সিরিয়াল ৩
১৯৯৯, ডিসেম্বর…(জ্যাকেট ওয়ালা লোকটির নিজের কথা)
আমার বাবার সাথে বাণিজ্যিক আলাপ হয় জ্যাকেটওয়ালার। জ্যাকেটওয়ালা বলছি কারণ আমি নাম জানি না তার। যাই হোক, জ্যাকেটওয়ালা আমার বাবার মুখে আমার কথা শুনতে শুনতে আমাকে দেখার জন্য অধীর।আমার গুনমুগ্ধ আব্বু আমার এমন গুনকীরতনই করেছেন যে, জ্যাকেট ওয়ালা একদিন আমাদের বাসায় এসেছিলেন আমাকে দেখতে। কিন্তু আমি তখন কলেজে। ড্রইংরুমের দেয়ালে আমার ফটো ছিল। ওইটা দেখে উনি ……মুগ্ধ!( কি মজা, কি মজা! কিন্তু…ইস এই কাহিনী আমি ৩ বছর পরে কেন জেনেছিলাম!)
যাই হোক, জ্যাকেটওয়ালা মুগ্ধ। কিন্তু দেখা করার উপায় কি! কবে ছুটিতে আমি আসব, তবে দেখা! তাই তিনি চিঠি লিখার কথা ভাবলেন। কিন্তু, হায় বীরপুরুষ! সাহস কোথায়! ৩ বছর ধরে একটি চিঠি লিখার সাহস তার হল না। বাসায় এলেন কয়েকবার। দেখা হল না আমার সাথে। অবশেষে একদিন আমাকে বাসায় ছুটিতে পাওয়া গেল। তিনি অপেক্ষায় কখন আমি দেখা করব। কিন্তু আমি টেলিফোনে কথা বলছি জেনে, তিনি দীরঘ ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে চলে গেলেন মনে কষ্ট নিয়ে। কিন্তু ঐ গাধা টাইপ জ্যাকেটওয়ালা একবার যদি বারান্দায় তাকাতো নিশ্চয়ই দেখত, আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে। কিন্তু সেতো ব্যস্ত তার গাবদু নকিয়া মোবাইলে ( ওই আমলের ক্রেজ) গেম খেলা নিয়ে। ইচ্ছা হচ্ছিল আমার পাশে রাখা ফুলের টব তুলে মাথায় ছুড়ে মারি! আমি লাজুক ছিলাম ভালো। কিন্তু রাগটা কোন কালেই কম ছিল না।
সিরিয়াল ৪
২০০২ জুন……কলেজ থেকে বেরিয়ে… নানাবাড়ী
জ্যকেটওয়ালা আর কোনদিন আমার সামনে আসেনি। আর তার সাহসী আত্মা, তাকে কোনভাবেই সাহস দেয়নি আমাকে একটা চিঠি লেখার। আমাদের আর দেখাও হয়নি। এভাবেই ৩ বছর পেরিয়ে গেছে।
কলেজের গন্ডী পেরিয়ে ঢাকায় এসেছি মাত্র ১ মাস হল। আব্বু লম্বা ছুটি নিয়েছে অফিস থেকে। আমরা নানাবাড়ী যাব।
আব্বু আম্মু ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। তাই নানা নানু রাগ করে ১৮ বছর কথা বলেনি। আমার বয়স ১৭ হয়েছে। তখন আমরা প্রথম নানাবাড়ী যাচ্ছি। সবাই অসম্ভব উত্তেজনায়…কি হবে! কি করব! কেবল আব্বু ছাড়া। আব্বু বরাবর ঠান্ডা মাথার মানুষ। বাসে চড়েছি। আমাদের বাস কোনদিনই লেট করে না। এই প্রথম যমুনা ব্রীজ দিয়ে যাব। না জানি কত সুন্দর হয়েছে ব্রীজটা! কিন্তু ৯টা পার হয়ে যাবার পরও বাস ছাড়ে না। কি ব্যাপার! কোন গাধা টাইপ লোক যে এতো লেট করছে!
আমিঃ আব্বু বাস ছাড়ে না কেন? কার জন্য লেট?
আব্বুঃ আমার জন্য
আমিঃ আমরা তো সবাই চলে এসেছি। আমি, তুমি, আম্মু, রেসিন।তাহলে কে বাকী
আব্বুঃ আছে একজন। নাটোর যাবে আমাদের সাথে।
আমিঃ কে? কেন? মানে কি? আমি রেসিনের সাথে আড্ডা দিতে দিতে যাব না? আমি এ্কা বসব?
আমার মেজাজ গরম হয়ে গেল। সবাই জোড়ায় জোড়ায় আরামে যাবে গল্প করতে করতে। আব্বু- আম্মু, রেসিন আর ওই কোন উটকা লোক! পাক্কা ২০ মিনিট দেরীতে আসলেন তিনি। বাসের সবাই রাগ। আর আমিতো পারলে কোপাই! চেহারা দেখে অবশ্য বেশি রাগ করা গেল না। সুন্দর হাসি দিয়ে বাসের সবাইকে পটিয়ে ফেললেন তিনি। প্রথমবার চোখাচোখি হল। নিজের অজান্তে আমি হাসি দিলাম…তার জন্য, যে কি না আমার নানাবাড়ী যাওয়া ২০ মিনিট লেট করে দিল। সমস্যা হল, লোকটা চুপ চুপ করে রেসিনের সাথে কথার ফাকে আমাকে দেখছে! আমিও একটু পর পর দেখছি। একবার করল কি, আমাকে দেখে ভেংচি দিল। আমাকে দেখে জীবনেও কেউ ভেংচি দেয়নি। আমি হা হা করে জোরে হেসে উঠলাম। বাসের লোকজন সবাই আমাকে পাগল ভাবল।
আব্বু জানালো ওই ছেলেটি নাটোর যাচ্ছে মেয়ে দেখতে। তার নাকি নাটোরের মেয়ে বিয়ে করার শখ। মনে মনে ভাবলাম, বিয়ের শখ মিটে যাবে, এমন শিক্ষা দেব নাটোর নিয়ে।
:clap: :clap:
• জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •
্ধন্যবাদ