ক্লাস সেভেনের প্রথম সাতদিনের দ্বিতীয় দিনের কথা।বারবার শপে চুলগুলা স্বত্ব ত্যাগ করে দান করা শেষে সবেমাত্র হাউসে এসেছি।গোসল করতে বাথরুমে যাবো।গত রাতে গাইডের কাছ থেকে শেখা বাথরুমে নেক্সট নেবার নিয়ম গুলা মনে মনে আউড়ে নিলাম।প্রথমে বাথরুম এর দরজায় নক করতে হবে।ভেতর থেকে উত্তর আসবে-ইয়েস।তারপর আমি বলবো-কাইন্ডলি আপনার নেক্সট? কেউ নেক্সট থাকলে ভেতরের জন তার নাম বলবে।আর না থাকলে বলবে নাই।তখন আমাকে গদগদ কন্ঠে নিজের নামটা বলতে হবে-কাইন্ডলি আপনার নেক্সট অমুক।কয়েকবার রিভিশন দেবার পর যখন বুঝলাম মুখস্ত খারাপ হয়নি তখন আল্লাহর নাম নিয়ে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালাম।ফার্স্ট বাথরুমে মৃদু নক করলাম।নিয়ম অনুযায়ী ভেতর থেকে ইয়েস বলার কথা।কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নাই।ভাবলাম ভিতরের ভাইজান মনে হয় একটু বেশি বিজি।কিছুক্ষণ পরে আবারো নক করলাম,এবার একটু জোরে।এবারো অল কোয়ায়েট অন দ্যা ওয়েস্টার্ণ ফ্রন্ট। এই অবস্থায় পড়লে কি করতে হবে সেই ব্যাপারে গাইড ভাইজান কিছু শিখান নাই।আমি ভাবি ক্যামনে কি?কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।আর থার্ড টাইম নক করার প্রিপারেশন নিচ্ছি।নক করতে যাবো হঠাৎ বাথরুমের দরজা খুলে একজন উঁকি দিল।সব কিছু ভুলে গিয়ে আমি তাকে দেখতেসি।টাওয়েলটা কোনমতে কোমরে পেঁচানো।সারা গা থেকে পানি ঝরছে।শাওয়ারটা তখনো ছেড়ে দেয়া।আমি ঘাবড়ে গেলাম বড় সড় টাইপের এই সিনিয়রকে দেখে।নিশ্চিতভাবেই আমার নেক্সট নেবার সিস্টেমে কোন গোলমাল হইসে।যার জন্য তিনি জ্বালা সইতে না পেরে এমন অবস্থাতেই দরজা খুলে বের হয়ে আসছেন।মনে মনে ঢোক গিলে কিছু একটা বলার জন্যে প্রস্তুতি নিতেসি।তার আগেই আমাকে উনি জিগাইলেন
– “ভাই কি কিছু বলবেন??”
মনের কথা মনেই থাকলো।মুখফুটে আর বলা হইলোনা।বুঝতে বাকি রইলোনা এই “ভাইজানের” গাইড এখনো বাথরুমের নিয়ম কানুন কিছু শিখান নাই।
মোরাল অব দ্য স্টোরিঃ চেহারা সব সময় সঠিক কথা বলেনা।
………
কয়দিন পরের কথা।তিনদিন ধরে উৎকট এক দুর্গন্ধের চোটে হাউসের নীচতলার করিডোর ধরে হাঁটা দায়।সবাই অতীষ্ট হয়ে গন্ধের খোঁজে সাড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিল।নেতৃত্বে আমাদের পাশের বক্স রুমের ক্লাস টুয়েলভ এর তিনজন।শেষ মেষ গন্ধ রহস্যের সমাধান পাওয়া গেল আমাদের এক ক্লাসমেটের বেড এর তলায়।কাহিনী খুবই সিম্পল।ওর বিছানার তলায় একটা বালতি।বালতিতে কিছু ময়লা কাপড়।আর সেগুলো তিনদিন ধরে না ধোয়া অবস্থায় সার্ফ এক্সেলে চুবানো।অপরাধ বিচার বিশ্লেষণ করে ক্লাস টুয়েলভ ফতোয়া দিলো নেক্সট টাইম এহেন অসামাজিক(!) কাজ করলে তাকে বালতি সমেত একাডেমি ব্লকের টয়লেটে পাঠিয়ে দেয়া হবে কাপড় ধোয়ার জন্য।
কলেজে আসার পর পরই এই ক্লাসমেটটা একবার হইচই ফেলে দিয়েছিল।কারণ তিনি ট্যাবলেট গিলে খেতে পারতেন না,গুড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হতো।এইবার হইচই ফেললেন গন্ধ উৎপাদন করে।টিজিং এর চোটে শেষপর্যন্ত উনার ট্যাবলেট গেলা শেখা হয়েছিল।এবারও একই কায়াদায় কাপড় কাঁচার টাইমিং সংক্রান্ত বেসিক শেখানো হলো-“সময়ের কাপড় সময়ে ধোয়া ভালো,তা যদি হয় সার্ফ এক্সেলে চুবানো।”
মোরাল অব দ্য স্টোরিঃ “দাগ নেই তো শেখাও নেই ”
………
খুব সম্ভবত ক্লাস টেনের কথা।দোতলায় থাকি।আমরা ছাড়া ইমিডিয়েট আর অল্টারনেট জুনিয়ররাও দোতলায় থাকে।একদিন থার্ড প্রেপের পরের কাহিনী।”সেইরকম” গন্ধে হাউসের আকাশ বাতাস তোলপাড়।গন্ধের উৎস জুনিয়র ব্লকের সেকেন্ড টয়লেট।আমরাও একটু নড়েচড়ে দাঁড়াই।টীজ করার এরকম চান্স লাখে একবার মেলে।সবাই ফিসফাস করছি উৎসদাতা কে হতে পারে।সাব্বির হতদন্ত হয়ে এসে বললো-এইটা আমাদের ক্লাসমেট অমুক,আমি ঢোকার টাইমে দেখসি।একেবারে শিউর।সাব্বির এর ঘাড় নাড়ানি ভংগি দেখে আমরাও ২০০% কনভিন্সড।অমুকে না হয়েই যায়না।এইবার তাকে বাথরুম পরবর্তী অভ্যর্থনা দেয়ার পালা।ঠিক হলো সবাই বাথরুমের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।আর কিছু করার দরকার নেই।টয়লেট থেকে বের হয়ে এতগুলা মানুষের গার্ড অব অনার পাওয়াই যথেষ্ট।সবাই উৎকন্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি,কখন বের হয়।একসময় সেই অতি আকাংখিত শব্দ ধারা শোনা গেল।কমোডের ফ্লাশ টানার আওয়াজ।বত্রিশ দাঁতের নিঃশব্দ হাসিতে ফেটে পড়ি আমরা সবাই।ছিটকিনি খোলার পর আমাদেরকে দেখে কি বেকুবই না হবে ব্যাটা।একটু পরেই বাথরুমের বাইরে এসে যে দাঁড়ালো তাকে দেখে উলটা আমরা নিজেরাই বেকুব;টয়লেটের ঠিক পাশের বক্স রুমের ক্লাস টুয়েলভ এর এক বড় ভাই।
মোরাল অব দ্য স্টোরিঃ শোনা কথায় সব সময় কান দিতে নাই
……
এইটাও থার্ড প্রেপের পরের কাহিনী।আমি তখন ক্লাস টুয়েলভে।প্রেপ থেকে ফিরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে বাথরুমে গেলাম।দুইটা টয়লেটই বন্ধ।থার্ড টয়লেটের দরজা বাইরে থেকে ভেজানো মনে হলো।গিয়ে নিশ্চিন্ত মনে দিলাম টান।খুলে যেতেই একি অবস্থা।আমাকে দেখেই ক্লাস সেভেনের একটা জুনিয়র প্রাকৃতিক সব কাজকর্ম ভুলে তড়াক করে উঠে শান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।নর্মালি আমার প্রসেসর স্লো কাজ করে।এইবার অবশ্য সাথে সাথেই দরজাটা আবার দড়াম করে নিজ দায়িত্বে লাগিয়ে দিলাম। মনে মনে হাসতে হাসতে ঐ জুনিয়রের গাইড এর প্রশংসা না করে পারলাম না।একেবারে পারফেক্ট প্রপার শান হওয়া শিখাইসে।
মোরাল অব দ্য স্টোরিঃ বাঁচতে হলে জানতে হবে,টয়লেটের ছিটকিনিটা সঠিক ভাবে টানতে হবে।
tao bhalo eita junior silo......amader immidiate senior shoeb bhai ak bhai er kahini shunsilen ulta......uni bathroom e gesen.....ei somoy Junior......Yaa Mabud......
hmmm. moja koira postaicos...valo hoiche...
tor mon ki valo ekhon?
@মাসরুফ ভাই- হ,সেরকম কাহিনীও আছে।বাট জনস্বার্থে লাইম লাইটে আনা হয়নাই
@রায়হান আবীর- জটিল প্রশ্ন করেছিস বৎস 🙄
কান্ডলি... লেখাটা পড়ে মজা পেলুম...।। বিশেষ করে ঐটা .।। বুঝে নে...। 😆
...ভাবলাম ভিতরের ভাইজান মনে হয় একটু বেশি বিজি।...
ওই ভিতরের ওইডা ক্যাডায় আছিল? বুইড়া ডা না তো?
তাও ভাল চোগার ইলাস্টিকের ইলাস্টিসিটি চেক করতেছিল না।
হা হা হা! জটিল লাগলো সবগুলাই!
দারুন হইসে... চালায়ে যাও...
জটিল হইছে মামা।
ভালো হইছে।জিহাদ ভাই জিন্দাবাদ।
😀
বক্স রুম এ কে থাকতো?????
আসলেই,ক্যাডেট লাইফ এ বাথরুম খুব important একটা জায়গা।আমার প্রেপের অধিকাংশ time সেখানেই কাটতো!
লেখা পরে মজা পাইসি 🙂
@nabila- এইবার এইবার খুকু চোখ খুললো।
খালি মজা পাইলেই চলবেনা।হারি আপ ব্লগ লিখতে বসো।
হুমম...............
shala toder blog porte porte late hoye gelam...
৪ নাম্বারটা উড়াধুড়া। পুরা সেই রকম। =)) =)) :)) :)) =)) =))
আহারে! আমার পরে আর কেউ পড়ে নাই দেখি!
আমিই আবার পইড়া গেলাম।
হাইসা গেলাম। :khekz: :khekz:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
জট্টিল পোষ্ট এইটা। হাসতেই আছি :)) :))
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..