বিষয় মশা

১.

মশা কেন্দ্রিক একটা বিশাল বানিজ্য আছে। মশক কুল নিধনের নানা অষুধ বিষুধের প্রচার প্রসার চলছেই। এইসব ব্রহ্মাস্ত্রের মহিমায় আপনার ঘর বাড়ি,  কি, বই এর পাতা থেকেও মশা উধাও হয়। এরসল নামক বস্তুটি আমার বিশেষ অপছন্দ। আমার ধারনা মশারা এর গন্ধে উত্তেজিত হয়- আর আমি হই অতিষ্ঠ। তবু- কিছু একটা করতে হয়- সন্ধ্যা কালে ইনাদের উৎপাত বাড়ে, ওই সময় সব দরজা জানালা বন্ধ করে শাস্ত্র মতে এরসল ছিটাই। এবং নাকে কাপড় দিয়ে ঝিম মেরে থাকি।  যদিও মশারি সবচে কাজের জিনিশ, ভাদ্র-আশ্বিনের ভ্যাপসা গরমে মশারির ব্যাপারে প্রবল আপত্তি থাকে। গত রাতেও তাই বিনে মশারিতে শোবার ব্যাবস্থা ছিল। খানিক পরই উনাদের উপস্থিতি টের পেতে থাকি। ডিম লাইটের হাল্কা আলোয় কি মশা মারা সম্ভব? অথচ সেই আবছা আলোয় একসময় হাতের উপর একটা প্রকাণ্ড সিল্যুয়েট দেখি। খানিকটা ধন্দে পড়ে যাই- তারপর দ্রুত চপোটাঘাত। হ্যাঁ- মশাই বটে। এই আলো আঁধারিতেও যার অবয়ব এমন স্পস্ট হয়ে উঠে- সে কিরকম গভীর নিষ্ঠায় আমার রক্ত পানে মগ্ন ছিল, তা ভেবে মশাটির প্রতি একরকম সহানুভুতি হয়। এবং মানবকুলের নিবেদিত প্রান রক্ত শোষকদের কথা ভাবি…

 

২.

মশারা মানুষের এনাটমি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে।  সেটা স্বাভাবিক- বহু হাজার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান বলে কথা! মহসিনের গায়ের একটা বিশেষ দূর্গম অংশে বসে বেশ আরামে কামড়াচ্ছে এই অতি দক্ষ প্রানীটি।  একাধারে বিরক্ত, হতাশ ও বিস্মিত হয় সে। কারন এই মূহুর্তে সে বসে আছে মহানগরির এক অভিজাত মহল্লায়, রীতিমত পেশাদার সজ্বাবিদ দিয়ে সাজানো এক অফিস ঘরে।  এটাতো ধ্রুপদি সাহিত্যের পল্লী বাংলা নয়- যা সচারচর জলা-জঙ্গল আর ম্যালেরিয়ার স্থায়ি ঠিকানা হয়ে থাকে। অগত্ত্যা মহসিন গায়ের জামা খুলতে থাকে- বেশ জমিয়ে চুলকাতে হবে। ঠিক তখনই- যেন বা উয়িং এর পেছন থেকে নাটকীয় ভাবে প্রবেশ করেন অতি গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিটি, যার দেখা পাবার আশায় সে গত দুদিন ধরে ঘুরছে। ক্লান্তি, অনাহার, হতাশা, এবং মূহুর্তটির আকস্মিকতা- এই চার মৌলের মিশ্রনে তার মগজের রসায়ন এক অদ্ভূত বিক্রিয়া করে- যা কিনা নিতান্তই তার বিপক্ষে যায়।  সে আসলে সামনে একটা অতিকায় মশা দেখে- এবং অতি গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তিটিকে প্রচণ্ড জোরে এক চড় মেরে বসে।  এর পরের ব্যাপার অবশ্য গতানুগতিক। দ্বারোয়ান, পুলিশ, থানা, হাজত ইত্যাদি পর্ব সেরে এক সময় সে বাড়ি ফেরে।  পুরো সময় ধরে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত তাকে সঙ্গ দেয় অবিনাশী মশক কূল।

৮৯২ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “বিষয় মশা”

  1. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    গেল বছর দেশে গিয়ে মশা মারার একটা ব্যাট দেখতে পেলাম। পটপট শব্দে ওটা মশা মেরে চলে। দারুণ লেগেছিল বনবন করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। বছর কুড়ি আগে মশার কয়েল ব্যাবহার করতাম দেশে। এরোসলও ছিল তখন। ব্যাট দেখলাম এই প্রথম।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    :)) :)) :))

    ব্যাট দিয়ে ঠাশ ঠাশ শব্দে মশা মারা এখন মনে পারিবারিক বিনোদনের পর্যায়ে চলে গিয়েছে 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. সামিউল(২০০৪-১০)

    :)) :)) :clap: =))
    মজা পেলাম।
    হলে থাকি, প্রতিরাতে মশারি না টানিয়ে ঘুমালে মশারা এসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চান্স আছে 😛


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    বাঘ, ভাল্লুক, কুমির ইত্যাদির চাইতে মশার হাতে আজো সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। অবিশ্বাস্য কিন্তু সত্যি।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।