জার্নাল মালয়েশিয়া

১। প্রথম দেখা

আমার শ্যামল বাংলা- তার পূবে ব্রম্মদেশ, তারও পরে শ্যাম রাজ্য। সেখান থেকে  লম্বা একটা বকের পা যেন দক্ষিনে সমুদ্রের ভেতরে চলে গেছে অনেক দুর। এটাই মালয় উপদ্বীপ। যার দক্ষিন অংশ আজকের মালয়েশিয়ার প্রধান ভাগ, যাকে পেনিনসুলার মালয়েশিয়া বলা হয়। চীন সাগরের ওপারে বিশাল বর্নিও দ্বীপে আছে আরো দুটি প্রদেশ- সাবা ও সারাওয়াক।পঞ্চাশের দশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান হবার পর ইদানীং রীতিমত উন্নত বিশ্বের সারিতে স্থান করে নিতে সচেষ্ট। শিল্প, বানিজ্য, শিক্ষা-গবেষনা, পর্যটন সহ বিভিন্ন দিকে দেশটি এগিয়ে আসছে। কাজেই মালয়েশিয়া এখন নানা দেশের ভাগ্যান্বেষী মানুষের গন্তব্য। আমাদের দেশ থেকেও বহু মানুষ কাজের আশায়, উচ্চশিক্ষার জন্য, অথবা নিছক বেড়ানোর জন্য এদেশে এসেছেন। তারপরও, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ যখন এখানে এলাম, বুঝলাম যে এই দেশের ভুগোল ইতিহাস সংস্কৃতি এসব বিষয়ে প্রায় কিছুই জানিনা। আসলে এই দেশে একটা বিশাল প্রবাসী সমাজ থাকার পরও তেমন লেখালেখি চোখে পড়েনি।

যাবতীয় জৌলুস রাজধানীতে সমাবেশিত- এশিয় দেশের সাধারন বৈশিষ্ট। উন্নত পশ্চিমা দেশের মহানগরীদের সাথে পাল্লা দিয়ে অত্যাধুনিক বিমান বন্দর, কাঁচঘেরা বহুতল ভবন আর উড়ালপথের সমারোহ, চলাচলের রকমারি আয়োজন। প্রথম দর্শনে মুগ্ধ হবার মতই ব্যপার। সন্ধ্যাকালের বিশেষ মহিমা আছে, ঐ সময় অচেনা দেশের সাথে প্রথম শুভদৃষ্টি, মহানগরীর আলোর মিছিল যেন বা অতিথি বরনের আচার। সব মিলিয়ে মুগ্ধতার ভাব এসে পড়ে। একধরনের বিষাদও যেনো মনের নিভৃত কোনে ঝিলের পানিতে মাছের মত ভেসে উঠে ক্ষনিকের জন্য। আমার আগে এই একই বন্দরে এসেছে আরো অনেক অনেক মানুষ, একই রকম মোহিত ভাবে হয়তো চোখ ফেলে দেখেছে চারদিক, এবং কঠিন জীবন সংগ্রামের কর্কশ ঘর্ষনে দ্রুতই মিলিয়ে গেছে প্রথম ভালোলাগার মূহুর্তটি।

আমার গন্তব্য কুয়ালালামপুর থেকে আরো দুশো কিলোমিটার উত্তরে, শ্রী ইস্কান্দার। সেটি কেমন জায়গা সেই সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই। আজকের সর্বজ্ঞানের ভান্ডার গুগল ঘেঁটেও বেশিকিছু জানতে পারিনি। বিমান বন্দরে আমাদের নেবার জন্য যার আসবার কথা তারও কোন নিশানা নেই। যোগাযোগের সব চেষ্ঠা ব্যার্থ। পরিবার বাচ্চাকাচ্চা মোটঘাট নিয়ে বিষম বিভ্রাট। অবশেষে প্রায় মরিয়া হয়ে, কিছু স্থানীয় মুদ্রা জোগাড় করে, বুক ঠুকে যা থাকে কপালে বলে সেই অচেনা গন্তব্যের জন্য গাড়ী ভাড়া করতে চলেছি, ঠিক তখন গাইড প্রবরের আবির্ভাব হল। আমরা পরম স্বস্তিতে তখন সেই নির্দিষ্ট বাহনে সওয়ার হই। হাত পা ছড়িয়ে আরামে যাত্রা করি অজানার পথে। আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়কে মহাবেগে ছোটে আমাদের বাহন, আমি চোখ দিয়ে চারপাশটা ধারন করতে থাকি। শিশু দুটিও বড় বড় চোখে বাইরের দৃশ্য দেখে, আর কারনে অকারনে উত্তেজিত চীৎকার করে। সহধর্মিনীটি অবশ্য খানিক পরই শিরঃপীড়া ও ক্লান্তির কাছে পরাস্ত হয়ে ঝিমুতে থাকেন। এই মহাসড়ক এদেশের গর্বের বস্তু, পুরো দেশের উত্তর দক্ষিন বরাবর এর বিস্তার। এর দক্ষিন প্রান্তে ঝলমলে নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর, আর উত্তর প্রান্ত শেষ হয়েছে রহস্যভরা শ্যাম দেশে। দ্রুতই মহানগরীর আলোকমালা ছাড়িয়ে গহীন প্রকৃতির মাঝে এসে পড়ি। দুই পাশে পাহাড় ও অরন্য, রাতের আধারে মায়াবী রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দীর্ঘ যাত্রার এক পর্যায়ে মহাসড়কের মাশুল পরিশোধ করে সাধারন রাস্তায় নামতে হয়। এই সময় চালক পথভুল করে। ঘন অন্ধকারে পাম গাছের বাগানের ভেতর, জঙ্গল বললেই বরং যথার্থ হয়, ঘুরতে থাকি বহুক্ষন। অবশেষে মুঠোফোনের কল্যানে পথের দিশা পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যলয়ের ভেতরে অতিথিশালায় সাময়িক থাকার ব্যবস্থা, সেখনে যখন পৌছি তখন রাতের তৃতীয় প্রহর। বিশাল বিস্তীর্ন ক্যাম্পাসের মাঝামাঝি ছোট টিলার উপর তেতলা বাড়ি। চমৎকার ব্যবস্থা, যাবতীয় আসবাব পত্র সহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চারটি কামরা। ক্লান্তিতে ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই অল্পক্ষনেই দীর্ঘ নিদ্রায় সমর্পিত হই।

২। হ্রস্বলাঙ্গুল মার্জার ও মুখোশধারী দাড়কাক

নতুন দেশে প্রথম সকাল। সবাই তখনো ঘুমে, আমি কফি নিয়ে বারান্দায় সকালের আলোয় নতুন দেশ দেখছি। আসার পথে পুরো সময়টাই ছিল অন্ধকার, ফলে চারপাশটা তেমন ঠাহর করে উঠতে পারিনি। শান্ত, স্নিগ্ধ সবুজের মাঝে কেমন অদ্ভুত লাগে। শব্দদূষনের ঢাকা নগরী থেকে একেবারে নৈশব্দের জগতে এসে সাউন্ড অফ সাইলেন্স গানটি মনে পড়ে। একসময় দেখি আঙ্গিনায় একটি বেড়াল এসেছে। আমি পশু প্রেমী নই, বেড়ালদের বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তবু এই নির্জন নিশ্চল পরিবেশে চলমান প্রানীটি দৃষ্টি আকর্ষন করে। এবং লক্ষ্য করি ওর লেজটি অস্বাভাবিক ছোট, হয়তো কোনো দূর্ঘটনার ফল। আরো দুটি বেড়াল এসে যোগ দেয়, ত্রিমূর্তি বেশ গুছিয়ে তাদের বেড়লীয় কাজে ব্যাস্ত হয়। এবারে সত্যিই বিস্মিত হই, কারন সবারই লেজ খাটো। এরকম হ্রস্বলাঙ্গুল মার্জার গোষ্ঠি বাস্তবে বা ছবিতে কোথাও দেখিনি।ডমরু চরিতের স্রষ্টা ত্রৈলোক্যনাথের বেড়াল বিষয়ক পরম চিত্তাকর্ষক একটি প্রবন্ধ আছে, সেখানে অবশ্য লেজের দৈর্ঘ নিয়ে কোন কথা নেই। তবে কি এটা বিষেশ কোনো জাত! এমন সময় চতুর্থ জনের প্রবেশ, ইনি স্বাভাবিক দীর্ঘ লাঙ্গুলধারী। আমি বেশ ধন্দে পড়ি, খাটো লেজের পেছনে কারন কি তবে  প্রকৃতির খেয়াল, না দূর্ঘটনা, নাকি মানুষের হাত! পরে জানতে পেরেছি মালয় দেশে বেড়াল অতি আদরের। প্রায় ঘরে ঘরে এদের সযত্নে পোষা হয়। পশ্চিমা সারমেয় প্রীতির বিপরিতে এদের মার্জার প্রীতি। তাই, আমার সন্দেহ, এই লাঙ্গুল রহস্যের পেছনে মানুষের অবদান আছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানতে চেয়ে এখনো এর কোন সমাধান পাইনি।

আমার মার্জার চিন্তায় ব্যঘাত ঘটে পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দে। সেদিকে তাকিয়ে রীতিমত আঁতকে উঠি। প্রকান্ড এক দাঁড় কাকের মত পাখি, কালো রঙ, মুখের আকার বিকট, মনে হয় যেন মুখোশ পরে আছে। মাকড় মানব, বাদুড় মানব, অতি মানব প্রমুখ চরিত্রদের মুখোশে বাজার ছেয়ে যাবার আগে, এককালে গ্রাম্য মেলায় একেবারে দেশজ রীতিতে কাগজের তৈরী বাঘের মুখোশ পাওয়া যেত। সেটা পরলে একই সাথে বেশ উদ্ভট ও ভীতিকর ব্যাপার হত, পাখিটার চেহারা হয়েছে অনেকটা সেরকম। একটু পরেই আরেকটা এসে জুটেছে, এবং দুটিতে মিলে বিচিত্র সুরে ডেকে উঠছে। ঠিক সকাল বেলার মধুর সঙ্গীত বলা যাবে না। আতঙ্কের ধাক্কাটা সামলে এবার এদের শনাক্ত করার চেষ্ঠা করি। ছবিতে, কি ডাকটিকিটে যেন দেখেছি এদের; আচমকাই নামটি মনে পড়ে। এরা ধনেশ পাখি। বিচিত্র আকারের বিরাট ঠোটের জন্য এরা বিখ্যাত। ভয় পাবার ব্যাপারটি শুধু আমার বেলায় নয়, আমার পাশের ঘরে উঠেছে সুদুর ইথিওপিয়া থেকে আসা যুবক। পরদিন বিস্ফোরিত চোখে তার অভিজ্ঞতা জানায়। পাখি দুটো তার শোবার ঘরের জানালায় ঠোক্কর দিচ্ছিল। সেই শব্দে তার ঘুম ভাঙ্গে, এবং জানালায় দুটি ভয়াবহ মুখ দেখে ক্ষনিকের জন্য মনে হয় যেন সে দুঃস্বপ্ন দেখছে। যদি আফ্রিকার শৃংগ থেকে আসা যুবকের এই দশা হয়, তবে পাখি বিবর্জিত, অবশ্যি বায়স কূল বাদে, ঢাকা শহরের বাসিন্দা আমার ভয় পাওয়াটা নিশ্চয়ই বৈধ।

৩। ক্যাম্পাস ও বিবিধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল বিস্তার। ছাত্রছাত্রীদের আবাসন, পড়শোনা ও গবেষনার সুচারু ব্যবস্থা। এখানে অনেক আগে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যলয় ছিল। পরে আধুনিক স্থাপত্যে নির্মান হয়েছে আরো কিছু অংশ। একটি পঞ্চভূজ কল্পনা করুন, যার বাহুগুলো সরল রেখা না হয়ে বরং বৃত্তচাপ- ভেতরের দিকে ঘোরানো। নতুন ভবন গুলো এই বৃত্তচাপ বরাবর সাজানো। এক কোনেগোল আকারের বিশাল উচু প্রশাসনিক ভবন। আকাশ থেকে দেখলে একটি অতিকায় মালা মনে হবে, যার বৈদুর্য্যমনি এই প্রশাসনিক ভবন। মানানসই প্রশস্ত বারান্দা দিয়ে ভবন গুলো যুক্ত। চার তলা এই ভবন গুলোর নির্মান কৌশল কি জানিনা, তবে বহিরাঙ্গে কাঁচ ও ইস্পাতের বহুল ব্যাবহারে কেমন জাহাজের আভাস পাওয়া যায়। মনে হয় যেন সারি সারি জাহাজ জেটিতে দাড়িয়ে। কিংবা সমুদ্রে তেল আহরনকারী লৌহময় মঞ্চের মত মনে হয় কখনো। আর অনেক উঁচুতে আলাদা ছাত বৃত্তচাপের মত ছড়ানো- বারান্দা ও ভবন গুলোর একাংশ ঢেকে রেখেছে। বাকা চাঁদ নয়, বাঁকা ছাত- তাই সই। বৃষ্টিবহুল এই দেশে তুমুল বর্ষনেও চলাফেরায় কোন অসুবিধা হয় না, উপরি হিসাবে অলস বৃষ্টিপ্রিয় লোক চলার পথে গা না ভিজিয়েও বেশ আয়েশ করে “ঘন দেয়া বরষে…” কিংবা “আজ এই বৃষ্টির…” জাতীয় সুর ভাঁজতে ভাঁজতে পায়চারী করতে পারে। আর আছে প্রচুর গাছপালা, সযত্নে গড়া বাগান ও জলাশয়। বিচিত্র নয় যে স্থাপত্যকলায় এই ক্যাম্পাস আগাখান পুরষ্কার পেয়েছে।

ক্যাম্পাসেরএকপাশে আছে বিশাল পতিত অংশ, যা পাম গাছের বাগান এবং জংগলে পরিপুর্ন। নিরক্ষীয় অঞ্চল বলে কথা, প্রানীবৈচিত্রে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বানর, সাপ, গোসাপ, বনবেড়াল ও বহু রকমের পাখিদের আবাস সেখানে। জনৈক সহকর্মী অবশ্য বিশালকায় এক সাপকে রাস্তা পেরোতে দেখার দাবী করেছেন, এবং পারতপক্ষে তিনি ওপথে আর যান না। তবে তারচেয়ে ভয়াবহ হলো ডেঙ্গু মশার উপদ্রব, এক কালে আমাদের দেশে যেমন ছিল ম্যালেরিয়া। দেশের সরকার আন্তরিক চেষ্টা করছেন এই বিপদ দূর করতে। মাঝে মধ্যেই ডেঙ্গু স্থানীয় ভাষায় ডেঙ্গি, সতর্কতা জারী করা হয়, আক্রান্তদের সংখ্যাটি জানিয়ে। হেলাফেলার ব্যাপার নয় মোটেই, গেল মাসে সংখ্যাটি ছিল চল্লিশ হাজারেরও বেশি। আরেকটি বিচিত্র সমস্যা এখানে আছে, যার উৎস পাশের দেশ ইন্দোনেশিয়া। সেখানে ফসল কাটা শেষে জমিতে আগুন জ্বালানো হয়। হাজার হাজার একর জমির খড়কুটো পোড়া ধোঁয়া সাগর পেরিয়ে এদেশের আকাশ ছেয়ে ফেলে। মেঘলা দিনের মত মনে হয় তখন, যদিও আকাশে কোন মেঘ নেই, কেবলি সুক্ষ ছাইএর কনা। জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক বলে তখন সবাইকে ঘরের ভেতর থাকতে বা মুখোশ ব্যাবহার করতে বলা হয়। তবে ঘন ঘন বৃষ্টির কারনে অবস্থাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়না।

৪। পড়াশোনা

প্রথম কদিন কাটে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। মহা চটপটে বিভাগীয় সচিবটি কেতা মাফিক সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। স্থানীয় ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষ এখানে কাজ করছেন। তাদের সান্নিধ্যে একরকম আন্তর্জাতিক স্বাদ পাই যেন। ক্লাশের দায়িত্ব বুঝে নেবার পর প্রস্তুতি চলে। আমার পছন্দ ব্ল্যাকবোর্ড ও চক- শিক্ষার ধ্রুপদী ধারা। কিন্তু এখানে সেটি চলবে না। আধুনিক প্রযুক্তি অর্থাৎ কিনা মাল্টিমিডিয়া ব্যাবহার করাটাই রীতি। তাই বিষয়বস্তু তৈরী করতে অনেকটা সময় চলে যায়। প্রথম ক্লাশে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করি। ছাত্র ছাত্রী প্রায় দেড়শ, জাতি বৈচিত্রে উল্লেখযোগ্য। এখানে বলে রাখা অপ্রাসঙ্গিক হবেনা, এদেশে প্রধান জনগোষ্ঠি মুলত তিনটি- মালয়ী, যাদেরকে ভুমিপুত্র বলা হয়, চৈনিক, এবং ভারতীয়, যারা প্রধানত তামিল বংশ। ক্লাশে কমবেশি সবাই আছে, আর আছে বিদেশি। সুদুর আফ্রিকার সুদান, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মিশর, ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া প্রভৃতি, এবং মধ্য এশিয়ার উজবেক, তুর্কোমান, তাজিক, উইগুর, এমন কি ইয়োরোপ অষ্ট্রেলিয়া সবারি কিছু না কিছু এখানে উপস্থিত। ভারত পাকিস্তানের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রী একেবারে নগন্য দেখে একটু অবাকই হয়েছি। আমাদেরই প্রতিবেশি এশীয় দেশের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এত রকমের লোক সমাগম- কিছুটা ঈর্ষার মত ব্যপার বটে। পরিচয় পর্বে প্রথম ক্লাশের বেশ খানিকটা সময় চলে যায়। আমার চিরকালের এক দুর্বলতা অনুচ্চ কন্ঠস্বর, শতাধিক শিক্ষার্থীর গুঞ্জনে হারিয়ে যেতে চায়, অগত্যা স্বরপ্রক্ষেপক যন্ত্রের সাহায্য নিই।

অবশ্য একসময় পরিস্থিতি বেশ সহজ হয়ে আসে। আমার প্রাথমিক পর্যবেক্ষন- মালয়ী ও চৈনিক ছাত্রছাত্রীরা অতিশয় বিনয়ী ও ভদ্র, বিষেশ করে চৈনিকেরা কঠোর পরিশ্রমী, ফলাফলে এগিয়ে। এরপরই আসে আফ্রিকা। এদের জানার আগ্রহ প্রবল। তারা যে অর্থ ও সময় এখানে ব্যয় করছে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে তৎপর। মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও ইয়োরোপের বেলায় তেমনটি বলতে পারছিনা। এদের চলন বলনে পড়াশোনার চেয়ে উপভোগের ধারাটিই প্রবল মনে হয়েছে। বিশ্বের সব ছাত্র ছাত্রীদের মত এখানেও মূল বিষয়বস্তু আত্মস্থ করার চেয়ে পরীক্ষায় কি আসবে সে ব্যাপারেই যেন আগ্রহ বেশী। যাহোক, এসব আমার কাছে নতুন কিছু নয়। সুতরাং পঠন পাঠন এগিয়ে চলে বাঁধা ছকে।পরীক্ষার আগে সবার মাঝে উদ্বেগ আশংকা বাড়ে। তবে একটা বিষয় আমাকে বেশ মুগ্ধ করে। পরীক্ষা শেষে প্রায় সবাই এসে ধন্যবাদ জানায়, কেউ বা কেতামাফিক করমর্দন করে। আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জানতে চাই কেন তারা এমন ঘটা করে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, ফল বের হতে তখনো বেশ দেরী, অনেকেরই ফল হয়তো তেমন ভাল হবে না। তাদের সহজ উত্তর “উই থ্যাঙ্ক ইউ ফর টিচিং আস, ফর দ্য নলেজ ইউ গেভ আস, স্যার”।শুনে বড় ভাল লাগে।

৫। ঘর সংসার

ওদিকে ঘরে দুটি শিশু নিয়ে সহধর্মি্নী পড়েছেন বিষম মুশকিলে। ক্যম্পাসের ভেতরে নেই শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা, তাই ঘরের ভেতরই সারাক্ষন তাদের দাপাদাপি, শিশুদের জন্য যা স্বাভাবিক বড়দের জন্য তা অনেক সময় মাথাব্যাথা। তাই প্রায়শঃক্যম্পাসের বাইরে কোথাও যাই। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে আধুনিক বিপনীকেন্দ্র, সেখানে কেনাকাটার পাশাপাশি শিশুদের জন্য নানা খেলার আয়োজন আছে। দূরত্বটি হাঁটাপথের নয়, আমার নিজের কোন বাহনও নেই। তাই ট্যক্সি চেপে নিত্য আসাযাওয়া। কখনো আবার দেশীয় সহকর্মীদের বদান্যতায় বেড়ানো। এই এলাকায় আমি ছাড়া মাত্র চার ঘর বাঙ্গালী আছেন। সবাই  অত্যন্ত সজ্জন, এদের আন্তরিকতায় প্রবাসকাল অনেক সহজ ও আনন্দময় হয়ে উঠে। বস্তত প্রবাসে সমমনা বাঙ্গালী দ্রুতই আপনার হয়ে উঠে।

অল্পদিনেই প্রবাস জীবনের ছকটি পরিষ্কার হয়ে উঠে। আপিস, বাসা, বিপনীকেন্দ্র, ও বাঙ্গালী সহকর্মীর বাড়ী। এই চতুর্ভূজে জীবন ফ্রেমবন্দী হয়ে যায়। অদেখা পড়ে থাকে বাইরের এক বিশাল দেশ, তার যাবতীয় ইতিহাস ভূগোল সংস্কৃতি নিয়ে।

৬। দেশ ও সমাজ-১

শ্রী ইস্কান্দারকে ঠিক শহর বলা যাবে না। বেশ বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গুচ্ছগ্রামের মত ঘরবাড়ি। এখনাকার সবচেয়ে পুরোনো শহর, বা শহরের মতন জনপদের নাম ত্রনো, টিন আহরনের স্বর্নযুগে হয়তো জমজমাট ছিল। আজ সেই টিন শিল্পও নেই, অতীতের কিছু স্মৃতি নিয়ে হতশ্রী জনপদটি যেন ধূসর চাদরে ঢেকে আছে।

এই এলাকা মালয়েশিয়ার তেরটি প্রদেশের মধ্যে অন্যতম পেরাক-এর মধ্যে পড়েছে। পেরাক রাজ্যের নিজস্ব রাজা বা সুলতান আছেন। মাত্র কিছুদিন আগে পেরাকের বৃদ্ধ সুলতান আজলান শাহ পরলোক গমন করেছেন। শোক পালনের জন্য সেদিন আপিস আদালত ইশকুল কলেজ সিনেমা থিয়েটার ইত্যাদি বন্ধ ছিল।চল্লিশ দিন পেরাকের হলুদ-কালো পতাকা অর্ধনমিত থাকে। এখন তার পুত্র নাজরিন শাহ সুলতানের আসনে। মালয়েশিয়ার তেরটির মধ্যে নয়টি প্রদেশের, কিংবা রাজ্যও বলা যায়, একজন করে রাজা বা সুলতান রয়েছেন। চার বছর পর পর এরা একজনকে প্রধান সুলতান হিসাবে নির্বাচিত করেন। তিনি তখন সমগ্র দেশের রাজা হিসাবে রাজধানী কুয়ালালামপুরের প্রাসাদে অবস্থান করেন। এদের ক্ষমতা অবশ্য সীমিত, অনেকটা ইংল্যান্ডের রাজার মত। তবে শান শওকতের কোন কমতি নেই। কুয়ালালামপুরের রাজপ্রাসাদ বিশেষ দর্শনীয়। রাজরাজড়াদের নাম তো সাধারন লোকের মতন নেয়া যায়না- সামনে পেছনে নানা গুনবাচক সম্মানসূচক খেতাব যোগ করাটাই রীতি। এবিষয়ে পরে লেখার ইচ্ছা রইল।

পেরাক রাজ্যের সমৃদ্ধির প্রধান কারন ছিল টিনের প্রাচুর্য্য। বিশ্ববাজারে এই মুল্যবান খনিজ পদার্থটির বেশ চাহিদা ছিল একসময়। আর খনিতে কাজ করার জন্য প্রয়োজন বহু শ্রমিকের। সেই সূত্র ধরে এখানে ভাগ্যান্বেষী চীনাদের আগমন। পেরাকের রাজধানী শহর ইপো। মূলত টিনের আকরিক পরিবহন করার জন্য রেলপথে ইপোর সাথে দেশের অনান্য এলাকা যুক্ত করা হয় সেই ইংরেজ আমলে। ইংরেজের রেলপ্রীতি ঐতিহাসিক, ভারতবর্ষ সহ প্রায় সব প্রাক্তন উপনিবেশেই তার স্বাক্ষর আছে।এখন আবশ্য সারা দেশ জুড়েই সড়ক পথ নির্মিত হয়েছে, এবং ব্যাক্তিস্বাধীনতা খর্বকারী রেল বাস ইত্যাদি ছেড়ে জনগন আপন আপন বাহনের আধিকারী হবার সাধনায় মগ্ন।

ইপো অবশ্য যথেষ্ট প্রানবন্ত শহর। শ্রী ইস্কান্দার থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে। সেই পথে যেতে অনেক জলাশয় দেখা যায়। এক একটি প্রকান্ড দীঘির মত। অত্যন্ত মনোরম এই লেকগুলো বন জংগলে ঘেরা, নির্জন। দেখলে প্রবল ইচ্ছা হয় সেখানে নামার। আমাদের দেশে দ্রুত বিলীয়মান জলাশয় গুলোর কথা ভেবে বেশ বিষন্ন লাগে। এমন সুন্দর দীঘিতে কত মানুষের সমাগম হবার কথা- নৌবিহার থেকে কাপড় কাচা, মাছ ধরা, আর দূরন্ত ছেলেদের দিনমান ঝাপাঝাপি, পাড় ঘেষে বর্শেল, ভাবুক ও প্রেমিকদের ন্যায্য অবস্থান। অথচ এখানে এসবের কিছুই দেখিনা। তবে কি এরা জলভীতিতে আক্রান্ত, নাকি অন্য কোন কারন আছে যা আমার অজানা। তবে, একটা ব্যাপার হয়তো আছে- এই লেক গুলো আসলে প্রাকৃতিক নয়। টিন আহরনের জন্য এসব জায়গার মাটি খুবলে নেয়া হয়েছে। সেই ক্ষত কখনই আর ভরাট করা হয় নি। ধরনী মাতার সেই উন্মুক্ত বিবর কালক্রমে বৃষ্টির পানিতে ভরে এই জলাশয় গুলোর সৃষ্টি। হয়তো এর জল আজো রাসায়নিক ভাবে দূষিত। মাঝে মধ্যে ছিপ হাতে কাউকে মাছ ধরতে দেখা যায়, তবে শুনেছি সেই মাছ কেউ খায় না।দূষনের ভয়ে হয়তোবা।

৭। মিল অমিল

বাংলাদেশের সাথে এদেশের প্রকৃতির অনেক মিল। ঘন সবুজ বন বনানী, তাল নারিকেল সুপারী ও কলাগাছের প্রাচুর্য, বাঁশবন- ক্ষনিকের জন্য মনে হয়, যেনো ঐ বড় গাছটির আড়ালেই আছে গ্রামের বাড়িটি, আজন্ম স্মৃতি আর স্নেহময় ছায়া নিয়ে। রোদ বৃষ্টি আকাশে মেঘের খেলা ভ্যাপসা গরম, সবই আমাদের চিরচেনা। অমিলের মধ্যে আছে প্রচুর পাহাড়, আমরা সমতল দেশের মানুষ এত পাহাড় দেখতে অভ্যস্ত নই। অবশ্য বাংলাদেশের পূর্বকোল জুড়ে রয়েছে পাহাড়ী এলাকা। সেসব এলাকার মানুষ হয়তো এখানে আরো বেশী করে নিজ দেশের ছায়া দেখে থাকবেন। আমাদের দেশের মত বিস্তীর্ন ফসলের মাঠ এখনো দেখিনি- শুধুই পাম গাছের বাগান। অনেকটা খেজুর গাছের চেহারা, প্রশস্ত কান্ড, ঘন সবুজ চওড়া পাতা, থোকা থোকা ফল। সেই ফল পিষে বের হয় পাম তেল। এছাড়া খোলা মাঠও আছে বিস্তর, পতিত বলেই মনে হয়। মাঠে কোন ফসল নেই, এমনকি গবাদি পশুও চরতে দেখি না। বিস্ময়কর ব্যাপার, মাংশের চাহিদা মেটানোর জন্য পবাদি পশু আসে শ্যামদেশ আর সুদুর অস্ট্রেলিয়া থেকে!

স্থানীয় একজনের সাথে গিয়েছিলাম সত্যিকারের গ্রাম দেখতে। পুরোনো রীতিতে তৈরী ঘরবাড়ি গুলো কাঠের, একমানুষ পরিমান উঁচু খুটির উপর বানানো- অনেকটা মুন্সীগঞ্জ এলাকায় যেমন দেখা যায়। কিন্তু ঘন বনের ভেতর কেমন ছড়ানো ছিটানো, আমাদের যেমন উঠোন ঘিরে একাধিক ঘর থাকে তেমন নয়। মনুষজনও দেখলাম না- সবাই নাকি কাজে গেছে কাছের কোন শহরে। নিখাদ গ্রামীন পরিবেশের রসভংগ করে প্রায় প্রতি ঘরের সামনেই গাড়ী বা মোটর সাইকেলের সগর্ব অবস্থান। অনেক কটা বাড়ির রীতিমত ভগ্নদশা- ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে। এসবের মালিক কারা, কোথায় থাকে কে জানে! এদশের জনসংখ্যা কম, তাই হয়তো বা শহরমুখী স্রোতে দ্রুতই জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে গ্রামগুলি।

আরেকটা প্রধান পার্থক্য- এখানে তেমন নদীনালা নেই। যা আছে তাতে আমাদের মন ভরবে না। আমরা নদীমাতৃক দেশের সন্তান- পদ্মা মেঘনা যমুনা কর্নফুলী রূপসা আন্ধারমানিক পশুর সুরমা খোয়াই শীতলক্ষা প্রমুখ আমাদের চেতনায় প্রবাহিত। আমার গুগলীয় ভূগোল জ্ঞানে পেরাক নদীর কথা ছিলো। পথ চলতে কোন সেতু দেখলেই বড় কোন নদী দেখার আশায় চারদিক জরীপ করি, এবং হতাশ হই। অবশেষে একদিন জানতে পেরেছি ওটি আমাদের কাছেই, বেশ কয়েকবার ওর ওপর দিয়ে আসাযাওয়া করেছি। নিতান্ত অগভীর, মূল স্রোত বিভক্ত, মাঝ বরাবর বিশাল চর, যদিও সেটা বালুচর নয়। বাংলাদেশের মৃতপ্রায় কিছু নদীর কথা মনে পড়ে যায়। পাসির সালাক গ্রামে এসে অবাশ্যি সেই আশা খানিকটা পূর্ন হলো। এই গ্রামের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা আছে, সেই স্মৃতিতে এখানে একটা যাদুঘরও বানানো হয়েছে। ইতিহাসটি পরে বলব। যাদুঘরের কোল ঘেসেই বয়ে যাচ্ছে পেরাক নদী, প্রশস্ত, চরমুক্ত, বেগবতী, দুধারে ঘন সবুজের অকৃপন বিস্তার। চোখ জুড়িয়ে যায়।

পরে এই নদীর সাথে আরো দেখা হয়েছে। এর জন্ম গেরিক নামের এক পাহাড়ী এলাকায়, শ্রী ইস্কান্দার থেকে উত্তর পাশ্চিমে। পথে দুটি প্রধান ঐতিহাসিক শহর তাইপিং ও কুয়ালা কাংসর। তাইপিং ইংরেজ আমলে বিষেশ গুরুত্বপূর্ন ছিল, অন্যান্য নিদর্শন গুলোর পাশাপাশি ইংরেজের প্রিয় স্থাপনা উঁচু প্রাচীর ঘেরা কারাগারটি আজো সেই দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর কুয়ালা কাংসরে ছিল পেরাকের রাজবংশের আদি রাজধানী। দুটি শহরই পাহাড়ের কোলে, পথ বেশ দূর্গম। সারা পথ ধরে সমান্তরাল সর্পিল ধারায় বয়ে গেছে পেরাক নদী, প্রশস্ত, খরস্রোতা। কাপ্তাই থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে দেখা কর্নফুলির কথা মনে পড়ে।

৮। একদিন

আমরা জনা বিশেক সেই কাকডাকা ভোরে ঘুমচোখে যাত্রা করেছি। গন্তব্য কুয়ালামপুরের বিখ্যাত জোড়ামিনার। উদ্দেশ্য সেখানে জাতীয় তেল কম্পানির তথ্যকেন্দ্র ও শিলাস্তর সংগ্রহশালা পরিদর্শন, সম্ভাব্য ফলাফল দক্ষতা বৃদ্ধি। এই ছোটখাট দলটির মাঝেও বিরাট পৃথিবীর আভাস পাওয়া যায়। এখানে আছে সুদুর আফ্রিকার শৃংগ ইথিয়োপিয়া থেকে অতলান্তিক কূলের নাইজেরিয়া অবধি নানা দেশের দূর্ধর্ষ কালো মানুষেরা, শান্ত সৌম্য চীনা জ্ঞানসাধক, স্থানীয় মালয়ী কজন, আর আমি বাংলা মায়ের শ্যামবর্ন সন্তানটি। বাস ছুটেছে বিখ্যাত মহাসড়ক ধরে। এটি রীতিমতো আন্তর্জাতিক মানের, বিপুল ব্যায়ে নির্মিত, এদেশের মানুষের গর্বের বস্তু। ছোট বড় নানা শহরগুলোকে পাশ কাটিয়ে উত্তর-দক্ষিনে এর বিস্তার। বহুবিধ পথনির্দেশ ও সতর্কবানীর অলঙ্করনে, এবং দুধারে পাহাড় ও ঘন বনের সমারোহে- বিচিত্র নয় যে, ক্ষনিকের জন্য আমার স্থান ও কালের অচ্ছেদ্য বৃত্তটি ভেঙ্গে যায়। আমি যেনবা এক জন্ম আগে অন্য কোন দেশে ঠিক এমনই ভাবে কোন মহাসড়কে ছুটে চলেছি, পেন্সিল্ভেনিয়া!

যাত্রীদের সবাই জ্ঞানবিজ্ঞানের সাধক- বোধকরি সেকারনেই খোশগল্প আলাপচারিতা বা বিমুগ্ধ চোখে বাইরের দৃশ্য দেখা এসব নেই। নিদ্রিত কজন বাদে বাকি সবাই কাজে ব্যাস্ত। ভ্রমনের সময় সাধারনত লোকে হাল্কা বই পত্রপত্রিকা পড়ে থাকে। ছোটবেলায় রেল ভ্রমনকালে অনেক বইয়ের ফিরিওলা দেখেছি। ঝুড়ি ভর্তি জনপ্রিয় লেখকদের গল্প-উপন্যাস, সস্তা কাগজে ছাপা, যাকে কিনা আজকাল পাইরেটেড এডিশন বলা হয়ে থাকে। রেলের ইস্টিশানে চায়ের দোকানের পাশাপাশি বইয়ের দোকানও থাকতো। যাহোক, আমার চীনা সহকর্মীর হাতে দেখি খনিবিদ্যার এক শক্ত বই। দুজন ডুবে আছেন তাদের গবেষনাপত্রে- যা কিনা অচিরেই কোন বিজ্ঞ সমাজের সম্মেলনে কিংবা কঠিন কোন সাময়িকিতে প্রকাশিত হয়ে মানবকূলের জ্ঞানভান্ডারটি আরেকটু সম্বৃদ্ধ করবে। অন্যেরা মজেছেন মুঠোফোনের রসে। অবশ্য এই যন্ত্রটিকে আর ওই নামে ডাকা যাবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। গত এক দশকে এদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে- কেরামতি ও কলেবরে, ফলে তাদের আর মুঠোয় ধারন করা যাচ্ছে না। আমার ধারনা, সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যখন কেউ দপ্তরীর কাঁধে প্রকান্ড বালাম বইটি দেখে চৌকশ ফোনের সর্বশেষ সংস্করন বলে ভ্রম করতে পারেন। কজন অবশ্য গভীর ঘুমে, অকালবোধনের ক্ষতিপূরন।

বেতারে স্থানীয় ভাষায় সঙ্গীত বাজছে। অজানা ভাষা কিন্তু মরমিয়া সুরের জন্য ভালই লাগছে, বাইরের সৌম্য পরিবেশের সাথে বেশ মানিয়ে গেছে। দেশে একাধিকবার ভ্রমনকালে সঙ্গীতের যে ভয়াবহ অত্যাচার সয়েছিলাম তা মনে পড়লে এখনো শিহরিত হই। একবার শুধু শব্দের মাত্রাটি কমানোর আবেদন করায় চালক, চালকের সহকারী, মায় যাত্রীদের অকৃপন কটূকাটব্য বর্ষন ও রক্তচক্ষু চাহনি উপহার পেয়েছিলাম। এই পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার উপায় বেতারযুক্ত মুঠোফোন- দুর্ভাগ্য আমার সেটি ছিলোনা। থাকলে, ‘কানে গুজেছি তুলো’র যান্ত্রিক বিকল্পটি পাওয়া যেত।

মহানগরী কুয়ালালামপুরের প্রানকেন্দ্রে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল উঁচু জোড়ামিনার ভবন। এরকম উঁচু স্থাপনা বিশ্বে মাত্র কয়েকটি আছে। মানুষের স্বভাবই কি কেবল উর্ধগামী! বাইবেলে বাবেল মিনারের কথা আছে, যা কিনা এক্কেবারে স্বর্গ ছুয়ে ফেলতে যাচ্ছিল। ঈশ্বরের আদেশে সেটি ভেঙ্গে ফেলা হয়, আর নির্মাতা মানবগোষ্ঠি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বিশ্বময়, সেই থেকে তারা ভিন্নভাষী, আপন মানবসত্বাটি জাতপাতের মোড়কে ঢেকে বহুবিধ কোন্দলে ব্যস্ত।

পরিদর্শনের বিষয়ে তেমন কিছু বলার নেই, যেমনটা হয়ে থাকে। বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে প্রায় অন্ধকার ঘরে বিভিন্ন জটিল বিষয়ে সচিত্র ভাষন। আমার চিরকেলে বদস্বভাব এইরকম পরিবেশে অল্প সময়েই খেই হারিয়ে তন্দ্রার সাথে সংগ্রাম। একসময় বাইরে এসে চারপাশটা দেখার সুযোগ পাই। ভবনের নির্মান আসলেই বিস্ময়কর, মানুষের কারীগরি দক্ষতার মূর্ত প্রতীক যেন। বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রামান্য ছবিতে এর নির্মান পর্ব দেখেছি।উচ্চমানের কারিগরী দেখে আমি বরাবরই বিস্ময়ে অভিভূত হই। বিমান, রেলগাড়ি, জাহাজ থেকে বৃহদাকার সেতু কিংবা বাধ-সবই আমাকে বিস্মিত করে। সেই কতকাল আগে, তেজগাঁ বিমান বন্দরের উড়ালপথের পাশে দাঁড়িয়ে একটা প্রকান্ড জেট বিমান উড়তে দেখেছিলাম। ব্যাপারটা যেমন অবিশ্বাস্য লেগেছিল, সেই ঘোর আজো কাটেনি। জোড়ামিনারটি তাই ঘাড় বেঁকিয়ে আগাগোড়া পর্যবেক্ষন করতে থাকি, একই রকমের বিস্ময়বোধ নিয়ে। অনেক পর্যটকের ভীড় এখানে। ঝোলা কাঁধে স্বল্পবাস ইয়োরোপীয় থেকে কাচ্চাবাচ্চা সমেত বৃহৎ ভারতীয় পরিবার সবাই আছে। সবাই ছবি তোলায় তৎপর। এই ভীড়ে ছবি তোলার কাজটি সহজ নয়, ক্যামেরার সামনে মানুষদের সারিবদ্ধ করাই এক ঝামেলা। এরপর সেই জমায়েতের দিকে ক্যামেরা তাক করতেই মধ্যখানে আসবে অন্যমনা পথিক। সময়মতো থামলে ভালো, নতুবা আপনার পরিবারটির সূর্যগ্রহন ঘটবে অচেনা কোন রাহুর মুন্ডুর আড়ালে। তবে আজকাল ডিজিটাল ক্যামেরা সুলভ হওয়ায় ছবি তোলা বেশ সহজ হয়েছে। ভবনের ভেতরেই প্রায় চারতলা জুড়ে আধুনিক বিপনীকেন্দ্র- প্ররযটনের অমোঘ অনুষঙ্গ। পশ্চিমা নামীদামী কিছু বিপনীরও সদম্ভ উপস্থিতি, অতি মহার্ঘ তাদের পন্য, যা কিনা কোন মামুলী অর্থনীতির সূত্র মেনে চলে না। সারাদিনে কজন এসব পন্যতীর্থ দর্শনে আসেন সেটাও এক রহস্য।

৯। দেশ ও সমাজ-২

মার্কিন দেশের সাথে এদেশের কিছু অদ্ভুত মিল আছে। সেখানে যেমন শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানীয় এই তিন প্রধান মানবগোষ্ঠির বাস, এখানেও তেমনি মালয়ী, চীনা ও ভারতীয়। মার্কিন দেশে একান্নটি রাজ্য, এখানে তেরোটি। এমনকি দূর থেকে দেখলে দুদেশের পতাকাও অনেকটা একরকম বলে ভ্রম হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন মিল হচ্ছে গাড়ী নির্ভরতা ও রেস্তোঁরা প্রীতি। জনচলাচলের ব্যপারটি গুটিকয় এলাকা বাদে প্রায় উপেক্ষিত। আর আবাসিক এলাকা, হাটবাজার ও আপিস-আদালতের বিন্যাস এমনই যে নিজস্ব বাহন ছাড়া জীবনযাপন বেশ কঠিন। একে তো হাটা পথের দূরত্বে প্রায় কিছুই নেই, তার উপর গরম ও বৃষ্টিবাদলের বিঘ্ন। রিকসার নিকট বা দূর স্বজাতীয়রাও অনুপস্থিত। কাজেই গাড়ীঘোড়ার ব্যাপক প্রসার। প্রায় পরিবারেরই নিজস্ব গাড়ী রয়েছে। প্রোটন ও পেরুদুয়া এদেশীয়- প্রচুর সংখক বাহনের উৎস। স্বতঃশ্চল শকটের এই মিছিলে যোগ দিয়েছে অনেক বিদেশী নির্মাতাও। চেনা অচেনা অনেক যন্ত্রশকটের সাক্ষাত এখানে পাওয়া যাবে। আর আছে এযুগের অশ্বারোহীগন, যান্ত্রিক দ্বিচক্রযানে তাদের অবাধ প্রত্যয়ী বিচরন। নারীপুরুষ সবাই চালকের আসনে। পথের ধারে ধারে জ্বালানীর বিপনন, উপরি হিসেবে নানা পন্যে সাজানো বিপনী, মার্কিন দেশে যাকে কনভেনিয়েন্স স্টোর বলে। পথ চলতে ক্লান্ত মনুষের জন্য শৌচাগার, চা-কফি, হাল্কা খাবার এমনকি উপাসনার ব্যাবস্থাও থাকে। আর মহাসড়কের বেলায় তো আয়োজনের ঘটা আরো বেশী। বেশ কিছুটা দূরে দূরে বিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে বিশ্রাম কেন্দ্র, সেখানে পানভোজনের পর্যাপ্ত ব্যাবস্থা, মায় ফলের বাজার ও মনোহারী দোকানের সারি। আর লোকের ভীড়- স্রোতের মত মানুষের আসা যাওয়া চলছেই।

ছোটবড় সব জনপদই প্রচুরসংখ্যক বিপনীতে আচ্ছন্ন। এই যে শ্রী ইস্কান্দার, যেখানে লোক সংখ্যা দশ হাজার হয় কিনা সন্দেহ, সেখানেও সারি সারি দোকান দেখে প্রথমটা বেশ ধন্দ লেগেছিল। পরে চোখ সয়ে এলে বুঝলাম বেশীরভাগই আসলে সস্তার বাজে জিনিসের দোকান। শপার’স প্যারাডাইস ঠিক নয়। আর আছে রেস্তোঁরা, আমার অপেশাদারী প্রাথমিক জরীপে প্রতি চারে একটি করে। মালয়ী, চীনা, শ্যামদেশীয়, তামিল ভক্ষ্যরাশি থেকে মার্কিন কর্নেল সাহেবের ভূবনজয়ী কুক্কুটভাজা, কুঁড়েঘরের পিৎসা- সবাই আপন মহিমায় বিরাজ করছেন। এছাড়াও আছে অসংখ্য সচল টংঘর-রেস্তোঁরার দরিদ্র জ্ঞাতি। পর্যটক কূল অবশ্যি এদের মোটেই হেলা করে না, বরং আদরের নাম দিয়েছে ষ্ট্রীট ফুড। বাইরের খাবারের এতো আয়োজন দেখে মনে হতেই পারে যে ঘরে রাধাবাড়ার কাল শেষের পথে।

১০। রসনা বিলাস

মালয়ীদের খাদ্য তালিকায় আমাদের পরিচিত মাছ, মাংশ, মুরগী, শাকশব্জি সবই আছে, যদিও মশলার মিশেলে ভিন্ন স্বাদগন্ধ। বেশিরভাগ মাছই অবশ্য সামুদ্রিক, আমাদের দেশের মত মিঠেপানির মাছ কম। আরো আছে শামুক ঝিনুক স্কুইড ইত্যাদি। এছাড়া শুঁটকিও এদের খুব প্রিয়, তবে আমাদের মত কায়দা করে রান্না করে না, স্রেফ তেলে ডুবিয়ে কড়কড়ে ভাজা, অথবা ফ্রাইড রাইসের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। মালয়ীদের ঐতিহ্যবাহী এক খাদ্য হচ্ছে লামং। চাল ও নানা জিনিশ যেমন নারকেল, লবন, ইত্যাদি বাশের চোঙ্গায় ভরে আগুনের আঁচে রেখে দেয়া হয়। সেই তাপে চাল সেদ্ধ হয়ে লম্বা পিঠের আকার ধারন করে, তারপর নানা উপাচার যেমন মুরগী বা গরুর মাংশের ঝোল সহযোগে খাওয়া। ঈদে পরবে বেশ ঘটা করে এটি বানানো হয়। এটি সাধারনত দোকানে বিক্রী হয় না। আমার কৌতূহল জেনে স্থানীয় একজন তার বাড়িতে বানানো লামং দিয়েছিলেন। প্রস্তুতির অভিনবত্বের কারনেও হতে পারে, আমার বেশ ভাল লেগেছিল।

রেস্তোঁরার সংখ্যা অনেক, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মালয়ী। সেগুলোতে সাধারনত অনেক পদের রান্না সাজিয়ে রাখা হয়। পছন্দমতো তুলে নেওয়া। তামিল মুসলিমরা লোকজ ভাষায় হয়েছেন মামা, তাদের দোকানও অনেক, নামে মামা শপ। সেখানে মালয়ী খাবারের পাশাপাশি কিছু ভারতীয় খাবারেরও ব্যাবস্থা থাকে। আর রন্ধন শিল্পের প্রবাদ চীনারাই বা পিছিয়ে থাকবে কেন। এরা যেকোন বস্তুকেই খাদ্যে রূপ দিতে পারে, প্রাচীন সভ্যতা বলে কথা। এতোগুলো শতাব্দি তো আর এমনি এমনি কাটেনি। আমার পছন্দ অবশ্য শ্যামদেশীয় খাদ্য। এই দোকানগুলো টমইয়াম শপ নামে পরিচিত। পশ্চিমা, মধ্যপ্রাচ্য ইত্যাদি অঞ্চলের উপস্থিতিও রয়েছে। মার্কিন-ইংরেজ ঘেঁষা দোকানগুলো সংখ্যায় অধিক নয়, কিন্তু মূল্যে সবার উপরে।

রন্ধন বিষয়ক আলোচনা আসলে অতিশয় জটিল। ওটি আমার ভ্রমনগুরু সৈয়দ মুজতবা আলীর সাবজেক্ট। তার অননুকরনীয় কলমে এই বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে, যা পড়ে রসিক পাঠক সত্যিকারের ভোজনের মতই তৃপ্ত হবেন। মোটের উপর এদেশের সর্বসাধারন মানুষ ভোজনবিলাসী। বেশ পরিতৃপ্তির সঙ্গে এদের বলতে শুনেছি, মালয়েশিয়া ইজ ফুড হেভেন।

২,৮৫০ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “জার্নাল মালয়েশিয়া”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    মাহবুব, সিসিবিতে স্বাগতম।
    আশাকরি তোমার সিসিবি জার্নিও আমার মতই আনন্দদায়ক হবে।
    আর ভিন দেশে থেকেও এক টুকরো বাঙ্গালিয়ানা উপভোগের এটা চমৎকার সুযোগও
    দেখি অন্য পাঠকরা কি বলে???


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • পারভেজ (৭৮-৮৪)

      গদ্য কেমন লাগলো, সেটা বলো আগে, আপু।
      আর মাহবুব যেন বারবার এইসব গদ্যের ঝুলি নিয়ে ফিরে ফিরে আসে, সেই দায়িত্ব আমার।
      তোমার ও অন্যদের কাজ হলো, পড়ে জানানো, কেমন হচ্ছে?
      ঠিক আছে? দ্যাটস দ্যা প্লট...
      🙂 😀 :)) 😀

      বাই দ্যা ওয়ে এইটা রাজীবের জন্যও প্রযোজ্য... (সম্পাদিত)


      Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম মাহবুব ভাই, আপনার চোখে মালয়েশিয়া দেখতে বেশ লাগলো 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. জুলহাস (৮৮-৯৪)

    মাহবুব ভাই, ওয়েলকাম টু দি ব্লগ। 😀

    সুন্দর লেখা...... :clap: ::salute::

    আর, ইয়ে... মানে...প্রথমবার ব্লগে আসলে...অর্থাৎ...কিছু লিখলে...কিছু একটা ... কি যেন ...... করতে হয়...... 😉 😉

    * ডি জুনিয়রস্‌... লুক ডাউন!!!!!!!! :grr: :grr:

    আমি কিন্তু আগে-ই মাফ্‌ চেয়ে নিয়েছি... :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll:


    Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

    জবাব দিন
  4. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    খুব সুন্দর করে লেখা তোমার এ ব্লগটা পড়ে মুগ্ধ হ'লাম, মাহবুব। চমৎকার লিখেছো। সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখার মত না হলেও তার ফ্লেভার তো কিছুটা আছে বৈকি। এ মাসের শেষ দশটা দিন মালয়েশিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেজন্যই হয়তোবা, লেখাটা খুব মনযোগ দিয়ে পড়েছি। আচ্ছা, তুমি কোন বিষয়ের উপর শিক্ষকতা করো সেখানে?
    তোমার এ লেখাটাতে বেশ কয়েকবার 'ধন্দ' শব্দটা এসেছে। এটা দিয়ে কি তুমি দ্বন্দ্ব না ধান্দা বুঝাতে চেয়েছো, সে নিয়ে দ্বন্দ্বে আছি।
    "মার্কিন কর্নেল সাহেবের ভূবনজয়ী কুক্কুটভাজা, কুঁড়েঘরের পিৎসা- সবাই আপন মহিমায় বিরাজ করছেন" - কি চমৎকার করেই না বললে কথাগুলো!
    "মালয়েশিয়া ইজ ফুড হেভেন" - যাচ্ছি মালয়েশিয়া ইনশাআল্লাহ! চেখে দেখবো যতটা পারি।

    জবাব দিন
  5. মাহবুব (৭৮-৮৪)

    খায়রুল ভাই, প্রায় ভুলে যাওয়া এই লেখাটি আপনার মনো্যোগ পেয়েছে দেখে খুবই ভাল লাগল। আমার বিষয় পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং, University Technology Petronas-এ আছি আপাততঃ। আগামি বছর দেশে ফিরে যাবো আশা করি। ধন্দ বলতে বোঝাতে চেয়েছি ধাঁধাঁ, বা কনফিউশন। শব্দটা বোধ হয় ঠিক হয়নি।
    আপনার মালয়েশিয়া ভ্রমন সুন্দর ও আনন্দময় হোক।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।