বহুদিন পর

অনেকদিন অনুপস্থিত ছিলাম সিসিবি থেকে। তাই ফিরে আসাটা উদ্‌যাপন করার জন্য একটা পোস্ট দিচ্ছি। এপ্রিলের ২১ তারিখ থেকে মে মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত সিসিবিতে আসি নি। কারণটা খুবই সাধারণ। এই কারণে খুব কম মানুষই সিসিবি থেকে অনুপস্থিত থাকে। কারণ আর কিছুই না, আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। মাস্ফু ভাই তার বিসিএস পরীক্ষা থাকার পরও সিসিবিতে ছিলেন। আইইউটির পোলাপাইনতো পরীক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সবসময়ই সিসিবিতে থাকে। তাহলে আমি কেন ছিলাম না সেই প্রশ্নর উত্তরটা খুবই সাধারণ। তা হলো, এই বছরে আমি কিছুই পড়াশুনা করি নি। পড়ব পড়ব করে সময় কাটিয়ে হঠাৎ টের পেলাম এপ্রিলের ২১ তারিখ চলে এসেছে। আর আমার পরীক্ষা শুরু মে মাসের ১২ তারিখ থেকে। এক বছরের সিলেবাস ২০ দিনে শেষ করা যে কি পেইনের কাজ তা মনে হয় কাউকে বলে দিতে হবে না। রাত দিন পাগলের মত পড়ে দেখি আমার সিলেবাস মাত্র অর্ধেক শেষ হয়েছে। কি আর করা এই অবস্থাতেই পরীক্ষায় অংশ নিলাম। কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়। আমার বেলায়ও ঠিক একই কাহিনী ঘটল। ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন মনে হয় তাদের কঠিন প্রশ্ন ছাড়ার জন্য ঠিক এই সুযোগেরই প্রত্যাশা ছিল। আমি আর কি করব, পরেছি মুঘলের সাথে খানা খেতে হবে সাথে। যা জানি তা দিয়েই বানিয়ে বানিয়ে উত্তর লিখে দিয়ে আসলাম। সত্যি বলতে এত কম পড়ার কারণেই বোধহয় আমার নিজের মনে হচ্ছে পরীক্ষা ততটা খারাপ হয় নি। পরীক্ষা শেষ হল ২২ তারিখ, কিন্তু তবুও পুরোপুরি কর্মহীন হতে পারিনি। আমার ছাত্রদের পরীক্ষা এখনও শেষ হয় নি। ওরা সবাই অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র। তাই পরীক্ষার পরও ওদের পড়া দেখাতে যেতে হচ্ছে এখনও। আজ একটু ছুটি পেলাম। তাই আমার সিরিজের পরের পর্ব দেয়ার আগে একটু নিজে কোথায় ছিলাম সেটা লিখতে বসার সময় পেয়েছি। আর গল্প প্রসবে আমার যে বেদনা হয় তা পোহানোর আগে একটু ব্লগর ব্লগর করতে ইচ্ছা করল।

এর মধ্যে আমার জীবনে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। ব্লগের অনেকেই হয়ত জানে, আমার পরবর্তী কোর্স, BVC করার জন্য আমাকে IELTS এ ৭.৫ পেতে হবে। গড়ে ৭.৫ পেলেই হবে না, সব সেকশনে ৭.৫ কমপক্ষে থাকা লাগবে। এই অসাধ্য সাধনের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা দিয়েছিলাম ১৮ এপ্রিলে। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। গড়ে ৭.৫ পেলেও রাইটিং এ ৬.৫ পেয়ে বসে আছি। ফলাফল স্বরূপ আমাকে আবার IELTS দিতে হবে। “বাবার টাকার শ্রাদ্ধ করার জন্যই মনে হয় জন্ম হয়েছে আমার”, এই ধরনের একটা বোঁধ ইদানীং খুব কাজ করছে আমার ভিতরে। কিন্তু IELTS তো আমাকে দিতে হবেই। তাই এবার আরেকটু বেশি চেষ্টা করব। আশা রাখি হয়ে যাবে। যে অজানা ভয়টা ছিল IELTS সম্পর্কে তা কেটে গেছে প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে, এই যা ভরসা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে ৬.৫ থেকে এক লাফে ৭.৫ রাইটিং এ পেয়ে যাব এমন ধারণা কেন করছি? কারণ আছে, খুবই যুক্তিযুক্ত কারণ। আমার এক বন্ধু বলে, ‘ভোদাই তো কারো গায়ে লেখা থাকে না, কাজ কর্ম দেখলেই বোঝা যায়’। আমার কাজ কর্মের কথা শুনলেই বুঝবেন আমি কে ৬.৫ পেয়েছিলাম এবং কেনই বা পরের বার ৭.৫ পাবো বলে বিশ্বাস করছি আর কেনই বা আমাকে ভোদাই বলা হয়। যেহেতু আগে কখনও IELTS দেই নি এবং কোচিংও করি নি তাই রাইটিং দেয়ার অভ্যাস আমার ছিল না। আজন্ম মানবিক বিভাগে পড়াশুনা করার ফলশ্রুতিতে মনের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ধুঁকে গেছে যে লেখার পরীক্ষা থাকলেই গায়ের জোড়ে লেখা শুরু করে দিতে হয় এবং সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত টানা লিখে যেতে হয়। তাই রাইটিং এর সময় শুরু হওয়া মাত্রই আমি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে লেখা শুরু করলাম। রাইটিং এ সর্বনিম্ন ১ম টাস্কে ১৫০ আর ২য় টাস্কে ২৫০ শব্দ লেখার নিয়ম। আমি ১ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৫০ মিনিট লেখার পর হঠাৎ চিন্তা করলাম লেখা আর সময় দুইই তো প্রায় শেষ তাই শব্দ একটু গুনে দেখি। শব্দ গুনে আমার মাথা খারাপ হবার উপক্রম হল। আমি ১০০০ শব্দের বেশি লিখে ফেলেছি। আমি মুখ কালো করে বসে থাকলাম। মাত্র এক বাক্যে আমার ২য় টাস্কের উপসংহার টানার চেষ্টা করলাম। পরীক্ষার পরে এক ইনভিজিলেটরের সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে এত বেশি লেখায় কোন ক্ষতি হবে কিনা। উনি উত্তর দিলেন ৫.৫ এর বেশি পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বেশি লিখলে নাকি নম্বর কাটে। এরকম একটা কাজের পর মানুষ আমাকে ভোদাই বললে আমার কি কিছুই বলার থাকে? আর এমন একটা পরীক্ষার পরও ৬.৫ পেলে কি পরের বার ঠিকভাবে লিখলে ৭.৫ পাবো এই আশা করা ভুল হয়? রাইটিং এর নম্বরতো বললাম। রিডিং এ ৮, লিসেনিং এ ৮ আর স্পিকিং এ ৭.৫ পেয়েছি। তাই আশা রাখি পরের বার সবগুলিতেই কমপক্ষে ৭.৫ হবে।

২,৪৭১ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “বহুদিন পর”

  1. উয়েল্কাম ব্যাক।
    তোর অবর্তমানে আমি একজন বন্ধু পাঠক হারিয়েছি। নিশ্চিত কিছু কমেন্ট হারিয়েছি।
    এবং আমি একাই আরসিসি'র হয়ে লড়ে চলেছি পোস্ট দিয়ে,
    😀 😀

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    শার্লী , তুমি এই ব্লগে আমার প্রিয় ব্লগারদের একজন। আমি অবশ্য অত রেগুলার না তাই অল্প কিছু লেখা খুঁজে পড়ি আর প্রথম পেজ।
    যা হোক এই পোস্ট টা আমার জন্য খুব দরকার হবে।
    কারণ রাইটিং এ ৫.৫ কেন পাইছি এখন বুঝতেসি। 🙂 🙂 🙂

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    :awesome: :awesome: শেষ পর্যন্ত খোজ পাইলাম আপনার?? কেমন আছেন? পরেরবার ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে ভাইয়া। :thumbup: :thumbup:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. তুই তো মাত্র ২০ দিন পড়ছেস আর আমরা যে গত মাস এর ১৮/১৯ থেকে এই মাস এর ১৭ তারিখ পর্যন্ত যে কেমনে ছিলাম , সেই টা আল্লাহ মাবূদ ভাল জানেন।
    :boss:

    জবাব দিন
  5. রাশেদ (৯৯-০৫)

    ব্লগে তোকে দেখে মিজা পাইলাম 😀
    জাহিদের কাছে তোড় আইএল্টিসের কাহিনি আগেই শুনছি। মন খারাপ করিস না এরপরের বার তো হবেই :clap:
    এরপর তো তুইও তাইলে বৈদাশি হয়ে যাবি 😛


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  6. মিথ্যুক শার্লী ফেসবুকে লিখছে ওর প্রিয় দেশ বিডি। কিন্তু যাইতাছে ইংল্যাণ্ড এক্কেরে বোচকা গুটাইয়া...
    😡 😡

    তোর ব্যাক হওয়ার নমুনা দেইক্কা কষ্ট পাইলাম দোস...
    এই তোর ফ্রেন্ড ব্যাক???
    :no: :no:

    জবাব দিন
  7. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    শার্লি রে, তাড়াতাড়ি ব্যারিস্টার হ বাপ,তোর যাস্ট হবু ভাবীরে নিয়া আমার বাসায় গন্ডগোল হইবার সমূহ সম্ভাবনা-একজন উকিল পাশে থাকলে বড়ই সাহস পাই... 🙁

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।