চির অধরা

ঘড়িতে রাত ১টা বাজে। আর আমার চোখে তখন কেবল সূর্য ডুবুডুবু করছে। রাত জাগাটা আমার বরাবরেরই অভ্যাস। ফজরের আযান না শুনলে ঘুম আসেনা। আজ কি জানি হল মাথায় একটা ভূত চাপল। খুব ইচ্ছা করছিল ওকে একটা মেসেজ পাঠাই। প্রায় ২ বছর হল কোন কথা বলি না। সেই ক্লাশ এইট এ ওকে প্রপোজ করেছিলাম। তারপর SSC ভ্যাকেশনে কিছুটা কথা হয়। কথা খুব বেশি না হলেও ওকে আমি কখনও ভুলতে পারিনি। হাজার হোক মেরা পেহলা পেয়ার। হয়তবা শেষও। যা হোক মূল ঘটনায় আসি। ফেসবুকে একটা পেজের নাম আমার খুব পছন্দ হল। “লাগবে না তোর ভালবাসা ফিরিয়ে দে আমার I LOVE YOU.” এটাই মেসেজ হিসেবে পাঠালাম। আর শুয়ে শুয়ে অধির অপেক্ষায় থাকলাম মেসেজ রিপ্লাই এর। কানে বাজছিল ফায়ারব্যান্ডের স্বপ্নময়ী গানটি। “তোকেই নিয়ে এখন ঘেরা আমার এ জীবন প্রথম দেখায় করেছিলাম তোকেই আপন।” অপেক্ষার প্রহর যেন কাটেনা। হঠাত মেসেজ রিংটোনটা বেজে উঠল। মনটা যেন আনন্দে নেচে উঠল। তাড়াতাড়ি মিডিয়া প্লেয়ার কেটে দিয়ে দেখলাম gp offer থেকে আসা মেসেজ। ধুর এইডা কিছু হইল!!!! মেজাজটাই খারাপ করে দিল। গান বন্ধ করে হেডফোন রেখে কপালে হাত রেখে শুয়ে শুয়ে আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। আর্টসেলের ভাষায় “সময় আমার আর কাটেনা….” আবারও মেসেজ রিংটোন বেজে উঠল। এবার কিছুটা প্রস্তুত হয়ে মোবাইলটা হাতে নিলাম। মেসেজের নাম্বারটা দেখে আমি আত্নহারা হয়ে গেলাম। অনেক সময় লাগল মেসেজটা ওপেন করতে। শুধু ভাবছিলাম কি লেখা থাকতে পারে। মেসেজটা পড়ে ভাল

লাগল। যা আশা করেছিলাম তাই। আমার I LOVE YOU ফেরত দিয়েছে। ফেসবুকের জোক্সের মত জোক্স করার জোস তখন ছিলনা। তাই ভদ্রতার খাতিরে রিপ্লাই দিলাম।

=>ধন্যবাদ। অনেক দিন পর নিজের জিনিস পেয়ে ভাল লাগছে।

আমাকে অবাক করে দিয়ে ও আবার মেসেজ পাঠাল।

=>তোর জিনিস তোরে ফেরত দিছি কে বলল?

অনেকটা অবাক হলাম।

=>তাইলে এইটা কার?

=>যে পাঠাইছে তার…….

মেসেজের সহজ বাংলা ভাষাগুলো আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হচ্ছিল। থাক এত সাহিত্য এখন না ছাড়ি। তবে operating system hang হওয়াতে মেসেজের রিপ্লে দিতে ভুলে গেছিলাম।মেসেজের রিংটোনে আমার ধ্যান ভাঙল।

=>কিরে hang হয়ে গেলি ক্যান?

=>কই না তো। একটা কথা বলি?

=>বল…

=>তোকে একটা ফোন করতে পারি?

=>সাধে কি আর তোকে আমি গাধা বলছিলাম!!! এত দিন ফোন করিস নাই ক্যান?

ওরে প্রপোজ করার সময় বলেছিল এখনও বয়স হয়নি। অথচ বয়সটা যে হয়ে গেছে তা ধরতেই পারিনি।আমি আসলেই একটা গাধা। কোন রকম বিলম্ব না করে ফোন দিলাম। ওপার থেকে ভেসে এল সেই প্রতিক্ষিত কণ্ঠ। যেন বহুকাল থেকে আমার কানে বাজছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম ” কেমন আছিস?” -কিরে তুই এত excited ক্যান? এত দিন পর আমাকে মনে পরল?

– না মানে……….

কথা যেন শেষ হয়না। কলেজে লাভার ফ্রেন্ডদের দেখে যারে বলতাম আজাইরা কাজ। এখন আমি সেই আজাইরা কাজ করতেছি। ভাবতেই চরম

লাগতেছিল। হঠাত কলটা কেটে গেল। যা ভাবছিলাম তাই। ব্যালেন্স শেষ। দৌড়ে আম্মুর ফোনটা আনার আগেই ও কল ব্যাক করল।

-ব্যালেন্স….(কথাটা শেষ করতে পারলাম না)

-আমি বুঝতে পারছি জনাব। আপনি নিশ্চই……কথা চলতেই থাকে, চলতেই থাকে…….(এর জন্যই বোধোয় বাংলালিংক এ্যাড দিছিল ওরে কত কথা বলে রে, যদিও আমি জিপি ইউস করতেছিলাম) রাত এভাবেই l কেটে যায়। সময় ফুরোয় তবু কথা ফুরোয় না।…..

.

.

.

.

.

.

.

.

ছোট ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙল।”এই ভাইয়া ওঠ, আমাকে কোচিং এ নিয়ে যাবি না?”অলস ভাবে ঘড়ির দিক তাকিয়ে দেখি ১০টা।কিন্তু পাশে পরে থাকা মোবাইলটা চোখে পরতেই মাথায় বিদ্যুত খেলে গেল।ছোঁ মেরে সেটা হাতে নিলাম। অন করতেই দেখি ওর পাঠানো মেসেজ। তবে মেসেজটা পরে মনটা আর তত ভাল থাকল না। লেখা- “সেটা তো বহুদিন আগেই ফিরিয়ে দিয়েছি। তুই এত দিন পর!!!!আমাকে ভুলে গেলে ভাল, আর যদি না ভুলে থাকিস

তাহলে বলি ভুলে যা। অযথা ক্যান তোর মূল্যবান সময় নষ্ট করবি?” ভাইয়া তাড়াতাড়ি কর…আমার লেট

হয়ে যাচ্ছে। কি জ্বালা!!!! ধের…..

উঠে পরলাম।চললাম সময়ের মূল্য দিতে। শুধু একটা রিপ্লে দিলাম। “পারিনি,কখনও পারবনা।”

মাথায় বাজছিল” আমার স্বপ্নগুলো কেন এমন স্বপ্ন হয়……”

১,৮৪৩ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “চির অধরা”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ব্লগের ফরম্যাটিং ঠিক করে দাও। কোন পোস্ট জমা দেয়ার আগে এডিটরে প্রিভিউ বাটন চেপে দেখে নেবে কেমন আসবে। কোন ব্লগ যদি পেন্ডিং থেকে ড্রাফট করে দেয় মডারেটর তাহলে সেই ড্রাফট খুলে ডানে মডারেটর নোট দেখে সেই অনুযায়ী ঠিক করে দেবে।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    লিখেছো ভালই, :thumbup:

    তবে এটাকে কবিতা হিসেবে ট্যাগ না করে, গল্প বা ব্লগর ব্লগর হিসেবে দিলেই মানানসই হত বলে আমার মনে হয়।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ফরম্যাটের কারনে খুব বেশি দূর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলাম না বলে শেষ করা হলো না। পারলে ঠিক করে দিও।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      কোন সমস্যা নেই ইশরাক। ব্লগ এডিটে ক্লিক করে লাইনের মাঝের অপ্রয়োজনীয় স্পেস ডিলিট করে দাও আর উপরে জিহাদ যেমন বলেছে পোস্ট ফাইনাল করার আগে প্রিভিউ দেখে নিও।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইশরাক (২০০৮-২০১৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।