আত্মকথন,আত্মদহন :১

শুভাকাঙ্ক্ষী সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে।এককালে মনে হইত আমার শরীরে যতগুলা চুল আছে গুনে শেষ করা যাবে কিন্তু আমার শুভাকাঙ্ক্ষী গুনে শেষ করা যাবে না।তাল মেলাতে না পেরে পিছিয়ে পড়ছি,একলা হয়ে পড়ছি।
ক্যাডেট কলেজের আত্মার আত্মীয় বান্ধবকূলের সবাই কর্পোরেট, মিলিটারি ইত্যাদি হয়ে এখন প্রফেশনাল। কেউ কেউ বাড়ী গাড়ি ইত্যাদি নিয়ে প্ল্যান করা শুরু করেছে।আমি পেছনেই আছি,একাকীই আছি,এখনো ছাত্র।ব্যস্ত সবাই।ব্যস্ততাই নিয়ম।তবু ফাক ফোকর পেলেই ব্যস্ত ছেলেরা গেট টুগেদার পার্টি থ্রো করে।যেতে পারি না।খুব ইচ্ছে থাকে,কপাল থাকে না।টাইমিং হয় না এক্সামের সাথে(ভাবখানা এমন যেন আমিই সবচেয়ে ব্যস্ত)।রাজধানী বহির্ভূত হয়ে আরো অসুবিধা, দু একদিন সময় পেলে একটু হাফ ছেড়ে নিই,কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।ওরাও মন খারাপ করে,আমিও মন খারাপ করে বসে থাকি।
মেডিকেল কলেজের সুহৃদকূলের কথা বলি,ফেল্টুপার্টির কমরেডস সবাই সিরিয়াস এখন।এখানেও যথারীতি নিয়মের কোন ব্যত্যয় নেই,আমি একাই,পুরনো,ওল্ডস্কুল ফাঁকিবাজ।
পাশ করা মাত্রই দ্রুতগতি বিয়ের হাতছানি আছে কারো, যাদের ক্যাম্পাসেই অ্যাফেয়ার হইছে তাদের এস্পেশালি।এখন ফেল করা মানে গার্লফ্রেন্ডের সামনে মুখ দেখানো নিষিদ্ধ। পাশ করলে ৩ ইডিয়টের আমির খান আমির খান একটা ভাব চলে আসে, গার্লফ্রেন্ডরে বুক ফুলায়ে বলা যায় “দেখছ জানু দেখছ,থাকি সারাদিন ইডিয়টদের সাথে আবার পাশ ও ঠিকঠিক করি।বলদগুলার জন্য মায়াই লাগে।” আগে নিয়ম ভাঙাই ছিল ছেলেদের ফ্যাশন,এখন ‘জাতে মাতাল তালে ঠিক’ হওয়ার যুগ চলে আসছে।দেখায় একরকম, করে আরেকরকম। হাস্যকর। বলদগুলার জন্য মায়াই লাগে 😐
আরেকপার্টি হল মমিন্সিঞা লুকাল।তারা বাসায় থাকে।আগে একসাথে শুয়ে কত সিগারেট পুড়ালাম,গুজুরগুজুর করে রাত শেষ হয়ে গেল কত!এখন কালেভদ্রে রুমে আসে, খুব বিব্রত।কোন কথা খুঁজে পায় না।অস্বস্তিকর নীরবতার দুর্ভেদ্য দেয়াল পার হয়ে কোন অনুভূতি আনাগোনা করে না!উহারা বাসায় থাকে ,নানাবিধ কর্মকান্ডে কর্মব্যস্ত থাকতে হয় সারাদিন।একটু ফুরসুৎ পেলে সহযোদ্ধা সিরিয়াসদের সংসর্গে কয়েকঘন্টা কাটায়ে আসলে মনটা ফুরফুরা লাগে!তাই পুরনো কাসুন্দি ঘাটার সময় কোথা?জ্ঞানীরা বলেছেন অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ!!!
আলগোছে চুপিচুপি কতজনের ‘সহযোদ্ধা ‘ লিস্ট থেকে যে ঝরে পরেছি!!!! আফসোস!!!
প্রতিটি নি:সঙ্গ মুহূর্তই পীড়াদায়ক। তাই প্রতিমুহূর্ত একাকীত্ব থেকে পালিয়ে থাকার প্রয়োজনে নিরন্তর ব্যস্ততার আশ্রয় খুঁজি। আমার খোঁজাখুঁজিতে যাতে ডিস্টার্ব না হয় তাই বোধহয় শুভাকাঙ্ক্ষীকূল আমাকে প্রয়োজনীয় স্পেস দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে গেছে! অথচ নির্বোধ আমি তাদের ভুল বুঝে নির্লজ্জ অভিযোগ করে যাচ্ছি! প্যাথেটিক!!!!

৮৪৫ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “আত্মকথন,আত্মদহন :১”

মওন্তব্য করুন : মামুনুর রশীদ খান(২০০১—২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।