সেন্টমার্টিন গিয়ে যখন নামলাম ততোক্ষণে অসম্ভব ক্লান্তি পেয়ে বসেছে। একজন একজন করে যখন এই সাগরদ্বীপে পা রাখছি তখন দুপুর প্রায় একটা। নেমেই প্রথমে যেটা চোখে পড়লো তা হলো অফ-সিজনে ট্যুরিস্ট দেখে দ্বীপবাসী মানুষের কৌতুহলী দৃষ্টি। সবাই মিলে এমন ভাবে আমাদের দেখছে যেন আমরা ‘নাগস হেড’ এ ক্যাবারে ড্যান্স করতে এসেছি। 😮
যাই হউক, ক্ষুধা, ক্লান্তি এবং জুন মাসের স্থলবায়ুর অসম্ভব গরম যখন আমাদের চামড়া ভেদ করে ঢুকছে তখন সমুদ্রের কোল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা হোটেল প্রিন্স-হেভেনকে নিরাপদ আশ্রয় মনে হলো। গিয়ে সেখানে উঠে গেলাম এবং অফ-সিজনে আসার প্রথম সুবিধা টের পেলাম। মাত্র আড়াইশ টাকা হোটেলের রুমভাড়া। ঝটপট ৪টা রুম নিয়ে নিলাম। প্রিন্স-হেভেন একেবারে বিচ ঘেষা। হোটেলের সামনে বারান্দা পেরিয়ে নারিকেল বাগান তার পরই সমুদ্র শুরু। একপাশে দেখলাম দু’টো টিউবয়েল। খাবার জন্যে স্বাদু পানি আরকি।
যেহেতু অফ সিজন, আমরা ছাড়া হোটেলে আর কোন ট্যুরিস্ট নাই। পুরো হোটেল দেখাশুনা করছেন একজন মাত্র লোক। উনি এখানকার স্থানীয় লোক , হোটেলের একটু দুরেই তার বাড়ি। সেখনেই থাকেন আর মাঝে মাঝে এসে তালা দেয়া হোটেলটা ঘুরে দেখে যান। আমরা প্রথম থেকেই উনাকে মামা ডাকা শুরু করলাম। সেই মামা আমাদের খাবার দাবারের দায়িত্ব নিলেন। উনি বাজার করে আনবেন, নিজে রান্না করে দেবেন, আমরা শুধু তাকে হিসেব মতো টাকা দিয়ে দিবো।
ঢাকা থেকে এক কার্টন সিগারেট নিয়ে গিয়েছিলাম। তার স্বদব্যাবহার হচ্ছে। রাতে কি খাবো হোটেলের মামাকে সেটার ইন্সট্রাকশন দিয়ে সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম নারিকেল-জিঞ্জিরা দ্বীপ দেখতে।
সমুদ্র ঘেষে রাস্তার পাশে সারি সারি কেয়া’র ঝোপ। তার পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আমরা প্রথমে গেলাম দ্বীপের একমাত্র বাজারে চা খেতে। চা খেতে খেতে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বললাম। জানলাম সেন্ট মার্টিন নিয়ে অনেক কিছু। অনেকে এখানে আছেন তিন পুরুষ ধরে। খুব বেশি মানুষ অবশ্য থকে না পুরো দ্বীপে। কয়েক হাজার। বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা চলে মাছ ধরে। একজনের সাথে পরিচয় হলো, সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের কমিশনার। সেও নাকি মাছ ধরে আর বাজারে বিক্রি করে 🙂 । পুরো দ্বীপে তখন রিকশা ছিলো ১৬টা। ভ্যান সেই রকমই। মসজিদ আছে । আছে সেন্ট মার্টিন বিএনপি আর আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ~x( ।
পুরো দ্বীপের সবচেয়ে উচু বিল্ডিং হচ্ছে এর তিনতলা ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। নেভি’র একটা পর্যটন কেন্দ্র আছে, সেটা খুব সুন্দর, পার্কের মতো সাজানো। আর কিছু ট্যুরিস্ট আবাস স্থল। স্থানীয় লোকজনের বাড়ি বেশির ভাগ বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরী। ইটের স্থাপনা খুব কম। নেই বললেই চলে। আর বিস্তীর্ন জায়গা জুড়ে তরমুজের ক্ষেত, আর নারিকেল বাগান। বড় বড় মাছ ধরে সেগুলি তারে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শুটকি বানানোন জন্যে।
একপাশ থেকে দেখাশুরু করেছিলাম। হাটতে হাটতে অন্য পাশে সমুদ্রের পাড়ে চলে এলাম। এইপাশের শেষ বাড়িটা আমাদের বিখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের। আগেই জানতাম এ বাড়ির নাম ‘সমুদ্র বিলাস’। গেট দিয়ে ঢুকার সময় একটা মজার জিনিস চোখে পরলো, কে বা কারা যেন ‘সমুদ্র বিলাসে’র ‘সমুদ্র’ কেটে দিয়ে সেখানে কালো চক দিয়ে মোটা করে ‘শাওন’ লিখে দিয়ে গেছে। ‘শাওন বিলাস’ পড়তে একেবারে মন্দ লাগলো না :gulti: ।
পুরো দ্বীপ চক্কর দেয়া শেষ করে ফিরে এলাম হোটেলে। টিউবয়েলের স্বাদু পানিতে স্নান সেরে নিলাম এক এক করে। স্নানের সময় রাজা দুষ্মন্তের শকুন্তলা’র মতো এ ওর গায়ে আলবালে জলসেচন করলাম। এর বেশি ডিটেইলস-এ আর নাইবা গেলাম। 😉
সবার স্নান হয়ে যাবার পর পাশাপাশি চেয়ার নিয়ে সবাই বারান্দায় বসলাম সমুদ্রের দিকে মুখ করে। মামা চা দিয়ে গেলো। গরম চায়ের সঙ্গে সিগারেটের ধোয়া উড়িয়ে আমরা মুগ্ধ হয়ে বসে বসে দেখলাম সেন্টমার্টিনে সূর্যাস্তের দৃশ্য। হঠাৎ চারপাশ কেমন যেন নির্জন হয়ে গেলো। তারপর যেন হঠাৎ করেই রাত নেমে আসলো। আসলে হোটেলে বিদ্যুৎ ছিলো না। অফ সিজনে ওরা জেনারেটর চালায় না। তাই সূর্য ডুবে যাওয়া মানেই সেখানে নিশিরাত। কুপির আলো জ্বলে কিছুক্ষণ কিন্তু তারপর পুরো দ্বীপে আর মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে অনেক জায়গায় অনেক রাত কাটিয়েছি। কিন্তু সেন্টমার্টিনের সেই রাতটা যেন একটু আলাদা। একেবারে অচেনা অজানা এক দ্বীপে নির্জন এক হোটেলে আমরা ৯ বন্ধু , সমুদ্রের সো সো শব্দ আর থেমে যাওয়া সময়।
ফুর্তিবাজ আমরা সবাই হঠাৎ কেমন যেন চুপ মেরে গেলাম। কেউ মুখ ফুটে কিছু বলছে না।
পরে ঢাকায় এসে একজন অন্যজনকে বলেছি, সেই রাতে আসলে আমাদের ভূতের ভয় পেয়ে বসেছিলো। কেউ একা একা কোথাও যেতে চাইছিলাম না। বারান্দায় সবাই বসে আছি, কাউকে বলা হলো ভিতর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে আসতে, সে
একা না গিয়ে অন্য একজনকে নিয়ে যাচ্ছে, যেন রুমের ভিতরে অশরীরী কোনো আত্মার উপস্থিতি আছে। পানি খেতে গেলেও নানান টাল বাহানা করে একজন আরেকজন কে ডেকে নিয়ে যাচ্ছি, এমন অবস্থা।
অবশেষে একটা পায়ের আওয়াজ পেলাম। রাতের খাবার রান্না বান্না করে নিয়ে আসলেন মামা। হাতে দুইটা মোমবাতি। অনেক্ষণ পর আমাদের মধ্যে প্রাণ ফিরে এলো যেন। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে রুপচাঁদা আর কোরাল মাছ সঙ্গে সাদা ভাত আর ডাল দিয়ে মোমের আলোয় রাতের খাবার সেরে নিলাম।
( চলবে নাকি :dreamy: ? )
উপুর্যুপুরি পঞ্চমবারের মতো আমি......... :grr:
ব্যার্ত হইলাম
আমাদের ট্যুরটা এরকমই ছিল। অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। 🙂
ঐ :clap: :clap:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ভাই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এক্কুন জাইবার লাগি মন কইতাসে। :bash: :(( :bash: :((
:dreamy: :dreamy: :dreamy:
লাস্টে আবার শয়তানি স্টাইলে " চলবে নাকি" লেখো ক্যান?
না চালাইলে :frontroll: আছে কপালে। 😀
:dreamy: 😮
আবার জিগায় :thumbup:
ভাই, :gulli: -র মত দৌড়াবে । 😉
দোস্ত, পুরা :gulli2: :gulli2: হইতেছে।
থামিস না কইলাম।
:guitar:
লেখা ভালো লাগলেও মন খারাপ হইয়া গেছে 🙁
খুব জাইতে ইচ্ছা করতেসে :((
চলে 'জাও' 😉
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
=))
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
দোস্ত,
আমি তো চিন্তায় আছি। সিক্স ডেইজ সেভেন নাইটস শেষ হলে আর চলবে ক্যাম্নে? তখন কিন্তু লোকজন তোরে ধোলাই দিবে।
ভালো চাস তো তার আগেই আরেকটা শুরু করে দিস 😉
আরেকটা শুরু হইছে।আসিতেছে' হিমালয়'।