ম্যাজিক বয় – ০১ – ০২ – ০৩ – ০৪ – ০৫ – ০৬
প্র্যাকটিস দেখতেই হাজার-হাজার লোক। তাদের ঠেকাতে সিকিউরিটি কোম্পানির লোক ভাড়া করতে হয়েছে। হীরু জানিয়েছেন, প্র্যাকটিস দেখতে টিকেটের ব্যবস্থা করতে তিনি বোর্ডে প্রস্তাব দেবেন। শুনে কোচ বলছিলেন, সেটা একটু বেশি হয়ে যায় না। এরা তো সব তোমার সমর্থক। ওদেরকে আটকানোর দরকার আছে। এই লোকগুলোই মাঠে আমাদের শক্তি।
টিকেটের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। লোক আসছে। দুপুর থেকেই আবাহনী মাঠ রীতিমতো জনারন্য। প্র্যাকটিস দেখতে নয়, লোকে আসে রতনকে দেখতে। রতন তাদের দেখাও। মাঠে অনেক কিছুই করা যায় না, ফলের কথা-গোলের কথা ভাবতে হয়, প্র্যাকটিসে ওসব চিন্তা নেই। মনের আনন্দে বল নিয়ে যা খুশি তাই করে। প্রতি বিকালে আবাহনী মাঠ যেন একটা যাদুমঞ্চ। সেটা কাল হয়ে গেল কুরুক্ষেত্র।
ক্লাবে আসার পর থেকেই রতন লক্ষ্য করেছে দলের এবং দেশের এক নম্বও স্ট্রাইকার ইফাদ তার প্রতি চরম শত্র“ভাবাপন্ন। হওয়াটাই স্বাভাবিক। এতদিন সমর্থকদের কাছে সেই ছিল চোখের মনি, এখন কেউ তার দিকে ফিরেও তাকায় না। গত বছরে দলের শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল গোলরক্ষক জনির। এবার সেও পাদপ্রদীপের বাইরে। দুজনের বঞ্চনা একীভূত হয়েছে। ওরা রতনকে কোনো একটা ঝামেলায় ফেলতে চায়।
এই দুজন দলের সিনিয়র খেলোয়াড় এবং সবচেয়ে বড় তারকাও। ক্লাবের সবচেয়ে ভালো দুটো রুমে তারা থাকে, তাদের রুমে দামী সব জিনিসপত্র। অন্য খেলোয়াড়দের ক্লাবে ঢুকতে হলে দরজা নক করে বলতে হয়, আসতে পারি। বাকিদের মধ্যে সেই বালাই নেই। যার যেখানে ইচ্ছা যাচ্ছে, বেরোচ্ছে। সব অবারিত দ্বার। সেই দলটা রতনকে নিজের করে নিল। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার সেন্টু বলে, তোমার সঙ্গে এক মৌসুম খেলেছি এটা সারাজীবন গর্ব করে বলতে পারব!
এক মৌসুম কেন?
আরে সামনের সিজনে তোমাকে আর পায় কে? ইউরোপ থেকে অফার আসবে। ম্যানচেস্টার-বার্সেলোনা এসে পড়বে যে!
রতন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ওরা খবর পাবে কী করে!
খবর পাবে! ইতিমধ্যেই হয়ত ওদের লোক এসে খেলা দেখছে।
ওদের কারো বয়সও খুব বেশি নয়। সেন্টু ২১, বাকিরাও ২৪-২৫এর ঘরে। ওরা ওকে আগলে রাখে বড় ভাইয়ের মতো। আর এজন্যই ক্লাব ওকে গুলশানে বাড়ি ভাড়া করে রাখতে চাইলেও রতন রাজি হয়নি। তার মনে হয়েছে এই পরিবেশটাই সবচেয়ে ভালো। কতকিছু জানা হচ্ছে, খেলার আগে একসঙ্গে বসে বিপক্ষ দলের খেলা বিশ্লেষণ, পরে আলোচনা। না! গুলশানের সুরম্য বাড়ির চেয়ে এই ভালো। সেই বাড়িটা তবু তার নামে ভাড়া করা আছে। রতন তার মাকে বলেছিল তারা যদি সেখানে গিয়ে থাকেন!
বাবা শুনে বললেন, এই বাড়ি ছেড়ে আমরা গুলশান যাব! প্রশ্নই ওঠে না। আমার মক্কেলরা সব ঐ বাড়ি চিনবে কী করে!
বাবা আর মাকে কখনো কোনো বিষয়ে একমত হতে দেখেনি। কিন্তু এই একটা জায়গায় ওরা একমত। ফরিদাও বললেন, না। না। এই বাড়ি ছেড়ে যাব কোথায়? আমার ফুলের টবগুলোর তখন কী হবে!
রফিক কাকা এবং বদরুলের মধ্যে অবশ্য ঐকমত্য হয়নি এখনও। রফিক কাকা রোজই আসেন। সকালেই। প্র্যাকটিস দেখেন, কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানান বিষয়ে আলোচনা করেন এবং ফুটবল ছাড়া অন্য সব বিষয়ে ওদের অজ্ঞতা দেখে দুঃখ পান। তার সঙ্গে মাঝে-মধ্যে আসেন বদরুল। বিশেষ সম্মান পেয়ে তিনি বিগলিত হয়ে পড়েন। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলেন, এই আবাহনী ক্লাবে একবার প্র্যাকটিস দেখতে এসে ক্লাববয়ের লাঠিপেটা খেতে হয়েছিল। আর এখন! কী সম্মান। এমন ছেলের হাতেখড়ি হয়েছে ভাবলেও স্বর্গসুখ।
তোমার হাতে ওর হাতেখড়ি মোটেও হয়নি।
হয়নি?
না। তুমি বাঁশি বাজানো আর লেফট-রাইট করা ছাড়া আর কিছু পারো না। পারলে তোমার দলের এই অবস্থা হতো না। স্কুল টিমতো প্রতিবছর গণ্ডায়-গণ্ডায় গোল খায়।
কী আমি কিছু পারি না! না!
দুজনের এই তর্কটাই রতনের ভালো লাগে। সব বদলে গেছে। কাকাও। শুধু তাদের লাগালাগিটা এখনও আছে। পুরনো দিনের এটুকুই শুধু জীবন্ত।
খুশি মনেই রতন নেমেছিল প্র্যাকটিসে। আজ দু-বেলা প্র্যাকটিস। কারণ পরের ম্যাচটি মোহামেডানের সঙ্গে। লিগে এ পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচ হয়েছে, তার ১২টি জয় এবং একটি ড্র নিয়ে আবাহনী পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে স্বাভাবিক। রতন গোল করেছে ২২টি, দুটো হ্যাটট্রিকসহ। আবাহনীর মতো অতো দাপট দেখাতে পারেনি মোহামেডান, তারা এক-দুই গোলেই জিতেছে বেশির ভাগ ম্যাচ, তবু তাদের জয়ের সংখ্যাও ১১ এবং দুটো ড্র। মানে আবাহনী এগিয়ে ১ পয়েন্টে। এখন এই ম্যাচটা মোহামেডান জিতলে রতনের এই কীর্তি সত্বেও তারা পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে চলে যায়। ওদের প্রস্তুতি ব্যাপক। রাশিয়া থেকে একজন স্ট্রাইকার এনেছে এই ম্যাচের জন্য এবং সেই স্ট্রাইকার নাকি দুর্দান্ত। প্রথম দিনের প্র্যাকটিস শেষে মোহামেডান সমর্থকরা বুক ফুলিয়ে বলছে, আবাহনীর যড়যন্ত্রের জবাব এবার তারা মাঠেই দেবে!
প্র্যাকটিসে প্রথমে কিছু রানিং-স্ট্রেচিং হয়। তারপর শ্যুটিং প্র্যাকটিস শেষে ম্যাচ প্র্যাকটিস। পরের দিন যেই দলটা খেলবে তারা বাকিদের সঙ্গে ম্যাচ খেলে। সেই ম্যাচে রতন খুব একটা চাপ নেয় না। বলেই দেয়া আছে ইনজুরির কোনো ঝুঁকি নেয়া যাবে না। বিপক্ষ ডিফেন্ডারদেরও বলে দেয়া থাকে যে তারা যেন এমন কোনো ট্যাকল করে না যাতে…। শেষদিকে রতনের মনে হলো মোহামেডানের বিদেশী স্ট্রাইকারসূত্রে সমর্থকরা একটু ভয়ের মধ্যে আছে, ওদেরকে একটু সাহস দিতে একটা কিছু করে দেখানো দরকার, যাতে রাতটা তাদের টেনশনে না কাটাতে হয়! রতন একটা বল নিয়ে দুজন মিডফিল্ডারকে কাটিয়ে এগিয়ে গেল, রানিংয়ে পেছনে দিল সেন্ট্রাাল ডিফেন্ডারকে এবং তখনই ঘটল গোলমাল। ডিফেন্ডারটি পেছন থেকে তার হাটু বরাবর পা চালিয়ে দিল। রতন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছিটকে পড়ল মাটিতে এবং তখন স্ট্রাইকার ইফাদ যেন দৌড়ের গতি সামলাতে পারেনি এমন ভঙ্গিতে তার উপর পড়ে গেল এবং খুব পরিকল্পিতভাবে যে পা-টা চালিয়ে দিল সেটা শুধু রতন বুঝতে পারল।
পুরো মাঠে পিনপতন নীরবতা। চাইলে সমর্থকদের সবার হৃদস্পন্দন শোনা যেত। মাঠটাতে বিয়েবাড়ির কলরব থেকে একেবারে মরাবাড়ির নিস্তব্ধতা।
ডাক্তার ছুটে এলেন। ক্লাব কর্তারাও। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করে মুখ কালো করে ডাক্তার বললেন, ফ্র্যাকচার মনে হয়।
হীরুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। তিনি চিৎকার করে বললেন, এই সালাম তোকে এভাবে ট্যাকল করতে কে বলেছে?
সালাম অপরাধীর মতো ভঙ্গি করে বলল, কেউ বলবে কেন? ম্যাচ সিচুয়েশনে তো এরকম হতেই পারে।
তোকে আমি! তোকে আমি…। হীরু কথা খুঁজে পান না।
সমর্থকদের রোষে পড়তে পারে ভেবে দেরি না করে সালাম ক্লাব টেন্টে চলে যায়। কেউ খেয়াল করে না, যাওয়ার সময় ইফাদের সঙ্গে তার দৃষ্টি বিনিময় হয়। ইফাদ ইশারায় যা বলে, তার অর্থ, ওয়েলডান।
হাসপাতালে ডাক্তার পরীক্ষা করে জানালেন, হাড় ভাঙ্গেনি, কিন্তু প্রচন্ড আঘাতের কারণে ব্যথা থাকেব দুই তিনদিন। এই কয়দিন তার বিশ্রাম নিতে হবে। এবং তার দেয়া ওষুধগুলো খেতে হবে একেবাওে রুটিন মাফিক।
হীরু বললেন, কিন্তু কাল যে খেলা! মোহামেডান।
সেটা খেলার প্রশ্নই ওঠে না। আগামী সপ্তাহখানেক মাঠে নামা হবে না।
হীরু ভাই কথার তাল-গোল হারিয়ে বলেন, কিন্তু কোনো ইনজেকশন দিয়ে…। ধরুন কাল খেলল, তারপর টানা এক সপ্তাহ একেবারে বিশ্রাম নিল। আমি কথা দিচ্ছি ওকে বিছানা থেকে উঠতেই দেবো না।
ডাক্তার হাসেন। আপনার কি মনে হচ্ছে ও একটা যন্ত্র যে সুইচটা অন-অফ করলেই। মনে রাখবেন মানুষের শরীর…
ডাক্তার আর কিছু বলেন না। হীরু ভাই প্রায় কেঁদে ফেলেন। এখন কী হবে!
রাতে জরুরী সভা বসল। ক্লাবের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হিতাকাঙ্খী সাবেক খেলোয়াড়রাও উপস্থিত। হীরু ভাই বললেন, দুটো দিন আগে হলেও একটা বিদেশী স্ট্রাইকার নিয়ে আসা যেত! এখন কী হবে!
চেয়ারম্যান বললেন, তুমি অত ভেঙ্গে পড়লে কেন? গত বছর কিন্তু রতন ছিল না। তবু আমরা দুবারই ওদের হারিয়েছি।
কিন্তু ওদের রুশ স্ট্রাইকার আজামভ! দুর্দান্ত!
চেয়ারম্যান বললেন, মেরে দাও।
কোচ হারুন একটু প্রতিবাদ করে বললেন, কিন্তু রেফারিরা ওকে বাড়তি প্রটেকশন দেবে। লাল কার্ড হয়ে যাবে যে!
আমি ফুটবলের অতো কিছু বুঝি না। কিন্তু যদি মনে হয় ও একাই দুই তিনজনের মাপের খেলোয়াড়, তখন তার বিনিময়ে তো একজনকে হারাতেই হবে।
সেন্টু এসে বলে, রতন তোর কী মনে হয়!
পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে থাকা রতন বলে, কী বিষয়ে?
আমার মনে হয়, কোনো একটা যড়যন্ত্র আছে। কিছু একটা!
কীরকম?
বিপক্ষ ক্লাবই হয়ত…। এগুলো কিন্তু চলে।
রতন কিছু বলে না। সে জানে বিপক্ষ ক্লাব নয়, স্বপক্ষের অনেকেই আছে।
হীরু শেষপর্যন্ত চেষ্টা করলেন। সকালবেলাও একজন ডাক্তার নিয়ে এসেছেন, তিনি নাকি এমন ব্যথানাশক ইনজেকশন দিতে পারেন যে ব্যথা দৌড়ে পালায়।
ব্যথা অবশ্য পালাল না। ডাক্তার পালালেন। কারণ সমর্থকরা আশা করেছিল তার ইনজেকশনের পরই উঠে রতন দৌড়াতে শুরু করবে। তার রতন যখন দৌড়াল না, তখন সমর্থকদের দৌড়ানি খাওয়ার ভয়ে তিনি নিজেই দৌড় দিলেন।
রতন সাইডবেঞ্চে বসেই দেখল আবাহনীর দুটো গোল খাওয়া। ১৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটা হল, সেটা ওদের যতো না কৃতিত্ব তার চেয়ে অনেক বেশি আবাহনীর ভুলে। উইং থেকে ক্রস এসেছিল, ডিফেন্ডার রবি বলের দিকে বেশি চোখ রাখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলল স্ট্রাইকার রবিনকে, রবিন সহজ হেডে এগিয়ে দিল দলকে। রতন না খেলাতে ওদের মধ্যে যে ভীতি তৈরি হয়েছিল তারই ফল; নইলে এই নিরীহ ক্রসে গোল হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। দ্বিতীয় গোলটাতে অবশ্য কারো করার কিছু ছিল না। আজামভ তার জাত দেখাল। ছোট জায়গার মধ্যে দুজনকে কাটিয়ে রবিনের সঙ্গে ওয়াল খেলে একেবারে একা হয়ে গেল গোলরক্ষকের সামনে। গোলরক্ষক জনি চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু সেই চেষ্টায় কাজ হওয়ার নয়। প্রথমার্ধের বাকি সময়টা আজামভ আবাহনীকে নিয়ে খেলল যেন। গোল হতে পারত আরও অনেক, হলো না যে সেটা আবাহনীর ভাগ্য। প্রথমার্ধ শেষ হলে আবাহনীর খেলোয়াড়রা এমনভাবে ফিরল যেন এটা খেলাশেষের বাঁশি হলেই তারা খুশি হতো। হীরু বললেন, তীরে এসে তরী ডুবল। নিজের কপালটা ডান্ডা মেরে ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
দলের সঙ্গে ড্রেসিং রুমে ফিরে একবার ইফাদের দিকে তাকাল। কালকের পর থেকেই ইফাদের চেহারায় কেমন যেন অপরাধী অপরাধী ভাব।
সে চোখ নামিয়ে নিল।
রতনের হঠাৎ কী একটা খেয়াল হল। সে কোচ হারুনকে বলল, আমি খেলব।
হারুন বললেন, তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি? তুই মাঠে নামলে আর কোনোদিন খেলতে পারবি না। এমনিতেই ওরা তোকে মারার তালে থাকবে, তার ওপর এই অবস্থা।
আমি খেলব! এমন স্বরে রতন বলল যেটার পিঠে ঠিক সঙ্গে সঙ্গে কথা বলা যায় না।
হীরু উঠে এসে বললেন, পারবে তুমি!
পারব।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গ্যালারি এমন চেহারা নিল যে দেখলে যে কারো মনে হবে আবাহনীই ২-০ গোলে এগিয়ে। কারণ আবাহনী গ্যালারি নাচছে। আর মোহামেডান গ্যালারি স্তব্ধ। তাদের কেউ কেউ তবু উৎসাহিত হতে চেষ্টা করল, মেক্সিকান ওয়েভ তুলল, কিন্তু ঠিক জমল না। কেউ দাঁড়ায়। কেউ দাঁড়ায় না। রতন কী করতে পারে না পারে সেটা তারাও তো জানে।
আজামভ রবিনকে বলল, কী ব্যাপার। আমাদের গ্যালারি এমন চুপ কেন?
রবিন নিজেও যথেষ্ট চিন্তিত। আঙ্গুল দিয়ে রতনকে দেখিয়ে বলল, ম্যাজিক বয়।
আজামভ কিছু শুনেছে বটে, কিন্তু বিশ্বের বহু পেশাদার লিগে সে খেলেছে, সে জানে একজন খেলোয়াড় এই অধুনা ফুটবল যুগে এমন কিছু করতে পারে না। ওরা উচুমানের খেলোয়াড় তেমন দেখেনি বলেই ওদের এমন ভীতি! সে রবিনের গায়ে হাত দিয়ে বলল, ডোন্ট ওরি। আই অ্যাম দেয়ার।
কিন্তু সবচেয়ে বেশি চমকাল আজামভই। দ্বিতীয় মিনিটেই বলটা ধরে ছোট জায়গার মধ্যে এমন ড্রিবল করল যে দেখেও তার বিশ্বাসই হতে চাইল না বাংলাদেশের একটা ১৪ বছরের ছেলেকে সে দেখছে। পুরো ফর্মের মেসি-রোনালদোরাও কি এমন পারে।
ও অবাক হয়ে চেয়ে দেখল রতন ওখানেই থেমে না থেকে লেফট উইংয়ে গিয়ে আরও দুজনকে কাটাল। তারপর ডায়াগোনাল রানিংয়ে ভেতরে ঢুকে গেল চোখের নিমিষে। অবিশ্বাস্য। আশ্চর্য যাদু। সেই যাদুর শেষটা হলো বল জালে গিয়ে। তবে সে নিজে পাঠাল না। ফাকায় দাঁড়ানো স্ট্রাইকার ইফাদকে বলটা ঠেলে দিল। ইফাদ এমন আশ্চর্য হয়েছিল যে গোল করেও সে উল্লাসের বদলে অবাক হয়ে চেয়ে থাকল।
দ্বিতীয় গোলটাও ইফাজের। এবং এবারও গোলটা চাইলেই করতে পারত রতন, কিন্তু করল না, করাল।
হীরু অবাক হয়ে বললেন, ইফাদকে দিয়ে গোল করাচ্ছে কেন? এই ব্যাটা তো উঠানে গোল দিলেও ১০ হাজার করে বেশি চায়।
এবং তার হিসেবে ইফাদ আরও দশ হাজার আজ বেশি চাইবে। কারণ ইফাদ হ্যাটট্রিক করে বসেছে। এবারের গোলে তার কৃতিত্ব তুলনামুলক বেশি। রতনের ফ্রি কিকটাতে সে মাথা লাগিয়েছে সে দক্ষতার সঙ্গেই। আবাহনী ৩-২ গোলে জয়ী, ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে, আবাহনী উল্লাসে ভাসবে। এবং মোহামেডান গ্যালারিতে সুই পড়লেও শব্দ শোনা যাবে এমনই হওয়ার কথা। কিন্তু হলো উল্টেটা। তারাও দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। রতন তো আর এখন আবাহনীর খেলোয়াড় নয়, দেশের সম্পদ।
আজামভ মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, অ্যামেজিং। সুপার ক্লাস। এই ছেলে তো বিশ্বসেরা। ওকে ইউরোপিয়ান লিগে পাঠাতে হবে।
এই উল্লাসের মধ্যে একজনকে শুধু একটু বিব্রত দেখা যায়। ইফাদ। কেউ তাকে অভিনন্দন জানাতে গেলেই সে মাথা নীচু করে ফেলে। যেন কোনো অপরাধের জন্য তাকে তিরস্কার করা হচ্ছে।
ক্লাব চেয়ারম্যান নগদ এক লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করলেন রতনের জন্য।
রতন দাঁড়িয়ে বলল, এই টাকাটা আমি ইফাদ ভাইকে দিতে চায়। তার হ্যাটট্রিকের জন্যই তো!
ইফাদ আরও লজ্জা পায়।
রতন সেই লজ্জাটা খুব উপভোগ করে।
রাতে সেন্টু জিজ্ঞেস করল, তুই ইফাদকে টাকাটা দিয়ে দিলি কেন? জানিস না তো ইফাদ আর জনি তোর বিরুদ্ধে কী চক্রান্ত করেছিল!
মাঠে নেমে একটা ঘোরে চলে গিয়েছিল রতন, কিন্তু এখন ব্যথাটা টের পাচ্ছে। ফাউলগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে মাঠে এড়িয়ে গেছে বটে, কিন্তু দৌড়াদৌড়িতে হাটু ফুলে একেবারে ঢোল। ব্যথার জায়গায় বরফ ঘষতে ঘষতে বলল, আমি জানি। সব জানি।
তাহলে!
রতন হাসে। এবং হাসতে হাসতে তার কান্নাও পেয়ে যায়।
সেন্টু অবাক হয়, তুই কাঁদছিস?
রতন চোখ মুছে। কিছু বলে না।
সেন্টু ভীষণ অবাক। সে-ও বুঝতে পারে কোনো একটা গোলমাল আছে। রতন খুব স্বাভাবিক কেউ নয়।
সে জিজ্ঞেস করে, রতন সত্যি বলতো তুই কে?
রতন হাসে। ম্যাজিক বয়!
(চলবে…………)
১ম 😀 😀 😀
আগেও দেয়া হইসে আমি আবার দেই 😀
থ্রী চীয়ার্স ফর মামুন ভাই
হিপ হিপ হুররে।
হিপ হিপ হুররে।
হিপ হিপ হুররে। :boss: :boss:
মামুন ভাই :salute:
মারাত্মক নেশা ধরিয়ে দিয়েছেন ভাইয়া। পরের পর্বটা একটু তাড়াতাড়ি দিয়েন প্লীজ :boss:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ভাইরে! সেইরকম দুর্দান্ত এগুচ্ছে গল্প।
অসাধারণ ভাইয়া। :boss: :boss:
(অফটপিকঃ আপনার পাঠানো বই পেয়ে অসম্ভব খুশি হয়েছি ভাইয়া। অফিসে সবাইকে ছেলেমানুষের মত বইটা দেখিয়েছি গর্ব নিয়ে। ঠিক কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিব বুঝতে পারছিনা।)
আমারে দেখাস নাই তো। হো ভাই আমরা তো পাই নাই, তাই দেখাস না।
তোর সাথে দেখা হইলেই না বইটা দেখাইতাম। বাসায় আয়, বই দেখায়ে দিব। 🙂 🙂
মামুন ভাই, আমিও বই চাই।
ধূররর...এরকম "আঠা-লাগানো" গল্প দিয়ে আমার এত্তো এত্তো সময় খাওয়ার জন্য মামুন ভাইয়ের ব্যান চাই। :grr: :grr:
অফটপিকঃ মামুন ভাই, ইয়ে, মানে...পরের পর্বটা একটু তাড়াতাড়ি... 😛
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
রকিব-তানভির-সাজিদ-রবিন
একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না!
পরের পর্বটা তাড়াতাড়ি দেয়া উচিত। আমি একশভাগ একমত।
মোস্তফা মামুন
রবিন
ঠিক এখন আমার কালেকশনে বই নাই। একটু অপেক্ষা করো। পাবা আশা করি।
মোস্তফা মামুন
:tuski: :tuski: :awesome: :awesome:
মামুন ভাই জিন্দাবাদ। ওই রকিব কই, কাপ ধুইয়া ভাই রে :teacup: দে
প্রতিদিন অন্তত একপর্ব চাই। পারলে বেশি।
পড়ছি......।।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না