লিমনের জগত

ফজরের আজানের ধ্বনিতে আফরোজা বানু ধড়মড় করে জেগে উঠলেন। অনেকদিন বাদে আজ আবার একই দুঃস্বপ্ন দেখলেন। কিছুক্ষণ বিছানায় চুপচাপ বসে রইলেন তিনি। তার শ্বাসপ্রশ্বাস এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রচণ্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে আছে। পাশেই লিমনের বাবা এখনো গভীর ঘুমে। ধীরে ধীরে উঠে পড়লেন আফরোজা। ওযু করে ফজরের নামাযে দাড়িয়ে গেলেন। আজ লম্বা সময় ধরে সিজদায় পড়ে রইলেন। মোনাজাতের সময় প্রতিদিনের মত আজও গাল ভিজে গেল। জায়নামাজ গুটিয়ে বারান্দায় চলে এলেন তিনি। সূর্যের আলোর রেখা এখনও উঁকি দিতে শুরু করেনি। বারান্দার বাল্বের আলোয় উঠানের খানিকটা দেখা যাচ্ছে মাত্র। এখান থেকে লিমনের একচালা টিনের ঘরটা ঝাপসা-ভাবে দেখা যাচ্ছে। লিমনের কথা ভেবে মনটা আবার ভারী হয়ে এলো আফরোজার। রাতের দুঃস্বপ্নটা ওকে নিয়েই দেখেছেন।একদল হিংস্র হায়েনার মতন জন্তু আফরোজার ছেলেটাকে খোলা মাঠে তাড়া করছে। লিমন মা মা করে আর্ত চীৎকার করছে। আফরোজা পুরো দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছেন, তার ছেলের চীৎকার শুনতে পাচ্ছেন কিন্তু কিছুই করতে পাড়ছেননা। এই ভয়াবহ স্বপ্নের যে অংশটা তাকে সবচেয়ে বেশী বিচলিত করে তা হল স্বপ্নে তিনি পঁচিশ বছরের লিমনকে দেখতে পাননা। বরং বালক লিমনকে দেখতে পান। লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিমনের ঘরের দিকে পা বাড়ালেন আফরোজা।

লিমনের ঘরের দরজাটা রাতে খোলাই থাকে এখন। লাইট জালিয়ে এক দৃষ্টিতে লিমনের দিকে তাকিয়ে রইলেন আফরোজা। কিভাবে শিশুর মত গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে ছেলেটা। আফরোজার খুব ইচ্ছে করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে থাকেন কিছুক্ষণ। তিনি জানেন এখন আর তা সম্ভব নয়। এক বছর আগেও করেছেন। কিন্তু এই লিমন আর আগের মত নেই। সৃষ্টিকর্তা তার এই নিষ্পাপ ছেলেটির কাছ থেকে অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছেন। তার একমাত্র ছেলেটি গত বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্মৃতিশক্তি হারায়। কিছু স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া ও আর কিছুই মনে করতে পারেনা। এমনকি আফরোজাকেও না। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের জন্য কপালের দুইপাশে যে দুটি শিরা থাকে দুর্ঘটনায় তার একটি ছিঁড়ে যায়। ডাক্তাররা আফরোজাকে এরকমই বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন কোনভাবেই যেন অপর শিরাটা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। ওটা আঘাতপ্রাপ্ত হলে লিমনকে আর বাঁচানো যাবেনা। আফরোজা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেন ওকে দেখে রাখতে। এমনিতে ও সারাদিনে ঘর থেকে তেমন একটা বের হয়না। বের হলে শুধু মোড়ের চা এর দোকানটাতে যায়। আফরোজা দোকানদারকেও বলে রেখেছেন খেয়াল রাখতে। কিন্তু সর্বক্ষণই ওর জন্য দুশ্চিন্তায় থাকেন তিনি। বাহিরে আলো ফুটতে শুরু করেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফরোজা ছেলের ঘর থেকে বের হয়ে আসেন।

 

জানালা গলা এক চিলতে রোদ এসে ছড়িয়ে পরে লিমনের ঘুমন্ত মুখে। সকালের আবছা আলোতে পঁচিশ বছর বয়সী তরুণের মুখটা মায়াবী মনে হয়। ব্যস্ত মানুষের পদচারণা আর কোলাহলের শব্দ প্রতিধ্বনি তুলে রাস্তার পাশের ছোট্ট টিনের ঘরটায়। রিকশার বেলের ঘণ্টা নাকি সবজি বিক্রেতার চীৎকারে লিমনের ঘুম ভেঙ্গে যায় ও বুঝতে পারেনা। বিছানা থেকে নেমে জানালাটা খুলে দেয় সে। আলোতে ভরে যায় ঘরটা। দিনের বড় একটা সময় এই জানালার পাশেই কাটে লিমনের । রাস্তায় যাতায়াত করা নানান রকমের মানুষগুলোকে ও দেখে। লিমনের ঘরে চেয়ার, টেবিল আর একটি খাট ছাড়া তেমন কোন আসবাব ই নেই। টেবিলের উপর সকালের নাস্তা রাখা। নিশ্চয়ই ওই ভদ্রমহিলা রেখে গেছেন। লিমন এই বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে চিনেনা। কেন তিনি ওকে সারাক্ষণ দেখে রাখেন বা ওর যত্ন করেন তাও ও বুঝতে পারেনা। বুঝার চেষ্টা করে লিমন। অনেক চেষ্টা করে মনে করতে। কিন্তু পারেনা। বরং চিন্তা করতে গেলেই মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা অনুভব করে।  এখন আর এসব নিয়ে তেমন চিন্তা করতে চায়না ও। আগে এগুলো নিয়ে ভেবে প্রচণ্ড অসহায় বোধ করত। কেন ও এই বাসার লোকজনগুলোকে চিনতে পারেনা, কেন ও পূর্বের কোন সৃতি মনে করতে পারেনা। চিন্তা করে যন্ত্রণায় নীল হয়ে যেত। কিন্তু কোন উত্তর মিলতনা। একসময় ও হাল ছেড়ে দিয়েছে। ভদ্রমহিলা অবশ্য ওকে বলেছেন যে ও তাদেরই সন্তান। দুর্ঘটনার কথাও বলেছেন। কিন্তু কিছুই মনে করতে পারেনা লিমন।

 

সোহরাবের কপালে তিনটা ভাঁজ পরে আছে। দোকানটা খুলার পর থেকে আজকে একটার পর একটা কুফা লেগে আছে। সকালেই উকিল বাড়ীর কাজের মেয়েটা দুই হালি ডিম ফেরত দিয়ে গেছে। ডিমগুলো নাকি পচা। ঝাঁকি দিলে নাকি ভিতরে নড়ে। কি দুনিয়া। আরে ডিম না ভাঙলে কি বুঝা যায় নাকি ডিম ভালো না পচা? আগে ভেঙ্গে তো দেখবি, তা না। যত্তসব। আর দুইদিনের পিচ্চি এক কাজের মেয়ে সে কিনা আবার সোহরাবকে শাসায়! বলে এর পর এরকম হলে নাকি উকিল সাহেব দোকান উঠিয়ে দিবে। মামা বাড়ি নাকি? বললেই হল? সোহরাব কি উকিল সাহেবের দোকানদারি করে নাকি? মাথাটা তখন পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু একটু পরেই যখন জয়নাল ভাই তার দলবল নিয়ে দোকানে বসলো তখন থেকেই ও চুপসে গেছে। জয়নাল ও তার দলকে এলাকার সবাই ভয়ের চোখে দেখে। না দেখার কোন কারন নাই। ছোটোখাটো চুরি ডাকাতি থেকে শুরু করে সব ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এই দলের কেউ না কেউ জড়িত। জয়নাল ভাই এর কোমরে তো সবসময়ই একটা মেশিন গোঁজা থাকে। লুকানো থাকে। কিন্তু সোহরাব একদিন দেখে ফেলেছে। এর পর থেকে আর চা এর দাম চায়না ও। এই সুযোগে জয়নালের সাঙ্গপাঙ্গরাও বিভিন্ন সময়ে দাম দেয়না। কিছু বলেনা সোহরাব। বলবেই বা কি? পুরো এলাকার লোকই যেখানে ভয়ে এদের কোন অন্যয়ের প্রতিবাদ করেনা সেখানে ওর মত পনের বছর বয়সী এক চায়ের দোকানদারের আর কি বলার থাকবে। তবে বলবে হয়ত। বড় হয়ে কখন সুযোগ পেলে। কাপে চামচ নাড়াতে নাড়াতে আড়চোখে জয়নালকে দেখে সোহরাব। গভীর মনোযোগে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে সে। কালো চামড়ার আর বড় চুলের এই লোকটার চেহারায় কোথাও একটা ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে আছে। স্থির চোখদুটোর দিকে তাকালেই বুক কেঁপে ওঠে। সোহরাব কখনও চোখের দিকে তাকায়না। ভুলে তাকালেও সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নেয়। জয়নালের হাতে চায়ের কাপ দিয়ে ভীত ভঙ্গিতে অপেক্ষা করে সোহরাব। ভয় পাবার যথেষ্ট কারন রয়েছে। দুধ চিনি একটু এদিক সেদিক হলেই কাপ পিরিচ ছুড়ে ফেলে দেয় জয়নাল। প্রতিবারই ভয়ে থাকে সোহরাব। কোনদিন না জানি ওর গায়েই ছুড়ে মারে। চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে স্মিত হাসে জয়নাল। কিন্তু কিছু বলেনা। সোহরাবের বুক থেকে পাথর সরে যায়।

 

দোকান সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে দূরে এগিয়ে আসতে দেখা যায় লিমনকে। ওকে দেখেই নড়েচড়ে বসে খোকা সাদেক। খোকা সাদেক জয়নালের ডানহাত। ওর ভালো নাম সাদেক। কিন্তু দিনভর মুখে নির্বোধ বাচ্চা সুলভ হাসি লেগে থাকে বলে নামের আগে খোকা লেগে গেছে। মনে মনে খুশি হয়ে যায় সাদেক। আজকে ভাইয়ের মুড ভালো আছে। ভাইকে দিয়ে আজকে এই পাগলারে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে হবে। পাগল তো হয়েছে কিছুদিন। কিন্তু এর আগে বহুত হুজ্জতি করছে। একবার থানা পর্যন্ত গিয়েছিল সাদেকের নামে বিচার দিতে। কত্ত বড় বুকের পাটা শালার। সাদেক সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। মাথা নষ্ট হবার পর থেকে এখন দেখা হলেই ওকে নিয়ে তামাশা করে সাদেক। নানানভাবে উত্যক্ত করে। কিন্তু এতেও মন ভরছেনা সাদেকের। ভেবে রেখেছে বড় একটা শাস্তি দিতে হবে। এই কাজের জন্য আজকের চেয়ে ভালো দিন আর হয়না। চোখ চকচক করে উঠে সাদেকের। দাঁত বের করা স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে জয়নালের কাছে ওর আবদারটি জানায়। সম্মতিও পেয়ে যায় পরক্ষনে।

 

পরের ঘণ্টা খানেক সময়ের মধ্যে ভয়ানক কিছু ঘটনা ঘটে যায়। খোকা সাদেক দলবল নিয়ে লিমনকে এটা সেটা বুঝিয়ে স্কুল মাঠ লাগোয়া পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। এরপর কথা বলতে বলতে আচমকা কিছু বুঝে উঠার আগেই সাদেক ও তার ছেলেগুলো লিমনকে জাপটে ধরে। চার হাত-পা ধরে চ্যাংদোলা করে শূন্যে তুলে ফেলে ওকে।  ধীরে ধীরে বাধানো ঘাটের দিকে এগিয়ে যায় দলটা। খানিকটা দূরেই গাছতলায় দাঁড়ানো জয়নাল। তার পাশেই সোহরাব। ওকে জয়নালই নিয়ে এসেছে। সোহরাবের মাথায় এখন কিছুই কাজ করছেনা। একটু পর পর ঢোঁক গিলছে ও। লিমনের সাথে কি হতে চলেছে এটা বুঝতে আর বাকি নেই ওর। কিন্তু ওকে কেন নিয়ে আসা হয়েছে এটাই বুঝতে পারছেনা। একবার ভাবল লিমন যে সাতার জানেনা এটা জয়নালকে জানায়। কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বের হলনা। একটু পরেই সাদেকের দল লিমনের সাথে এক অমানুষিক খেলায় মেতে উঠল। ঘাঁট থেকে লিমনকে পানিতে ছুড়ে মারা হচ্ছে আর ও যখন প্রতিবার হাচরে পাঁচরে ঘাঁটে উঠছে আবার ওকে ছুড়ে মারছে ওরা।  লিমনের কষ্ট দেখে বুকটা ফেটে যায় সোহরাবের। নিজেকে নিয়ে আর একটু ও ভয় হচ্ছেনা ওর। নিষ্পাপ একটা ছেলের উপর এইরকম অত্যাচার দেখে চোখ ভিজে যায় সোহরাবের। দূরে দাড়িয়ে কিছু লোক দৃশ্যটা দ্যাখে। কিন্তু জয়নাল ও তার দল থাকায় এগিয়ে আসেনা কেউ। সাদেকের হায়েনার মত অট্টহাসির শব্দ ছাড়িয়েও বাতাস ভারী  হয়ে যায় অবুঝ লিমনের আর্ত চীৎকারে।

 

শেষ বিকেলে এই বর্বর খেলা বন্ধ হলে সোহরাব বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে লিমনকে। শারীরিক ও মানসিক দুই দিক থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে লিমন। আফরোজার কাছে সত্য লুকিয়ে এসেছে সোহরাব। পুকুর পাড়ে হাঁটতে গিয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছে এই বলে বুঝিয়ে এসেছে। আফরোজার সন্দিগ্ধ ও মলিন চোখকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পিছন ফিরে চলে এসেছে সে। এর চেয়ে বেশী কীইবা করার ছিল তার? সৃষ্টিকর্তা যিনি উপরে আছেন তিনি তো দেখছেন সবই। একদিন না একদিন এর শাস্তি ওদেরকে পেতেই হবে। জয়নাল সোহরাবকে সাথে নিয়ে গিয়েছিল ওকে সতর্ক করে দিতে। পরবর্তীতে চায়ে কোন গড়মিল হলে সোহরাবেরও একই পরিণতি হবে । জয়নাল যাবার সময় বলে গিয়েছিল । কিন্তু কেন যেন সোহরাব আজকে আর কোন কিছুতে ভয় পায়না। শুধু লিমনের জন্য বুকটা ছিঁড়ে যায়।

 

সেই ঘটনার পর দুইদিন কঠিন জ্বরে পড়েছিল লিমন। আজ কিছুটা সুস্থ বোধ করছে ও। বিছানায় শুয়ে মাঝরাতে দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দটা মনে হয় বুকে বাজে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যায় মাঝে মধ্যে। কিছুতেই ঘুম আসতে চায়না আজ। উঠে গিয়ে জানালাটা খুলে দেয় ও। জানালা খুলতেই পূর্ণিমার একরাশ চাঁদের আলো ভাসিয়ে নিয়ে যায় ওকে। নারকেল পাতার ফাঁকে চাঁদের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে লিমন। একসময় কেমন মোহগ্রস্ত হয়ে পরে সে। এই জগতটাকে সহসা খুব অচেনা, নিষ্ঠুর, অপ্রয়োজনীয় মনে হয় ওর। কোন এক অপার্থিব জগতের ডাকে বিহ্বল হয়ে পড়ে ও। এই অচেনা জীবনের যাবতীয় অভিমানগুলো চোখের জল হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকতে একসময়। কোন এক চেনা, চিরশান্তির জীবনের দিকে ধাবিত হয় চন্দ্রগ্রস্ত, আহত হৃদয়ের লিমন। চেয়ারটাকে টেনে নেয় রুমের মাঝ বরাবর, ঠিক ফ্যানের নিচে। বিছানার চাদরটাকে গলায় দিয়ে উড়ে জেতে চায় শূন্যময় এক জগতে। বিধাতাও একসময় হয়ত খেয়ালী হাসেন অবুঝ মনের এই আপাত ব্যর্থ চেষ্টায়। দুর্বল হাতের বাঁধনে শূন্যে লিমনের ওড়া হয়না। কিন্তু চিরশান্তির জগতে প্রকৃতিই হয়ত ওকে টেনে নেয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। উল্টে যাওয়া চেয়ারের কোনায় মাথা ঠুকে যায় লিমনের। কপালের যে একটিমাত্র শিরা এই অচেনা জগতে তাকে বেঁধে রেখেছিল সেটিই আজ ওকে বিদায় জানায়। অভিমানী লিমনের অচেনা জগতের মানুষগুলো কখনও জানবেনা যে চিরশান্তির পথে হারিয়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে চেয়ারের পাশে পড়ে থাকা নিস্তেজ লিমন ফিরতে চেয়েছিল এই জগতেই। এক মুহূর্তের জন্য হলেও। হয়ত তার মাকে মনে পড়ায়, হয়ত তার মাকে শেষবারের মত মা বলে ডাকার আশায়।

 

 

 

বি: দ্র:  এই ঘটনাটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। নব্বইয়ের দশকে ঘটনাটি ঘটে আমাদের এলাকাতেই। নামগুলো ছাড়া গল্পের প্রতিটি অংশই সত্য। লিমন নামে যাকে তুলে ধরা হয়েছে তার প্রকৃত নাম আমার মনে নেই। ছেলেবেলায় স্কুলে যাবার পথে রাস্তার পাশেই প্রতিদিন আমি তার কবর দেখতাম আর কিছু সময় নীরব দাড়িয়ে থাকতাম। জানিনা কেন। হয়ত জানার চেষ্টা করতাম প্রকৃতির এতো পরিহাসের পাত্র যিনি এই জগতে হয়েছেন, চিরচেনা-চিরশান্তির সেই জগতের দেখা কি প্রকৃতি তাকে দিয়েছে?

১,২২৪ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “লিমনের জগত”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ব্লগে স্বাগতম খবির।
    গল্পটা ভালো লেগেছে। তোমার লেখার হাত যে পাকা তা স্পষ্ট।
    ছোট গল্পে পাঠককে ধরে রাখার দক্ষতা তোমার আছে বলেই মনে হচ্ছে আমার।
    একটা প্রসংগঃ

    মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলের জন্য কপালের দুইপাশে যে দুটি শিরা থাকে দুর্ঘটনায় তার একটি ছিঁড়ে যায়। ডাক্তাররা আফরোজাকে এরকমই বলেছিলেন। আরও বলেছিলেন কোনভাবেই যেন অপর শিরাটা আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। ওটা আঘাতপ্রাপ্ত হলে লিমনকে আর বাঁচানো যাবেনা।

    এ তথ্যের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কি? থাকলে ব্যাখ্যা করবে মন্তব্যের ঘরে? আমার একটু সন্দেহ আছে এটা নিয়ে। আমার মতে তথ্যের যথার্থতা খুব গুরুতপূর্ণ, এটা না থাকলে গল্প (তা যতই শক্তিশালী হোক না কেন) মার খায়।

    কিছু বানানঃ
    সৃতি > স্মৃতি
    দোকানটা খুলার পর > খোলার
    হাচরে পাঁচরে > হাঁচড়ে পাঁচড়ে
    ঘাঁটে > ঘাটে
    আবার ওকে ছুড়ে মারছে ওরা। > ছুঁড়ে
    পরক্ষনে > পরক্ষণে
    গড়মিল > গরমিল
    বাধানো ঘাটের দিকে > বাঁধানো
    বাচ্চা সুলভ > আমার মনে হয় 'শিশুসুলভ' ঠিক শব্দ। দেখে নিয়ো।
    বুঝে উঠার > ওঠার
    করতে পাড়ছেননা > পারছেননা
    বুঝার চেষ্টা করে > বোঝার
    দূরে দাড়িয়ে > দাঁড়িয়ে

    তবে কিছু বানান (যেগুলো খুব ভুল হয় অন্যদের) শুদ্ধ করে লিখেছো দেখে ভালো লাগছে।

    গল্পের শেষ বাক্যটি সবথেকে শক্তিশালী হয়েছে। :thumbup:

    এবার শ'খানেক ফ্রন্টরোল দাও।

    জবাব দিন
  2. খবির (৯৯-০৫)

    প্রথমেই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ভাইয়া, আমার মত আনকোরা একজনের লেখা মনোযোগ দিয়ে পুরোটা পড়ার জন্য। প্রেরণাদায়ক এবং গঠনমূলক মন্তব্যের জন্যও ধন্যবাদ।

    রক্ত চলাচলের ব্যাপারে আমি যেটা জানি তা হল, মানুষের মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল দুইটি মূল শিরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কপালের দুইপাশে হাত দিলে শিরা দুইটির অস্তিত্ব আমরা টের পাই। শিরা দুটির যে কোন একটি ছিঁড়ে গেলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্ক বিকৃতির সম্ভাবনা রয়েছে। আর দুটিই যদি ছিঁড়ে যায় সেক্ষেত্রে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার কারনে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এটা একজন ডাক্তারের কাছ থেকে জানা। ভুল হলে অনুগ্রহ করে সংশোধন করে দেবেন।

    বানান ভুলের সংশোধনগুলো দেবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আমি আসলে অভ্র দিয়ে টাইপ করেছি। সেখানে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। এছাড়া অনলাইন spell checker ব্যাবহার করেছিলাম। সেটা যে খুব একটা কাজ করেনি এখন বুঝতে পারছি। ভুলগুলো আমি সংশোধন করে নেবো এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকব।

    বিঃ দ্রঃ ভাইয়া, ফ্রন্ট রোলের সংখ্যাটা একটু কমানো যায়না!!?? 😛 😛 (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      শরীরের অন্যান্য অংগের মতোই মস্তিষ্কেও রক্ত সংবহন ঘটে ধমনীর মাধ্যমে, শিরার মাধ্যমে নয়। শিরা এসব টিস্যু থেকে রক্তকে হৃদপিণ্ডের দিকে নিয়ে যায় - কার্বন ডাই-অক্সাইড দূর করে পরিশোধনের জন্যে। এবং মস্তিষ্কের দিকে ধাবিত হওয়া ধমনীগুলো বেশ সুরক্ষিত থাকে ঘাড়ের পেশী এবং আরেকটু ওপরে উঠে খুলির অস্থির আড়ালে।

      কপালের পাশে একটি শিরা ছিঁড়ে গেলে সমস্যা গুরুতর হবে সন্দেহ নেই, তবে একটি ছিঁড়ে গেলে আরেকটিতেই প্রাণভোমরা লুকনো থাকবে এমনটা সঠিক নয়। তাহলে আমাদের রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশী হতো - সামান্য আঘাতেই মানুষ টেঁসে যেতো।

      আর, তোমার কি জানা নেই, অনুরোধে ফ্রন্টরোলের সংখ্যা কেবল বেড়েই চলে? তবে আর কথা কেন? শুরু হয়ে যাক! 😀

      জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এই বান্দরে দেখি :frontroll: দেয় নাই।
    গুইণা গুইণা ১০ টা দে।
    তারপর কথা হবে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।