আমিঃ হ্যালো, এটা কি ০ ০০০০ ০০০…?
ফেরেশতাঃ হ্যাঁ, আপনি এই নাম্বার কীভাবে পেলেন?
আমিঃ আহ, আলহামদুলিল্লাহ্! ভাই, আপনি কি কোন মানুষ, নাকি ফেরেশতা?
ফেরেশতাঃ আমি ফেরেশতা! কিন্তু আপনি কীভাবে নাম্বারটি পেলেন তাতো বললেন না!
আমিঃ ভাই, বলছি। তবে, আগে একটি কথা বলে রাখি, আমার সিমি আপুর সাথে কথা বলা খুব জরুরী। দয়া করে কেন জরুরী, কি বলব, এসব না শুনে হুট করে ফোনটি কেটে দিবেন না। অনেক কষ্ট করে লাইনটি পেয়েছি।
ফেরেশতাঃ এই নাম্বারে ফোন দেয়া কোন মানুষের জন্য যে নিষেধ আপনি তা জানেন না?
আমিঃ ভাই, জানি। আপনাকে ভাই বলছি বলে কি রেগে যাচ্ছেন না তো? আমাদের দেশে একজন আরেকজন কে ভদ্রতা করে ভাই বলে ডাকে!
ফেরেশতাঃ ভদ্রতার কথা আপনাদের মুখে না বলাই ভালো। যাই হোক, কথা না পেঁচিয়ে সরাসরি জবাব দিন নাম্বারটি কোত্থেকে পেয়েছেন। নয়তো আমি লাইন কাটব!
আমিঃ ভাই, বলছি। কিন্তু আর যাই করেন সিমি আপুর সাথে কথা না বলা পর্যন্ত দয়া করে লাইনটি কাটবেন না। আমি এই নাম্বারে খোঁজ পেয়েছি হাসপাতালে এক মৃত শিশুর কাছে। সে আমাকে বলেছে, যদি খুব বেশী ইচ্ছা হয়, তাহলে যেন এই নাম্বারে যোগাযোগ করি।
ফেরেশতাঃ বাচ্চাগুলো নিয়ে হয়েছে এই এক বিপদ! আমাদের সরাসরি নিষেধ করে দেয়া আছে যেন কোন বাচ্চা কে শাস্তি না দেয়া হয়, আর এই সুযোগে বাচ্চাগুলো পৃথিবীর মানুষদের পরপারের নাম্বার দিয়েই চলেছে। যাই হোক, আমার এতো কথা বলার সময় নাই। আর এই নাম্বার টা কোন খোশ গল্প করার জন্যও না। এটি শুধু মা-বাবা/আত্মীয়স্বজনদের দোয়া যেন এখানকার মানুষরা শুনতে পারে তার জন্য। আপনাকে সিমি ম্যাডামের সাথে কথা বলতে দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আপনি ফোন রাখুন।
আমিঃ ভাই, প্লীজ ফোনটা রাখবেন না। আমি অনেক পীর ফকির ধরেছি, কোন লাভ হয় নাই। সিমি আপুর কবরের কাছে গিয়ে বসে থেকেছি, কোন লাভ হয় নাই। শেষে বাড়ী ফেরার পথে একটা এক্সিডেন্টে যখন অজ্ঞান হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই, তখন একটা শিশু এসে কানে কানে নাম্বারটি বলে গেছে। বলেছে, এই নাম্বারে ফোন দিয়েই একমাত্র সিমি আপুর সাথে কথা বলতে পারব। প্লীজ আমাকে ফেরাবেন না। আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে ফোন করেছি!
ফেরেশতাঃ আমাকে এসব ফিরিস্তি বলতে হবে না। আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি কি কি করেছেন। আপনার কলের সাথে সাথেই আপনার সকল রেকর্ড এখানকার স্ক্রিনে চলে এসেছে। কিন্তু আপনার জন্য দুঃসংবাদ হল, আপনি এখনো বেঁচে আছেন। তাই কোন অবস্থাতেই আপনাকে কোন মৃত মানুষের সাথে কথা বলতে দেয়া সম্ভব না।
আমিঃ ভাই, আমি শুধু আপুকে বলব, আমি সরি!
ফেরেশতাঃ হয়েছে, হয়েছে। আর দরদ দেখাতে হবে না। যখন ভিডিওর দোকানের ছেলেগুলো সিমিকে রাস্তায় পেলেই উত্যক্ত করত, তখন কোথায় ছিল আপনার এই দরদ?
আমিঃ ভাই, আমি জানি, আমি এমন কোন বাহাদুর ছেলে না। এই রকম ঘটনা যে শুধু নারায়ণগঞ্জেই ঘটে তাতো না, আমাদের এলাকায়ও ঘটে। তাই, আমি কোন অজুহাত দিব না যে, যখন ওরা সিমি আপুকে উত্যক্ত করছিল তখন আমি আশেপাশে ছিলাম না। কিন্তু আমি কি করব বলেন? আমি তো সামান্য একটা ছেলে। ওদের হাতে তো সবসময় অস্ত্র থাকে। আর তাছাড়া ওদের কোন পড়াশোনাও থাকে না। সারাদিন সবাই একসাথে বসে থাকে। ওদের প্রতিবাদ করতে গেলে তো ওরা আমাকেও মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দিত!
ফেরেশতাঃ এই জন্যেই তো কেউ কোন প্রতিবাদ করে নি। সিমি ম্যাডামের মত লক্ষ্মী একটা মেয়েকে ওরা প্রতিদিন উত্যক্ত করে গেছে, কেউ একটা “টু” শব্দ পর্যন্ত করে নি। তা বেশ তো, এখন তো ম্যাডাম মারাই গেছে, তাই না? এখন আর আপনাদের চিন্তা কি? নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। এখন তো সিমি ম্যাডাম আর রাস্তায়ও বের হবে না, বখাটে রা উত্যক্তও করতে পারবে না আর আপনাদেরও বিব্রত হতে হবে না। এই ফোন নাটকের তো কোন অর্থ দেখি না। যান, যান, নিজের সময়ও নষ্ট করবেন না, আর আমার সময়ও নষ্ট করবেন না।
আমিঃ ভাই, আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবেন না। আমি সিমি আপুর নিউজটা পড়েছি একটা পত্রিকা তে! যখন পড়েছি, তখন একটা বোর্ডিং স্কুলে ছিলাম। এখানে বসে আমি কি করতে পারতাম, বলেন? তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এই স্কুল থেকে বের হয়ে যখন বড় হব, তখন আমি এর বদলা নিব। কিন্তু আমাকে একটি বারের জন্য কথা বলতে দিন!
ফেরেশতাঃ কি বদলা নিবেন আপনি? ম্যাডাম তো সুইসাইড করেছে। কেউ তো তাকে মেরে ফেলেনি। প্রতিদিন একটু একটু করে যে “খুন” তাকে করা হয়েছে, তার তো কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। আপনি কিসের বদলা নিবেন? ঐ ছেলেগুলোকে কি প্রতিদিন রাস্তায় বের হলে “টিজ” করতে পারবেন? নাকি সারাদেশে বখাটেরা যা করে বেড়ায়, তা বন্ধ করতে পারবেন? কিছুই তো পারবেন না। অন্ততপক্ষে রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে যেভাবে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন, সেটা কি বন্ধ করতে পারবেন? নাকি তাও পারবেন না!
আমিঃ পারব, রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে ভালো লাগে, এ কথা ঠিক। কিন্তু আমার কারণে কেউ যে আহত হয়েছে, এমন তো কখনো বুঝি নি। কিন্তু আপনি যেহেতু সেটিও করতে নিষেধ করছেন, আমি তা করব। শুধু একটি বার আমাকে সিমি আপুর সাথে কথা বলতে দিন!
ফেরেশতাঃ সেটাই তো! আপনি কেন বুঝবেন! আপনার দিকে তো কেউ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে নি। থাকলে বুঝতেন ব্যাপারটা কেমন অসহনীয়! যাই হোক, এসব বলে আর কোন কাজ নেই। আপনার সাথে অনেক সময় নষ্ট করেছি। যদি পারেন তাহলে মেয়েদেরকে একটা ন্যূনতম সম্মান দিয়েন। তাহলে আর এভাবে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কান্নাকাটি করে সিমি ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করতে চাওয়া লাগবে না। এখানে উপরে যারা আছে, তারা প্রতিনিয়ত আপনাদের দেখছে। যদি ঠিকঠাক চলতে পারেন, তবে সিমি ম্যাডাম ই আপনাকে ফোন করে কথা বলে নিবে! আমি ফোন রাখছি!
আমিঃ বেশতো! সিমি আপুর সাথে যোগাযোগের জন্য যদি এটি শর্ত হয়, তবে আমি মেয়েদের সম্মান দিয়ে যাব মৃত্যু পর্যন্ত। কিন্তু আমার সিমি আপুকে একবার বলতেই হবে, আপু, আমি প্রচণ্ড দুঃখিত, আপনার এই চলে যাওয়াতে। যে পিশাচরা রাস্তায় মেয়েদের উত্যক্ত করে, আল্লাহ্ তাদের কি বিচার করবে, আমি জানি না। তবে, আমাদের মত যারা সাক্ষী গোপাল হয়ে বসে থাকে, তাদের সবার পক্ষ থেকে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি!
পুনশ্চঃ ক্যাডেট কলেজে থাকতে ক্লাস ইলেভেনে গল্পটি লিখেছিলাম সাপ্তাহিক ২০০০ এর “টেলিফোনে ভালোবাসার গল্প” প্রতিযোগিতার জন্য! আমার অন্যান্য অনেকগুলো গল্প নামে বেনামে সেবার ছাপা হলেও, এই গল্পটিতে তারা কোন ভালোবাসার গন্ধ না পেয়ে, গল্পটি ছাপে নি। আর সিমি আপুও পরপার থেকে ফোন করে নি। তবে আমি অপেক্ষায় আছি!
(ক্যাডেট কলেজ ব্লগে প্রথম লেখা! তাই, ক্যাডেট কলেজে থাকাকালীন কোন একটি লেখা দিয়েই শুরু করলাম!)
ব্লগে স্বাগতম।
আশাকরি কাছাকাছি ব্যাচের কোন এক সিনিয়ার বলে দেবে পরথম ব্লগ লিখার পরি কি একটা জানি করতে হয়।
আমি তো আবার তোমার ডাইরেক্ট শিক্ষক ছিলাম, ক্যামনে বলি এইসব ফাতরামি কথা?
যাক, গল্পটা ভালই গেঁথেছো। প্রথমে বোঝাই যাচ্ছিলো না কোন দিকে এগুচ্ছে।
সাথে সাথে একটা ম্যাসেজও দিয়েছো পরিবেশ খুব বেশী হেভী না করেই।
এপ্রোচটা ভাল লেগেছে।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
স্যার, দুই এক ব্যাচ সিনিয়রদের মনে হয় আর বলে দিতে হবে না। বুঝতে পারছি, "ট্রিট" দিতে হবে। কিন্তু সেটা কীভাবে, কোথায়, কেমনে দিতে হয়, তাতো জানি না।
অসুবিধা নাই স্যার, দুই এক ব্যাচ সিনিয়রদের কাছ থেকে জেনে নিব! 🙂
ব্যাড গেইস।
ট্রিট হলে তো জুনিয়ার ধরায়ে দিতাম।
কেউ যখন বলতেছে না, তো শুনো।
ব্লগ প্রিন্সিপালের সম্মানে দুইটা :frontroll: :frontroll: দিয়ে জলদি খাড়ায় যাপ.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
::salute::
:frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:
স্যার, যখন সেভেনে পড়ি, তখন একবার ফুটবল কম্পিটিশনে হাউস জিতে যাওয়াতেই ফ্রন্ট রোল দিয়েছিলাম।ফ্রন্ট রোল দেয়ার অপরাধে আর কি শাস্তি দিবেন এটা ভেবে সিনিয়ররা পড়ে গেলেন বিপদে ...! :))
ইভ টিজিং চলতেই থাকবে।
পুরান স্মৃতি মনে করাইয়া দিলা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাই, খুবই কষ্ট লেগেছিল পত্রিকায় খবরটি পড়ে! এখনো ভুলতে পারি নাই!
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
🙂 🙂 🙂 🙂
ব্লগে সুস্বাগতম, ছোট ভাইয়া!
আশা করি নিয়মিত লিখবে তুমি!! হ্যাপি ব্লগিং!
থ্যাংক ইউ, আপু!
আশা করছি লিখব! দোয়া করবেন! সালাম!
ভাল লাগছে ভাইয়া
হারিয়ে যাইনি তবু এইত জরুরী খবর
আকাঙ্ক্ষা আর হতাশায় হারিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই।
থ্যাংকস!
ব্লগে স্বাগতম বন্ধু 🙂
গল্পের থিম আর গল্প বলার ঢং দুটোই ভাল লাগলো। দুঃখের বিষয় হলো মেয়েদের এই হ্যারাসমেন্টের শুধু 'ইভ টিজিং' এর মত একটা গালভরা নাম দেয়া ছাড়া পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন মনে হয় হয়নি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
থ্যাংকস, দোস্ত!
হুম! অনেক আগের লেখা, কিন্তু যা বুঝতে পারি, এখনো পরিবেশের কোন পরিবর্তন হয় নাই।