তিনটি কবিতা: না করি ভোরের প্রত্যাশা!

এই কথাগুলো যদি তুমি আমার পাশে থেকে বলতে!
————- ড. রমিত আজাদ

ফেসবুকের ইনবক্সে মেসেজ পাঠালে,
“কেন তুমি এতো রাতে জেগে আছো?
রাতজাগা তো ঠিক নয়, শরীর খারাপ করবে যে।”
আহা এই কথাগুলো অত যোজন দূরত্ব থেকে না বলে,
যদি আমার পাশে থেকে বলতে!
“মনে করো, আমি তোমার পাশেই আছি।”
মনে তো কতো কিছুই করি!
কত ফ্যান্টাসীই তো করলাম সেই থেকে,
এতে কি বিচ্ছেদ ঘুঁচে যাবে?

মাধবী লতায় ছেয়ে যাওয়া
খোলা বারান্দায় আমরা দুজন.
বিমুর্ত জোছনার স্নিগ্ধ আলোয়,
তোমার হাতে আমার হাত।
অথবা,
গাড়ীর স্টিয়ারিং হুইলের পিছনে আমি,
আমার বাঁ পাশে তুমি,
লং বীচ ড্রাইভে ছুটে চলেছি,
উত্তাল সাগরের পাশাপাশি।

নীচে অনেক নীচে মেঘের দেশ ছাড়িয়ে
নীলগিরীর সুউচ্চ পাহাড়ের স্বপ্নপূরীতে
আমরা দুজন, মুগ্ধ হয়ে দেখছি,
মেঘের গায়ে হরেক রঙের খেলা।
কক্সবাজারের ইনানী সৈকতে
লাল কাঁকড়ার পিছনে ছুটাছুটি,
তারপর হঠাৎ বালুর গর্তে পড়ে যাওয়া,
সেখান থেকে পরস্পরকে টেনে তোলা।

এমন কত শত ফ্যান্টাসী
আমি নিরত করেছি তোমাকে নিয়ে,
এটা কি বিচ্ছেদের দুঃখ ভুলে থাকার জন্য,
না কি বিরহের কষ্ট নিয়ে একটু দুঃখবিলাস?
সে যাই হোক একটা কথাই শুধু বুঝি,
বিচ্ছেদের দুঃখ …………………।
না, বুঝিনা, কিছুই বুঝিনা, আমি কিছুই বুঝিনা।

——————————————————————

শহরটা কি এতোই বড়?
— ড. রমিত আজাদ

কতটা চিনতে পেরেছিলাম আমরা পরস্পরকে,
সেটা আজ আর কোন প্রশ্ন নয়,
শুক্লা তিথির উদাস অভিসারে
চৈতালী চাঁদের মাধবী নিশিতে
এসেছিলাম খুব কাছাকাছি, এটাই বড় কথা।

সেদিন তুমি নিখাদ ভালোবাসতে,
অনেক আশা নিয়ে কাছে আসতে,
উদগ্র কামনায় উদ্বেলিত যৌবন ক্ষুধা
বক্ষের সতেজ দ্রাক্ষার জমীনে,
তোমার দেহের নীড়ে,
সোনার পেয়ালায় রাখা অমৃত সুধা
কপালে পড়ে থাকা অবিন্যস্ত এলো চুল,
বাঘিনীর মত সরু কোমর,
গোলাপের পাঁপড়ির মত ঠোটে প্রশ্রয়ের হাসি!
মুহূর্তে পুরুষ হয়ে উঠেছিলাম।
এতো অস্থির কেন প্রিয়?
তুমি না কবি?
কবি তো এমন করেনা!
জানিনা, সেদিন কাকে চেয়েছিলে তুমি,
কবি না পুরুষ?

আমি ঠেলে দিলাম প্রেমের পুষ্প যারে,
আজ তাকেই মনে পড়ছে বারে বারে।
হয়তো তুমি কেঁদেছ একাকিনী,
আমার নির্বিকার মনের পাষান মৃত্তিকায়
আবেগের রাখি নাই স্থান,
তবুও আজ কেঁদে ওঠে মন।

বিচ্ছেদের পাঁচটি বছর আজ সম্পন্ন হলো,
জানিনা তুমি তার হিসেব রেখেছ কিনা।
যদি আজ তোমাকে কোথাও দেখতে পেতাম সজল চোখে,
আমি পরম সোহাগে মুছে দিতাম লোনা জলে ভেজা কাজল।
জীবন না সহজ, না জটিল,
আমরাই একে সহজ করি, জটিল করি,
একইভাবে জীবনকে কবিতা করেও তোলা যায়,
ফুলের মত শোভাময় কবিতা ।
আমি তাকে কবিতা হতে দেইনি।
সহসা থামিয়ে দিয়েছি ছন্দ,
তারপর একে একে চলে গেলো পাঁচটি শ্রাবণ।

আমি হাটি এই শহরের পথে পথে,
কখনো জীবিকার তাগিদে,
কখনো মনের আঁশে,
এখানে
নীল তৃষিত আকাশ উপুর হয়ে নুয়ে পড়ে
কদমবুচি করে যান্ত্রিক নগরীর ধুসর জমিনের পা,
তুমিও এই শহরের বাসিন্দা,
তুমিও পথ চলো প্রয়োজনে,
যেখানে
দানবের মত যন্ত্রগুলো পুরো শহরটিকে গিলে খাচ্ছে যেন,
এলিভেটরগুলোর দরজা খোলে আর বন্ধ হয়,
আর প্রতিদিন হারিয়ে যায় অসংখ্য মানুষ!

এখানে বিজলীর আলোর ঝলকানিতে
ম্লান হয়ে আসা জোছনার আলোয়
আমি এক নির্বাসিত আত্মা।
আমার হৃদয়ে আজ গভীর অসুখ!
একদিন তোমার মনের চাপা দুঃখগুলোর কথা
তুমি আমাকে বলতে,
আজ আমার খুব ইচ্ছে করছে
আমার ব্যাথাগুলোর কথা তোমাকে বলতে।

সেদিন দ্বিধান্বিত আমাকে তুমি ঝড়ের মতো ডাক দিতে,
আর আমি এক নির্বিকার বিটপী
দাঁড়িয়ে থাকতাম নিশ্চল-নিস্পন্দ।
আজ আবার হাতছানি দেয় স্বপ্ন-সঙ্গিনীর
সেই ফিকে নীল শাড়ি।
একে একে চলে গেলো পাঁচটি শ্রাবণ,
পার হয়ে গেলো পাঁচটি বসন্ত,
ফুরিয়ে গেলো পাঁচটি বৈশাখী মেলা,
পাঁচ পাঁচবার তুমি পড়েছ বাসন্তি রঙ শাড়ি,
পাঁচ পাঁচবার আমি নিষ্ক্রীয় অবলোকন করেছি ভ্যালেন্টাইনস ডে,
একই শহরে থাকি আমরা দুজন,
অথচ
এতোগুলো বছরেও হলোনা দেখা!
শহরটা কি এতোই বড়?

Is The City So Big?

—————————————————————

না করি ভোরের প্রত্যাশা!
——— ড. রমিত আজাদ

এখনো গভীর রাতের আঁধারে
সীমাহীন নক্ষত্ররাজীর অন্তহীন প্রত্যাশা নিয়ে আমি অপেক্ষা করি,
ঘোর বরষার অবিরাম বৃষ্টির দুর্দান্ত কলরব ছাঁপিয়ে
শোনা যাবে তোমার কন্ঠস্বর, মধুর মায়াবী ইন্দ্রজালে।
কুটিরের দুর্বল কাষ্ঠদ্বারে মৃদু করাঘাত হবে
দীর্ঘ রণসংগ্রামের পর বিজয়ের দুন্দুভি নিনাদ,
অদৃশ্য তরঙ্গে সঞ্চালিত প্রেম জাগাবে অনুরনন
কায়ার নদীগুলোতে মৃদু দ্রুত হৃৎস্পন্দনে,
দেখতো, এখনো তেমনি আছি, তুমি আর আমি,
সেই আমরা! তবে আর বিচ্ছেদ কেন?
এসো জমীনে স্থিত হয়ে বসে,
প্রাচীন বৃক্ষের কান্ডে হেলান দিয়ে নক্ষত্র দেখি সারারাত,
না করি ভোরের প্রত্যাশা!

Let Us Do Not Expect The Dawn
Dr. Ramit Azad

২,৪৬৪ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “তিনটি কবিতা: না করি ভোরের প্রত্যাশা!”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    তুমি যা লেখো, একেবারে মনের অর্গল খুলে লেখো, তিন তিনটি তাজা কবিতা, কোনটির থেকে কোনটি খারাপ নয়,

    চমতকার, বড়ই চমতকার


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "জানিনা, সেদিন কাকে চেয়েছিলে তুমি,
    কবি না পুরুষ?" - বাহ!
    "এতোগুলো বছরেও হলোনা দেখা!
    শহরটা কি এতোই বড়?"
    আশা জাগে, দেখা হবে। দেখা হবার ভয়ও জাগে। শেষমেষ আবদ্ধ হয়ে পড়ি, কপাটবদ্ধ নিজ মনোভূমে!
    প্রত্যাশা থাকুক বা না থাকুক, নিশি কেটে যায়, ভোর হয়ে যায়।
    "এতে কি বিচ্ছেদ ঘুঁচে যাবে?" এখানে ঘুঁচে>ঘুচে হবে মনে হয়।

    জবাব দিন
  3. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    এটা কি বিচ্ছেদের দুঃখ ভুলে থাকার জন্য,
    না কি বিরহের কষ্ট নিয়ে একটু দুঃখবিলাস?

    কতটা চিনতে পেরেছিলাম আমরা পরস্পরকে,
    এসেছিলাম খুব কাছাকাছি, এটাই বড় কথা।

    আমি ঠেলে দিলাম প্রেমের পুষ্প যারে,
    আজ তাকেই মনে পড়ছে বারে বারে।

    ঘোর বরষার অবিরাম বৃষ্টির দুর্দান্ত কলরব ছাঁপিয়ে
    শোনা যাবে তোমার কন্ঠস্বর, মধুর মায়াবী ইন্দ্রজালে।

    Let Us Not Expect The Dawn

    - আহা ! সব মিলিয়ে যেনো এক উপন্যাস !

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।