ক্যাডেট কলেজ সামরিক বাহিনী পরিচালিত বিশেষ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারণার সৃষ্টি হয় সামরিক বাহিনীতে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরীর চেতনা থেকে। বিসমার্ক প্রথম জার্মানিতে ক্যাডেট কলেজ ধারণার প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে নেপোলিয়ান ফ্রান্সে এই ব্যাবস্থা চালু করেন এবং সবশেষে পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এই শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ইংল্যান্ডের উন্নতমানের পাবলিক স্কুলের সাথে এর আদর্শগত সামঞ্জস্য রয়েছে। ক্যাডেট কলেজ মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমানে মূলত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
এই দুইটি দেশেই ঠিক ক্যাডেট কলেজ নামীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাতন্ত্র বজায় রেখে চলেছে। ক্যাডেট কলেজ বলতে বিশেষ ধরণের সামরিক স্কুল বোঝালেও সকল সামরিক স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই ক্যাডেট কলেজ বলা যাবে না। কেবল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেই এই নামটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বিসমার্কের যুগে জার্মানিতে প্রথম ক্যাডেট কলেজ ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। সামরিক বাহিনীতে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরীতে অল্প বয়স থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু করানোটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করতে পারে। এই ধারণাই তৎকালীন ক্যাডেট কলেজ পদ্ধতির চালিকাশক্তি ছিল। নেপোলিয়নের যুগে ফ্রান্সে সামরিক দক্ষতা বৃদ্ধির একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে ক্যাডেট কলেজ পদ্ধতি গৃহীত হয়।
পাকিস্তানে ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা
১৯৫২ সালে সামরিক বাহিনীকে সহায়তা প্রদানের জন্য শাহিওয়ালের গবর্নমেন্ট কলেজ এবং পেশোয়ারের ইসলামিয়া কলেজে মিলিটারি উইং খোলা হয়। একই সাথে পাঞ্জাবের হাসান আবদাল নামক স্থানে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়। নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর সামরিক উইংগুলো এই হাসান আবদালে স্থানান্তরিত করা হয় এবং এভাবে ১৯৫৪ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানে প্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এর নাম ছিল পাঞ্জাব ক্যাডেট কলেজ। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ক্যাডেট কলেজ হাসান আবদাল রাখা হয়। সম্পূর্ণ আবাসিক এই ক্যাডেট কলেজটি মূলত ব্রটিশ পাবলিক স্কুলের আদর্শের অনুগামী ছিল। এতে প্রাথমিক সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। ধারণা করা হয় জারের আমলে রাশিয়ায় বিদ্যমান ক্যাডেট কোর এবং বৃটেনের পাবলিক স্কুলের সম্মিলন ঘটানো হয়েছিল পাকিস্তানের এই ক্যাডেট কলেজে। পাকিস্তানে ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন সেনাবাহিনী প্রধান ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান।
তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম জেলার ফৌজদারহাটে ১৯৫৮ সালে। প্রথমে এ কলেজের নাম রাখা হয় ইস্ট পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ। পরবর্তীতে কলেজের নাম হয় ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ। ১৮৫ একর জায়গার উপর এটি প্রতিষ্ঠিত এবং সেনা বাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। এর সকল অর্থের যোগান দিত রাষ্ট্র। কলেজ পরিচালনার মূল দায়িত্বভার ছিল চতুর্দশ ডিভিশনের জিওসি’র (জেনারেল অফিসার কমান্ডিং) হাতে। প্রাদেশিক সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপর অর্থ যোগানের দায়িত্ব ছিল। মূলত আইয়ুব খানের উদ্যোগেই এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিউজিল্যান্ড সেনাবাহিনীর একজন লেফট্যানেন্ট কর্নেল ইংল্যান্ডে বসবাস করছিলেন এবং সেখানকার পাবলিক স্কুলের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার নাম স্যার উইলিয়াম মরিস ব্রাউন। আইয়ুব খান ব্রাউনের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে পূর্ব পাকিস্তানে ক্যাডেট কলেজ পরিচালনার ভার গ্রহণে আমন্ত্রণ জানান। এতে রাজি হয়ে ব্রাউন পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট করেজের প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি এই কলেজে দীর্ঘ ৭ বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
পড়াশোনার উচ্চ মান ও পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের জন্য ক্যাডেট কলেজ দ্রুত সুনাম অর্জন করে। এতে উৎসাহিত হয়ে পাকিস্তান সরকার আরও ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। পাকিস্তান আরও কয়েকটি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তন্মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে গঠিত হয় আরও তিনটি ক্যাডেট কলেজ। ১৯৬৪ সালে খুলনা বিভাগে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ, ১৯৬৫ সালে ময়মনসিংহ জেলায় মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজ এবং পরবর্তী বছর তথা ১৯৬৬ সালে রাজশাহী জেলায় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা বিভক্ত হয়ে কয়েকটি জেলা গঠন করা হয় তখন মোমেনশাহী ক্যাডেট কলেজের নাম পরিবর্তন করে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ রাখা হয়। এটি তখন নবগঠিত টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকারের উদ্যোগে ঢকায় রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল নামে একটি আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠায় অনেকাংশে ক্যাডেট কলেজের অনুকরণ করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালে কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, পাবনা ও রংপুর জেলায় রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলটি কেবল মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়। ক্যাডেট কলেজ ও রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল দুটি একই ধারার আবিসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরেও এদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। ক্যাডেট কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে সরাসরি সেনা বাহিনী সদর দপ্তরের উপর। কিন্তু দেশের অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর।
স্বাধীন বাংলাদেশে
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার পর ক্যাডেট কলেজগুলো পরিচালনার দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করা হবে, এ নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। অবশেষে ১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রপতির ক্যাডেট কলেজ ৮৯ নং অধ্যাদেশ অনুযায় প্রণীত হয়। এ অনুযায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রণয়ন সাপেক্ষে ক্যাডেট কলেজ পরিচালনার জন্য একটি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে ক্যাডেট কলেজ কাউন্সিল গঠিত হয়। এর মাধ্যমে ক্যাডেট কলেজ গভর্নিং বডিকে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন শিক্ষা মন্ত্রী এবং কাউন্সিলের অধীনে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হন বিভাগীয় কমিশনার।
১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদে ক্যাডেট কলেজ আইন পাস করা হয়। এর মাধ্যমে ক্যাডেট কলেজ কাউন্সিলকে সরাসরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আনা হয়। পুনর্বিন্যস্ত করা হয় গভর্নিং বডিসমূহ। প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিবকে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়, গভর্নিং বডিসমূহের চেয়ারম্যান হন সামরিক বাহিনী উপ-প্রধান। তখন থেকে অনেকবার কাউন্সিল ও গভর্নিং বডিসমূহের চেয়ারম্যান পদে রদবদল হয়েছে, কিন্তু এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ একই রয়ে গেছে।
১৯৭৮ সাল থেকে পূর্বে প্রতিষ্ঠিত রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলগুলোতে ক্যাডেট কলেজে রুপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে উক্ত বছরেই সিলেট ও রংপুরের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল দুটিকে ক্যাডেট কলেজে রুপান্তরিত করা হয়। ১৯৮১ সালে বরিশাল ও পাবনা ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়ার মডেল স্কুলটিকে গার্লস ক্যাডেট কলেজে রুপান্তরিত করা হয়। ১৯৮৩ সালে কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়ালটিও রুপান্তরিত হয়। এভাবে বাংলাদেশে সর্বমোট ক্যাডেট করেজের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ টিতে। অনেক দিন বাংলাদেশে ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা এই ১০ টি-ই ছিল। ২০০৬ সালে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে আরও দুইটি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়, দুইটি কলেজই মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। এর একটি ফেনী জেলায় এবং অন্যটি জয়পুরহাট জেলায়। এতে বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১২ টিতে। এর মধ্যে ৯ টি ছেলেদের এবং ৩ টি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত।
*****
# তথ্যসূত্র: ক্যাডেট কলেজ – বাংলা উইকিপিডিয়া
আঁতলামি করার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত।
কাহিনী হইল, মিড-টার্ম পরীক্ষার জন্য কোন ব্লগ লেখা নিষেধ। যদিও নেটে বসে আছি সেই তখন থেকে। কিন্তু ব্লগ লেখা যাবে না। কারণ ব্লগ লিখলেই পরীক্ষা খারাপ হবে। তাই এহেন কর্ম সাধন করিলাম।
এই ব্লগের ক্যাটাগরি আঁতলামি করা হয়েছে কেন? আমি এর বিরোধিতা করলাম।
এইটা information এ রাখা যেতে পারে, যাতে করে বাইরের মানুষ বুঝতে পারে।
সরি। এইটা আঁতলামিই। কিচ্ছু করার নাই।
এইটা অবশ্যই আতলামি।মুহাম্মদ আতলামি ছাড়া জীবনে ভাল কিছু করসে নাকি।
তবে এই সব আতলামির পিছনে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে 😉
হুমমম, আবার বুঝলাম।
আমারে কিছু বুঝায়া যাও। পড়া কিছুই বুঝতেসিনা। তুমি মনে হয় পারবা।তুমি তো দেখতেসি আজকে বেশ ভালই বুঝতেস... 😛
আর সহ্য হইচ্ছেনা......
ভাগ এইখান দিয়া
"আঁতলামি" চেঞ্জ করুন। এটা খুবই informative হয়েছে।
ঠিক ঠিক