“গোপন সামরিক বিচার, ফাঁসির আসামীর কনডেম সেলে পাঁচ সেনা অফিসারের নির্জন কারাযাপন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট পাঠানো চিঠি”

গত বছরের ৪ঠা নভেম্বর, ২০১০ তারিখে গোপন সামরিক আদালতের বিশেষ রায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পাঁচ সেনা কর্মকর্তাকে পাঁচ বছরের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় (তারা সর্বশেষ বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় কর্মরত ছিলেন)। – উক্ত পাঁচ সেনা কর্মকর্তার চারজনই  প্রাক্তন ক্যাডেট।বেসামরিক এলাকা মতিঝিলে ২০০৯ সালের ২১শে অক্টোবর, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনায় পাঁচ সেনা অফিসারকে অভিযুক্ত করে দীর্ঘ এক বছর অন্তরীণ করে রাখার পর উক্ত সাজা প্রদান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে, বিবিসি বাংলার নিচের সংবাদটি পড়ুন প্রথমে এবং অতঃপর পড়ুন ০৯/৫/২০১১ তারিখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট পাঠানো চিঠি

5 নভেম্বর 2010 – 18:02
বাংলাদেশে ৫ সেনা কর্মকর্তার জেল

কাদির কল্লোল
বিবিসি বাংলা, ঢাকা
বাংলাদেশে সেনাবিহিনীর একজন সিনিয়র একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সামরিক আদালতে পাঁচজন সেনা কর্মকর্তার প্রত্যেকের পাঁচ বছর করে জেল হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে হত্যার চেষ্টার সাথে জড়িত থাকার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তাদের একজন মেজর এবং বাকি চারজন ক্যাপ্টেন পদ মর্যাদার। তাদের শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সেনা আইনের ব্যাপারে অন্যতম একজন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরি বলেছেন, ফৌজদারি অপরাধে সামরিক আদালতে কারো তিন মাসের বেশি সাজা হলে তাকে সেই সাজা ভোগ করতে হয় সাধারণ কারাগারে।
এই আইন অনুযায়ীই সাজাপ্রাপ্ত পাঁচজন সেনা কর্মকর্তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল চ।
তাতে তিনি বেঁচে গেলেও ১৩জন আহত হয়েছিল। ঘটনাটির ব্যাপারে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে মামলায় প্রথমে ডিবি পুলিশ তদন্ত করছিল। সেই তদন্তে পাঁচজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে।
তখন ডিবি পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার জের ধরে হত্যার চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী বিষয়টি তদন্ত করে, যে তদন্তের ভিত্তিতে এখন পাঁচজন সেনাকর্মকর্তার সাজা হলো।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরি বলেছেন , সামরিক আদালতে বিচারের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আইনজীবীর সহায়তা নিতে পারেন। এই আদালতে সব নিয়ম মেনেই বিচার প্রক্রিয়া চলে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
জেনারেল চৌধুরি আরও জানিয়েছেন, সামরিক আদালতে সাজা হলে অন্য কোন আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকে না । তবে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করার সুযোগ রয়েছে।
সামরিক আদালতে এই বিচার হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু বলা হয় নি। সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের দিক থেকেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি ।

এবার পড়ুন “০৯/৫/২০১১ তারিখে সেনা অফিসারের পরিবারের পক্ষ থেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট পাঠানো চিঠিঃ”

মাননীয়
চেয়ারম্যান,
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন,
লালমাটিয়া, ঢাকা।

বিষয়ঃ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন – ২০০৯ এর ১২(ক) ধারা অনুযায়ী, পাঁচ সেনা অফিসারের সাথে মৌলিক নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার লংঘন এবং গোপন সামরিক আদালত গঠনের মাধ্যমে গোপন রায় তৈরি করে ও কোনরুপ আপীল করবার সুযোগ না দিয়ে, কেবলমাত্র নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরনের ঘটনার তদন্ত ও প্রতিকার চেয়ে আবেদন।

মহোদয়,
যথাযথ সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক জ্ঞাতব্য, গত ০৩-০৬-২০১০ তারিখে আপনার বরাবর পাঁচ সেনা অফিসারের সাথে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে আবেদন করেছিলাম (সূত্রঃ জামাক/অভিযোগ-১১৬/২২/০৮/১১১৮(১))। – উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে তখনকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর জন্যে কমিশনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। উক্ত আবেদনে আমি আপনার কাছে যেসব আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছিলাম, সেগুলোকে সত্য প্রমাণ করে পাঁচ সেনা অফিসারকে গোপন সামরিক আদালত গঠনের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে কোনরুপ সুযোগ না দিয়ে গোপন রায় প্রদান করে ৪ঠা নভেম্বর, ২০১০ তারিখে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

সেনা অফিসারদের সাথে মানবাধিকার লংঘনসহ অন্যায় ও অবিচারের যেসব ঘটনা ঘটেছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

– ২১ শে অক্টোবর, ২০০৯ তারিখে বেসামরিক এলাকা মতিঝিলে সংঘটিত বোমা হামলার চার্জশীট এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আদালতের পুনঃ পুনঃ সময় বেঁধে দেয়া সত্বেও পুলিশ বারংবার সময় পিছিয়ে দিচ্ছে (জানুয়ারী, ২০১১ পর্যন্ত ৬ বারে ১৫ মাস সময় পেছানো হয়েছে । মামলার বাদী আসামীর যে তালিকা দিয়েছেন, তাতে কোন সেনা অফিসারকে সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়নি। তথাপি, যে অভিযোগের এখন পর্যন্ত চার্জশীট দেয়া হয়নি, বেসামরিক এলাকায় সংঘটিত ঘটনার জন্য পাঁচ সামরিক অফিসার এখন সামরিক আদালতে পাঁচ বছরের জন্যে দন্ডিত হয়ে বর্তমানে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।

-তদন্ত কমিটির নিকট বেসামরিক এলাকায় বোমা হামলার ঘটনার সময় সেনা অফিসারেরা বিডিআর সদর দপ্তরে কর্মরত থাকবার উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অ্যালিবাই দেখালে ও কমিটি সেগুলো গ্রাহ্য করেনি, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

– আলোচ্য অভিযোগ তদন্তের জন্য নভেম্বর ২০০৯ সালে গঠিত তদন্ত আদালতে অভিযুক্তরা নিজেদের defend করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে উক্ত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী হবার পর তা প্রকাশ না করে পরবর্তীতে ২য় তদন্ত কমিটি গঠন করে পরিবারের কাউকে কিছু জানানোর সুযোগ না দিয়ে অফিসারদের Army Interrogation Cell (AIC) এ শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নেয়া হয়। তদন্তের নামে ২৭-০৪-২০১০ তারিখ থেকে interrogation cell এ নিয়ে সেনা অফিসারদের দীর্ঘ এক মাস চোখ ও হাত বেঁধে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন ও প্রাণনাশের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়।

-এমতাবস্থায় আমরা উৎকন্ঠিত পরিবারের সদস্যরা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বারংবার যোগাযোগ করে জানতে পারি, উক্ত সেনা অফিসারেরা তাদের উপর আনীত বোমা হামলার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার না করা পর্যন্ত বিশেষ সেলে (AIC) তদন্ত অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলবে। “উপরোক্ত তদন্তের অন্যতম উদ্দেশ্য জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়“- সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার (৪৬ ব্রিগেড এর প্রধান)নিকট হতে এরূপ বক্তব্য শুনে (০৯মে, ২০১০ তারিখে) আমরা হতবিহ্বল হয়ে উক্ত তদন্তের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সাথে কাজ করে যাওয়া এইসব অফিসারদের উপর শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রচেষ্টায় মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলি। উক্ত কর্মকর্তা একথা শুনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ছিলেন এবং আমাদেরকে আর কোন জবাব না দিয়ে শুধু বলেন, “আপনারা প্রয়োজন মনে করলে সিভিল কোর্টে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।“ সেনাবাহিনীর কার্যধারা শুধুমাত্র সেনা আইনে চলে এবং সিভিল কোর্ট এর প্রতিকারের সুযোগ রাখে না – এই বিশ্বাস থেকেই এই কথা হয়তো তিনি বলে দিলেন।

-সেনা অফিসারদের সাথে সাক্ষাৎ ও তার প্রতি ন্যায়বিচারের মানবিক দাবি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ০৩/০৬/২০১০ তারিখে আবেদন জানানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে মানবাধিকার কমিশনের কাছে পাঠানো অভিযোগের প্রেক্ষিতে [সূত্রঃ জামাক/অভিযোগ-১১৬/২২/০৮/১১১৮(১)] প্রতিরক্ষা সচিবের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সচিবালয়ের কাছে পাঠানো পত্রের জবাব পাঠানোর জন্য কমিশনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা ১লা আগস্ট এর মধ্যে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোন জবাব কমিশনে পাঠানো হয়নি। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে পুনঃ পুনঃ চিঠি পাঠানোর পর ‘সেনা অফিসারদের উপর মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে’র বিপরীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে [স্মারক নং: প্রম/বিবিধ-৫/২০০৬/ডি-১/১৬০২; তারিখ-৩১/৮/২০১০: জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক গ্রহনের তারিখঃ ২৬/০৯/১০; (৬৫২)] অবশেষে বলা হয়ঃ

“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫২(১) এর ব্যাখা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি শৃংখলা বাহিনী বিধায় উক্ত বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ কর্তব্য পালন এবং উক্ত বাহিনীতে শৃংখলা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৫ এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রে সংবিধানের তৃতীয়ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত বিধানসমুহের প্রযোজ্যতা রহিত করা হয়েছে।”
‘সেনাবাহিনীর মতো শৃংখলাবদ্ধ বাহিনী তার কর্মরত অফিসারদের প্রতি মৌলিক অধিকারটুকু দিতে ও বীতশ্রদ্ধ’,- আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের অধিকারী সেনাবাহিনীর জন্যে এটা কলংকজনক এবং এইসব সেনা অফিসার ও তাদের স্বজনদের প্রতি চরম অমানবিক আচরণ এবং দেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত ধারাসমূহের মূল আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।

– পরিবারকে কোনরুপ অবহিত করার সুযোগ না দিয়ে সেনা অফিসারদের নির্যাতন (AIC) সেলে নেবার পর পরিবারের সাথে কোনরুপ যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। এপ্রিল থেকে নভেম্বর-২০১০, এই সাত মাসে কেবল ঈদুল ফিতরের দিন একবারের জন্য দেখা করতে দেয়া হয়েছে।

– সেনা অফিসারদের বিচারের নামে গোপন সামরিক আদালত গঠন করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের পক্ষে সেনা আইনের বিধান অনুসারে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে কোন সহায়তাকারী অফিসার (defending officer) অথবা কোন আইনজীবিকে নিয়োজিত করা হয়নি। বরং সেনা অফিসারদের নিকট থেকে ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে কোন সহায়তাকারী অফিসারের (defending officer)প্রয়োজেন নেই’- এই মর্মে প্রত্যয়ন করে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে।

-এই গোপন সামরিক আদালতে পরিবারের কোন সদস্য কিংবা অন্য কোন তৃতীয়পক্ষের উপস্থিতি ছিল না।

– সামরিক আদালত অভিযুক্তদের উপর আনীত অভিযোগের কোনরুপ evidence, সাক্ষ্য প্রমাণ ও সাক্ষী প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। গোপন সামরিক আদালত চলাকালীন সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্যে সেনা অফিসারদের পুনঃ পুনঃ জীবনের প্রতি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

– সামরিক আদালত কর্তৃক অভিযুক্তের সম্মুখে আদালতের কোন রায় পড়ে শোনানো হয়নি, কিংবা কোন রায় দেয়া হয়নি অথবা রায়ের কোন কপি এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। অথচ The Code of Criminal Procedure, 1898 এর ৩৬৬ ধারা অনুসারে আদালতের বিচারক কর্তৃক অভিযুক্তের সম্মুখে আদালতের রায় পড়ে শোনানো না হলে সেই বিচারের রায় বৈধ নয়।

– ফলশ্রুতিতে, ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০১০, সামরিক আদালতের কার্যক্রম শুরু হবার পর তদপরবর্তীতে সেনা অফিসারদের কোনরুপ রায় প্রদান ব্যতিরেকেই ০৪ নভেম্বর, ২০১০ দুপুরে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্বাহী আদেশ সংবলিত একটি পত্র প্রেরণ করে সেনা অফিসারদের ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের সাজা দিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

– উক্ত নির্বাহী আদেশ সংবলিত পত্রে দেখা যায়, গোপন সামরিক আদালত রায়টি তৈরি করেছে ৫ই অক্টোবর এবং তদপরবর্তীতে আইনানুযায়ী অভিযুক্ত সেনা অফিসারদের রায়টি না জানিয়ে ও সেনা আইন অনুসারে অভিযুক্ত সেনা অফিসারদের আপিল করবার সুযোগ না দিয়ে সংগোপনে সেনাপ্রধান কর্তৃক রায়টি চূড়ান্ত করে নিয়ে এসেছে।

– অভিযুক্ত সেনা অফিসারদের সেনা আইন-১৯৫২ এর ১৩১ (১) ধারা অনুযায়ী আপীল করবার কোনরুপ সুযোগ না দিয়ে সাথে সাথেই ৪ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরবর্তীতে সেনা অফিসারদের দেশের বিভিন্ন কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

– কারাগার থেকে সেনা অফিসারেরা কারাগারের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কাছে সামরিক আদালতের রায়ের কপি ও রায় সংক্রান্ত অন্যান্য কাগজপত্র চেয়ে আবেদন করেছেন। অদ্যাবধি উক্ত আবেদনের কোন জবাব সেনাবাহিনী থেকে দেয়া হয়নি।

– সেনা আইন-১৯৫২ এর ১৩২ ধারা অনুযায়ী সেনা অফিসারেরা সামরিক আদালতের রায়ের বিপরীতে প্রতিকার চেয়ে সেনাপ্রধান বরাবর আবেদন করেছেন, যার কোনরুপ জবাব অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি।

– জেল কোড এর ৬১৭ (২) ধারা অনুযায়ী, সেনা অফিসারেরা কারাগারের ডিভিশন মর্যাদা পাবার কথা থাকলে ও সেনা অফিসারদের ডিভিশন এর অধিকার থেকে বঞ্ছিত করে, ফাঁসির আসামীর জন্যে নির্ধারিত কনডেম সেলের নির্জন প্রকোষ্ঠে রেখে অমানবিক জীবন-যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে ।

এমতাবস্থায়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন – ২০০৯ এর ১২(ক) ধারা অনুযায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট, দীর্ঘ সময় ধরে নিষ্ঠা ও সততার সাথে দেশকে সেবা প্রদানকারী সেনা অফিসারদের সাথে মৌলিক নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার লংঘন এবং গোপন সামরিক আদালত গঠনের মাধ্যমে গোপন রায় তৈরি করে ও কোনরুপ আপীল করবার সুযোগ না দিয়ে, কেবলমাত্র নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরনের ঘটনার তদন্ত এবং প্রতিকার চাই।

ধন্যবাদ।

১,২৭৩ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : ““গোপন সামরিক বিচার, ফাঁসির আসামীর কনডেম সেলে পাঁচ সেনা অফিসারের নির্জন কারাযাপন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নিকট পাঠানো চিঠি””

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    Why these people are not going for coup?
    Personally i don't like army rule. We have seen a lot.
    But enough is enough.
    Armed forces should be in power til the death of hasina, khaleda. Then they may go for the election.


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. রাব্বী (৯২-৯৮)
    যেসব আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছিলাম, সেগুলোকে সত্য প্রমাণ করে পাঁচ সেনা অফিসারকে গোপন সামরিক আদালত গঠনের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে কোনরুপ সুযোগ না দিয়ে গোপন রায় প্রদান করে ৪ঠা নভেম্বর, ২০১০ তারিখে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

    - আমি জানিনা যাদেরকে অভিযুক্ত করে সামরিক আদালতে বিচার করা হয়েছে তারা নির্দোষ বা দোষী। তবে উপরের এই অভিযোগ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে বলবো এই বিচারে ন্যয়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে যতবড়ই ফৌজদারী অপরাধ করুক তার আত্মপক্ষ সমর্থন করে ডিফেন্ড করার সুযোগ থাকা তার অধিকার। আর বিচার প্রক্রিয়া কেন গোপন হবে? গোপন বিচার করে কি শৃংখলা রক্ষা হয় তা আমার মাথায় আসে না।

    বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ যার বয়স চল্লিশ বছর। একটি স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী পরিচালনায় কলোনিয়াল মিলিটারি এ্যাক্ট কতটুকু উপযোগী তা ভাবা প্রয়োজন আমাদের সবার। স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত কোন নাগরিক কোন কলোনিয়াল সাবজেক্ট না যে তাকে গোপনে বিচার করতে হবে। গোপন সামরিক বিচার স্বাধীন দেশের নাগরিকের জন্য গ্রহনযোগ্য না। কর্নেল তাহেরের বিচার এবং ফাঁসি প্রদান প্রমাণ করে সামরিক বাহিনীর গোপন বিচার প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট সুযোগ রয়েছে।

    আমি বলছি না - সামরিক বাহিনীর বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু সেটি স্বচ্ছ হতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে।

    সামরিক আদালত অভিযুক্তদের উপর আনীত অভিযোগের কোনরুপ evidence, সাক্ষ্য প্রমাণ ও সাক্ষী প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। গোপন সামরিক আদালত চলাকালীন সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্যে সেনা অফিসারদের পুনঃ পুনঃ জীবনের প্রতি ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়।

    - এটি যদি হয়ে থাকে তাহলে সেটি বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে! এটি ভয়াবহ অন্যায় হয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  3. Cadet naim

    আমার কাছে পুরো বিষয়টাকে পিলখানা ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ( শহিদ ও বরখাস্ত ) অবশিষ্ট anti-indian কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেবার একটি smart উদ্যোগ বলেই মনে হয়েছে...অবাক লাগে কত সহজেই কত ঘটনা ঘটানো হয়!!! x-( x-( :gulli2: :gulli2: ......we should pray for our ex-cadet brothers...

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।