চেহেলগাজীর মাযার – দিনাজপুর

মাযার
দিনাজপুর শহরের উত্তর প্রান্তে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়ক সংলগ্ন সদর উপজেলার চেহেলগাজী গ্রামে চেহেলগাজী মাযার নামে একটি অস্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট্য মাযার রয়েছে। মাযারের নামে গ্রাম ও ইউনিয়নের নামও হয়েছে চেহেলগাজী। আপাতঃ দৃষ্টিতে মাযারের আকৃতি দেখে মনে হয়, এখানে একক কোন ব্যাক্তি শায়িত নন। সম্ভবত, যুদ্ধে শহীদ যোদ্ধাদের খন্ড-বিখন্ড দেহ একত্রে করে এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল। মাযারটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কোন সঠিক ইতিহাস এ যাবত খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাযারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় একটি ছাদহীন-ভগ্ন মসজিদ রয়েছে। সেখানে একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। সেই সূত্র থেকে একটি মাযার সংস্কারের বৃত্তান্তও জানা যায়। ভগ্ন মসজিদটি যখন নির্মিত হয় তখন সময় ছিল ১৪৬০ খ্রীঃ। স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় মাযারটির যথেষ্ট বয়স হয়েছিল বিধায় সংস্কারের প্রয়োজন পড়েছিল। সুতরাং ধরে নেওয়া সমীচিন হবে যে, চতুর্দশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদের কোন এক সময় এটি নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে মাযারের দেওয়ালে ১৩৭২ এবং প্রবেশ পথের প্রধান তোরনে ১৩৭৫ সংখ্যাকে নির্দেশ করে মাযার স্থাপনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও মাযারের কোন নাম উক্ত শিলালিপিতে উল্লেখ নেই। মনে হয় তখনও পর্যন্ত মাযারটির কোন নাম ছিল না। চেহেলগাজী নামটি পরবর্তীতে পরিচিতি পেয়েছে। এক সময় অনেকে ব্যাঙ্গ করে এই মাযারকে ‘শিয়াল গাজীর মাযার’ বলেও ডাকতো।

CHEHELGAJIR MAZAR- DINAJPUR-01 20150905_16472920150905_165029

ফার্সী ভাষায় ‘চেহেল’ অর্থ ‘চল্লিশ’। অনেকে মনে করেন, এটি ৪০ গজ লম্বা পীরের মাযার তাই এর নাম হয়েছে চেহেলগাজী। আবার অনেকের ধারনা, স্থানীয় রাজা গোপালের সাথে ধর্ম যুদ্ধে বিজয়ী ৪০ গাজীর একত্রে সমাহিত কবর থেকে এরূপ নামকরণ হয়েছে। জনশ্রূতি আছে যে, শেখ জইনুদ্দীন সোহাইল/বোগদাদী বা হাদীস বোখারী নামের এক ধর্ম প্রচারকের নেতৃত্বে ৪০ জন মুসলিম যোদ্ধা স্থানীয় গোপাল রাজাকে পরাজিত করে যখন এখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল তখন রাজা গোপাল তার প্রধান সেনাপতি বলরাম মোহন্তের দ্বারা অতর্কিত হামলা করে বিশ্রামরত এই ৪০ জন গাজীকে হত্যা করে। জানা যায় পরবর্তীতে বলরাম যুদ্ধ না করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তার সমাধি মাযারের পূর্ব-পাশে প্রতিষ্ঠা করে তাকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। অন্য মতে, রাজা গোপাল মুসলিম যোদ্ধাদের দ্বারা রাজবাড়ীতে বন্দী হলে শেখ জইনুদ্দীন তাকে মল্ল যুদ্ধের আহ্বান করে। কিন্তু মল্ল যুদ্ধের নিয়ম ভগ্ন করে এক পর্যায়ে রাজার উসকানিতে তার সেনাবাহিনী মুসলিম বাহিনীকে আক্রমন করলে মুসলিম বাহিনী দ্বারা রাজা নিহত হন।

৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট মাযারটি প্রাচীন ইটের তৈরী। আদিতে এর কোন ছাদ ছিল না। সম্ভবত স্বাধীনতার কিছুকাল পূর্বে এটি তৈরী করা হয়। বর্তমানে মাযারটি ভক্তি প্রদর্শনের নিমিত্তে লাল গিলাপে জড়ানো। মাযারে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ সকল ধর্মের অনুসারীদের আনাগোনা আছে এবং তারা প্রায়শঃ ‘মানত’ দিয়ে থাকে। তবে আগমনকারীদের মধ্যে বিহারীদের হার তুলনামূলকভাবে বেশী। তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তিও অন্যদের তুলনায় বেশী। কিছু কাল আগেও মুসলমানদের এই সংখ্যা বেশী থাকলেও বর্তমানে আর তেমনটি নেই বলে জানালেন মাযারের বর্তমান খাদেম।

মাযারের পূর্ব-পাশে বলরাম মোহন্তের সমাধি এবং দক্ষিণ দিকে অজ্ঞাত আরেকটি সমাধি রয়েছে। সমাধিদ্বয় প্রাচীন ইটের তৈরী এবং প্রায় একই আকৃতির। তবে তা মূল মাযারের মত অস্বাভাবিক নয়। সেনাপতির সমাধিক্ষেত্রে অতি অনুচ্চ প্রাচীর চারিদিকে বেষ্টন করে আছে, উত্তর-পূর্ব কোণায় তা উপরে প্রলম্বিত করে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালানোর জন্য কুলঙ্গি বানানো হয়েছে। অজ্ঞাত সমাধিটির চারিপাশ প্রাচীর দ্বারা ঘেরা রয়েছে। মাযারের পূর্ব-পাশে এবং মহাসড়কের কোল ঘেঁষে প্রাচীর সংলগ্ন বর্তমানে যে স্থানে দানবক্সের ঘরটি রয়েছে সেখানে শায়িত আছেন ‘ঘোড়াপীর’। তিনি এক সময় বেশ জাগ্রত ছিলেন এবং মানুষজন সেখানে ঘোড়া মানত করত। বর্তমানে এর রেশ খানিকটা কমে আসলেও একেবারে স্তিমিত হয়ে যায়নি। মাযারের প্রায় চতুর্দিকেই কবরস্থান। সেখানে প্রাচীন কবরের পাশাপাশি নতুন কবরও আছে। বর্তমানে মাযারের পূর্ব-পাশে একটি মাদ্রাসা ও পশ্চিম-পাশে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ পাশের অর্থাত রাণীর পুকুরের উত্তর-পাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে একটি শিব মন্দির ছিল বলে স্থানীয় ও বিভিন্ন তথ্য-সূত্রে জানা যায় যা এখন সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিন্ন। মাযার প্রাঙ্গনে প্রবেশের জন্য একটি আধুনিক প্রবেশ তোরন রয়েছে।

20150905_165358

সেনাপতি মোহন্তের সমাধি

20150905_165801

অজ্ঞাত সমাধি

20150905_172105

ঘোড়াপীরের মাযার

20150905_172312

ঘোড়াপীরের মাযার

20150905_172432

ঘোড়াপীরের মাযার

20150905_171901

নবনির্মিত মসজিদ

এই প্রাঙ্গনে ১৯৭২ খ্রীঃ ৬ জানুয়ারীতে ‘মহারাজা স্কুল’-এ সংঘটিত মর্মান্তিক মাইন বিস্ফোরনে শাহাদাত বরণকারী শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে।

CHEHELGAJIR MAZAR- DINAJPUR-03

শহীদ স্মৃতিসৌধ

20150905_171937

শহীদ স্মৃতিসৌধ

মসজিদ

১ ডিসেম্বর ১৪৬০ খ্রীঃ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম দিনাজপুরের সর্ব-প্রাচীন এই মসজিদ অনেককাল আগে থেকেই ধ্বংসপ্রাপ্ত। বর্তমানে এই মসজিদের দেওয়ালের আংশিক অংশ ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই এবং যে গুলো কোন রকমে টিকে আছে সেগুলোও ভগ্ন প্রায়। একদা মসজিদের ধ্বংসস্তুপ থেকে ৩টি শিলালিপি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। সে সব সূত্র থেকে জানা যায় যে, সুলতান রুকন-উদ-দীন বারবক শাহর রাজত্বকালে খান-ই-আজম-মোয়াযযাম সর-ই-লস্কর ওয়া উজির ইকরাম খানের নির্দেশে জোর ও বারোর মোয়ালেমাত ও অন্যান্য মহলের জঙ্গদার ওয়া শিকদার নুসরাত খান ৮৮৫ হিজরীর ১৬ সফর/১৪৬০ খ্রীঃ ১ ডিসেম্বর তারিখে এ মসজিদ নির্মান ও রওযা মেরামত করেছিলেন। মসজিদ নির্মানে সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করা হয়েছিল বলেই মনে হয়।

20150905_170324 20150905_171824 20150905_170349

মসজিদটি বর্গাকার এবং এর ভিতরের দিকের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয়ই ৪.৮৪ মিটার। মসজিদের পূর্ব দেওয়ালে ৩টি করে এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে ২টি করে চোর-কুঠুরী আকৃতির খিলানযুক্ত দরজা ছিল। পূর্ব দেওয়ালের মাঝের দরজাটি পাশ্ববর্তী দরজা ২টি থেকে ঈষত প্রশস্ত যার উচ্চতা ২.৬০ মিটার ও প্রস্থ ০.৭৭ মিটার। মসজিদের পূর্ব আঙ্গিনায় কোন আবেষ্টনী দেওয়াল ছিল কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না, তবে চোর-কুঠুরী আকৃতির একটি মূল ফটক বর্তমানে টিকে আছে। লাগোয়া বারান্দাটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে যথাক্রমে ৪.৫৭ মিটার ও ২.২৮ মিটার। এর দক্ষিণে অনুচ্চ যে স্থানটি রয়েছে সম্ভবত তা আযানের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে। সেখানে ওঠার জন্য ৩টি সিঁড়িও আছে। এসব দেওয়াল বেশ চওড়া, পুরুত্ব কম-বেশী ০.৯১ মিটার। বারান্দাসহ মসজিদটি পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। সুলতানি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যের সুত্র ধরে বারান্দার উপর ছোট ৩টি গম্বুজ থাকার সম্ভাবনা কেবল অনুমান করা যায়।

20150905_170445 20150905_171439 20150905_171606

মসজিদের পূর্ব-দেওয়ালের তিনটি দরজা বরাবর পশ্চিম দেওয়ালে সম আকৃতির ৩টি মিহরাব ছিল। নামাজ কক্ষের উপর অর্ধ গোলাকার একটি গম্বুজের অস্তিত্ব আন্দাজ করা যায়। এই কক্ষের উপরিভাগে ইটের পেন্ডেন্টিভ ব্যবহার করে বর্গাকার বে-টিকে অষ্টকোনায় পরিনত করা হয়েছিল। অতপর, স্কুইঞ্চ ব্যবহার করে অষ্টকোনা এলাকাকে বৃত্তাকার ভিত্তিশীল এলাকায় রূপান্তর করে এই বৃত্তাকার স্থানের উপর অর্ধ-বৃত্তাকার গম্বুজটি স্থাপন করা হয়েছিল। মসজিদটি সার্বিকভাবে অলংকৃত ছিল, বিশেষ করে এর মিহরাবের পোড়া মাটির ফলকের কারুকাজ বেশ চমতকার। তবে বহিঃগাত্রে কোন কারুকাজ ছিল কিনা তা আজ আর বোঝার কোন উপায় নেই। নামাজ কক্ষে একাধিক কুলঙ্গি দেখা যায় যা রাতে আলো জ্বালাবার বাতি রাখার জন্য ব্যবহৃত হত। এখানে প্রাপ্ত শিলালিপিত্রয় কোথায় প্রথিত ছিল তা জানা যায় না। ১৮৭৪ খ্রীঃ দিনাজপুরের ততকালীন জেলা প্রশাসক ‍মি. ওয়েস্টমেকট এসব শিলালিপি এখান থেকে উদ্ধার করেন যার ২টি সম্ভবত ভারতের কোলকাতায় এবং অপরটি আংশিক ভগ্নাবস্থায় দিনাজপুর জাদুঘরে বর্তমানে রক্ষিত আছে।

20150905_170349 20150905_170423 20150905_171530 20150905_171536 20150905_17163220150905_171702

জনশ্রূতি আছে যে, মসজিদটি বর্গাকারে নির্মিত একটি শিব মন্দির থেকে পরবর্তীতে রূপান্তরিত। গঠন প্রণালী ও জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মসজিদ অবকাঠামো বিবেচনায় রূপান্তরের এই ধারনা সঠিক নয় কিন্তু মসজিদের নির্মান উপকরণ বিশেষ করে উত্তর-দক্ষিণের দরজা ও প্রবেশ পথের কাল পাথর খন্ডগুলো প্রাচীন শিব-মন্দির থেকে যে সংগৃহীত তা বেশ বোঝা যায়।

মসজিদ সংলগ্ন ভূমির পরিমান আনুমানিক ১০ একর আয়তনের যেখানে প্রাচীন মাযার, ঈদগাহ, পুকুর ও কবরস্থান রয়েছে, আর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে একটি শিব মন্দির।

তথ্যসূত্রঃ

১. ৬৪ জেলা ভ্রমণ – লিয়াকত হোসেন খোকন, পৃঃ ৪১৮

২. আলোকচিত্রে ইতিহাস, পৃঃ ২৮

৩. বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ – আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, পৃঃ ১৩০-১৩১

৪. দিনাজপুরের ইতিহাস – ড. মহম্মদ মনিরুজ্জামান, পৃঃ ১৪৫

৫. দিনাজপুরের লোকসংস্কৃতি – এ বি এম আব্দুস সাত্তার, পৃঃ ১১০

রাজার পুকুর

চেহেলগাজীর মাযারের উত্তর-পশ্চিমে যে প্রাচীন পুকুরটি আছে তা স্থানীয়দের কাছে রাজার পুকুর নামে পরিচিত। সম্ভবত মাযার বা মসজিদ নির্মানের সময় এর নির্মানকর্তা কর্তৃক এটি খনন করা হয়েছিল। এই পুকুরের মাটি ব্যবহার করে হয় মসজিদ নির্মান উপকরন যোগান দেওয়া হয়েছিল নতুবা মাযারে আগত দর্শনার্থীদের পানির প্রয়োজন মেটানোর জন্য তা খনন করা হয়ে থাকতে পারে।

20150905_17065220150905_170551

মুসলিম পূর্ব যুগে খননকৃত উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ এই পুকুরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১৫০ মিটার ও ৫০ মিটার। পুকুরের ৪ পাড়ে ৪টি শান বাঁধানো ঘাট ছিল বলে জানা যায় যা বর্তমানে লুপ্ত। পুকুরের পাড়সমূহ বেশ উঁচু, তবে এটি ১৯৬৮ খ্রীঃ যখন সংস্কার করা হয়েছিল তখন তলদেশের মাটি কেটে উঁচু করা হয়েছে। আদিতে এর রূপ কেমন ছিল তা জানা না গেলেও আন্দাজ করি এটি সমসাময়িক পুকরগুলোর মতই উঁচু ছিল। পুকুরের পূর্ব দিকে মুঘল আমলে গড়ে ওঠা একটি ঈদগাহ ছিল, বর্তমানে সেখানে কারখানা জাতীয় কিছু একটা গড়ে উঠেছে। দক্ষিণ ও পূর্ব পাড়ে ইদানিং পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপন করা হয়েছে। জনশ্রূতি আছে যে, এখানে রাজা গোসল করতেন তাই পুকুরের নাম রাজার পুকুর।

 

রাণীর পুকুর

চেহেলগাজীর মাযারের দক্ষিণে যে প্রাচীন পুকুরটি আছে তা স্থানীয়দের কাছে রাণীর পুকুর নামে পরিচিত। ১ একরের অধিক আয়তনের পুকুরটি উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ এবং সম্ভবত এটি মুসলিম পূর্ব যুগে খনন করা হয়েছিল। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে আনুমানিক ৫০ মিটার ও ৪০ মিটার। পাড় সমূহ তেমন একটা উঁচু নয়। পুকুরের উত্তর পাড়ে একটি শিব মন্দির ছিল বলে বিভিন্ন সূত্র এমনকি স্থানীয়রাও বেশ জোড় দিয়ে জানালেন কিন্তু এর কোন অস্তিত্ব এখন আর নেই। এই শিব মন্দিরের নির্মান উপকরন হিসাবে পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল যা সম্ভবত দিনাজপুরের নিকটবর্তী বর্তমান ভারতের বানগড় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর এসব পাথর খন্ড মসজিদ নির্মানে ব্যবহার করা হয়েছিল যা এখনও দৃশ্যমান।

বহু বছর অযত্ন আর অবহেলায় আরও বেশ কিছু পাথর খন্ড এই সেদিনও এখানে পড়ে ছিল, কিন্তু এখন আর সেসব নেই। স্থানীয়দের নিকট থেকে জানতে পারলাম, বেলে পাথরের একটি খন্ড এখানে এখনও জঙ্গলাবৃত্ত হয়ে পড়ে আছে। জঙ্গলের কারণে এবং পুকুরের ঢালু পাড়ের কোথায় যে সেটা আছে খানিকটা চেষ্টা তদবির করেও তা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। এখানে একটি গৌরীপট্ট পাওয়া গিয়েছিল যা বর্তমানে দিনাজপুর জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

20150905_170234

গাছের গোড়ায় ছিল শিব মন্দিরটি

20150905_170103 20150905_170248

জনশ্রূতি আছে, এই পাথর খন্ডের ওপর রাণীরা দুধ ঢালতেন এবং সেই দুধ ক্রমে পুকুরে গিয়ে পতিত হলে, তারা সেখানে স্নান করতেন। রাণীরা এখানে স্নান করতেন তাই পুকুরের নাম রাণীর পুকুর। এই পুকুরের উত্তর পাড়ে এবং প্রাচীন মসজিদটির দক্ষিণে সাম্প্রতিককালে একটি মসজিদ নির্মান করা হয়েছে। মসজিদের প্রক্ষালন (শৌচাগার)টি পুকুরের উত্তর পাড়ে অবস্থিত এবং তা সরাসরি পুকুরের সাথে সংযুক্ত।

সময় কত নিষ্ঠুর….!!! সেদিনের দুধ সাগর; আজ মূত্রালয়। ৭০০ বছরের প্রাচীন একটি জলাশয়ের এমন করূণ পরিণতি শুধুই মনে করে দেয় ‘আজ যে আমীর, কাল সে ফকির’। আর্থিক ফকিরত্ব হয়ত যেকোন ভাবেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, কিন্তু মন ও মননের???

তথ্যসূত্রঃ

১. বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ – আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, পৃঃ ১৩০-১৩২


৫ আগষ্ট ২০১৬/খোলাহাটি

২ টি মন্তব্য : “চেহেলগাজীর মাযার – দিনাজপুর”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আশা করছি সামনের বই মেলায় আপনার একটি চমৎকার বই দেখতে পাবো দিনাজপুর নিয়ে।
    আমার বাড়ি দিনাজপুর হলে এক্সট্রা খুশি হতাম।
    কিন্তু পুরাতত্ব, ইতিহাস নিয়ে চমৎকার একটি কাজ হচ্ছে এতে যারপরনাই খুশি।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।