প্রকৃতির অনেক কাজের মধ্যে একটা বোধহয় মানব সন্তানদের সময়ে অসময়ে ডাকাডাকি করা। আর তার সেই গগণ বিদারী ডাকে সাড়া না দিয়ে বেশীক্ষণ থাকবে……এমন বুকের পাটা বোধহয় কারোরই নেই। কাজেই সেই ডাকাডাকির আগমুহূর্ত পর্যন্ত লক্ষ্মী ছেলের মতন বসে না থেকে স্থান কাল পাত্র বুঝে কাজ সেরে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ। সমস্যা হলো…২/৩ বা ৩/৪ ঘন্টার বাস জার্নির ক্ষেত্রে ওই স্থান কাল পাত্র বোঝার কাজটা মোটেই ঠিকমতন করা যায় না।
১.
মির্জাপুরের ছেলেপিলেদের খুব লম্বা বাস জার্নি করা লাগেনা। বেশিরভাগ ক্যাডেট থাকে হয় ঢাকা, নাইলে টাংগাইল বা ময়মনসিংহ। কলেজ যেতেও লাগে বেশি হলে দেড়/দুই ঘন্টা। তাও আবার সর্বোচ্চ। কাজেই ক্লাস ইলেভেনের এক্সকারশনে বাস জার্নিটা অনেকের জন্যেই একটু বেশীই লম্বা। এক্সকারশন শুরু হবার পর তখন আমাদের সবার মন মেজাজই বেশ ফুরফুরে। ঘুমানোর ‘ঘ’টাও তখনো কেউ মুখে আনছেনা। কিন্তু প্রকৃতিকে থামিয়ে রাখবে কে? সে ভদ্দরলোক যথা সময়ে ডাকাডাকি শুরু করে দিলেন। অনেকক্ষণ ধরে চেপে চুপে রাখার পর আর যখন পারা যাচ্ছেনা……বাসখানা থামানো হলো এক জায়গায়। সেইটা আবার সেই এলাকার কোন এক গণ্যমান্য লোকের বাড়ি।বাড়ির সামনে উঠানের মতন জায়গা। ওইখানেই সবেধন নীলমনি একটাই টয়লেট। তখনো আমরা মোটামুটি ছোটই। রাস্তাঘাটেই ছোট ইয়েটা সেরে ফেলতে পারার সুঅভ্যেসটা তখনো রপ্ত করে উঠতে পারিনি । বাস থেকে নামা মাত্রই দেখি সাথে আসা প্রিন্সিপাল স্যার কোথা থেকে একখানা বদনা জোগাড় করে সুন্দর হাঁটা দিয়েছেন টয়লেটটার দিকে। এদিকে আমরা প্রায় ৩৮জন নাদান অসহায়ের মতন এ ওর দিকে চাওয়া চাওয়ি করছি। এমন সময় এডজুটেন্ট স্যার এসে……’কারো লাইট হওয়া দরকার থাকলে সেরে নাও। ৫ মিনিট টাইম।’ আমরা আবারো শূন্য দৃষ্টিতে একে অন্যের দিকে তাকাতাকি করছি। উনি তখন ‘হোয়্যাট আর ইউ ওয়েটিং ফর?’ বলে কাছের এক মাঝারী সাইজের ঝোপের দিকে অংগুলি নির্দেশ করে বললেন, ‘দিস ইজ দ্যা প্লেস হোয়্যার অল অভ ইওর সিনিয়র ব্রাদারস হ্যাভ ডান ইট।’ কি আর করা! অতঃপর লজ্জার মাথা খেয়ে আমরা ২০/২৫ জন মাঝারী সাইজ ঝোপের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম……কথা চালাচালি গুলো ছিল অনেকটা এইরকম……
-অই…তুই লম্বা। অন্যদিকে তাকা…
-হ! তোর ওইটা দেখার জন্যেতো আমি মুখায়ে আসি আরকি!!!!
অথবা…
-ওই হারামি, ওই দিকে চাইপা কাজ সার…জুতায় ছিটা পরতেছে…
নাইলে…
চল কাটাকাটি খেলি……
২.
কক্সবাজার যাবার পথে ৪ ঘন্টার জার্নি। তখন বোধহয় রাস্তাও একটু রাফ। মাঝপথে কোথায় জানি বাস থামালো এই হিসি পর্ব সারার জন্য। এবার দেখি রাস্তার ধারে পাবলিক টয়লেট। খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। দেখেই মন ভালো হয়ে যায়। খালি একটাই সমস্যা। পাশাপাশি দুইটা ইউরিনালের মাঝে যে পার্টিশন, সেইটা হাটুর চেয়েও নিচে। একমাত্র ভরসা জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সরু সরু আঙ্গুল সর্বস্ব ছোট্ট হাত দুখানা দিয়েই কোন মতে ঢেকে ঢুকে আড়াল করে কাজ সেরে করে নিতে হলো!!!
৩.
আরেকবার টিভি ডিবেট দেখতে নিয়ে যাওয়া হলো। ফেরার পথে আশুলিয়ার রাস্তায় এক ব্রিজ়ের সামনে কলেজ বাস থামানো হলো। মুহূর্তে বাস খালি করে পোলাপান যে যার ব্যবস্থা করতে ছুট। একটু দেরী করে নিচে নেমে দেখি একি যন্ত্রনা! যে চিপাতেই যাচ্ছি সেখানেই কেউ না কেউ আগে থেকে দখল নিয়ে কাজ সেরে নিচ্চে। ব্রিজের নিচে যাই… দেখি ৪জন…পাশে দেখি ৩জন, এদিক তাকাই দেখি ২জন…ওদিক তাকাই দেখি ৩জন। অগত্যা…সোজা দৌড়ে কিছুটা সামনে গিয়ে নিচু ক্ষেত মতন জায়গায় খোলা ময়দানে কোন আড়াল ছাড়াই ছাড়া শুরু করে দিলেম। যতক্ষণ সামনে কেউ না এসে পড়ছে……কি যায় আসে! বেশ ফুরুত ফুরুত একটা ভাব জাগছিলো বেশ……
৪.
ইলেভেনের এক্সকারশন থেকে ফেরার সময় মনে হয়……ফৌজদারহাটের গেস্টহাউজে পৌছেছি…লম্বা বাস জার্নি করতে হয়েছে, কাজেই মুহূর্তে বাস খালি করে সব টয়লেটের দিকে দৌড়। ভাবলাম…থাক বাবা…এখন আর হুড়াহুড়ি করে লাভ নেই…আমারটা এমন কিছু জরুরি নয়। দু’ চার ঘন্টা দিব্বি কাটিয়ে দিতে পারবো। সবাই ক্লান্ত, কাজেই ডিনার সেরে নিচে কম্বল উপড়ে কম্বল মেরে ঘুমিয়ে গেছি। প্রচন্ড চাপ সহকারে ঘুম ভাঙলো রাত দুটোর দিকে। ভাবলাম যাই…এবারে আরাম করে কাজখানা সেরে আসি। ও মা!!!! নিচে নেমে দেখি রাত দুটোর সময় টয়লেটের সামনে অলমোস্ট ফলইন করে সব দাঁড়ানো। একেবারে নেক্সট নিয়ে টিয়ে ঘন্টা খানেক পরে যখন একটার সিরিয়াল পেলাম…ঢুকে দেখি ওভারফ্লো করে অলরেডি জিনিষপত্র ভাসাভাসি করা শুরু হয়ে গেছে।
বুঝলাম……ভেজা বার্মিজ আচারগুলো তাহলে সেরকমই ছিল!!!!!
আশিক ভাই লেখা শুরু করছেন এটা তো খেয়াল ই করি নাই। আমি আসলে মাঝখানে বেশ কিছুদিন ব্লগে ঢুকি নাই।
লেখাটা পড়ে খুব মজা পাইলাম।
এফসিসি'র টয়লেটের কথা জীবনেও ভুলতে পারব না। সে কথা কি ভোলা যায়। জীবনের সেরা টয়লেট বিড়ম্বনাগুলার একটা।
অন্য কলেজের পোলাপাইন এফ সি সি তে এক্সকার্সানে গিয়া কি গেস্ট হাউজটাতে থাকতো?? আমাদের টাইমে গেস্ট হাউজটা ছিলোনা, পোলাপাইন আইসা আমাগো হাসপাতালটাতে উঠতো।
আমরা যাবার কয়েক বছর আগে মনে হয় এফসিসির গেস্ট হাউজটা রেনোভেশন করে। এর পর থেকে আমার জানামতে এক্সকারশনে ক্যাডেটরা আসলে ওখানেই থাকতে দিতো।
:))
পুরা গুল্লি।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
হা হা হা।বিরাট হইছে লেখাটা।
:grr:
আইইউটির ভোল্টা কাহিনী মনে আছে? ওই যে রাত তিনটায় কাজ সাইরা বেচারা আবিষ্কার করলো কিউবে বদনা নাই ... কিছুক্ষণ চিন্তা করলো কি করবে, দেন "আমি কি কাউরে ডরাই" জাতীয় মন্ত্রে উজ্জীবীত হয়া গদাম কইরা দরজা খুইলা পাশের কিউব থেকে বদনা সংগ্রহ ... আমি খালি ভাবি আল্লার রহমত কেউ ঐসময় বাথরুমে যায় নাই, এই দৃশ্য যে দেখতো তার ঘুম হারাম হয়ে যাইতো এক সপ্তার জন্য 😀
কিংবা প্যালেস্টাইন ব্লকে, প্রথমবার বাথরুমে গিয়া অর্ধডুবন্ত জিনিস দেইখা অবাক উপলব্ধি, এতবড় জিনিস হালাদের ব্যাকসাইড দিয়া বাইর হয় কেমন? :p
নাঃ, ব্লগ গান্ধা করে দিতেছি, আর বলা ঠিক হবে না :))
=)) =)) =))
ইফতারের আগে এইটা কি পড়লাম? ওয়াক ...