“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো” গানটা শুনেই মনটা ভালো হয়ে গেল। আজ ১লা বৈশাখ।ইলিশ-পান্তা খাওয়া, বেড়ানো, বন্ধুদের সাথে টিএসসিতে আড্ডা, গান শোনা- প্রতিবছর ঠিক এই ভাবেই কাটে আমার বৈশাখের প্রথম দিন।কিন্তু এবারের ব্যাপার বেশ খানিকটা আলাদা।ভুল বললাম। আসলে বেশ খানিকটা নয়, পুরোটাই আলাদা। আর এর কারণ, এবার আমার কোল জুড়ে রয়েছে আমার প্রথম আর একমাত্র ছেলে সন্তান রীহান।
আমার অন্তর-আত্মা জুড়ে থাকা ছোট্ট এই মানুষটা, তিল তিল করে কিভাবে যেন কেড়ে নিচ্ছে আমাকে আমার নিজের কাছ থেকে। তার ছোট্ট মুখের হাসিটা দিয়ে আমার সব ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছে তার দিকে।নাওয়া খাওয়া সব ভুলে আমি সারাদিন তাকে নিয়েই মেতে আছি।আজ বৈশাখে ওর বয়স ৬ মাস হল প্রায়। ওর জন্ম ১৬ অক্টোবরে।আজ আমার ছোট্টমনির প্রথম ১লা বৈশাখ।
দাপিয়ে ছুটছে গরম বাতাস। তার সাথে রোদের খেলা। এই আবহাওয়ায় রীহানকে নিয়ে বৈশাখী মেলা দেখব কিভাবে!ইস, যদি একটুখানি বৃষ্টি হত!রীহানের বাবা আরিফ আর আমি বুদ্ধি করছি, কিভাবে আর কোথায় ছেলেকে নিয়ে বেড়ানো যায়।অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম দুজনে যে, এবার আর টিএসসি যাব না।এবার যাব আশুলিয়াতে।
দুপুরে বাসায় ইলিশ-পোলাও হয়েছে। সবাই খাচ্ছি মজা করে, কিন্তু আমার সোনামনিতো এখনও দুধ ছাড়া কিছুই খায় না। শুধু তাকিয়ে দেখে, আর মুখ থেকে এতগুলো লালা ফেলে। খুব মায়া লাগল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে।তাই নিজের খাওয়াটা শেষ করতে পারলাম না।
রীহানের যেন কষ্ট না হয়, সেজন্য নিজের প্রেসের মেশিন বেচে দিয়ে রীহানের বাবা একটা গাড়ি কিনেছে। তাতে করেই আজ ১লা বৈশাখে আমি, রীহান আর তার বাবা বেড়াতে বেরিয়েছি।আমার সোনামনিকে হলুদ রঙ এর একটা গেঞ্জীসেট পড়িয়েছি।
পুরোটা ঢাকা যেখানে গরমে ফুটিফাটা হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আশুলিয়ার আকাশে চলছে নরম রোদের খেলা।এমন মিষ্টি আবহাওয়া কোনদিন দেখিনি। অর্ধেক আকাশে মেঘ করে আছে, আর বাকী অর্ধেকে রোদ। হাইওয়ের পাশে গাড়ি থামিয়ে ছোট্ট রীহানকে কোলে নিয়ে বসে আছি আমরা দুই বাবা-মা।রীহান লাফাচ্ছে প্রকৃতির এতো কাছে এসে।কোল থেকে নেমে যেন, মাঠে চলে যাবে সে, কৃষকের মত।বাবার কাধে চড়ে রীহান ঘুরে বেড়াচ্ছে রাস্তা, মাঠ আর চারপাশে। নাম না জানা ঘাসফুল হাতে নিয়ে তার কুলকুল হাসি যেন, নদীর ঢেউকেও হার মানাচ্ছে।
যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। আস্তে আস্তে রোদ নরম হয়ে আসছে। মেঘে ঢাকা পড়ছে সূর্য।তারপর একটু একটু করে বিজলীর চমক।বিজলীর চমকের সাথে এক এক ফোটা বৃষ্টি।দূরে মাঠের ওপাশে দিগন্তে কালো মেঘ জমেছে। পলক না ফেলতেই বৃষ্টি শুরু হল।দূর আকাশে বৃষ্টি দেখে রীহানের সে কি আনন্দ! গলা ফাটিয়ে চেচাচ্ছে “বাবা বা-বা বা-বা-বা”।নিজের মনেই হাসছে।
বৃষ্টি ঝরানো কালো মেঘ ধেয়ে আসছে আস্তে আস্তে আমরা যেখানে বসে আছি, ঠিক সেইখানে। ভেবেছিলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠের পাশে বসেই কাটাব।কিন্তু দূর্ভাগ্য, অঝোরধারায় বৃষ্টি নেমে এল।গাড়িতে ঢুকতে একদম রাজী না আমাদের রাজকুমার। হাত দিয়ে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে, “আ-আ” করে ডাকছে। গাড়ির গ্লাস বেয়ে নেমে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারা।সেটাই হাতে নেবার চেষ্টা করছে রীহান।এটাই তার নতুন খেলা হয়ে গেল।খেলতে খেলতে একসময় ফুরিয়ে এলো রাস্তা।বৃষ্টিবিলাস শেষে ফিরে এলাম আপন ঘরে।
আমাদের ছোট্ট রীহানকে নিয়ে এই ছিল আমাদের প্রথম ১লা বৈশাখ। রোদ-বৃষ্টির খেলায় ভরা মজার একটা দিন।
৫ টি মন্তব্য : “রীহানের প্রথম পহেলা বৈশাখ”
মন্তব্য করুন
অনেকদিন পর।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মালয়েশিয়া ছিলাম বড় ভাই
লেখাটা প্রথমেই পড়েছিলাম। সময়ের অভাবে মন্তব্য করা হয়নি।
তোমাদের পুরো পরিবারটাই এমন রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন!
আমার বেশ লাগছে পড়তে।
ধন্যবাদ দাদা
আপু পুচকুটার জন্য অন্নেএএএএএক অন্নেএএএএএএক আদর 🙂 🙂 🙂