গাধা জহির, মাস্তান রাজিব-১
জহির
ক্লাসের সবাই আমাকে গাধা বলে ডাকে। তা ডাকুক। আমার আপত্তি নেই।
ওরা আমাকে গাধা বলে মজা পায়। আর আমিও গাধামি করে ওদের আরেকটু মজা দিই।
এই যেমন সেদিন ক্লাসে অংক স্যার বললেন,‘গাধারা পানি ঘোলা করে খায় ?’
প্রশ্ন দেখা দিল পানি ঘোলা করলে সেটা কী রকম দাঁড়ায়। প্রশ্নটার উত্তর কেউ জানে না, আমার মাথায় কী এল আমি হুট করে বললাম, প্রস্রাবের মতো।
অংক স্যার হাততালি দিয়ে উঠলেন। ক্লাসের বাকি সবাইও। তাদের কাছে এটা গাধামির নিদর্শন। গাধা হিসেবে আমি আরো সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে তারা আরো খুশি।
অংক স্যার অংকটা একটু কম পারেন। বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠা, চৌবাচ্চার পানি খালি হয়ে যাওয়া এসব নিয়ে দিনরাত চিন্তা করতে করতে তার মাথায় ঘিলুও একটু কমে গিয়েছে বোধহয়। সেদিন হল কী স্যার চৌবাচ্চার পানির অংকটা করতে গিয়ে বললেন, এসব অংক করতে হয় এক্স-ওয়াই ধরে।
ফার্স্ট বয় ইমরান বলল, স্যার এক্স-ওয়াই তো ধরতে হয় বীজ গণিতে। এটা তো পাটিগণিত।
স্যার ধমকে উঠলেন, ফার্স্ট বয় হয়েছ তো কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি যে তোমার মতে সব করতে হবে। এই লিখো.. মনে করি প্রথম চৌবাচ্চাতে পানি আছে এক্স। দ্বিতীয় চৌবাচ্চাতে পানি হচ্ছে ওয়াই। এখন এক্স পানি ঢোকে এবং ওয়াই পানি বের হয়। কাজেই এক্স মাইনাস ওয়াই সমান….
এক্স মাইনাস ওয়াই সমান কিছু হয় না আমরা জানি, স্যার এতক্ষণে জানলেন। জেনে গেলেও স্যারের হাতে একটা অস্ত্র আছে।
স্যার বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে বললেন, বের কর। তারপর ঘোষণার স্বরে বললেন, এক্স মাইনাস ওয়াই সমান কী বের কর ?
শফিকের মধ্যে একটা সবজান্তা ভাব আছে। সে বলল, স্যার এক্স মাইনাস ওয়াই সমান জেড।
স্যার বললেন, কতজন মনে করো জেড। কে হাত তুলবে আর কে তুলবে না বুঝতে না পেরে সবাই থ মেরে বসে থাকে।
স্যার বলেন, কী কেউ পারিস না। না ! যে ক্লাসের ছাত্ররা এই সামান্য প্রশ্নের উত্তর জানে না সেই ক্লাসে আমি অংক করাব না। আমি রাগ করলাম।
রাগ করে স্যার খাতাপত্র বন্ধ করে ফেলেন। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। এক্স থেকে যে ওয়াইকে বিয়োগ করা যায় না, এবং জোর জবরদস্তি করলেও যে কাজ কিছু হয় না এটা তো আমরা সবাই জানি।
অংক ক্লাস শেষে ইংরেজি ক্লাস হওয়ার কথা, কিন্তু আজ ইংরেজি স্যার আসবেন না। তার মেয়ের শরীর খারাপ। তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে বলে তিনি ইতিমধ্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বেয়ারা মারফত। তবে সঙ্গে হুমকিও দিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই যেন ক্লাসে চুপচাপ বসে ‘আমি কী হতে চাই’ বিষয়ে একটা রচনা লিখে। স্যার কাল এসে দেখবেন। দেখেই তিনি বুঝে ফেলবেন কারা ক্লাসে বসে লিখেছে আর কারা ফাঁকিবাজি করে বাড়ি থেকে লিখে এনেছে। কাজেই সাবধান। হুঁশিয়ার।
স্যারের চেহারাটা ভেসে ওঠে। ইংরেজি স্যার বিশ্বাস করেন, আমরা যে কিছু পড়াশোনা করি তার একটাই কারণ। তাকে ভয় পাওয়া। তিনি যদি এভাবে বেত না ঘোরাতেন, তিনি যদি ক্লাসে এমন কঠের চেহারা নিয়ে বিরাজ না করতেন তাহলে আমি ভাত খাই এই সহজ ইংরেজিটাও আমাদের শেখা হত না। আর ইংরেজি না শিখলে ভাত খাওয়াও হত না।
ইংরেজি না শিখলে ভাত খাওয়া যাবে না কেন ? জানতে চেয়েছিল রাজিব।
স্যার কড়া চোখে তাকিয়ে বললেন, আজ কী দিয়ে খেয়েছিস ?
স্যার মাছ আর ভাত।
আমি মাছ-ভাত খেয়েছিÑএটা ইংরেজিতে বল।
রাজিব পেরে গেল।
স্যার খুব হতাশা বোধ করেন। ক্লাসে কেউ তার প্রশ্নের উত্তর একবারে পেরে যাওয়াটাকে তিনি ব্যর্থতা বোধ করেন। কেউ পারলে স্যার মনে করেন তার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেল। তাছাড়া পারলে প্রশংসা করতে হয়। ইংরেজি স্যার আর যাই করুন প্রশংসা করতে পারেন না।
যাই হোক চুপচাপ বসে রচনাটা লিখছি। দুয়েকটা লাইন ইচ্ছে করেই ভুল রাখছি। কারণ ভুল না পেলে স্যার ধরে নেবেন বাসা থেকে করে এনেছি। তাছাড়া নির্ভুল দেখলে তিনি খুশি হন না। হঠাৎ পেছন থেকে রাজিব বলল, এই তোর শেষ !
না। লিখছি।
এত কী লিখিস ?
এই তো !
রাজিবের লেখা শেষ। তাড়াতাড়ি হওয়াটাই স্বাভাবিক। ক্লাসে ফার্স্ট হয় না, স্যারের প্রশ্নের উত্তরে লাফিয়ে ওঠে বলে না, আমি পারি, কিন্তু আমি জানি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান ছেলের নাম রাজিব। ওর কত কাজ ! আর এসব কাজের ফাঁকে পড়াশোনার সময় বেরিয়ে যায় বলে সে খাতে খুব বেশি সময় দেয়া হয় না।
আরেকটা বিষয়ে রাজিবের একটু দুর্নাম আছে। খেলোয়াড় বলে, শরীর সুগঠিত বলে সে মাঝে মধ্যেই শক্তির একটু প্রয়োগ ঘটায়। এবং সেজন্য তার নাম মাস্তান রাজিব। অংক স্যারের দেয়া নাম। স্যার অবশ্য বলেন মস্তান। রাজিব হল মস্তান আর আমি হলাম গাধা। এবং আমাদের দুজনের মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্ব।
গাধা ছেলে বলে আমার সঙ্গে তেমন কেউ বন্ধুত্ব করতে চায় না, কিন্তু রাজিব নিজে থেকেই মেশে। অন্যদের গালমন্দ উপেক্ষা করে রাজিব যে আমার সঙ্গে এভাবে মেশে তার কারণটা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। ভেবে উত্তরটা বের করে ফেলেছি।
আমাদের মধ্যে একটা বড়ো মিল আছে। মিলটা হল রাজিবের মা আছেন বাবা নেই। আর আমি উল্টা। আমার বাবা আছেন, মা নেই। ক্লাসের ছেলেরা আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে ভেবে ভেবে শেষ পর্যন্ত একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। সিদ্ধান্তটা হল যাদের মা আছে কিন্তু বাবা নেই, তারা হয় রাজিবের মতো মাস্তান। আর আমাদের মতো যাদের বাবা আছে, কিন্তু মা নেই তারা হয় গাধা।
গাধা আর মাস্তানের এই বন্ধুত্ব নিয়ে যে যতই ঝামেলা করুক আমাদের বন্ধুত্ব টিকে আছে। ভালো মতোই টিকে আছে।
রাজিব বলল, টিফিন পিরিয়ডে আজ একটু মজা করব।
টিফিন পিরিয়ডে না আজ স্কুল ফুটবল টিমের প্র্যাকটিস।
আরে মজাটা তো সেখানেই।
তা মজা হল ভীষণ। জুনিয়র স্কুল টিম করা হবে, ক্লাস এইট পর্যন্ত ছেলেদের নিয়ে, তার প্রাথমিক বাছাই হবে আজ।
টিফিনের বেল বাজতেই দেখি আমাদের গেম টিচার আতিক স্যার তার বিখ্যাত লাল রঙের সর্টস পরে মাঠের মাঝখানে বুক ডন দিচ্ছেন। বুক ডন দেয়ার পর তিনি কিছুক্ষণ দৌড়ান। দৌড়ানোর পর বল নিয়ে কিছু কসরত। সেই কসরতে ছেলেরা সব হাততালি দিলে তবেই তিনি থামেন। কৃতী খেলোয়াড়দের মতো হাত উঁচিয়ে অভিনন্দনের জবাব দেন। তারপর খেলার প্রশ্ন।
আজ তিনি বুকডন দিচ্ছেন। এবং ফাঁকে ফাঁকে দেখছেন সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে কিনা ! রাজিব আমাকে ফিসফিস করে বলল,
একটা ছোটো কাজ করতে হবে তোকে ?
কী কাজ ?
তুই টিচার্স কমন রুমের বাথরুমটা দখল করে রাখবি ?
বাথরুম দখল করে রাখব মানে !
তেমন কিছু না। তুই ছিটকিনি আটকে ভেতরে থেকে যাবি।
কিন্তু কেন ?
সে পকেট থেকে কাগজে মোড়ানো একটা বোতল বের করে বলল, এটা স্যারের জন্য নিয়ে এসেছি। বুকডন শেষে স্যারকে এই শরবতটা ধরিয়ে দেয়া হবে। ওটা খেলে স্যারের বাথরুমে যেতেই হবে। সব মিলিয়ে মিনিট দশেক সময়। এই সময়টা তোকে বাথরুমের দরজা বন্ধ করে রাখতে হবে। এবং দেখলাম শফিকও এসে পাশে দাঁড়িয়েছে। শফিক আমাদের খুব যে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তা নয়। কিন্তু গোলমেলে কিছুর পরিকল্পনার কথা বললেই শফিক একবাক্যে রাজি। ঘটনা দিয়ে কাউকে বিপদে ফেলা সম্ভব এটা বোঝাতে পারলে তার জন্য শফিক নরকে যেতেও রাজি।
শফিকের মাথায় বুদ্ধি বিশেষ নেই, কিন্তু কেউ কোনো একটা বুদ্ধি বের করে দিলে শফিক ওটাকে দারুণভাবে কার্যকর করতে পারে। এবং এমনভাবে করে যে মনে হয় সবই তার করা। নেতৃত্বটাও তার হাতে চলে যায়। নেতাদের বোধহয় এমন হতে হয়। অন্যের বুদ্ধিকে নিজের বুদ্ধি বলে চালানোর ক্ষমতা থাকতে হয়। নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য শফিক আরেকটা কাজ করে। শুরুতেই সঙ্গী কেউ একজনকে ধমক দিয়ে দেয়, আরে ব্যাটা এভাবে হয় নাকি ! যত সব মূর্খের দল। বেশিরভাগ ধমকটা আমাকেই দেয়। আমাকে ধমক দেয়া যে খুব সোজা। এই ব্যাটা গাধাÑএটা তো আমাদের স্কুলে এখন চন্দ্র-সূর্যের মতো সত্য।
আমার এখনকার কাজ বাথরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা। স্যার যখন বাথরুমের দিকে রওনা হবেন তখন দৌড়ে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে বসে থাকব। ব্যস !
কী মনে করে হঠাৎ জানতে চাইলাম, আচ্ছা আতিক স্যারকে এমন শাস্তি দেয়া কেন ? স্যার তো…
শফিক বিপ্লবী নেতার মতো বলল, আরে এটা তো হল প্র্যাকটিস। হাত পাকানো। হাত পাকানোর জন্য আতিক স্যারের মতো গবেট লোকদের ধরতে হয়। তারপর আস্তে আস্তে হেডস্যার পর্যন্ত যাব। সবাইকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ব।
এসব উত্তেজনার দিনে শফিকের মনে থাকে না যে আমি গাধা জহির। কোনো গোলমাল ঘটানোর সুযোগ পেলে শফিক হিংসা-ক্ষোভ-রাগ এসবের উর্ধ্বে উঠে যায়।
বুকডন দেয়া শেষ হলে স্যার বল নিয়ে খানিকটা কসরত করলেন। কসরত বেশিরভাগই হয় না, কিন্তু হাততালি দিলে তবেই খেলা শুরু হবে বলে সবাই হাততালি দিতে শুরু করে। স্যার ধরে নেন, তার কৃতিত্বে হাততালি। এরকম ভুল হাততালিতে ভুলে তিনি মাঠের দিকে চলে আসছেন এসময়ই সামনে গিয়ে দাঁড়াল রাজিব।
স্যার আপনি কীভাবে এত চমৎকার বল কন্ট্রোল করেন। অদ্ভুত। শফিক এমনভাবে বলল যে এতদূর থেকে শুনেও আমার বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছে হল। আর স্যার তো গবেট প্রকৃতির।
হাসলেন। বললেন, আরে সাধনা। বুঝলে বলটা তো তোমাদের কাছে শুধু বল। আমার কাছে আরাধনার বস্তু। প্রার্থনার অনুষঙ্গ। নামাজের জায়নামাজ। স্যার এই শরবতটা খেয়ে ফেলেন। ভীষণ ঘেমে গেছেন।
স্যার হেসে বললেন, বাহ ! তোদের মতো ফুটবলের সমঝদার আছে বলেই না আমার কাছে কোনো পরিশ্রম পরিশ্রম মনে হয় না। দে দেখি। শরবতটা খেলে দমটা আরো কিছুক্ষণ থাকবে।
স্যার এক নিশ্বাসে শরবতটা খেয়ে গলার বাঁশিতে একটা গগনবিদারী আওয়াজ করলেন। হ্যাঁমিলনের বাঁশির মতো সুর। সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে গেছে।
স্যার দল ভাগ করছেন। করতে করতে হঠাৎ পেটে হাত দিয়ে বললেন, হ্যাঁ তোরা সব দুই ভাগ হয়ে যা। আমি একটু…
শফিক স্যারের পথ আটকাল, স্যার কোথায় যাচ্ছেন।
তোরা হাফ প্যান্ট পরে নে। আমি একটু…
স্যার আপনি গেলে চলবে কীভাবে ! আপনি ছাড়া কি কেউ আর শৃংখলা মানতে চায়।
তা ঠিক। ঠিক। কিন্তু আমি একটু…
বলেই স্যার একটা দৌড় দিলেন। পেটে হাত দিয়ে ভোঁ দৌড়। আমিও দৌড় দিলাম। দৌড় দিয়ে বাথরুমে ঢুকেই দরজাটা বন্ধ করে পানির কলটা ছেড়ে দিলাম।
স্যার দৌড়ে এসে দড়াম করে দরজায় একটা ধাক্কা দিলেন। এই কে রে ! কে ? বের হ।
আমি নিঃশব্দ।
এই কে ? বের হ। আমার অবস্থা। কী যে অবস্থা বাথরুমেও জায়গা নেই। এই স্কুলে খেলাধুলা হবে কী করে ! ফুটবল হতে হলে কত ফ্যাসিলিটিজ লাগে।
শফিক স্যারের পেছন পেছন বাথরুমে চলে এসেছে।
স্যার এনি প্রবলেম।
বাথরুমে যাব।
অবশ্যই যাবেন স্যার। কিন্তু বাথরুম তো বন্ধ।
বন্ধ হলে খোল বাব। আমি তো…. স্যার খুব সম্ভব পেটে হাত দিয়ে বসে পড়েন। এবং কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
শফিক বলে, স্যার আমার মনে হয় হেড স্যার ভেতরে। তার চেয়ে বরং আপনি হোস্টেলের দিকে…। চলেন স্যার !
বলে শফিক স্যারের হাত ধরে টান দেয়। এবং স্যার দৌড় শুরু করেন।
হোস্টেলটা বেশ দূরের পথ। মাঠের ওপর দিয়ে যেতে হয়।
স্যার দৌড়াচ্ছেন। পেছনে শফিক দৌড়াচ্ছে।
অবাক অন্যরা জানতে চায় খেলার বদলে স্যার দৌড়াচ্ছেন কেন ? শফিক জানানোর দায়িত্বটা নেয়। কোনো প্রশ্ন নয়। স্যারের টয়লেটে যেতে হবে। জরুরি চাপ। দেরি হলে….। স্যার দৌড় দেন।
অংক স্যার পুরো বিষয়টা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। তার সবসময়ই মনে হয় গেম টিচার আতিক স্যার নিতান্ত অযোগ্য একটা লোক। খেলার খ কিংবা ফুটবলের ফ কিছুই জানে না। কিন্তু পদাধিকার বলে আতিক স্যারের হাতে মাঠের সব ক্ষমতা থাকে বলে তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে আতিক স্যারের বিষোদগারের বেশি কিছু করতে পারেন না।
আজই তার সুযোগ। তিনি সবাইকে তার দিকে ঘুরিয়ে বলেন, অসুখ-বিসুখ যে কারো যে কোনো সময় হতে পারে। তা বলে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। আমাদের একেক দিনের প্র্যাকটিস একেক বছরের সমান। আর তিন দিন পর ম্যাচ। আসো। সবাই খেলতে আসো।
বলে তিনি প্যান্ট গুটিয়ে নেমে যান।
অংক স্যারকে ইংরেজি স্যার সবসময়ই তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। তার মনে হল এভাবে বসে অংক স্যারকে ওয়াক ওভার দেয়ার মানে হয় না। তাছাড়া ইংরেজি স্যারকে সেদিন অংক স্যার খানিকটা অপমানও করেছেন। খেলার মাঠেই বদলা নেয়ার সুযোগ মনে করে তিনি বলেন, হ্যাঁ এক দিকে অংক স্যার। আরেক দিকে আমি। আজ মাঠেই প্রমাণ হয়ে যাবে…
কী প্রমাণ হবে ? অংক স্যার জানতে চান।
খেলেই প্রমাণ হবে কে কেমন পারে ! আপনার তো আর ইংরেজি পরীক্ষা নেয়া যাবে না। ফুটবলের পরীক্ষা নেই।
কী আমার পরীক্ষা নেবেন ? অংক স্যার চিৎকার করে বলেন, আসুন। আমার পা থেকে বলটা কেড়ে নিন তো…
অংক স্যার বল নিয়ে দৌড় দেন। ইংরেজি স্যার পেছনে দৌড়ান।
বাকিরা কী করবে ঠিক ভেবে পাচ্ছিল না। কিন্তু শফিক ততক্ষণে চলে এসেছে। সে হাততালি দিয়ে বলল, আজই প্রমাণ হয়ে যাবে অংক না ইংরেজি কোনটা ভালো। যারা ইংরেজির পক্ষে তারা ইংরেজি স্যারের পক্ষে হাততালি দাও। যারা অংকের পক্ষে তারা এদিকে…
তুমুল হাততালি। দুজনের পক্ষেই প্রায় সমান সমর্থন। এখন আর পিছু হটা যায় না। ইংরেজি স্যারের প্যান্টটা একটু টাইট ছিল বলে দৌড়াতে গিয়ে তিনি পড়ে গেলেন। কিন্তু সমর্থক জুটে গেছে অনেক। তাদের মুখ রক্ষার জন্য তাকে উঠতে হল। শফিক আবার উস্কানি দিচ্ছে, স্যার ইংরেজির মর্যাদা আজ আপনার হাতে। স্বর্গ থেকে শেক্সপিয়ার আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে।
এমন উৎসাহ পেলে পাথরেরও ইচ্ছা হবে কিছু করে দেখানোর। আর তিনি তো জলজ্যান্ত মানুষ। কাজেই ভূ-পতন ভুলে, ব্যথার কথা শিকেয় তুলে তিনি নামলেন আবার।
খেলা দারুণ জমে উঠেছে।
আমার বাথরুম সংক্রান্ত ভূমিকা শেষ করে আমিও দর্শক। হঠাৎ টের পাই কাঁধে হাত। রাজিব।
বলল, এই মজা আজকের মতো এখানে শেষ। আর সরে যাওয়াও ভালো। একটু পর ঘটনা তদন্তে দেখা যাবে মূল দায় আমাদের। তখন…। তার চেয়ে চল।
কিন্তু কাল….
কালকেরটা কালকে। আজ তো বাঁচি। তাছাড়া এক জায়গায় যেতে হবে।
কোথায় ?
আমাদের বাসায়।
কেন ?
মা তোর সঙ্গে কথা বলতে চান।
কেন ?
জানি না। বলে রাজিব এমনভাবে চেয়ে থাকল যার মানে হল এরপর সে আর কিছু জানে না।
(চলবে…?)
এই এঙ্গেল থেকে যে ২য় পার্টটা পাবো চিনতাও করিনি ব্রাদার।
তবে জিনিয়াসরা এমন ই হয়। আচমকা সবাইকে অবাক করে দেয়। যতটুকু বুঝি লেখার এই ধারাটি বেশ কঠিন, কারন সম্পূর্ণ ২টা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখা!
যা হোক বস, এগিয়ে যান।
:party:
ভাইয়া, খুবই ভালো লাগছে আপনার এই ধারাবাহিক উপন্যাস। আগ্রহী হয়ে অপেক্ষা করছি আপনার পরের লেখাটার জন্য।
জহিরে এসে মজা আরো বেড়েছে। জোস.......
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
পরের টা কখন আসবে ... ~x( ~x(
খুব মজা লাগলো ভাইয়া.........
বস,
এক্কেবারে সিইরাম হইছে... :boss:
ভূলেও ভাবিনাই যে পরের পর্বটা এই এংগেলে হইতে পারে...
জিনিয়াস মানুষদের কাজ কারবারই আলাদা...
বস,মাথায় হাত দিয়া একটু আশীর্বাদ করেনতো যেন আপনার লেখনী ক্ষমতার একটু ছিটাফোটা এই গরীব বান্দার উপর একটু পরে...।