একজন আদর্শ ছাত্রের দিনলিপি

কিছু একটা লেখার জন্য হাত নিশপিশ করতেছে অনেকক্ষণ ধরে। কারণ কিছুই না। পরশু থেকে মিডটার্ম পরীক্ষা। আর পরীক্ষা আসলেই পড়াশুনা ছাড়া দুনিয়ার সকল কিছু আমার দুই মিনিটের মধ্যে করে ফেলতে ইচ্ছে করে। তাই ভাব্লাম একটা ব্লগ লিখে ফেলি। দুই মিনিটের বদলে দুই ঘন্টা ধরেই না হয় লিখলাম। ক্ষতি কি। আম্রাআম্রাই তো ;;;

মিনি সাইজের কয়েকটা ঘটনা বলি।

কে.কে স্যার ইলেক্ট্রিক্যালের পোলাপানের ক্লাস নিচ্ছে। সামনে মিড পরীক্ষা দেখে স্যার সিলেবাস বলে দিচ্ছিলেন সম্ভবত। কোন কোন অংকগুলা ইম্পোর্ট্যান্ট, কোনটা আসলে ক্যামনে কি করতে হবে এইসব হাবিজাবি। তো স্যার প্রব্লেম কোন কোনটা ইম্পোর্ট্যান্ট সেটা বলতেসেন এইভাবে- “তোমরা এই প্রব্লেমগুলা দেখবা। যেমন প্রবলেম নাম্বার অমুক, প্রব্লেম নাম্বার তমুক, প্রব্লেম নাম্বার…. ” ব্লা ব্লা ব্লা…
একেবারে পিছনের সারিতে বসে একমনে মোবাইলে গেমস খেলতেসিল জামী। স্যার অংকের নাম্বার বলতে বলতে একসময় বললেন – “প্রব্লেম নাম্বার থার্টি ওয়ান।”

পেছন থেকে কিছু না বুঝেই জামী হঠাৎ হাত তুলে বলে ফেললো -” ইয়েস স্যার! ”

কারণ কিছুইনা। ও ভাবসিল স্যার বোধহয় আবার রোলকল করতেসে । আর জামীর রোল নাম্বার হলো থার্টি ওয়ান। :gulli2:

……………

দুনিয়াতে ফ্লুইড মেকানিক্স বলে একটা সাবজেক্ট আছে। দুর্ভাগ্যবশত সেই সাবজেক্টটা আমাকে নিতান্ত অনিচ্ছাতেও পড়তে হয়। আর মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে এই সেমিস্টারে যে দুইদিন ফ্লুইড মেকানিক্স ক্লাস হয় দুইটারই টাইম পড়সে সকালে।আমার অভ্যাস হচ্ছে রাতে জাগি, দিনে ঘুমাই। কাজেই সকাল আটটা পঞ্চাশে উঠে ক্লাসে যাওয়ার মত দুর্লভ সৌভাগ্য আমার এই সেমিস্টারে তাই খুব বেশি দিনের জন্য হয়নাই। আজকে সকালেও নয়টা চল্লিশে ক্লাস ছিল। কিভাবে কিভাবে যেন আগে উঠে গেলাম। তড়িঘড়ি করে কোনমতে উঠে ভাব্লাম এই সুযোগে স্যাররে এক্টু চেহারাটা দেখায়াই আসি। ক্লাসে গিয়ে দেখি মাত্র দুই একজন আসছে। আমি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেল্লাম। যাক্ , একদিনের জন্য হলেও এটেন্ডেন্সটা ঠিকঠাক দেয়া যাবে। সামনে বসা রুবেশ কে বল্লাম, দোস্ত,আজকে তো আগে চলে আসলাম 😀 রুবেশ বলে – কিসের আগে? – এই যে, ফ্ুইড স্যারের আগে। রুবেশ বলে – এইগুলা কি কস্ । স্যার তো ক্লাস করায়া মাত্র চলে গেল।

পরে খেয়াল করে দেখলাম আমার ঘড়ির ব্যাটারি ডাউন হয়ে সাড়ে নয়টায় এসে থেমে আছে। ~x(

……………

আমার আবার একটা অভ্যাস আছে। কোন কাজই একা করতে পারিনা। করলে কয়েকজন সাথে নিয়ে করি। এই যেমন যখন খাইতে নামি পাঁচতলা থেকে তখন ব্লকের পোলাপানের সাথে একসঙ্গে নামি। ক্যুইজের আগে একা না পড়ে বাকি দুই রুমমেটের সাথে শেয়ার করে পড়ি।যখন কাম্রুল ভাইয়ের বাসায় যাই তখনো একা না গিয়ে কয়েকজন একসাথে যাই।মাঝেমাঝে ঠিক একই ভাবে যখন ঘুমাই তখনও একসাথে ঘুমাই।ঘুমের কাহিনী বোধহয় ক্লিয়ার হইলোনা। :-S বলতেসি…

আমাদের তো ক্লাসটেস্ট, রিপোর্ট, এসাইনমেন্ট এগুলা লেগেই আছে।কিন্তু ছাত্রজীবন তো বহু আগেই পার করে আসছি। নিয়মিত পড়াশুনা এখন তাই আর হয়না। নিতান্ত অনিচ্ছায় পরীক্ষার আগের দিন বই নিয়ে বসি।আর কয়েক সপ্তাহের পড়া এক রাতে পড়তে গেলে যা হয়- রাত শেষ হয়ে যায় মাগার সিলেবাস আর শেষ হয়না। আমার রুমমেট সামীর আবার একটু বেশিই ঘুম বিলাসী। সে ঘুমায় আগে আগে, কিন্তু জাগে সবার পরে।স্বপ্নীল আবার আমার চেয়েও পরে ঘুমাতে যায় পরীক্ষার সময় গুলাতে।আর আমার এমনি নর্মাল সময়ে ঘুম আসেনা। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাত গুলাতে যেন কি হইতে কি হইয়া যায়।বই সামনে নিয়ে বসার আগেই ঘুমে চোখ ঢুলতে থাকে। আমি বরাবরই নরম মনের মানুষ। শরীরের ওপর বেশি কষ্ট না দিয়ে তাই পরীক্ষার আগের রাতগুলাতে সিলেবাস শেষ হবার আগেই ঘুমায় যাই।কাজেই বেশ কয়েকবার দেখা গেল যে পরীক্ষার আগের রাতে অত্যধিক পড়ার ক্লান্তিজনিত কারণে আমরা তিনজনই মরার মত ঘুমাইতেসি। এই বেশ কয়েকবারের মধ্যেও আবার বেশ কয়েকবার দেখা গেল অন্য দুইজন ঘুমিয়ে থাকলেও আমি টাইমলি জেগে উঠসি। কিন্তু মায়া জনীত কারণেই হোক কিংবা অনিচ্ছাজনীত কারণেই হোক আমি আর ওদের ডাকিনা । আহারে বেচারারা। সারারাত পড়সে। এখন শুধু শুধু আবার ডেকে তোলা কেন। এই ভেবে আবার ঘুমায় গেসি। ফলাফল: আমাদের তিনজনেরই পরীক্ষা মিস।

আর একেই বলে একসাথে ঘুমানো। :party:

…………….

গত পরশুর কথা। জোকো স্যারের ক্লাস।বেশ দেরিতেই। সাড়ে দশটায়। স্যার ক্লাসে এসে এটেন্ডেন্স নিচ্ছেন। নিতে নিতে রোল নাম্বার টুয়েন্টি থ্রি পর্যন্ত আসলেন।

রোল নাম্বার টুয়েন্টি থ্রি – এবসেন্ট।
টুয়েন্টি ফোর – ইয়েস স্যার!
এরপর টুয়েন্টি ফাইভ…
টুয়েন্টি সিক্স..
টুয়েন্টি সেভেন…
টুয়েন্টি এইট…
টুয়েন্টি নাইন…

এদের কেউই ক্লাসে নাই। স্যার এই পর্যায়ে এটেন্ডেন্স নেয়া বাদ দিলেন। তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে উপস্থিত পোলাপানের উদ্দেশ্যে “ভায়েরা আমার” টাইপের জ্বালাময়ী ছবক দেয়া শুরু করলেন। বেশ কয়েক মিনিট চলার পর স্যার এবার থামলেন। তারপর আবার শুরু হলোএটেন্ডেস নেয়া ।

রোল নাম্বার থার্টি ওয়ান! …..

স্যার এবার বাকরুদ্ধ। থার্টি ওয়ানও নাই।
থাকবো ক্যামনে । আমি তো তখন আমার দুই রুমমেটরে নিয়া মহা আরামে রুমে ঘুমাইতেসি। :awesome:

২,২০৬ বার দেখা হয়েছে

৩৬ টি মন্তব্য : “একজন আদর্শ ছাত্রের দিনলিপি”

মওন্তব্য করুন : মহিব (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।