কিছু দিন আগে দেখলাম এক বিশাল হুজুগ। ভারত সীমান্তে নির্যাতন করছে, আর তো সহ্য করা যায় না। গতবছর ফেলানী কে মেরেছে, এ বছর হাবুকে ন্যাংটা করে পিটালো। তার উপরে কত বড় সাহস, আমাদের বিজিবি (প্রাক্তন বিডিআর) জওয়ান কে তুলে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন। এবার কিছু একটা করতেই হবে। শুরু হল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া। কার স্ট্যাটাসে কত কমেন্ট/লাইক পড়ল সেই নিয়ে প্রতিযোগিতা। এমন কি ইংলিশ মিডিয়ামের পোলাপাইন, যাদের বাংলা জ্ঞান মোটামুটি ‘ক’ লিখতে কলমের কালি শেষ, তারাও এখান ওখান থেকে বাংলা কমেন্ট কপি করে স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করল। এর সাথেসাথে সমস্ত ব্লগে উঠল ঝড়। চলল ক্ষমতাসীন দলের গুষ্ঠী উদ্ধার। সেইসব ভারতীয় পন্যের তালিকা প্রকাশ করা হল, যেগুলো ব্যাবহার করার কারনে বাংলাদেশে আজ এত দারিদ্র, এত অরাজকতা। কেউ কেউ আবার ভারত বিরোধী সমাবেশ এর ডাক দিলেন। সে এক এলাহী কান্ড।
তো ঘটনা এক সপ্তাহ গড়াল না। হুজুগ শেষ। ভারত নিয়ে চিন্তা করার আর সময় নেই। ২৯শে জানুয়ারী আওামী লীগ আর বিএনপি পাল্টা পাল্টি কর্মসূচী ঘোষনা করেছে। টান টান উত্তেজনা। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে এই অনলাইন ঝড়ও ৩/৪ দিনের মধ্যেই থেমে যাবে। আমাদের ফেসবুক বিপ্লবীরা আবার গান,জোকস আর ছবি শেয়ার করা শুরু করবে। ব্লগাররা এই ইস্যু গুলোর পূনঃবিশ্লেষন করবে। আবার কমেন্ট, অনলাইন তর্ক; বেনসন সিগারেট টানতে টানতে বিডিনিউজ আর প্রথম আলোর সাইট এ ঘুরাঘুরি-যদি নতুন কোন ইস্যু পাওয়া যায়। আমাদের নির্যাতিত হাবু আর বিডিআর জওয়ান বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে? কাতরাক। ফেলানী মারা গেছে, মারা যাক। আমি আর কি করতে পারি? আমি তো ওদের কে নিয়ে তো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছি। ব্লগও লিখছি। কতজন কমেন্ট করেছে জানেন? কতগুলো লাইক পরেছে, আপনার কোন আইডিয়া আছে? ব্যাস, হয়ে গেল দ্বািয়ত্ব শেষ।
আমার সমস্যাটা এখানেই। দেখে খুব ভাল লাগল যে আমাদের সবকিছু নিয়ে আমরা খুবই সচেতন আর খারাপ লাগল যে আমরা গোল্ডফিশের মত স্বল্প স্মৃতির অধিকারী এবং অদূরদর্শী। ভারত নির্ভরশীলতা নিয়ে যে এত আলোচনা, তার মধ্যে কোথাও আমাদের ভারত নির্ভরশীলতার কারনটা নেই। সবাই দোষারোপ/কটাক্ষ করছে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখা আর লেইস চিপস খাওয়া লোকজন কে (যারা করছে তারা নিজেরাও এই দোষে দুষ্ট)। অতি নগন্য একটা অংশ ছাড়া কেউ এটা বলল না যে আমাদের দেশের সাধারন মানুষ কেন দেশী টিভি চ্যানেল বাদ দিয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেল দেখে কিংবা দেশী পটেটো ক্র্যাকার্স বাদ দিয়ে লেইস চিপস খায়?
[sb]কারনটা আসুন একটু বিশ্লেষন করি। উদাহরন হিসেবে টিভি চ্যানেল ধরি। সবগুলো নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করতে গেলে হাজার হাজার পেজ হয়ে যাবে। [/sb]একুশে টিভির হাত ধরে বাংলাদেশে ব্যাক্তি মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল এর যাত্রা শুরু। সবাই জানে যে চ্যানেলটাকে বাংলাদেশের মানুষ সাদরে গ্রহন করেছিল। এর পিছনে ছিল চ্যানলটির ব্যাবস্থাপনা পরিষদের (বিশেষ করে জনাব সায়মন ড্রিং সাহেব) পেশাদারী মনোভাব (পেশাগত দ্বায়িত্বশীলতা/দায়বদ্ধতা) । তাদের সংবাদ কর্মীদের দিনের পর দিন বিবিসির তত্তাবধানে প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের উপহার দিয়েছিল প্রথম বাংলায় আন্তর্জাতিক মানের সংবাদ পরিবেশন। আমাদের মুক্তি মিলল বিটিভি নামের সরকারী বোকা বাক্সের হাত থেকে। সব ভালই চলছিল। হঠাৎ করে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহনের কিছুদিন পরে দিল বন্ধ করে চ্যানেলটা (আইনগত জটিলতাটা আমার জানা নেই)। ততদিনে একুশে টিভির সাফল্য দেখে অনেকেই টিভি চ্যানেল খুলতে আগ্রহী হল (যে আগ্রহ এখনও শেষ হয়নি)। ফলাফল নিজের অর্থনৈতিক (বেশীর ভাগই কাল) এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী থেকে শুরু করে চোরাকারবারী সবাই টিভি চ্যানেলের মালিক হয়ে গেল। তো মালিক হলেই তো হবে না, চ্যানেলও চালাতে হবে। নিজের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে গন হারে নিয়োগ দেয়া শুরু করল মালিক পক্ষ। বিটিভির কিছু পুরোনো আসবাব (কর্মকর্তা পড়ুন) এই সূযোগে বিভিন্ন চ্যানেল এর হর্তা কর্তা হয়ে গেলেন। কারন এই লাইনে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকের খুবই অভাব।
এই আসবাব হর্তাকর্তা আর মেধাশূন্য কর্মীবাহিনী গবেষনা করে বের করল একুশে টিভির সংবাদ ছিল হিট, তাই বেশী বেশী সংবাদ প্রচার করতে হবে। শুরু হোল প্রতি ঘন্টায় সংবাদ, পাড়ার সংবাদ, রান্নঘরের খবর নামের এক আজব জিনিস। এক দল ছেলেমেয়ে জিন্স-কেডস পরে, হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে রাস্তায়, সংসদের সামনে, নির্বাচন কমিশনের সামনে দারিয়ে থাকে আর গুরুত্বপূর্ন (এমনকি আব্জাব), কোন মানুষ বের হলেই তাকে মৌমাছির মত ছেকে ধরে। দ্বায়িত্বশীল সংবাদের বা সংবাদ পরিবেশনের নাম গন্ধ খুব কম খবরেই পাওয়া যায়। সবারই মনে আছে বিটিভি তে প্যাকেজ নাটক এবং ধারাবাহিক ছিল হিট। তাই নাটক বানানোর হিরিক পরে গেল। চাহিদা প্রচুর, তাই এক সময়ের স্পটবয় বা ক্যামেরা সহকারী হয়ে গেল নাটকের ডিরেক্টর। অসংখ্য মানহীন নাটক দিয়ে ভরেগেল চ্যানেলগুলোর চাঙ্ক। এর সাথে স্টারপ্লাস স্টাইলে মেগা ধারাবাহিক নামক এক আজব রকমের নাটক আমদানী করা হল (আরও অনেক কিছু বিদেশী চ্যানেলের অনুকরনে করা হয় )। নায়িকা ৫ বার বিয়ে করে তো ৬ বার ডিভোর্স হয়। নাটকের কাহিনী আর শেষ হয়না। এর সাথে গত ৪/৫ বছরে টক শো নামের এক যন্ত্রনা চালু করেছে সবগুলো চ্যানেল। ব্লগার আসিফ জেবতিক এর মত করে বলি, “কয়েকটা হার্ডবোর্ড রং করে তার উপর ১০০ টাকা দামের মগে লিকার চা দিয়ে কাউরে বসায় দেয়া হয় যে ঘন্টাখানেক ননস্টপ (বেশীরভাগ সময় অর্থহীন)বকর বকর করে।”
ভারতীয় চ্যানেল আমাদের দেশে অনেক আগেই ঢুকেছে যথাযথ নীতিমালার অভাবে। তার সাথে দেশী চ্যানেলগুলোর এই অত্যাচার। গরীব এই দেশের গরীব মানুষেরা ৩৫০ টাকা মাসে ডিশের বিল দেয় কিছুটা বিনোদনের জন্য। হাতের কাছে (রিমোট চাপ দিলেই) আছে ঝকঝকে ভারতীয় চ্যানেলের চকচকে উপস্থিতি। হিন্দী ভাষটাও সহজ, দুই দিন শুনলেই বোঝা যায়। ফলাফল দাড়াল যেরকম এক সময় ভদ্রলোক বাংলা সিনেমা দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল (এখনও খুব বেশী দেখেনা) যার যায়গা নিয়েছে ভারতীয় সিনেমা তেমনি দেশী চ্যানেলের হাবিজাবি অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে ভারতীয় চ্যানেল দেখা। খেয়াল করে দেখবেন ভারতীয় চ্যানেল গুলোতে আমাদের মত “একের ভিতরে সব” একই চ্যানেলে ঢুকিয়ে খিচুরী বানায় না। এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেল শুধু বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানই প্রচার করে। খবর বা টক শো এর আলাদা চ্যানেল আছে। এমনকি ট্রাভেলিং/সিনেমারও আলাদা চ্যানেল। বাংলাদেশীরা পছন্দ মত ভারতীয় চ্যানেলে আসক্ত হয়ে পড়ল।
আমার সচেতন পাঠক বন্ধুরা আসুন আমরা আবার লেখার প্রথমে ফিরে যাই। ধরুন মৌসুমী বিপ্লবীদের সাথে এক হয়ে আমরা ভারতীয় চ্যানেল বর্জন করে চাইনিজ,ফ্রেঞ্চ কিংবা জাপানী চ্যানেল বা সিনেমা দেখা শুরু করলাম। তাতে লাভটা কোথায় হবে? হাবু নামের যে ছেলেটা ২০০০ টাকার জন্য বউ-পরিবার ফেলে, প্রানের মায়া বাদ দিয়ে ভারতে গরু আনতে গেল তার কতটুকু লাভ হবে? টিপাইমুখ বাঁধ কি তৈরী হওয়া থেমে যাবে? নাকি বিএসএফ আমাদের গুলি করা বন্ধ করে দিবে? কারন গুলি করলে আমরা আর লেইস চিপস খেতে খেতে স্টার প্লাস দেখব না।
আপনাদের কি মনে আছে একটা সময় ছিল যে বিটিভির ধারাবাহিক নাটকের দিন রাস্তা ফাকা হয়ে যেত। এখনও ভাল কোন সিনেমা আমরা সাদরে গ্রহন করি। যেমনঃ শ্রাবন মেঘের দিন, গেরিলা। আরও একটা ভাল উধাহরন দেই (যদিও স্থূল)। একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় সেলো, রেনল্ড ইত্যাদি কলম বাজার ছেয়ে ফেলেছিল। বাংলাদেশী কোন কলম মোটামুটি ১০ দোকান ঘুরলে একটা পাওয়া যেত। তার পরে ম্যাটাডোর নামে একটা কলম বাজারে আসে। মানে মোটামুটি সেলোর মত। তার পরের কথা তো সবাই জানে। এখন আপনি সেলো কলম কিনতে গেলে ১০ দোকান ঘুরতে হবে। কিন্তু সব দোকানেই বাংলাদেশী কলম পাওয়া যায়।
বন্ধুরা আমার লেখা শেষ করি। শেষের আগে বলি এত সামান্য নৈতিক প্রতিবাদ দেখিয়ে আমরা আমাদের দ্বায়িত্ব শেষ করতে পারি না। আমাদের দেশের ভেতরের যে লোকগুলো দূর্বল আন্তর্জাতিক সম্মর্কের/বানিজ্য ব্যাবস্থাপনার জন্য দায়ী, তাদের কে আগে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। যোগ্য লোককে তাদের স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। এর সাথে আমাদের নিজেদের উৎপাদিত পন্যের মান বাড়াতে হবে। যাতে বিদেশী পন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমে। আমাদের ক্রয় ক্ষমতায় যদি দাম দিয়ে বিদেশী পন্য কেনার সামর্থ্য থাকে তবে বেশী দাম দিয়ে দেশী পন্যও কিনতে পারব (উদাহরনঃ আমরা আর্টিস্টি থেকে ২৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকায় শার্ট কিনি যা যেকোন বিদেশী ব্র্যন্ডের শার্টের দামের সমান বা বেশী)। এবং এই কাজগুলো আমাদের মহান রাজনৈতিক নেতাদের হাতে না ছেড়ে আমাদেরকেই করতে হবে। আমাদের সম্মিলিত ভাবে আগে প্রতিহত করতে হবে আমাদের নিজেদের ব্যার্থতা। (শুধু আওয়ামী লীগের ব্যার্থতার কথা বলছি না। তারা তো ব্যার্থ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও এমন কিছু করবে না যাতে দেশ বেহেস্ত হয়ে যাবে। আশা করি বিগত বিএনপি আমলের কথা আপনারা ভুলে যান নি)। পুরোনো, অসৎ রাজনৈতক নেতৃত্ব আমাদেরকেই বদলাতে হবে।
তা না হলে হাবুরা গরু আনতে গিয়ে মাইর খাবেই, বিএসএফ গুলি প্র্যাকটিস করবেই, টিপাইমুখ বাধ তৈরি হবেই আর আমরা ছাপোষা মানুষেরা.____________ ।
[সামহোয়্যার ইন ব্লগেও প্রকাশিত]
ভাইয়া লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো, :boss:
এর সমাধান কি ভাবে সম্ভব??
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সহমত @নাজমুল
:clap:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
আসিফ তুমি কি মনে করো, 😕 এর সমাধান কিভাবে করা যায় ??
এরকম লেখাও ব্লগে ব্লগে আর ফেসবুকে ভরে গেছে --- তেমন নতুন কিছু নাই।
ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট যখন আরও দুর্বল অবস্থায় ছিল, তখন থেকেই স্বদেশী পণ্যের আন্দোলন করে বিভিন্ন জাতির এই অঞ্ছলকে একই প্ল্যটফর্মে আনা হয়েছিল। আজকের দিনে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে জাগিয়ে তুলতে, জনগনের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ জাগাতে এই স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের প্রচারের কোন বিকল্প আছে বলে আমার জানা নেই। ইন্ডিয়ার চ্যানেলের মধ্যে শতকরা যে অংশটুকুকে ভাল বলা যাবে, খুঁজে পেতে দেখলে আমাদের চ্যানেলের শতকরা সে পরিমাণ ভাল অনুষ্ঠান হয়। কোন অজুহাতেই আমি ইন্ডিয়ান চ্যানেলের বি্নোদনমূলক অনুষ্ঠানের প্রচার করাটাকে সমর্থন করি না। এটা আমার কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না চাওয়ার মতোই আরেকটি অপরাধ বলে মনে হয়। হ্যাঁ আমরা ইন্ডিয়ার ভাল ছবি দেখবো, কিন্তু ওইদেশের পতিতা নায়িকাদের খদ্দের হবো কেন?
আপাতত এই পর্যন্তই।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ভাইয়া, পুরো পোস্ট পড়তেছি পরে, আগে আপনার প্রথম তিন প্যারার কমেন্ট করি।
ভারতীয় পন্য বর্জনের যে ফেসবুকীয় আন্দোলন সেটা কিন্তু চলছেই, হয়ত একটু কমে গেছে এর কারন অ্যাক্টিভ মেম্বারদের অনেকেই লেখা কমিয়ে দিয়েছে।
আর পাবলিক অ্যাক্টিভিটি যদি বিচার করেন, বানিজ্য মেলায় ২৭ তারিখে একটা প্রোগ্রাম ছিল যেখানে ২০ জন প্ল্যাকার্ড আর লিফলেট নিয়ে দাড়িয়ে ছিল। ফর্চুনেটলি বা আনফর্চুনেটলি এই পাবলিক প্রোগ্রামের মুলে আমি ছিলাম (কেমনে কেমনে জানি লিডার হয়ে গেছিলাম), সাথে আরও অনেকে ছিল। তো এখন আমি ডিফেন্ড করি আমাদেরকে। প্রাসঙ্গিক কথা বলি, ফেসবুকে এ নিয়ে একটা গ্রুপ আছে যেটা মোটামুটি বিকল্প ধারার মিডিয়া থেকে ভালই ফিডব্যাক পেয়েছে।
(১) গ্রুপে আমাদের যারা অ্যাক্টিভ মেম্বার ছিল তাদের পোস্ট কমে যাওয়ার কারন অনেক। প্রথমত, গ্রুপ অ্যাডমিন সরকার আর মিডিয়া থেকে প্রেসারে আছে যেকারনে চাচ্ছেন না আমরা বেশী পোস্ট করি। দ্বিতীয়ত, ব্লগেও এ কারনে ভারতীয় পন্য বর্জন জাতীয় পোস্টগুলা দ্রুতই হাইলাইট হওয়া থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। তৃতীয়ত, এসবি যখন আপনাকে ডেকে সতর্ক করে আর আপনার ফোন নাম্বার নিয়ে যায় তখন একটু সতর্ক হয়েই কাজ করতে হবে। বড় স্কেলে পাবলিকলি প্রোগ্রাম করার রিস্ক হল সাবোট্যাজ করার জন্য লীগের বা জামাইত্যা কেউ ঢুকে যেতে পারে যেটার দোষ পড়বে আমাদের উপর।
কোন রকম ভাদা বা ছাগু ট্যাগ লাগাতে আমরা অনিচ্ছুক, এই ব্যাপারে আমরা একটু বেশী হলেও সতর্ক থাকছি। এই মুহুর্তে ভার্সিটিগুলাতে ১০০০০০ লিফলেট মেসেজ দেয়ার ইচ্ছা আছে যেটা অর্থাভাবে করতে পারছি না। সম্পুরক উদাহরন দেই? ২৫ তারিখে নয়াদিগন্ত ফোন দিয়ে আমাদের অ্যাক্টিভিটি এক্সক্লুসিভ কাভার করতে চেয়েছিল, শিবিরের এক সংঘটন চেয়েছিল স্পন্সর করতে, সোজা ভাষায় গদাম দিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে আমাদের আলোচনা গ্রুপে বা ব্লগে পাবলিকলি না হলেও প্রাইভেট মেসেজে চলছে। আশা করি ক্যাডেট কমিউনিটি থেকেও অনেকে এগিয়ে আসবে, যেটা এখন পর্যন্ত শুধু ফান পর্যায়ে আছে।
(২) আমাদের মুল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছি বারবার। আমরা কোন ভাবেই সরকারের প্রতিপক্ষ না, বা দেশের সার্বভৌমত্ব হারায় এমন কিছুই করব না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য মানুষকে দেশে তৈরী পন্য ব্যাবহারে অনুপ্রানীত করা, সবার আর্থিক সঙ্গতির দিকে খেয়াল করে আর যেগুলার অল্টারনেটিভ দেশে প্রস্তুত হয়। দ্বিতীয় লক্ষ্য হল, সীমান্তে ভারতীইয় বর্বরতার প্রতিবাদে ভারতীয় পন্য বর্জন করতে শেখা। আমাদের পাবলিক মার্কেটের অনেককিছুই এখন ভারতীয়দের দখলে, সেখান থেকে আমাদের নিজের পায়ে দাড়ানো। আর নিজে স্বনির্ভর হলে আসলে এসব ভারতীয় পাকিস্তানী বা চীনা জিনিষের বেইল কেউ এমনিতেই দিবে না।
(৩) সবশেষে একটা প্রশ্ন, এইসব আন্দোলনের জোয়ারে গা না ভাসিয়ে আপনি নিজে কি পেরেছেন ব্যাবহার্য ভারতীয়/বিদেশী পন্য বাদ দিয়ে আমাদের পন্য ক্রয় করা?
আমার ১ নাম্বার পয়েন্টের উত্তরে হয়ত কেউ বলতে পারে, গ্রুপ থেকে নজরদারীর বা মডারেশনের ঝামেলা থাকলে কেন নতুন গ্রুপ খুলছি না? কারন সিম্পল, এই গ্রুপে মানুষ বেশী, আর আমাদের মুল লক্ষ্যই হল বেশী মানুষকে সচেতন করা। পাবলিক প্লেইস অ্যাক্টিভিটি তো নন ফেসবুকারদের জন্য।
আমি খুবই আশাবাদী হলাম তোমার কমেন্টে। আমার পরিবারে স্বদেশী আন্দোলনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন বলে আমি বোধহয় কিছুটা জীনগত কারণেই দেশীয় পণ্য ব্যবহারের ব্যাপারে খুবই আবেগপ্রবন। আমার্র এই আমেরিকার বাসায় আসবাবপত্র, ক্রোকারিজ যা যা সম্ভব সবই আমি জাহাজের কার্টুন ভাড়া করে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসছি। স্বদেশি পণ্যের প্রতি ভালবাসা থেকেই আমি এই সৌখিনতাটুকু করেছি। দেশি পোষাক কখনও বাংলাদেশের না হলে ্পড়ি না। আমেরিকা থেকে আমি দেশীর জিনিষ ব্যবহার করতে পারলে লোকে দেশে থেকে দেশের জিনিষ ব্যবহার করবে না কেন? তবে হ্যাঁ যেটা আমেরিকান কেনা দরকার, সে্টা আমেরিকান কিনি।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ভাইয়া লিফলেটের জন্য, আমরা ৩ জন অসুস্থ ক্যাডেটদের জন্য কিছুদিনের মাঝেই টাকা পাঠাবো বলে আশা করছি, তখন ছোট কিছু হেল্প করোতে পারবো।
আজকে হুমায়ূন আহমেদের একটা লেখা পড়লাম, কিছুই লিখে নাই, দেশ নাকি ঠিক আছে, আমি জানিনা আছে কিনা, কিন্তু আমার স্বল্প জ্ঞ্যানে আমি মনে করি খুব খারাপ কিছু হবে ভবিষ্যতে, যদি এখনি কিছু না করা যায়।
অসুস্থ ক্যাডেটদের সুস্থতা আগে, পরে সুযোগ হলে সাহায্য কোরো। অল্প হলেও অনেকেই এগিয়ে আসছেন সাহায্য করতে, তবে এটাও ঠিক পাবলিক প্লেইস অ্যাক্টিভিটি না হলে মানুষ বিশ্বাস করতে চায় না।
ভাই খুব সুন্দর হইছে লেখাটা চ্রম !
রাজীব ভাই, নাজমুল, রুবেল রয় এবং আশহাব, অনেক ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য। লেখাটা ভাল লেগেছে দেখে খুব ভাল লাগল। সমাধান আমি নিজেও খুঁজছি। আমরা সবাই একসাথে চিন্তা করলে সঠিক পথ নিশ্চিত ভাবে বের হয়ে আসবে।
রাকেশ এবং ওয়াহিদা আপা, আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ আমার লেখাটা পড়ার জন্য। আপাতত আমি আমার লেখার শেষ ২ প্যরা আরেকবার পরার জন্য অনুরোধ করছি। পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।
যারা পড়েছেন সবাইকে আবারো ধন্যবাদ
রাকেশ,
বলেছিলাম বিস্তারিত আলোচনা করব। অল্প কথায় বিস্তারিত আলোচনা করি।
১) আমি স্থায়ী সমাধান চাই। ধর তোমার শহরে/গ্রামে মানুষ খেকো বাঘ ঢুকেছে। তোমার নিজের নিরাপত্তা বাড়ানোর সাথে সাথে বাঘটা মারারও ব্যাবস্থা করতে হবে। তা না হলে আজকে তুমি হয়ত বেঁচে যাবে কিন্তু তোমার পাশের বাড়ীর মানুষটা হয়ত বাঘের শিকার হবে। তেমনি আজকে তুমি ভারত বিরোধী লিফলেট দাও, কালকে দেখা যাবে আরেকটা কারনে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সুতরাং আমাদের প্রথমে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে তারপর মানুষখেকো বাঘটাকে মারতে হবে।
২) আমাদের অনেককিছুতে স্বয়ং সম্পূর্নতা নেই। তাই মার্কেট কারও না কারও দখলে থাকবে। দেশী পন্য ব্যাবহারের জন্য অনেক রকমের প্রচারনা আগেও হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। তারপরেও আজকে কেন তোমাকে আবার প্রচারনা চালাতে হচ্ছে??
তুমি কি জান মার্সিডিস বাংলাদেশ এ তাদের প্ল্যান্ট করতে চেয়েছিল। ৮৫-৮৭ সালের দিকে। অ্যাকচুয়াল সালটা মনে নেই। কিন্তু তারপরে তারা মালয়েশিয়া তে চলে যায়? কেন বলত?
৩) যেটা দেশের জিনিস ব্যাবহার করলে সমস্যা হয় না সেটা আমি দেশের জিনিসই ব্যাবহার করি। আর ভারতীয় কিছু জিনিস আমার স্বত্তার মধ্যে মিশে আছে। যা আমি কোন সময়ই বাদ দিব না। যেমনঃ সত্যজিত রায়ের লেখা ও সিনেমা, শীর্ষেন্দুর অদ্ভূতুরে সিরিজ, নণ্টে ফন্টে, হেমন্ত, মান্না দের গান, অমল পালেকার অভিনীত কিছু সিনেমা, ইত্যাদি।
ওয়াহিদা আপা,
আপনার সাথে আমি একমত আমি যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাকেশ এর ১ নাম্বার এর উত্তর এ যা বলেছিলাম, সেটাই বলছি, ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষ খেকো বাঘ টা মারতে হবে। এটা একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তা না হলে ঐ বাঘের আক্রমনে হওয়া ক্ষতের চিকিৎসা করে কূল পাওয়া যাবে না।
আপনি বলেছেন যেটা আমেরিকান দরকার সেটা আমেরিকান কেনেন। আমাদের বেশীরভাগ মানুষই যেটা বিদেশী দরকার সেটাই কেনে।
আমি সবসময়ই ভাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, সিনেমা, সাহিত্য ইত্যাদিকে ভৌগলিক সীমানা দিয়ে আলাদা করিনা। যে দেশেরই হোক, আমার আপন মনে হয়।
আপনি বলেছেন নতুন কিছু নেই আমার লেখায়। বিনয়ের সাথে বলি, আমি কোন সাহিত্য হিসেবে লেখাটা লিখিনি। বিরক্ত হয়ে লিখেছি। চেষ্টা করেছি মূল সমস্যাটা নিয়ে কাজ করার জন্য সবার দৃষ্টি ফেরাতে।হয়ত আমার মত আরও অনেকে আছে। যারা চায় মূল সমস্যাটা সমাধান করতে।
ধন্যবাদ।
রাকেশ,
১০০০০০ লিফলেট এর খরচ প্রতিটি ১০ পয়সা করে ধরলে ১০০০০ টাকা। হাবু ২০০০ হাজার টাকার জন্য গরু আনতে গিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছে। বেসরকারী অনেক চ্যানেল তার সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। অনেকেই তাকে নিয়ে অনলাইন/খবরের কাগজে এ অনেক কিছু লিখেছে। কিন্তু ২ পয়সা দিয়ে কেউ সাহায্য করেনি।
অনুরোধ করছি তোমার লিফলেট কিছু কম ছাপিয়ে পারলে হাবুকে কিছু সাহায্য কোর।
সুন্দর লিখেছ। ::salute::
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল