হান্নান স্যার। অনেক কলেজের অনেকেই তাকে চেনে। পুরাই পাগ্লা……পাগ্লা মানে একদম ক্র্যাক যাকে বলে। আমরা উনাকে প্রথম পাই যতদূর মনে পড়ে…… ক্লাস নাইনে। সারাক্ষণ বাবু বাবু করতেন। – “বাবু, এটা কি সর্বনাশ করেছিস? এখন তো তোকে পেটাতে হবে” অথবা, “বার বার করে বলেছি বাবু তোদের নোংরা আন্ডারওয়্যার গুলো ইন্সপেকশনের সময় বিছানার চিপায় লুকিয়ে রাখবি না……” ইত্যাদি ইত্যাদি।
ইংরেজির স্যার উনি। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে আমাদের কলেজে এসেছিলেন। প্রথম ক্লাস নেয়া শুরু করেই গ্রামার ট্রামার বাদ দিয়ে অক্সফোর্ড ডিক্সনারী খুলে ফোনেটিক্স আর ইংলিশ প্রোনাউন্সিয়েশন পড়ানো শুরু করলেন। ভুল বললেই ১২ইঞ্চি হলুদ স্কেলের দমাদম বাড়ি পড়তো হাতের তালুতে। প্রথম যে মিডটার্মটা নিলেন……আমাদের বি-ফর্মের ২০ জনের মধ্যে ১৫/১৬ জন ফেল। তাও আবার কেমন……৫০ এর পরীক্ষাতে বেশিরভাগ ১৯.৫ পেয়ে ফেল। ইচ্ছা করে ফেল করানো। এর পর শুরু হলো পাশ করানো প্রক্রিয়া। এক এক জন করে ডায়াসে গিয়ে হাত পেতে দিচ্ছে……আর টাশ টাশ করে স্কেলের বাড়ি খেয়ে পাশ করে চলে আসছে…… । পাশ করা খুবই জরুরি। কারণ নিজের একাডেমিক ক্যারিয়ারের চেয়েও হাউসের একাডেমিকসে লীড নেয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। ফেল করলে হাউসমাস্টার, হাউসলীডার, জেপি……কেউ ছেড়ে দিবে না……
পেটানোর স্টাইলটা অনেকটা এরকম……
– “আর ফেল করবি বাবু?” ……টাশ টাশ……
– “পড়াশোনা করবি ঠিকমত?” ……টাশ টাশ……
– “নামাজ পড়বি?” ……টাশ টাশ………টাশ টাশ…… (এ পর্যায়ে একটু বেশি)
তো, কয়েকজনকে এইভাবে পেটানোর পর মনেহয় স্যারের মনে হলো যথেষ্ট বৈচিত্র হচ্ছে না। এবারে ডাক দিয়ে……
-“বাবু, কলেজে আসার সময় বাবা মা কি মাথায় হাত বুলিয়ে বলেনি ঠিকমতো পড়াশোনা করতে?”
আমাদের জোবায়েদ (যে কিনা আসলে ইংরেজিতে খুবই ভাল) এমন আচমকা এই এটাকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে মাথা চুল্কে মনে করতে চেষ্টা করতে লাগলো আসলেই বাবা মা ওরকম কিছু বলেছিল নাকি।…………টাশ টাশ………টাশ টাশ……চুপ থাকার কারণে এবারে বোনাস হিসেবে হাতের সাথে পিঠেও……
পরেরজন আগে থেকে সতর্ক।
-“বাবু, কলেজে আসার সময় বাবা মা কি মাথায় হাত বুলিয়ে বলেনি পড়াশোনা করতে?”
-“জী স্যার। বলেছেন।”
-“তবু ফেল করেছিস???” …………টাশ টাশ………টাশ টাশ…… হাত, পিঠ কোথাও ক্ষমা নেই।
শেষের জন আমাদের তাহসিন। মোটামুটি ভাবে পিটনি খাবেই এই মহাসত্যকে মেনে নিয়েছে অলরেডী। কাছে যেতে এবারে স্যার প্রশ্ন পালটে ফেললেন।
-“বাবু, তুই কথা বলিস???? কথা বলিস????”
একটু আশার আলো দেখতে পেয়ে তাহসিনের চেহারাটা ১০০ওয়াটের বাল্বের মতন জ্বলে উঠলো। এম্নিতে ত্যাদোড় হলেও ক্লাসে সে রেগুলার সুবোধ বালকের মতন অনেক কথা বলে, রেসপন্স করে। যার ফলে স্যার ওকে কিছুটা পছন্দও করেন। এযাত্রা মনে হয় বেঁচেই গেল। উৎফুল্ল মনে বললো,
-“জী স্যার……বলি……”
-“কী !!!!! মসজিদে কথা বলিস!!!!!!!! ” …………টাশ টাশ………টাশ টাশ………………টাশ টাশ………
hey ashikul kmon aso???welcome ....porichito polapan dekhe valo laglo..ki korcho ajkal..aro lekha dao..valo likhecho..
😀
হান্নান স্যাররে নিয়া যে কত স্মৃতি আছে.....
আমরা তারে একেবারে ক্লাস সেভেন থেকে পাইসিলাম। টুয়েলভ পর্যন্ত।
সেভেনে থাকতে তারে যমের মত ডরাইতাম। ক্লাস টুয়েলভ এ চলে আসার সময় যাদের জন্য বেশি খারাপ লাগসে হান্নান স্যার তাদের একজন।
আর শেষ কথা হইলো গিয়া আশিক ভাই যে তার বিখ্যাত আইলসামি থেকে বের হয়ে কিছু একটা লিখসে আমি তাতেই খুশি 😀
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভালো লেগেছে।
সুতরাং, ভাই আশিক, আর যে লিখতে হয়...
আহহা! আশিক, হান্নান স্যারের কথা মনে করাইয়া দিলা, ভাই। সেই ৮৪ সালে ক্লাস সেভেনে আমরা ৫২ জনই লাল মলাটের Wren and Martin এর গ্রামার বই কিনছিলাম। মিস করি স্যারকে। ভালো থাকো।
আমার কেনা wren n martin টা আমি হারায় ফেলসি। 😀
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
আমরা কিনসিলাম মোটা একটা হলুদ বই। পি.এ.বসু...না কি জানি রাইটারের নাম...আগে সবুজ মলাটে পাওয়া যেত। নতুন এডিশনটা হলুদ। কারো রাইটারের নামটা মনে থাকলে একটু মনে করায়ে দিয়েন... 😀
ক্যান? আবার হান্নান স্যারের ছাত্র হবার খায়েশ হইসে নাকি? :))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
মাথা খারাপ! :)) নাম না মনে পড়ায় মনের মধ্যে চুল্কাইলতেসে... 😛
" ”জী স্যার……বলি……”
-”কী !!!!! মসজিদে কথা বলিস!!!!!!!! ” …………টাশ টাশ………টাশ টাশ………………টাশ টাশ………"
=))
জোশ একটা লিখা!!! :salute:
-”জী স্যার……বলি……”
-”কী !!!!! মসজিদে কথা বলিস!!!!!!!! ” …………টাশ টাশ………টাশ টাশ………………টাশ টাশ………
:)) =)) খুব মজা পাইলাম। :clap:
বইটার নাম পি কে দে সরকার।হা হা হা।ঐ বইয়ের কথা ভুলে গেছো কারণ ভালো নম্বর পাইতা।
তা আমি ঐ বই ধইরাই তো পাশ করছি তাই নাম ভুলি নাই।
ওই জঘন্য বইটা খাইতে বাধ্য করছিল স্যার।
আমার লাইফে আমি এত বাজে বই দেখি নাই।
আমি তাহসিনের ঘটনাটার অন্য এক ভার্সন জানি। ভার্সনটা এই রকম-
-ফেল করেছিস কেন? তোর মা কি সৎ?
তাহসিনের তখন মাথায় মাইরের ভয়ে চলতাছিল না, সে ভাবলো স্যার জিজ্ঞেস করতাছেন আন্টি honest কিনা। অতএব, নির্দ্ধিয়ার সে বইলা দিল, জ্বি স্যার, আমার আম্মা সৎ।
স্যারের মুখ তখন সমবেদনয়ায় নরম হয়া গেছে।
- এই জন্যই তো এই অবস্থা। বাড়িতে সৎ মায়ের অত্যাচারে পড়তে পারিস না, না?
তবে তাহসিন মাইরের হাত থাইকা বাচছিল কিনা মনে নাই।
হুম...তাহসিনরেই জিগাইতে হবে......আমার মনে হয় দুইটা ঘটনাই ঘটসে 😀 । আমি তখন গুটি কতক পাশ করা পোলাপানের একজন হয়ে পিছনে বইসা মজা নিতেছি...... 😀
চামে জানায়া দিলি যে পাস করছিলি...আমিও তাইলে চামে জানায়া দেই, আমিও পাস করছিলাম 😀
তাহসিনের ঘটনার দুইটাই ঠিক আছে।দুইটাই হইছিল।মনে হয় দুইটা দুই পরীক্ষায়।
আর মসজিদে কথা বলার ঘটনার একটু বাকি আছে।পরের জনকে স্যার জিজ্ঞেস করল,কথা বলিস কেন?সে বলল, স্যার আমি কথা বলি না।তো স্যার বলল,তুই বলিস না,তোর ক্লাশমেটরা বলে কেন?সে বলল,না স্যার ক্লাশমেটরাও বলে না।তখন স্যার বললেন,তাহলে ক্লাশ টুয়েলভ কথা বলে কেন?বলে ঠাশ ঠাশ শুরু করে দিলেন।
আর আমি বলি হান্নান স্যারের খাতায় আমি পাশ নম্বরের বেশি পাইনি কখনও।আর প্রতিবার তা জুটত কিঞ্চিত ডলার পরে।
মনে পরসে! হাহাহা =))
জিহাদ ও তার দলকে বিশাল ধন্যবাদ ... আমি অনেক গুতায়েও আশিকরে দিয়া কিছু লেখাইতে পারি নাই, সেই আশিক দেখি ব্লগ প্রসব করে ফাটায়ে ফেলতেছে 😀
চালায়া যাও গুরু ...
শেষমেষ আমারে গাইনী ডাক্তার বানায় দিলেন? :grr:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
কঠিন!!! হাসতে হাসতে পইড়া গেলাম!
www.tareqnurulhasan.com