ’ ও ‘রাজপুত্র বলভট্ট’ লেখা দেবখড়গের তাম্রলিপি, খড়গ তাম্রলিপি, ‘পরমেশ্বর রাজপুত্র বলভট্ট’, ‘দেবপর্বত জয়স্কন্ধবারে’, ‘কটকশিলা’, ‘নবকর্ম’, ‘স্বামী দেবখগড়’, ‘খগড়’, ‘জাত খড়গ’ ইত্যাদি লেখা বলভট্ট তাম্রলিপি, ‘শ্রীবঙ্গাল মৃগঙ্কস্য’ লেখা আনন্দদেবের তাম্রলিপি, আনন্দদেবের পুত্র ভবদেবের তাম্রলিপি ও দেববংশীয় তাম্রলিপিসহ মোট ১২ টি তাম্রলিপি/তাম্রশাসন উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ১৯৮৯ খ্রীঃ ও ১৯৯১ খ্রীঃ লালমাই পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করা হলে আরো ১১ টি প্রত্ন-ক্ষেত্রের অবস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

এছাড়া, ৪০০টি সোনা-রূপা-তামার মুদ্রা, পোড়ামাটির সীল, বৌদ্ধধর্মীয় মন্ত্রযুক্ত সীল, মাটির খেলনা, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, মাটির মুখোশ, নকশাকাটা ইট, বাঁকানো ইট, ঢাল-তলোয়ার-ধনুক-তীর হাতে যোদ্ধা, অস্ত্র-শস্ত্র, ব্রোঞ্জের ঘন্টা (৩৭০ কেজি ওজন), অলংকার, নারী মূর্তি, পাথরের গণেশ মূর্তি, ৮ হাত বিশিষ্ট দেবী মারিচি (মহাযান মতে বুদ্ধের নারী সঙ্গিনী), দেবতা হেরুক, বেলে পাথরের তৈরী দেবী তারার মূর্তি, ব্রোঞ্জ দ্বারা নির্মিত বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব, প্রজ্ঞাপারমিতা, পদ্মপানি, তারা, জম্ভল, মঞ্জুশ্রী ইত্যাদি সহ ১৫০টির বেশী বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তি, লোকনাথের তামার তৈরী মাথা, অসংখ্য মূল্যবান পাথরের গুটিকা, মাটির পাত্রে রাখা লিপি ও বৌদ্ধগুরুদের অস্থিধাতু, ভিক্ষাপাত্র, ব্রোঞ্জের দ্বারা নির্মিত স্মারকাধার, ব্রোঞ্জের স্তুপ-প্রতিকৃতি, ব্রত উৎযাপনরত চলস্তুপ, রূপার খন্ড, গৃহস্থলীর নানান সামগ্রী – দোয়াত, প্রদীপ, লোহার কড়ি, পেরেক, বড়শি, দা, ছুরি, কাঁচি, কোদাল, খন্তা, শিল-নোড়া, জাতাকল ইত্যাদিও পাওয়া যায়। ২০০৪ খ্রীঃ ১৭১ টি প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতির হাতিয়ারের সন্ধান পাওয়ায় এখন প্রত্ন-তাত্ত্বিকরা ধারনা করছেন যে, এখানে হয়তো প্রাগৈতিহাসিক সময়ে হাতিয়ার তৈরীর কারখানা ছিল। যাহোক, বিশেষজ্ঞদের ধারনা ৬ষ্ঠ-১২ শতকের এই সব প্রত্ন-নিদর্শন গুপ্ত, রাত, খড়গ, দেব, চন্দ্র ও পট্টিকেরা রাজ বংশের বিভিন্ন রাজাদের অমর কীর্তি।

২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ঠিকাদাররা এখানকার ইট তুলে নিয়ে গিয়ে কুমিল্লা বিমান বন্দর গড়ে তোলে। সেনানিবাস তৈরীর সময় প্রাথমিক স্থাপনাসমূহেও এই সকল ইট ব্যবহৃত হয়েছে। ইট উত্তোলন ও মাটি খোড়ার কারণে অমূল্য এই সব নিদর্শনের একটি বিশাল ভান্ডার আমাদের হাতছাড়া হয়েছিল অনেক আগেই, এরপরও যে সব টিকে ছিল তার একটি অংশ কুমিল্লার ‘রামমালা জাদুঘর’-এ স্থান পায়। কিন্তু সেই সবও পরবর্তীতে হারিয়ে যায়। যাহোক, ১৯৬৬ খ্রীঃ ১২ মার্চ শালবন বিহারের পাশে ময়নামতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হলে প্রত্ন-নিদর্শনগুলোর খানিকটা সেখানে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তারপরও, ১৯৭১ খ্রীঃ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ময়নামতি জাদুঘর থেকে ৩৬টি অত্যন্ত মূল্যবান ব্রোঞ্জমূর্তি হারিয়ে যায়। বাংলাদেশের সর্বাধিক বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপনা এখানে আবিষ্কৃত হওয়ায় সাধারনভাবে ধারনা করা হয় যে, এখানে বৌদ্ধ জনপদ ব্যাপক সম্মৃদ্ধি অর্জন করেছিল। কিন্তু প্রাপ্ত নিদর্শনাদি দেখে বিশেষ করে বৌদ্ধ নিদর্শনাদি ছাড়াও জৈন ও হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তি পাওয়া যাওয়ায় এই স্থানের প্রত্ন-তাত্বিক গুরুত্বের পাশাপাশি ঐতিহাসিক গুরুত্বও সমভাবে বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। বস্তুতঃ এই সব নিদর্শন আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সমাজচিত্র, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সম্যক ধারনা জুগিয়েছে।

মৌর্য্য সম্রাট অশোক (খ্রীঃপূঃ ২৬৯–খ্রীঃপূঃ ২৩২), কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে বৌদ্ধধর্মের অনুসারী হলে পর সমতট অঞ্চলেও বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটতে থাকে। মৌর্য্য যুগে (খ্রীঃপূঃ ৩২১ – খ্রীঃপূঃ ১৮৫) ব্যবহৃত মূল্যবান পাথরের গুটিকা, সমুদ্রগুপ্ত (৩৩৫-৩৭৫ খ্রীঃ)’র অশ্বমেধ যজ্ঞের সোনার মুদ্রা, সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত (৩৭৫-৪১৫ খ্রীঃ)’র সোনার মুদ্রা ও মহারাজা/মহারাজাধিরাজ বৈন্যগুপ্তের (আনুমানিক ৫০৭–৫০৮ খ্রীঃ) তাম্রলিপি প্রাপ্তি এই অঞ্চল মৌর্য্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের (৩২০–৫৫০ খ্রীঃ) সাথে সম্পৃক্ত যে ছিল তা ধারনা করা যায়। তবে সমতট যে সরাসরি মৌর্য্য সাম্রাজের অন্তর্ভূক্ত ছিল ইতিহাসে এমন প্রমাণ এখনো মেলেনি। কিন্তু সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তিতে সমতট যে তার একটি করদ রাজ্য ছিল এবং সামান্য সময়ের জন্য হলেও তাকে যে কর প্রদান করতো তা উল্লেখ আছে। যত দূর জানা যায়, ৬ষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে মহারাজাধিরাজা ধর্মাদিত্য (৫৩৫–৫৪০ খ্রীঃ) গুপ্ত রাজবংশের কাছ থেকে সমতট দখল করতে সক্ষম হয় এবং তার উত্তরসূরী গোপচন্দ্র (৫৪০–৫৮০ খ্রীঃ) ও নরেন্দ্রাদিত্য সমাচারদেব (৫৮০–৬০০ খ্রীঃ) পরবর্তীতে রাজদন্ড রক্ষা করে চলে।

চীনের হেনান প্রদেশে জম্মগ্রহণকারী বিখ্যাত পরিব্রাজক য়ুয়াং চুয়াং/উয়ান চুয়াঙ/হিউয়েন সাঙ (Hiuen Tsang-জম্ম ও মৃত্যু ৬০৩ ও ৬৬৪ খ্রীঃ) ৬২৯ খ্রীঃ নিজ দেশ থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন ও ভ্রমণ শেষে ৬৪৫ খ্রীঃ দেশে ফেরত যান। তিনি ৬৩৮-৬৩৯ খ্রীঃ বাংলায় ভ্রমণের পূর্বে ২ বছরের মতো ভারতের বিখ্যাত নালন্দা মহাবিহারে বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যায়ন করেন এবং তিনি সেখানে সমতট দেশের রাজপুত্র মহামতি শীলভদ্রের (৫২৯–৬৫৪ খ্রীঃ) সান্নিধ্যে আসেন। শীলভদ্র তখন নালান্দার মহাস্থবির হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন। উক্ত পরিব্রাজকের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, ব্রাহ্মণ এক রাজবংশ রাজা গোপচন্দ্রের নিকট থেকে রাজ্য কেড়ে নেন এবং তারপরই খড়গ বংশ সমতট এলাকায় রাজ্য পরিচালনার সুযোগ পায়। এরপর খড়গ রাজবংশ আনুমানিক ৬২৫-৭২০ খ্রীঃ পর্যন্ত এই অঞ্চল শাসন করে। কুমিল্লা জেলার ১৯ কিলোমিটার পশ্চিমে চান্দিনা উপজেলায় অবস্থিত ‘বড়কামতা’ গ্রামে ‘জয়কর্মান্ত বসাক’ নামে বৌদ্ধ ধর্মের এই রাজাদের যে রাজধানী ছিল সেখান থেকেই তারা তাদের রাজ্য পরিচালনা করতো। জেলার দেউলবাড়ি গ্রামের ‘শর্বাণী’ মূর্তিলিপি ও ‘আশরাফপুর তাম্রলিপিদ্বয়’ থেকেও এর প্রমান মেলে। বিভিন্ন তাম্রশাসন থেকে ‘নৃপাধিরাজ খড়েগাদ্যম’, জাতখড়গ, দেবখড়গ ও রাজরাজভট্ট নামের ৩ জন নৃপতি ও যুবরাজ রাজরাজভট্টের মা রাণী প্রভাবতীর নাম পাওয়া যায়। সম্ভবতঃ সমগ্র সমতট অঞ্চল এই সময় তাদের একক শাসনে শাসিত হয়নি বরং পাশাপাশি বিভিন্ন সামন্ত রাজাদের দ্বারাও শাসিত হযেছে। কিংবা তাদের দ্বারা নিযুক্ত সামন্ত রাজাদের কাছে কোন কোন রাজ্যের ভার অর্পন করা হয়েছিল।

৭ম শতাব্দীতেই খড়গ রাজবংশের সমসাময়িক সামন্ত রাজ্যের ও রাজাদের পরিচয় পাওয়া যায়। ব্রাহ্মাণ্য ধর্মমাবলম্বী এই সব বংশের অন্যতম মহাসামন্ত শিবনাথ, শ্রীনাথ, ভবনাথ ও লোকনাথ রাজত্ব করার সুযোগ পান। একই সময় সমতটপতি শ্রীজীবধারনরাত (৬৪০–৬৬০ খ্রীঃ) ও তার পুত্র প্রাপ্ত-পঞ্চ-মহাশব্দঃ সমতটেশ্বর শ্রীধারনরাত এবং প্রাপ্ত-পঞ্চ-মহাশব্দঃ/ভট্টারক বলধারনরাত (৬৬০–৬৭০ খ্রীঃ) নামের ‘রাত রাজবংশ’-এর নৃপতিদেরও পরিচয় পাওয়া যায়। কুমিল্লার কইলান গ্রামে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে এই রাজবংশের তথ্য-প্রমান মেলে। রাজা শ্রীমহাসামন্ত শশাংকের (৬০৬–৬২৫ খ্রীঃ) ১টি দুর্লভ রূপার মুদ্রা এখানে পাওয়া যাওয়াতে মনে হয় প্রথম বাঙালী স্বাধীন ও সার্বভৌম এই রাজার সাথে এদের কোন-না-কোন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সম্পর্ক ছিল। প্রকৃতপক্ষে, খড়গ নৃপতিগন প্রথমে বঙ্গ অধিকার করে ও পরে রাত বংশকে উচ্ছেদ করে সমতটে রাজ্য বিস্তার করে।

৭ম শতাব্দীর শেষ দিকে ও ৮ম শতাব্দীর প্রথম দিকে বৌদ্ধ দেব রাজবংশ রাজ্য লাভ করার ঠিক আগ দিয়ে ভট্ট রাজবংশের (যদি এরা খড়গ নৃপতি রাজরাজভটের উত্তরসূরী না হয়) কাছে মনে হয় খড়গ রাজবংশের পতন ঘটে। বলভট্ট ও সর্বভট্ট নামধারী দু’জন রাজার নাম এখানে প্রাপ্ত তাম্রলিপি ও তাদের মুদ্রার মাধ্যমে জানা যায়। যাহোক, দেব রাজবংশের মহারাজাধিরাজ/পরমসৌগত পরমভট্টারক পরমেশ্বর মহারাজাধিরাজ/শ্রীভঙ্গল মৃগঙ্কস্য উপাধিধারী শ্রী শান্তিদেব, শ্রী বীরদেব, শ্রী আনন্দদেব, শ্রী ভবদেব ও শ্রী কান্তিদেব পর্যায়ক্রমে আনুমানিক ৭২০–৯৫০ খ্রীঃ পর্যন্ত রাজ্য শাসনের ভার পান। এরা সবাই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। প্রথম দিকের আব্বাসীয় খলিফা/খিলাফতের (৭৫০–১২৫৮ খ্রীঃ) অধীন বাগদাদের খলিফা আল-মুসতাসিম বিল্লাহর ১টি মুদ্রা পাওয়া যাওয়ায় ধারনা করা স্বাভাবিক যে এখানকার সাথে আরবদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ছিল।

৯ম শতকের সমতট তথা কুমিল্লার ইতিহাস প্রায় অজ্ঞাত রয়ে গেছে। যাহোক, এরপর সমতট চন্দ্রবংশীয় রাজাদের দখলে চলে যায়। মহা পরাক্রমশীল এই রাজবংশ (আনুমানিক ৮৬৫-১০৫৫ খ্রীঃ) শুধু সমতটই নয় বরং বঙ্গ, হরিকেল (শ্রীহট্ট/সিলেট), প্রাগজ্যোতিষ/কামরূপ/কামাত (ভারতের আসাম প্রদেশ) ও মায়নমারের আরাকান অঞ্চল নিজ শাসনের পদতলে আনতে সক্ষম হয়। সম্ভবতঃ পূর্ণচন্দ্র ও তৎপুত্র সুবর্ণচন্দ্র প্রাথমিক পর্যায়ে খড়গ রাজাদের সামন্ত হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং পরবর্তী ১০০ বছর স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করে। এই বংশেরই আদিপুরুষ পূর্ণচন্দ্র–উপরে উল্লিখিত রোহিতগিরি/রোহিতাশ্ব (রোহতাসগড়) পর্বতের অধিকারী ছিলেন এবং এই বংশের তিনিই প্রথম বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। সঠিক স্থান এখনো নির্ণয় করা সম্ভব না হলেও ধারনা করা হয় ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে ক্ষীরোদা নদীর (এখন যেটা ক্ষীরা নদীর মরা খাত) তীরে ‘দেবপর্বত’ নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী চন্দ্র রাজবংশের অপর নৃপতিগণ যথাঃ ত্রৈলোক্যচন্দ্র, শ্রীচন্দ্র, কল্যাণচন্দ্র, লড়হচন্দ্র ও গোবিন্দচন্দ্র বেশ দাপটের সাথে সমগ্র সমতট প্রায় ১৫০ বছর দখলে রাখে। বিস্তৃত সমতটের রাজধানীসমূহের (জয়কর্মান্ত বসাক, রোহিতগিরি, পট্টিকেরা, দেবপর্বত) মধ্যে খড়গ নৃপতি বলভট্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দেবপর্বত সমগ্র বাংলার ইতিহাসে বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে। দেবপর্বত প্রায় ৩০০ বছর রাজধানী হিসাবে এর গুরুত্ব ও গৌরব সমানতালে বজায় রাখতে সক্ষম হয়। রাজধানী হিসাবে পত্তন হবার আগেও এই স্থান তীর্থভূমিতে পরিনত হয়েছিল। ময়নামতি তাম্রশাসন ও কইলান তাম্রশাসনে দেবপর্বতের দালিলিক প্রমাণ এখন স্পষ্ট।

প্রবল ক্ষমতাধর চন্দ্রবংশের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে সম্ভবতঃ ১১ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ১২ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বৈষ্ণব বর্মা/বর্মণ রাজবংশ সমতট শাসন করে। ভারতের তখনকার কলিঙ্গ বা এখনকার উড়িষ্যা রাজ্য থেকে এসে গোড়া ব্রাহ্মণ রাজা বজ্রবর্মার উত্তরসূরী জাতবর্মা মূলতঃ বাঙলার পাল সাম্রাজ্যের (৭৫০–১২০০ খ্রীঃ) দূর্বল মূহুর্তে অঙ্গ (বিহার) জয় করে নেয়। পরবর্তীতে কৈবর্ত রাজা দিব্বক্যের (১০৭১–১০৮০ খ্রীঃ) কাছ থেকে বরেন্দ্র ও পাল রাজগনের কাছ থেকে পুর্ববঙ্গ/সমতট দখল করে বিক্রমপুরে রাজধানী স্থাপন করে স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকে। রাজা হরিবর্মা, শ্যামলবর্মা ও ভোজবর্মার রাজ্যকালের (আনুমানিক ১০৫৫–১১৪৫ খ্রীঃ) পরপরই হিন্দু ধর্মের অনুসারী ভারতের কর্ণাটক নিবাসী সেন রাজা বিজয় সেন (১০৯৭–১১৬০ খ্রীঃ) তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

শালবন বিহার থেকে যে ২২৪টি রূপার মুদ্রা পাওয়া গেছে সেই সব মুদ্রার মুখ্য পিঠে ‘একটি উপবিষ্ট ষাঁড়’ ও ষাঁড়ের উপর ‘পট্টিকেরা’ লেখা আছে। বাংলাদেশের স্থানীয়ভাবে প্রচলিত মুদ্রার মধ্যে এই মুদ্রাগুলো সর্ব-প্রাচীন, সম্ভবতঃ ৭ম-৮ম শতাব্দীতে এই সব মুদ্রার প্রচলন হয়েছিল। প্রাচীনতম মহাযান সূত্রাবলীর মূলগ্রন্থ ‘অষ্টসহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা’য় (১০১৫ খ্রীঃ পুনঃলিখিত) ১৬ হাত বিশিষ্ট একটি দেবী মূর্তির ছবি আছে যার নীচে লেখা আছে ‘পট্টিকেরে চুন্ডাবরা ভবনে চুন্ডা’। ১৮০৩ খ্রীঃ রাজা রণবঙ্কমল্ল শ্রীহরিকেলদেবের ‘কোটবাড়ির তাম্রলিপি’ থেকে জানা যায়, রাজা রণবঙ্কমল্ল শ্রীহরিকেলদেব ১২২০ খ্রীঃ তার রাজত্ব্যের ১৭তম বছরে পট্টিকেরা নগরীতে এক বৌদ্ধ বিহারের জন্য কিছু পরিমান জমি দান করেন। মায়ানমারের বার্মীজ ও আরাকানী বিভিন্ন কাব্য, নাটক, লোকগাঁথা ও ইতিহাসে (১১/১২ শতাব্দী) পট্টিকেরা রাজ্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ আছে। পট্টিকেরা রাজ্য আসলে কোথায় ছিল তার সঠিক তথ্য উৎঘাটন সম্ভব না হলেও এখনো ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ের উত্তর প্রান্তের পূর্বদিকে পট্টিকেরা শহরের ধ্বংসাবশেষ আছে বলে অনুমান করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, কুমিল্লা জেলায় পট্টিকেরা/পাইটকারা (স্থানীয় ভাষায়) বলে একটি মৌজা আছে এবং মূঘল রাজস্ব তালিকায় এই নামে একটি পরগনার নাম পাওয়া যায়। ধারনা করা হয় সেন রাজত্ব্যের (১০৬০–১২৮৯ খ্রীঃ) অব্যবহতি পরেই/সমসাময়িক কালে রাজা রণবঙ্কমল্ল শ্রীহরিকেলদেব এখানেই রাজধানী স্থাপন করে স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করেন।

সেন রাজবংশের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ঠিক একই সময়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী শ্রীবীরধরদেব (১২৩০–১২৫০ খ্রীঃ) স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে রাজ্য শাসন করতে থাকেন। এছাড়াও রাজা পুরুষোত্তম, মধুমথনদেব, বাসুদেব ও ‘অরিরাজ দনুজ মাধব’ উপাধিধারী রাজা দামোদরদেব (১২৩০–১২৪৩ খ্রীঃ) সহ এই বংশের নৃপতিরা ও রাজা দশরথদেব সম্ভবতঃ ১৩/১৪ শতাব্দী পর্যন্ত সমতটে রাজত্ব করার পর এই অঞ্চল মুসলিম অধিকারে আসে। অতএবঃ দেখা যাচ্ছে, এখানে কমপক্ষে ৬-৮ টি রাজবংশের অন্তত ৩০ জন রাজা পর্যায়ক্রমে রাজত্ব করেছেন।

৬৪৮ খ্রীঃ লেখা চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে জানা যায় যে, তিনি বাঙলায় ভ্রমণকালে সারা বাঙলায় ৭০টি বৌদ্ধ সংঘ ও ২০০০ শ্রমণের দেখা পেয়েছিলেন। সমুদ্র উপকূলবর্তী ‘সান-মো-তা-লো’ বা বাংলার সমতটের ‘‌‌কিয়া-মলং-কিয়া’ বা কুমিল্লায় যখন আসেন তখন তিনি এখানে কমপক্ষে ৩০টি বৌদ্ধবিহার, ১০০টি দেবমন্দির, তাম্রলিপি এবং বড়কামতা গ্রামে খ্রীঃপূঃ ২য় শতাব্দীর একটি অশোক স্তম্ভ/অশোকের আমলে নির্মিত একটি বৌদ্ধস্তুপেরও দেখা পান। এর পাশাপাশি তিনি জৈন সম্প্রদায়ভূক্ত কিছু দিগম্বর জৈনেরও স্বাক্ষাত পান। তার বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, তিনি ময়নামতি-লালমাই এলাকায়ও এসেছিলেন। হিউয়েন সাঙ-এর পর অপর বৌদ্ধ পরিব্রাজক শেংচি ৬৫০-৬৫৫ খ্রীঃ মধ্যে সমতটের রাজধানীতে ৪,০০০ জনেরও বেশী বৌদ্ধ ভিক্ষুক ও ভিক্ষুনী দেখেছেন বলে জানান।

এই সবই বাংলায় তখনকার বৌদ্ধ প্রভাবের সুস্পষ্ট উদাহরণ। এই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন নগর ও বৌদ্ধবিহার কেন্দ্রীক সমতট বৌদ্ধ রাজত্ব্যের রাজধানী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে পরিগনিত হয়েছে। শুধু কি রাজধানী হবার কারণেই মাত্র ৩ কিলোমিটার ব্যাসের মধ্যে ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ে মোট ৭টি বিহারের প্রয়োজন পড়লো? নাকি বৌদ্ধ সমাজ তখন নানা ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং প্রধান উপাস্য নির্বাচনে ভিন্নতা অবলম্বন করেছিল, যেমন আমরা দেখি আনন্দ বিহারের প্রধান উপাস্য অবলোকিতেশ্বর কিন্তু ভোজবিহার, রূপবান মুড়া মন্দির-বিহার ও ইটাখোলা মন্দির-বিহারে রয়েছে যথাক্রমে বজ্রসত্ত্ব, বুদ্ধ ও ধ্যানীবুদ্ধ অক্ষোভ্য। আমরা ইতিহাসে দেখেছি, অষ্টম শতকে ভারত জুড়ে শঙ্করাচার্যের প্রভাব বিস্তৃতি লাভ করলে বৌদ্ধ ধর্ম মারাত্মক সংঙ্কটে পতিত হয়। এই সময় বাঙলার মাটিতেই বৌদ্ধ ধর্ম চর্চ্চা পুনরায় জীবন লাভ করে এবং নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে সহজযান মতাদর্শের আদর্শে উৎজীবীত হয়ে বৌদ্ধ সমাজ নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি রক্ষা ও বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট হয়। বাঙলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিহারসমূহ এই ধারাকে সুসমুন্নত রাখতে তাদের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখে। পাশাপাশি এই কথা স্বীকার করতেই হবে যে, বাঙলায় বৌদ্ধধর্ম চর্চ্চার ফলে আমাদের নিজেদের ভাষা ও সাহিত্য যথেষ্ট সম্মৃদ্ধি লাভ করে। এই সময় আবির্ভাব ঘটে অতীশ দীপঙ্করের (৯৮২–১০৫৪ খ্রীঃ) মতো মহাপন্ডিতের এবং পাল আমলে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের দ্বারাই রচিত হয় বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ (রচনাকাল ৬৫০–১১০০ খ্রীঃ)। পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্মের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতা কমে গেলে ও অবস্থা বৈরী আকার ধারন করলে সিদ্ধাচার্যরা তাদের বই-পুস্তক-সাহিত্য কর্ম নিয়ে নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করে।

রাজা লড়হচন্দ্রের শাসনামলে নির্মিত ও কুমিল্লায় প্রাপ্ত নর্ত্তেশ্বর মূর্তির খোদিতলিপি পর্যালোচনা করে শ্রীযুক্ত নলিনীকান্ত ভট্টশালী দাবী করেন যে কুমিল্লার প্রাচীন নাম সমতট। এছাড়াও রাজা দামোদর দেবের মেহার তাম্রশাসন, গুনাইগর তাম্রলিপি, পাল নৃপতি মহীপালের বাঘাউরা ও নারায়ণপুর মূর্তিলিপি পাঠে দেখা যায় যে, কুমিল্লা আর সমতট অভিন্ন। মেঘনা নদীর পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা ও নোয়াখালী অঞ্চলই প্রাচীন সমতট এবং এই অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু ছিল লালমাই। আমরা আগেই জেনেছি যে, ত্রিপুরা প্রাচীন সমতটের একটি বড় অংশীদার। বাঙলার সীমানা বিভাজনের আগ পর্যন্ত কুমিল্লা এই ত্রিপুরা রাজ্যেরই অন্তর্গত ছিল। আবার ত্রিপুরার প্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায় কুমিল্লার আদি নাম কমলাংকনগর, অনেকে বলেন কমলাংক। অন্যদিকে, চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ-এর তথ্য মতে সমতটের পূর্ব দিকে যে ৫টি প্রদেশ ছিল তার মধ্যে কমলাঙ্ক/কামলঙ্কা ও শ্রীক্ষেত্র নামের ২টি প্রদেশও ছিল। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচার্য্য বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ের একটি প্রবন্ধের উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় যে, শ্রীক্ষেত্র নামের স্থানটিই বর্তমান কুমিল্লা। কিন্তু বিষয়টি সর্বজন স্বীকৃত না হওয়ায় নির্দিষ্ট করে বলার উপায় নেই যে, কমলাঙ্ক বা শ্রীক্ষেত্র বর্তমান কুমিল্লা কিনা। অধিকাংশেরই ধারনা কমলাঙ্ক থেকেই কুমিল্লা নামের উৎপত্তি।

নামকরণের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না থাকায়, কুমিল্লা নামকরণ নিয়ে রয়েছে তাই নানা জনশ্রূতি, মতামত এবং ধারনা। যেমনঃ ত্রিপুরা রাজ ধন্যমাণিক্যের রাজত্বকালে আনুমানিক পনের শতকের দিকে ‘কুমিল্ল’ নামের এক সামন্ত শাসক এখানে বসতি স্থাপন করলে তার নামানুসারে এলাকার নাম হয় কুমিল্লা। আবার অনেকেই বলেন যে, কোন এক ত্রিপুরার রাজার রাণীর নাম ছিল কমলা, আর কমলা থেকে কুমিল্লার উৎপত্তি।

জনৈক হযরত শাহজামাল ইসলাম প্রচারে মহান ব্রত নিয়ে কোন এক সময় বাংলাদেশে আগমন করেছিলেন। তিনি তার মামা আহমেদ কবির প্রদত্ত এক মুঠো মাটি নিয়ে সফর শুরু করেন এবং মামার নির্দেশানুযায়ী যেখানে এই মাটির গন্ধ, স্বাদ আর রং মিলে যাবে সেখানেই হবে তার অভিষ্ট লক্ষ্য। বহু জায়গা ঘুরে ফিরে বর্তমান কুমিল্লা শহরের পূর্বদিকে গাজীপুর মহল্লার খিলাতলীতে উপস্থিত হলে পর মামার মাটির সাথে এই মাটির মিল দেখতে পেয়ে ‌‘কোহমিলা’ ‌‘কোহমিলা’ (যার অর্থ নাকি কাঙ্খিত পাহাড়) বলে চিৎকার করে উঠেন। বুঝতেই পারছেন কোহমিলা থেকে কুমিল্লা নামের উৎপত্তি।

আবার ‘কুমিল্লা’ নামক একজন মুসলমান সেনানায়কের নামানুসারে, কিংবা ‘করমুল্লা’ নামক এক সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি এখানে বাস করতেন ইত্যাদি নানা কারণেও কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে বলে জনশ্রূতি রয়েছে। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ (১৪৯৩–১৫১৯ খ্রীঃ)’র শাসনামলের বিভিন্ন সূত্রে কোমিল্লা নামটি পাওয়া যায়, কোমিল্লা আরো পরে কুমিল্লা নাম ধারন করে বলেই অনেকে মনে করেন। জনশ্রূতির কোন বাস্তব সত্যতা আছে কিনা তা বির্তকের বিষয়বস্তু হলেও এর মাঝে যে কোনই সত্য লুকানো নেই তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ, ৭ম শতাব্দীতে যখন বাংলার সমতট ভ্রমণ করেন তখন এই রাজ্যের পরিধি ছিল প্রায় ৮০০ কিলোমিটার (৩,০০০ লি) আর রাজধানীর পরিধি ছিল প্রায় ৫.৬ কিলোমিটার (প্রায় ২০ লি)।হিউয়েং সাঙ, ঈৎ-সিং, শেংচি কিংবা স্বয়ং বুদ্ধদেব যখন সমতট (বড়কামতা নগরীর উপকন্ঠে তিনি ৭ দিন ব্যাপী ধর্মোপদেশ দেন – হিউয়েন সাঙ) ভ্রমণ করেছিলেন তখন এর সীমানা যেমন ছিল নিঃসন্দেহে আজ এর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বৃটিশরা ১৭৬৫ খ্রীঃ বাঙলার দেওয়ানি লাভ করে ১৭৮১ খ্রীঃ ত্রিপুরা জেলা গঠন করে যেখানে কুমিল্লাও অন্তর্ভূক্ত হয় এবং ১৯৬০ খ্রীঃ পর্যন্ত ত্রিপুরা জেলা নামেই কুমিল্লা অভিহিত হতে থাকে। ১৭৮৯–১৮৭৮ খ্রীঃ মধ্যে প্রশাসনিক প্রয়োজনে কুমিল্লার সীমানা আশেপাশের জেলাসমূহের সাথে কখনো যুক্ত বা বিযুক্ত হয়েছে। অতপরঃ ১ অক্টোবর ১৯৬০ খ্রীঃ জেলা হিসাবে ‘কুমিল্লা’ নামকরণের মাধ্যমে একক জেলার মর্যাদা লাভ করে। আয়তন বিবেচনায় কুমিল্লা এখন বাংলাদেশের ১৭তম বৃহত্তম জেলা। গোমতী নদী তীরে আধুনিক বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যের আদি উৎস ময়নামতি-লালমাই অঞ্চলের কুমিল্লা এখন একটি আধুনিক শহর হিসাবে গড়ে উঠেছে।

কালের মহা-পরিক্রমায় মৌর্য্য-গুপ্ত-পাল-খড়গ-দেব-চন্দ্র-আরব ও হাল আমলের ইউরোপীয়দের শিক্ষা-সংস্কৃতি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সম্পদ আর সম্মৃদ্ধ পদচারণায় একদা মুখর শ্রমসহিষ্ণু কর্মজীবী, জ্ঞানপিয়াসু মানুষদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে জনপদ সময়ের কষাঘাত অতিক্রম করে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে তা কেবল কল্পনায় মনের পর্দায় ভাসিয়ে তোলা সম্ভব বটে কিন্তু তা দ্বারা চিরন্তন সত্যকে উৎঘাটন করা সম্ভব নয়। সেই জন্য প্রয়োজন ব্যাপক গবেষণা, বিজ্ঞান-ভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর বিদগ্ধজনের অহর্নিশ জ্ঞানের আকুতি। মহাকালের সুসময়ে সেই সব রহস্য নিশ্চয় একদিন উম্মোচিত হবে – আমাদের বিজয় গাথা ছড়িয়ে পড়বে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে।

 

০৪ অক্টোবর ২০১৭/ঢাকা-১২৩০

তথ্যসূত্রঃ

১. The Remains of a Rich & vibrant Past, Reema Islam, The Daily Star, 10 November 2006 AD/

২. কর্মে না হোক ধর্মে সাগর, দৈনিক প্রথম আলো, ০৩ আগষ্ট ২০০৭ খ্রীঃ/

৩. মেতে উঠুন ময়নামতিতে, অনন্যা গোস্বামী, দৈনিক প্রথম আলো, ১২ জুন ২০০৭ খ্রীঃ/

৪. ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার এক ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যকীর্তির নাম, রমজান বিন মোজাম্মেল, দৈনিক ইত্তেফাক, ১৩ আগষ্ট ২০০৭ খ্রীঃ/

৫. প্রত্নতত্ত্বের সন্ধানে ভ্রমন, খান মাহবুব, দৈনিক যুগান্তর, ১৫ জুন ২০১২ খ্রীঃ/

৬. বেড়ানোঃ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির নগরী কুমিল্লা, দৈনিক আমার দেশ, ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রীঃ/

৭. স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লা, দৈনিক আমার দেশ, ১১ নভেম্বর ২০১৩ খ্রীঃ/

৮. চারিদিক সেই সমতট আন আজকের ময়নামতি, অদিতি ফাল্গুনী, দৈনিক প্রথম আলো, ৩১ আগষ্ট ২০১৩ খ্রীঃ/

৯. প্রত্নতাত্ত্বিক ঐম্বর্য্যে সম্মৃদ্ধ কুমিল্লা, ০৪ ফেব্রূয়ারী ২০১৪ খ্রীঃ/

১০. ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু হয় খনন কাজ, ঐতিহ্যের খোঁজে, এ কে এম শাহনাওয়াজ, দৈনিক ইত্তেফাক, ০৯ আগষ্ট ২০১৪ খ্রীঃ/

১১. লালমাই সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন, দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ নভেম্বর ২০১৪ খ্রীঃ/

১২. মনোলোভা শালবন বিহার, গাজীউল হক, দৈনিক প্রথম আলো, ০৮ জানুয়ারী ২০১৫ খ্রীঃ/

১৩. ঘুরে আসুন কুমিল্লার ময়নামতি, বিডিলাইভ২৪, ২৯ মে ২০১৫ খ্রীঃ/

১৪. কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু, মো. লুৎফুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ জানুয়ারী ২০১৬ খ্রীঃ/

১৫. ময়নামতির শহর কুমিল্লা, আওয়ারইসলাম২৪.কম, ৬ জুন ২০১৬ খ্রীঃ/

১৬. ঘুরে আসুন লালমাই, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৬ নভেম্বর ২০১৬ খ্রীঃ/

১৭. কুমিল্লায় সপ্তম ও অষ্টম শতকের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মো. লুৎফুর রহমান, দৈনিক ইত্তেফাক, ০৯ ফেব্রূয়ারী ২০১৭ খ্রীঃ/

১৮. কুমিল্লার ইতিকথা, বাংলাইনসাইডার.কম, ৩০ মার্চ ২০১৭ খ্রীঃ/

১৯. ঘুরে আসুন কুমিল্লা, সাহেদ ইব্রাহীম, দৈনিক প্রথম আলো/

২০. ঘুরে আসুন কুমিল্লা, সুমন পাটওয়ারী, দৈনিক প্রথম আলো/

২১. নুরজাহানের বানানো কুমিল্লার নটির মসজিদ, শান্তনু হাসান খান/

২২. দেখুন ময়নামতিকে, মোহাম্মদ উল্লাহ রিপন/

২৩. পুরাতত্ত্বের বাংলাদেশ ঐতিহ্যের বাংলাদেশ, মোহা. মোশাররফ হোসেন, পৃঃ ১৫৪-১৫৬/১৫৯-১৬১/

২৪. Early Terracotta Figurines of Bangladesh, Saifuddin Chowdhury, পৃঃ ৬২/৬৬/৬৮/৭০/৭২/৭৬/১২৯-১৩১/

২৫. ৬৪ জেলা ভ্রমণ, লিয়াকত হোসেন খোকন, পৃঃ ২২৪-২২৬/৪৪৯/৪৬৫/

২৬. বাংলাদেশের সন্ধানে, মোবাশ্বের আলী, পৃঃ ১০/১৮-২০/৯৮-৯৯/১০১/২০৯-২১০/২১৩/২১৫/২১৮/২১৯/

২৭, উইকিপিডিয়া/বাংলাপিডিয়া/অন্তঃজাল(Internet)/

২৮. বাঙ্গালার ইতিহাস, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, পৃঃ ১৫/৩৪/৫২-৫৩/৫৭/৭০/৭৪/১০২/১৪০-১৪১/১৫২/১৫৪/২০৭/

২৯. লালমাই পাহাড়ের রীপকথা ও প্রাকৃতিক সৈন্দর্য্য, বেশতো.কম/

৩০. বাংলাদেশের জেলা-উপজেলার নামকরণ ও ঐতিহ্য, মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, পৃঃ ৩০৫-৩০৮/৩১০-৩১২/

৩১. ইতিহাসে বাংলাদেশ, সুব্রত বড়ুয়া, পৃঃ ১৯-২০/

৩২. প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ড. আবদুল মমিন চৌধুরী, পৃঃ ১৬/৩৫-৩৭/৫০/১০০-১০২/১১৮/১২৪/১৩২/

৩৩. বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস, নতুন দৃষ্টিকোণে একটি সমীক্ষা, সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, পৃঃ ৩৪-৪০/৪৯/১৮৬-১৮৮/

৩৪. বাংলার প্রাচীন সভ্যতা ও পুরাকীর্তি, খন্দকার মাহমুদুণ হাসান, পৃঃ ২৮/৩৯/৬১/৬২/৬৭/৭১/৭৪-৭৫/১৪১-১৪৩/১৪৯/

৩৫. বাঙালীর ইতিকথা, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ২৮-২৯/

৩৬. বাংলার পুরাকীর্তির সন্ধানে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ২২/৮৮/৯৩-৯৪/

৩৭. প্রাচীন বাংলার ধুলো মাখা পথে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ৩৪-৩৫/৪৬-৪৭/১০৫-১০৬/১০৯/১১৩/১৩১-১৪১/

৩৮. প্রাচীন বাংলার পথে প্রান্তরে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ২১/

৩৯. প্রাচীন বাংলার প্রত্নকীর্তি, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ২২১/

৪০. প্রাচীন বাংলার পথ থেকে পথে, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ১৪/২৩/২৫২-২৫৩/

৪১. বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ২৪/৪২/৫১/৫৫/

৪২. ভারতীয় উপমহাদেশের সভ্যতা ও প্রত্নকীর্তি, খন্দকার মাহমুদুল হাসান, পৃঃ ২৪৯-২৫১/

৪৩. শিলালেখ-তাম্রশাসনাদির প্রসঙ্গ, ড. দীনেশচন্দ্র সরকার, পৃঃ ৬৫-৭৪/

৪৪. গ্রাফোসম্যানের ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা, ড. ছন্দশ্রী পাল, পৃঃ ৯৪/

৪৫. বাঙলাদেশ, মনসুর মুসা সম্পাদিত, পৃঃ ২৮-৩৩/৪৯/৫৩/১৩৫/১৩৭-১৩৮/

৪৬. হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ, পৃঃ ১৮/৫৩/

৪৭. অষ্ট সহস্র পারমিতা কি? এ গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা, সাধনজ্যোতি ভিক্ষু, বি, এ (অনার্স) এম, এ. এম, এড.

৪৮. Department of Archaeology of Bangladesh

৪৯. লালমাই ময়নামতি গ্রুপ অব মনুমেন্ট, প্রত্ন-তত্ত্ব অধিদপ্তর/

৫০. মহাস্থান ময়নামতি পাহাড়পুর, ডক্টর নাজিমুদ্দিন আহমেদ, পৃঃ ৬৩-৬৭/

৫১. বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, পৃঃ ৬২৪-৬৩১/৬৩৬-৬৪৪/

৫২. Coins From Bangladesh, A guide to The Coins of Bengal Especially Circulated in Bangladesh, Bulbul Ahmed and AKM Shahnawaz, পৃঃ ১৩/১৭-১৯/

৫৩. বাংলায় ভ্রমণ, ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে (১৯৪০)/BANGLAY BHRAMAN, a `Travelogue on historical documents and legends by E. B. RAILWAY (1940), পৃঃ ৩৭৫-৩৭৬/

 

১টি মন্তব্য “কুমিল্লা”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।