ইসলামের স্বর্ণযুগ – পর্ব ৬

ইসলামের স্বর্ণযুগ – পর্ব ৬
ড. রমিত আজাদ

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

একেশ্বরবাদের উপর গবেষণা করতে গিয়ে আমি ‘স্ট্রীম অব টাইম’ (কালপঞ্জী) বিষয়টি নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছিলাম। আমার গবেষণা অনুযায়ী অধর্ম (ধর্মীয় নয়) ইতিহাসের বিচারে হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-ই প্রথম একেশ্বরবাদী। হজরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর ইন্তেকালের পরে উনার বংশধরদের মধ্যে আরো অনেকেই একেশ্বারবাদী নবী ছিলেন যেমন,
হযরত লূত্ব (আঃ)(উনার ভাতিজা) , হযরত ইসমাঈল (আঃ) (উনার পুত্র), হযরত ইসহাক্ব (আঃ) (উনার পুত্র), হযরত ইয়াকূব (আঃ) (উনার প্রোপৌত্র), হযরত ইউসুফ (আঃ)(উনার প্রো-প্রোপৌত্র), হযরত আইয়ূব (আঃ)(হযরত ইসহাক (আঃ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূবের মধ্যেকার প্রথম পুত্র ঈছ-এর প্রপৌত্র) প্রমুখ।

তবে ইতিহাসে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী দ্বিতীয় একেশ্বরবাদী হলেন যরথুস্ত্র। তৃতীয় উজ্জ্বল নক্ষত্রকে খুঁজতে গিয়ে চমকপ্রদ কিছু তথ্যের মুখোমুখী হলাম, এখানে আমি দুজনার নাম পেলাম হযরত মুসা (আঃ) ও মিশরের রাজা আখেনাতেন।

মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত মূসা (আঃ) ছিলেন বনু ইস্রাঈল বংশীয়। মূসা (আঃ)-এর জন্ম হয় মিসরে এবং ঘটনাক্রমে লালিত-পালিত হন মিসর-এর ফেরাঊনের ঘরে। মূসা (আঃ) একসময়ে নবী হয়ে ফেরাঊনের দরবারে পৌঁছেন এবং তাকে একেশ্বরবাদের কথা বলেন কিন্তু ফেরাউন কিছুই মানতে চায়না। অতঃপর তেইশ বছর দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের পর ফেরাঊন ডুবে মরে এবং বনু ইস্রাঈল মিসর থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যায়।

এক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্নের উদ্ভব হয়, ১। হযরত মুসা (আঃ)-এর জীবনকাল কখন ছিলো?, ২। ফেরাউন কারো নাম নয়, এটি একটি পোস্টের নাম, মিশরের রাজাকে ফেরাউন বলা হয়, তাহলে হযরত মুসা (আঃ)-এর জীবনকালে যে ফেরাউন ছিলো তার নাম কি? ৩। যেই ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ)-কে লালন-পালন করেছিলো আর যেই ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ)-কে ধাওয়া করতে গিয়ে ডুবে মরেছিলো তারা কি একই ফেরাউন, না দুজন ভিন্ন ভিন্ন ফেরাউন? ৪। দু’জন ফেরাউন ভিন্ন ভিন্ন হলে প্রথম ফেরাউন পিতা ফেরাউন ও দ্বিতীয় ফেরাউন পুত্র ফেরাউন হওয়ার কথা, ৫। হযরত মুসা (আঃ)-এর নামের সাথে মিশরীয় রামজেস (Ramesses) নামটি খুব শোনা যায়। এমনকি বিভিন্ন চলচিত্রেও রামজেস-কে তৎকালীন মিশরের ফেরাউন হিসাবে দেখানো হয়েছে। কে এই রামজেস? ৬।হযরত মুসা (আঃ)-এর জীবন সম্পর্কে খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস ও ইসলামী বিশ্বাসের মধ্যে গরমিল আছে কিনা?

প্রথম প্রশ্নটি অর্থাৎ হযরত মুসা (আঃ)-এর জীবনকাল খুঁজতে গিয়ে সেটার সুনির্দিষ্ট সন-তারিখ পাওয়া মুশকিল হয়ে গেলো একটি সূত্রমতে উনার জীবনকাল ছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৯১ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১২৭১ পর্যন্ত আবার অন্য একটি সূত্র মতে উনার জীবনকাল ছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ১৪০১ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৯১ সাল পর্যন্ত।

দ্বিতীয় প্রশ্নটি অর্থাৎ হযরত মুসা (আঃ)-এর জীবনকালে যে ফেরাউন ছিলো তার নাম কি? যদি উনার জীবনকাল হয় খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৯১ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১২৭১ পর্যন্ত তাহলে সেই সময়ে মিশরে ফেরাউন ছিলেন চতুর্থ আমেনহোটেপ (Amenhotep IV) যার আরেক নাম আখেনাতেন (Akhenaten)। আখেনাতেন-এর রাজত্বকাল ছিলো খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৫৩ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৩৬ পর্যন্ত মোট ১৭ বছর। আবার যদি উনার জীবনকাল হয় খ্রীষ্টপূর্ব ১৪০১ থেকে খ্রীষ্টপূর্ব ১৩৯১ সাল পর্যন্ত তাহলে সেই সময়ে মিশরে ফেরাউন ছিলো চতুর্থ আমেনহোটেপ (আখেনাতেন)-এর পিতা তৃতীয় আমেনহোটেপ।

তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্ন অর্থাৎ যেই ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ)-কে লালন-পালন করেছিলো আর যেই ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ)-কে ধাওয়া করতে গিয়ে ডুবে মরেছিলো তারা একই ফেরাউন কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে – মুসলমানদের বিশ্বাস মতে তারা দুজন একই ফেরাউন; আবার বাইবেল অনুযায়ী মোসেস এর কাহিনীতে pharaoh of the Exodus-এর নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে যেই ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ)-এর জন্মের সময় রাজত্ব করছিলো, আর যেই ফেরাউন হযরত মুসা (আঃ)-এর নবুওত পাওয়ার পর যাবতীয় সমস্যা সৃষ্টি করেছিলো তারা ভিন্ন ভিন্ন ফেরাউন ও তাদের মধ্যে পিতা ও পুত্রের সম্পর্ক।

The Bible tells how the Israelites are enslaved in Egypt and eventually escape under the leadership of Moses. At least one or two pharaohs are involved, the “pharaoh of the oppression” who enslaves the Israelites, and the “pharaoh of the exodus”, during whose rule the Israelites escape. The biblical story of the written Torah alone, does not name either, nor does it give enough information to identify the period in which the events are set, with the result that there have been many suggestions as to which of Egypt’s many rulers was involved.

পঞ্চম প্রশ্ন অর্থাৎ হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে মিশরীয় রামজেস (Ramesses )-এর কি সম্পর্ক? ইতিহাসের পাতা ঘাটলে পাওয়া যায় যে, এই নামে দুইজন ফেরাউন মিশরে ছিলেন। তবে তাদের রাজত্বকাল ছিলো 1292–1290

Menpehtyre Ramesses I (traditional English: Ramesses or Ramses) was the founding Pharaoh of Ancient Egypt’s 19th dynasty. The dates for his short reign are not completely known but the time-line of late 1292–1290 BC is frequently cited[3] as well as 1295–1294 BC.[4] While Ramesses I was the founder of the 19th Dynasty, in reality his brief reign marked the transition between the reign of Horemheb who had stabilized Egypt in the late 18th dynasty and the rule of the powerful Pharaohs of this dynasty, in particular his son Seti I and grandson Ramesses II, who would bring Egypt up to new heights of imperial power.

ষষ্ঠ প্রশ্ন অর্থাৎ হযরত মুসা (আঃ)-এর জীবন সম্পর্কে খ্রীষ্টিয় বিশ্বাস ও ইসলামী বিশ্বাসের মধ্যে গরমিল আছে কিনা? এর উত্তরে বলতে হবে, হ্যাঁ গরমিল রয়েছে।

বাইবেলের গল্প অনুযায়ী
মোসেস-এর জন্ম ও শৈশব:

পবিত্র বাইবেল অনুসারে হযরত মুসা (আঃ) মিশরে লিবাইট নামের ইসরাইলি গোত্রে জন্মগ্রহন করেছিলেন। উনার পিতার নাম আমরাম আর মায়ের নাম জোশিবেদ। তখন মিশরের ফেরাউন-এর নাম কি ছিলো তার কোন উল্লেখ বাইবেলে নাই। কয়েকজন জ্যোতিষী গণনা করে ফেরাউনকে বলেছিলো, ইহুদি পরিবারের মধ্যে এমন এক সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যে ভবিষ্যতে মিসরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই ‘ফেরাউন’ আদেশ দিলেন কোনো ইহুদি পরিবারে সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই যেন তাকে হত্যা করা হয়।

ফলে শিশু মুসা (আঃ-এর জন্মের পর মা জোশিবিদ সকলের চোখের আড়ালে সম্পূর্ণ গোপনে শিশুসন্তানকে বড় করে তুলতে লাগলেন। এভাবে তিন মাস যাওয়ার পর সন্তানকে গোপন রাখা আর সম্ভব পর হচ্ছিল না তখন আমরাম এবং জোশিবেদ শিশু মুসাকে একটা ছোট ঝুড়িতে করে নীল নদে ভাসিয়ে দিলেন। নদীর পাড় ধরে শিশু বাহী ঝুড়িটিকে অনুসরণ করে চললেন মুসা (আঃ)-এর বোন মিরিয়াম। ঝুড়িটি গিয়ে পৌছল এমন একটি ঘাটে যেখানে ফারাও রাজকণ্যা বাত্য (Batya) গোসল করছিলেন। ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চাকে একা পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হলো। তাকে তুলে নিয়ে এলো রাজপ্রাসাদে। সেটা দেখতে পেল মিরিয়াম। মিরিয়অম রাজকন্যার কাছে গিয়ে জানতে চাইলো বাচ্চাটার লালন পালনের জন্য তার কোন হিব্রু মহিলা প্রয়োজন হবে কিনা, রাজকন্যা বাত্য সম্মত হলে জোশিবেদকেই মুসার ধাত্রী হিসেবে নিযু্ক্ত হল। রাজকন্যা তাকে (জোশিবেদকে) বলল, “আমার হয়ে তুমি এই শিশুটিকে দুধ পান করাও। এরজন্য আমি তোমাকে টাকা দেব।” হযরত মুসা (আঃ)-এরই মা নিজের পরিচয় গোপন করে শিশু মুসাকে যত্ন করে বড় করে তুলতে লাগলেন।শিশুটি বড় হয়ে উঠলে জোশিবেদ তার সন্তানকে রাজকন্যাকে দিয়ে দিল। রাজকন্যা শিশুটিকে নিজের ছেলের মতোই গ্রহণ করে তার নাম দিল মোশি। শিশুটিকে সে জল থেকে পেয়েছিল বলে তার নামকরণ করা হল মোশি, মানে ‘টেনে তোলা’। এভাবে ফারাও রাজ প্রাসাদে বড় হতে থাকেন মোজেস।

একদিন, মোশি বড় হয়ে যাবার পর সে তার নিজের লোকদের দেখবার জন্য বাইরে গেল এবং দেখল তাদের ভীষণ কঠিন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সে এও দেখল য়ে একজন মিশরীয় একজন হিব্রু ছোকরাকে প্রচণ্ড মারধর করছে। মোশি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন কেউ ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে না। তখন মোশি সেই মিশরীয়কে হত্যা করে তাকে বালিতে পুঁতে দিলেন। কিন্তু এই সংবাদ গোপন থাকলো না। জানাজানি হয়ে গেলো। একদিন রাজা ফরৌণ মোশির কীর্তি জানতে পারলেন; তিনি তাকে হত্যা করতে চাইলেন। কিন্তু মোশি মিদিয়ন দেশে পালিয়ে গেল। মিদিয়নে এসে একটি কুয়োর সামনে মোশি বসে পড়ল। সেখানে এক যাজক ছিলেন তার নাম রূযেল (আরেক নাম য়িথ্রো)। তাঁর ছিল সাতটি মেয়ে। কুযো থেকে জল তুলে পিতার পোষা মেষপালকে জল খাওয়ানোর জন্য সেই সাতটি মেয়ে কুযোর কাছে এল। তারা মেষদের জল পানের পাত্রটি ভর্তি করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিছু মেষপালক এসেছিল এবং তরুণীদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই মোশি তাদের সাহায্য করতে এলো এবং তাদের পশুর পালকে জল পান করালো। মেয়েরা বাড়ী ফিরে এসে তাদের পিতাকে সব খুলে বললো।

যাজক রূযেল তাঁর মেয়েদের বললেন, “সেই লোকটি কোথায? তোমরা তাকে ওখানে ছেড়ে এলে কেন? যাও তাকে আমাদের সঙ্গে খাবার নেমতন্ন করে এসো।” মোশি রূযেলের সঙ্গে থাকবার জন্য খুশীর সঙ্গে রাজী হল। রূযেল তার মেয়ে সিপ্পোরার সঙ্গে মোশির বিয়ে দিল।
বিয়ের পর সিপ্পোরা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। মোশি তার নাম দিল গের্শোম কারণ সে ছিল প্রবাসে থাকা একজন অপরিচিত ব্যক্তি। দেখতে দেখতে অনেক বছর পেরিযে গেল। মিশরের সেই ফেরাউনও ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের তখনও জোর করে কাজ করানো হচ্ছিল। তারা সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি শুরু করল। এবং সেই কান্না বয়ং ঈশ্বর শুনতে পাচ্ছিলেন।

একদিন হযরত মুসা (আঃ) মেষের পাল চরাতে চরাতে ঈশ্বরের পর্বত হোরেবে (সিনয়) গিয়ে উপস্থিত হলেন। ঐ পর্বতে সে জ্বলন্ত ঝোপের ভিতরে প্রভুর দূতের দর্শন পেলেন মোশি দেখল ঝোপে আগুন লাগলেও তা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে না। তাই তিনি অবাক হয়ে জ্বলন্ত ঝোপের আর একটু কাছে এগিয়ে গেল। মনে মনে ভাবল কি আশ্চর্য় ব্যাপার, ঝোপে আগুন লেগেছে, অথচ ঝোপটা পুড়ে নষ্ট হচ্ছে না! প্রভু লক্ষ্য করছিলেন মোশি ক্রমশঃ ঝোপের দিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে কাছে এগিয়ে আসছে। তাই ঈশ্বর ঐ ঝোপের ভিতর থেকে ডাকলেন, “মোশি, মোশি!”এবং মোশি উত্তর দিল, “হ্যাঁ, প্রভু।”
তখন প্রভু বললেন, “আর কাছে এসো না। পায়ের চটি খুলে নাও। তুমি এখন পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছো। আমি তোমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর। আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর।” মোশি ঈশ্বরের দিকে তাকানোর ভয়ে তার মুখ ঢেকে ফেলল।
তখন প্রভু বললেন, “মিশরে আমার লোকদের দুর্দশা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এবং যখন তাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তখন আমি তাদের চিত্কার শুনেছি। আমি তাদের যন্ত্রণার কথা জানি। এখন সমতলে নেমে গিয়ে মিশরীয়দের হাত থেকে আমার লোকদের আমি রক্ষা করব। আমি তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব এবং আমি তাদের এমন এক সুন্দর দেশে নিয়ে যাব য়ে দেশে তারা স্বাধীনভাবে শান্তিতে বাস করতে পারবে। সেই দেশ হবে বহু ভাল জিনিসে ভরা ভূখণ্ড।নানা ধরণের মানুষ সে দেশে বাস করে: কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও য়িবুষীয গোষ্ঠীর লোকরা সেখানে বাস করে। আমি ইস্রায়েলীয়দের কান্না শুনেছি। দেখেছি, মিশরীয়রা কিভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। তাই এখন আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাচ্ছি। যাও! তুমি আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বাইরে নিয়ে এসো।”

কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বলল, “আমি কোনও মহান ব্যক্তি নই! সুতরাং আমি কি করে ফরৌণের কাছে যাব এবং ইহুদীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনব?” এরপর ঈশ্বর হযরত মুসা (আঃ)-কে কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দিলেন। উনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য উনার ভাই হারোণ-কে সঙ্গে দিলেন। অতঃপর হযরত মুসা (আঃ) ফিরে গেলেন মিশরে। সেখানে গিয়ে হারোণ ইস্রাইলিদের বললেন যে মোশি নবুওত প্রাপ্ত হয়েছেন। তারপর হযরত মুসা (আঃ) কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দেখালে পর লোকরা বিশ্বাস করল যে প্রভু মোশিকে পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ইস্রায়েলের লোকরা জানল য়ে, ঈশ্বর তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাই তারা সকলে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে লাগল।

লোকদের সঙ্গে কথা বলার পর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছে গেলো। উল্লেখ্য যে পূর্ববর্তি ফেরাউন ইতিমধ্যেই গত হয়েছেন, এবং নতুন ফেরাউন হিসাবে ক্ষমতাসীন হয়েছেন তাঁর পুত্র, অর্থাৎ বাত্য-এর ভাই। তবে এই ফেরাউন-এর নামও বাইবেলে উল্লেখিত নাই। নতুন ফেরাউনের কাছে গিয়ে মোশি এবং হারোণ বললেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার সম্মানার্থে উত্সব করার জন্য আমার লোকদের মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র দাও।” কিন্তু ফরৌণ বলল, “কে প্রভু? আমি কেন তাকে মানব? কেন ইস্রায়েলকে ছেড়ে দেব? এমনকি এই প্রভু কে আমি তাই জানি না। সুতরাং আমি এভাবে ইস্রায়েলের লোকদের ছেড়ে দিতে পারি না।” তখন হারোণ এবং মোশি বলল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাই আমরা তিন দিনের জন্য মরুপ্রান্তরে ভ্রমণের অনুমতি প্রার্থনা করছি, সেখানে আমরা আমাদের প্রভু, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করব। আমরা যদি তা না করি তাহলে তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেবেন। আমাদের মহামারী অথবা যুদ্ধের প্রকোপে মেরে ফেলবেন।” কিন্তু তখন মিশরের রাজা তাদের উত্তর দিলেন, “মোশি ও হারোণ, তোমরা কাজের লোকদের বিরক্ত করছ। ওদের কাজ করতে দাও। গিয়ে নিজের কাজে মন দাও। দেখ, দেশে এখন প্রচুর কর্মী আছে এবং তোমরা তাদের কাজ করা থেকে বিরত করছ।”

এরপর ফেরাউন ইস্রাইলিদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলো। প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “ফরৌণের এখন আমি কি অবস্থা করব তা তুমি দেখতে পাবে। আমি তার বিরুদ্ধে আমার মহান ক্ষমতা ব্যবহার করব এবং সে আমার লোকদের চলে য়েতে বাধ্য করবে। সে য়ে শুধু আমার লোকদের ছেড়ে দেবে তা নয়, সে তার দেশ থেকে তাদের জোর করে পাঠিয়ে দেবে।” মোশি আবারও ফেরাউনকে গিয়ে তাঁর আবেদন জানালেন। তখন মোশির বয়স ছিল ৮০ এবং হারোণের বয়স ছিল ৮৩ বছর। ফেরাউন যাতে মোশির নবুওতে বিশ্বাস করে ঐ উদ্দেশ্যে হযরত মুসা (আঃ) তাঁর হাতের লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেললেন। ফরৌণের চোখের সামনে মাটিতে পড়ে থাকা ঐ লাঠি নিমেষের মধ্যে সাপে পরিণত হলো। ফেরাউন এই ঘটনা দেখে তার জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি ও যাদুকরদের ডাকলেন। রাজার নিজস্ব যাদুকররা তাদের মায়াবলে হারোণের মতো তাদের লাঠিটিও সাপে পরিণত করে দেখাল। সেইসব যাদুকররাও নিজের নিজের হাতের লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে মুহুর্তে লাঠিগুলিকে সাপে রূপান্তরিত করে দেখাল। কিন্তু হারোণের লাঠি তাদের লাঠিগুলোকে গ্রাস করে নিল। এটা দেখার পরও উদ্ধত ফেরাউন মোশি এবং হারোণের কথায় কান দিলো না। এরপর মোশি ফেরাউনের সামনে নীল নদের জলে আঘাত করে সেই জল রক্তে পরিণত করলেন। তবুও ফেরাউন উদ্ধত রইলো। এরপর ঈশ্বর একের পর এক শাস্তি ফেরাউন ও মিশরের উদ্দেশ্যে পাঠালেন। প্রথমে সমগ্র মিশর দেশ ব্যাঙে ভরিয়ে দিলেন। ফরৌণ এবার বাধ্য হয়ে মোশি এবং হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের বললেন, “প্রভুকে বলো তিনি য়েন আমাকে এবং আমার লোকদের এই ব্যাঙের উপদ্রব থেকে রেহাই দেন। আমি প্রভুকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য লোকদের যাবার ছাড়পত্র দেব।” ঈশ্বর এই শাস্তি তুলে নিলেন। যেমাত্র ঈশ্বর শাস্তি তুললেন অমনি ফরৌণ আবার একগুঁয়ে ও জেদী হয়ে উঠলেন। হারোণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করলো না। এরপর ঈশ্বর সারা মিশরে উঁকুন পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু ফেরাউন আগের মতৈ উদ্ধত রইলো। এরপর ঈশ্বর ঝাকে ঝাকে মাছি পাঠিয়ে দিলেন।

ফরৌণ মোশি এবং হারোণকে ডেকে বলল, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে এই দেশের মধ্যেই নৈবেদ্য উত্সর্গ করো।”
কিন্তু মোশি বলল, “না, তা এখানে করা ঠিক হবে না। কারণ প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পশু বলিদান মিশরীয়দের চোখে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমরা যদি এখানে তা করি তাহলে মিশরীয়রা আমাদের দেখতে পেয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে।
তাই তিন দিনের জন্য আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য আমাদের মরুপ্রান্তরে য়েতে দিন। প্রভুই আমাদের এটা করতে বলেছেন।”
সব শুনে ফরৌণ বলল, “বেশ আমি তোমাদের মরুপ্রান্তরে যাবার ছাড়পত্র দিচ্ছি। তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য। কিন্তু মনে রেখো তোমরা কিন্তু বেশী দূর চলে যাবে না। এখন যাও এবং আমার জন্য প্রার্থনা করো।”
তখন মোশি ফরৌণকে বলল, “দেখুন, আমি যাব এবং প্রভুকে অনুরোধ করব যাতে আগামীকাল তিনি আপনার কাছ থেকে, আপনার লোকদের কাছ থেকে এবং আপনার সভাসদগণের কাছ থেকে মাছিগুলো সরিয়ে নেন। কিন্তু আপনি য়েন আবার আগের মতো প্রভুকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার বিষযটি নিয়ে পরে আপত্তি করবেন না।”
এই কথা বলে মোশি ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এল এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।
এবং মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ফরৌণকে, সভাসদগণ ও প্রজাদের মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করলেন। মিশর থেকে মাছিদের বের করে দিলেন। আর একটি মাছিও সেখানে রইল না। কিন্তু ফরৌণ আবার জেদী হয়ে গেলেন এবং লোকদের য়েতে দিলেন না।

এরপর ঈশ্বর আরো এক বিপর্যয় মিশরে পাঠালেন। মোশি লোকদের জানাল, “প্রভু বলেছেন, ‘আজ মধ্যরাত নাগাদ আমি মিশরের মধ্যে দিয়ে যাব। এবং তার ফলে মিশরীয়দের সমস্ত প্রথমজাত পুত্ররা মারা যাবে। রাজা ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে শুরু করে য়াঁতাকলে শস্য পেষনকারিণী দাসীর প্রথমজাত পুত্র পর্য়ন্ত সবাই মারা যাবে। এমনকি পশুদেরও প্রথম শাবক মারা যাবে। তারপর সমস্ত মিশরে এমন জোরে কান্নার রোল উঠবে যা অতীতে কখনও হয় নি এবং যা ভবিষ্যতেও কখনও হবে না। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের কোনরকম ক্ষতি হবে না। এমন কি কোনো কুকুর পর্য়ন্ত ইস্রায়েলীয়দের অথবা তাদের পশুদের দিকে ঘেউ ঘেউ করে চিত্কার করবে না। এর ফলে, তোমরা বুঝতে পারবে আমি মিশরীয়দের থেকে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে কতখানি অন্যরকম আচরণ করি। তখন তোমাদের সমস্ত (মিশরীয় কর্মচারীরা) নতজানু হবে এবং আমার উপাসনা করবে। তারা বলবে, “তুমি তোমার সমস্ত লোককে তোমার সঙ্গে নিয়ে চলে যাও।” মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়েছিল এবং এই সমস্ত অলৌকিক কাজগুলো করেছিল। কিন্তু প্রভু ফরৌণের হৃদয়কে উদ্ধত করেছিলেন যাতে সে ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে য়েতে না দেয়।

মধ্যরাতে মিশরের সমস্ত প্রথম নবজাতক পুত্রদের প্রভু হত্যা করেছিলেন। ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে জেলের বন্দীর প্রথমজাত পুত্র পর্য়ন্ত। সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবককেও হত্যা করা হল। সেই রাতে মিশরের প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ মারা গেল। ফরৌণ, তার কর্মচারী ও মিশরের সমস্ত লোক উচ্চস্বরে কান্না শুরু করল। তাই, সেই রাতে ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “উঠে পড়, আমাদের সকলকে ছেড়ে দাও এবং চলে যাও। তুমি ও তোমার ইস্রায়েলের লোকরা যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমরা য়েমন বলেছিলে, গিয়ে প্রভুর উপাসনা কর।

ইস্রায়েলের লোকরা রামিষেষ থেকে সুক্কোতে যাত্রা করল। শিশুরা ছাড়াই সেখানে প্রায় ৬,00,000 লোক ছিল। ১৯ মোশি য়োষেফের অস্থি বয়ে নিয়ে চলল। (য়োষেফ মারা যাবার আগে ইস্রায়েলের পুত্রদের এই কাজ করার প্রতিশ্রুতি করিযে নিয়েছিল। য়োষেফ বলেছিল, “ঈশ্বর তোমাদের যখন রক্ষা করবেন তখন তোমরা মিশর দেশ থেকে আমার অস্থি সকল বয়ে নিয়ে এসো।”) । মিশরের রাজা খবর পেলেন য়ে ইস্রায়েলীয়রা পালিয়েছে। এই খবর শুনে ফরৌণ ও তাঁর সভাসদরা আগের মত মন পরিবর্তন করলেন। ফরৌণ বললেন, “আমরা কেন ইস্রায়েলীয়দের য়েতে দিলাম? কেন ওদের পালাতে দিলাম? এখন আমরা আমাদের ক্রীতদাসদের হারালাম।” সুতরাং ফরৌণ তাঁর রথে চড়ে লোকজন সমেত ফিরে গেলেন। ফরৌণ তাঁর সব চেযে ভালো ৬০0 জন সারথীকে নিলেন। প্রত্যেকটি রথে একজন করে বিশিষ্ট সভাসদ ছিল।

মোশি সূফ সাগরের ওপর তার হাত মেলে ধরল। প্রভু পূর্ব দিক থেকে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করলেন। এই ঝড় সারারাত ধরে চলতে লাগল। দু’ভাগ হয়ে গেল সমুদ্র। এবং বাতাস মাটিকে শুকনো করে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখান বরাবর পথের সৃষ্টি করল। ইস্রায়েলের লোকরা ঐ পথ দিয়ে হেঁটে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের দুদিকে ছিল জলের দেওয়াল। পিছনে ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী সেনা ও রথ ধাওয়া করল। পরদিন সকালে মেঘস্তম্ভ ও অগ্নিশিখার ওপর থেকে প্রভু মিশরীয় সেনাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তখন প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ নিয়ে মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে আতঙ্কে ফেলে দিলেন। রথের চাকা আটকে গিয়ে রথ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। মিশরীয়রা চিত্কার করে উঠল, “চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। প্রভুই ইহুদীদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।”তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের ওপর তোমার হাত তুলে ধর। দেখবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করছে মিশরীয়দের রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের।” মোশি তার হাত সমুদ্রের ওপর মেলে ধরলো। তাই দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে সমুদ্র তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেল। মিশরীয়রা জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে দৌড়তে লাগল। কিন্তু প্রভু তাদের সমুদ্রের জলে ঠেলে দিলেন। জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করল রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের। ফরৌণের য়ে সমস্ত সেনারা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে আসছিল তারা সব ধ্বংস হল। কেউ বেঁচে থাকল না। ইস্রায়েলের লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের পথের দুপাশে ছিল জলের দেওয়াল। সুতরাং সেইদিন এইভাবে প্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। পরে ইস্রায়েলীয়রা সূফ সাগরের তীরে মিশরীয়দের মৃত দেহের সারি দেখতে পেল।

পবিত্র বাইবেলে হযরত মুসা (আঃ) ও ফেরাউনের যে কাহিনী পাওয়া যায়, তা আমি সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। নীচে এই সংক্রান্ত পবিত্র বাইবেলের কিছু অংশ তুলে দিলাম।

যাত্রাপুস্তক ০২
১ লেবি পরিবারের একজন পুরুষ লেবি পরিবারেরই এক কন্যাকে বিয়ে করেছিল।
২ সে সন্তানসম্ভবা হল এবং একটা সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। পুত্র সন্তান দেখতে এত সুন্দর হয়েছিল য়ে তার মা তাকে তিন মাস লুকিয়ে রেখেছিল।
৩ তিন মাস পরে যখন সে তাকে আর লুকিয়ে রাখতে পারছিল না, তখন সে একটি ঝুড়িতে আলকাতরা মাখালো এবং তাতে শিশুটিকে রেখে নদীর তীরে লম্বা ঘাসবনে রেখে এলো।
৪ শিশুটির বড় বোন তার ভাইয়ের কি অবস্থা হতে পারে দেখবার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের ঝুড়ির দিকে লক্ষ্য রাখছিল।
৫ ঠিক তখনই ফরৌণের মেয়ে নদীতে স্নান করতে এসেছিল। সে দেখতে পেল ঘাসবনে একটি ঝুড়ি ভাসছে। তার সহচরীরা তখন নদী তীরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তাই সে তার সহচরীদের একজনকে ঝুড়িটা তুলে আনতে বলল।
৬ তারপর রাজকন্যা ঝুড়িটা খুলে দেখল য়ে তাতে রযেছে একটি শিশুপুত্র। শিশুটি তখন কাঁদছিল। আর তা দেখে রাজকন্যার বড় দযা হল। ভাল করে শিশুটিকে লক্ষ্য করার পর সে বুঝতে পারল য়ে শিশুটি হিব্রু।
৭ এবার শিশুটির দিদি আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রাজকন্যাকে বলল, “আমি কি আপনাকে সাহায্যের জন্য কোনও হিব্রু যাত্রীকে ডেকে আনব য়ে অন্তত শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারবে?”
৮ রাজকন্যা বলল, “বেশ যাও।”সুতরাং মেয়েটি গেল এবং শিশুটির মাকে ডেকে আনল।
৯ রাজকন্যা তাকে বলল, “আমার হয়ে তুমি এই শিশুটিকে দুধ পান করাও। এরজন্য আমি তোমাকে টাকা দেব।” তারই মা শিশুটিকে য়ত্ন করে বড় করে তুলতে লাগল।
১০ শিশুটি বড় হয়ে উঠলে মহিলাটি তার সন্তানকে রাজকন্যাকে দিয়ে দিল। রাজকন্যা শিশুটিকে নিজের ছেলের মতোই গ্রহণ করে তার নাম দিল মোশি। শিশুটিকে সে জল থেকে পেয়েছিল বলে তার নামকরণ করা হল মোশি।
১১ একদিন, মোশি বড় হয়ে যাবার পর সে তার নিজের লোকদের দেখবার জন্য বাইরে গেল এবং দেখল তাদের ভীষণ কঠিন কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সে এও দেখল য়ে একজন মিশরীয় একজন হিব্রু ছোকরাকে প্রচণ্ড মারধর করছে।
১২ মোশি চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ ব্যাপারটা লক্ষ্য করছে না। তখন মোশি সেই মিশরীয়কে হত্যা করে তাকে বালিতে পুঁতে দিল।
১৩ পরদিন মোশি দেখল দুজন ইস্রায়েলীয় নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। তাদের মধ্যে একজন অন্যাযভাবে আরেকজনকে মারছে। মোশি তখন সেই অন্যাযকারী লোকটির উদ্দেশ্যে বলল, “কেন তুমি তোমার প্রতিবেশীকে মারছো?”
১৪ লোকটি উত্তরে জানাল, “তোমাকে কে আমাদের শাস্তি দিতে পাঠিয়েছে? বলো, তুমি কি আমাকে মারতে এসেছ য়েমনভাবে তুমি গতকাল ঐ মিশরীয়কে হত্যা করেছিলে?”তখন মোশি ভয় পেয়ে মনে মনে বলল, “তাহলে এখন ব্যাপারটা সবাই জেনে গেছে।”
১৫ একদিন রাজা ফরৌণ মোশির কীর্তি জানতে পারলেন; তিনি তাকে হত্যা করতে চাইলেন। কিন্তু মোশি মিদিযন দেশে পালিয়ে গেল।মিদিয়নে এসে একটি কুয়োর সামনে মোশি বসে পড়ল।
১৬ সেখানে এক যাজক ছিল। তার ছিল সাতটি মেয়ে। কুযো থেকে জল তুলে পিতার পোষা মেষপালকে জল খাওয়ানোর জন্য সেই সাতটি মেয়ে কুযোর কাছে এল। তারা মেষদের জল পানের পাত্রটি ভর্তি করার চেষ্টা করছিল।
১৭ কিন্তু কিছু মেষপালক এসেছিল এবং তরুণীদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। তাই মোশি তাদের সাহায্য করতে এলো এবং তাদের পশুর পালকে জল পান করালো।
১৮ তখন তরুণীরা তাদের পিতা রূয়েলের কাছে ফিরে গেল। সে বলল, “তোমরা আজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছ দেখছি!”
১৯ তরুণীরা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, ওখানে কুযো থেকে জল তোলার সময় কিছু মেষপালক আমাদের তাড়িয়ে দিল। কিন্তু একজন অচেনা মিশরীয় এলো এবং আমাদের সাহায্য করল। সে আমাদের জন্য জলও তুলে দিল এবং আমাদের মেষের পালকে জল পান করালো।”
২০ রূযেল তার মেয়েদের বলল, “সেই লোকটি কোথায? তোমরা তাকে ওখানে ছেড়ে এলে কেন? যাও তাকে আমাদের সঙ্গে খাবার নেমতন্ন করে এসো।”
২১ মোশি রূযেলের সঙ্গে থাকবার জন্য খুশীর সঙ্গে রাজী হল। রূযেল তার মেয়ে সিপ্পোরার সঙ্গে মোশির বিয়ে দিল।
২২ বিয়ের পর সিপ্পোরা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিল। মোশি তার নাম দিল গের্শোম কারণ সে ছিল প্রবাসে থাকা একজন অপরিচিত ব্যক্তি।
২৩ দেখতে দেখতে অনেক বছর পেরিযে গেল। মিশরের রাজাও ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের তখনও জোর করে কাজ করানো হচ্ছিল। তারা সাহায্যের জন্য কান্নাকাটি শুরু করল। এবং সেই কান্না বয়ং ঈশ্বর শুনতে পাচ্ছিলেন।
২৪ ঈশ্বর তাদের গভীর আর্তনাদ শুনলেন এবং তিনি স্মরণ করলেন সেই চুক্তির কথা যা তিনি অব্রাহাম, ইস্হাক এবং যাকোবের সঙ্গে করেছিলেন।
২৫ ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের দেখেছিলেন এবং তিনি জানতেন তিনি কি করতে যাচ্ছেন এবং তিনি স্থির করলেন য়ে শীঘ্রই তিনি তাঁর সাহায্যের হাত তাদের দিকে বাড়িযে দেবেন।

যাত্রাপুস্তক ০৩

১ রূযেল ছাড়াও মোশির শ্বশুরের আর এক নাম ছিল য়িথ্রো। য়িথ্রো মিদিযনীর একজন যাজক। মোশি য়িথ্রোর মেষের পালের দেখাশোনার দায়িত্ব নিল। মোশি মেষের পাল চরাতে মরুভূমির পশ্চিম প্রান্তে য়েত। একদিন সে মেষের পাল চরাতে চরাতে ঈশ্বরের পর্বত হোরেবে (সিনয়) গিয়ে উপস্থিত হল।
২ ঐ পর্বতে সে জ্বলন্ত ঝোপের ভিতরে প্রভুর দূতের দর্শন পেল। মোশি দেখল ঝোপে আগুন লাগলেও তা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে না।
৩ তাই সে অবাক হয়ে জ্বলন্ত ঝোপের আর একটু কাছে এগিয়ে গেল। মনে মনে ভাবল কি আশ্চর্য় ব্যাপার, ঝোপে আগুন লেগেছে, অথচ ঝোপটা পুড়ে নষ্ট হচ্ছে না!
৪ প্রভু লক্ষ্য করছিলেন মোশি ক্রমশঃ ঝোপের দিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে কাছে এগিয়ে আসছে। তাই ঈশ্বর ঐ ঝোপের ভিতর থেকে ডাকলেন, “মোশি, মোশি!”এবং মোশি উত্তর দিল, “হ্যাঁ, প্রভু।”
৫ তখন প্রভু বললেন, “আর কাছে এসো না। পায়ের চটি খুলে নাও। তুমি এখন পবিত্র ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছো।
৬ আমি তোমার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর। আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর।”মোশি ঈশ্বরের দিকে তাকানোর ভয়ে তার মুখ ঢেকে ফেলল।
৭ তখন প্রভু বললেন, “মিশরে আমার লোকদের দুর্দশা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এবং যখন তাদের ওপর অত্যাচার করা হয় তখন আমি তাদের চিত্কার শুনেছি। আমি তাদের যন্ত্রণার কথা জানি।
৮ এখন সমতলে নেমে গিয়ে মিশরীয়দের হাত থেকে আমার লোকদের আমি রক্ষা করব। আমি তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব এবং আমি তাদের এমন এক সুন্দর দেশে নিয়ে যাব য়ে দেশে তারা স্বাধীনভাবে শান্তিতে বাস করতে পারবে। সেই দেশ হবে বহু ভাল জিনিসে ভরা ভূখণ্ড।নানা ধরণের মানুষ সে দেশে বাস করে: কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও য়িবুষীয গোষ্ঠীর লোকরা সেখানে বাস করে।
৯ আমি ইস্রায়েলীয়দের কান্না শুনেছি। দেখেছি, মিশরীয়রা কিভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
১০ তাই এখন আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে পাঠাচ্ছি। যাও! তুমি আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বাইরে নিয়ে এসো।”
১১ কিন্তু মোশি ঈশ্বরকে বলল, “আমি কোনও মহান ব্যক্তি নই! সুতরাং আমি কি করে ফরৌণের কাছে যাব এবং ইহুদীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনব?”
১২ ঈশ্বর বললেন, “তুমি পারবে, কারণ আমি তোমার সঙ্গে থাকব! আমি যে তোমাকে পাঠাচ্ছি তার প্রমাণ হবে; তুমি ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনার পর এই পর্বতে এসে আমার উপাসনা করবে।”
১৩ তখন মোশি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বলল, ‘কিন্তু আমি যদি গিয়ে ইস্রায়েলীয়দের বলি য়ে, “তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন,’ তখন তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘তার নাম কি?’ তখন আমি তাদের কি বলব?”
১৪ তখন ঈশ্বর মোশিকে বললেন, “তাদের বলো, ‘আমি আমিই।’ যখনই তুমি ইস্রায়েলীয়দের কাছে যাবে তখনই তাদের বলবে, ‘আমিই’ আমাকে পাঠিয়েছেন।”
১৫ ঈশ্বর মোশিকে আরও বললেন, “তুমি অবশ্যই তাদের একথা বলবে: ‘য়িহোবা হলেন তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর। আমার নাম সর্বদা হবে য়িহোবা। এই নামেই আমাকে লোকে বংশ পরম্পরায চিনবে।’ লোকদের বলো, ‘য়িহোবা তোমাকে পাঠিয়েছেন!”‘
১৬ প্রভু আরও বললেন, “যাও, ইস্রায়েলের প্রবীণদের একত্র করে তাদের বলো, ‘য়িহোবা, তোমাদের পূর্বপুরুষদের ঈশ্বর আমাকে দর্শন দিয়েছেন। অব্রাহামের, ইস্হাকের, এবং যাকোবের ঈশ্বর আমাকে বলেছেন: তোমাদের সঙ্গে মিশরে যা ঘটছে তা সবই আমি দেখেছি।
১৭ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি য়ে মিশরের দুর্দশা থেকে তোমাদের উদ্ধার করব। আমি তোমাদের উদ্ধার করব এবং তোমাদের কনানীয, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশে নিয়ে যাব। আমি তোমাদের বহু সুসম্পদে ভরা ভূখণ্ডে নিয়ে যাব।’
১৮ “প্রবীণরা তোমার কথা শুনবে এবং তখন তুমি প্রবীণদের নিয়ে মিশরের রাজার কাছে যাবে। তুমি অবশ্যই যাবে এবং রাজাকে বলবে য়ে য়িহোবা, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এখন আমাদের তিনদিন ধরে মরুভূমিতে ভ্রমণ করতে দাও। সেখানে আমরা য়িহোবা, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উত্সর্গ দান করব।”
১৯ “কিন্তু আমি জানি য়ে মিশরের রাজা তোমাদের সেখানে য়েতে দেবে না। কেবলমাত্র একটি মহান শক্তিই তাকে বাধ্য করতে পারে তোমাদের যাবার অনুমতি দেবার জন্য।
২০ তাই আমি আমার বিরাট ক্ষমতা দিয়ে মিশরীয়দের আঘাত করব। আমি ঐ দেশে আশ্চর্য় সব কাণ্ড ঘটাব। আমার ঐসব অদ্ভুত কাণ্ড ঘটানোর পরেই দেখবে য়ে সে তোমাদের য়েতে দিচ্ছে।
২১ এবং আমি ইস্রায়েলীয়দের প্রতি মিশরীয়দের দযালু করে তুলব। ফলে তোমরা যখন মিশর ত্যাগ করবে তখন মিশরীয়রা তোমাদের হাত উপহারে ভরে দেবে।
২২ প্রত্যেক ইস্রায়েলীয় মহিলা নিজের নিজের মিশরীয় প্রতিবেশীর বাড়ী যাবে এবং মিশরীয় মহিলার কাছে গিয়ে উপহার চাইবে। এবং মিশরীয় মহিলারা তাদের উপহার দেবে। তোমার লোকরা উপহার হিসাবে সোনা, রূপা এবং মিহি ও মসৃণ পোশাক পাবে। তারপর যখন তোমরা মিশর ত্যাগ করবে তখন সেই উপহারগুলি নিজের নিজের ছেলেমেয়েদের গায়ে পরিযে দেবে। এইভাবে তোমরা মিশরীয়দের সম্পদ নিয়ে আসতে পারবে।”

যাত্রাপুস্তক ০৪

১ তখন মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “কিন্তু আপনি আমাকে পাঠিয়েছেন বললেও ইস্রায়েলের লোকরা তা বিশ্বাস করতে চাইবে না। বরং তারা উল্টে বলবে, ‘প্রভু তোমাকে দর্শন দেন নি।”‘
২ কিন্তু প্রভু মোশিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার হাতে ওটা কি?”মোশি উত্তর দিল, “এটা আমার পথ চলার লাঠি।”
৩ তখন প্রভু বললেন, “ঐ লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেল।”প্রভুর কথামতো মোশি তার হাতের পথ চলার লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতেই ঐ লাঠি তত্ক্ষনাত্ সাপে পরিণত হল। মোশি তা দেখে ভয়ে পালাতে যাচ্ছে দেখে
৪ প্রভু মোশিকে বললেন: “যাও কাছে গিয়ে সাপটিকে লেজের দিক থেকে ধরো।”সুতরাং মোশি সাপটির লেজ ধরে ঝোলাতেই দেখল সাপটি আবার লাঠিতে পরিণত হল।
৫ তখন প্রভু বললেন, “লাঠি দিয়ে এই চমত্কারিত্ব দেখলেই লোকরা বিশ্বাস করবে য়ে তুমি প্রভু, তোমার পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের দেখা পেয়েছ। দেখা পেয়েছ অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবের ঈশ্বরের।”
৬ তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে আরও একটি প্রমাণ দেব। আলখাল্লার নীচে হাত রাখো।”তাই মোশি আলখাল্লা খুলে হাত ভেতরে রাখলো। তারপর সে তার হাত বের করে দেখল হাতটি শ্বেতীতে ভরে গেছে।
৭ তখন প্রভু বললেন, “এবার আবার আলখাল্লার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দাও।” তাই মোশি আবার তার হাত আলখাল্লার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল এবং তা বের করে আনার পর মোশি দেখল তার হাত আবার আগের মতোই স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে গেছে।
৮ তারপর প্রভু বললেন, “যদি লোকরা লাঠিকে সাপ বানানোর কীর্তি দেখার পরও তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে হাতের ব্যাপারটি দেখাবে। তখন তোমাকে তারা বিশ্বাস করবে।
৯ যদি এই দুটো প্রমাণ দেখানোর পরও লোকরা তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে নীলনদ থেকে সামান্য জল নেবে। সেই জল মাটিতে ঢালবে এবং জল মাটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তা রক্তে পরিণত হবে।”
১০ তখন মোশি প্রভুর উদ্দেশ্যে বললেন, “কিন্তু প্রভু আমি তো একজন চতুর বক্তা নই। আমি কোনোকালেই সাজিযে গুছিযে কথা বলতে পারি না। এবং এখনও আপনার সঙ্গে কথা বলার পরেও আমি সুবক্তা হতে পারি নি। আপনি জানেন য়ে আমি ধীরে ধীরে কথা বলি এবং কথা বলার সময় ভাল ভাল শব্দ চযন করতে পারি না।”
১১ তখন প্রভু তাকে বললেন, “মানুষের মুখ কে সৃষ্টি করেছে? এবং কে একজন মানুষকে বোবা ও কালা তৈরী করে? কে মানুষকে অন্ধ তৈরী করে? কে মানুষকে দৃষ্টিশক্তি দেয়? আমি যিহোবা। আমিই একমাত্র এইসব করতে পারি।
১২ সুতরাং যাও। যখন তুমি কথা বলবে তখন আমি তোমায় কথা বলতে সাহায্য করব। আমিই তোমার মুখে শব্দ জোগাব।”
১৩ তবু মোশি বলল, “হে আমার প্রভু, আমার একটাই অনুরোধ, আপনি এই কাজের জন্য অন্য একজনকে মনোনীত করুন, আমাকে নয়।”
১৪ মোশির প্রতি প্রভু তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “বেশ! তাহলে তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি তোমার ভাই হারোণকে তোমার সঙ্গে দিচ্ছি। হারোণ লেবীয় পরিবারের সন্তান এবং সে বেশ ভাল বক্তা। হারোণ ইতিমধ্যেই তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসছে। এবং সে তোমাকে দেখে খুশীই হবে।
১৫ হারোণ তোমার সঙ্গে ফরৌণের কাছে যাবে। তোমাদের কি বলতে হবে তা আমি বলে দেব। কি করতে হবে তা আমি তোমাদের শিখিযে দেব এবং তুমি তা হারোণকে বলে দেবে।
১৬ তোমার হয়ে হারোণ লোকদের সঙ্গে কথা বলবে। তুমি হবে তার কাছে ঈশ্বরের মতো। আর হারোণ হবে তোমার মুখপাত্র।
১৭ সুতরাং যাও এবং সঙ্গে তোমার পথ চলার লাঠি নাও। আমি য়ে তোমার সঙ্গে আছি তা প্রমাণ করার জন্য লোকদের এই চিহ্ন-কার্য়্য়গুলি দেখাও।”
১৮ মোশি তখন তার শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গেল। মোশি তার শ্বশুরকে বলল, “অনুগ্রহ করে আমাকে মিশরে ফিরে য়েতে দিন। আমি দেখতে চাই আমার লোকরা এখনও সেখানে বেঁচে আছি কিনা।”যিথ্রো তার জামাতা মোশিকে বলল, “নিশ্চয়ই! আশা করি তুমি সেখানে ভালোভাবেই পৌঁছাবে।”
১৯ মিদিয়নে থাকাকালীন প্রভু মোশিকে বললেন, “মিশরে ফিরে যাওয়া এখন তোমার পক্ষে ভাল। কারণ যারা তোমায় হত্যা করতে চেযেছিল তারা এখন কেউ বেঁচে নেই।”
২০ সুতরাং মোশি তখন তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের গাধার পিঠে চাপিয়ে মিশরে প্রত্যাবর্তন করল। সঙ্গে সে তার পথ চলার লাঠিও নিল। এটা সেই পথ চলার লাঠি যাতে রযেছে ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তি।
২১ মিশরে আসার পথে প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে অলৌকিক কাজ দেখানোর য়ে সব শক্তি দিয়েছি সেগুলো সব ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় তার সামনে করে দেখাবে। কিন্তু আমি ফরৌণকে একগুঁয়ে এবং জেদী করে তুলব। সে লোকদের কিছুতেই ছেড়ে দেবে না।
২২ তখন তুমি ফরৌণকে বলবে:
২৩ প্রভু বলেছেন, ‘ইস্রায়েল হল আমার প্রথমজাত পুত্র সন্তান। এই প্রথমজাত সন্তান একটি পরিবারে জন্মেছিল। অতীত দিনে এই প্রথমজাত সন্তানের গুরুত্ব ছিল অসীম। এবং আমি তোমাকে বলছি আমার পুত্রকে আমার উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও। তুমি যদি ইস্রায়েলকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করো তাহলে আমি তোমার প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করব।”
২৪ মিশরে ফেরার পথে মোশি একটি পান্থশালায় রাত্রিযাপন করছিল। তখন প্রভু তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন।
২৫ কিন্তু সিপ্পোরা একটা ধারালো পাথরের ছুরি দিয়ে তার পুত্রের সুন্নত্ করল। এবং সুন্নত্ এর চামড়া (চামড়াটি লিঙ্গের মুখ থেকে ছিঁড়ে বেরিয়েছিল।) মোশির পায়ে ছোঁযাল। তারপর সে মোশিকে বলল, “আমার কাছে তুমি রক্তের স্বামী।”
২৬ সিপ্পোরা একথা বলেছিল কারণ তার ছেলের সুন্নত্ তাকে করতেই হত। তাই সে তাদের কাছ থেকে সরে এল।
২৭ প্রভু হারোণকে বললেন, “মরুপ্রান্তরে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করো।” প্রভুর কথামতো হারোণ ঈশ্বরের পর্বতে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করে তাকে চুম্বন করল।
২৮ প্রভু য়ে সব কথা বলবার জন্য মোশিকে পাঠিয়েছিলেন এবং প্রভুই য়ে তাকে পাঠিয়েছেন তা প্রমাণ করবার জন্য য়ে সব অলৌকিক কাজ করতে বলেছিলেন তার সম্বন্ধে, সবই মোশি হারোণকে জানাল। প্রভু যা বলেছেন তার সবকিছু মোশি হারোণকে খুলে বলল।
২৯ সুতরাং মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে প্রবীণ ব্যক্তিদের একত্র করার জন্য গেল।
৩০ তখন হারোণ সেই কথাগুলো বলল য়েগুলো প্রভু মোশিকে বলতে বলেছিলেন। আর মোশি লোকদের সামনে সেই সকল চিহ্ন কার্য়্য় করে দেখাল।
৩১ তার ফলে লোকরা বিশ্বাস করল য়ে প্রভু মোশিকে পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ইস্রায়েলের লোকরা জানল য়ে, ঈশ্বর তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাই তারা সকলে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে লাগল।

যাত্রাপুস্তক ০৫

১ লোকদের সঙ্গে কথা বলার পর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়ে বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমার সম্মানার্থে উত্সব করার জন্য আমার লোকদের মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র দাও।”
২ কিন্তু ফরৌণ বলল, “কে প্রভু? আমি কেন তাকে মানব? কেন ইস্রায়েলকে ছেড়ে দেব? এমনকি এই প্রভু কে আমি তাই জানি না। সুতরাং আমি এভাবে ইস্রায়েলের লোকদের ছেড়ে দিতে পারি না।”
৩ তখন হারোণ এবং মোশি বলল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাই আমরা তিন দিনের জন্য মরুপ্রান্তরে ভ্রমণের অনুমতি প্রার্থনা করছি, সেখানে আমরা আমাদের প্রভু, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করব। আমরা যদি তা না করি তাহলে তিনি প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেবেন। আমাদের মহামারী অথবা যুদ্ধের প্রকোপে মেরে ফেলবেন।”
৪ কিন্তু তখন মিশরের রাজা তাদের উত্তর দিলেন, “মোশি ও হারোণ, তোমরা কাজের লোকদের বিরক্ত করছ। ওদের কাজ করতে দাও। গিয়ে নিজের কাজে মন দাও।
৫ দেখ, দেশে এখন প্রচুর কর্মী আছে এবং তোমরা তাদের কাজ করা থেকে বিরত করছ।”
৬ একই দিনে ক্রীতদাস প্রভুদের এবং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের ফরৌণ আদেশ দিলেন ইস্রায়েলীয় লোকদের আরো কিছু কঠিনতর কাজ দিতে।
৭ ফরৌণ তাদের বললেন, “ইঁট তৈরির জন্য এতদিন তোমরা খড় সরবরাহ করেছো। কিন্তু ওদের বলো, এখন থেকে ইঁট তৈরির জন্য রয়োজনীয় খড় ওরা নিজেরাই য়েন খুঁজে আনে।
৮ কিন্তু খড় খুঁজে আনতে হবে বলে ইঁটের উত্পাদন য়েন না কমে। আগে ওরা সারাদিনে য়ে পরিমাণ ইঁট তৈরি করতো নিজেরা খড় জোগাড় করে আনার পরও ওদের আগের মতো একই পরিমাণ ইঁট তৈরি করতে হবে। আজকাল ওরা ভীষণ অলস হয়ে গেছে। এবং সেজন্যই ওরা আমার কাছে মরুপ্রান্তরে যাওয়ার ছাড়পত্র চাইছে। ওদের হাতে বিশেষ কাজ নেই তাই ওরা ওদের ঈশ্বরকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করতে য়েতে চায়।
৯ তাই এই লোকদের আরও কঠিন পরিশ্রম করাও যাতে ওরা ব্যস্ত থাকে। তাহলে ওদের আর প্রতারণামূলক কথা শোনবার সময় হবে না।”
১০ তাই মিশরের ক্রীতদাস প্রভু এবং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা ইস্রায়েলের লোকদের কাছে গিয়ে বলল, “ফরৌণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন য়ে ইঁট তৈরির জন্য তোমাদের আর খড় সরবরাহ করা হবে না।
১১ এবার থেকে তোমরা নিজেরা খড় জোগাড় করে আনবে। সুতরাং যাও গিয়ে খড় জোগাড় করো। কিন্তু ইঁট তৈরির পরিমাণ আগের মতোই রাখতে হবে। খড় জোগাড়ের নাম করে কম ইঁট তৈরি করলে চলবে না।”
১২ সুতরাং লোকরা মিশরের চারিদিকে খড়ের খোঁজে গেল।
১৩ ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয়দের আরো কঠিন কাজ করালো এবং তাদের একদিনে সমান সংখ্যক ইঁট তৈরি করতে বাধ্য করল যা তারা খড় থাকাকালীন করত।
১৪ মিশরীয় ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রায়েলীয়দের দিয়ে এই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করানোর দায়িত্ব চাপালো ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়কদের ওপর। মিশরীয় ক্রীতদাস প্রভুরা ইস্রাযেলীয তত্ত্বাবধায়কদের মারলো এবং তাদের বলল, “কেন তোমরা আগের মতো ইঁট তৈরি করতে পারছো না? তোমরা আগে যা করতে পারতে এখনও তোমাদের তাই পারা উচিত্।”
১৫ তখন ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা ফরৌণের কাছে নালিশ জানাতে গেল। তারা ফরৌণকে বলল, “আমরা তো আপনার অনুগত ভৃত্য়, তাহলে আমাদের সঙ্গে কেন এরকম ব্যবহার করছেন?
১৬ আপনি আমাদের খড় সরবরাহ বন্ধ করেছেন। আবার বলছেন আগের মতোই ইঁটের উত্পাদন চালু রাখতে হবে। ইঁট তৈরির পরিমাণ কম হলেই আমাদের মনিবরা আমাদের মারধোর করছে। আপনার লোকরা এটা তো অন্যায় করছে।”
১৭ উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “তোমরা কাজ করতে চাও না। তোমরা অলস হয়ে গেছ। সেজন্যই তোমরা প্রভুর উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করতে যাবার ব্যাপারে আমার অনুমতি চেযেছো।
১৮ যাও, এখন আবার কাজে ফিরে যাও। আমরা আমাদের কোনও খড় সরবরাহ করব না এবং তোমাদের আগের মতোই সমপরিমাণ ইঁট তৈরি করতে হবে।”
১৯ তখন ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা বুঝতে পারল য়ে তারা গভীর সঙ্কটে পড়েছে। তারা জানতো য়ে কিছুতেই তারা আগের পরিমাণ মতো ইঁট আর তৈরি করতে পারবে না।
২০ ফরৌণের সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথে মোশি এবং হারোণের সঙ্গে তাদের দেখা হল। মোশি ও হারোণ অবশ্য তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
২১ সুতরাং ইস্রায়েলীয় তত্ত্বাবধায়করা মোশি ও হারোণকে বলল, “আমাদের যাওয়ার ছাড়পত্র চাওযার ব্যাপারে ফরৌণের সঙ্গে কথা বলে তোমরা একটা মারাত্মক ভুল করেছো। প্রভু য়েন তোমাদের শাস্তি দেন। কারণ তোমাদের জন্যই ফরৌণ ও তার শাসকরা আমাদের এখন ঘৃণা করে। তোমরাই তাদের হাতে আমাদের হত্যা করার অজুহাত তুলে দিয়েছ।”
২২ তখন মোশি প্রভুর কাছে ফিরে গেল এবং বলল, “প্রভু কেন আপনি লোকদের এমন অমঙ্গল করলেন? কেন আপনি আমার এখানে পাঠিয়েছিলেন?
২৩ আপনি যা বলতে বলেছিলেন আমি সে কথাগুলো বলতেই ফরৌণের কাছে গিয়েছিলাম। অথচ সেই সময় থেকেই ফরৌণ আপনার লোকদের প্রতি অত্য়ন্ত খারাপ ব্যবহার করছে। এবং আপনি ঐসব লোকদের সাহায্যের জন্য কোনও কিছুই করছেন না।”

যাত্রাপুস্তক ০৬

১ প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “ফরৌণের এখন আমি কি অবস্থা করব তা তুমি দেখতে পাবে। আমি তার বিরুদ্ধে আমার মহান ক্ষমতা ব্যবহার করব এবং সে আমার লোকদের চলে য়েতে বাধ্য করবে। সে য়ে শুধু আমার লোকদের ছেড়ে দেবে তা নয়, সে তার দেশ থেকে তাদের জোর করে পাঠিয়ে দেবে।”
২ ঈশ্বর তখন মোশিকে আবার বললেন,
৩ “আমিই হলাম প্রভু। আমি অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতাম। তারা আমায় এল্সদাই (সর্বশক্তিমান ঈশ্বর) বলে ডাকত। আমার নাম য়ে যিহোবা তা তারা জানত না।
৪ আমি তাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলাম। আমি তাদের কনান দেশ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ঐ দেশে তারা বাস করলেও দেশটি কিন্তু তাদের নিজস্ব দেশ ছিল না।
৫ এখন আমি ইস্রায়েলীয়দের বিলাপ শুনেছি যাদের মিশরীয়রা তাদের ক্রীতদাস করে রেখেছিল এবং আমি আমার চুক্তিকে মনে রাখব এবং আমি যা প্রতিশ্রুতি করেছিলাম তাই করব।
৬ সুতরাং ইস্রায়েলের লোকদের গিয়ে বলো আমি তাদের বলেছি, ‘আমি হলাম প্রভু। আমি তোমাদের রক্ষা করব। আমিই তোমাদের মুক্ত করব। তোমরা আর মিশরীয়দের ক্রীতদাস থাকবে না। আমি আমার মহান শক্তি ব্যবহার করব এবং মিশরীয়দের ভয়ঙ্কর শাস্তি দেব। তখন আমি তোমাদের উদ্ধার করব।
৭ আমি তোমাদের আমার লোক করে নিলাম এবং আমি হব তোমাদের ঈশ্বর। তোমরা জানবে য়ে আমি হলাম তোমাদের প্রভু, ঈশ্বর, য়ে তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করেছে।
৮ আমি অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবের কাছে একটি মহান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমি তাদের একটি বিশেষ দেশ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তাই আমার নেতৃত্বে তোমরা ঐ দেশে যাবে। আমি তোমাদের ঐ দেশটি দিয়ে দেব। সেই দেশটি একান্তভাবে তোমাদেরই হবে। আমিই হলাম প্রভু।”
৯ মোশি এই কথাগুলো ইস্রায়েলীয়দের বলল, কিন্তু তাদের ধৈর্য়্য়হীনতা ও তীব্র পরিশ্রমের দরুণ তারা তার কথা শুনতে অস্বীকার করল।
১০ তখন প্রভু মোশিকে বললেন,
১১ “যাও মিশরের রাজা ফরৌণকে বলো য়ে তার উচিত্ ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে মুক্তি দেওয়া।”
১২ কিন্তু মোশি উত্তরে জানাল, “ইস্রায়েলের লোকরাই আমার কথা শুনতে অস্বীকার করছে, সেক্ষেত্রে ফরৌণ আর কি শুনবে! সেও আমার কথা শুনতে রাজি হবে না। এ ব্যাপারে আমি একরকম নিশ্চিত। তার উপর আমি ভালোভাবে “কথা বলতেও পারি না।”
১৩ কিন্তু প্রভু মোশি এবং হারোণের সঙ্গে কথা বললেন এবং তাদের ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ও ফরৌণের সঙ্গে কথা বলতে আদেশ দিলেন। ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনতে প্রভু তাদের আদেশ দিলেন।
১৪ ইস্রায়েলীয় পরিবারগুলির নেতাদের নাম ক্রমানুসারে এইরূপ: ইস্রায়েলের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল রূবেণ। তার পুত্ররা ছিল: হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্ম্মি।
১৫ শিমিয়োনোর পুত্ররা ছিল: য়িমুয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর এবং শৌল য়ে ছিল এক কনানীয়া মহিলার গর্ভজাত সন্তান।
১৬ লেবি ১৩৭ বছর জীবিত ছিলেন। লেবির পুত্রদের নাম হল গের্শোন, কহাত্ ও মরারি।
১৭ গের্শোনের আবার দুই পুত্র ছিল লিব্নি ও শিমিযি।
১৮ কহাত্ ১৩৩ বছর পর্য়ন্ত জীবিত ছিল। কহাতের পুত্ররা হল অম্রম, যিষ্হর, হিব্রোণ এবং উষীয়েল।
১৯ মরারির দুই পুত্র হল মহলি ও মুশি। এই প্রত্যেকটি পরিবারের প্রথম পূর্বপুরুষ ছিল ইস্রায়েলের সন্তান লেবি।
২০ অম্রম বেঁচে ছিল ১৩৭ বছর। অম্রম তার আপন পিসি য়োকেবদকে বিয়ে করেছিল। অম্রম ও য়োকেবদের দুই সন্তান হল যথাক্রমে হারোণ এবং মোশি।
২১ য়িষ্হরের পুত্ররা হল কোরহ, নেফগ ও সিখ্রি।
২২ আর উষীয়েলের সন্তান হল মীশায়েল, ইল্সাফন ও সিথ্রি।
২৩ হারোণ অম্মীনাদবের কন্যা, নহোশনের বোন ইলীশেবাকে বিয়ে করেছিল। হারোণ ও ইলীশেবার সন্তানরা হল নাদব, অবীহূ, ইলিয়াসর ও ইথামর।
২৪ কোরহের পুত্র অসীর, ইল্কানা ও অবীযাসফ হল কোরহীয় গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ।
২৫ হারোণের পুত্র ইলিয়াসর পূটীয়েলের এক কন্যাকে বিয়ে করার পরে তাদের য়ে সন্তান হয় তার নাম দেওয়া হয় পীনহস। এরা প্রত্যেকেই ইস্রায়েলের পুত্র লেবির বংশজাত।
২৬ হারোণ এবং মোশি ছিল এই পরিবারগোষ্ঠীর। প্রভু তাদের দুজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমার লোকদের মিশর থেকে দলে দলে বাইরে নিয়ে এসো।”
২৭ হারোণ এবং মোশি উভয়েই মিশরের রাজা ফরৌণের সঙ্গে কথা বলেছিল। তারাই ফরৌণকে বলেছিল ইস্রায়েলের লোকদের মিশর থেকে ছেড়ে দেওয়া হোক।
২৮ মিশরে য়েদিন প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বললেন,
২৯ তিনি তাকে বলেছিলেন, “আমিই হলাম প্রভু। আমি তোমাকে যা কিছু বলেছি তা মিশরের রাজা ফরৌণকে গিয়ে বলো।”
৩০ কিন্তু মোশি উত্তর দিল, “আমি ভালোভাবে কথা বলতে পারি না। রাজা আমার কথা শুনবে না।”

যাত্রাপুস্তক ০৭

১ প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে ফরৌণের কাছে একজন ঈশ্বর করে তুলেছি। আর হারোণ তোমার ভাই হবে তোমার ভাববাদী।
২ তোমার ভাই হারোণকে আমার সমস্ত আদেশগুলো বলো। তাহলে হারোণ রাজাকে আমার কথাগুলো জানাবে। ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে চলে য়েতে অনুমতি দেবে।
৩ কিন্তু আমি ফরৌণকে জেদী করে তুলব। তাই সে তোমাদের কথা মানবে না। তখন আমি নিজেকে প্রমাণের উদ্দেশ্যে মিশরে নানারকম অলৌকিক অথবা অদ্ভুত কাজ করবে। তবুও সে তোমাদের কথা শুনবে না। তখন আমি মিশরকে কঠিন শাস্তি দেব এবং আমি মিশর থেকে আমার লোকদের বাইরে বের করে আনব।

৫ যখন আমি তাদের বিরোধিতা করব তখন মিশরের লোকরাও জানতে পারবে য়ে আমিই হলাম প্রভু। সেই মুহুর্তে আমি আমার লোকদের মিশরীয়দের দেশ থেকে বের করে আনব।”
৬ প্রভু তাদের যা বলেছিলেন মোশি এবং হারোণ তা মেনে চলেছিল।
৭ যখন তারা ফরৌণের সঙ্গে কথা বলেছিল সেই সময় মোশির বয়স ছিল ৮০ এবং হারোণের বয়স ছিল ৮৩ বছর।
৮ মোশি এবং হারোণকে প্রভু বললেন,
৯ “ফরৌণ তোমাদের শক্তির পরিচয়ের প্রমাণ হিসাবে কোনও অলৌকিক কাজ ঘটিযে দেখাতে বলবে। তখন হারোণকে বলবে তোমার পথ চলার লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতে। ফরৌণের চোখের সামনে মাটিতে পড়ে থাকা ঐ লাঠি নিমেষের মধ্যে সাপে পরিণত হবে।”
১০ তাই মোশি এবং হারোণ প্রভুর কথামতো ফরৌণের কাছে গেল। হারোণ তার সামনে লাঠিটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেছিল। ফরৌণ এবং তার সভাসদদের চোখের সামনেই লাঠি সাপের রূপ নিল।
১১ রাজা এই ঘটনা দেখে তার জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি ও যাদুকরদের ডাকলেন। রাজার নিজস্ব যাদুকররা তাদের মায়াবলে হারোণের মতো তাদের লাঠিটিও সাপে পরিণত করে দেখাল।
১২ সেইসব যাদুকররাও নিজের নিজের হাতের লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে মুহুর্তে লাঠিগুলিকে সাপে রূপান্তরিত করে দেখাল। কিন্তু হারোণের লাঠি তাদের লাঠিগুলোকে গ্রাস করে নিল।
১৩ তবুও ফরৌণ উদ্ধত হয়ে থাকলেন। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীরাজা মোশি এবং হারোণের কথায় কান দিলেন না।
১৪ তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণ লোকদের ছেড়ে না দেবার জেদ ধরে রইল।
১৫ সকালে ফরৌণ নদীর দিকে যায। তুমিও তার সঙ্গে দেখা করার জন্য নীল নদের তীরে দাঁড়াবে। সাপে পরিণত হয় ঐ লাঠিকে সঙ্গে নেবে।
১৬ ফরৌণকে বলবে: ‘প্রভু ইস্রাযেলীযদের ঈশ্বর আমাকে পাঠিয়েছেন। আমায আপনাকে বলতে বলেছেন য়ে তাঁর লোকদের য়েন তাঁর উপাসনার জন্য মরুপ্রান্তরে য়েতে দেওয়া হয়। এখনও পর্য়ন্ত অবশ্য আপনি প্রভুর কথা শোনেন নি।
১৭ তাই প্রভু আপনার সম্মুখে নিজের স্বরূপ প্রমাণের উদ্দেশ্যে কিছু কাণ্ড ঘটাবেন। এবার দেখুন আমি আমার পথ চলার লাঠি দিয়ে নীল নদের জলে আঘাত করব এবং সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল রক্তে পরিণত হবে।
১৮ নদীর সমস্ত মাছ মারা যাবে এবং নদীর জলে দুর্গন্ধ ছড়াবে। ফলে মিশরীয়রা আর এই নদীর জল পান করতে পারবে না।”
১৯ প্রভু মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো এই লাঠি নিয়ে সে য়েন মিশরের সমস্ত জলাশয, নদী, খাল, বিল, হ্রদ প্রত্যেকটি জায়গার জলে স্পর্শ করে। লাঠির স্পর্শে সমস্ত জলাশযের জল রক্তে পরিণত হবে। এমনকি কাঠ ও পাথরের পাত্রে সংগ্রহ করে রাখা পানীয় জলও রক্তে পরিণত হবে।”
২০ সুতরাং মোশি এবং হারোণ প্রভুর আদেশ কার্য়কর করল। হারোণ ফরৌণ ও তার সভাসদগণের সামনেই তার হাতে লাঠি উঁচিযে ধরে নীল নদের জলে আঘাত করল। আর সঙ্গে সঙ্গে নদীর জল রক্তে পরিণত হল।
২১ নদীর সমস্ত মাছ মারা গেল এবং নদীর জলে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করল। ফলে মিশরীয়রা আর সেই নদীর জল পান করতে পারল না। মিশরের সমস্ত জলাধারের জলই রক্তে পরিণত হল।
২২ হারোণ ও মোশির মতো রাজার যাদুকররাও তাদের মাযাবলে একই ঘটনা ঘটিযে প্রমাণ করল তারাও কম জানে না। ফলে প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীফরৌণ আবার মোশি ও হারোণের কথা শুনতে অস্বীকার করলেন।
২৩ ফরৌণ মোশি ও হারোণের ঐ কথায় মনোয়োগ না দিয়ে নিজের প্রাসাদে ঢুকে গেলেন।
২৪ মিশরীয়রা নদীর জল পান করতে না পেরে তারা পানীয় জলের সন্ধানে নদীর চারপাশে কুঁযো খুঁড়তে লাগল।
২৫ প্রভুর নীলনদের জলকে রক্তে পরিণত করার পর সাতদিন পার হল।

যাত্রাপুস্তক ০৮

১ প্রভু তখন মোশির উদ্দেশ্যে বললেন, “ফরৌণকে গিয়ে বলো য়ে প্রভু বলেছেন, ‘আমার লোকেদের আমাকে উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও!
২ যদি তুমি ওদের ছেড়ে না দাও তাহলে আমি মিশর দেশ ব্যাঙে ভর্তি করে দেব।
৩ নীল নদ ব্যাঙে ভর্তি হয়ে উঠবে। নদী থেকে ব্যাঙরা উঠে এসে তোমার ঘরে শয়্য়াকক্ষে প্রবেশ করে বিছানায উঠে বসবে। তোমার উনুনের চুল্লি, জলের পাত্র ব্যাঙে ভরে যাবে। তোমার সভাসদগণের ঘরও ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
৪ তোমাদের চারিদিকে ব্যাঙরা ঘুরে বেড়াবে। তোমার সভাসদগণ, তোমার লোকদের এবং তোমার গায়েও ব্যাঙ ছেঁকে ধরবে।”
৫ প্রভু এরপর মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বলো সে য়েন তার হাতের পথ চলার লাঠি নদী, খালবিল ও হ্রদের ওপর বিস্তার করে মিশর দেশে ব্যাঙ এনে ভরিয়ে দেয়।”
৬ হারোণ মিশরের জলের ওপর তার লাঠি সমেত হাত বিস্তার করতেই নদী, খালবিল ও হ্রদ থেকে রাশি রাশি ব্যাঙ উঠে মিশরের মাটি ঢেকে ফেলল।
৭ হারোণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রাজার যাদুকররাও তাদের মাযাজাল বিস্তার করে একই কাণ্ড ঘটিযে দেখাল। ফলে মিশরের মাটিতে আরও অসংখ্য ব্যাঙ উঠে এলো।
৮ ফরৌণ এবার বাধ্য হয়ে মোশি এবং হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের বললেন, “প্রভুকে বলো তিনি য়েন আমাকে এবং আমার লোকদের এই ব্যাঙের উপদ্রব থেকে রেহাই দেন। আমি প্রভুকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য লোকদের যাবার ছাড়পত্র দেব।”
৯ মোশি ফরৌণকে বলল, “বলুন, আপনি কখন চান য়ে এই ব্যাঙরা ফিরে যাক্। আমি আপনার জন্য, আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের জন্য তাহলে প্রার্থনা করব। তারপরই ব্যাঙরা আপনাকে এবং আপনার ঘর ছেড়ে নদীতে ফিরে যাবে। ব্যাঙরা নদীতেই থাকে। বলুন আপনি কবে এই ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে অব্যাহতি চান?”
১০ উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “আগামীকাল।”মোশি বলল, “বেশ আপনার কথা মতো তাই হবে। তবে এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন য়ে আমাদের প্রভু ঈশ্বরের মতো আর কোন ঈশ্বর এখানে নেই।
১১ ব্যাঙরা আপনাকে, আপনার ঘর এবং আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের সবাইকে ছেড়ে ফিরে যাবে। কেবলমাত্র নদীতেই তারা এবার থেকে বাস করবে।”
১২ এরপর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এলো। ফরৌণের বিরুদ্ধে পাঠানো সমস্ত ব্যাঙদের সরিয়ে নেবার জন্য মোশি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।
১৩ মোশির প্রার্থনায সাড়া দিয়ে প্রভু ঘরে, বাইরে, মাঠে ঘাটের সমস্ত ব্যাঙকে মেরে ফেললেন।
১৪ কিন্তু মৃত ব্যাঙের স্তূপ পচতে শুরু করল এবং সারা দেশ দুর্গন্ধে ভরে উঠল।
১৫ ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ফরৌণ আবার একগুঁয়ে ও জেদী হয়ে উঠলেন। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ীমোশি ও হারোণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাজা পালন করলেন না।
১৬ প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো তার হাতের লাঠি দিয়ে মাটির ধূলোয় আঘাত করতে, এবং তারপর সেই ধূলো মিশরের সর্বত্র উকুনে পরিণত হবে।”
১৭ হারোণ প্রভুর কথামতো ধূলোতে তার লাঠি আঘাত করতেই মিশরের সর্বত্র ধূলো উকুনে পরিণত হল। এবং সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের ঘায়ের ওপর চড়ে বসল।
১৮ রাজার যাদুকররা এবারও একই জিনিস করে দেখানোর চেষ্টা করল কিন্তু তারা কিছুতেই ধূলোকে উকুনে পরিণত করতে পারল না। কিন্তু সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের শরীরে রয়ে গেল।
১৯ যাদুকররা এবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়ে রাজা ফরৌণকে বলল য়ে ঈশ্বরের শক্তিই এটাকে সম্ভব করেছে। কিন্তু ফরৌণ তাদের কথাতে কান দিলেন না। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেই অবশ্য এই ঘটনা ঘটল।
২০ প্রভু মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে যাবে। ফরৌণ নদীর তীরে যাবে। তখন তাকে বলবে প্রভু বলেছেন, ‘আমার উপাসনার জন্য আমার লোকদের ছেড়ে দাও।
২১ যদি তুমি তাদের ছেড়ে না দাও তাহলে তোমার ঘরে মাছির ঝাঁক ঢুকবে। শুধু তোমার ঘরেই নয় তোমার সভাসদগণ ও তোমার প্রজাদের ঘরেও মাছির ঝাঁক ঢুকবে। মিশরের প্রত্যেকটি ঘর মাছির ঝাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। মিশরের মাঠে ঘাটে সর্বত্র শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি উড়ে বেড়াবে!
২২ কিন্তু মিশরীয়দের মতো ইস্রায়েলের লোকদের আমি এই যন্ত্রণা ভোগ করাবো না। গোশন প্রদেশে, যেখানে আমার লোকরা বাস করে, সেখানে একটিও মাছি থাকবে না। কারণ সেখানে আমরা লোকরা বাস করে। এর ফলে তুমি বুঝতে পারবে য়ে এই দেশে আমিই হলাম প্রভু।
২৩ সুতরাং আগামীকাল থেকেই তুমি আমার এই বিভেদ নীতির প্রমাণ পাবে।”
২৪ সুতরাং প্রভু তাই করলেন যা তিনি বলেছিলেন। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি মিশরে এসে গেল। ফরৌণের বাড়ী এবং তাঁর সভাসদগণের বাড়ী মাছিতে ভরে গেল। মাছিগুলোর জন্য সমগ্র মিশর ধ্বংস হল।
২৫ ফরৌণ মোশি এবং হারোণকে ডেকে বলল, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে এই দেশের মধ্যেই নৈবেদ্য উত্সর্গ করো।”
২৬ কিন্তু মোশি বলল, “না, তা এখানে করা ঠিক হবে না। কারণ প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পশু বলিদান মিশরীয়দের চোখে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমরা যদি এখানে তা করি তাহলে মিশরীয়রা আমাদের দেখতে পেয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে।
২৭ তাই তিন দিনের জন্য আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য আমাদের মরুপ্রান্তরে য়েতে দিন। প্রভুই আমাদের এটা করতে বলেছেন।”
২৮ সব শুনে ফরৌণ বলল, “বেশ আমি তোমাদের মরুপ্রান্তরে যাবার ছাড়পত্র দিচ্ছি। তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার জন্য। কিন্তু মনে রেখো তোমরা কিন্তু বেশী দূর চলে যাবে না। এখন যাও এবং আমার জন্য প্রার্থনা করো।”
২৯ তখন মোশি ফরৌণকে বলল, “দেখুন, আমি যাব এবং প্রভুকে অনুরোধ করব যাতে আগামীকাল তিনি আপনার কাছ থেকে, আপনার লোকদের কাছ থেকে এবং আপনার সভাসদগণের কাছ থেকে মাছিগুলো সরিয়ে নেন। কিন্তু আপনি য়েন আবার আগের মতো প্রভুকে নৈবেদ্য উত্সর্গ করার বিষযটি নিয়ে পরে আপত্তি করবেন না।”
৩০ এই কথা বলে মোশি ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এল এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।
৩১ এবং মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ফরৌণকে, সভাসদগণ ও প্রজাদের মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করলেন। মিশর থেকে মাছিদের বের করে দিলেন। আর একটি মাছিও সেখানে রইল না।
৩২ কিন্তু ফরৌণ আবার জেদী হয়ে গেলেন এবং লোকদের য়েতে দিলেন না।

(* ২৬ ও ২৮৭ নম্বর সুসমাচার: পশু বলিদানের জন্য তিনদিন। সম্ভবত হযরত ইব্রাহীম (আঃ) প্রবর্তিত কোরবাণী-র কথা বলা হচ্ছে)

যাত্রাপুস্তক ১০

১ প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “মিশর এবং ফরৌণের বিরুদ্ধে আমি আরেকটি বিপর্য়য বয়ে আনব। তারপর, সে তোমাদের সবাইকে পাঠিয়ে দেবে। বস্তুত সে তোমাদের চলে য়েতে বাধ্য করবে।
২ তুমি ইস্রায়েলের লোকদের এই বার্তা পাঠাবে: ‘নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে তোমরা নিজের নিজের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সোনা ও রূপোর অলঙ্কার চাইবে।
৩ প্রভু মিশরীয়দের তোমাদের প্রতি দযালু করে তুলবেন। মিশরের লোকরা, এমনকি ফরৌণের কর্মচারীরা মোশিকে এক মহান ব্যক্তির মর্য়াদা দেবে।”‘
৪ মোশি লোকদের জানাল, “প্রভু বলেছেন, ‘আজ মধ্যরাত নাগাদ আমি মিশরের মধ্যে দিয়ে যাব।
৫ এবং তার ফলে মিশরীয়দের সমস্ত প্রথমজাত পুত্ররা মারা যাবে। রাজা ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে শুরু করে য়াঁতাকলে শস্য পেষনকারিণী দাসীর প্রথমজাত পুত্র পর্য়ন্ত সবাই মারা যাবে। এমনকি পশুদেরও প্রথম শাবক মারা যাবে।
৬ তারপর সমস্ত মিশরে এমন জোরে কান্নার রোল উঠবে যা অতীতে কখনও হয় নি এবং যা ভবিষ্যতেও কখনও হবে না।
৭ কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের কোনরকম ক্ষতি হবে না। এমন কি কোনো কুকুর পর্য়ন্ত ইস্রায়েলীয়দের অথবা তাদের পশুদের দিকে ঘেউ ঘেউ করে চিত্কার করবে না। এর ফলে, তোমরা বুঝতে পারবে আমি মিশরীয়দের থেকে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে কতখানি অন্যরকম আচরণ করি।
৮ তখন তোমাদের সমস্ত (মিশরীয় কর্মচারীরা) নতজানু হবে এবং আমার উপাসনা করবে। তারা বলবে, “তুমি তোমার সমস্ত লোককে তোমার সঙ্গে নিয়ে চলে যাও।” তখন মোশি ক্রোধে ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেল।”
৯ প্রভু এরপর মোশিকে আরও বললেন য়ে, “ফরৌণ তোমার কথা শোনে নি। কেন শোনে নি? শোনে নি বলেই তো আমি মিশরের ওপর আমার মহাশক্তির প্রভাব দেখাতে পেরেছিলাম।”
১০ মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়েছিল এবং এই সমস্ত অলৌকিক কাজগুলো করেছিল। কিন্তু প্রভু ফরৌণের হৃদয়কে উদ্ধত করেছিলেন যাতে সে ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে য়েতে না দেয়।

যাত্রাপুস্তক ১১

১ মোশি ও হারোণ মিশরে থাকার সময় প্রভু তাদের বললেন,
২ “এই মাস হবে তোমাদের জন্য বছরের প্রথম মাস,
৩ এই আদেশ সমস্ত ইস্রায়েলবাসীর জন্য: এই মাসের দশম দিনে প্রত্যেকে তার বাড়ীর জন্য একটি করে পশু জোগাড় করবে। পশুটি একটি মেষ অথবা একটি ছাগলও হতে পারে। যদি তার বাড়ীতে একটি গোটা পশুর মাংস খাওয়ার মতো য়থেষ্ট লোক না থাকে তবে সে তার কিছু প্রতিবেশীকে মাংস ভাগ করে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করবে। প্রত্যেকের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট মাংস থাকবে। পশুটিকে হতে হবে একটি এক বছরের পুংশাবক এবং সম্পূর্ণরূপে স্বাস্থ্য়বান।
৬ মাসের চতুর্দশ দিন পর্য়ন্ত এই পশুটির ওপর তোমাদের নজর রাখতে হবে। সেই দিন ইস্রায়েলীয় মণ্ডলীর সমস্ত লোকরা এই পশুটিকে গোধুলি বেলায হত্যা করবে।
৭ তোমরা এই প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ করবে, য়ে বাড়ীতে লোকরা ভোজ খাবে সেই বাড়ীর দরজার কাঠামোর ওপরে ও পাশে এই রক্ত লাগিয়ে দেবে।
৮ “এই দিন রাতে তোমরা মেষটিকে পুড়িয়ে তার মাংস খাবে। তোমরা তেঁতো শাক ও খামিরবিহীন রুটিও খাবে।
৯ মেষটিকে কাঁচা অথবা জলে সিদ্ধ করা অবস্থায় তোমাদের খাওয়া উচিত্ হবে না, কিন্তু আগুনের তাপে সেঁকবে। মেষশাবকটির মাথা, পা এবং ভিতরের অংশ সব কিছুই অক্ষুন্ন থাকবে।
১০ তোমরা সব মাংস রাতের মধ্যেই খেযে শেষ করবে। যদি পরদিন সকালে কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা পুড়িয়ে ফেলবে।
১১ “যখন তোমরা আহার করবে তখন তোমরা যাত্রার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে থাকার পোশাকে থাকবে। তোমাদের পায়ে জুতো থাকবে, হাতে ছড়ি থাকবে এবং তোমরা তাড়াহুড়ো করে খাবে। কারণ এ হল প্রভুর নিস্তারপর্ব।
১২ “আমি মিশরীয়দের প্রথমজাত শিশুগুলিকে এবং তাদের সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবকগুলিকে হত্যা করব। এইভাবে, আমি মিশরের সমস্ত দেবতাদের ওপর রায দেব যাতে তারা জানতে পারে য়ে আমিই প্রভু।
১৩ কিন্তু তোমাদের দরজায় লাগানো রক্ত একটি বিশেষ চিহ্নের কাজ করবে। যখন আমি ঐ রক্ত দেখব তখন আমি তোমাদের বাড়ীগুলোর ওপর দিয়ে চলে যাব। আমি শুধু মিশরের লোকদের ক্ষতি করব। এই সব মারাত্মক রোগে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
১৪ “তাই তোমরা সবসময় মনে রাখবে য়ে আজ তোমাদের একটি বিশেষ ছুটির দিন। তোমাদের উত্তরপুরুষরা এই ছুটির দিনের মাধ্যমে প্রভুকে সম্মান জানাবে।
১৫ এই ছুটিতে তোমরা সাতদিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে, ছুটির প্রথম দিনে তোমরা তোমাদের বাড়ী থেকে সমস্ত খামির সরিয়ে ফেলবে। এই ছুটিতে পুরো সাত দিন ধরে কেউ কোন খামির খাবে না। যদি কেউ সেটা খায় তবে সেই ব্যক্তিকে ইস্রায়েলীয়দের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে।
১৬ এই ছুটির প্রথম ও শেষ দিনে পবিত্র সমাগম অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা এই দিনগুলোতে কোন কাজ করবে না। তোমরা এই দিনগুলিতে একমাত্র তোমাদের আহারের জন্য খাদ্য তৈরী করতে পারবে।
১৭ তোমরা খামিরবিহীন রুটির উত্সবের কথা মনে রাখবে। কেন? কারণ এই দিন আমি তোমাদের সব লোককে দলে দলে মিশর থেকে বের করে এনেছিলাম, তাই তোমাদের সব উত্তরপুরুষ এই দিনটি স্মরণ করবে, এই নিয়ম চিরকাল থাকবে।
১৮ তাই প্রথম মাসের চতুর্দশ দিন বিকেলে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাওয়া শুরু করবে। তোমরা ঐ রুটিটি ঐ মাসের একবিংশ দিনের সন্ধ্যা পর্য়ন্ত খাবে।
১৯ সাতদিন ধরে তোমাদের ঘরে কোন খামির থাকবে না, য়ে কোন ব্যক্তি সে ইস্রায়েলের নাগরিক হোক বা বিদেশী য়ে এই সময় খামির খাবে তাকে ইস্রায়েলের বাকি লোকদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে।
২০ এই ছুটিতে তোমরা অবশ্যই খামির খাবে না, তোমরা যেখানেই থাক না কেন খামিরবিহীন রুটি খাবে।”
২১ তাই মোশি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রবীণদের ডেকে বলল, “তোমাদের পরিবারের জন্য মেষশাবক জোগাড় কর এবং নিস্তারপর্বের জন্য মেষশাবকটিকে হত্যা কর।
২২ এক আঁটি করে এসোব নিয়ে পাত্রে রাখা রক্তে ডুবিয়ে তা দিয়ে দরজার কাঠামোর ওপর ও পাশের দিক রঙ করো। সকালের আগে কেউ নিজের বাড়ী ত্যাগ করবে না।
২৩ এই সময়, প্রভু মিশরের ভেতর দিয়ে মিশরীয়দের হত্যা করতে যাবেন। যখন তিনি দরজার কাঠামোর পাশে ও ওপরে রক্তের প্রলেপ দেখবেন, তখন তিনি সেই দরজাগুলোর ওপর দিয়ে যাবেন। প্রভু ধ্বংসকারীকে তোমাদের বাড়ীতে এসে আঘাত করতে দেবেন না।
২৪ তোমরা অবশ্যই এই আদেশ মনে রাখবে, এই নিয়ম তোমাদের ও তোমাদের উত্তরপুরুষদের জন্য চিরকাল থাকবে।
২৫ যখন তোমরা প্রভুর প্রতিশ্রুতি মত তাঁর দেওয়া ভূখণ্ডে যাবে তখন তোমাদের এই জিনিসগুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
২৬ যখন তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমরা কেন এই উত্সব করছি?’
২৭ তখন তোমরা বলবে, ‘এই নিস্তারপর্ব প্রভুকে সম্মান জানাবার জন্য। কেন? কারণ যখন আমরা মিশরে ছিলাম তখন প্রভু আমাদের ইস্রায়েলবাসীদের বাড়ীগুলিকে নিস্তার দিয়েছিলেন। প্রভু মিশরীয়দের হত্যা করেছিলেন কিন্তু আমাদের লোকদের বাড়ীগুলো রক্ষা করেছিলেন। সুতরাং লোকে নত হয়ে প্রভুর উপাসনা করল।”
২৮ প্রভু মোশি ও হারোণকে এই আদেশ দিয়েছিলেন তাই ইস্রায়েলবাসী প্রভুর আদেশমতো কাজ করল।
২৯ মধ্যরাতে মিশরের সমস্ত প্রথম নবজাতক পুত্রদের প্রভু হত্যা করেছিলেন। ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে জেলের বন্দীর প্রথমজাত পুত্র পর্য়ন্ত। সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবককেও হত্যা করা হল।
৩০ সেই রাতে মিশরের প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ মারা গেল। ফরৌণ, তার কর্মচারী ও মিশরের সমস্ত লোক উচ্চস্বরে কান্না শুরু করল।
৩১ তাই, সেই রাতে ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “উঠে পড়, আমাদের সকলকে ছেড়ে দাও এবং চলে যাও। তুমি ও তোমার ইস্রায়েলের লোকরা যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমরা য়েমন বলেছিলে, গিয়ে প্রভুর উপাসনা কর।
৩২ তোমাদের চাহিদা মতো সমস্ত গরু ও মেষের দল তোমরা নিয়ে য়েতে পারো। যাও! যখন তোমরা যাবে আমায আশীর্বাদ করার জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো।”
৩৩ মিশরীয়রা তাদের তাড়াতাড়ি চলে যাবার জন্য মিনতি করল। কেন? কারণ তারা বলল, “তোমরা না চলে গেলে আমরা সকলে মারা যাব!”
৩৪ ইস্রায়েলীয়রা তাদের রুটিতে খামির দেবার সময় পেল না। তারা ভিজে মযদার তালের পাত্র কাপড়ে জড়িয়ে কাঁধে বয়ে নিয়ে চলল।
৩৫ তারপর ইস্রায়েলের লোকরা মোশির কথামতো তাদের মিশরীয় প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে কাপড় ও সোনা রূপার তৈরী জিনিস চাইল।
৩৬ প্রভু মিশরীয়দের ইস্রায়েলীয়দের প্রতি দযালু করে তুললেন যাতে মিশরীয়রা তাদের ধনসইদ ইস্রায়েলবাসীদের হাতে তুলে দেয়! এইভাবে, ইস্রায়েলীয়রা মিশরীয়দের লুন্ঠন করল।
৩৭ ইস্রায়েলের লোকরা রামিষেষ থেকে সুক্কোতে যাত্রা করল। শিশুরা ছাড়াই সেখানে প্রায় ৬,00,000 লোক ছিল।
৩৮ সেখানে প্রচুর মেষ, গবাদি পশু এবং জিনিসপত্র ছিল। তাদের সঙ্গে অনেক অ-ইস্রায়েলীয় লোক গিয়েছিল।
৩৯ য়েহেতু তাদের মিশরের বাইরে য়েতে বাধ্য করা হয়েছিল, সেই হেতু তারা মাখা ময়দায়, য়েটা তারা মিশর থেকে এনেছিল, খামির মেশাবার সময় পাযনি। এবং যাত্রার জন্য কোন বিশেষ খাবার প্রস্তুত করারও সময় হয় নি। তাই তারা খামিরবিহীন রুটিই সেঁকে নিয়েছিল।
৪০ ইস্রায়েলীয়বাসীরা ৪৩০ বছর ধরে মিশরে বাস করেছিল।
৪১ প্রভুর সৈন্যরা ৪৩০ বছর পর সেই বিশেষ দিনে মিশর ত্যাগ করেছিল।
৪২ তাই সেটা ছিল একটি বিশেষ রাত্রি কারণ প্রভু তাদের মিশর থেকে বাইরে বের করে আনার জন্য লক্ষ্য রাখছিলেন। সেইভাবে, সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুকে সম্মান জানানোর জন্য চিরকাল এই বিশেষ রাতটির প্রতি লক্ষ্য রাখবে।
৪৩ প্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “এই হল নিস্তারপর্বের বলির নিয়মাবলী: কোন বিদেশী এই নিস্তারপর্বে আহার করবে না।
৪৪ কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি কোন দাস কেনে এবং তাকে সুন্নত্ করায তাহলে সেই দাস নিস্তারপর্ব খেতে পারবে।
৪৫ কিন্তু য়ে লোক তোমার দেশের একজন সাময়িক বাসিন্দা বা ভাড়া করা কর্মী তার নিস্তারপর্ব ভোজ খাওয়া উচিত্ নয়। এই নিস্তারপর্ব শুধুমাত্র ইস্রায়েলের লোকদের জন্য।
৪৬ “প্রত্যেক পরিবার একটি বাড়ীতেই আহার করবে। কোনও খাবার বাড়ীর বাইরে যাবে না, মেষ শাবকের কোন হাড় ভাঙ্গবে না।
৪৭ সমস্ত ইস্রায়েল প্রজাতির মানুষ এই উত্সব পালন করবে।
৪৮ যদি ইস্রায়েলীয় ছাড়া অন্য কোন উপজাতির লোক তোমাদের সঙ্গে থাকে এবং তোমাদের খাবারে ভাগ বসাতে চায় তবে তাকে এবং তার পরিবারের প্রত্যেক পুরুষকে সুন্নত্ করাতে হবে। তাহলে সে অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের সমকক্ষ হয়ে যাবে এবং তাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেতে পারবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির সুন্নত্ না করানো হয় তবে সে এই খাবার আহার করতে পারবে না।
৪৯ এই নিয়ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য। এই নিয়মটি ইস্রায়েলীয় অথবা অ-ইস্রায়েলীয় সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”
৫০ তাই প্রভু মোশি ও হারোণকে যা আদেশ দিয়েছিলেন সমস্ত ইস্রায়েলের লোক তা পালন করল।
৫১ তাই সেই দিন প্রভু এইভাবে দলে দলে ইস্রায়েলবাসীদের মিশর দেশ থেকে বের করে আনলেন।

(*৩ও ৬ নম্বর সুসমাচার: এটাও সম্ভবত হযরত ইব্রাহীম (আঃ) প্রবর্তিত কোরবাণী-র কথা বলা হচ্ছে)

যাত্রাপুস্তক ১২

১ তখন প্রভু মোশিকে বললেন,
২ “ইস্রায়েলের প্রতিটি নারীর প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে আমার উদ্দেশ্যে দান কর। এমনকি প্রত্যেকটি পশুর প্রথম পুরুষ শাবকটিও আমার হবে।”
৩ মোশি লোকদের বলল, “এই দিনটিকে মনে রেখো। তোমরা মিশরের ক্রীতদাস ছিলে। কিন্তু প্রভু তাঁর মহান শক্তি দিয়ে এই দিনে তোমাদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছেন। তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে।
৪ আজ আবীব মাসের (বসন্তকালের) এই দিনে তোমরা মিশর ত্যাগ করেছ।
৫ প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের দেশ তোমাদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রভু তোমাদের এই বিশাল সম্পদে ভরা শস্য শ্যামল দেশে নিয়ে আসার পর তোমরা অবশ্যই প্রতি বছর প্রথম মাসের এই বিশেষ দিনে উপাসনা করবে।
৬ “সাতদিন ধরে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। সাত দিনের দিন ভোজন উত্সব করবে। এই মহাভোজ উত্সব হবে প্রভুকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে।
৭ তাই সাতদিন ধরে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। তোমাদের দেশের কোথাও কোন খামিরবিশিষ্ট রুটি অবশ্যই থাকবে না।
৮ সেইদিন তোমরা তোমাদের সন্তানদের বলবে, ‘প্রভু আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছেন বলে আমরা এই মহাভোজ উত্সব পালন করি।”
৯ “এই বিশ্রামের দিনটিকে কোনও বিশেষ দিনে হাতে বাঁধা সুতোর মতো তোমাদের মনে রাখা উচিত্।মনে রাখবে দুই চোখের মাঝখানে কপালে লাগানো তিলকের মতো। এই ছুটির দিনটি তোমাদের প্রভুর শিক্ষামালাকে মনে রাখতে সাহায্য করবে। এটা তোমাদের সাহায্য করবে প্রভুর মহান শক্তিকে মনে রাখতে যিনি তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করেচেন।
১০ সুতরাং প্রতি বছর ছুটির দিনটিকে তোমরা প্রতি বছর সঠিক সময় স্মরণ করবে।
১১ “তোমাদের পূর্বপুরুষদের এবং তোমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি মতো প্রভু তোমাদের কনানীযদের দেশে নিয়ে যাবেন। কিন্তু প্রভু তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন য়ে তোমাদের তিনি এই দেশ দিয়ে দেবেন। ঈশ্বর তোমাদের এই দেশ দেওয়ার পর,
১২ তোমরা কিন্তু তাঁকে তোমাদের প্রথম পুত্র সন্তান এবং ভূমিষ্ট হওয়া প্রথম পুরুষ শাবককে প্রভুর উদ্দেশ্যে দান করবে।
১৩ প্রতিটি গাধার প্রথমজাত পুরুষ শাবককে প্রতিটি মেষ শাবকের বিনিময়ে প্রভুর কাছ থেকে কিনে মুক্ত করে আনতে পারবে। যদি মুক্ত করতে না পারো তাহলে গাধার শাবকটিকে ঘাড় মটকে হত্যা করবে। এবং সেটাই হবে প্রভুর প্রতি নৈবেদ্য। কিন্তু মানুষের প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের অবশ্যই প্রভুর কাছ থেকে ফেরত্ নিয়ে আসতে হবে।
১৪ “ভবিষ্যতে তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, তোমরা এগুলো কেন করলে, ‘এগুলোর মানেই বা কি?’ তখন তোমরা বলবে, ‘আমরা মিশরে দাসত্ব করতাম। কিন্তু প্রভুই তাঁর মহান শক্তি প্রয়োগ করে আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন।
১৫ মিশরে ফরৌণ ছিলেন ভীষণ জেদী। তিনি কিছুতেই আমাদের মুক্তি দিচ্ছিলেন না। তাই প্রভু তখন সে দেশের প্রত্যেক প্রথমজাত সন্তানদের হত্যা করেছিলেন। প্রভু মানুষ ও পশু উভয়েরই প্রথমজাত পুরুষ সন্তানদের হত্যা করেছিলেন। সেইজন্যই আমরা সমস্ত প্রথমজাত পুং পশুদের প্রভুর কাছে উত্সর্গ করি এবং প্রভুর কাছ থেকে আমাদের প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের কিনে নিই।’
১৬ এরই চিহ্ন হিসাবে তোমাদের হাতে সুতো বাঁধ! এবং দুই চোখের মাঝখানে তিলক। যাতে তোমরা মনে রাখতে পার য়ে প্রভু তাঁর পরাক্রম শক্তি প্রযোগ করে আমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনেছেন।”
১৭ ফরৌণ যখন লোকদের চলে য়েতে দিলেন, ঈশ্বর তাদের পলেষ্টীয় দেশের মধ্যে দিয়ে ভূমধ্যসাগর বরাবর সহজ সমুদ্র পথ ব্যবহার করতে দেন নি, যদিও সো রাস্তা ছিল। ঈশ্বর বলেছিলেন, “ঐ দিক দিয়ে গেলে যুদ্ধ করতে হবে। তখন লোকরা মত পরিবর্তন করে আবার মিশরেই ফিরে য়েতে পারে।”
১৮ তাই ঈশ্বর তাদের সূফ সাগরের দিকবর্তী মরুভূমির মধ্যে দিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। মিশর ত্যাগ করার সময় ইস্রায়েলের লোকরা য়ুদ্ধের পোশাকে নিজেদের সজ্জিত করল।
১৯ মোশি য়োষেফের অস্থি বয়ে নিয়ে চলল। (য়োষেফ মারা যাবার আগে ইস্রায়েলের পুত্রদের এই কাজ করার প্রতিশ্রুতি করিযে নিয়েছিল। য়োষেফ বলেছিল, “ঈশ্বর তোমাদের যখন রক্ষা করবেন তখন তোমরা মিশর দেশ থেকে আমার অস্থি সকল বয়ে নিয়ে এসো।”)
২০ ইস্রায়েলীয়রা সুক্কোত্ ছেড়ে এসেছিল এবং এথমে, য়েটা মরুভুমির কাছে ছিল, সেখানে তাঁবু গাড়ল।
২১ প্রভু সেই সময় তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে এলেন। সেই যাত্রার সময় প্রভু পথ দেখানোর জন্য দিনের বেলায় লম্বা মেঘ স্তম্ভ এবং রাতের বেলায আগুনের শিখা ব্যবহার করতেন। ঐ আগুনের শিখা রাতের বেলায় তাদের পথ চলার আলো জোগাতো।
২২ লম্বা মেঘ স্তম্ভ সারাদিন তাদের সঙ্গে থাকত এবং রাতে থাকত আগুনের শিখা।

যাত্রাপুস্তক ১৪

১ তারপর প্রভু মোশিকে বললেন,
২ “ওদের বলো, মিগ্দোল এবং সূফ সাগরের মাঝখানে বাল্সফোনের সামনে রাত্রিযাপন করতে।
৩ তাহলে ফরৌণ ভাববে য়ে ইস্রায়েলের লোকরা মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। ওদের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই।
৪ তখন আমি ফরৌণকে সাহসী করে তুলব যাতে সে তোমাদের তাড়া করে। কিন্তু শেষ পর্য়ন্ত আমি ফরৌণ ও তার সেনাদের পরাজিত করব। এটা আমার সম্মান বাড়াবে। এবং মিশরের লোকরা তখন জানতে পারবে য়ে আমিই প্রভু।” ইস্রায়েলের লোকরা ঈশ্বরের কথামতোই কাজ করল।
৫ মিশরের রাজা খবর পেলেন য়ে ইস্রায়েলীয়রা পালিয়েছে। এই খবর শুনে ফরৌণ ও তাঁর সভাসদরা আগের মত মন পরিবর্তন করলেন। ফরৌণ বললেন, “আমরা কেন ইস্রায়েলীয়দের য়েতে দিলাম? কেন ওদের পালাতে দিলাম? এখন আমরা আমাদের ক্রীতদাসদের হারালাম।”
৬ সুতরাং ফরৌণ তাঁর রথে চড়ে লোকজন সমেত ফিরে গেলেন।
৭ ফরৌণ তাঁর সব চেযে ভালো ৬০0 জন সারথীকে নিলেন। প্রত্যেকটি রথে একজন করে বিশিষ্ট সভাসদ ছিল।
৮ ইস্রায়েলীয়রা তাদের যুদ্ধ জয়ে উঁচু করা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মিশরের রাজা ফরৌণ, য়াঁর হৃদয় প্রভুর দ্বারা উদ্ধত হয়েছিল, ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করলেন।
৯ মিশরীয় সৈন্যরা তাদের তাড়া করল। ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী, রথারোহী এবং সৈন্য ইস্রায়েলীয়দের ধরে ফেলল যখন তারা সূফ সাগরের কাছে বাল্সফোনের পূর্বে পী-হহীরোতে শিবির করেছিল।
১০ ইস্রায়েলের লোকেরা দেখতে পেল ফরৌণ এবং তাঁর সেনারা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তখন তারা ভয় পেয়ে প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য চিত্কার করে উঠল।
১১ তারা মোশিকে বলল, “কেন তুমি আমাদের মিশর থেকে বের করে আনলে? কেন মরার জন্য তুমি আমাদের এই মরুভূমিতে নিয়ে এলে? আমরা অন্ততঃ মিশরে তো শান্তিতে মরতে পারতাম। সেখানে আর কিছু থাক না থাক প্রচুর কবর ছিল।
১২ এরকম য়ে ঘটতে পারে তা কিন্তু আমরা আগেই বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের বিরক্ত কোরো না। আমাদের এখানেই থাকতে দাও, মিশরীয়দের সেবা করতে দাও।’ এই মরুভূমিতে এসে মরার থেকে মিশরীয়দের দাসত্ব অনেক ভাল ছিল।”
১৩ কিন্তু মোশি উত্তরে বলল, “ভয় পেয়ে পালিয়ে য়েও না। দেখো, প্রভু কিভাবে আজ তোমাদের রক্ষা করেন। তোমরা আর কোনও দিন মিশরীয়দের দেখতে পাবে না।
১৪ তোমাদের কিছুই করতে হবে না। শুধু শান্ত হয়ে দেখে যাও কি ঘটছে। প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন।”
১৫ সেই সময় প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এখনও কেন আমার সামনে কাঁদছো! ইস্রায়েলীয়দের এগিয়ে য়েতে বলো।
১৬ যখন তুমি সূফ সাগরের ওপর তোমার হাতের লাঠি তুলে ধরবে সূফ সাগর দুভাগ হয়ে যাবে। তখন লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া সেই শুকনো পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে য়েতে পারবে।
১৭ আমিই মিশরীয়দের সাহসী করে তুলেছি। তাই ওরা তোমাদের তাড়া করছে। কিন্তু আমি তোমাদের দেখাব য়ে আমি ফরৌণ, তার সমস্ত সৈন্য, তার অশ্বারোহীসমূহ এবং সারথীদের চেযে অনেক বেশী শক্তিশালী।
১৮ তখন মিশরও জানবে য়ে আমিই প্রভু। মিশরীয়রাও আমাকে সম্মান জানাবে যখন আমি ফরৌণ, তার অশ্বারোহীগণ এবং সারথীদের পরাজিত করব।”
১৯ এরপর প্রভুর দূত, য়ে সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সে ইস্রায়েলীয়দের পিছন দিকে চলে এলো। তাই এক লম্বা মেঘস্তম্ভ মুহুর্তের মধ্যেই লোকদের সামনে থেকে পিছনে চলে এল।
২০ এইভাবে ঐ মেঘস্তম্ভ মিশরীয়দের মাঝখানে বিরাজ করতে থাকল। তখন মিশরীয়দের জন্য অন্ধকার থাকলেও ইস্রায়েলীয়দের জন্য আলো ছিল। তাই ঐ রাত্রে মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আসতে পারল না।
২১ মোশি সূফ সাগরের ওপর তার হাত মেলে ধরল। প্রভু পূর্ব দিক থেকে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করলেন। এই ঝড় সারারাত ধরে চলতে লাগল। দু’ভাগ হয়ে গেল সমুদ্র। এবং বাতাস মাটিকে শুকনো করে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখান বরাবর পথের সৃষ্টি করল।
২২ ইস্রায়েলের লোকরা ঐ পথ দিয়ে হেঁটে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের দুদিকে ছিল জলের দেওয়াল।
২৩ পিছনে ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী সেনা ও রথ ধাওয়া করল।
২৪ পরদিন সকালে মেঘস্তম্ভ ও অগ্নিশিখার ওপর থেকে প্রভু মিশরীয় সেনাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তখন প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ নিয়ে মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে আতঙ্কে ফেলে দিলেন।
২৫ রথের চাকা আটকে গিয়ে রথ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। মিশরীয়রা চিত্কার করে উঠল, “চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। প্রভুই ইহুদীদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।”
২৬ তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের ওপর তোমার হাত তুলে ধর। দেখবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করছে মিশরীয়দের রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের।”
২৭ মোশি তার হাত সমুদ্রের ওপর মেলে ধরলো। তাই দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে সমুদ্র তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেল। মিশরীয়রা জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে দৌড়তে লাগল। কিন্তু প্রভু তাদের সমুদ্রের জলে ঠেলে দিলেন।
২৮ জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করল রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের। ফরৌণের য়ে সমস্ত সেনারা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে আসছিল তারা সব ধ্বংস হল। কেউ বেঁচে থাকল না।
২৯ ইস্রায়েলের লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের পথের দুপাশে ছিল জলের দেওয়াল।
৩০ সুতরাং সেইদিন এইভাবে প্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। পরে ইস্রায়েলীয়রা সূফ সাগরের তীরে মিশরীয়দের মৃত দেহের সারি দেখতে পেল।
৩১ মিশরীয়দের সেই পরিণতি দেখার পর থেকে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর শক্তি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হল। তারা প্রভুকে ভয় ও সম্মান করতে শুরু করল। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করল প্রভুকে এবং তাঁর দাস মোশিকে।

(২৮ নং সুসমাচার থেকে বোঝা যায় যে, বাইবেলের ভাষ্য অনুযায়ী সমুদ্রে ডুবে ফেরাউনের সৈন্যদলের একাংশ মারা যায়, কিন্তু ফেরাউন নিজে মারা যায়নি)

এবার দেখি হযরত মুসা (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কোরানে কি লিখিত আছে। ইসলামী বিশ্বাস কি বলে।

আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর আদি ৬টি জাতির মধ্যে কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, লূত্ব ও কওমে মাদইয়ানের বর্ণনার পর ষষ্ঠ গযবপ্রাপ্ত জাতি হিসাবে কওমে ফেরাঊন সম্পর্কে আল্লাহ পাক কুরআনের ২৭টি সূরায় ৭৫টি স্থানে বিভিন্ন প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। কুরআনে সর্বাধিক আলোচিত বিষয় হ’ল এটি। যাতে ফেরাঊনের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য ও তার যুলুমের নীতি-পদ্ধতি সমূহ পাঠকদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং এযুগের ফেরাঊনদের বিষয়ে উম্মতে মুহাম্মাদী হুঁশিয়ার হয়। ফেরাঊনের কাছে প্রেরিত নবী মূসা ও হারূণ (আঃ) সম্পর্কে কুরআনে সর্বাধিক আলোচনা স্থান পেয়েছে। কারণ মূসা (আঃ)-এর মু‘জেযা সমূহ অন্যান্য নবীদের তুলনায় যেমন বেশী ছিল, তাঁর সম্প্রদায় বনী ইস্রাঈলের মূর্খতা ও হঠকারিতার ঘটনাবলীও ছিল বিগত উম্মতগুলির তুলনায় অধিক এবং চমকপ্রদ। এতদ্ব্যতীত মূসা (আঃ)-কে বারবার পরীক্ষা নেবার মধ্যে এবং তাঁর কওমের দীর্ঘ কাহিনীর আলোচনা প্রসঙ্গে বহু জ্ঞাতব্য বিষয় ও আদেশ-নিষেধের কথাও এসেছে। সর্বোপরি শাসক সম্রাট ফেরাঊন ও তার ক্বিবতী সম্প্রদায় কর্তৃক সংখ্যালঘু অভিবাসী বনু ইস্রাঈল সম্প্রদায়ের উপর যুলুম-অত্যাচারের বিবরণ ও তার প্রতিরোধে মূসা (আঃ)-এর প্রচেষ্টা এবং দীর্ঘ বিশ বছর ধরে যালেম সম্প্রদায়ের উপরে আপতিত বিভিন্ন গযবের বর্ণনা ও অবশেষে ফেরাঊনের সদলবলে সলিল সমাধির ঘটনা যেন জীবন্ত বাণীচিত্র হয়ে ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সূরায় বর্ণিত কুরআনের অনুপম বাকভঙ্গীতে। মোটকথা কুরআন পাক মূসা (আঃ)-এর কাহিনীকে এত গুরুত্ব দিয়েছে যে, অধিকাংশ সূরায় এর কিছু না কিছু বর্ণিত হয়েছে। কারণ এই কাহিনীতে অগণিত শিক্ষা, আল্লাহ তা‘আলার অপার শক্তি ও অনুগ্রহের বিস্ময়কর রহস্য সমূহ সন্নিবেশিত হয়েছে। এগুলোতে কর্মোদ্দীপনা ও চারিত্রিক সংশোধনের নির্দেশিকা সমূহ প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, কওমে মূসা ও ফেরাঊন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের মোট ৪৪টি সূরায় ৫৩২টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

ফেরাঊনের পরিচয় :
যেখানে আল্লাহ বলেছিলেন যে, ‘আজকে আমরা তোমার দেহকে (বিনষ্ট হওয়া থেকে) বাঁচিয়ে দিলাম। যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত হ’তে পার’… (ইউনুস ১০/৯২)।

মূসা ও ফেরাঊন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
‘আমরা আপনার নিকটে মূসা ও ফেরাঊনের বৃত্তান্ত সমূহ থেকে সত্য সহকারে বর্ণনা করব বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য’। ‘নিশ্চয়ই ফেরাঊন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং তার জনগণকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের মধ্যকার একটি দলকে সে দুর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করত ও কন্যা সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখত। বস্ত্ততঃ সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (ক্বাছাছ ২৮/৩-৪)।

বনু ইস্রাঈলের পূর্ব ইতিহাস :

হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত ইসহাক্ব (আঃ)-এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-এর অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’। হিব্রু ভাষায় ‘ইস্রাঈল’ অর্থ ‘আল্লাহর দাস’। সে হিসাবে ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধরগণকে ‘বনু ইস্রাঈল’ বলা হয়। কুরআনে তাদেরকে ‘বনু ইস্রাঈল’ বলে অভিহিত করা হয়েছে, যাতে ‘আল্লাহর দাস’ হবার কথাটি তাদের বারবার স্মরণে আসে।

ইয়াকূব (আঃ) ও বনু ইস্রাঈলদের আদি বাসস্থান ছিল কেন‘আনে, যা বর্তমান ফিলিস্তীন এলাকায় অবস্থিত। তখনকার সময় ফিলিস্তীন ও সিরিয়া মিলিতভাবে শাম দেশ ছিল। বলা চলে যে, প্রথম ও শেষনবী ব্যতীত প্রায় সকল নবীর আবাসস্থল ছিল ইরাক ও শাম অঞ্চলে। যার গোটা অঞ্চলকে এখন ‘মধ্যপ্রাচ্য’ বলা হচ্ছে। ইয়াকূব (আঃ)-এর পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) যখন মিসরের অর্থমন্ত্রী ও পরে শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় কেন‘আন অঞ্চলেও চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন ইউসুফ (আঃ)-এর আমন্ত্রণে পিতা ইয়াকূব (আঃ) স্বীয় পুত্রগণ ও পরিবারবর্গ সহ হিজরত করে মিসরে চলে যান। ক্রমে তাঁরা সেখানে আধিপত্য বিস্তার করেন ও সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করতে থাকেন। তারীখুল আম্বিয়া-র লেখক বলেন, ইউসুফ (আঃ)-এর কাহিনীতে কোথাও ফেরাঊনের নাম উল্লেখ না থাকায় প্রমাণিত হয় যে, ঐ সময় ফেরাঊনদের হটিয়ে সেখানে ‘হাকসূস’ (ملوك الهكسوس ) রাজাদের রাজত্ব কায়েম হয়। যারা দু’শো বছর রাজত্ব করেন এবং যা ছিল ঈসা (আঃ)-এর জন্মের প্রায় দু’হাযার বছর আগের ঘটনা। অতঃপর মিসর পুনরায় ফেরাঊনদের অধিকারে ফিরে আসে। ইউসুফ (আঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর পঞ্চম অধঃস্তন পুরুষ মূসা ও হারূনের সময় যে নিপীড়ক ফেরাঊন শাসন ক্ষমতায় ছিল তার নাম ছিল রেমেসীস-২। অতঃপর তার পুত্র মারনেপতাহ-এর সময় সাগরডুবির ঘটনা ঘটে এবং সৈন্য-সামন্ত সহ তার সলিল সমাধি হয়।

‘ফেরাঊন’ ছিল মিসরের ক্বিবতী বংশীয় শাসকদের উপাধি। ক্বিবতীরা ছিল মিসরের আদি বাসিন্দা। এক্ষণে তারা সম্রাট বংশের হওয়ায় শাম থেকে আগত সুখী-স্বচ্ছল বনু ইস্রাঈলদের হিংসা করতে থাকে। ক্রমে তা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের রূপ পরিগ্রহ করে।

এক বর্ণনায় এসেছে যে, ইয়াকূবের মিসরে আগমন থেকে মূসার সাথে মিসর থেকে বিদায়কালে প্রায় চারশত বছর সময়ের মধ্যে তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল কাছাকাছি প্রায় তিন মিলিয়ন এবং এ সময় তারা ছিল মিসরের মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ২০ শতাংশ’। তবে এগুলি সবই ইস্রাঈলীদের কাল্পনিক হিসাব মাত্র। যার কোন ভিত্তি নেই’। বরং কুরআন বলছে ৫৪)- ‘নিশ্চয়ই তারা ছিল ক্ষুদ্র একটি দল’ (শো‘আরা ২৬/৫৪)। এই বহিরাগত নবী বংশ ও ক্ষুদ্র দলের সুনাম-সুখ্যাতিই ছিল সংখ্যায় বড় ও শাসকদল ক্বিবতীদের হিংসার কারণ। এরপর জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী ফেরাঊনকে ভীত ও ক্ষিপ্ত করে তোলে।

হযরত মূসা (আঃ)-এর পরিচয় :

মূসা ইবনে ইমরান বিন ক্বাহেছ বিন ‘আযের বিন লাভী বিন ইয়াকূব বিন ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম (আঃ)। অর্থাৎ মূসা হ’লেন ইবরাহীম (আঃ)-এর ৮ম অধঃস্তন পুরুষ। মূসা (আঃ)-এর পিতার নাম ছিল ‘ইমরান’ ও মাতার নাম ছিল ‘ইউহানিব’। তবে মায়ের নামের ব্যাপারে মতভেদ আছে। উল্লেখ্য যে, মারিয়াম (আঃ)-এর পিতার নামও ছিল ‘ইমরান’। যিনি ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)-এর নানা। মূসা ও ঈসা উভয় নবীই ছিলেন বনু ইস্রাঈল বংশীয় এবং উভয়ে বনু ইস্রাঈলের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন (সাজদাহ ৩২/২৩, ছফ ৬১/৬)। মূসার জন্ম হয় মিসরে এবং লালিত-পালিত হন মিসর সম্রাট ফেরাঊনের ঘরে। তাঁর সহোদর ভাই হারূণ (আঃ) ছিলেন তাঁর চেয়ে তিন বছরের বড় এবং তিনি মূসা (আঃ)-এর তিন বছর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। উভয়ের মৃত্যু হয় মিসর ও শাম-এর মধ্যবর্তী তীহ্ প্রান্তরে বনু ইস্রাঈলের ৪০ বছর আটক থাকাকালীন সময়ে।

উল্লেখ্য যে, আদম, ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ) ব্যতীত প্রায় সকল নবীই চল্লিশ বছর বয়সে নবুঅত লাভ করেছিলেন। মূসাও চল্লিশ বছর বয়সে নবুঅত লাভ করেছিলেন বলে অধিকাংশ বিদ্বান মত পোষণ করেছেন। সেমতে আমরা মূসা (আঃ)-এর বয়সকে নিম্নরূপে ভাগ করতে পারি। যেমন, প্রথম ৩০ বছর মিসরে, তারপর ১০ বছর মাদিয়ানে, তারপর মিসরে ফেরার পথে তূর পাহাড়ের নিকটে ‘তুবা’ (طُوَى) উপত্যকায় ৪০ বছর বয়সে নবুঅত লাভ। অতঃপর ২০ বছর মিসরে অবস্থান করে সেখানকার অধিবাসীদেরকে তাওহীদের দাওয়াত প্রদান। তারপর ৬০ বছর বয়সে বনু ইস্রাঈলদের নিয়ে মিসর হ’তে প্রস্থান এবং ফেরাঊনের সলিল সমাধি। অতঃপর আদি বাসস্থান কেন‘আন অধিকারী আমালেক্বাদের বিরুদ্ধে জিহাদের হুকুম অমান্য করায় অবাধ্য ইস্রাঈলীদের নিয়ে ৪০ বছর যাবত তীহ্ প্রান্তরে উন্মুক্ত কারাগারে অবস্থান ও বায়তুল মুক্বাদ্দাসের সন্নিকটে মৃত্যু সম্ভবতঃ ৮০ থেকে ১০০ বছর বয়সের মধ্যে। মূসা (আঃ)-এর কবর হয় বায়তুল মুক্বাদ্দাসের উপকণ্ঠে। আমাদের নবী (ছাঃ) সেখানে একটি লাল ঢিবির দিকে ইশারা করে সেস্থানেই মূসা (আঃ)-এর কবর হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

বিখ্যাত মুসলিম মণিষী ইবনে খলদুনের আল মুকাদ্দিমা গ্রন্থে লিখিত আছে যে, হযরত ইয়াকুব (ইস্রাইল)(আঃ), এর পুত্র ছিলেন লাভী, তাঁর পুত্র ছিলেন কাহাস, তাঁর পুত্র ছিলেন ইয়াসহর, তাঁর পুত্র ছিলেন এমরাম (অম্রম, ইমরান), ও তাঁর পুত্র ছিলেন হযরত মুসা (আঃ)।

হযরত মূসা (আঃ) ও ফেরাঊনের কাহিনী :

ফেরাঊন একদা স্বপ্নে দেখেন যে, বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিক হ’তে একটি আগুন এসে মিসরের ঘর-বাড়ি ও মূল অধিবাসী ক্বিবতীদের জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অথচ অভিবাসী বনু ইস্রাঈলদের কিছুই হচ্ছে না। ভীত-চকিত অবস্থায় তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। অতঃপর দেশের বড় বড় জ্যোতিষী ও জাদুকরদের সমবেত করলেন এবং তাদের সম্মুখে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বর্ণনা দিলেন ও এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। জ্যোতিষীগণ বলল যে, অতি সত্বর বনু ইস্রাঈলের মধ্যে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে। যার হাতে মিসরীয়দের ধ্বংস নেমে আসবে।

মিসর সম্রাট ফেরাঊন জ্যোতিষীদের মাধ্যমে যখন জানতে পারলেন যে, অতি সত্বর ইস্রাঈল বংশে এমন একটা পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, যে তার সাম্রাজ্যের পতন ঘটাবে। তখন উক্ত সন্তানের জন্ম রোধের কৌশল হিসাবে ফেরাঊন বনু ইস্রাঈলদের ঘরে নবজাত সকল পুত্র সন্তানকে ব্যাপকহারে হত্যার নির্দেশ দিল। উদ্দেশ্য ছিল, এভাবে হত্যা করতে থাকলে এক সময় বনু ইস্রাঈল কওম যুবক শূন্য হয়ে যাবে। বৃদ্ধরাও মারা যাবে। মহিলারা সব দাসীবৃত্তিতে বাধ্য হবে। এই দূরদর্শী কপট পরিকল্পনা নিয়ে ফেরাঊন ও তার মন্ত্রীগণ সারা দেশে একদল ধাত্রী মহিলা ও ছুরিধারী জাল্লাদ নিয়োগ করে। মহিলারা বাড়ী বাড়ী গিয়ে বনু ইস্রাঈলের গর্ভবতী মহিলাদের তালিকা করত এবং প্রসবের দিন হাযির হয়ে দেখত, ছেলে না মেয়ে। ছেলে হ’লে পুরুষ জাল্লাদকে খবর দিত। সে এসে ছুরি দিয়ে মায়ের সামনে সন্তানকে যবহ করে ফেলে রেখে চলে যেত। এভাবে বনু ইস্রাঈলের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়ে গেল। ইবনু কাছীর বলেন, একাধিক মুফাসসির বলেছেন যে, শাসকদল ক্বিবতীরা ফেরাঊনের কাছে গিয়ে অভিযোগ করল যে, এভাবে পুত্র সন্তান হত্যা করায় বনু ইস্রাঈলের কর্মজীবী ও শ্রমিক শ্রেণীর ঘাটতি হচ্ছে। যাতে তাদের কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে। তখন ফেরাঊন এক বছর অন্তর অন্তর পুত্র হত্যার নির্দেশ দেয়। এতে বাদ পড়া বছরে হারূণের জন্ম হয়। কিন্তু হত্যার বছরে মূসার জন্ম হয়। ফলে পিতা-মাতা তাদের নবজাত সন্তানের নিশ্চিত হত্যার আশংকায় দারুণভাবে ভীত হয়ে পড়লেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ মূসা (আঃ)-এর মায়ের অন্তরে ‘ইলহাম’ করেন। যেমন আল্লাহ পরবর্তীতে মূসাকে বলেন,

‘আমরা তোমার উপর আরো একবার অনুগ্রহ করেছিলাম’। ‘যখন আমরা তোমার মাকে প্রত্যাদেশ করেছিলাম, যা প্রত্যাদেশ করা হয়’। ‘(এই মর্মে যে,) তোমার নবজাত সন্তানকে সিন্দুকে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দাও’। ‘অতঃপর নদী তাকে তীরে ঠেলে দেবে। অতঃপর আমার শত্রু ও তার শত্রু (ফেরাঊন) তাকে উঠিয়ে নেবে এবং আমি তোমার উপর আমার পক্ষ হ’তে বিশেষ মহববত নিক্ষেপ করেছিলাম এবং তা এজন্য যে, তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও’ (ত্বোয়াহা ২০/৩৭-৩৯)। বিষয়টি আল্লাহ অন্যত্র বলেন এভাবে,

‘আমরা মূসার মায়ের কাছে প্রত্যাদেশ করলাম এই মর্মে যে, তুমি ছেলেকে দুধ পান করাও। অতঃপর তার জীবনের ব্যাপারে যখন শংকিত হবে, তখন তাকে নদীতে নিক্ষেপ করবে। তুমি ভীত হয়ো না ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ো না। আমরা ওকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব এবং ওকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করব’ (ক্বাছাছ ২৮/৭)। মূলতঃ শেষের দু’টি ওয়াদাই তাঁর মাকে নিশ্চিন্ত ও উদ্বুদ্ধ করে। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘মূসা জননীর অন্তর (কেবলি মূসার চিন্তায়) বিভোর হয়ে পড়ল। যদি আমরা তার অন্তরকে সুদৃঢ় করে না দিতাম, তাহ’লে সে মূসার (জন্য অস্থিরতার) বিষয়টি প্রকাশ করেই ফেলত। (আমরা তার অন্তরকে দৃঢ় করেছিলাম এ কারণে যে) সে যেন আল্লাহর উপরে প্রত্যয়শীলদের অন্তর্ভুক্ত থাকে’ (ক্বাছাছ ২৮/১০)।

হযরত মূসা (আঃ) নদীতে নিক্ষিপ্ত হলেন :

ফেরাঊনের সৈন্যদের হাতে নিহত হবার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখা দিলে আল্লাহর প্রত্যাদেশ (ইলহাম) অনুযায়ী পিতা-মাতা তাদের প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে সিন্দুকে ভরে নীল নদীতে ভাসিয়ে দিলেন। অতঃপর স্রোতের সাথে সাথে সিন্দুকটি এগিয়ে চলল। ওদিকে মূসার (বড়) বোন তার মায়ের হুকুমে (ক্বাছাছ ২৮/১১) সিন্দুকটিকে অনুসরণ করে নদীর কিনারা দিয়ে চলতে লাগল (ত্বোয়াহা ২০/৪০)। এক সময় তা ফেরাঊনের প্রাসাদের ঘাটে এসে ভিড়ল। ফেরাঊনের পুণ্যবতী স্ত্রী আসিয়া (آسية ) বিনতে মুযাহিম ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাটিকে দেখে অভিভূত হয়ে পড়লেন। ফেরাঊন তাকে বনু ইস্রাঈল সন্তান ভেবে হত্যা করতে চাইল। কিন্তু সন্তানহীনা স্ত্রীর অপত্য স্নেহের কারণে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ফেরাঊন নিজে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কারণ আল্লাহ মূসার চেহারার মধ্যে বিশেষ একটা মায়াময় কমনীয়তা দান করেছিলেন (ত্বোয়াহা ২০/৩৯)। যাকে দেখলেই মায়া পড়ে যেত। ফেরাঊনের হৃদয়ের পাষাণ গলতে সেটুকুই যথেষ্ট ছিল। ফুটফুটে শিশুটিকে দেখে ফেরাঊনের স্ত্রী তার স্বামীকে বললেন,

‘এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি। একে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি’। আল্লাহ বলেন, ‘অথচ তারা (আমার কৌশল) বুঝতে পারল না’ (ক্বাছাছ ২৮/৯)। মূসা এক্ষণে ফেরাঊনের স্ত্রীর কোলে পুত্রস্নেহ পেতে শুরু করলেন। অতঃপর বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য রাণীর নির্দেশে বাজারে বহু ধাত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হ’ল। কিন্তু মূসা কারুরই বুকে মুখ দিচ্ছেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা পূর্ব থেকেই অন্যের দুধ খাওয়া থেকে মূসাকে বিরত রেখেছিলাম’ (ক্বাছাছ ২৮/১২)। এমন সময় অপেক্ষারত মূসার ভগিনী বলল, ‘আমি কি আপনাদেরকে এমন এক পরিবারের খবর দিব, যারা আপনাদের জন্য এ শিশু পুত্রের লালন-পালন করবে এবং তারা এর শুভাকাংখী’? (ক্বাছাছ ২৮/১২)। রাণীর সম্মতিক্রমে মূসাকে প্রস্তাবিত ধাত্রীগৃহে প্রেরণ করা হ’ল। মূসা খুশী মনে মায়ের দুধ গ্রহণ করলেন। অতঃপর মায়ের কাছে রাজকীয় ভাতা ও উপঢৌকনাদি প্রেরিত হ’তে থাকল। এভাবে আল্লাহর অপার অনুগ্রহে মূসা তার মায়ের কোলে ফিরে এলেন। এভাবে একদিকে পুত্র হত্যার ভয়ংকর আতংক হ’তে মা-বাবা মুক্তি পেলেন ও নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া সন্তানকে পুনরায় বুকে ফিরে পেয়ে তাদের হৃদয় শীতল হ’ল। অন্যদিকে বহু মূল্যের রাজকীয় ভাতা পেয়ে সংসার যাত্রা নির্বাহের দুশ্চিন্তা হ’তে তারা মুক্ত হ’লেন। সাথে সাথে সম্রাট নিয়োজিত ধাত্রী হিসাবে ও সম্রাট পরিবারের সাথে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হওয়ার ফলে তাঁদের পরিবারের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেল। এভাবেই ফেরাঊনী কৌশলের উপরে আল্লাহর কৌশল বিজয়ী হ’ল। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

আল্লাহ বলেন, ‘তারা চক্রান্ত করেছিল এবং আমরাও কৌশল করেছিলাম। কিন্তু তারা (আমাদের কৌশল) বুঝতে পারেনি’ (নমল ২৭/৫০)।

যৌবনে হযরত মূসা (আঃ):

দুগ্ধ পানের মেয়াদ শেষে হযরত মূসা (আঃ)অতঃপর ফেরাঊন-পুত্র হিসাবে তার গৃহে শান-শওকতের মধ্যে বড় হ’তে থাকেন। আল্লাহর রহমতে ফেরাঊনের স্ত্রীর অপত্য স্নেহ ছিল তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় দুনিয়াবী রক্ষাকবচ। এভাবে

‘যখন তিনি যৌবনে পদার্পণ করলেন এবং পূর্ণবয়ষ্ক মানুষে পরিণত হ’লেন, তখন আল্লাহ তাকে বিশেষ প্রজ্ঞা ও জ্ঞান সম্পদে ভূষিত করলেন’ (ক্বাছাছ ২৮/১৪)।

হযরত মূসা (আঃ) সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্যকভাবে উপলব্ধি করলেন। দেখলেন যে, পুরা মিসরীয় সমাজ ফেরাঊনের একচ্ছত্র রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীনে কঠোরভাবে শাসিত। ‘বিভক্ত কর ও শাসন কর’ এই সুপরিচিত ঘৃণ্য নীতির অনুসরণে ফেরাঊন তার দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল ও একটি দলকে দুর্বল করে দিয়েছিল (ক্বাছাছ ২৮/৪)। আর সেটি হ’ল বনু ইস্রাঈল। প্রতিদ্বন্দ্বী জন্মাবার ভয়ে সে তাদের নবজাতক পুত্র সন্তানদের হত্যা করত ও কন্যা সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখত। এভাবে একদিকে ফেরাঊন অহংকারে স্ফীত হয়ে নিজেকে ‘সর্বোচ্চ পালনকর্তা ও সর্বাধিপতি’ ভেবে সারা দেশে অনর্থ সৃষ্টি করছিল। এমনকি সে নিজেকে ‘একমাত্র উপাস্য’ – (ক্বাছাছ ২৮/৩৮) বলতেও লজ্জাবোধ করেনি। অন্যদিকে মযলূম বনু ইস্রাঈলদের হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল। অবশেষে আল্লাহ মযলূমদের ডাকে সাড়া দিলেন। আল্লাহ বলেন,

‘দেশে যাদেরকে দুর্বল করা হয়েছিল, আমরা চাইলাম তাদের উপরে অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা করতে ও দেশের উত্তরাধিকারী করতে’। ‘এবং আমরা চাইলাম তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে এবং ফেরাঊন, হামান ও তাদের সেনাবাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তারা সেই দুর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত’ (ক্বাছাছ ২৮/৫-৬)।

যুবক মূসা খুনী হ’লেন :

হযরত মুসা (আঃ)-এর হৃদয় মযলূমদের প্রতি করুণায় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। কিন্তু কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। মূসা একদিন দুপুরের অবসরে শহরে বেড়াতে বেরিয়েছেন। এমন সময় তাঁর সামনে এক কান্ড ঘটে গেল। তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখতে পেলেন। যাদের একজন যালেম সম্রাটের ক্বিবতী বংশের এবং অন্যজন মযলূম বনু ইস্রাঈলের। মূসা তাদের থামাতে গিয়ে যালেম লোকটিকে একটা ঘুষি মারলেন। কি আশ্চর্য লোকটি তাতেই অক্কা পেল। মূসা দারুণভাবে অনুতপ্ত হলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,

‘একদিন দুপুরে তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন অধিবাসীরা ছিল দিবানিদ্রার অবসরে। এ সময় তিনি দু’জন ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখতে পেলেন। এদের একজন ছিল তার নিজ গোত্রের এবং অপরজন ছিল শত্রুদলের। অতঃপর তার নিজ দলের লোকটি তার শত্রুদলের লোকটির বিরুদ্ধে তার কাছে সাহায্য চাইল। তখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং তাতেই তার মৃত্যু হয়ে গেল। মূসা বললেন, ‘নিশ্চয়ই এটি শয়তানের কাজ। সে মানুষকে বিভ্রান্তকারী প্রকাশ্য শত্রু’। ‘হে আমার প্রভু! আমি নিজের উপরে যুলুম করেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর। অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ক্বাছাছ ২৮/১৫-১৬)।

পরের দিন ‘জনৈক ব্যক্তি ছুটে এসে মূসাকে বলল, হে মূসা! আমি তোমার শুভাকাংখী। তোমাকে পরামর্শ দিচ্ছি যে, এই মুহূর্তে তুমি এখান থেকে বের হয়ে চলে যাও। কেননা সম্রাটের পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে’ (ক্বাছাছ ২৮/২০)।

এই লোকটি মূসার প্রতি আকৃষ্ট ও তাঁর গুণমুগ্ধ ছিল। একথা শুনে ভীত হয়ে মূসা সেখান থেকে বের হয়ে পড়লেন নিরুদ্দেশ যাত্রাপথে। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘অতঃপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতে এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর’। ‘এরপর যখন তিনি (পার্শ্ববর্তী রাজ্য) মাদিয়ান অভিমুখে রওয়ানা হ’লেন, তখন (দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে) বলে উঠলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার প্রভু আমাকে সরল পথ দেখাবেন’ (ক্বাছাছ ২৮/২১-২২)।

হয়তো সৃষ্টিকর্তা চাইছিলেন, ফেরাঊনের রাজপ্রাসাদ থেকে হযরত মূসা (আঃ)-কে বের করে নিতে এবং সাধারণ মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে পরিচিত করতে। সাথে সাথে আল্লাহ তাঁকে তৎকালীন একজন শ্রেষ্ঠ নবীর গৃহে লালিত-পালিত করে তাওহীদের বাস্তব শিক্ষায় আগাম পরিপক্ক করে নিতে চাইলেন।

মাদিয়ানের জীবন : বিবাহ ও সংসার পালন

মাদিয়ানে প্রবেশ করে তিনি পানির আশায় একটা কূপের দিকে গেলেন। সেখানে পানি প্রার্থী লোকদের ভিড়ের অদূরে দু’টি মেয়েকে তাদের তৃষ্ণার্ত পশুগুলি সহ অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁর হৃদয় উথলে উঠলো। কেউ তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপই করছে না। মূসা নিজে মযলূম। তিনি মযলূমের ব্যথা বুঝেন। তাই কিছুক্ষণ ইতঃস্তত করে মেয়ে দু’টির দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি তাদের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়ে চলে যায়। অথচ আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ’ (যিনি ঘরে বসে আমাদের অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছেন)। ‘অতঃপর তাদের পশুগুলি এনে মূসা পানি পান করালেন’ (তারপর মেয়ে দু’টি পশুগুলি নিয়ে বাড়ী চলে গেল)। মূসা একটি গাছের ছায়ায় বসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন,

‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার উপর যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী’ (ক্বাছাছ ২৮/২৪)। হঠাৎ দেখা গেল যে ‘বালিকাদ্বয়ের একজন সলজ্জ পদক্ষেপে তাঁর দিকে আসছে’। মেয়েটি এসে ধীর কণ্ঠে তাকে বলল, ‘আমার পিতা আপনাকে ডেকেছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময় স্বরূপ আপনাকে পুরস্কার দিতে পারেন’ (ক্বাছাছ ২৮/২৩-২৫)।

উল্লেখ্য যে, বালিকাদ্বয়ের পিতা ছিলেন মাদইয়ান বাসীদের নিকটে প্রেরিত বিখ্যাত নবী হযরত শু‘আয়েব (আঃ)। মূসা ইতিপূর্বে কখনো তাঁর নাম শোনেননি বা তাঁকে চিনতেন না। তাঁর কাছে পৌঁছে মূসা তাঁর বৃত্তান্ত সব বর্ণনা করলেন। শু‘আয়েব (আঃ) সবকিছু শুনে বললেন, ‘ভয় করো না। তুমি যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছ’। ‘এমন সময় বালিকাদ্বয়ের একজন বলল, আববা! এঁকে বাড়ীতে কর্মচারী হিসাবে রেখে দিন। কেননা আপনার কর্ম সহায়ক হিসাবে সেই-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত’ (ক্বাছাছ ২৮/২৬)। ‘তখন তিনি মূসাকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার বাড়ীতে কর্মচারী থাকবে। তবে যদি দশ বছর পূর্ণ করো, সেটা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সদাচারী হিসাবে পাবে’। ‘মূসা বলল, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হ’ল। দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যেকোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি, আল্লাহ তার উপরে তত্ত্বাবধায়ক’ (ক্বাছাছ ২৮/২৫-২৮)। মূলতঃ এটাই ছিল তাদের বিয়ের মোহরানা। এভাবে অচেনা-অজানা দেশে এসে মূসা (আঃ) অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এবং অন্যান্য নিরাপত্তাসহ অত্যন্ত মর্যাদাবান ও নির্ভরযোগ্য একজন অভিভাবক পেয়ে গেলেন। সেই সঙ্গে পেলেন জীবন সাথী একজন পতি-পরায়ণা বুদ্ধিমতী স্ত্রী। অতঃপর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে মূসার দিনগুলি অতিবাহিত হ’তে থাকলো। সময় গড়িয়ে এক সময় মেয়াদ পূর্ণ হ’য়ে গেল। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তিনি চাকুরীর বাধ্যতামূলক আট বছর এবং ঐচ্ছিক দু’বছর মেয়াদ পূর্ণ করেছিলেন। কেননা এটাই নবী চরিত্রের জন্য শোভনীয় যে, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ঐচ্ছিক দু’বছরও তিনি পূর্ণ করবেন’।

মিসর অভিমুখে যাত্রা ও পথিমধ্যে নবুঅত লাভ

মোহরানার চুক্তির মেয়াদ শেষ। এখন যাবার পালা। পুনরায় স্বদেশে ফেরা। দুরু দুরু বক্ষ। ভীত-সন্ত্রস্ত্র মন। চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ। তবুও যেতে হবে। পিতা-মাতা, ভাই-বোন সবাই রয়েছেন মিসরে। আল্লাহর উপরে ভরসা করে স্ত্রী-পরিবার নিয়ে বের হ’লেন পুনরায় মিসরের পথে। উল্লেখ্য, দশ বছরে তিনি দু’টি পুত্র সন্তান লাভ করেন এবং শ্বশুরের কাছ থেকে পান এক পাল দুম্বা। এছাড়া তাক্বওয়া ও পরহেযগারীর আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ তো তিনি লাভ করেছিলেন বিপুলভাবে।

পরিবারের কাফেলা নিয়ে মূসা রওয়ানা হ’লেন স্বদেশ অভিমুখে। পথিমধ্যে মিসর সীমান্তে অবস্থিত সিনাই পর্বতমালার তূর পাহাড়ের নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছলে হঠাৎ স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হ’ল। এখুনি প্রয়োজন আগুনের। কিন্তু কোথায় পাবেন আগুন। পাথরে পাথরে ঘষে বৃথা চেষ্টা করলেন কতক্ষণ। প্রচন্ড শীতে ও তুষারপাতের কারণে পাথর ঘষায় কাজ হ’ল না। দিশেহারা হয়ে চারিদিকে দেখতে লাগলেন। হঠাৎ অনতিদূরে আগুনের হলকা নজরে পড়ল। আশায় বুক বাঁধলেন। স্ত্রী ও পরিবারকে বললেন, ‘তোমরা এখানে অবস্থান কর। আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ আমি তা থেকে তোমাদের জন্য কিছু আগুন জ্বালিয়ে আনতে পারব অথবা সেখানে পৌঁছে পথের সন্ধান পাব’ (ত্বোয়াহা ২০/১০)। একথা দৃষ্টে মনে হয়, মূসা পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। পথিমধ্যে শাম অঞ্চলের শাসকদের পক্ষ থেকে প্রধান সড়কে বিপদাশংকা ছিল। তাই শ্বশুরের উপদেশ মোতাবেক তিনি পরিচিত রাস্তা ছেড়ে অপরিচিত রাস্তায় চলতে গিয়ে মরুভূমির মধ্যে পথ হারিয়ে ডান দিকে চলে তূর পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছে গেলেন। মূলতঃ এ পথ হারানোটা ছিল আল্লাহর মহা পরিকল্পনারই অংশ।

হযরত মূসা (আঃ) আশান্বিত হয়ে যতই আগুনের নিকটবর্তী হন, আগুনের হল্কা ততই পিছাতে থাকে। আশ্চর্য হয়ে দেখলেন, সবুজ বৃক্ষের উপরে আগুন জ্বলছে। অথচ গাছের পাতা পুড়ছে না; বরং তার উজ্জ্বলতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিস্ময়ে অভিভূত মূসা এক দৃষ্টে আগুনটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। হঠাৎ এক গুরুগম্ভীর আওয়ায কানে এলো তাঁর চার পাশ থেকে। মনে হ’ল পাহাড়ের সকল প্রান্ত থেকে একই সাথে আওয়ায আসছে। হযরত মূসা (আঃ)তখন তূর পাহাড়ের ডান দিকে ‘তুবা’ (طُوَى) উপত্যকায় দন্ডায়মান। আল্লাহ বলেন,

‘অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে পৌঁছলেন, তখন আওয়ায এলো, হে মূসা!’ ‘আমিই তোমার পালনকর্তা। অতএব তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। তুমি পবিত্র উপত্যকা তুবায় রয়েছ’ (ত্বোয়াহা ২০/১১-১২)।

অতঃপর আল্লাহ বলেন,

‘আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। অতএব তোমাকে যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাক’। ‘নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণে ছালাত কায়েম কর’। ‘ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকে তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করতে পারে’। ‘সুতরাং যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতে বিশ্বাস রাখে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে (ক্বিয়ামত বিষয়ে সতর্ক থাকা হ’তে) নিবৃত্ত না করে। তাহ’লে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩-১৬)।

এ পর্যন্ত আক্বীদা ও ইবাদতগত বিষয়ে নির্দেশ দানের পর এবার কর্মগত নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলছেন,

‘হে মূসা! তোমার ডান হাতে ওটা কি?’ ‘মূসা বললেন, এটা আমার লাঠি। এর উপরে আমি ভর দেই এবং এর দ্বারা আমার ছাগপালের জন্য গাছের পাতা ঝেড়ে নামাই। তাছাড়া এর দ্বারা আমার অন্যান্য কাজও চলে’। ‘আল্লাহ বললেন, হে মূসা! তুমি ওটা ফেলে দাও’। ‘অতঃপর তিনি ওটা (মাটিতে) ফেলে দিতেই তা সাপ হয়ে ছুটাছুটি করতে লাগল’। ‘আল্লাহ বললেন, তুমি ওটাকে ধর, ভয় করো না, আমি এখুনি ওকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেব’ (ত্বোয়াহা ২০/১৭-২১)।

১ম মু‘জেযা প্রদানের পর আল্লাহ তাকে দ্বিতীয় মু‘জেযা প্রদানের উদ্দেশ্যে বললেন,

‘তোমার হাত বগলে রাখ। তারপর দেখবে তা বের হয়ে আসবে উজ্জ্বল ও নির্মল আলো হয়ে, অন্য একটি নিদর্শন রূপে’। ‘এটা এজন্য যে, আমরা তোমাকে আমাদের বিরাট নিদর্শনাবলীর কিছু অংশ দেখাতে চাই’ (ত্বোয়াহা ২০/২২-২৩)।

সিনাই হ’তে মিসর:

প্রসব বেদনায় কাতর স্ত্রীর জন্য আগুন আনতে গিয়ে মূসা এমন এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হ’লেন, যা রীতিমত ভীতিকর, শিহরণমূলক ও অভূতপূর্ব। তিনি স্ত্রীর জন্য আগুন নিয়ে যেতে পেরেছিলেন কি-না বা পরিবারের সেবায় তিনি পরে কি কি ব্যবস্থা নিলেন- এসব বিষয়ে কুরআন চুপ রয়েছে। কুরআনের গৃহীত বাকরীতি অনুযায়ী এ সবের বর্ণনা কোন জরূরী বিষয় নয়। কেননা এগুলি সাধারণ মানবিক তাকীদ, যা যেকোন স্বামীই তার স্ত্রী ও পরিবারের জন্য করে থাকে। অতএব এখন আমরা সামনের দিকে আগাব।

আল্লাহ পাক মূসাকে নবুঅত ও প্রধান দু’টি মু‘জেযা দানের পর নির্দেশ দিলেন,

হে মূসা! ‘তুমি ফেরাঊনের কাছে যাও। সে উদ্ধত হয়ে গেছে’। ভীত সন্ত্রস্ত মূসা বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! আমার বক্ষ উন্মোচন করে দিন’ ‘এবং আমার কাজ সহজ করে দিন’। ‘আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন’ ‘যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’ ‘এবং আমার পরিবারের মধ্য থেকে একজনকে আমার সাহায্যকারী নিযুক্ত করে দিন’। ‘আমার ভাই হারূণকে দিন’। ‘তার মাধ্যমে আমার কোমর শক্ত করুন’ ‘এবং তাকে (নবী করে) আমার কাজে অংশীদার করুন’। ‘যাতে আমরা বেশী বেশী করে আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করতে পারি’ ‘এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি’। ‘আপনি তো আমাদের অবস্থা সবই দেখছেন’ (ত্বোয়াহা ২০/২৪-৩৫)।

মূসার উপরোক্ত দীর্ঘ প্রার্থনার জবাবে আল্লাহ বললেন,

– ‘হে মূসা! তুমি যা যা চেয়েছ, সবই তোমাকে দেওয়া হ’ল’। শুধু এবার কেন, ‘আমি তোমার উপরে আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম’ (ত্বোয়াহা ২০/৩৬-৩৭)।

বলেই আল্লাহ মূসাকে তার জন্মের পর নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ও ফেরাঊনের ঘরে লালন-পালনের চমকপ্রদ কাহিনী শুনিয়ে দিলেন।

আল্লাহর খেলা বুঝা ভার। হত্যার টার্গেট হয়ে জন্মলাভ করে হত্যার ঘোষণা দানকারী সম্রাট ফেরাঊনের গৃহে পুত্রস্নেহে লালিত-পালিত হয়ে পরে যৌবনকালে পুনরায় হত্যাকান্ডের আসামী হয়ে প্রাণভয়ে ভীত ও কপর্দকশূন্য অবস্থায় স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমালেন। অতঃপর সেখানে দীর্ঘ দশ বছর মেষপালকের চাকুরী করে স্ত্রী-পরিবার নিয়ে স্বদেশ ফেরার পথে রাহযানির ভয়ে মূল রাস্তা ছেড়ে অপরিচিত রাস্তায় এসে কনকনে শীতের মধ্যে অন্ধকার রাতে প্রসব বেদনায় কাতর স্ত্রীকে নিয়ে মহা বিপদগ্রস্ত স্বামী যখন অদূরে আলোর ঝলকানি দেখে আশায় বুক বেঁধে সেদিকে ছুটেছেন। তখন তিনি জানতেন না যে, সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছে এমন এক মহা সুসংবাদ যা দুনিয়ার কোন মানুষ ইতিপূর্বে দেখেনি, শোনেনি, কল্পনাও করেনি। বিশ্ব চরাচরের পালনকর্তা আল্লাহ স্বয়ং স্বকণ্ঠে, স্বশব্দে ও স্ব-ভাষায় তাকে ডেকে কথা বলবেন, এও কি সম্ভব? শংকিত, শিহরিত, পুলকিত হযরত মূসা (আঃ) সবকিছু ভুলে পুরা দেহ-মন দিয়ে শুনছেন স্বীয় প্রভুর দৈববাণী। দেখলেন তাঁর নূরের তাজাল্লী। চাইলেন প্রাণভরে যা চাওয়ার ছিল। পেলেন সাথে সাথে পরিপূর্ণভাবে। এতে বুঝা যায়, পারিবারিক সমস্যা ও রাস্তাঘাটের সমস্যা সবই আল্লাহর মেহেরবানীতে সুন্দরভাবে সমাধান হয়ে গিয়েছিল যা কুরআনে উল্লেখের প্রয়োজন পড়েনি।

ওদিকে হযরত মূসা (আঃ)-এর প্রার্থনা কবুলের সাথে সাথে আল্লাহ হারূণকে মিসরে অহীর মাধ্যমে নবুঅত প্রদান করলেন (মারিয়াম ১৯/৫৩) এবং তাকে মূসার আগমন বার্তা জানিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে মূসাকে সার্বিক সহযোগিতা করার এবং তাকে মিসরের বাইরে এসে অভ্যর্থনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি বনু ইস্রাঈলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এগিয়ে এসে যথাযথভাবে সে নির্দেশ পালন করেন।

মূসা হ’লেন কালীমুল্লাহ :

তুবা প্রান্তরের উক্ত ঘটনা থেকে মূসা কেবল নবী হ’লেন না। বরং তিনি হ’লেন ‘কালীমুল্লাহ’ বা আল্লাহর সাথে বাক্যালাপকারী। যদিও শেষনবী (ছাঃ) মে‘রাজে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু দুনিয়াতে এভাবে বাক্যালাপের সৌভাগ্য কেবলমাত্র হযরত মূসা (আঃ)-এর হয়েছিল। আল্লাহ বিভিন্ন নবীকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশিষ্টতা দান করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে মূসা! আমি আমার বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে এবং আমার বাক্যালাপের মাধ্যমে তোমাকে লোকদের উপরে বিশিষ্টতা দান করেছি। অতএব আমি তোমাকে যা কিছু দান করলাম, তা গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ থাক’ (আ‘রাফ ৭/১৪৪)। এভাবে আল্লাহ পাক মূসা (আঃ)-এর সাথে আরেকবার কথা বলেন, সাগর ডুবি থেকে নাজাত পাবার পরে শামে এসে একই স্থানে ‘তওরাত’ প্রদানের সময় (আ‘রাফ ৭/১৩৮, ১৪৫)। এভাবে মূসা হ’লেন ‘কালীমুল্লাহ’।

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে সরাসরি বাক্যালাপের পর উৎসাহিত ও পুলকিত মূসা এখানে তূর পাহাড়ের পাদদেশ এলাকায় কিছু দিন বিশ্রাম করলেন। অতঃপর মিসর অভিমুখে রওয়ানা হ’লেন। সিনাই থেকে অনতিদূরে মিসর সীমান্তে পৌঁছে গেলে যথারীতি বড় ভাই হারূণ ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এসে তাঁদেরকে সাদর অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেলেন (কুরতুবী, ইবনু কাছীর)।

হযরত মূসা (আঃ)-এর মিসরে প্রত্যাবর্তন :

ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গের বিরুদ্ধে অলৌকিক লাঠি ও আলোকিত হস্ত তালুর দু’টি নিদর্শন নিয়ে মূসা (আঃ) মিসরে পৌঁছলেন (ক্বাছাছ ২৮/৩২)। ফেরাঊন ও তার সভাসদ বর্গকে আল্লাহ ‘জাহান্নামের দিকে আহবানকারী নেতৃবৃন্দ’ (ক্বাছাছ ২৮/৪১) হিসাবে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ‘ফাসেক’ বা পাপাচারী (ক্বাছাছ ২৮/৩২) বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ পাক মূসাকে বললেন ‘তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনবলীসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না’। ‘তোমরা উভয়ে ফেরাঊনের কাছে যাও। সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে’। ‘তোমরা তার কাছে গিয়ে নম্রভাষায় কথা বলবে। তাতে হয়ত সে চিন্তা-ভাবনা করবে অথবা ভীত হবে’। ‘তারা বলল, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আশংকা করছি যে, সে আমাদের উপরে যুলুম করবে কিংবা উত্তেজিত হয়ে উঠবে’। ‘আল্লাহ বললেন,

‘তোমরা ভয় করো না। আমি তোমাদের সাথে আছি। আমি তোমাদের (সব কথা) শুনবো ও (সব অবস্থা) দেখব’ (ত্বোয়াহা ২০/৪২-৪৬)।

ফেরাঊনের নিকটে মূসা (আঃ)-এর দাওয়াত :

আল্লাহর নির্দেশমত মূসা ও হারূণ ফেরাঊন ও তার সভাসদবর্গের নিকটে পৌঁছে গেলেন। অতঃপর মূসা ফেরাঊনকে বললেন,

‘হে ফেরাঊন! আমি বিশ্বপ্রভুর পক্ষ হ’তে প্রেরিত রাসূল’। ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে, তার ব্যতিক্রম কিছু না বলার ব্যাপারে আমি দৃঢ়চিত্ত। আমি তোমাদের নিকটে তোমাদের পালনকর্তার নিদর্শন নিয়ে আগমন করেছি। অতএব তুমি বনু ইস্রাঈলগণকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও’ (আ‘রাফ ৭/১০৪-১০৫)।

….‘তুমি বনু ইস্রাঈলদের উপরে নিপীড়ন করো না’। ‘আমরা আল্লাহর নিকট থেকে অহী লাভ করেছি যে, যে ব্যক্তি মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার উপরে আল্লাহর আযাব নেমে আসে’ (ত্বোয়াহা ২০/৪৭-৪৮)।

একথা শুনে ফেরাঊন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলল,

‘মূসা! তোমার পালনকর্তা কে’? ‘মূসা বললেন, আমার পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক বস্ত্তকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন। অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন’। ‘ফেরাঊন বলল, তাহ’লে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কি?’ ‘মূসা বললেন, তাদের খবর আমার প্রভুর কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না এবং বিস্মৃতও হন না’। একথা বলার পর মূসা আল্লাহর নিদর্শন সমূহ বর্ণনা শুরু করলেন, যাতে ফেরাঊন তার যৌক্তিকতা মেনে নিতে বাধ্য হয়। তিনি বললেন, আমার পালনকর্তা তিনি, ‘যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন এবং তাতে চলার পথ সমূহ তৈরী করেছেন। তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তা দ্বারা বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন’। ‘তোমরা তা আহার কর ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুসমূহ চরিয়ে থাক। নিশ্চয়ই এতে বিবেকবানদের জন্য নিদর্শন সমূহ রয়েছে’ (ত্বোয়াহা ২০/৪৯-৫৪)।

মূসার দাওয়াতের পর ফেরাঊনী অবস্থান :

মূসার মো‘জেযা দেখে ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গ দারুণভাবে ভীত হয়ে পড়েছিল। তাই মূসার বিরুদ্ধে তার সম্মুখে আর টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেনি। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে তারা তাদের লোকদের বলতে লাগল যে, ‘লোকটা বিজ্ঞ জাদুকর’। ‘সে তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিতে চায় (অর্থাৎ সে নিজে দেশের শাসক হ’তে চায়), এক্ষণে এ ব্যাপারে তোমাদের মত কি? ‘লোকেরা ফেরাঊনকে বলল, ‘আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দিন এবং শহর ও নগরী সমূহের সর্বত্র খবর পাঠিয়ে দিন লোকদের জমা করার জন্য’। ‘যাতে তারা সকল বিজ্ঞ জাদুকরদের সমবেত করে’ (আ‘রাফ ৭/১০৯-১১২)।

ফেরাঊন মূসা (আঃ)-কে বলল, ‘হে মূসা! তুমি কি তোমার জাদুর জোরে আমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেবার জন্য আগমন করেছ’? ‘তাহ’লে আমরাও তোমার মুকাবিলায় তোমার নিকট অনুরূপ জাদু উপস্থিত করব। অতএব আমাদের ও তোমার মধ্যে কোন একটি উন্মুক্ত প্রান্তরে একটা ওয়াদার দিন ধার্য কর, যার খেলাফ আমরাও করব না, তুমিও করবে না’। ‘মূসা বললেন, ‘তোমাদের ওয়াদার দিন হবে তোমাদের উৎসবের দিন এবং সেদিন পূর্বাহ্নেই লোকজন সমবেত হবে’ (ত্বোয়াহা ২০/৫৭-৫৯)।

ফেরাঊনের জবাবের সার-সংক্ষেপ :

১. অদৃশ্য পালনকর্তা আল্লাহ্কে অস্বীকার করে দৃশ্যমান পালনকর্তা হিসাবে নিজেকেই সর্বোচ্চ পালনকর্তা বলে দাবী করা (নাযে‘আত ৭৯/২৪)।

২. শৈশবে লালন-পালনের দোহাই পেড়ে তাকে পালনকর্তা বলে স্বীকার না করায় উল্টা মূসাকেই ‘কাফির’ বা কৃতঘ্ন বলে আখ্যায়িত করা (শো‘আরা ২৬/১৯)।

৩. পূর্ব পুরুষের কারু কাছে এমন কথা না শোনার বাহানা পেশ করা (ক্বাছাছ ২৮/৩৬)।

৪. আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার কথা অস্বীকার করা (ক্বাছাছ ২৮/৩৮)।

৫. পরকালকে অস্বীকার করা (ক্বাছাছ ২৮/৩৭)।

৬. মূসাকে কারাগারে নিক্ষেপ করার ও হত্যার হুমকি প্রদান করা (শো‘আরা ২৬/২৯; মুমিন/গাফির ৪০/২৬)।

৭. নবুঅতের মু‘জেযাকে অস্বীকার করা এবং একে জাদু বলে অভিহিত করা (ক্বাছাছ ২৮/৩৬)।

৮. মূসার নিঃস্বার্থ দাওয়াতকে রাজনৈতিক স্বার্থ প্রণোদিত বলে অপবাদ দেওয়া (আ‘রাফ ৭/১১০; ত্বোয়াহা ২০/৬৩)।

৯. নিজের কথিত ধর্ম রক্ষা ও নিজেদের রচিত বিধি-বিধান সমূহ রক্ষার দোহাই দিয়ে মূসার বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা (মুমিন/গাফির ৪০/২৬; ত্বোয়াহা ২০/৬৩)।

১০. মূসাকে দেশে ফেৎনা সৃষ্টিকারী বলে দোষারোপ করা (মুমিন/গাফির ৪০/২৬)।

বস্ত্ততঃ এই ধরনের অপবাদসমূহ যুগে যুগে প্রায় সকল নবীকে ও তাঁদের অনুসারী সমাজ সংস্কারক গণকে দেওয়া হয়েছে ।

জাদুকরদের মুকাবিলা

মূসা (আঃ) ও ফেরাঊনের মাঝে জাদু প্রতিযোগিতার দিন ধার্য হবার পর মূসা (আঃ) পয়গম্বর সূলভ দয়া প্রকাশে নেতাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেবেন। যারাই মিথ্যারোপ করে, তারাই বিফল মনোরথ হয়’ (ত্বোয়াহা ২০/৬১)। কিন্তু এতে কোন ফলোদয় হ’ল না। ফেরাঊন উঠে গিয়ে ‘তার সকল কলা-কৌশল জমা করল, অতঃপর উপস্থিত হ’ল’ (ত্বোয়াহা ২০/৬০)। ‘অতঃপর তারা তাদের কাজে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করল এবং গোপনে পরামর্শ করল’। ‘তারা বলল, এই দু’জন লোক নিশ্চিতভাবেই জাদুকর। তারা তাদের জাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করতে চায় এবং আমাদের উৎকৃষ্ট জীবনধারা রহিত করতে চায়’। ‘অতএব (হে জাদুকরগণ!) তোমরা তোমাদের যাবতীয় কলা-কৌশল সংহত কর। অতঃপর সারিবদ্ধভাবে এসো। আজ যে জয়ী হবে, সেই-ই সফলকাম হবে’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৩-৬৪)।

জাদুকররা ফেরাঊনের নিকট সমবেত হয়ে বলল, জাদুকর ব্যক্তিটি কি দিয়ে কাজ করে? সবাই বলল, সাপ দিয়ে। অতএব ‘আমাদের জন্য কি বিশেষ কোন পুরস্কার আছে, যদি আমরা বিজয়ী হই’? ‘সে বলল, হ্যাঁ। তখন অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (আ‘রাফ ৭/১১৩-১১৪)।

জাদুকররা উৎসাহিত হয়ে মূসাকে বলল, ‘হে মূসা! হয় তুমি (তোমার জাদুর লাঠি) নিক্ষেপ কর, না হয় আমরা প্রথমে নিক্ষেপ করি’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৫)। মূসা বললেন, ‘তোমরাই নিক্ষেপ কর। অতঃপর যখন তারা ‘তাদের রশি ও লাঠি নিক্ষেপ করল’ (শো‘আরা ২৬/৪৪), তখন লোকদের চোখগুলিকে ধাঁধিয়ে দিল এবং তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল ও এক মহাজাদু প্রদর্শন করল’ (আ‘রাফ ৭/১১৬)। ‘তাদের জাদুর প্রভাবে মূসার মনে হ’ল যেন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো (সাপের ন্যায়) ছুটাছুটি করছে’। ‘তাতে মূসার মনে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হ’ল’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৬-৬৭)। এমতাবস্থায় আল্লাহ ‘অহি’ নাযিল করে মূসাকে অভয় দিয়ে বললেন,

‘তুমিই বিজয়ী হবে’ ‘তোমার ডান হাতে যা আছে, তা (অর্থাৎ লাঠি) নিক্ষেপ কর। এটা তাদের সবকিছুকে যা তারা করেছে, গ্রাস করে ফেলবে। তাদের ওসব তো জাদুর খেল মাত্র। বস্ত্ততঃ জাদুকর যেখানেই থাকুক সে সফল হবে না’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৮-৬৯)।

জাদুকররা তাদের রশি ও লাঠি সমূহ নিক্ষেপ করার সময় বলল, وَقَالُوْا بِعِزَّةِ فِرْعَوْنَ إِنَّا لَنَحْنُ الْغَالِبُوْنَ- (الشعراء ৪৪)- ‘ফেরাঊনের মর্যাদার শপথ! আমরা অবশ্যই বিজয়ী হব’ (শো‘আরা ২৬/৪৪)। তারপর মূসা (আঃ) আল্লাহর নামে লাঠি নিক্ষেপ করলেন। দেখা গেল তা বিরাট অজগর সাপের ন্যায় রূপ ধারণ করল এবং জাদুকরদের সমস্ত অলীক কীর্তিগুলোকে গ্রাস করতে লাগল’ (শো‘আরা ২৬/৪৫)।

এদৃশ্য দেখে মসহুর জাদুকরগণ বুঝে নিল যে, হযরত মূসার এ জাদু আসলে জাদু নয়। কেননা জাদুর সর্বোচ্চ বিদ্যা তাদের কাছেই রয়েছে। মূসা তাদের চেয়ে বড় জাদুকর হ’লে এতদিন তার নাম শোনা যেত। তার উস্তাদের খবর জানা যেত। তাছাড়া তার যৌবনকাল অবধি সে আমাদের কাছেই ছিল। কখনোই তাকে জাদু শিখতে বা জাদু খেলা দেখাতে বা জাদুর প্রতি কোনরূপ আকর্ষণও তার মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। তার পরিবারেও কোন জাদুকর নেই। তার বড় ভাই হারূণ তো সর্বদা আমাদের মাঝেই দিনাতিপাত করেছে। কখনোই তাকে এসব করতে দেখা যায়নি বা তার মুখে এখনকার মত বক্তব্য শোনা যায়নি। হঠাৎ করে কেউ বিশ্বসেরা জাদুকর হয়ে যেতে পারে না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে অলৌকিক কোন সত্তার নিদর্শন রয়েছে, যা আয়ত্ত করা মানুষের ক্ষমতার বাইরে। এ সময় মূসার দেওয়া তাওহীদের দাওয়াত ও আল্লাহর গযবের ভীতি তাদের অন্তরে প্রভাব বিস্তার করল। আল্লাহ বলেন, َ‘অতঃপর সত্য প্রতিষ্ঠিত হ’ল এবং বাতিল হয়ে গেল তাদের সমস্ত জাদুকর্ম’। ‘এভাবে তারা সেখানেই পরাজিত হ’ল এবং লজ্জিত হয়ে ফিরে গেল’ (আ‘রাফ ৭/১১৮-১১৯)। অতঃপর ‘তারা সিজদায় পড়ে গেল’। এবং ‘বলে উঠল, আমরা বিশ্বচরাচরের পালনকর্তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করলাম, যিনি মূসা ও হারূণের রব’ (শো‘আরা ২৬/৪৬-৪৮; ত্বোয়াহা ২০/৭০; আ‘রাফ ৭/১২০-১২১)।

পরাজয়ের এ দৃশ্য দেখে ভীত-বিহবল ফেরাঊন নিজেকে সামলে নিয়ে উপস্থিত লাখো জনতার মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য জাদুকরদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, ‘আমার অনুমতি দানের পূর্বেই তোমরা তাকে মেনে নিলে? নিশ্চয়ই সে (অর্থাৎ মূসা) তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে’ (ত্বোয়াহা ২০/৭১; আ‘রাফ ৭/১২৩; শো‘আরা ২৬/৪৯)। অতঃপর সম্রাট সূলভ হুমকি দিয়ে বলল, ‘শীঘ্রই তোমরা তোমাদের পরিণাম ফল জানতে পারবে। আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব’ (শো‘আরা ২৬/৪৯)। জবাবে জাদুকররা বলল, ‘কোন ক্ষতি নেই। আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করব’(৫০)। ‘আশা করি আমাদের পালনকর্তা আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি সমূহ ক্ষমা করবেন’ (শো‘আরা ২৬/৪৯-৫১; ত্বোয়াহা ২০/৭১-৭৩; আ‘রাফ ৭/১২৪-১২৬)।

ফেরাঊনের ছয়টি কুটচাল :

জাদুকরদের পরাজয়ের পর ফেরাঊন তার রাজনৈতিক কুটচালের মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দিতে চাইল। তার চালগুলি ছিল, (১) সে বলল: এই জাদুকররা সবাই মূসার শিষ্য। তারা চক্রান্ত করেই তার কাছে নতি স্বীকার করেছে। এটা একটা পাতানো খেলা মাত্র। আসলে ‘মূসাই হ’ল বড় জাদুকর’ (ত্বোয়াহা ২০/৭১)। (২) সে বলল, মূসা তার জাদুর মাধ্যমে ‘নগরীর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দিতে চায়’ (আ‘রাফ ৭/১১০) এবং মূসা ও তার সম্প্রদায় এদেশে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। (৩) সে বলল মূসা যেসব কথা বলছে ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সেসব কথা কখনো শুনিনি’ (ক্বাছাছ ২৮/৩৬)। (৪) সে বলল, হে জনগণ! এ লোকটি তোমাদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেবে ও দেশময় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে’ (মুমিন/গাফের ৪০/২৬)। (৫) সে বলল, মূসা তোমাদের উৎকৃষ্ট (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক) জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়’ (ত্বোয়াহা ২০/৬৩)। (৬) সে মিসরীয় জনগণকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দিয়েছিল (ক্বাছাছ ২৮/৪) এবং একটির দ্বারা অপরটিকে দুর্বল করার মাধ্যমে নিজের শাসন ও শোষণ অব্যাহত রেখেছিল। আজকের বহুদলীয় গণতন্ত্র বা দলতন্ত্র ফেলে আসা ফেরাঊনী তন্ত্রের আধুনিক রূপ বলেই মনে হয়। নিজেই সবকিছু করলেও লোকদের খুশী করার জন্য ফেরাঊন বলল, فَمَاذَا تَأْمُرُونَ ‘অতএব হে জনগণ! তোমরা এখন কি বলতে চাও’? (শো‘আরা ২৬/৩৫; আ‘রাফ ৭/১১০)।

ফেরাঊনী কুটনীতির আপাতঃ বিজয় ও জনগণের সমর্থন লাভ :
সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় যে সবসময় সঠিক হয় না বরং তা আল্লাহর পথ হ’তে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তার বড় প্রমাণ হ’ল ফেরাঊনী কুটনীতির বিজয় ও হযরত মূসা (আঃ)-এর আপাত পরাজয়। ফেরাঊনের ভাষণে উত্তেজিত জনগণের পক্ষে নেতারা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো, হে সম্রাট!

‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে এমনিই ছেড়ে দেবেন দেশময় ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যদেরকে বাতিল করে দেবার জন্য’ (আ‘রাফ ৭/১২৭)।

জাদুকরদের সত্য গ্রহণ :

ধূর্ত ও কুটবুদ্ধি ফেরাঊন বুঝলো যে, তার ঔষধ কাজে লেগেছে। এখুনি মোক্ষম সময়। সে সাথে সাথে জাদুকরদের হাত-পা বিপরীতভাবে কেটে অতঃপর খেজুর গাছের সাথে শূলে চড়িয়ে হত্যা করার আদেশ দিল। সে ভেবেছিল, এতে জাদুকররা ভীত হয়ে তার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবে। কিন্তু ফল উল্টা হ’ল। তারা একবাক্যে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিল,

‘আমরা তোমাকে ঐসব সুস্পষ্ট নিদর্শন (ও মু‘জেযার) উপরে প্রাধান্য দিতে পারি না, যেগুলো (মূসার মাধ্যমে) আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং প্রধান্য দিতে পারি না তোমাকে সেই সত্তার উপরে যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতএব তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তুমি তো কেবল এই পার্থিব জীবনেই যা করার করবে’(৭২)। ‘আমরা আমাদের পালনকর্তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করেছি, যাতে তিনি আমাদের পাপসমূহ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছ, (তার পাপসমূহ) তা মার্জনা করেন। আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী’ (ত্বোয়াহা ২০/৭২-৭৩)।

তারা আরও বলল,

‘আমরা (তো মৃত্যুর পরে) আমাদের পরওয়ারদিগারের নিকটে ফিরে যাব’। ‘বস্ত্ততঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো কেবল একারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পালনকর্তার নিদর্শন সমূহের প্রতি, যখন তা আমাদের নিকটে পৌঁছেছে। অতএব ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য ধৈর্যের দুয়ার খুলে দাও এবং আমাদেরকে ‘মুসলিম’ হিসাবে মৃত্যু দান কর’ (আ‘রাফ ৭/১২৫-১২৬)।

জাদুকরদের মুসলমান হয়ে যাবার অন্যতম কারণ ছিল মুকাবিলার পূর্বে ফেরাঊন ও তার জাদুকরদের উদ্দেশ্যে হযরত মূসা (আঃ)-এর প্রদত্ত উপদেশমূলক ভাষণ। যেখানে তিনি বলেছিলেন,

‘দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করো না। তাহ’লে তিনি তোমাদেরকে আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেবেন। বস্ত্ততঃ তারাই বিফল মনোরথ হয়, যারা মিথ্যারোপ করে’ (ত্বোয়াহা ২০/৬১)।

মূসার মুখে একথা শুনে ফেরাঊন ও তার সভাসদরা অহংকারে স্ফীত হ’লেও জাদুকর ও সাধারণ জনগণের মধ্যে দারুণ প্রতিক্রিয়া হয়। ফলে জাদুকরদের মধ্যে গ্রুপিং হয়ে যায় এবং তারা আপোষে বিতর্কে লিপ্ত হয়। যদিও গোপন আলোচনার ভিত্তিতে সম্ভবতঃ রাজকীয় সম্মান ও বিরাট অংকের পুরস্কারের লোভে পরিশেষে তারা একমত হয়।

জাদুরকদের পরিণতি :

জাদুকরদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল কি-না, সে বিষয়ে কুরআনে স্পষ্টভাবে কিছু বলা না হ’লেও ত্বোয়াহা ৭২ হ’তে ৭৬ পর্যন্ত বর্ণিত আয়াত সমূহের বাকভঙ্গিতে বুঝা যায় যে, তা তৎক্ষণাৎ কার্যকর হয়েছিল। কেননা নিষ্ঠুরতার প্রতীক ফেরাঊনের দর্পিত ঘোষণার জবাবে দৃঢ়চিত্ত ঈমানদার জাদুকরদের মুখ দিয়ে যে কথাগুলো বের হয়েছিল, তা সকল ভয় ও দ্বিধা-সংকোচের ঊর্ধ্বে উঠে কেবলমাত্র মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মুখেই শোভা পায়। সেকারণ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস, উবায়েদ ইবনু উমায়ের ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, أَصْبَحُوْا سَحَرَةً وَأَمْسَوْا شُهَدَاءَ ‘যারা সকালে জাদুকর ছিল, তারা সন্ধ্যায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করল’। মূলতঃ এটাই হ’ল প্রকৃত মা‘রেফাত, যা যেকোন ভয়-ভীতির মুকাবিলায় মুমিনকে দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় অবিচল রাখে আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্বেষায়।

জনগণের প্রতিক্রিয়া :

আল্লাহ বলেন,

‘ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গের নির্যাতনের ভয়ে তার সম্প্রদায়ের কিছু লোক ব্যতীত কেউ তার প্রতি ঈমান আনেনি। আর ফেরাঊন তার দেশে ছিল পরাক্রান্ত এবং সে ছিল সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (ইউনুস ১০/৮৩)। এতে বুঝা যায় যে, ক্বিবতীদের মধ্যে গোপনে ঈমান আনয়নকারীর সংখ্যা বেশী থাকলেও প্রকাশ্যে ঈমান আনয়নকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম ছিল।

উল্লেখ্য যে, অত্র আয়াতে ‘তার কওমের কিছু লোক ব্যতীত’ (إِلاَّ ذُرِّيَّةَّ مِّنْ قّوْمِهِ) বলতে ইবনু আববাস (রাঃ) ‘ফেরাঊনের কওমের কিছু লোক’ বলেছেন। কিন্তু ইবনু জারীর ও অনেক বিদ্বান মূসার নিজ কওম ‘বনু ইস্রাঈলের কিছু লোক’ বলেছেন। এর জবাবে হাফেয ইবনু কাছীর বলেন, এটা প্রসিদ্ধ কথা যে, বনু ইস্রাঈলের সকলেই মূসাকে নবী হিসাবে বিশ্বাস করত একমাত্র ক্বারূণ ব্যতীত। কেননা সে ছিল বিদ্রোহী এবং ফেরাঊনের সাথী। আর হযরত মূসা (আঃ)-এর কারণেই বনু ইস্রাঈলগণ হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্মের আগে ও পরে সমানভাবে নির্যাতিত ছিল (আ‘রাফ ৭/১২৯)। অতএব অত্র আয়াতে যে মুষ্টিমেয় লোকের ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে, তারা নিশ্চিতভাবেই ছিলেন ক্বিবতী সম্প্রদায়ের। আর তারা ছিলেন, ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া, ফেরাঊনের চাচাতো ভাই জনৈক মুমিন ব্যক্তি যিনি তার ঈমান গোপন রেখেছিলেন এবং ফেরাঊনের খাজাঞ্চি ও তার স্ত্রী। যেকথা ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন।

ফেরাঊনের স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া :

জাদুকরদের সঙ্গে মুকাবিলা তথা সত্য ও মিথ্যার এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় ফেরাঊনের নেককার স্ত্রী ও মূসার পালক মাতা (أمه البديلة) ‘আসিয়া’ উক্ত মুকাবিলার শুভ ফলাফলের জন্য সদা উদগ্রীব ছিলেন। যখন তাঁকে মূসা ও হারূণের বিজয়ের সংবাদ শোনানো হ’ল, তখন তিনি কালবিলম্ব না করে বলে ওঠেন, آمَنْتُ بِرَبِّ مُوْسَى وَ هَارُوْنَ ‘আমি মূসা ও হারূণের পালনকর্তার উপরে ঈমান আনলাম’। নিজ স্ত্রীর ঈমানের এ খবর শুনে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ফেরাঊন তাকে মর্মান্তিকভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। মৃত্যুর পূর্বে বিবি আসিয়া কাতর কণ্ঠে স্বীয় প্রভুর নিকটে প্রার্থনা করেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘আল্লাহ ঈমানদারগণের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন ফেরাঊনের স্ত্রীর, যখন সে বলেছিল, ‘হে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ কর! আমাকে ফেরাঊন ও তার পারিষদবর্গের হাত থেকে উদ্ধার কর এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দাও’ (তাহরীম ৬৬/১১)।

বনু ইস্রাঈলদের উপরে আপতিত ফেরাঊনী যুলুম সমূহ :

জাদুর পরীক্ষায় পরাজিত ফেরাঊনের যাবতীয় আক্রোশ গিয়ে পড়ল এবার নিরীহ বনু ইস্রাঈলগণের উপর। জাদুকরদের ঈমান আনয়ন, অতঃপর তাদের মৃত্যুদন্ড প্রদান, বিবি আসিয়ার ঈমান আনয়ন ও তাঁকে মৃত্যুদন্ড প্রদান ইত্যাদি নিষ্ঠুর দমন নীতির মাধ্যমে এবং অত্যন্ত নোংরা কুটচাল ও মিথ্যা অপবাদ সমূহের মাধ্যমে মূসার ঈমানী আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল ফেরাঊন। কিন্তু এর ফলে জনগণের মধ্যে মূসার দাওয়াত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে ফেরাঊন ও তার অহংকারী পারিষদবর্গ নতুনভাবে দমন নীতির কৌশলপত্র প্রণয়ন করল। তারা নিজেরা বিধর্মী হ’লেও সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করল। অন্যদিকে ‘বিভক্ত কর ও শাসন কর’-এই কুটনীতির অনুসরণে ফেরাঊনের ক্বিবতী সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে কেবল বনু ইস্রাঈলদের উপরে চূড়ান্ত যুলুম ও নির্যাতনের পরিকল্পনা করল।

১ম যুলুমঃ বনু ইস্রাঈলের নবজাতক পুত্রসন্তানদের হত্যার নির্দেশ জারি :

ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের নেতারা ইতিপূর্বে ফেরাঊনকে বলেছিল, ‘আপনি কি মূসা ও তার সম্প্রদায়কে এমনি ছেড়ে দিবেন দেশময় ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য এবং আপনাকে ও আপনার উপাস্যদেরকে বাতিল করে দেবার জন্য? (আ‘রাফ ৭/১২৭)। নেতারা মূসা ও হারূণের ঈমানী দাওয়াতকে ‘ফাসাদ’ বলে অভিহিত করেছিল। এক্ষণে দেশময় মূসার দাওয়াতের ব্যাপক প্রসার বন্ধ করার জন্য এবং ফেরাঊনের নিজ সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকদের ব্যাপকহারে মূসার দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার স্রোত বন্ধ করার জন্য নিজেদের লোকদের কিছু না বলে নিরীহ বনু ইস্রাঈলদের উপরে অত্যাচার শুরু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ফেরাঊন বলল, ‘আমি এখুনি টুকরা টুকরা করে হত্যা করব ওদের পুত্র সন্তানদেরকে এবং বাঁচিয়ে রাখব ওদের কন্যা সন্তানদেরকে। আর আমরা তো ওদের উপরে (সবদিক দিয়েই) প্রবল’ (আ‘রাফ ৭/১২৭)। এভাবে মূসার জন্মকালে বনু ইস্রাঈলের সকল নবজাতক পুত্র হত্যা করার সেই ফেলে আসা লোমহর্ষক নির্যাতনের পুনরাবৃত্তির ঘোষণা প্রদান করা হ’ল।

দল ঠিক রাখার জন্য এবং সম্প্রদায়ের নেতাদের রোষাগ্নি প্রশমনের জন্য ফেরাঊন অনুরূপ ঘোষণা দিলেও হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণ (আঃ) সম্পর্কে তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয়নি। যদিও ইতিপূর্বে সে মূসাকে কারারুদ্ধ করার এমনকি হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল (শো‘আরা ২৬/২৯; মুমিন ৪০/২৬)। কিন্তু জাদুকরদের পরাজয়ের পর এবং নিজে মূসার সর্পরূপী লাঠির মু‘জেযা দেখে ভীত বিহবল হয়ে পড়ার পর থেকে মূসার দিকে তাকানোর মত সাহসও তার ছিল না।

যাই হোক ফেরাঊনের উক্ত নিষ্ঠুর ঘোষণা জারি হওয়ার পর বনু ইস্রাঈলগণ মূসার নিকটে এসে অনুযোগের সুরে বলল, ‘তোমার আগমনের পূর্বেও আমাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে। আবার এখন তোমার আগমনের পরেও তাই করা হচ্ছে’ (আ‘রাফ ৭/১২৯)। অর্থাৎ তোমার আগমনের পূর্বে তো এ আশায় আমাদের দিন কাটত যে, সত্বর আমাদের উদ্ধারের জন্য একজন নবীর আগমন ঘটবে। অথচ এখন তোমার আগমনের পরেও সেই একই নির্যাতনের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তাহ’লে এখন আমাদের উপায় কি?

আসন্ন বিপদের আশংকায় ভীত-সন্ত্রস্ত কওমের লোকদের সান্ত্বনা দিয়ে হযরত মূসা (আঃ) বললেন, ‘তোমাদের পালনকর্তা শীঘ্রই তোমাদের শত্রুদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দেশে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর’ (আ‘রাফ ৭/১২৯)। তিনি বললেন, ‘তোমরা সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকটে এবং ধৈর্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন। বস্ত্ততঃ চূড়ান্ত পরিণাম ফল আল্লাহভীরুদের জন্যই নির্ধারিত’ (আ‘রাফ ৭/১২৮)।

মূসা (আঃ) তাদেরকে আরও বলেন,

‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যদি আল্লাহর উপরে ঈমান এনে থাক, তবে তাঁরই উপরে ভরসা কর যদি তোমরা আনুগত্যশীল হয়ে থাক’। জবাবে তারা বলল, আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের উপরে এ যালেম কওমের শক্তি পরীক্ষা করো না’। ‘আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে কাফের সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দাও’ (ইউনুস ১০/৮৪-৮৬)।

ফেরাঊন কর্তৃক ইবাদতগৃহ সমূহ ধ্বংস করা :

পুত্র শিশু হত্যাকান্ডের ব্যাপক যুলুমের সাথে সাথে ফেরাঊন বনু ইস্রাঈলদের ইবাদতগৃহ সমূহ ধ্বংস করার নির্দেশ দেয়। বনু ইস্রাঈলদের ধর্মীয় বিধান ছিল এই যে, তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে উপাসনালয়ে গিয়ে উপাসনা করতে হ’ত। এক্ষণে সেগুলি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়ায় বনু ইস্রাঈলগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ সময় মূসা ও হারূণের প্রতি আল্লাহ পাক নিম্নোক্ত নির্দেশ পাঠান-

‘আর আমরা নির্দেশ পাঠালাম মূসা ও তার ভাইয়ের প্রতি যে, তোমরা তোমাদের সম্প্রদায়ের জন্য মিসরের মাটিতে বাসস্থান নির্ধারণ কর এবং তোমাদের ঘরগুলিকে কিবলামুখী করে তৈরী কর ও সেখানে ছালাত কায়েম কর এবং মুমিনদের সুসংবাদ দাও’।(ইউনুস ১০/৮৭)।

বলা বাহুল্য যে, উপরোক্ত বিধান নাযিলের ফলে বনু ইস্রাঈলগণ স্ব স্ব ঘরেই ছালাত আদায়ের সুযোগ লাভ করে। (টীকা: অতএব উপাসনালয় ধ্বংস করা ফেরাঊনী কাজ)।

ফেরাঊনের বিরুদ্ধে মূসার বদ দো‘আ :

‘মূসা বলল, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি ফেরাঊনকে ও তার সর্দারদেরকে পার্থিব আড়ম্বর সমূহ ও সম্পদরাজি দান করেছ, যা দিয়ে তারা লোকদেরকে তোমার রাস্তা থেকে বিপথগামী করে। অতএব হে আমাদের প্রভু! তুমি তাদের সম্পদরাজি ধ্বংস করে দাও ও তাদের অন্তরগুলিকে শক্ত করে দাও, যাতে তারা অতক্ষণ পর্যন্ত ঈমান না আনে, যতক্ষণ না তারা মর্মান্তিক আযাব প্রত্যক্ষ করে’(৮৮)। জবাবে আল্লাহ বললেন, তোমাদের দো‘আ কবুল হয়েছে। অতএব তোমরা দু’জন অটল থাক এবং অবশ্যই তোমরা তাদের পথে চলো না, যারা জানে না’ (ইউনুস ১০/৮৮-৮৯)।

হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণ (আঃ)-এর উপরোক্ত দো‘আ আল্লাহ কবুল করলেন। কিন্তু তার বাস্তবায়ন সঙ্গে সঙ্গে করলেন না। বরং সময় নিলেন অন্যূন বিশ বছর। এরূপ প্রলম্বিত কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহ মাযলূমের ধৈর্য পরীক্ষার সাথে সাথে যালেমেরও পরীক্ষা নিয়ে থাকেন এবং তাদের তওবা করার ও হেদায়াত প্রাপ্তির সুযোগ দেন। যাতে পরে তাদের জন্য ওযর পেশ করার কোন সুযোগ না থাকে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَلَوْ يَشَاءُ اللهُ لاَنتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের কতককে কতকের দ্বারা পরীক্ষা করতে চান’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৪)।

ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের উপরে আপতিত গযব সমূহ এবং মূসা (আঃ)-এর মু‘জেযা সমূহ :

ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী ফেরাঊনের জাদুকরদের সাথে শক্তি পরীক্ষার ঘটনার পর মূসা (আঃ) অন্যূন বিশ বছর যাবত মিসরে অবস্থান করে সেখানকার অধিবাসীদেরকে আল্লাহর বাণী শোনান এবং সত্য ও সরল পথের দিকে দাওয়াত দিতে থাকেন। এ সময়কালের মধ্যে আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে প্রধান ৯টি মু‘জেযা দান করেন। তবে প্লেগ মহামারী সহ (আ‘রাফ ৭/১৩৪)। মোট নিদর্শনের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০টি। যার মধ্যে প্রথম দু’টি শ্রেষ্ঠ মু‘জেযা ছিল অলৌকিক লাঠি ও আলোকময় হস্ততালু। যার পরীক্ষা শুরুতেই ফেরাঊনের দরবারে এবং পরে জাদুকরদের সম্মুখে হয়ে গিয়েছিল। এরপর বাকীগুলি এসেছিল ফেরাঊনী কওমের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে তাদেরকে সাবধান করার জন্য। মূলতঃ দুনিয়াতে প্রেরিত সকল এলাহী গযবের মূল উদ্দেশ্য থাকে মানুষের হেদায়াত। যেমন আল্লাহ বলেন, – ‘কাফির ও ফাসিকদেরকে (জাহান্নামের) কঠিন শাস্তির পূর্বে (দুনিয়াতে) আমরা অবশ্যই লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা (আমার দিকে) ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)।

মযলূম বনু ইস্রাঈলদের কাতর প্রার্থনা এবং হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণ (আঃ)-এর দো‘আ আল্লাহ কবুল করেছিলেন। সেমতে সর্বপ্রথম অহংকারী ফেরাঊনী কওমের দুনিয়াবী জৌলুস ও সম্পদরাজি ধ্বংসের গযব নেমে আসে। তারপর আসে অন্যান্য গযব বা নিদর্শন সমূহ। আমরা সেগুলি একে একে বর্ণনা করার প্রয়াস পাব।
মোট নিদর্শন সমূহ, যা মিসরে প্রদর্শিত হয়-

(১) লাঠি (২) প্রদীপ্ত হস্ততালু (৩) দুর্ভিক্ষ (৪) তূফান (৫) পঙ্গপাল (৬) উকুন (৭) ব্যাঙ (৮) রক্ত (৯) প্লেগ (১০) সাগরডুবি। প্রথম দু’টি এবং মূসার ব্যক্তিগত তোতলামি দূর হওয়াটা বাদ দিয়ে বাকী ৮টি নিদর্শন নিম্নে বর্ণিত হ’ল-

১ম নিদর্শন : দুর্ভিক্ষ
মূসা (আঃ)-এর দো‘আ কবুল হওয়ার পর ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের উপরে প্রথম নিদর্শন হিসাবে দুর্ভিক্ষের গযব নেমে আসে। যেমন আল্লাহ বলেন, – ‘তারপর আমরা পাকড়াও করলাম ফেরাঊনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে, যাতে তারা উপদেশ হাছিল করে’ (আ‘রাফ ৭/১৩০)।

নিরীহ বনু ইস্রাঈলগণের উপরে দুর্ধর্ষ ফেরাঊনী যুলুম প্রতিরোধে এটা ছিল মযলূমদের সমর্থনে আল্লাহ প্রেরিত প্রথম হুঁশিয়ারী সংকেত। এর ফলে তাদের ক্ষেতের ফসল ও বাগ-বাগিচার উৎপাদন চরমভাবে হরাস পেয়েছিল। খাদ্যাভাবে তাদের মধ্যে হাহাকার পড়ে যায়। ফলে কোন উপায়ান্তর না দেখে ফেরাঊনী সম্প্রদায়ের নেতারা মূসা (আঃ)-এর কাছে এসে কাকুতি-মিনতি করতে থাকে। দয়ার্দ্রচিত্ত মূসা (আঃ) অবশেষে দো‘আ করলেন। ফলে দুর্ভিক্ষ রহিত হয়ে গেল এবং তাদের বাগ-বাগিচা ও মাঠ-ময়দান পুনরায় ফল-ফসলে ভরে উঠলো। কিন্তু ফেরাঊনী সম্প্রদায় এতে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে বরং অহংকারে স্ফীত হয়ে খোদ মূসাকেই দায়ী করে তাঁকে ‘অলক্ষুণে-অপয়া’ বলে গালি দেয় এবং উদ্ধতভাবে বলে ওঠে যে, ‘আমাদের উপরে জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন, আমরা তোমার উপরে কোন মতেই ঈমান আনব না’ (আ‘রাফ ৭/১৩২)। আল্লাহ বলেন,

‘অতঃপর আমরা তাদের উপরে পাঠিয়ে দিলাম তূফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ, রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পরে এক। তারপরেও তারা অহংকার করতে থাকল। বস্ত্ততঃ তারা ছিল পাপী সম্প্রদায়’ (আ‘রাফ ৭/১৩৩)। অত্র আয়াতে দুর্ভিক্ষের পরে পরপর পাঁচটি গযব নাযিলের কথা বলা হয়েছে। তারপর আসে প্লেগ মহামারী ও অন্যান্য ছোট-বড় আযাব’ (আ‘রাফ ৭/১৩৪)। এরপরে সর্বশেষ গযব হ’ল সাগরডুবি’ (ইউনুস ১০/৯০)। যার মাধ্যমে এই গর্বিত অহংকারীদের একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-এর তাফসীর অনুযায়ী آيَاتٌ مُفَصَّلاَتٌ বা ‘একের পর এক আগত নিদর্শনসমূহ’ অর্থ হ’ল, এগুলোর প্রত্যেকটি আযাবই নির্ধারিত সময় পর্যন্ত থেকে রহিত হয়ে যায় এবং কিছু দিন বিরতির পর অন্যান্য আযাবগুলি আসে’। ফেরাঊন সম্প্রদায়ের সুবিধাবাদী চরিত্র ফুটে ওঠে নিম্নোক্ত বর্ণনায়। যেমন আল্লাহ বলেন,

‘আর যখন তাদের উপর কোন আযাব পতিত হ’ত, তখন তারা বলত, হে মূসা! তুমি আমাদের জন্য তোমার প্রভুর নিকট দো‘আ কর, যা (কবুলের) ওয়াদা তিনি তোমাকে দিয়েছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এ আযাব দূর করে দাও, তাহ’লে অবশ্যই আমরা তোমার উপর ঈমান আনব এবং তোমার সাথে বনু ইস্রাঈলদের অবশ্যই পাঠিয়ে দেব’। ‘অতঃপর যখন আমরা তাদের উপর থেকে আযাব উঠিয়ে নিতাম নির্দিষ্ট একটা সময়ে, যে পর্যন্ত তাদের পৌঁছানো উদ্দেশ্য হ’ত, তখন তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত’ (আ‘রাফ ৭/১৩৪-৩৫)। এই নির্ধারিত সময়ের মেয়াদ কত ছিল, সে বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে, যার প্রায় সবই ধারণা প্রসূত। অতএব আমরা তা থেকে বিরত রইলাম।

এ ব্যাপারে কুরআনে একটি মৌলিক বক্তব্য এসেছে এভাবে যে,

‘যখন তাদের শুভদিন ফিরে আসত, তখন তারা বলত যে, এটাই আমাদের জন্য উপযুক্ত। পক্ষান্তরে অকল্যাণ উপস্থিত হ’লে তারা মূসা ও তার সাথীদের ‘অলক্ষুণে’ বলে অভিহিত করত। জেনে রাখ যে, তাদের অলক্ষুণে চরিত্র আল্লাহর ইলমে রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা জানে না’ (আ‘রাফ ৭/১৩১)। এতে বুঝা যায় যে, একটা গযব শেষ হওয়ার পর শুভদিন আসতে এবং পিছনের ভয়াবহ দুর্দশার কথা ভুলতে ও পুনরায় গর্বে স্ফীত হ’তে নিশ্চয়ই বেশ দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হ’ত। আমরা পূর্বেই ঐতিহাসিক বর্ণনায় জেনেছি যে, জাদুকরদের সাথে পরীক্ষার পর মূসা (আঃ) বিশ বছরের মত মিসরে ছিলেন। তারপরে সাগর ডুবির গযব নাযিল হয়। অতএব জাদুকরদের সাথে মুকাবিলার পর হ’তে সাগর ডুবি পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ সহ আয়াতে বর্ণিত আটটি গযব নাযিল হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়।

২য় নিদর্শন : তূফান
দুর্ভিক্ষের পরে মূসা (আঃ)-এর দো‘আর বরকতে পুনরায় ভরা মাঠ ও ভরা ফসল পেয়ে ফেরাঊনী সম্প্রদায় পিছনের সব কথা ভুলে যায় ও গর্বে স্ফীত হয়ে মূসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে অপবাদ রটাতে থাকে। তারা সাধারণ লোকদের ঈমান গ্রহণে বাধা দিতে থাকে। তারা তাদের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে পুনরায় ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে থাকে। ফলে তাদের উপরে গযব আকারে প্লাবন ও জলোচ্ছ্বাস নেমে আসে। যা তাদের মাঠ-ঘাট, বাগান-ফসল, ঘর-বাড়ি সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে ভীত হয়ে তারা আবার মূসা (আঃ)-এর কাছে এসে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আবার তারা ঈমান আনার প্রতিজ্ঞা করে ও আল্লাহর নিকটে দো‘আ করার জন্য মূসা (আঃ)-কে পীড়াপীড়ি করতে থাকে। ফলে মূসা (আঃ) দো‘আ করেন ও আল্লাহর রহমতে তূফান চলে যায়। পুনরায় তারা জমি-জমা আবাদ করে ও অচিরেই তা সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে। এ দৃশ্য দেখে তারা আবার অহংকারী হয়ে ওঠে এবং বলতে থাকে, আসলে আমাদের জমির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যেই প্লাবন এসেছিল, আর সেকারণেই আমাদের ফসল এবার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ও বাম্পার ফলন হয়েছে। আসলে আমাদের কর্ম দক্ষতার ফল হিসাবে এটাই উপযুক্ত। এভাবে তারা অহংকারে মত্ত হয়ে আবার শুরু করল বনী ইস্রাঈলদের উপরে যুলুম-অত্যাচার। ফলে নেমে এল তৃতীয় গযব।

৩য় নিদর্শন : পঙ্গপাল

একদিন হঠাৎ হাযার হাযার পঙ্গপাল কোত্থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে ফেরাঊনীদের সব ফসল খেয়ে ছাফ করে গেল। তারা তাদের বাগ-বাগিচার ফল-ফলাদি খেয়ে সাবাড় করে ফেলল। এমনকি কাঠের দরজা-জানালা, আসবাব-পত্র পর্যন্ত খেয়ে শেষ করল। অথচ পাশাপাশি বনু ইস্রাঈলদের ঘরবাড়ি, শস্যভূমি ও বাগ-বাগিচা সবই সুরক্ষিত থাকে।

এবারও ফেরাঊনী সম্প্রদায় ছুটে এসে মূসা (আঃ)-এর কাছে কাতর কণ্ঠে নিবেদন করতে থাকে, যাতে গযব চলে যায়। তারা এবার পাকা ওয়াদা করল যে, তারা ঈমান আনবে ও বনু ইস্রাঈলদের মুক্তি দেবে। মূসা (আঃ) দো‘আ করলেন ও আযাব চলে গেল। পরে ফেরাঊনীরা দেখল যে, পঙ্গপালে খেয়ে গেলেও এখনও যা অবশিষ্ট আছে, তা দিয়ে বেশ কিছুদিন চলে যাবে। ফলে তারা আবার শয়তানী ধোঁকায় পড়ে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করল ও পূর্বের ন্যায় ঔদ্ধত্য প্রদর্শন শুরু করল। ফলে নেমে এল পরবর্তী গযব ‘উকুন’।

৪র্থ নিদর্শন : উকুন

‘উকুন’ সাধারণতঃ মানুষের মাথার চুলে জন্মে থাকে। তবে এখানে ব্যাপক অর্থে ঘুণ পোকা ও কেড়ি পোকাকেও গণ্য করা হয়েছে। যা ফেরাঊনীদের সকল প্রকার কাঠের খুঁটি, দরজা-জানালা, খাট-পালংক ও আসবাব-পত্রে এবং খাদ্য-শস্যে লেগেছিল। তাছাড়া দেহের সর্বত্র সর্বদা উকুনের কামড়ে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো। এভাবে উকুন ও ঘুণপোকার অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে এক সময় তারা কাঁদতে কাঁদতে মূসা (আঃ)-এর দরবারে এসে লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা চাইতে লাগলো এবং প্রতিজ্ঞার পরে প্রতিজ্ঞা করে বলতে লাগলো যে, এবারে আযাব ফিরে গেলে তারা অবশ্যই ঈমান আনবে, তাতে বিন্দুমাত্র অন্যথা হবে না। মূসা (আঃ) তাদের জন্য দো‘আ করলেন এবং আযাব চলে গেল। কিন্তু তারা কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করল এবং পূর্বের ন্যায় অবাধ্য আচরণ শুরু করল। আল্লাহর পক্ষ থেকে বারবার অবকাশ দেওয়াকে তারা তাদের ভালত্বের পক্ষে দলীল হিসাবে মনে করতে লাগল এবং হেদায়াত দূরে থাক, তাদের অহংকার ক্রমে বাড়তে লাগল। মূলতঃ এগুলো ছিল তাদের নেতৃস্থানীয় লোকদের অবস্থা। নইলে সাধারণ মানুষ হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূণ (আঃ) দাওয়াত অন্তরে কবুল করে যাচ্ছিল এবং তাদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আর এতেই ছিল মূসা (আঃ)-এর সান্ত্বনা। আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমরা কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন সেখানকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে উদ্বুদ্ধ করি। অতঃপর তারা পাপাচারে লিপ্ত হয়। ফলে উক্ত জনগোষ্ঠীর উপরে আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমরা উক্ত জনপদকে সমূলে বিধ্বস্ত করি’ (ইসরা ১৭/১৬)। ফেরাঊনীদের উপরে সেই অবস্থা এসে গিয়েছিল। তাদের নেতারা স্বাভাবিক বুদ্ধি-বিবেচনা হারিয়ে ফেলেছিল। তারা তাদের লোকদের বুঝাতে লাগলো যে, এসবই মূসার জাদুর খেল। আসলে আল্লাহ বলে কিছুই নেই। ফলে নেমে এল এবার ‘ব্যাঙ’-এর গযব।

৫ম নিদর্শন : ব্যাঙ
বারবার বিদ্রোহ করা সত্ত্বেও দয়ালু আল্লাহ তাদের সাবধান করার জন্য ও আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য পুনরায় গযব পাঠালেন। এবার এল ব্যাঙ। ব্যাঙে ব্যাঙে ভরে গেল তাদের ঘর-বাড়ি, হাড়ি-পাতিল, জামা-কাপড়, বিছানা-পত্তর সবকিছু। বসতে ব্যাঙ, খেতে ব্যাঙ, চলতে ব্যাঙ, গায়ে-মাথায় সর্বত্র ব্যাঙের লাফালাফি। কোন জায়গায় বসা মাত্র শত শত ব্যাঙের নীচে তলিয়ে যেতে হ’ত। এই নরম জীবটির সরস অত্যাচারে পাগলপরা হয়ে উঠল পুরা ফেরাঊনী জনপদ। অবশেষে কান্নাকাটি করে ও কাকুতি-মিনতি করে তারা এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে লাগলো মূসা (আঃ)-এর কাছে। এবার পাকাপাকি ওয়াদা করল যে, আযাব চলে যাবার সাথে সাথে তারা ঈমান আনবেই। কিন্তু না, যথা পূর্বং তথা পরং। ফলে পুনরায় গযব অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। এবারে এল ‘রক্ত’।

৬ষ্ঠ নিদর্শন : রক্ত
তাদের অহংকার ও ঔদ্ধত্য চরমে উঠলে হঠাৎ একদিন দেখা গেল ‘রক্ত’। খাদ্য ও পানপাত্রে রক্ত, কূয়া ও পুকুরে রক্ত, তরি-তরকারিতে রক্ত, কলসি-বালতিতে রক্ত। একই সাথে খেতে বসে বনু ইস্রাঈলের থালা-বাটি স্বাভাবিক। কিন্তু ফেরাঊনী ক্বিবতীর থালা-বাটি রক্তে ভরা। পানি মুখে নেওয়া মাত্র গ্লাসভর্তি রক্ত। অহংকারী নেতারা বাধ্য হয়ে বনু ইস্রাঈলী মযলূমদের বাড়ীতে এসে খাদ্য ও পানি ভিক্ষা চাইত। কিন্তু যেমনি তাদের হাতে তা পৌঁছত, অমনি সেগুলো রক্তে পরিবর্তিত হয়ে যেত। ফলে তাদের খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। না খেয়ে তাদের মধ্যে হাহাকার পড়ে গেল। অবশেষে পূর্বের ন্যায় আবার এসে কান্নাকাটি। মূসা (আঃ) দয়া পরবশে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করলেন। ফলে আযাব চলে গেল। কিন্তু ঐ নেতাগুলো পূর্বের মতই তাদের গোমরাহীতে অনড় রইল এবং ঈমান আনলো না। এদের এই হঠকারিতা ও কপট আচরণের কথা আল্লাহ বর্ণনা করেন এভাবে,

‘অতঃপর তারা আত্মম্ভরিতা দেখাতে লাগলো। বস্ত্ততঃ এরা ছিল পাপাসক্ত জাতি’ (আ‘রাফ ৭/১৩৩)। ফলে নেমে এল এবার প্লেগ মহামারী।

৭ম নিদর্শন : প্লেগ
রক্তের আযাব উঠিয়ে নেবার পরও যখন ওরা ঈমান আনলো না, তখন আল্লাহ ওদের উপরে প্লেগ মহামারী প্রেরণ করেন (আ‘রাফ ৭/১৩৪)। অনেকে এটাকে ‘বসন্ত’ রোগ বলেছেন। যাতে অল্প দিনেই তাদের সত্তর হাযার লোক মারা যায়। অথচ বনু ইস্রাঈলরা ভাল থাকে। এলাহী গযবের সাথে সাথে এগুলি ছিল মূসা (আঃ)-এর মু‘জেযা এবং নবুঅতের নিদর্শন। কিন্তু জাহিল ও আত্মগর্বী নেতারা একে ‘জাদু’ বলে তাচ্ছিল্য করত।

প্লেগের মহামারীর ফলে ব্যাপক প্রাণহানিতে ভীত হয়ে তারা আবার এসে মূসা (আঃ)-এর নিকটে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে লাগল। মূসা (আঃ) আবারও তাদের জন্য দো‘আ করলেন। ফলে আযাব চলে গেল। কিন্তু তারা পূর্বের ন্যায় আবারো ওয়াদা ভঙ্গ করল। ফলে তাদের চূড়ান্ত ধ্বংস অবধারিত হয়ে গেল। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যাদের উপরে তোমার প্রভুর আদেশ নির্ধারিত হয়ে গেছে, তারা কখনো বিশ্বাস আনয়ন করে না, যদিও সব রকমের নিদর্শনাবলী তাদের নিকটে পৌছে যায়, এমনকি তারা মর্মান্তিক আযাব প্রত্যক্ষ করে’ (ইউনুস ১০/৯৬-৯৭)।

৮ম নিদর্শন : সাগর ডুবি:
ক্রমাগত পরীক্ষা ও অবকাশ দানের পরও যখন কোন জাতি সম্বিত ফিরে পায় না। বরং উল্টা তাদের অহংকার বাড়তে বাড়তে তুঙ্গে ওঠে, তখন তাদের চূড়ান্ত ধ্বংস অনিবার্য হয়ে ওঠে। আল্লাহ পাক বলেন,

‘আমরা মূসার প্রতি এই মর্মে অহী করলাম যে, আমার বান্দাদের নিয়ে রাত্রিযোগে বের হয়ে যাও এবং তাদের জন্য সমুদ্রে শুষ্কপথ নির্ধারণ কর। পিছন থেকে এসে তোমাদের ধরে ফেলার আশংকা কর না এবং (পানিতে ডুবে যাওয়ার) ভয় কর না’ (ত্বোয়াহা ২০/৭৭)।

আল্লাহর হুকুম পেয়ে মূসা (আঃ) রাত্রির সূচনা লগ্নে বনু ইস্রাঈলদের নিয়ে রওয়ানা হ’লেন। তাঁরা সমুদ্রের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন।

উল্লেখ্য যে, হযরত ইয়াকূব (আঃ)-এর বারো জন পুত্র মিসরে এসেছিলেন। পরবর্তী চারশত বছরে তাদের বংশ বৃদ্ধি পেয়ে ইস্রাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী ছয় লাখ ৩০ হাযার ছাড়িয়ে যায়। তবে কুরআন ও হাদীছ থেকে কেবল এতটুকু জানা যায় যে, তাদের বারোটি গোত্র ছিল এবং প্রত্যেক গোত্রের জনসংখ্যা ছিল বিপুল।

যাই হোক ফেরাঊন খবর জানতে পেরে তার সেনাবাহিনীকে বনু ইস্রাঈলদের পশ্চাদ্ধাবনের নির্দেশ দিল। আল্লাহ বলেন,

‘সূর্যোদয়ের সময় তারা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল’ (শো‘আরা ২৬/৬০)। ‘অতঃপর যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা (ভীত হয়ে) বলল, إِنَّا لَمُدْرَكُونَ ‘আমরা তো এবার নিশ্চিত ধরা পড়ে গেলাম’ (৬১)। ‘তখন মূসা বললেন, কখনই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে সত্বর পথ প্রদর্শন করবেন’(৬২)। ‘অতঃপর আমরা মূসাকে আদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত কর। ফলে তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড় সদৃশ হয়ে গেল’(৬৩)। ‘ইতিমধ্যে আমরা সেখানে অপরদলকে (অর্থাৎ ফেরাঊন ও তার সেনাবাহিনীকে) পৌঁছে দিলাম’(৬৪)। ‘এবং মূসা ও তার সঙ্গীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম’(৬৫)। ‘অতঃপর অপর দলটিকে ডুবিয়ে দিলাম’ (শো‘আরা ২৬/৬০-৬৬)।

মূসা ও বনু ইস্রাঈলকে সাগর পাড়ি দিয়ে ওপারে চলে যেতে দেখে ফেরাঊন সরোষে ঘোড়া দাবড়িয়ে সর্বাগ্রে শুষ্ক সাগর বক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ল। পিছনে তার বিশাল বাহিনীর সবাই সাগরের মধ্যে নেমে এলো। যখন তারা সাগরের মধ্যস্থলে পৌঁছে গেল, তখন আল্লাহর হুকুমে দু’দিক থেকে বিপুল পানি রাশি ধেয়ে এসে তাদেরকে নিমেষে গ্রাস করে ফেলল। আল্লাহ বলেন,

‘অতঃপর ফেরাঊন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল। কিন্তু সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেলল’ (ত্বোয়াহা ২০/৭৮)।

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

‘আর বনু ইস্রাঈলকে আমরা সাগর পার করে দিলাম। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করল ফেরাঊন ও তার সেনাবাহিনী বাড়াবাড়ি ও শত্রুতা বশতঃ। অতঃপর যখন সে (ফেরাঊন) ডুবতে লাগল, তখন বলে উঠল, আমি ঈমান আনছি এ বিষয়ে যে, সেই সত্তা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, যার উপরে ঈমান এনেছে বনু ইস্রাঈলগণ এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের একজন’ (ইউনুস ১০/৯০)।

আল্লাহ বললেন,

‘এখন একথা বলছ? অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করেছিলে এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে’। ‘অতএব আজ আমরা তোমার দেহকে (বিনষ্ট হওয়া থেকে) বাঁচিয়ে দিচ্ছি। যাতে তোমার পশ্চাদ্বর্তীদের জন্য তুমি নিদর্শন হ’তে পার। বস্ত্ততঃ বহু লোক এমন রয়েছে যারা আমাদের নিদর্শনাবলীর বিষয়ে বেখবর’ (ইউনুস ১০/৯১-৯২)।

বাইবেল ও কোরানের বর্ণনার গরমিল:
১। বাইবেল অনুযায়ী ফেরাউনের কন্যা বাত্য হযরত মুসা (আঃ)-কে পালিত পুত্র হিসাবে গ্রহন করেন। আর কোরানের বর্ণনা অনুযায়ী ফেরাঊনের পুণ্যবতী স্ত্রী আসিয়া (آسية ) বিনতে মুযাহিম ফুটফুটে সুন্দর বাচ্চাটিকে দেখে অভিভূত হয়ে পড়লেন, ও নিঃসন্তান আসিয়া শিশু মুসাকে পালিত পুত্র হিসাবে গ্রহন করলেন।
২। বাইবেল অনুযায়ী ফেরাউন-এর পুত্র সন্তান ছিলো, ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী সেই সময়ে ফেরাউন নিঃসন্তান ছিলো।
৩। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি আগে নবুওত পান ও তারপর ঈশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী মিশর গমণ করেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী স্বপরিবারে স্বেচ্ছায় মিশর যাত্রার পথে তিনি নবুওত লাভ করেন।

৪। বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত মুসা (আঃ)-এর পালক পিতা ফেরাউনের পুত্র ফেরাউন-ই নবুওত প্রাপ্ত হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে যাবতীয় সমস্যা সৃষ্টি করিয়াছিলো। এবং শেষ পর্যন্ত সে সাগরে ডুবে মরে নাই। কিন্তু ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত মুসা (আঃ)-এর পালক পিতা ফেরাউনই যাবতীয় সমস্যা সৃষ্টি করিয়াছিলো, এবং শেষ পর্যন্ত সে সাগরে ডুবে মরে।

এই পর্বে এই পর্যন্তই। তবে পর্বের শুরুতে উত্থাপিত আখেনাতেন ও অন্যান্য কিছু প্রশ্ন নিয়ে পরবর্তি পর্বে আলোচনা করা হবে।

(চলবে)

(এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব)

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখখদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তথ্যসূত্রঃ

1. প্রফেসর ড. মুহম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, নবীদের কাহিনী,
http://www.at-tahreek.com/nobider_kahini/6.html
2. https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE_%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%87_%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B8
3. http://www.amiopari.com/16548/
4. https://en.wikipedia.org/wiki/Amenhotep_III
5. http://www.biblearchaeology.org/post/2010/02/04/Amenhotep-II-and-the-Historicity-of-the-Exodus-Pharaoh.aspx
6. http://www.biblehistory.net/newsletter/moses_pharaoh.htm
7. http://www.amiopari.com/16548/
8. http://www.truthnet.org/Biblicalarcheology/5/Exodusarcheology.htm
9. http://www.truthnet.org/Biblicalarcheology/5/Exodusarcheology.htm
10. https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%95_%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC
11. https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE
12. http://ognews24.com/archives%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%B0%E0%A6%A4-%E0%A6%87%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%AE-%E0%A6%86%E0%A6%83-%E0%A6%8F%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE
13. https://blog.mukto-mona.com/2010/11/28/11712/
14. http://www.sachalayatan.com/guest_writer/42333
15. http://www.somewhereinblog.net/blog/benqt60/29514096
16. http://www.zoroaster.net/indexe.htm
17. http://www.thefamouspeople.com/profiles/zoroaster-94.php
এছাড়াও ব্যবহার করেছি তিনটি হলি স্ক্রিপচার
১। হলি তোরা
২। হলি বাইবেল
৩। হলি কোরআন

৮,৫০২ বার দেখা হয়েছে

১২৪ টি মন্তব্য : “ইসলামের স্বর্ণযুগ – পর্ব ৬”

  1. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    বরাবরের মতই গভীর গবেষনা সমৃদ্ধ লেখা। পড়ে আমার অনুভূতিঃ
    ধর্মীয় কাহিনীগুলো বীভৎস রসে ভরপুর- অবাধে শিশু হত্যা! ভাবা যায়?
    নানা রকম গযব ( প্লেগ ইত্যদির মাধ্যমে গন নিধন) প্রয়োগ করে একদল মানুষ কে পথে আনার চেষ্ঠা- অন্য দলের প্রতি চরম পক্ষপাত, ঈশ্বরকি সবার নন?
    লেখাটা শিরোনাম থেকে অনেক সরে গেছে। এটা আলাদা পূর্নাঙ্গ লেখা হতে পারতো- অনেকটা "একেশ্বরবাদের উৎপত্তি" বা "প্রাক ইসলাম ধর্মীয়-সামাজিক অবস্থা", "বিভিন্ন ধর্ম ও দার্শনিক মতবাদের তুলনামূলক পর্যালোচনা" - জাতীয়।

    জবাব দিন
  2. রাব্বী (৯২-৯৮)

    সবই তো প্রায় কপিপেস্ট। ছয়টি পর্ব থেকে লাইনগুলো গুগল সার্চ দিলেই সাইটগুলো চলে আসে। তার অনেকগুলোই অখাদ্য ইসলামি সাইট। আর উইকিপিডিয়া। একদম দাড়ি-কমা, ইংরেজি, আরবি, হিব্রু, সবই কপি পেস্ট। তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কত বালাই নাই। পোস্টের কথাও সেসব উৎসের উল্লেখ নেই।

    এই পর্বের একটি বড় অংশ "নবীদের কাহিনী" মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব থেকে হুবুহু কপিপেস্ট। যা কিনা আবার হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, নওদাপাড়া, পো: সপুরা, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত। আবার কিছু অংশ মুক্তমনা ব্লগের কৃষ্ণ, মুসা, ঈসা ও মোহাম্মদের জন্মবৃত্তান্ত এবং কিছু তুলনা নামের পোস্ট থেকে কপিপেস্ট। সবগুলো পর্বতেই একই কাজ করেছেন। আর বাইবেলের অংশগুলো এখান থেকে। সন্দেহ হয়, যে গতি এবং কলেবরে এগোচ্ছে এটা বই হয়ে প্রকাশ পেতে আর কয়েক পর্ব মাত্র বাকি। সামুতে দেখলাম একই পোস্টে অনেক প্রশংসা পেয়েছেন, সিসিবিতে তা হয়নি।

    সনাতনী মিডিয়া তে সম্পাদক নামের একজন গেইটকিপার থাকেন যারা তথ্য যাচাই বাছাই করেন, কিন্তু নতুন মিডিয়াতে কোন গেইটকিপার নাই। তারপরও ব্লগ সঞ্চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কারণ এই পোস্ট অন্য সব বাদ দিলেও ক্যাডেট কলেজ ব্লগের রেড বুক নীতিমালার ৮ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে।

    আমার ড. রমিত ভাইয়ের কাছে প্রশ্ন, আপনি একজন একাডেমিশিয়ান হয়ে এই কাজটি কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন?


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ধর্মবিষয়ক পোস্ট এড়িয়ে চলি সাধারণত। তবে দুজনের মন্তব্য দেখে আগ্রহী হয়ে উঠলাম --- এহেন পোস্টে রাব্বী আর সাবিনা আপা কি বললেন দেখতে এসে বলতেই হচ্ছে থ মেরে গেলাম।
    গুরুতর অভিযোগ রমিত ভাই। আশা করছি আপনার বক্তব্য পাবো --- এবং কপি-পেস্টের যথাযথ যুক্তি দেখাতে সমর্থ হবেন। আপনার নামের আগে 'ডঃ' দেখে আপনাকে পরিশ্রমী গবেষক বলে ধরে নিয়েছিলাম। সে ধারণা বেমালুম ভুল দেখে হতাশ হলাম বলাই বাহুল্য। অবশ্য হতাশ আগেও কম হইনি।

    যাক আপনার মন্তব্যের আশায় পথ চেয়ে থাকলাম। আমি অলস মানুষ। রাব্বী যা যা দাবী করলো তাকেও যাচাই বছাই না করে মন্তব্য লিখছি। ওর কথা উপর আমার সোয়া শ পারসেন্ট আস্থা আছে। আপনি এসে তাকে ভুল প্রমান করলে না হয় দেখবো ফিরে। আবার বলবেন না যেন, আপনার অফিসে যেতে হবে যুক্তিখণ্ডন শোনার জন্যে।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      নূপুর, কাব্য বিশ্বনাথনের কথা মনে আছে তোমার? ভুলে গিয়ে থাকলে শোন তবে!

      কাব্য বিশ্বনাথন ছিল হার্ভার্ডের সফোমোর স্টুডেন্ট। ২০০৮ সালে কাব্য 'হাউ ওপাল মেহতা গট কিসড, গট ওয়াইল্ড, এন্ড গট আ লাইফ' নামের একটি বই লিখে রাতারাতি খ্যাতির চূড়োয় উঠে পড়ে। বইটি বেস্ট সেলার হয়; টাইম ম্যাগাজিন তাকে নিয়ে প্রবন্ধ লেখে। টিভিতে তার সাক্ষাতকার প্রচারিত হয়। দেশ জুড়ে হৈচৈ কাব্যকে নিয়ে। এমন সময়ে আমাদের রাব্বীর মত একজন পাঠক ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন যে, কাব্য তার প্রিয় ঔপন্যাসিক মেগান ম্যাককেফার্টির দুটো বই থেকে চুরি করে খ্যাতি পেয়েছেন। মেগানের ভক্তটি বেশী নয় মাত্র দুটো প্যারাগ্রাফের উদ্ধৃতি দেন প্রমাণ হিসেবে।

      তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে চোর ধরতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয়না বরং চোখ কান খোলা রাখলেই চলে। সমস্যা হলো আমরা কয়জন চোখ কান খোলা রাখি। সামুতে একই লেখা ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে দেখি। তার মানে কি দাঁড়ালো? অন্ধের দেশে কানা রাজা? কিন্তু ব্লগে আমরা তো চোর পুলিশ খেলতে আসি না। আসি মনের ভাবনাগুলো সবার সাথে শেয়ার করতে। কেউ তো আমাদের দিব্যি দেয়নি কপি পেস্ট করে ব্লগ লিখতে!

      তো, ফিরে যাই কাব্য প্রসংগে। ধরা খেয়ে কাঁচুমাচু কাব্য যা বললো তার সারমর্ম হলো, সে হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই মেগানের লেখার এত ভক্ত ছিল যে অবচেতনভাবে তার মন ঘুরেফিরে মেগানের লেখার কাছেই চলে গেছে। কাব্য তার কৃতকর্মের জন্য জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। বইটির প্রকাশক তার চুক্তি বাতিল করেন। কাব্য বিশ্বনাথন বহিষ্কৃত হয় হার্ভার্ড থেকে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিবৃতিতে বলে, এখন প্রকাশক আর পাঠকেরাই নির্ধারণ করবে কাব্য বিশ্বনাথনের ভবিষ্যৎ। কাব্য বিশ্বনাথনের নাম আর শোনা যায়নি।

      কাব্য শুধু মেগানের লেখা চুরি করেই ক্ষান্ত হয়নি; সে হাত বাড়িয়েছিল সালমান রুশদির 'হারুন এন্ড দা সি অব স্টোরিজ' নামক বইটিতেও!
      সালমান রুশদি লিখেছেন,
      page 35: Warning reads, "If from speed you get your thrill / take precaution—make your will."[2
      কাব্য লিখেছে,
      page 118: Poster reads, "If from drink you get your thrill, take precaution—write your will."[2]

      সালমান রুশদি লিখেছেন,
      page 31: Warning reads, "All the dangerous overtakers / end up safe at undertaker's."[2]
      কাব্য লিখেছে,
      page 119: Poster reads, "All the dangerous drug abusers end up safe as total losers."[2]

      ড. আজাদ আশাকরি আত্মপক্ষ সমর্থন করে আমাদের মত অন্ধের চোখে আলো দেবেন।

      জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          নূপুর বললো, লেখক নাকি তার অফিসে নেমন্তন্ন করে বেড়ান যুক্তি তর্কের অবসান ঘটাতে। আমি ভাবছিলাম, এই অফারটি যদি তিনি প্রবাসীদের জন্য কমপ্লিমেন্টারি টিকিট সহ করতেন তবে আমরা একটা ট্রাই দিতাম। ফিরে এসে পাল্টা ব্লগ লিখে বাকীদের আলোকিত করতে পারতাম এ ব্যাপারে। যাই হোক, এই ব্লগে আমরা ঈদে, পূজোর, বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে থাকবো যতদিন না একটা জবাব পাই। স্টে টিউনড!

          জবাব দিন
          • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

            সাবিনা, 'যুক্তি তর্কের অবসান ঘটাতে' কাউকে নেমন্তন্ন করিনা। আলোচনা করার জন্য নেমন্তন্ন করি। মুখোমুখি আলোচনার উপকারিতা আছে: হয় তার ভুল ভাঙবে, নয়তো আমার ভুল ভাঙবে। তর্কে জেতার কিছু নেই, কোনটি বা কার মতামত/ধারনা সঠিক সেটা বোঝাই আসল কথা। আমি যদি ভুল ধারনা পোষণ করে থাকি বা ভুল জেনে থাকি শুধরে নেবো, সমস্যা কি? তুমি যখন দেশে আসবে, তোমারও নেমন্তন্ন রইলো।

            জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          বাইরে ঝুম বৃষ্টি আমাদের শহরে। চায়ের পেয়ালা হাতে ব্লগ বাড়িতে বেড়াতে এলাম। আশা ছিল তোমার অভিযোগের উত্তরে লেখকের আত্মপক্ষ সমর্থন করে লেখা একটি স্টেটমেন্ট দেখতে পাবো। আমাদের আশায় গুড়েবালি, রাব্বী।

          এরপর থেকে ড. আজাদ ব্লগে জোড়া কবিতা নিয়ে এলেও তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, ভাই এটি কি তোমার লেখা নাকি কপি পেস্টো 😛

          বেশী দূরের নয় আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গল্প শোন আজ।

          দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর দীপক পেন্টালকে এক কলমের খোঁচাতে দিল্লীর সিটি কোর্ট চৌদ্দ শিকের ভেতরে চালান করে দিল। ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর; তিনি লেখা চুরি করেছেন! ডক্টর সাহেবের কাছাটি খুলে দিলেন অন্য একজন শিক্ষক। ব্যাপারটি খুলেই বলি তবে।

          ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৫ সালে। পর্ধা সারধি নামের একজন শিক্ষক জেনেটিকালি মডিফাইং ভারতীয় সর্ষে নিয়ে গবেষণা করছিলেন বহুদিন ধরে। এর ঠিক পাঁচ বছর পর ২০০০ সালে ডঃ সারধির অধীনে পিএইচডি করছেন এমন একজন ছাত্র তার টিম পরিবতর্ন করে ডঃ দীপক পেন্টালের অধীনে গবেষণার কাজ শুরু করেন।

          ফাস্ট ফরোয়ার্ড আট বছর! ২০০৮ সালে ডঃ সারধি দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এলে শুরু হয় খেল।

          দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. সারধি দেখলেন তার ১৯৯৫ সালে করা কাজগুলো ড. পেন্টাল নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন এবং তার প্রাক্তন ছাত্ররা এই নিয়েই কাজ করেছেন।

          ড. পেন্টাল তখন দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। স্বয়ং ভাইস চ্যান্সেলরের নামে চুরির অভিযোগ করা চাট্টখানি কথা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল।

          ড. সারধি দমবার পাত্র নন। তিনি দিল্লী সিটি কোর্টে লেখা চুরির অভিযোগে মামলা দায়ের করলে দীপক পেন্টালকে গ্রেফতার করা হয়। নিন্দার ঝড় বয়ে যায় দেশ জুড়ে।

          কপি ক্যাট নামের মজার একটি গল্প বলেছিলেন আমাদের আমেরিকান সাহিত্যের অধ্যাপক ড. পেগাশ। সেটি আরেকদিনের জন্য তোলা রইল। স্টে টিউনড 🙂 (সম্পাদিত)

          জবাব দিন
  4. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ২০১২ কি ১৩-র দিকে ব্লগের প্রিয় ছোটভাই শাহরিয়ার আবিষ্কার করলো --- ওর বেশ কিছু লেখা চুরি করে লোকজন নানান ব্লগে প্রকাশ করে বেড়াচ্ছে। তা দেখয়ে আমিও কৌতূহলী হলাম নিজের লেখাগুলো নিয়ে। গুগল ঘেঁটে দেখি, বাহ! আমার কমপক্ষে গোটা দশেক লেখা ৪/৫টা ব্লগে অন্যের নামে শোভা পাচ্ছে। প্রতিবাদ করেছিলাম, কোন সদুত্তর পাইনি। ফেসবুকে এসে গালিগালাজ করে গেছে কেউ কেউ। কেবল একটি ব্লগ উত্তর দিয়েছিল ইমেইল এর। কোন লেখা কেউ সরায়নি। তখন অহংকার ছিল সিসিবি এমন ব্লগ নয় --- এখানে অন্যের লেখা চুরি করে কেউ প্রকাশ করেনা। এও জানতাম সিসিবিতে যদি এ কাজ কেউ করে তাহলে ভ্রাতৃত্বের দোহাই দিয়ে তার পক্ষে দাঁড়াবো না। কড়া প্রতিবাদ করবো।

    আমার অবাক লাগে কেউ এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেননা। অথচ কেউ এসব মন্তব্য দেখছেন না তা তো হতে পারে না! সবার উদ্দেশ্যে বলছি, অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ থাকেনা। আগামীকাল আপনার লেখা অন্য ব্লগে চুরি করে কেউ ছাপিয়ে দিলে এখানে এসে কান্নাকাটি করলে আমাকে পাবেন না। আশ্চর্য এই গা বাঁচিয়ে চলার প্রবণতা।

    এডমিনের উদ্দেশ্যে - রাব্বীর লিঙ্কগুলো যাচাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন প্লিজ। লেখা সরিয়ে দিন --- লেখকের কাছে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হোক। পাঠক হিসেবে আমি প্রতারিত বোধ করেছি। চৌর্যবৃত্তির অবসানে সচেষ্ট হোন। চুপ করে থাকবেন না।

    জবাব দিন
  5. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    ঈদের আগে পরে নানা ব্যস্ততায় কিছুদিন সিসিবিতে ঢুকি নাই। আজ ঢুকলাম। তাই দেরীতে উত্তর দিচ্ছি।

    অনেক রকম মন্তব্য দেখলাম। আমি এই লেখাগুলো দুটি ব্লগে দিয়েছি, সামহোয়ারইনব্লগ ও ক্যাডেট কলেজ ব্লগ। দুটি ব্লগেই উল্লেখ করেছি যে,

    তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেকখদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

    অন্যদের লেখা থেকে যে নিয়েছি তা তো কোথাও অস্বীকার করিনি। আমি চাইলে প্রতিটি সাইট ও বইয়ের নাম উল্লেখ করতে পারতাম সেটা করিনি কারণ অনেকগুলো সূত্র ব্যবহার করেছি। আর এটা তো কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র নয়, যে এখানে পাতা লাইন ধরে সাইটেশন করতে হবে। আমার যেকোন মৌলিক গবেষণামূলক বই বা গবেষণাপত্রে আমি সেটাই করে থাকি। ইন্টারনেটে একটু সার্চ দিলেই সেইসব বই ও গবেষণাপত্রগুলো দেখতে পাবেন।

    এটা আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র নয়, সামান্য প্রবন্ধমাত্র। যেখানে বিভিন্ন জনের লেখার সাহায্য নিয়ে কিছু সাজিয়েছি, নিজেরও কিছু কাজ আছে। যেমন: এই পর্বে হযরত মুসা (আঃ)-এর ঘটনা সম্পর্কে 'বাইবেল ও কোরানের বর্ণনার গরমিল' এই অংশটা আমিই লিখেছি। এরকম আরো আছে।

    বিভিন্ন লেখা পড়ে তা একজায়গায় সাজানো এবং কোন একটা বিষয় উপস্থাপনাও তো প্রবন্ধের একটা কাজ।
    আপনাদের কি ধারণা, আমি জানিনা যে কোন একটি প্যারাগ্রাফ কপি করে তা গুগলে সার্চ দিলেই কে কোথায় কি লিখেছে তা বেরিয়ে আসে? এই পর্বের একটি বড় অংশ "নবীদের কাহিনী" মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব থেকে হুবুহু কপিপেস্ট। আবার কিছু অংশ মুক্তমনা ব্লগের। আর বাইবেলের অংশ বাংলায় বাইবেল সাইট থেকে। উইকিপিডিয়া থেকে কিছু আছে। পবিত্র কোরানের বাংলা সাইট আছে, সেখান থেকেও নিয়েছি। আরো অনেক লেখা থেকেই আছে।

    নবীদের কাহিনী অন্য কারো লেখা থেকে না নিয়ে কি কোন উপায় আছে? আমি কি নিজ চোখে উনাদের দেখেছি? কথা বলেছি উনাদের সাথে? কোন বইয়ে বা সাইটে যারা আমার পূর্বে এইসব কাহিনী লিখেছেন, তারাও কি অন্য কারো লেখার সাহায্য নিয়ে লেখেননি? বাইবেলে যা লেখা আছে, তা তো বাইবেল থেকেই পড়বো। বা তোরায় যা লেখা আছে, তা তো তোরা থেকেই পরবো। আমার কাছে মোটামুটি সবগুলো ধর্মগ্রন্থই (হার্ড কপি) আছে। এর কয়েকটি আমি পুরোটাই পড়েছি, আর কয়েকটি বিভিন্ন সময়ে পড়ি। বাইবেলের কোন ভার্স পড়ে সেটা আবার নিজে কম্পোজ করা কষ্টসাধ্য। তাই নেটে সেটা যেখানে আছে সেখান থেকে কপি-পেষ্ট করে নিলে কষ্ট কম হয় ও সময় বাঁচে। 'তোরা'-র খুব সম্ভবত কোন বাংলা অনুবাদ নেই। সেটা আমাকেই কম্পোজ করতে হবে।

    অনেক আর্টিকেল আমি ইংরেজীতে বা রুশ-এ পড়েছি, বাংলায় তার অনুবাদ ও কম্পোজ আমাকেই করতে হয়েছে।

    পাঠকরা যদি চায় যে এই জাতীয় প্রবন্ধে, একটি আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্রের মতো আমি থার্ড ব্রাকেটে প্রোপার সাইটেশন দিয়ে তা উল্লেখ করি, তা করতে পারি, সমস্যা নাই।

    মন্তব্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ। আমি লিখেই দিয়েছি :

    (এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব)

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      রমিত আজাদ লিসেন ভেরী কেয়ারফুলি!

      তুমি কি বিবলিওগ্রাফি, এনোটেটেড বিবলিওগ্রাফি, কোটিং, সাইটেশন, ফুটনোট এবং প্যারাফ্রেজিং শব্দগুলোর সাথে পরিচিত? তোমার লেখা পড়ে মনেহলো তুমি এখনো সেই নাবালক ব্লগার যে কিনা এসব না জেনেই ঝাঁপিয়ে পড়েছো শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম এবং দর্শন নিয়ে ব্লগ লিখতে। ভবিষ্যতে ব্লগ লেখার আগে এসব ব্যাপারে খানিক পড়াশোনা করলে আখেরে তোমারই লাভ হবে। নাও কাম টু দা পয়েন্ট।

      তুমি কোন ফিল্ম দেখেছো বা ঘরের কি নেটের বাইবেল পড়েছো তা নিয়ে আমাদের আগ্রহ জিরো। তুমি যাকে সামান্য একটি প্রবন্ধ বলছো তার প্রায় শীর্ষভাগ রচনা সরাসরি উদ্ধৃত করেছো অন্যের লেখা থেকে।

      জেসাস ক্রাইস্ট, বিদ্যার দেবী স্বরস্বতী অথবা নবী রাসুলদের নিয়ে কিছু বলার জন্য তাঁদের সাথে ডিনারে যেতে হবে এমন ধারণা তুমি কোথায় পেলে? কি হাস্যকর যুক্তি তোমার!

      তোমার কথা শুনে মনেহলো কষ্টকল্পিত পড়াশোনা করে কি লাভ? সবই তো বইয়ে আছে; একখানা হার্ড কপি শিক্ষকের মেইলে পাঠিয়ে দিলেই তো হয়!

      রাব্বী তোমার বিরুদ্ধে লেখা চুরির প্রমাণ সহ গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সিসিবিতে। লেখক হিসেবে তোমার দায়িত্ব হলো সেই অভিযোগ খন্ডন করা যেটি করতে তুমি সর্বাংশে ব্যর্থ হয়েছো।

      জবাব দিন
      • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

        তুমি বেশ হার্ড কথাই বলছো সাবিনা। আবারও বলছি, এটা কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র নয়, সাধারণ প্রবন্ধই। সেই ভেবেই আমি এককথায় লিখেছি

        তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

        ওগুলো সব আমার কাছে ড্রাফটে সেইভ করাই আছে, কেউ তথ্যসূত্র সুনির্দিষ্টভাবে চাইলে চাইলে তখন উল্লেখ করে দেই।

        নেটে পাওয়া বা বইয়ে পাওয়া লেখা ব্যবহার করতে লেখকের অনুমতি নিতে হবে কিনা সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। একজন রুশ বিজ্ঞানী আমার একটি গবেষণা আমার বই থেকে হুবুহু তুলে দিয়েছেন (বেশ অনেকগুলো পৃষ্ঠা) কিন্তু আমার কাছ থেকে কোন আনুমতি তো নেন নি, শুধু আমার নাম উল্লেখ করেছেন মাত্র।

        যাহোক এই প্রবন্ধে যেসব লিটারেচার ব্যবহার করেছি তা সবই আমার কাছে আছে, অফিসের কম্পিউটারে। পরশু অফিস খুলবে, তখন আমি পৃথকভাবেই সব উল্লেখ করে দেব। এটা জটিল কোন বিষয় নয়।

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          লেখকের অনুমতি নেয়া মানে এই নয় যে বাড়ির দোরগোড়াতে টোকা দিয়ে অনুমতি প্রার্থনা করা। লেখায় ক্রেডিট দেয়ার বিষয়টি তুমি জানো নিশ্চয়ই!

          তুমি যুক্তির মাধ্যমে অভিযোগ খন্ডন না করে ভাঙা রেকর্ডের মত একই কথার পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছো বারংবার। সেলুকাস!

          জবাব দিন
          • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

            অনুমতি নেয়া মানে, অনুমতি নেয়াই সেটা সরাসরি সাক্ষাতে হোক আর মেইল/নেটে যোগাযোগের মাধ্যমেই হোক। রেফারেন্স দেয়া মানে রেফারেন্স দেয়া (অনুমতি লাগেনা)।
            তোমাকে আরেকবার বলছি, নবীদের কাহিনী যারাই লিখেছেন কেউই মৌলিক কিছু লেখেননি, হলি স্ক্রিপচারগুলো থেকেই তুলেছেন। বাইবেলের বা কোরানের কোন অংশ তোলা হয় বাইবেল বা কোরান থেকেই, সেটা তো লেখাতেই উঠে আসে।
            তারপরেও আমি, আগামী পরশু এই লেখায় ব্যবহৃত সবগুলো রেফারেন্সই পৃথকভাবেই তুলে দেবো।

            এই পর্বে কি আমার লেখা কিছুই নাই? তোমরা ওগুলো বলছো না কেন? এমনকি তুলনামূলক আলোচনাও তো একটা কাজ।

            জবাব দিন
            • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

              এই ব্লগে তুমি তুলনামূলক ধর্মের আলোচনা করতে আসো নাই যে তোমার লেখার প্রসংগে কথা হবে মিঃ আজাদ। এখানে তুমি যা করেছো তার ভদ্রজনোচিত একটি টার্ম আছে; সেইটি পশ্চিমে প্লেইজারিজম নামে সুপরিচিত। দয়া করে কাব্য বিশ্বনাথন এবং পেন্টালের কাহিনীটি পড়ো এবং শিক্ষা নাও। আগেই বলেছি এদেশে চুরির দায়ে হাত কাটা হয়না বটে কিন্তু শাস্তিও কম হয়না। তোমার মত 'সামান্য'চুরির দায়ে পেপারে শূণ্য পায় ছাত্ররা। বহু সাংবাদিক অথবা শিক্ষকের চাকুরি চলে যাবার মত ঘটনা 'সামান্য' লেখা চুরির কারণে হয় এখানে!

              জবাব দিন
              • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

                আবারো বলছি, আমি কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র লিখিনি। কোন রেফারীড জার্নালে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র-এ অনেক রিগোরাস ব্যাপার-স্যাপার থেকে। আমি যখন কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র লিখি সেখানে সেগুলো যথাযথভাবেও মেইনটেইন করি। এরকম অনেক প্রকাশনাই আমার আছে। আমার লেখা পদার্থাবিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণামূলক বইও আছে। সেসব জায়গায় সব আনুষ্ঠানিকতাই মেইনটেইন করেছি। এই লেখায় যে অন্যদের লেখা ব্যবহার করেছি তাও তো উল্লেখ করেছি। কেবল পৃথক পৃথকভাবে তা উল্লেখ করিনি। ওকে আমি, আগামী পরশু এই লেখায় ব্যবহৃত সবগুলো রেফারেন্সই পৃথকভাবেই তুলে দেবো।

                জবাব দিন
        • রাব্বী (৯২-৯৮)

          অভিযোগের বিষয় হলো, প্রথমত, সূত্র কি আপনি সেটি প্রথমে উল্লেখ করেননি। এখন ধরা খেয়ে তালবাহানা করছেন। দ্বিতীয়ত, ওই সূত্র এবং অনুবাদ কতটুকু অথেনটিক? শুধু পেলাম আর মনের মাধুরী মিশিয়ে কপিপেস্ট করে দিলাম! প্রবন্ধ যখন লিখছেন, প্রবন্ধের দায়টুকু রক্ষা করুন!


          আমার বন্ধুয়া বিহনে

          জবাব দিন
          • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

            ধরা খাওয়ার কি আছে? তোমার কি ধারণা, আমি গুগল বুঝিনা? সার্চ বুঝিনা? টালবাহানারই বা কি আছে? আমি তো বারবারই বলছি এটা কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র নয়। তাই এককথায় লিখেছি যে

            তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

            এবার আসা যাক তথ্য বা সূত্রের অথেনটিসিটি নিয়ে। আমি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে, আমি কোরানের আয়াতগুলো ও বাইবেলের অংশগুলো নিজে পড়ে যাচাই করেছি। আর কিভাবে যাচাই করবো? তারপরেও, ফিল্মও দেখেছি সামগ্রিক ধারণা পাওয়ার জন্য। // তুমি কি তথ্যগত কোন ভুল পেয়েছ? পেলে লেখো। সেই অপশন তো আছেই। আমিও তো সেই আহ্বান জানিয়েছি।

            জবাব দিন
            • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

              রাব্বী তোমার বিরুদ্ধে লেখা চুরির অভিযোগ এনেছেন, মিঃ আজাদ। তোমার লেখার সিংহভাগ অন্যের লেখা থেকে তুমি সরাসরি তুলে দিয়েছো সমস্যাটি সেখানেই। তুমি কোথা থেকে লেখা হুবহু আত্মসাৎ করছো সেটি তো রাব্বীই বলে দিয়েছেন ইতোমধ্যেই। সো, টেল আস সামথিং দ্যাট উই ডোন্ট নো 😀 কোরান থেকে কোট করতে গেলে খোদার কাছে যে এ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগেনা এটি নান্না মুন্নারাও জানে!

              জবাব দিন
              • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

                সাবিনা আবারো বলছি, আমি যে অন্যের লেখা ব্যবহার করেছি সেটা উল্লেখ করেছি। সেই অন্যে কি নবীদের কাহিনী মন থেকে লিখেছে? না কি সেও অন্যের লেখা থেকে নিয়েছে? নবীদের কাহিনীর মূল সোর্স তো একটাই হলি স্ক্রীপচার-সমূহ।

                জবাব দিন
                • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

                  এক মুসা নবীর কাহিনী দশজন লেখক দশ রকম করে লিখবেন এটিই স্বাভাবিক। এখন দশ নম্বর বইটির লেখক যদি ভাবেন, নবীর জীবন কাহিনী তো আমি বানিয়ে লিখতে পারবো না; তাছাড়া নেটে তো সবই আছে সুতরাং বিসমিল্লাহ বলে অন্য চারটে বই থেকে চুরিচামারী করে নিজেই বই ছাপিয়ে ফেললেন। মিঃ আজাদ, তোমার ব্যাপারটি ঠিক এমনই মনেহলো।

                  জবাব দিন
            • রাব্বী (৯২-৯৮)

              আপনার গোঁড়ার গলদ এতটা নিজের সময় নষ্ট করে ধরিয়ে দিলাম। বাকিটা না হয় আল-গালিব সাহেবের সাথে আলোচনা থেকে ঠিক করে নিন।

              আপনার গুগল জ্ঞান নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই!


              আমার বন্ধুয়া বিহনে

              জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      আপনি যেমনভাবে বলছেন, আর যে কাজটি করেছেন আপনার মূল লেখায়, মোটেই ব্যাপারটা এত সহজ-সরল না।

      আপনার অনুরোধ রেখে আপনার মন্তব্য পড়লাম। আপনার সাফাই মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। ব্লগেই লেখেন আর একাডেমিক জার্নালে লেখেন, কোথাও অন্যের লেখা এভাবে লেখা যায় না। যদি লেখেন এভাবে, সেটি হবে চুরি। আর আপনার মতো পিএইচডি-ধারী কেউ করলে সেটা ঘোরতর অন্যায়।

      খালি ইন্টারনেটে আছে আর সেটি হুবুহু তুলে দিলাম আর হয়ে গেল খেটেখুটে লেখা লম্বা প্রবন্ধ, এটা কখনও গ্রহণযোগ্য না। অন্যের বক্তব্য বা তথ্য প্রাসঙ্গিক হলে, সূত্র উল্লেখ শুধুমাত্র উল্লেখ করেই ব্যবহার করা যায়। সেটা হুবুহু তুলে দিলে সেটা চুরি। আপনাকে কেউ নবীদের কাহিনী নিজে দেখে এসে এই ব্লগের লেখার ঠিকাদারি দেয়নি। কমিউনিটি ব্লগ এ যখন কিছু লিখে ছাপবেন, অবশ্যই আপনার দায়বদ্ধতা রয়েছে পাঠকের কাছে। সততা শুধু একাডেমিক জার্নালে সীমাবদ্ধ নয়, সবখানেই প্রযোজ্য।

      নবীদের কাহিনী অন্য কারো লেখা থেকে না নিয়ে কি কোন উপায় আছে? আমি কি নিজ চোখে উনাদের দেখেছি? কথা বলেছি উনাদের সাথে?

      কিংবা

      এটা আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র নয়, সামান্য প্রবন্ধমাত্র।

      কিংবা

      অন্যদের লেখা থেকে যে নিয়েছি তা তো কোথাও অস্বীকার করিনি।

      এধরনের কথা যখন বলেন, স্পষ্টভাবে অভিযোগের তীর যেদিকে সেখান থেকে পিছলে যাবার চেষ্টা। জেনেবুঝে না বোঝার ভান করাটা আরও গুরুতর অন্যায়। আপনি খুব ভাল করেই জানেন, কোনটি করা যায়, কোনটি যায় না।

      এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব

      এই ব্লগে আপনার গোঁড়ায় গলদ এবং ইচ্ছাকৃত। অন্যের লেখা বা ব্লগ এভাবে অনুমতি ছাড়া এবং কোনরকম শালীনতা ছাড়া আর এভাবে ব্যবহার করবেন না। এটা দিনলিপি বা ফিকশন না, আপনি এক ধরনের ইতিহাস লিখছেন, যা আপনি নিজে দেখেননি, তাই দয়া করে পাঠকের প্রতি সদয় হোন। পাঠক হিসেবে আপনার এই ব্লগএ এত কথা বলছি, এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ এই ব্লগে আপনার প্লেইজারিজমের জন্য। আশাকরি, এরপর থেকে পাঠকের প্রাপ্য সম্মানটুকু জানাতে ভুল করবেন না।


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)
      তাই নেটে সেটা যেখানে আছে সেখান থেকে কপি-পেষ্ট করে নিলে কষ্ট কম হয় ও সময় বাঁচে।

      =)) =)) :pira: :pira: :pira: :pira:

      সিসিবির সেরা জোকসগুলো এই ব্লগেই পাওয়া যাবে! আমার পিএইচডিওয়ালা বন্ধুর বাণী শুনে হাসি থামাতে পারছিনা!

      জবাব দিন
  6. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আরেকটি কথা,
    প্রবন্ধটি লিখতে আমি যেসব সাইট, আর্টিকেল, লেখা পড়েছি ও তাদের সাহায্য নিয়েছি তার সবই আমার ড্রাফট কপিতে কম্পিউটারে সেভ করা আছে। আপনারা চাইলে আমি সবই উল্লেখ করতে পারি।
    ঐ সব লেখার তথ্য যে যাচাই করিনাই তা নয়। যেমন 'নবীদের কাহিনী'-তে যেসব কোরানের আয়াতের উল্লেখ আছে, আমি নিজে কোরান পড়ে তা চেক করেছি (পবিত্র কোরান বাংলা অর্থসহ পুরোটাই আমি পড়েছি ছাত্র জীবনেই, এই প্রবন্ধ লেখার সময় তার বিভিন্ন অংশ পড়েছি), তারপরেও যদি ত্রুটি থাকে উল্লেখ করবেন। একই কাজ করেছি পবিত্র বাইবেল-এর ক্ষেত্রেও। নেটে পাওয়া বাইবেল ও আমার বাসায় রক্ষিত বাইবেল পড়ে তদের তুলনাও করেছি, অনুবাদে শব্দের টুকটাক এদিক-ওদিক আছে সেটাও লক্ষ্য করেছি, যেমন: নেটে লেখা 'মিশরীয়', হার্ড কপিতে পেলাম 'মিস্রিয়', আবার বাইবেলে লেখা আছে 'ফরৌণ', তোরায় লেখা আছে 'পারো' ইত্যাদি।
    প্রবন্ধটি লেখার উদ্দেশ্যে কিছু ফিল্মও দেখেছি, যেমন হযরত মুসা (আঃ)-এর উপর ফিল্ম, হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর উপর ফিল্ম, ইত্যাদি। সেগুলোও কি উল্লেখ করবো?

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      তুমি একটা ভিশাস সার্কেলে ঘুরপাক খাচ্ছো, মিঃ আজাদ। আমাদের সব্বার প্রশ্নের একই চর্বিতচর্বণ উত্তর দিচ্ছো কেন? তোমার আপিসের দেরাজ, সিন্দুক, হার্ড কপি, গুগল মুগল, সামান্য লেখা ব্লা ব্লা তো বললে অনেকই। আসল অভিযোগ কিন্তু লেখা আত্মসাতের, সেটি সম্পকর্ে কিছু বলো শুনি!

      জবাব দিন
  7. রাব্বী (৯২-৯৮)

    এটা আসলে কে কি চাইলে কি করবেন তা নয়। এই ক্যাডেট কলেজ ব্লগের গভর্নিং পলিসিতে খুব স্পষ্ট উল্লেখ আছে -

    ৮) অন্য কোথাও থেকে (অন্তর্জাল বা প্রিন্ট) কোন লেখার অংশ বিশেষ বা সম্পূর্ণ লেখা ব্যবহার করতে হলে সেই লেখার উৎস এবং লেখকের নাম উল্লেখ করতে হবে। কোন উদ্ধৃতি বা রেফারেন্সের ক্ষেত্রেও এই নিয়েম প্রযোজ্য হবে। যেসব লেখার স্বত্ত্ব সংরক্ষিত সেগুলোর ক্ষেত্রে লেখক বা স্বত্ত্বাধিকারীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হবে।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      রাব্বী, যদিও অনেকদিন যাবৎই এই ব্লগে লিখছি, কিন্তু 'ক্যাডেট কলেজ ব্লগের গভর্নিং পলিসি' সবগুলো কখনো খুঁটিয়ে পড়ে দেখিনি। তোমার মন্তব্যের পর, আজই প্রথম ঐ ধারাটি পড়লাম/দেখলাম। আমি কোন প্রবন্ধ লিখলে স্বভাবতঃই সেখানে অন্যদের প্রবন্ধ/বই ইত্যাদি থেকে সাহায্য নেই। এটা ছাড়া তো প্রবন্ধ লেখা সম্ভবই না। প্রবন্ধ রচনায় লিটারেচর রিভিউ ও ইউজ বিষয়টি তো স্বাভাবিকভাবেই আছে। এমনকি মৌলিক গবেষণাতেও লিটারেচর রিভিউ আছে। যেসব প্রবন্ধে এরকম লিটারেচর ইউজের সাংখ্যাধিক্য থাকে ওখানে এককথায় লিখি

      তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

      ওগুলো সব আমার কাছে ড্রাফটে সেইভ করাই আছে, কেউ তথ্যসূত্র সুনির্দিষ্টভাবে চাইলে চাইলে তখন উল্লেখ করে দেই।

      নেটে পাওয়া বা বইয়ে পাওয়া লেখা ব্যবহার করতে লেখকের অনুমতি নিতে হবে কিনা সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। একজন রুশ বিজ্ঞানী আমার একটি গবেষণা আমার বই থেকে হুবুহু তুলে দিয়েছেন (বেশ অনেকগুলো পৃষ্ঠা) কিন্তু আমার কাছ থেকে কোন আনুমতি তো নেন নি, শুধু আমার নাম উল্লেখ করেছেন মাত্র।

      যাহোক এই প্রবন্ধে যেসব লিটারেচার ব্যবহার করেছি তা সবই আমার কাছে আছে, অফিসের কম্পিউটারে। পরশু অফিস খুলবে, তখন আমি পৃথকভাবেই সব উল্লেখ করে দেব। এটা জটিল কোন বিষয় নয়।

      জবাব দিন
  8. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    রমিত ভাই,
    দাঁড়ি কমা সেমিকোলন সহ তুলে দিয়ে ---- প্যারার পর প্যারা --- সেটাকে নিজের প্রবন্ধ বলে জাহির করা। চেপে ধরার পর খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ত্যানা প্যাঁচানো --- এরই নাম কি একাডেমিকস? প্রবন্ধ লেখাকে এত মামুলি ভাবেন কি করে। আপনি যা করেছেন ---- একশ পাতার রেফারেন্স দিলেও সে অপরাধ খণ্ডন হয় না। এটা বোঝেন? You just can't copy and paste from another (or a number of other articles) and claim to be an author of that collection! কি ভুজুং ভাজুং দিচ্ছেন মশাই? যে লাইনগুলো আপনার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, যে কথা স্রেফ টুকে দিয়েছেন, তাকে একটা কৃতজ্ঞতা মেরে দায় সেরে ফেলা হয়ে গেল, না? যদি বলে সম্পাদনা করেছেন, তাও মানা যায় না। এক টুকরো এখান থেকে আর আরেক টুকরো ওখান থেকে বসিয়ে তৈরি গারবেজ প্রবন্ধ না। কেন এসব ফালতু কাজ করেন? সিসিবিকে এত সামুব্লগ ভাবলে ভুল করবেন। ওখানে বাহবা পাচ্ছেন - এই না কত। ছি!

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      নূপুর, আবারো বলছি এটাকে আমি কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র হিসাবে দেখিনি, তাই পৃথক পৃথক ভাবে তথ্যসূত্র উল্লেখ করিনি। এক কথায় উল্লেখ করেছি কেবল। পরবর্তিতে এই বিষয়ে সতর্ক থাকবো।
      আমি এই ব্লগকেই বেশী আপন ভাবি, তাই তোমাদের খোলাখুলি আলোচনা চাই ও পছন্দ করি। আমি অনেক লেখাই এই ব্লগে প্রথম দিয়ে, অপেক্ষা করেছি, তোমাদের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য, সংশোধন যদি আসে। অনেক সময় প্রথম পাতায় দু'টির বেশী লেখা দেয়া না বলে অন্য ব্লগে আগে দেই।

      তোমাদের সকল মন্তব্যই তো স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি, এবং যা হয়েছে তা বলছি ও খোলাখুলিই উত্তর দিচ্ছি। আমিই সত্যিই আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র হিসাবে প্রবন্ধটিকে দেখিনি বলেই পৃথক পৃথক ভাবে তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে এক কথায় বলেছি শুধু। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো।

      জবাব দিন
  9. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আমি যে অন্যদের লেখা ব্যবহার করেছি, সেটা মূল লেখাতেই উল্লেখ করেছি। এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করেছি। ব্লগের দৃষ্টিকোন থেকে যেই ভুলটা করেছি, তা হলো, পৃথকভাবে প্রতিটি সূত্র উল্লেখ করিনি। সূত্রগুলো আমার অফিসের কম্পিউটারে সংরক্ষিত আছে, আগামী পরশুদিন অফিস খুললে সবগুলো সূত্রই তুলে দেবো।
    এর বেশী আর কিছু বলার নাই।

    জবাব দিন
    • রাব্বী (৯২-৯৮)

      আপনার জন্য আমার শেষ দুইটা কথা -

      ১। লজ্জা এবং আত্মসম্মান বলে বাংলা অভিধাণে দুটি শব্দ আছে। এইটা যার নাই, তার সাথে কথা বলা অবান্তর।
      ২। এইসব 'গারবেজ' উৎপাদন বন্ধ করেন।


      আমার বন্ধুয়া বিহনে

      জবাব দিন
      • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

        রাব্বী, আর কি বলবো বলো? যাদেরকে আপন ভাবি তারাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

        আমি এই ব্লগকেই বেশী আপন ভাবি, তাই তোমাদের খোলাখুলি আলোচনা চাই ও পছন্দ করি। আমি অনেক লেখাই এই ব্লগে প্রথম দিয়ে, অপেক্ষা করেছি, তোমাদের পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য, সংশোধন যদি আসে। অনেক সময় প্রথম পাতায় দু'টির বেশী লেখা দেয়া না বলে অন্য ব্লগে আগে দেই।

        তোমাদের সকল মন্তব্যই তো স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি, এবং যা হয়েছে তা বলছি ও খোলাখুলিই উত্তর দিচ্ছি। আমিই সত্যিই আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র হিসাবে প্রবন্ধটিকে দেখিনি বলেই পৃথক পৃথক ভাবে তথ্যসূত্র উল্লেখ না করে এক কথায় বলেছি শুধু। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো।

        জবাব দিন
        • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

          তোমাকেও আমরা আপন ভেবেই লেখা আত্মসাতের অভিযোগ করেছি, মিঃ আজাদ। ঝাঁপিয়ে পড়াটা ঠিক হয়ে উঠলো না। আমি, নূপুর এবং রাব্বী পৃথিবীর তিনটি ভিন্ন স্থানে ভিন্ন সময়ে অবস্থান করে একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এসেছিলাম। এখানে নিয়মিত ব্লগারদের উপস্থিতি প্রত্যাশিত ছিল। আমরা ফুল পাখি লতাগুল্ম নিয়ে ব্লগে যতোটা উচ্চকন্ঠ ততোটুকুই নিরব অন্য স্থানে। হাজার হোক ক্যাডেট ভ্রাতৃত্ববোধের ব্যাপারটি তো ভুলতে চাইলেও পারিনা!

          কারপে ডিয়েম 😀

          জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        রাব্বি ভাই, আপনি ভুল লোকের থেকে লজ্জা আত্মসম্মান ইত্যাদি আশা করছেন। এই ভদ্রলোকের দৃষ্টিকটু নার্সিজমের বিষয়টা বাদই দেই বরং আমার নিজের একটা অতীত অভিজ্ঞতা বলি। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যখন সবাই সোচ্চার তখন এই ভদ্রলোকও একটা পোস্ট দিয়েছিলেন ফেসবুকে। সেখানে বীভৎস হত্যার ছবি ছিল। তো রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তার সাথে আমার দ্বিমত ছিল না। বরং ইস্যু ছিলো যে ছবিটা শেয়ার করেছিলেন তা নিয়ে। 'গুগল' নামক জিনিসটা তিনি জানলেও ছবি শেয়ার দেবার আগে সেটা যাচাই করে নেননি। যতদূর মনে পড়ে ছবিটি অন্য জায়গা থেকে সংগৃহীত ছিল (সম্ভবত তামিল গেরিলাদের হত্যাকান্ডের)। তো আমি অরিজিনাল সূত্র তাকে ধরিয়ে দিয়ে ছবিটা রিমুভ করবার অনুরোধ করলে। তনি ত্যানা প্যাচান। তখন তার এটা নিয়ে হালকা কড়া কথা বলায়, আগি সিনিয়রদের সাথে কথা বলার আদব জানি না ইত্যাদি বলেছিলেন।

        আসল ব্যাপার হইলো এরা জ্ঞাতসারেই ইন্টারনেটে কারো উদ্দেশ্য সাধনের মিশনে ভ্রমন করে।
        নিজের ব্যাক্তিগত ইস্যু আনতে চাই নাই। তবে এই লোকের ভালো মানুষী চেহারার বাইরের পিছলামিটাও সবাইকে জানানো দরকার মনে করলাম।
        আমি ফুল স্টপ। আশা করি এইখানে কেউ আমাকে ক্যাডেট বড় ভাই আদব ইত্যাদি জাতীয় কোন বয়ান দেবে না।

        জবাব দিন
        • পারভেজ (৭৮-৮৪)

          আদব পাবার একমাত্র যোগ্যতা কি এক বা একাধিক বছর আগে বাল্যকালে এক ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করা?
          তাইলে তো আর কিছুই বলার নাই...

          জানি না ক্লাস টুয়েলভে আটকে থাকা এইসব ক্যাডেট (এক্সক্যাডেট না, ওরা এখনো এক্স হয় নাই) কবে বড় হবে.........


          Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

          জবাব দিন
  10. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    Just the first two paragraphs:

    Internet plagiarism is a term used to describe the illegal use of written work, photographs, or graphics on a website. It is usually taken from another website without giving credit to the creator of the original content. The laws governing online content are the same as for printed materials, meaning they are protected by copyright infringement laws.

    When something is written or a picture or graphic is created, it is automatically copyrighted and protected under the law from being stolen. Internet plagiarism is sometimes harder to detect than with printed materials because of the ease of which materials can be stolen. There are software programs which can alert content creators when their work is being used elsewhere, and legal action cane be taken when this occurs.

    http://www.wisegeek.com/what-is-internet-plagiarism.htm

    জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      নূপুর plagiarism বিষয়টা আমি জানি, তবে সেটা কেবল মৌলিক ও আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্রের ক্ষেত্রেই আমি প্রযোজ্য দেখেছি। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত অনেক কিছুই তো ব্যবহার করা যায় বলেই জানতাম। যাহোক এরপর থেকে আরো সতর্ক থাকবো। এককথায় তথ্যসূত্র না বলে, পৃথক পৃথক ভাবেই সব উল্লেখ করবো।
      আবারো বলছি, ভুলটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়, আমি সব কথাই খোলাখুলিভাবেই তোমাদের বলেছি। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
      আর ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তিতে কোন ভুল হলেও ধরিয়ে দিও, ঝাঁপিয়ে পড়োনা।

      জবাব দিন
  11. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    রমিত সাহেব,

    যে কাজটি করেছেন এর পরে আপনাকে ক্যাডেট বা ডয়ে বিসর্গ এর কোনটাই মানায় না। লজ্জা থাকলে নিজের নামের পাশে ওই ড: আর লিখবেন না। আই রিফিউজ টু এ্যাকনলেজ দা ফ্যাক্ট দ্যাট য়ু এ্যান্ড মি শেয়ার ক্যাডেট কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ড। করুণা হচ্ছে আপনার ছাত্রদের জন্য।

    একাডেমিয়া যদি কোর্ট হত আর এটা যদি মধ্যযুগ হত, এবং প্লেজিয়ারিজম যদি খুন বলে গন্য হত তাহলে আপনি গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত হতেন। আপনার যে শাস্তিটা হত তার নাম "Hanged,Drowned and Quartered". ওটা কি, তা গুগল করে দেখে নিয়েন, after all, that is your forte!

    জবাব দিন
  12. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "ইসলামের স্বর্ণযুগ" টাইটেল দেখে একটা পর্বও আর পড়তে ইচ্ছা হয় নাই।
    কারন ইসলাম আর স্বর্ণযুগ কথা দুইটা বরাবরই আমার কাছে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ বলেই মনেহয়। (নজরুলের বিবি তালাকের ফতোয়া রিলেটেড আক্ষেপ স্মার্তব্য)
    আজ হঠাৎ মন্তব্যের সংখ্যা ৬৮ দেখে ঢুকলাম।
    আর ঢুকেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল।

    রমিত আজাদের ১) অনানুষ্ঠানিক প্রবন্ধে রেফারেন্স দরকার নাই, ২) প্রেগারিজম আনুষ্ঠানিক গবেষনাপত্রে প্রযোজ্য - এগুলা খুবই দুর্বল যুক্তি।
    আমি যেটা বুঝি, আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে রেফারেন্স দিতেই হবে। নাইলে ওটা আনুষ্ঠানিক গবেষনাপত্রই হবে না। অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সেটা যেকোন ভাবে থাকলেই হবে।
    এটা বুঝতে রকেট সাইন্টিস্ট হতে হয় না।
    একটা উদাহরন দিচ্ছি।
    ধরা যাক আমি একটা দিনলিপি লিখছি।
    "আজ বহুদিন পর ক্লাবে গেলাম। দেখলাম বন্ধুদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছো। ভাবছিলাম কিছু বলবো নাকি বলবো না। শেষ পর্যন্ত বলা হলো না কিছুই। আর এখন মাথার মধ্যে বেজে উঠলো কটা পংক্তি -
    আমি কি ওর সাথে কথা না বলে ভুল করেছি?
    আমার কি উচিৎ ছিলো,
    ওর সাথে ক্ষণিকের দৃষ্টি বিনিময় করা?
    নাহ! ভালোই করেছি, ওর মনে কষ্ট দিতে চাই!
    কে পেলো কষ্ট? ও, না আমি?
    যা হয়েছে হোক, ওর সাথে আর কথা নাই!
    অভিমান এই বুকে বেধেছে বাসা!"

    এটা প্লেগারিজম। দিনলিপির মত অতি অনানুষ্ঠানিক লিখায়ও।

    কিন্তু এখানে যদি বলতাম -
    আজ বহুদিন পর ক্লাবে গেলাম। দেখলাম বন্ধুদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছো। ভাবছিলাম কিছু বলবো নাকি বলবো না। শেষ পর্যন্ত বলা হলো না কিছুই। আর এখন মাথার মধ্যে বেজে উঠছে কবি ডঃ রমিত আজাদের কটা পংক্তি -
    "আমি কি ওর সাথে কথা না বলে ভুল করেছি?
    আমার কি উচিৎ ছিলো,
    ওর সাথে ক্ষণিকের দৃষ্টি বিনিময় করা?
    নাহ! ভালোই করেছি, ওর মনে কষ্ট দিতে চাই!
    কে পেলো কষ্ট? ও, না আমি?
    যা হয়েছে হোক, ওর সাথে আর কথা নাই!
    অভিমান এই বুকে বেধেছে বাসা!"
    এটা আর প্লেগারিজম নয়। এটার জন্য কবি ডঃ রমিত আজাদের আনুষ্ঠানিক কোন অনুমতিরও প্রয়োজন নাই।
    প্লেগারিজমের মূল কথা হলো, কি আমার আর কি আমার না, সেটা পৃথক রাখতে পারা।

    বুঝাতে কি পারলাম???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      পারভেজ ভাই, ডিবেটে ক্লিশে হয়ে যাওয়া একটা কথা ব্যবহার করি। "যে ঘুমিয়ে থাকে তাকে জাগানো যায় কিন্তু যে জেগে জেগে ঘুমায়..." ইত্যাদি ইত্যাদি

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        এনালজিটা ভাল হয়েছে মাশরুফ।
        আমি কিন্তু আসলে রমিতের কথা মাথায় রেখে কমেন্টটা লিখি নাই।
        আমার মাথায় ছিল সেইসব অন্ধ-আস্থা পোষন করা তরুনরা যারা নিজেদের আবেগজনিত কারনে ১) "ইসলামের স্বর্ণযুগ" কথাটা দেখে গদ গদ হয়ে লিখাটা গিলেছে এবং রমিতকে জ্ঞানের সাগরের মহা কান্ডারির আসন ছেড়ে দিয়ে বসে আছে, ২) সেই ইনফ্লুয়েন্সের কারনে তাঁর এপোলজিস্টিক ডিফেন্সগুলাকে যথেষ্ট শক্ত ভেবে নির্ভার হয়ে আছে।
        আমি চেষ্টা করেছি, তাদের মনে এই প্রশ্নটা আবার জাগাতে যে প্লেগারিজমের সাথে ১) আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকতার কোন সম্পর্ক নাই। ২) প্রবন্ধ বা গবেষণাপত্রের কোন সম্পর্ক নাই।
        যেকোন ফর্মের লিখাতেই অন্যের কথা নিজের বলে চালানো হলেই তা প্লেগারিজম।

        সেইটা কি পেরেছি? যদি পেরে থাকি, ভাল।
        ঘুমের ভানকারীর ঘুম ভাঙ্গাতে যাবো কোন দুঃখে???


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  13. আমার মনে হচ্ছে এখানে রমিত আজাদ ভাইকে যে ক্রিটিসাইজ করা হচ্ছে সেটা খুব হার্শ হয়ে যাচ্ছে। যদিও উনি বলেছেন উনি সব রেফারেন্স দিয়ে দিবেন ও তার ধারনা এমন ছিল যে -

    "(এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব)

    তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখখদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।"

    এমন লিখলেই ওনার দায়ভার শেষ, যেটা ঠিক নয় উনি বুঝতে পেরেছেন।

    আমি ওনার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ি। তার অধিকাংশ লেখাই খুব খেটে লেখা বলে আমার মনে হয়েছে ও লেখার শেষে কিছু রেফারেন্সও আমি দেখতে পাই। যেমন - পারমানবিক বোমা, বুদ্ধ, সংখ্যা : কপিল, পিথাগোরাস, থালেস, আরো কয়েকটা লেখা - এ ধরনের লেখাগুলো থেকে নতুন কিছু শিখেছি বা ধারনা পেয়েছি। আমি খুব ব্যহত হতাম যে এ লেখাগুলোর পাঠক সংখ্যা ও কমেন্ট খুব কম। যেমন মাত্র "১৩০ বার দেখা হয়েছে" কপিল, পিথাগোরাস এ ব্লগটি। কমেন্ট মাত্র চারটি। অধিকাংশ সময়েই আমরা ব্লগে আসি এন্টারটেনমেন্টের জন্য। এজন্য প্রবন্ধের চাইতে অন্য ধরনের লেখাই হয়তো আমাদের বেশি পড়া হয় স্বাভাবিক ভাবেই।

    "ইসলামের স্বর্ণযুগ" লেখাটা আমার মনে হচ্ছে উনি খুব বড় করে ফেলেছেন। আর পুরো লেখাটা একবারে না চিন্তা করে সাজিয়ে পর্বগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সাজাচ্ছেন। আর এই সিরিজে কোনো স্পেসিফিক রেফারেন্সও আমি দেখতে পাইনি। শেষ কয়েকটা পর্বই বিব্লিকাল গল্প দিয়ে সাজানো যেগুলো স্কিপ করেছি।দুর্বল মনে হয়েছে। এগুলো কোথা থেকে নেয়া হয়েছে কিনা সে না জেনেই দুর্বল লাগছিল এ লেখাটাকে।তবু এতে তার অন্য লেখাগুলোর পেছনে কষ্ট ও খাটাখাটনি থেকে যে অনেক শিখেছি সেটা ছোট হয়ে যাচ্ছে না। এমনকি এ সিরিজের শুরুতেও Zoroaster কে নিয়ে লেখায় অনেক নতুন কিছু শিখেছি।

    আমি বলব, আমরা খুব সহজেই নিজের জানাকেই একমাত্র সঠিক মনে করি ও জানার পথকে রুদ্ধ করে রাখি। আর আমরা অন্যমতের প্রতি মোটেই শ্রদ্ধাশীল নই। ঠিক তেমনি ভাবে প্রতিবাদ, ক্রিটিসিসম ইত্যাদি সঠিকভাবে করতে পারিনা। রাস্তায় চোর ধরা পড়লে আমরা গনপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলাটাকেই স্বাভাবিক বলে মনে করি।

    আমি বলব এখানে যেভাবে হামলা করে ক্রিটিসাইজ করা হচ্ছে সেটা খুব হার্শ হয়ে যাচ্ছে। রমিত আজাদ ভাই একজন একাডেমিক হয়ে খুব ভালভাবেই এগুলো জানেন। ইন্টারনেট/ব্লগ নতুন হলেও সেখানে কি ধরনের রুল প্রযোজ্য সেটাও উনি জেনে নিবেন।

    এখানে যে ধরনের হার্শ কমেন্ট করা হচ্ছে আমি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তবে আপনি জেনে নিবেন 'ক্যাডেট ভ্রাতৃত্ববোধ' বলে যে কথাগুলো এখানে উল্লেখ করা হয়েছে ক্রিটিসাইজ করার কারন হিসেবে, সেগুলো মিসলিডিং।

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      চোর ধরা পড়লে গণপিটুনী দেবার পক্ষপাতী সিসিবিয়ানরা নয় সোহেল তুমি জানো আশাকরি। তবে চোর ব্লগার ধরা পড়লে চুম্মা যে খাবে না সিসিবিতে সেটি আমি নিশ্চিত জানি!

      কানা কে কানা খোঁড়া কে খোঁড়া বলিও না শিখেছিলাম। আজ তোমার থেকে শিখলাম চোর কে চোর বলিও না। ব্রাভো, ছোট ভাইয়া! ভ্রাতৃত্ববোধের জয় হোক :clap:

      জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        মিষ্টি হেসে যাহ দুষ্টু বলে সমালোচনা করলে কি ভাল হতো, সোহেল? ১৬৫ টি ব্লগ লিখেও যদি লেখক বলেন যে তিনি সাইটেশন সম্পকর্ে জানেন না তবে তাকে কি করে শেখাবো তুমি বল। সুগার কোটেড সমালোচনা করার একটা পন্থা বের করতে হবে দেখছি! রমিত আজাদ কি জানে আর কি জানে না তা নিয়ে জ্ঞান দিতে এসো না আমাদের। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের যদি এই শিক্ষা থাকে তবে তার ছাত্রদের জন্য মায়াই হচ্ছে। ভাগ্যিস এটি পূবর্ের ঘটনা, পশ্চিমে এটি ঘটলে খবর হয়ে যেত লেখকের।

        জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      সোহেল,
      এমন সময়ে উনার হয়ে কথা বলার জন্যে ধন্যবাদ। অবশ্যই উনার নিজের হয়ে বলার অধিকার আছে এবং বলছেনও।
      হ্যাঁ, আমার মনে হয় প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট শক্ত হচ্ছে। হবেই কারণ উনার (অন্তত) একটা পিএইচডি আছে এবং উনি শিক্ষক। গতকালকেই ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হন নি উনি। যা না জেনেবুঝে করেছেন বলে দাবী করেছেন তার জন্যেও কথা শুনতে হবে বৈ কি। কারণ না জানাটা কোন উপযুক্ত অজুহাত নয়। আমি এও জানি, সামুব্লগ এ আমরা এ ধৃষ্টতা দেখাতে পারতামনা --- সেখানে উনার স্বর অন্যরকম হতো। সামুতে এই লেখা দিয়ে উনার পোস্টে একটি প্রতিমন্তব্য এখনো জ্বলজ্বল করছে। তাছাড়া চেপে না ধরলে ---- প্রায় কয়েকগণ্ডা মন্তব্য খরচ না করলে উনি এটা মানতেনই না যে উনি ভুল করেছেন কোন প্রকার। এ ধরনের অভিযোগের পর প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে লেখাটিকে উঠিয়ে নেয়া --- সেদিকে তাঁর ভ্রূক্ষেপ নেই। সামুতেও তিনি ঘুণাক্ষরেও এ বিতর্কের কথা উচ্চারণ করবেন কি না সন্দেহ আছে। আমার ধারণা ওখানে তিনি বাহবা কুড়াতে থাকবেন। এগুলো স্রেফ অনুমান থেকে বলছিনা। সিসিবির ইতিহাস থেকে বলছি। একই ধরনের মন্তব্যে এখানে মিনমিন করেন আবার ওখানে (সামুতে) সুযোগমতন (যেই একটু এদিক সেদিক বলবে) দাবড়ানি দিয়ে দেবেন। বেশ সমর্থনও জোটে ওখানে। যাক এসব কথা, বলা হচ্ছে ঝাঁপিয়ে পড়েছি ওঁর বিরুদ্ধে। ঝাঁপিয়ে পড়েছি ঠিকই, তবে কারো বিরুদ্ধে নয়। চৌর্যবৃত্তির বিরুদ্ধে, তাকে জাস্টিফাই করার বিরুদ্ধে, বুঝেও না বোঝার ভানের বিরুদ্ধে, পাঠককে প্রতারিত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে।

      জবাব দিন
    • ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

      এই দুঃসময়ে আমাকে বোঝার ও আমার হয়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ সোহেল। তুমি ঠিকই ধরেছ যে,

      তার ধারনা এমন ছিল যে -

      "(এই প্রবন্ধে কোন ভুল-ত্রুটি থাকলে তা লেখকের অনিচ্ছাকৃত। পাঠকদের প্রতি বিনিত অনুরোধ রইলো, ভুলগুলি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে, সংশোধন করে দেব)

      তথ্যসূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। আমি সকল লেখখদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।"

      এমন লিখলেই ওনার দায়ভার শেষ, যেটা ঠিক নয় উনি বুঝতে পেরেছেন।

      জবাব দিন
  14. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    আরো একবার বলছি। আমার ভুলটা অসাবধানতাবশতঃই ছিলো। আমি তো কোথাও একবারের জন্যও অস্বীকার করিনি যে, আমি অন্যের লেখা ব্যবহার করিনি। ভুল যেটা হয়েছে তা হলো পৃথক পৃথক ভাবে তা উল্লেখ করিনি। আগামীকাল সেটা সংশোধন করে দেব। পবিত্র কোরআন ও বাইবেলের ভার্স যে কেউই উল্লেখ করার অধিকার রাখে সেটা আিন্য কারো লেখা ব্যবহার করা না।
    সামু ব্লগের কথা যেখানে উঠলো, সেখানে বলছি, একজন পাঠক আমার কাজকে কষ্টের কাজ বলেছেন, তার উত্তরে আমি স্পষ্ট বলেছি যে,

    "আমার কষ্ট অনেকটাই লাঘব করে দিয়েছেন অন্যেরা। এই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে আমি অন্য অনেকের লেখার সাহায্য নিয়েছি, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।"

    নীচে তারিখ ও মন্তব্য দুটি তুলে দিলাম।

    ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩০
    নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: অনেক কষ্টের কাজ করেছেন ভাই।
    কষ্টের তুলনায় পাঠক কম।
    ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫
    লেখক বলেছেন: আপনাকেও কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
    এই ধরনের লেখার পাঠক বরাবরই কম হয়। জ্ঞানপিপাসু বাঙালীদের সংখ্যা এখনো খুব বেশী নয়। হালকা জিনিস নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতেই আমরা বেশী পছন্দ করি।
    তারপরেও আজ বিকেলে তো মাত্র প্রকাশ হলো, সময়ের সাথে পাঠক হয়তো বাড়বে।
    কষ্ট করেছি লিখেছি তবে, আমার কষ্ট অনেকটাই লাঘব করে দিয়েছেন অন্যেরা। এই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে আমি অন্য অনেকের লেখার সাহায্য নিয়েছি, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

    সোহেলকে ধন্যবাদ, এই দুঃসময়ে আমার হয়ে কিছু বলার জন্য। অন্যদেরও ধন্যবাদ, সংশোধন করে দেয়ার জন্য। নূপুর যেটা বলেছে, যে "আপন মনে করেই মন্তব্যগুলো করেছি।"

    আবারো বলছি, আগামীকাল তথ্যসূত্রগুলো পৃথক পৃথক ভাবে তুলে দেব। পরবর্তি পর্বগুলোতেও প্রতিটি তথ্যসূত্র বিস্তারিত উল্লেখ করবো।

    জবাব দিন
  15. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    নো ওয়ান ওয়াজ আস্কিং ফর দা সোর্সেস, ডিয়ার রমিত আজাদ! রাব্বীর মূল অভিযোগ হলো, দাড়ি কমা সেমিকোলন সহ অন্য অনেকের লেখাকে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছো তুমি। মোট কথা, সোর্স নিয়া আমাদের মূল প্রশ্ন নয়, মূল অভিযোগ হলো, তুমি নানান জায়গা থেকে টুকলিবাজি করে নিজের নাম দিয়ে প্রবন্ধ লিখেছো। রাব্বী তো ইতোমধ্যেই প্রমাণ হিসেবে লিংকগুলো দিয়েই দিয়েছেন। বুঝাতে কি পারলাম?

    সামু থেকে সবচেয়ে নিরীহদর্শন মন্তব্যটি তুমি সিসিবিতে উল্লেখ করেছো। তোমার মন্তব্যের ধরণ সম্পকর্ে কেবল নূপুর নয় আমিও খানিক পরিচিত। যাই হোক, একই কথার চর্বিতচর্বণ বলতে বলতে আমি ক্লান্ত। সামু যে সিসিবি নয় সেটি নিশ্চয়ই জানো তুমি। সিসিবিতে সরব পাঠকদের তুমি দেখেছো, ব্লগের নিরব পাঠক যে কত তুমি চিন্তাও করতে পারবেনা।

    জবাব দিন
  16. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমি সচেতনভাবে ডঃ রমিত আজাদ ভাইয়ের সকল লেখা এড়িয়ে চলি। এর পিছনে একটা কারন হলো সিসিবিতে ডঃ রমিত আজাদ ভাইয়ের নিজের লেখা বাদে অন্য কোন লেখায় কোন উপস্থিতি চোখে পড়ে না, তাই আমিও সিসিবিতে ডঃ রমিত আজাদ ভাইয়ের উপস্থিতিই চোখে পড়াই না। তবে তার থেকে বড় কারন হলো ওনার পুরোনো কার্যকলাপ, রবিন ভাই যেমন বললেন আমরা অনেকেই ভুলে যাই কিন্তু আমি এখনো ভুলিনি। ডঃ রমিত আজাদ ভাইয়ের অন্যান্য সব লেখার মত এই লেখাটাও দেখা হতো না যদি না পাশে এতগুলো মন্তব্য সংখ্যা ঝুলতো।

    অসংখ্য ধন্যবাদ রাব্বী ভাই বিষয়টা সামনে তুলে ধরার জন্য, এখন তো দেখছি গুগল করা জন্য হলেও ডঃ রমিত আজাদ ভাইয়ের লেখার একবার করে আসতে হবে 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  17. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    ডঃ রমিত আজাদ ভাই এর আসল চেহারা একবার পুট করে বের হয়ে গেসিলো সিসিবিরই একজন দুর্দান্ত লেখক খুবই রিজনেবল এবং ভদ্র একজন সদস্যের প্রতি করা উনার একটি ঘৃণ্য সাম্প্রদায়ক কমেন্টে। সত্যি কথা বলতে কে এর চেয়ে বিশ্রি ভাবে আমি কোন 'শিক্ষিত' মানুষকে কখনো কাউকে আক্রমণ করতে দেখিনি। এরপরেই আসলে আর উনার এইসমস্ত 'খেটেখুটে' লেখার প্রতি তেমন আগ্রহ পাইনি লেখার পেছনের মানুষটার আসল চেহারা চিন্তা করে। এখানে মোটেও উনার উপরে কোন হার্শ আক্রমণ কিংবা ঝাপিয়ে পরার মতো কোন কিছু দেখিনি। যট্টুক দেখলাম তা পুরোটাই খুবই ভদ্রস্ত ভাবে উনার আপাত নিরীহ দর্শন চৌর্য্যবৃত্তির প্রতিবাদ। আমাদের মতো আমজনতা এভাবে আরেকজনের লেখা হুবুহু মেরে দিলে যতোটা আপত্তি আসার কথা, উনার মতো স্কলার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছ থেকে সেরকম কিছু আসলে তার রিএকশন একটু বেশিই হবে, তাইনা? আর উনি যেভাবে বারবার বলছেন যে অফিস খুল্লেই সব রেফারেন্স এখানে তুলে রাখবেন, তাতেও দাড়ি কমা সহ মেরে দেয়ার ক্রাইম যে কিছুই কমেনা এটাতো কমনসেন্স।


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  18. আমিও পারভেজ ভাই এত মত করে বলতে চাই যে "ইসলামের স্বর্ণযুগ" শিরোনাম দেখেই আর আগ্রহ ছিলনা এই ব্লগের উপর। আরবদের স্বর্ণযুগ বলা যেত হয়তোবা। ভাইয়াকে অন্য কোথাও মুসলিম সায়েন্টিস্ট ও ব্যাবহার করতে দেখেছি কোনো একটা পোষ্টে। যাইহোক এগুলা ওনার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হতে পারে কিন্তু সিসিবিতে কামরুল ভাই সব সময় একটা কথা বলতো, "কোয়ানটিটি নয় কোয়ালিটি প্রয়োজন"। আমাদের কোয়ান্টিটি বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু কোয়ালিটি কমে যাচ্ছে এধরণের কপি পেস্ট লেখা গুলোর জন্য, যা সিসিবিতে কখনোই কাম্য নয়। আগে একটা ব্লগ লিখে ভয়ে থাকতাম, কত ঝাড়ি খাইসি কমেন্টে এবং ফোনে। এত কষ্ট আর মডারেশন করে যারা সিসিবিকে ভালো একটা অবস্থানে এনে ছিলেন। তারা যদি এধরণের কপি পেষ্ট লেখা দেখেন তাহলে খুব অবাক এবং কষ্ট পাবেন।

    জবাব দিন
  19. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    স্টে কুল গাইস।
    হ্যাভ এ সিগার।
    পাইন্ট অফ বিয়ার।
    অথবা সরবত।

    রমিত ভাই তার ভবিষ্যতের লেখাগুলোয় রেফারেন্স গুলো দিয়ে দিবেন কিংবা বিভিন্ন প্রবন্ধ থেকে অংশবিশেষ নেয়ার সময় আরো সাবধান হবেন এই আশা রাখি।

    অটঃ আমি নিজেও প্রচুর ডানে বামে থেকে নিই।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  20. অরূপ (৮১-৮৭)

    সিসিবি একটা দুর্দান্ত জায়গা ...
    পারভেজ ভাইয়ের অনুরণনে একটা কথা স্বর্ন যত জায়গায় আছে সেখানেই কোথাও না কোথাও ঘাপলা লাগেই।


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
  21. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    বেশ অনেকদিন হল সিসিবি ঝিমিয়ে পড়েছিল মনে হচ্ছিল। সেখান থেকে সিসিবি'কে গা' ঝাড়া দিয়ে ওঠার উপলক্ষ করে দেয়ার জন্য ডঃ রমিত ভাইকে ধন্যবাদ। তার বাদে এই ব্লগের আর সবটুকুর জন্য তাকে নিন্দা ছাড়া আর কিছু দিতে পারছিনা। এবং এজন্য আমি অবশ্যই দুঃখিত নই।

    তবে সমালোচনার পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আমার কয়েকটি কথা আছে, সেগুলোই বলছি-

    আমি সিসিবিতে আসি মূলতঃ প্রবন্ধ পড়ার জন্য। মাঝে মধ্যে দিনলিপি, স্মৃতিকথা, গল্প, ইত্যাদি টাইপের লিখা পড়ি। তবে ডঃ রমিত ভাইয়ের প্রবন্ধগুলো বাদ দিয়ে যাই। এর অন্যতম কারণ হলো, লেখকের নামের সামনে ডঃ দেখে যে এক্সপেক্টেশন তৈরী হয়, লেখাগুলোর মান সেই মাত্রার থেকে বেশ নিচে থাকে। তার প্রবন্ধগুলোতে প্রধানতঃ এখানে থেকে সেখান থেকে নেওয়া তথ্য থাকে, কিন্তু সেগুলোকে সিন্থেসাইজ করে নতুন কোন বক্তব্য প্রায়শঃই থাকেনা।

    রাব্বীকে ধন্যবাদ রমিত ভাইয়ের লেখায় প্লাজিয়ারিজম ধরিয়ে দেয়ার জন্য। বর্তমানে আমরা যে পশ্চিমে যাত্রা করি উচ্চতর জ্ঞানার্জনের জন্য, সেখানে প্লাজিয়ারিজম একটা মারাত্মক ক্রাইম। আর এর মাশুলও দিতে হয় চরমভাবে। সেই শাস্তি বিধান করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। যতদূর জানি সিসিবিতে এডমিন প্যানেল আছে, একটা রেডবুকও (সংবিধান) আছে। আমি অনুরোধ করবো সিসিবির এডিমিন প্যানেল এই বিষয়ে দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে। আমি মনে করি, ডঃ রমিত আজাদ ভাইয়ের যা' কিছু বলার আছে, সেটা জনে জনে না-বলে এডমিনের কাছে বলাই শ্রেয়। একইভাবে সকলেই ব্যক্তিগত হতাশা/রাগ/বিরক্তি ইত্যাদি প্রকাশ করার পাশাপাশি এডমিনের পদক্ষেপের প্রতি লক্ষ্য করা শ্রেয়। আফটারওল, আমরা চোর ধরা পড়লে রাগ/ঘৃণা প্রকাশ করি ঠিকই, কিন্তু অপরাধীকে বিচারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতেই সোপর্দ করি। এডমিন তাকে ব্যান করবে, কি সতর্ক করবে, নাকি আর কোন ব্যবস্থা নিবে সেটা আপাতত এডমিনের হাতে ছেড়ে দেই।

    সোহেল ভাইয়ের সাথে আমি এ বিষয়ে একমত যে, সমালোচনা কঠোর হয়ে যাচ্ছে। তবে এইটাই কি হওয়ার কথা নয়? সাবিনা আপার মতো করে বলি, রমিত ভাই ত' আর সদ্য কলেজ থেকে বের হওয়া কেউ না, রীতিমতো ডঃ করা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি যদি বলেন যে, প্লাজিয়ারিজম কি তা' তিনি জানেন না, তাইলে ক্যামনে কি?

    আজকের ক্লাসে ডেভিয়েন্স বা সামাজিক বিচ্যুতি আলোচনা করলাম। সেখানে বলেছিলাম যে, ক্রিয়াবাদীদের মতে মাঝে মধ্যে সমাজে বিচ্যুতি দেখা দেওয়া সামগ্রিক অর্থে ভালো। কারণ, এর ফলে সমাজের সকলে একত্রিত হয় সেই বিচ্যুতিকে রোধ করতে, সমাজে স্বাভাবিত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। অর্থ্যাৎ, সামাজিক বিচ্যুতি সমাজের সংহতি পুনঃস্থাপন করে। কি দারুণভাবেই না এটা দেখলাম এই সিসিবিতেই! বেশ কতগুলো পুরাণ মুখ উঁকি দিয়ে গেলো এই পোস্টে (এই দোষে অবশ্য আমি খানিকটা দোষী 🙂 ) মনে হল সিসিবি আবার জেগে উঠেছে। এইজন্য রমিত ভাইকে আরেকটা ধন্যবাদ 🙂

    মন্তব্য শেষ করছি সিসিবির সম্মানিত এডজুটেন্ট (এডমিন) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। (সম্পাদিত)


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  22. মুজিব (১৯৮৬-৯২)
    এটাকে আমি কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র হিসাবে দেখিনি

    -
    তিনি একাধিকবার এই অজুহাতটি তুলে ধরছেন। কিন্তু এটা দিয়ে কোনভাবেই দাঁড়ি কমা সমেত কপি করে দেয়াকে জাস্টিফাই করা যায় না। একেবারেই খোঁড়া অজুহাত।
    সিসিবিও কোন আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্র প্রকাশের জায়গা না। তাই আমরা এখানে আনাগোনা করতে হলে শুধু নাম, কলেজ এবং কলেজে অবস্থানের সময়কাল দিয়েই নিজেদেরকে উপস্থাপিত করি। তিনি যখন নামের আগে ড এ বিসর্গ বসানোর আনুষ্ঠানিকতা সহযোগে এরকম একটা ফোরামে আসবেন তখন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই তাঁর সব বক্তব্যের একটা বাড়তি গুরুত্ব জন্ম নেবে (ব্যাপারটা খানিকটা সেই প্রয়াত "ভাষা-সৈনিক" এর নামের আগে প্রফেসর বসিয়ে বাড়তি সুবিধা বাগানোর মত একই পর্যায়ের)। কাজেই সেই সব গুরুত্ব পেয়ে যাওয়া লেখা ও কথার ওজনটা সঠিক রাখার দায়িত্বও তাঁর ঘাড়েই বর্তাবে।


    গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

    জবাব দিন
  23. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    কপিক্যাট গল্পটি বলতে চেয়েছিলাম দুদিন আগে। সিসিবিতে গতকালের সুনামির পর সব ভুলে গেলাম। আজ একজন গল্পটি শুনতে চেয়ে ম্যাসেজ পাঠালেন বলে আমার ঠাকুমার ঝুলিটি নিয়ে এলাম সিসিবিতে 😀

    ঈদের ছুটিতে আমার বন্ধু ইশতির বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে ওর বেড়ালছানা গুট্টুসকে আমার খুব ভাল লেগে গেল। কী তুলতুলে আর আহ্লাদী গুট্টুস! লেজ টেজ নেড়ে কোলে এসে বসে পড়লো সটান। আমি মনেমনে ভাবলাম, গুট্টুসকে আমার চাইই চাই। ইশতির বাড়ি থেকে চলে আসার আগে কাউকে কিছু না বলে আমি বেড়ালছানাটিকে বগলদাবা করে হাঁটা দিলাম বাড়ির পথে। মন্দ কপাল হলে যা হয়, ইশতির নজরে পড়ে গেল ব্যাপারটা।
    ঃ তুমি গুট্টুসকে নিয়ে যাচ্ছো কোথায়, রন্টি?
    ঃ না মানে; গুট্টুসকে আমার খুব ভাল লাগে তাই ভাবলাম ওকে আমি পুষবো। দুধ খেতে দিবো। আদর করবো।
    ঃ ভাল লাগলেই অন্যের জিনিস নিয়ে চলে যেতে পারোনা তুমি!

    কি আর করা! বিল্লিটি নামিয়ে রাখি আমি। দয়া পরবশ হয়ে ইশতি তখন বললো, তুমি যদি গুট্টুসকে অনেক ভালবাসো তবে তাকে কয়েকদিনের জন্য নিয়ে যাও। কিন্তু তার জন্য আমার থেকে অনুমতির প্রয়োজন আছো, রন্টি!

    ইশতির অনুমতি নিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গুট্টুসকে নিয়ে হাসি মুখে বাড়ি ফিরলাম আমি। বিকেলে রাব্বী আর নূপুরসহ আরো কয়েকজন বন্ধু বেড়াতে এলো বাড়িতে।
    ঃ ওয়াও! কী সুন্দর বেড়ালছানা তোমার, রন্টি!
    ঃ দেখতে হবেনা কার বেড়ালছানা এই বাঘিনী! বাঘিনীর মত বিল্লী আমাদের এই সিসিমপুরে একটিও নেই।
    ঃ কিন্তু রন্টি, তোমার বাঘিনীতো দেখি একদম ইশতির বেড়ালছানা গুট্টুসের মত! ব্যাপার কি বলোতো?
    ঃ কী আশ্চর্য, রাব্বী! সব বেড়ালছানা তো একই রকম দেখতে। আমি তো আর নিজে নিজে বেড়াল বানিয়ে বেড়াতে পারিনা! তাছাড়া আমার বাবার অফিসের দেরাজে প্রমাণ আছে আমি ওকে কি করে পেলাম।

    বন্ধুরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চলে গেল। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে ইশতির কল এলো।
    ঃ রন্টি তুমি সবাইকে কেন বলে বেড়াচ্ছো যে গুট্টুস তোমার বেড়ালছানা? তাছাড়া আমার বাড়ি থেকে চলে যাবার পর তুমি আবার ওর নাম বদলে বাঘিনী রেখেছো; ব্যাপার কি হে?
    ঃ কিন্তু গুট্টুস তো এখন আমার সাথে থাকে, ও এখন আমার বেড়ালছানা; তাই আদর করে ওকে বাঘিনী ডাকি!
    ঃ গুট্টসকে তুমি বেড়াতে নিয়ে গেছো, রন্টি। কেউ যদি তোমাকে বলে এটি কার বেড়ালছানা তবে বলো, ইশতির। তাছাড়া গুট্টুসের নাম পাল্টে তুমি বাঘিনীও রাখতে পারবেনা। মনে থাকবে?

    ড. পেগাশ সফোমোর ক্লাসে আমেরিকান সাহিত্য পড়াতে এসে কপিক্যাট নামের গল্পটি আমাদের বলেছিলেন। প্যারাফ্রেজিং, সাইটেশন, রেফারেন্স ইত্যাদি বুঝাতে কপি ক্যাটের প্রসংগ টেনে গল্পের ছলে শেখাতে চেয়েছিলেন প্লেইজারিজম সম্পকর্ে। তিনি গল্প বলার সময়ে আমাদের এক একজনের নাম বলেছিলেন ক্লাসে। সিসিবিতে গল্পটি বলছি বলে আমি চরিত্রগুলোর নাম নিয়ে খানিক খেলাধূলো করলাম।

    শুভরাত্রি, সিসিবিয়ানস!

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      একেবারে মোক্ষম হয়েছে। আপু, লেখা চুরির উপরে এরকম গল্প ও ঘটনার সংকলন নিয়ে একটা ব্লগ লিখে ফেলেন। এরকম বেজায়গায় মুক্তো ছড়ানোর চেয়ে সেটা অনেক বেশি ফলদায়ক হবে। আপনার বন্ধু জেগে ঘুমিয়ে আছেন, তাই ওনার কাছে এগুলোর কোন আবেদন আছে বলে মনে হচ্ছে না। আপনি ব্লগটা লিখে ফেললে অন্যদের অনেক উপকার হবে। আমি নিসচিত, প্রিয়তে রাখবার মত একটি লেখা হবে সেটা। অপেক্ষায় থাকলাম। :hatsoff:


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        মুজিব, কতদিন পর তোমার দেখা পেলাম বলো! তোমার লেখা মিস করছি। জলদি একখানা টাটকা ব্লগ নিয়া হাজিরা দাও হে!

        সতি্য কথা বলতে কি আমরা হলাম শিং মাছের মত পিছলা জাতি। এই কপিক্যাটের গল্পটি ছাড়াও কেউ যদি লেসন নিতে চায় তবে কাব্য বিশ্বনাথন অথবা পেন্টালের গল্পটিই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু শ খানিকের ওপর মন্তব্য চালাচালি হলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে অথবা যাকে শেখানোর জন্য তিনি তো কানে দিয়েছেন তুলো, পিঠে বেঁধেছেন কুলো! অন্ধ হলে যে প্রলয় বন্ধ থাকেনা সেটি কে কাকে বুঝাবে, বলো!

        ভাল থেকো, ভাইয়া!

        জবাব দিন
        • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

          থ্যাংকস সাবিনাপু। হ্যাঁ, বেশ অনেকদিন এদিকে ঢুঁ মারা হয়নি। রাইটার্স ব্লক রোগে ধরেছে মনে হয় (লেখকসুলভ উপসর্গগুলোর মাঝে একমাত্র এটাকেই আমার মাঝে দেখতে পাচ্ছি) 😉 😛 ~x( :bash: ... দেখা যাক, কলমে শান-টান দিয়ে ভালো করে কালি ভরে একটু চেষ্টা করে দেখি, যদি কোন লেখা-টেখা বের হয়!
          তবে আপু, আপনাকে সিরিয়াসলি বলছি, এই ঘটনাগুলির সবকটা এক করে একটা ব্লগ লিখে ফেলেন। নতুন লেখকদের ত বটেই অন্য অনেকেরও কাজে আসবে, বিভিন্নভাবে। আর, আশা করছি, উনিও হয়তঃ, এযাত্রায় না মানলেও, আগামীতে এরকম বেফাঁস কাজকারবার করার আগে সতেরবার চিন্তা করে নেবেন।


          গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

          জবাব দিন
          • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

            স্বর্ণ যুগের রূপকথা পড়ে শেষ করার আগেই দেখি রমিত আজাদ পরিচালিত জম্বি মুভি শুরু হয়ে গেছে সিসিবিতে। ব্লগে বিনোদনের খানিক ঘাটতি ছিল। এখন মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের ধাক্কায় সেই ঘাটতিও পূরণ হলো!

            শান টান এখন আর কেউ ম্যানুয়ালি দেয়না হে। এট লিস্ট তুমি ঢাকার ভানুরে নিয়ে আসো, ভাইয়া। ইতিহাসের পর হরর দেখলাম, এবার কমেডি নইলে চলবে কেনরে?

            জবাব দিন
            • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

              😀 😀 😀
              আফাগো, উনি অইলেন ঢাকার ভানু! ওনারে কি ফরমাশ দিয়া যহন তহন নামাইয়া আনোন যায়? আগেই কইছি, রাইটার্স ব্লকে ভুগতাছি। এহন প্যাটে বোমা মারলেও কোন লেখা বাইর অইবো না...
              তয় আমার অফিসের দেরাজে একটা পুরানা ড্রাফট খুইজা পাইছি। গত এপ্রিলে পাকিস্তানরে বাংলাওয়াশ দেওনের পরে আনন্দ হজম করতে না পাইরা তড়বড় কইরা হাবিজাবি কিছু ছ্যাট্যায়ার লেইখা ফালাইছিলাম। যদিও জ্যৈষ্ঠ মাসে পৌষের গীত হইয়া যাইবো, তবু আপনারা সাহস দিলে সেইডারে এহানে দিয়া দিতে পারি। আপনেরা পচা ডিম-টিম লইয়া রেডি হইয়া বসেন ... :no: :no: :((


              গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

              জবাব দিন
              • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

                আপিসের দেরাজে আরো কতকিছুর সন্ধান যে মিলবে কালে কালে সে কি আর জানিনা ভেবেছো?

                পঁচা ডিমের সাথে দুটো চারটে কামানও নিয়ে আসবো, ভেবোনা। এই স্টিংকি ব্লগে আড্ডা দিবোনা। চলে আসো লেখা নিয়ে।

                জবাব দিন
                • মুজিব (১৯৮৬-৯২)
                  আপিসের দেরাজে আরো কতকিছুর সন্ধান যে মিলবে কালে কালে সে কি আর জানিনা ভেবেছো?

                  আফাগো, আপনের কতাই ঠিক! ২০১৪ সালের মার্চের শেষদিকে লেখা এক খণ্ড ভানু খুঁজে পেয়েছি। একেবারে জ্যৈষ্ঠ মাসে জ্যৈষ্ঠেরই গীত! একটু বেশী লম্বা, তবে পড়লে আপনার মাথা নির্ঘাত ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এক্ষুনি দিয়ে দিচ্ছি। তাহলে, ইতিহাস আর জোম্বি গপ্পের পরে একটু ছ্যাটায়ার হোক! 🙁


                  গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

                  জবাব দিন
  24. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "যে মুহুর্তে আমরা নতুন কিছু জানার পথটি রুদ্ধ করে দিই ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে মৃতপ্রায় আত্মার সাথে জীবিত দেহের বসবাস শুরু হয়" - কান্ট এগ্রী মোর...
    অন্যভাবে বললে, "এই ব্যাপারে যথেষ্ট জানা আছে আমার, আর না জানলেও চলবে...." - এটাও কিন্তু একই রকমের ক্ষতিকর।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  25. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    ডিবেট ফোরামের আমার একজন বন্ধু জানালেন এই ব্লগ পোস্টটি নিয়ে জোর আলোচনা চলছে সেখানে। গ্রেট জব, ডিয়ার ক্যাডেটস! তবে ভাইয়ারা তোমাদের কিন্তু সিসিবিতেও দেখতে চাই। রেইজ ইয়োর ভয়েস!

    মিঃ আজাদের টুকলিবাজি সোনাদানার সাহিত্যকর্মটি গত কয়েকদিনে একশোবারের বেশী শেয়ার করা হয়েছে। আমার একজন শুভানুধ্যায়ী মেইল করে বলেছেন, নিজেকে বিতর্কিত করে কি লাভ ব্লগে? অন্য একজন টেক্সট করেছেন এই বলে যে, সিসিবির সব ছাগলছানাকে কি কাঁঠালপাতা খাওয়াবেন নাকি?

    ব্লগের লেখার উত্তর আমি ব্লগেই দিতে স্বচ্ছন্দবোধ করি। মেইল এবং টেক্সটের উত্তরে বলবো, ছাগপালনের দায়িত্ব সিসিবি নিতে পারেনা। আমরা ছাগলমুক্ত সিসিবি চাই তবে নিজের ঘরে বসে কাঁঠালপাতার পাতুরি খেতে চাইলে কেউতো আর আপত্তি করবেনা।

    জবাব দিন
  26. অর্ণব কুন্ডু (ককক ২০০৭-২০১৩)

    পুরোটা পড়ে দেখলাম।। রমিত আজাদ তার সব দোষ মাথা পেতে নিয়েছেন।।তিনি সুন্দর ভাবে উত্তর ও দিয়েছেন সবার কথার।একটাবারো তার লিখায় কোথাও পেলাম না যেঁ তিনি কারো উত্তর হারশ ভাবে দিয়েছেন (যেই কাজটা এখানে অনেকেই করেছেন)।
    আমার কথা হলো এর থেকে সুন্দর ভাবে একটা মানুষ কিভাবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবে?নিচে উল্লেখ্য করা তার ২টা কমেন্ট কি যথেষ্ট না?

    "নূপুর plagiarism বিষয়টা আমি জানি, তবে সেটা কেবল মৌলিক ও আনুষ্ঠানিক গবেষণাপত্রের ক্ষেত্রেই আমি প্রযোজ্য দেখেছি। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত অনেক কিছুই তো ব্যবহার করা যায় বলেই জানতাম। যাহোক এরপর থেকে আরো সতর্ক থাকবো। এককথায় তথ্যসূত্র না বলে, পৃথক পৃথক ভাবেই সব উল্লেখ করবো।
    আবারো বলছি, ভুলটা আমার ইচ্ছাকৃত নয়, আমি সব কথাই খোলাখুলিভাবেই তোমাদের বলেছি। আমাকে বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।
    আর ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। পরবর্তিতে কোন ভুল হলেও ধরিয়ে দিও, ঝাঁপিয়ে পড়োনা।"

    "আরো একবার বলছি। আমার ভুলটা অসাবধানতাবশতঃই ছিলো। আমি তো কোথাও একবারের জন্যও অস্বীকার করিনি যে, আমি অন্যের লেখা ব্যবহার করিনি। ভুল যেটা হয়েছে তা হলো পৃথক পৃথক ভাবে তা উল্লেখ করিনি। আগামীকাল সেটা সংশোধন করে দেব। পবিত্র কোরআন ও বাইবেলের ভার্স যে কেউই উল্লেখ করার অধিকার রাখে সেটা আিন্য কারো লেখা ব্যবহার করা না।
    সামু ব্লগের কথা যেখানে উঠলো, সেখানে বলছি, একজন পাঠক আমার কাজকে কষ্টের কাজ বলেছেন, তার উত্তরে আমি স্পষ্ট বলেছি যে,

    "আমার কষ্ট অনেকটাই লাঘব করে দিয়েছেন অন্যেরা। এই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে আমি অন্য অনেকের লেখার সাহায্য নিয়েছি, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।"

    নীচে তারিখ ও মন্তব্য দুটি তুলে দিলাম।

    ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩০
    নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: অনেক কষ্টের কাজ করেছেন ভাই।
    কষ্টের তুলনায় পাঠক কম।
    ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫
    লেখক বলেছেন: আপনাকেও কষ্ট করে পড়ার ও মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
    এই ধরনের লেখার পাঠক বরাবরই কম হয়। জ্ঞানপিপাসু বাঙালীদের সংখ্যা এখনো খুব বেশী নয়। হালকা জিনিস নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতেই আমরা বেশী পছন্দ করি।
    তারপরেও আজ বিকেলে তো মাত্র প্রকাশ হলো, সময়ের সাথে পাঠক হয়তো বাড়বে।
    কষ্ট করেছি লিখেছি তবে, আমার কষ্ট অনেকটাই লাঘব করে দিয়েছেন অন্যেরা। এই প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে আমি অন্য অনেকের লেখার সাহায্য নিয়েছি, তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

    সোহেলকে ধন্যবাদ, এই দুঃসময়ে আমার হয়ে কিছু বলার জন্য। অন্যদেরও ধন্যবাদ, সংশোধন করে দেয়ার জন্য। নূপুর যেটা বলেছে, যে "আপন মনে করেই মন্তব্যগুলো করেছি।"

    আবারো বলছি, আগামীকাল তথ্যসূত্রগুলো পৃথক পৃথক ভাবে তুলে দেব। পরবর্তি পর্বগুলোতেও প্রতিটি তথ্যসূত্র বিস্তারিত উল্লেখ করবো।"

    জবাব দিন
  27. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    আমার আবার একটা গল্প মনে পড়ে গেল, ভাইয়া।

    এক ডাইনি রাণী হয়ে এলো প্রাসাদে। ডাইনিটি আগে বেড়ালের রূপ ধরে ইঁদুর মেরে খেতে ভালবাসতো। তারপর বেড়াল থেকে রূপবতী কন্যার রূপ ধরলে রাজা তার প্রেমে পাগল হয়ে বিবাহ করলেন।

    একদিন বড় রাণী রাজাকে বললো, নতুন রাণী আসলে মানুষ নয়, ডাইনি। রাজা ভাবলেন রাণীরা হিংসাপরায়ণ হয়ে এসব কথা বলছেন। রাণীরা দমবার পাত্র নন।

    তারা গোপনে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা লাগালেন প্রাসাদে 😛 তক্কে তক্কে থাকে সবাই।

    একদিন সন্ধ্যায় দূরে একটি ইঁদুরছানা দেখতে পেয়ে ডাইনি রাণী চকিতে এদিক ওদিক তাকিয়ে টুপ করে ইঁদুরটি মুখে চালান করে দিল। আর যায় কোথা! সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় ধরা পরে গেল সব 😛

    মোরাল অব দা স্টোরি ছিল কেউ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনা; তার ভেতরকার দানবটি কিংবা মানুষটি অথবা সিসিবির ক্ষেত্রে নকলনবিস লেখকটি কিংবা ছাগলটি বেড়িয়ে আসবেই!

    আমার অবশ্য গোট শ্যাংক খেতে জোস লাগে। ফাটাফাটি একটা রেসিপিও আছে, পারভেজ ভাইয়া!

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      মিঃ আজাদের রোল মডেল বোধকরি ডাক্তর সাব; আমি প্রফেসর ডঃ মুহম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের কথা বলছি। সোনামানিক্য যুগের ধারাবাহিক ব্লগ পোস্টগুলোতে একটু বেড়াতে গেলাম। কি যে বলবো নিজেই জানিনা। প্যারাগ্রাফ আফটার প্যারাগ্রাফ সোনার চোরাচালান করে এই ব্লগ লেখা হয়েছে। তার মানে কি দাঁড়ালো? ধর্মকথাও চুরি করে ন্যায়নীতির বুলি কপচাচ্ছে মিঃ আজাদ!

      মুক্তমনাতে গেলাম। কুড়িগ্রামে বেড়ালাম, সামুতে ঢু দিলাম; তাও তো মোটে হাতে গোণা তিনটে চারটে ব্লগ পোস্ট নিয়ে; বাকীগুলোতেও যাবো এক এক করে।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।