পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই।

কলোম্বতে বাংলাদেশ নিজেদের ১০০ তম টেস্ট খেলতে কাল মাঠে নামবে।যাত্রাটা প্রায় ১৭ বছরের। সময়টা কম না। যদিও আমাদের দাবী আমরা নতুন দল। ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। হয়ত তাই। অন্যান্য দলগুলোর তুলনায় আমরা আসলেই অনেক কম সময় খেলেছি। অনেক নতুন একটা দল। কিন্তু সে অজুহাতে বারবার নিজেদের অব্যবস্থাপনাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আমার এই লেখাটা সম্পূর্ণ সমালোচনা পূর্ণ একটা লেখা।সাথে কিছু না পাওয়া আবেগ। ৯৯ টেস্ট,৮ জয়,৭৬ পরাজয় ও ১৫ ড্র। আপাতত আমাদের পাওনা এটুকুই।১০০তম টেস্টে আমাদের টেস্ট প্লেয়ারদের কথা জানা যাক। ২০০০ তে আকরাম খান থেকে শুরু করে ২০১৭ এ নুরুল হাসান পর্যন্ত মোট ৮৫ জন বাংলাদেশের ওই সবুজ ক্যাপটা মাথায় দেয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। কাছাকাছি শ্রীলংকা ২৫৭ ম্যাচে টেষ্ট ক্যাপ ১৩৯ জন। হ্যা, জিম্বাবুয়ে অবশ্য আছে যাদের ১০১ ম্যাচে প্লেয়ার ১০০ জন। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে বর্নবাদ সমস্যা আর অর্থনৈতিক মন্দায় দেশটা কিরকম সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে। অপরদিকে তারাও ম্যাচ জিতেছে ১১টি ও হেরেছে ৬৪টি। যেখানে প্রথম ৭০-৭৫ ম্যাচ খেলতে অভিষেক করিয়েছিল ৬০ জন সেখানে লাস্ট ১২ বছরে ৩০ টারও কম ম্যাচে অভিষেক প্রায় ৪০ জনার।আসুন আবার বাংলাদেশের কথায় আসি। ৮৫ জনে দুই অংকের ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৩৪ জন। যাদের মধ্যে ২০ টার বেশি ম্যাচ খেলেছে মাত্র ১৭ জন। ১০ এর কম খেলা প্লেয়ারদের মাঝে ৩৪ জনই খেলেছেন ৫ টির কম ম্যাচ। তাদের ভেতর আবার ৯ জনের ক্যারিয়ার ১ টেস্টের বেশি আগায়নি। স্বভাবতই ন্যাশনাল টীমে খেলা যেকোন ক্রিকেটারের স্বপ্ন। আর সেই টীমে অভিষেক সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন। স্বপ্নটাকে হাতেত মুঠোয় এনে দিয়ে সেটা আবার জ্বালিয়ে দিলে কি অবস্থা হবে সেটা কেউ ভেবে দেখেছি? ক্রিকেট শুধু একজন ক্রিকেটারের প্যাশন না, পেশাও। হঠাৎ করে চাদে নিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ফেলে দিলে মনে হয় না খুব সহজে উঠে দাঁড়ান যায়।

নিজে নিজে একটা বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট একাদশ সাজানোর চেষ্টা করলাম।

তামিম,জাভেদ,মমিনুল,আশরাফুল,বাশার,মুশফিক,সাকিব,রফিক, এনামুল জুনিয়র।
নয়জন হলো। দুই জন পেসার তো নেয়া লাগে। পেসারদের ভেতর সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলেছেন শাহাদাত হোসেন, ৩৯ টি। কি? শুনেই তো নাক সিটকালেন। তারপর মাশরাফি ৩৬ টি যে শেষ টেস্ট খেলেছে ২০০৯ সালে। বর্তমানে খেলে এমন প্লেয়ার দের মধ্যে এগিয়ে রুবেল ২৪ টি টেষ্ট খেলে, যে কিনা দলের জায়গা হাতরে বেড়াচ্ছে। আর আছে ২১ টেস্ট খেলা তাপশ বৈশ্য। বাংলাদেশি পেসাররা যে ইকোনোমি হতে পারে তা সম্ভবত প্রথম দেখিয়েছিল সৈয়দ রাসেল যাকে এখন গুগুল করেও খুজে পাওয়া যাবে না। ১৭ বছরে একটা পেস লাইন আপ হলো না। আজ মুস্তাফিজ খেলে তো কাল নাই। এ দিকে প্রতি ম্যাচে শুভাশীষ-রাব্বী এক্সপেরিমেন্ট চলে। টেস্টে পেস বোলিং এ চমক নিয়ে এসেছিলেন রবিউল ইসলাম। চমক দিয়েই তিনি হারিয়ে গেছেন। লাস্ট ইংল্যান্ড সিরিজে ইংলিশ পেসারদের রিভার্স ঠেকাতে হিমশিম খায় বাংলাদেশ। অথচ সেই পুরোনো বলে রিভার্স করা ঠিকই শিখেছিলেন রুবেল।কিন্তু শেখার পর দলে আর জায়গা পাননি। টেস্ট টেম্পারমেন্টে সত্যি একজন ডিপেন্ডেবল ব্যাটসম্যান ছিল নাসির। অন্তত পরিসংখ্যান তাই বলে। কিন্তু তাকে ক্যাটাগরিহীন বলে বসায় রাখা হলো।হাবিবুল বাশারের পর একজন সত্যিকার ক্যাপ্টেন মেজাজের কাউকে গড়ে তুলতে পারিনি।
মোটামুটি একটা স্ট্যাবল ব্যাটিং লাইন আপ যখন তৈরী হচ্ছে তখন হঠাৎ করেই সিরিজের মাঝপথে মাহমুদুল্লাকে বাদ দিয়ে তার মনোবল নষ্ট করা।আরেকটা কথা। মাহমুদুল্লাহ দলে ঢুকেছিল ৮ নাম্বার ব্যাটসম্যান হিসেবে। তার খেলা দেখে এমনকি সুনীল গাভাস্কার তাকে বলেছিল বিশ্বের সেরা আত নাম্বার ব্যাটসম্যান। সে কখনোই ৪ এ নামার প্লেয়ার ছিল না। সাইলেন্ট কিলার উপাধি টা পেয়েছিল ১১-১৩ মৌসুমে বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচে ফিনিশিং টাচ দিয়ে। তখন ব্যাট করত ৬ এ। ওটাই ওর সেরা পজিশন। তাকে টীম তার পজিশনে খেলতে দেয়নি বরং জোর করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বলে প্রত্যাশার চাপ বাড়িয়েছে। এই বাদ দেয়ার সংস্কৃতি থেকে আর বের হতে পারলাম না। ক্রিকেটার কি আর মেশিন যে যতক্ষণ চলবে বাসায় রাখব। কাজ না করলে ফেলায় দিব। ক্রিকেটাররা দেশের সম্পদ। এদের পরিচর্যা করতে হয়। সঠিক পরিচর্যা পেলে হয়ত আজ এতদিনে “তামিম,ইমরুল,শাহরিয়ার নাফিস,নাইম ইসলাম,মুশফিক, সাকিব এরকম একটা লাইন আপ দেখতাম যেটায় প্রায় সবার গড় থাকত ৪০ এর উপরে। বোলিং এ হয়ত রুবেল এতদিনে ৪০ টেস্ট খেলে ১২০/১৩০ উইকেট নিয়ে নিত। রবিউলের সুইং ঠেকাতে প্রতিপক্ষ হিমশিম খেত।

মানছি আমরা অনেক পরে খেলা শুরু করেছি। কিন্তু শুরুটা একটা আধুনিক সময়ে করেছিলাম যখন কোন কিছুর অভাব ছিল না। অন্যান্য যেকোন দলের তুলনায় সুযোগ সুবিধা কোনভাবেই কম ছিল না। ছিল শুধু একটা প্রপার ম্যানেজমেন্টের অভাব। এ যাবৎ কালে আমার দেখা ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে পজিটিভ আচরণ ছিল সৌম্যের উপর। এবং সে স্বরূপে ফিরে এসেছে। এই আচরণ টা সবার প্রতিই করা উচিৎ।
ছোটবেলা থেকেই স্কুল ফাকি দিয়ে হলেও বাংলাদেশের এই খেলাটা ফলো করি। ম্যাচ জিতলে হাজারটা ভাল কথা মাথায় আসে। আবেগে আসে। কিন্তু আজ তেমন একটা আসলো না। যা আসলো সবই দীর্ঘশ্বাস। পরিবর্তন দরকার একটা। পরিবর্তনের পরিবর্তন।

৪,৩০৫ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই।”

মওন্তব্য করুন : খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।