বিক্রির জন্য

অবশেষে রব মিয়া বাজারে একটা ভাল জায়গা খুঁজে পেলেন।নিজের  কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে ভিতরে তাকিয়ে দেখলেন, না কাগজ দুইটা ঠিক আছে।কাগজ দুইটা হাতে নিতেই তার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।
“কাজটা কি ভাল হচ্ছে?” নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলেন।
হঠাৎ করে অতীত তার মনে উজ্জ্বল হয়ে উঠল………………….
কলেজ থেকে বের হয়েই গ্রামের স্কুলে শিক্ষক হয়ে গেল গ্রামের তাগড়া জোয়ান রব।বাবার ইচ্ছায় বিয়েও করলেন গ্রামের মেয়ে সোহাগীকে।
চোখে অনেক স্বপ্ন………….
ছোট্ট একটি পরিবার হবে….
অনেক স্বপ্ন বাঁধা শুরু হয়।
কিন্তু প্রচণ্ড শব্দে স্বপ্নিল ঘুম ভেঙে যায়।
বুলেটের শব্দ….কান্নার শব্দ…..হায়েনার হাসির শব্দ।
নব্য বিবাহিতা স্ত্রীকে সীমানার ওপারে পাঠিয়ে দিয়ে রব ছুটে যায় আবার নতুন স্বপ্নের আয়োজন করতে।
অবশেষে আবার স্বপ্ন দেখার সময় আসে।
ঝড়ের পর পাখি আবার নীড় বাঁধে।
ভালই চলছিল দিনকাল।
পাখির নীড়ে নতুন ছানা আসে।নাম রেখেছিলেন বিজয়।
কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এই অখ্যাত গ্রামের স্কুলে সরকারী সাহায্য পাওয়া যাবে না বলে  স্কুলটি একদিন বন্ধ করে দিল এক সরকারী কর্মকর্তা।আসলে সাহায্যটা বেচারা কর্মকর্তার পকেটের জন্য আসত কিনা।
ঘাবড়ালেন না রব মিয়া।আশা করেছিলেন শহরে কোন চাকরি পেয়ে যাবেন।
কিন্তু কেও চাকরি দিল না।
“মুক্তিযোদ্ধা, দেশ স্বাধীন করেছেন, বেশ ভাল কথা, এখন আমাকে কিছু বকশিশ দিন, আমিও চাকরিটা আপনার জন্য স্বাধীন করে দেই।”
রব মিয়া নিজের বিবেকের কাছে হার মানলেন। চাকরী তিনি নিলেন না।
গ্রামে ফিরে এসে দোকান খুলে বসলেন।দেশকে স্বাধীন করতে পারলেও নিজে আর কোন দিন  দারিদ্র্য থেকে স্বাধীন হতে পারলেন না।
ছেলেকে বেশিদূর পড়ালেখা করাতে পারলেন না।
বিজয় বড় হল।
শুনলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সরকার সহজে চাকরি দিচ্ছে।আশা বাঁধলেন,এবার তিনি  দারিদ্র্য থেকে স্বাধীন হবেন।
কিন্তু মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে না পারায় ছেলের চাকরি হল না।
হতাশ হয়ে ছেলে নেশা করা শুরু করল।
অতিরিক্ত নেশার জন্য ছেলের লিভার প্রায় শেষ হয়ে আসল।
চিকিৎসার টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরলেন।কিন্তু তার ছেলে যে নেশার টাকা জোগানোর জন্য বিপথে পা বাড়িয়েছিল।
সন্ত্রাসীর চিকিৎসার জন্য কেই বা সাহায্য করবে?
অবশেষে ঘরবাড়ি সব বিক্রি করলেন।শুধু রাখলেন নিজের মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটটা।
কিন্তু তাও হয় না।কিন্তু এখন উপায়?
উপায়টা বাতলে দিলেন তার বাল্যকালের বন্ধু রহিম।
“আরে মিয়া তুমি তো এই কাগজ দিয়া কিছুই করতে পারলা না, তার চেয়ে বরং এইডা কার কাছে বেইচা দেও,সে না হয় বাঁচল,তুমিও বাঁচলা।”
না, না, হাজার হোক তা রাব মিয়া কিছুতেই করবেন না।
অবশেষে তার ভালবাসার সোহাগিও একই কথা বললো।
“পোলাটারে বাঁচাইবা না?”
হ্যাঁ,তিনি বিজয়কে বাঁচাবেন, অবশ্যই বাঁচাবেন……
অবশেষে বাস্তবতায় ফিরে এলেন রব মিয়া।কাগজ দুটোর দিকে আরো একবার তাকিয়ে তিনি দুটো গলায় ঝুলালেন।
একটি ছিল তার সার্টিফিকেট।
আর অপরটিতে লেখা ছিল,”বিক্রির জন্য।”

১,২৪৮ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “বিক্রির জন্য”

  1. রকিব (০১-০৭)

    শিরোনামে "বিক্রী" বানানটা বদলে "বিক্রি" করে দাও।
    গল্পের শুরুটা ভালো ছিল, কিন্তু কেন যেন মাঝামাঝিতে এসে একটু হালকা হয়ে গিয়েছে! চালিয়ে যাও মিয়া!


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
      • রকিব (০১-০৭)

        দোস্ত ভুল ধরলে আমরা সবাই কিছু না কিছু নতুন জিনিস শিখতে পারবো। আমার অভিমতে, একটা লেখায় যে শব্দগুলো থাকে তা আসলে ঐ লেখার অঙ্গ। আর বানান ভুলের কারণে অনেক সময় দারুণ সব গল্প, কবিতা, প্রবন্ধও মাঝে মাঝে মনোযোগের বিচ্যুতি ঘটায়, লেখাটাকে অনেকটাই যেন বিকলাঙ্গ করে ফেলে। আর এজন্যই আমরা সবাই যদি বানান-শুদ্ধিতে সাহায্য করি তবে একটা পর্যায়ে কারোই আর তেমন বানান ভুল হবে না। এজন্যই মাঝে মাঝে এভাবে বলি। আশা করি, এতে কেউ কষ্ট পান না। এমন না যে আমি বানান ভুল করি না, প্রতিনিয়তই শিখছি আমি, আমরা সবাই। আর শেখার জন্য আমার কাছে আপাতত সিসিবিই মুখ্য ভূমিকা পালন করতেছে দোস্ত।


        আমি তবু বলি:
        এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

        জবাব দিন
  2. আরে মিয়া তুমিদেহি, আমার জীবনের গল্প বলে দিলা। বাস্তবতা ঠিক তাই।
    তবে আমি একটু ভিন্ন। বাবাকে বলে দিয়েছি, তোমার মুক্তিযোদ্ধের সার্টিফিকেট তোমারই থাক্‌। আমার জন্য আর দরকার নেই। আমি আমার যোগ্যতায় যতটুকু পারব ঠিক ততটুকুই চাই।

    জবাব দিন
  3. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    বিষয় নির্বাচনটা খুব ভালো হয়েছে। খুব সুন্দর করেই শুরু হয়েছে গল্পটা। তারপরে এসে তাড়াহুড়াজনিত কারণে একটু দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে। যা হোক লেখালেখি চলুক।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মামুন (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।