হতভাগা জন্মভূমি মা আমার!

(পিলখানা হত্যাকান্ডে নিহত ৫৭ সক্ষম সৈনিক অফিসার ও তাদের নির্যাতিতা পরিবারদের স্মরণে সেই সময়ই লেখা)

যুদ্ধ দেখিনি আমি,

স্বাধীনতার সংগ্রামও দেখিনি।

অকুতোভয় মুক্তিসেনা-স্বজনের বীরত্ব-গাঁথা শুনেছি,

খুনী-ধর্ষক, রক্তপিপাসু পাকসেনা

আর তাদের এদেশীয় জল্লাদ-দোসরদের

উন্মত্ত-যজ্ঞকাহিনী-কাব্যে রচিত বধ্যভূমির কথা শুনেছি কেবল,

ঘৃণা আর প্রতিহিংসার জালবুনেছি এতকাল।

 

হে আমার ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ,

আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার রক্তে শুদ্ধ প্রাণপ্রিয় দেশমাতৃকা আমার!

কেন তুমি আজ আমাকে তেমন করে আর আবেগে আপ্লুত করোনা?

হৃদয়ের মানচিত্র থেকে কেনই বা ক্রমশই হারিয়ে ফেলছো নিজেকে?

কিসের এতো দায় তোমার?

কেন? কোন অসহায়তায় দেশজুড়ে সন্ত্রাসী-ঘাতক,

আর ধর্ষক-খুনীদের জন্ম দিয়ে চলেছো অবিরাম, এতকাল?

 

উদ্ভিন্না-যৌবনা মাতৃভূমি আমার!

৩৮ বছরে জন্ম দিলে এতোশত বেজন্মা ঘাতক?

যারা আমারই চোখের সামনে আমারই স্বজনের লাশ নিয়ে

উন্মাদনায় মাতে বারবার!

আর অসহায়-অবাক চোখে

ভীতসন্ত্রস্থতায় আমাকেও দেখতে হয় সেই নারকীয় উল্লাস?

 

কখনো ক্ষমতার লোভে,

কলুষিত রাজনীতির চালে,

ষড়যন্ত্রীর জালে,

সামরিক শাসনের নির্মমতায়,

বিদ্রোহ-পাল্টা বিদ্রোহের ছুতোয়,

ধর্মের নামে অধার্মিক-জঙ্গী-যুদ্ধাপরাধীর কোপানলে,

অথবা কেবলই নিছক লোভ-লালসা আর লুন্ঠনের নেশায়

গুম হয়ে গেছে কত স্বজনের লাশ!

রক্তনদী হয়ে বয়ে গেছে

তোমার সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা ধরিত্রীর বুক চিরে!

 

নদীমাতা স্বদেশ আমার!

তোমার এই দুকূল-ছাপানো জল-বৈভবের নীচে

লুকানো রক্তমাখা স্বরুপ আমি দেখেছি বারবার।

 

তখনো আজ্ঞাবাহী- আঁতেল-বুদ্ধিজীবি, ভারবাহী-কৌশলী-রাজনীতিক আর

প্রচারবিলাসী সমাজ-হিতৈষীদের টকশো

আর নিষ্ফল গোলটেবিলের জোয়ারে

ভেসে যায়টিভি চ্যানেল আর পত্রিকা ভবন,

তখনো দেশজুড়ে ফুটবল আর ক্রিকেটের চেয়েও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে

আরেক নতুন খেলা- ‘তদন্ত তদন্ত’ সে খেলা,

তাই বুঝি তাতে বেশী করে মাতে নির্বোধ জনতা!

আর এই ফাকে অর্থলোভে  আইনজ্ঞ বসে খেলেন পাশা,

বিত্তবান সাক্ষাৎ শয়তান পার পেয়ে যায়

নিরপরাধ বিত্তহীনের রক্তলাশে ডুবিয়ে পা!

 

হায়রে হতভাগা জন্মভূমি মা!

তোমার এ হত্যাযজ্ঞভূমি আমার দেশ না।

১,০১০ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “হতভাগা জন্মভূমি মা আমার!”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    খুবই ব্যক্তিগত অক্ষমতা হলো, এই বিষয়টা নিয়ে কোন কিছু পড়া-দেখা-জানা-শোনা আমার জন্য নিষেধ।
    স্কিপ করতে হচ্ছে বলে দুঃখিত।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • পারভেজ ভাই, তবে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে আপনিও নিষিদ্ধ? উচ্চাসনে আসীন নীল রক্তের প্রভুদের কাছে আমিও জোড় দাবী জানিয়েছি আমাকেও নিষিদ্ধ করুন...

      জবাব দিন
      • পারভেজ (৭৮-৮৪)

        ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু ভুল বোঝার অবকাশ দেখতে পেয়ে তা করতেই হচ্ছে।
        নিষেধাজ্ঞাটা "দাপ্তরিক" নয়, "ব্যাক্তিগত"।
        আরও ভেঙ্গে বললে, "ব্যাক্তিগত চিকিতসকের আরোপিত"।
        সুস্বাস্থ্যের জন্য চিকিতসকের দ্বারস্থ যেহেতু হতেই হয়, তার দেয়া নিষেধাজ্ঞা না মেনে আর উপায় কি?

        বাট আই লাইকড ইওর কনসার্ন... থ্যাংকস...


        Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

        জবাব দিন
  2. টিটো মোস্তাফিজ

    অসাধারণ লেখছেন প্রিন্স :gulli2: :gulli2: :gulli2:
    এই লেখার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ডিলিট শিফট এন্টার প্রয়োজন :boss:
    এ বিষয়ে এই অধম একটা ছড়া লিখেছিল। আপনার সানুগ্রহ মন্তব্য আশা করি।

    পিলখানা

    বিদ্রোহ কি এতই সস্তা ?
    মুর্খ আর জালিম !
    বর্বরতায় প্রাণ হারালো
    মাকসুম উল হাকিম।

    কেমন ধারা দাবী দাওয়া
    আদায় করতে দরবারে ?
    ভাই বন্ধু নেতার প্রাণ
    কলংকিত বলাৎকারে !

    পিলখানাতে একাত্তর
    ফিরে এলো নারকতা !
    বাকরুদ্ধ শোকে মোরা
    ডুকরে কাঁদে মানবতা !

    কাদা ছিটিয়ে ঘোলাপানি
    ধরা পড়ে পুঁটিমাছ !
    অন্ধকারে ডাইনী শিকার
    স্বজন হারার দীর্ঘশ্বাস !

    সব কিছুতেই ফায়দা খোঁজা
    এতটাই দীনতা ?
    ‘র’ পাকিদের রং মিশিয়ে
    আড়াল কর ব্যর্থতা ?

    [ শোকাবহ পঁচিশে ফেব্রুয়ারী স্মরণে ২৫.০২.২০১৪]


    পুরাদস্তুর বাঙ্গাল

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।