ক্যাডেট কলেজে পড়ার প্রেক্ষিতে আমাদের অধিকাংশ ক্যাডেটের কোনদিন কোন কিশোরীকে নিয়ে ফ্যান্টাসি করার সুযোগ হয়নি। আমরা নাইট প্রেপ শেষে দৌড়ে টিভি রুমে এম টিউনসে নায়িকাদের নাচ দেখতে যেতাম, লাঞ্চের পর পেপারের বিনোদন পেজের ছবি কেটে নিয়ে স্ক্র্যাপবুকে লাগাতাম, কলেজে কোন ইয়াং ম্যাডাম আসলে তার ক্লাসে প্রথম সারীতে বসার জন্য সিরিয়াল দিতাম। আমাদের ফ্যান্টাসি ছিল এইটুকুই। আর তিন নম্বর গ্রাউন্ডে ফুটবল খেলার সময় পাশের রাস্তা দিয়ে কোন বালিকা একক কিংবা দলগতভাবে হেঁটে গেলে আমাদের পায়ে মেসি রোনালদোর জাদু ভর করত। তাই, এভাবে শুধু তাঁকিয়ে থাকা ছাড়া মানবসভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন সেই গ্রহে কোন কিশোরীর সংস্পর্শে আসার কোন আয়োজন ছিল না।
এর মাঝেও প্রতি ব্যাচে কিছু মহাপুরুষ থাকত যারা ছুটিতে যাওয়ার আগে হৈ হুল্লোড় করা দলে থাকত এবং ছুটি থেকে আসলে দেখা যেত তারা ভাবগম্ভীর হয়ে গিয়েছে। ফর্মের জানালার পাশের সীটটা নিয়ে তাদেরকে উদাস হয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখতে দেখা যেত। টিভি রুমে “তুম হি হো” টাইপ কোন গান হলে তাদেরকে অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে থাকতে দেখা যেত। প্রায়ই কোন পার্সেল আর চিঠি নেওয়ার জন্য তাদেরকে হাউজ মাস্টারের রুমে দেখা যেত।
তাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ভালোবাসার কাহিনী সম্বলিত একটি ডাইরী থাকত, যেই ডাইরী পড়ার কামনায় বাকি সব ক্লাসমেট অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও তারা কখনোই সেটাকে নিজের দৃষ্টির অগোচর করত না। আর তাদের কাছে থাকত একটি মোবাইল ফোন। ক্যাডেট কলেজ প্রশাসনের হাজারও নিয়ম কানুন এবং মাত্রাতিরিক্ত সতর্কতাকে ফাঁকি দিয়ে হলেও নিজের কাছে মোবাইল ফোনটি রাখার ব্যাবস্থা করত তারা। সেইসব ফোনকে ইন্সপেকশনের সময় নিরাপদ স্থানে রাখা, তাকে চার্জ দেওয়া, সিমে টাকা রিচার্জ করার মত কাজগুলো করতে তাদেরকে অনেক মেধা, শ্রম, অর্থ এবং সময় ব্যয় করতে হতো।
এইসব মহাপুরুষেরা সংখ্যালঘু হওয়াতে সারাজীবন বাকি ক্লাসমেটদের কৌতুকের শিকার হয়েই থাকত। তাছাড়া প্রেমিকার পেছনে এত মেধা, শ্রম, অর্থ ও সময় ব্যয় করে তাদের বৃত্তের পরিধি ওইটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকত। কলেজের অন্যান্য বিনোদন ও এডভেঞ্চারের স্বাদ নেবার সময় কিংবা শক্তি কোনটাই আর তাদের অবশিষ্ট থাকত না।
এর মাঝেও হয়তো কোন এক সাডেন চেকে তারা মোবাইলটি ধরা খেয়ে যেত। একে একে বেড়িয়ে আসত সব চিঠি আর পার্সেলে পাঠানো গিফটগুলোর কথা। তাদের বৃহৎ স্বার্থের উদ্দেশ্যে বন্ধ করে দেওয়া হতো যোগাযোগের সব মাধ্যম। “চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল” নীতিতে তারা ভুলে যেত আগের সব অনুভূতি। কিংবা হয়তো তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হতো তাদের ফোনের ওইপারের মানুষটির। ভেঙ্গে যেত সব কিছু। হয়তো কারো কয়েকদিন মন খারাপ থাকত। হয়তো অনেকের থাকত না।
এরপর তারা আবার ফিরে আসত নারীশূণ্য জীবনে। ফিরে আসত সেই টিভি রুম, পেপারে কেটে স্ক্র্যাপবুক বানানো আর সামনের সীটে বসার ফ্যান্টাসি তে। একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে তারা ফিরে আসত রঙ্গীন জীবনযাপনকারী দের দলে। এককালে যেই বালিকাকে জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে ধরে নিয়েছিল, সে যে এতদিন তার জীবনে অভিশাপ হয়ে ছিল- এই উপলব্ধি লাভের মাধ্যমে অফুরন্ত বিনোদন আর এডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ ক্যাডেট লাইফের প্রকৃত স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পেত তারা। সবকিছু থেকে মুক্তি পেয়ে তারা ভাবত, এইত জীবন।
নাহ,ক্যাডেট জীবনটা আমার বৃথাই গেলো। কিছুই হয়নি। আমাদের ফুটবল গ্রাউন্ডের কাছেও ঘেসতোনা কোন বালিকা
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ক্যাডেট কলেজে কোন বালিকার দেখা পাওয়াই ছিল আকাশের চাঁদ 😀
হাস্নাইন, তোমার লেখায় বর্ণিত ঘটনাগুলো সাধারণ হয়েও অসাধারণ। এগুলোকে ঘটনা থেকে বের করে এনে গল্প করে তোল। তোমার সেই শক্তিমত্তা আছে।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
ধন্যবাদ ভাই আপনার অনুপ্রেরণার জন্য 🙂
:clap: :clap: :clap: :clap:
হাসনাইন, এবার তোমার লেখা গল্প পড়তে মন চাইছে, ভাইয়া! গদগদ একখানা প্রেমের গল্প লিখে চমকে দাও আমাদের।
চেষ্টা করব আপু 🙂
আমাদের সময় কোন ম্যাডাম ছিলোনা। তাই এ সম্পর্কিত কোন অভিজ্ঞতা নেই। তবে সেরকম কেউ থাকলে আমাদের মধ্য থেকেও হয়তো অনেক রোমিও বেড়িয়ে আসতো। ১৯৭০ সালে প্রিন্সিপাল কীয়ানির স্ত্রী ও কণ্যা ক্লাস সেভেন এর বাচ্চাদের ইংরেজী পড়াতেন। স্ত্রী পড়াতেন ফর্ম 'এ' তে আর তার সুন্দরী কণ্যা হুমায়রা পড়াতেন ফর্ম 'বি' তে। এ নিয়ে ফর্ম 'বি'র ক্যাডেটদের গর্বের আর ফর্ম 'এ'র ক্যাডেটদের মনস্তাপের অন্ত ছিলোনা। একদল আরেকদলকে বলতো, তোদের পড়ায় বুড়ী, মোদের পড়ায় ছুড়ী।
হা হা হা :))
নামটা বাঙলায় করে দিও।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ঠিক আছে ভাই
প্রেম ////
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ