কোন একটা সময় কোন ধরনের আবেগ তৈরী হলে সেটা সবসময় চায় প্রকাশ হতে। কিন্তু সেটাকে নানা কারণে প্রকাশ করা যায় না। হয়ত আবেগটা প্রকাশ করলে খুব কাছের মানুষটি কষ্ট পাবে , অথবা সেটা শুনলে সমাজের মানুষ ছি ছি করে চলে যাবে। মাঝে মাঝে হয়ত সেই আবেগের প্রকাশ যদি স্বৈরশাকদের বিরুদ্ধে হয় তাহলে জেল হাজত খাটা বা গুম হয়ে যাওয়াটাও বিচিত্র কিছু নয়।
তো যাই হোক চেপে রাখা এই আবেগুলো যখন থিতিয়ে পড়ে জমতে থাকে তখন একটা পর্যায়ে গিয়ে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে খুব কদাকার রূপে প্রকাশ পায় । ফ্রয়েডের ভাষায় বলতে গেলে, অবচেতন মনের কুঠুরীতে বন্ধ আবেগগুলো ছিদ্র খোঁজার জন্য উম্মত্ত হয়ে পড়ে।
ধরুন প্রাচীন গ্রীসের কোন এক পুরুষ নাগরিকের খুবই সুন্দর একটি মেয়ে ছিল। বাবা মেয়ের রূপে মুগ্ধ হয়ে রোমান্টিক প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু বেচারা সেই অনুভূতিটাকে বাড়তে দিতে পারে নাই, কারণ সমাজ জানলে একবারে ঘরছাড়া করবে। তো কি আর করার, দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আবেগটা দাফন করেই হয়ত বাকিটা জীবন পার করতে হয়েছে। কিন্তু সেই চেপে যাওয়া আবেগটা তার মনের গহীনে উড়ে বেড়িয়েছে স্বাধীনভাবে । একটা পর্যায়ে সেই আবেগটা তার মনে এক প্রেম কাহিনী রচনা করার অনুপ্রেরণা দেয়।
কাহিনীটা অনেকটা এরকম:
“এক দেবতা ছিল জিউস এবং আফ্রোদিতি নামে তার অস্থির রকমের এক সুন্দরী কন্যা ছিল । কন্যার সৌন্দর্যে বিমোহিত জিউস আফ্রোদিতির সাথে প্রেমে লিপ্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালায় এবং….. ”
ব্যাপারটা অনেকটা নিজের নিষিদ্ধ প্রেমকে রূপকথায় রূপান্তরিত করা । কারণ যখন এ গল্পটি বলা হবে তখন মনে মনে জিউসের স্থলে নিজেকে কল্পনা করে , ক্ষণিকের জন্য হলেও নিজের নিষিদ্ধ প্রেমটির স্বাদ পাওয়া যাবে ।
বাস্তবতা নিতে পারেনি তো কি হয়েছে , কল্পনার জগতে চিন্তা করলে তো আর সমাজের লোকজন এই বাপ বেটির গর্হিত প্রেম নিয়ে ছি ছি করতে আসবেনা।
চাপা আবেগের কি বিচিত্র প্রকাশ!!!
প্রাচীন গ্রীসের সেই স্থান থেকে এবার আমাদের প্রেক্ষাপটে চলে আসি।
ধর্মীয় মানুষেরা স্বাভাবিক ভাবেই অনুশাসন মেনে চলার কারণে যৌনতা জিনিসটা তাদের কাছে অনেকটা ট্যাবু । অন্তরে যৌন সুড়সুড়ি আসলেও বার বার চেপে রাখতে হয় সে আবেগুলোকে । মনের ভিতরে অবদমিত এই আবেগ, ইচ্ছা প্রকাশ পাওয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় থাকে ।
এক শ্রেণীর বক্তা এই বিষয়টি খুব ভালো করেই আঁচ করতে পারেন এবং সেই জন্য তাদের কথার মাঝখানে ঘুরে ঘুরে উলঙ্গ, বেপর্দা নারীদের কথা চলে আসে। হুজুর সাহেব রসিয়ে রসিয়ে পচানোর উদ্দেশে, তথা কথিত বেগানা নারীদের টেনে আনেন । আর সেগুলো শুনে শ্রোতা গণ অনেকটা প্রফুল্লতা অনুভব করেন।
ব্যাপারটা আসলে হুজুর সাহেব তার ধারাভাষ্যর মাধ্যমে শ্রোতাদের মানসপটে নগ্ন নারীদের অঙ্কন করেছেন। আর তা দেখে, সাধক শ্রোতারা ক্ষণিকের জন্য হলেও নিষিদ্ধ নারীদেহের দর্শন পেয়েছেন। আর এতেই হয়েছে হৃদয় পুলকিত। মরুভূমির মাঝে একচুমুক সেভেন আপ খেলে তাতেই বা কম কিসে।
এখানে একটি বিষয় আমি পরিষ্কার করতে চাই যে সব ওয়াজ মাহফিলেই যে এরকম হয় তা আমি বলতে চাচ্ছি না, আমি বলতে চাচ্ছি যেখানে এরকম হয় সেখানে কেনো এরকম হয়।
যাই হোক,একই ভাবে দেখবেন আশে পাশের অনেক সাদা সিধে, খুব ভদ্র ছেলে সিরিয়াল কিলার সিরিজ অথবা ব্যাটম্যান ভিলেন জোকারের অনেক বড় ভক্ত যেটা তাদের স্বভাবের সাথে খুবই বেমানান। আসলে, তারা তাদের মাঝে চেপে রাখা রক্ত পিপাসু অথবা বিধ্বংসী ক্রিমিনাল সত্ত্বার প্রকাশের জন্য তারা একটি মাধ্যম খোঁজেন। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে ,যখন তারা এইসব সিরিয়াল কিলার অথবা ক্রিমিনাল জোকারের মুভি দেখেন, তখন তাদের অবচেতন মনে চিন্তাটা থাকে অনেকটা এরকম: “সিরিয়াল কিলার অথবা জোকার আমার অবদমিত রূপ যেটা সমাজের কারণে বিকশিত হতে পারেনি। যদি আমি এদের মত হতে পারতাম তাহলে ব্যাপারটা কেমন হত “!!!!
চেপে রাখা আবেগ অনুভূতি যখন সরকারের বিরুদ্ধে হয় তখন এর বহিঃপ্রকাশ মাঝে মাঝে খুব খারাপ রূপ নেয়। ধরুন, যখন প্রশাসন কাঠামোর দুর্নীতির উপরে সবাই ক্রোধান্বিত হন কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেন না তখন সবার এই জমানো , চাপা ক্ষোভ যেয়ে পড়ে রাস্তার ছিচকে চোর অথবা ছিনতাই কারীদের উপরে। গণপিটুনির মাধ্যমে তাদের চাপা ক্ষোভের উদগীরণ করেন তারা।
সাম্প্রতিককালে সেফুদা প্রসঙ্গটিও আপনি একইভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সরকারের বিরুদ্ধে যাদের আবেগটা মুখফুটে প্রকাশিত হয় না ,তারা নিজেদের অজান্তেই এই চাপা আবেগটার প্রকাশের জন্য হন্যে হয়ে উঠেন। সরকারের বিরুদ্ধে যখন সেফুদা ফেইসবুকে চ বর্গীয় গালি শুরু করে তারা তখন সেফুদার মাঝে নিজেকে খুঁজে পান। সেফুদা আসলে তাদের চাপা ক্ষোভের প্রতিকী বহিঃপ্রকাশ। সেফুদার শুধু অশ্লীল গালি দিয়ে জনপ্রিয় হওয়ার বিষয়টিতে অনেকে অবাক হলেও বিষয়টি আসলে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
চাপা আবেগের কদাকার প্রকাশ নিয়ে অনেক কথা হল । পরে আরেকদিন আরো কথা হবে।
চিন্তায় ফালাইয়া দিলা তো... :dreamy: :dreamy: ~x(
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য