মাহে রমযানের গুরুত্ব

মাহে রমযান ইসলামের বিশেষ রুকন-রোযা পালনের মাস। এ রোযা প্রত্যেক বালেগ মুসলমানের উপর ফরজ। যে ব্যক্তি এ রোযা রাখাকে ফরয মনে করবে না, সে কাফির হয়ে যাবে। আর যে ফরয মনে করেও রোযা রাখবে না, সে মস্ত বড় গুনাহগার ও ফাসিক গণ্য হবে।

এই মাস পবিত্র কুরআন নাযিলের মাস, লাইলাতুল ক্বদরের মাস ও রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এমনিভাবে তা ত্যাগ-তিতিক্ষা ও চাহাত বিসর্জনের মাস, ধৈর্য ও সহনশীলতার মাস, সহমর্মিতা ও সহানুভূতির মাস।

এইমাসে মুমিন বান্দা একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে খুশি করার জন্য খানা-পিনা, কাম-ভোগ সব বিসর্জন দেয়। হাত,পা,চোখ,মুখ প্রভৃতি যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সংযত রাখে। প্রত্যদানে মহান আল্লাহ তাঁর ঈমানদার বান্দার জন্য বেহেশতকে নতুন করে সাজান, শয়তানকে শিকলাবদ্ধ করেন, জগতে রহমত-সকীনার আবেশ নাজিল করেন, সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন।

রমযান মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হযরত সালমান ফারসী ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের নিকট এক মহান ও বরকতময় মাস সমাগত। সে মাসে একটি রাত আছে, যা এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা এ মাসের তোমাদের উপর ফরজ করে দিয়েছেন এবং ( তারাবীহ ইত্যাদির জন্য ) রাত জাগরণ করা সওয়াবের বিষয় করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল আদায় করবে, সে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের ফজীলত লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে ফরজ আদায় করবে, সে অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায়ের সমান সওয়াবের অধিকারী হবে। এ মাস সবর বা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের সওয়াব হচ্ছে জান্নাত। এ মাস সমবেদনা প্রকাশের মাস। এ মাসে মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করা হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে এবং ইফতার করিয়েছে তার রোযার সমপরিমাণ সওয়াবের ভাগী হবে। অধিকন্তু এতে রোযাদারের সওয়াব একটুও কমবে না। হযরত সালমান ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু ) বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম )! আমাদের মধ্যে সকলের এ সামর্থ্য নাই যে, আমরা রোযাদারকে (ভালরূপে) ইফতার করাতে পারি। রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন, আল্লাহ তাআলা উক্ত সওয়াব সেই ব্যক্তিকেও দান করবেন, যে এক ঢোক দুধ বা একটি খেজুর বা একটু পানি দ্বারা রোযাদারকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে পেট পুরে খাওয়াবে, আল্লাহ তাআলা তাকে আমার হাউজে কাওসার থেকে এমনভাবে পান করাবেন যে, জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে পিপাসার্ত হবে না। এটি এমন এক মাস যার প্রথম ভাগ রহমতের, দ্বিতীয় ভাগ মাগফিরেতের আর তৃতীয় ভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের। যে ব্যক্তি এ মাসে তার দাস-দাসীর উপর থেকে কাজের বোঝা হালকা করে দিবে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন।

( মিশকাত শরীফ )

এছারাও এর বাইরে আরও অনেক মর্তবার বিভিন্ন দিক রয়েছে। সব মিলিয়ে মাহে রমযান সৌভাগ্যবান রোযাদার বান্দাদের জন্য আল্লাহর দান। সুতরাং, এক্ষেত্রে হতভাগ্য সে, যে এত মহাদৌলত পেয়েও অবহেলায় হাতছাড়া করে।

শুধু কেবল পানাহার পরিত্যাগে রোযার সার্থকতা হাসিল হয় না। রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এরশদ করেন, যে ব্যক্তি অন্যায় কথা ও অন্যায় কর্ম পরিত্যাগ করল না, তার খান-পিনা পরিত্যাগে মহান আল্লাহর কোন হাজত নেই। ( বুখারী ) তাই পানাহার হতে আত্মসংবরণের পাশাপাশি সকল পাপের বিষয় যেমন- মিথ্যা, পরনিন্দা, ঝগড়া, হানাহানি, সুদ-ঘুষ গ্রহণ, প্রতারণা, অহংকার প্রভৃতি থেকে অন্তঃকরণ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে রক্ষা করতে হবে। এভাবে রমাযানের বরকতে আমরা পেতে পারি একটি উন্নত আদর্শ জীবন। যার পরকালীন বিনিময় হবে মহান আল্লাহর রিজামন্দী ও চিরসুখের জান্নাত লাভ।

নামাযের জামাআ’ত যেমন উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্রকে একই কাতারে, একই পর্যায়ে উপনীত করে, তেমনি রোযাও বিত্তবান ও বুভুক্ষের মাঝে অভিন্ন অনুভব যোগায়। তাতে দুঃখীর দুঃখ ও ক্ষধার্তের যাতনা সহজেই বিত্তবানদেরকে প্রভাবিত করে মহানুভবতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শনের পথ দেখায়। তখন যাকাত, ফিতরাসহ তাদের যাবতীয় দানের হস্ত প্রসারিত হয়। আর এর আবহে তারা রোযার পরে ঈদের খুশি উদযাপনের মুহূর্তেও এবং তৎপরবর্তীতেও আর অভাবীদেরকে ভুলেন না বা ভুলতে পারেন না। এমনিভাবে বিত্তবানগণ মাহান আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের সুযোগ পান।

মাহে রমযানের সকল আমর প্রতিই আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। তারাবীহ, ঈদ, যাকাত, ফিতরা প্রভৃতি সকল আয়োজনে যেন আমরা কামিয়াবীর মনযিলে পৌঁছতে পারি, সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ যত্নশীল হতে হবে।

পবিত্র রমযান ও ঈদুল ফিতরের সৌভাগ্যমন্ডিত পরশ মুসলিম জাতির জন্য বয়ে আনুক হিদায়াত, কল্যাণ ও শান্তি।

৮৮৫ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “মাহে রমযানের গুরুত্ব”

  1. আসাদুজ্জামান (১৯৯৬-২০০২)

    রমজানের রোযা শেষে ঈদ তো তারই জন্য যে এই একমাসের ইবাদত-বন্দেগী আর তওবা-এস্তেগফারের মাধ্যমে নিজের সমস্ত গুনাহ আল্লাহর নিকট হতে মাফ করিয়ে নিতে পারে।

    জবাব দিন
  2. "যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করেছি।
    মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করে, সেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে।
    মানুষ তো খুবই দ্রুততা প্রিয়। [১৭:১০~১১]

    আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি।
    কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে।
    পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব।আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।
    যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে।
    আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়।
    কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।[১৭:১৩~১৫]

    আপনার পালনকর্তাই বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ জানা ও দেখার জন্যে যথেষ্ট।
    যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণ করি।
    ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।
    আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।
    এদেরকে এবং ওদেরকে প্রত্যেককে আমি আপনার পালনকর্তার দান পৌছে দেই এবং আপনার পালকর্তার দান অবধারিত।"[১৭:১৮~২০]
    সূরা বনী ইসরাঈল ( মক্কায় অবতীর্ণ )
    [Collected]

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।