দিন রাত্রির গপ্পো – ১

কয়েকদিন ধরে চারপাশ হাতড়েও মন ভাল করার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা। শুধু অশান্তি আর অশান্তি। এদের মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে মিড এক্সাম। এইতো দুইদিন আগে শুরু হলো। কিন্তু আজকের পরীক্ষাটা দেয়ার পর থেকে পার্থিব যন্ত্রণার সীমা অতিক্রম করে এটাকে এখন হাবিয়া দোযখের প্রেপ টাস্ক বলে মনে হচ্ছে। মানুষের পরীক্ষা এত খারাপ হতে পারে?! 🙁 … আমি বোধহয় মানুষ না! :(( পড়াশুনা নিয়ে সচরাচর মন খারাপ হয়না। কারণ, আমার মতে মন খারাপ করার জন্য এরচে আরো অনেক ভালো ক্যান্ডিডেট আছে। কিন্তু আজকে জানি কি হইতে কি হইয়া গেল। মনটা কেমন উদাস উদাস লাগতেসে। শুনছি ভালো ছাত্রদের নাকি পরীক্ষা খারাপ হলে এমন মন খারাপ হয়। আমি কি তবে খারাপ পরীক্ষা দিয়ে ভালো ছাত্র হয়ে যাচ্ছি? :-B

…………………..

তাই ভাব্লাম মনের দু:খ ভুলতে একটা ব্লগ লিখি। মেসেঞ্জারে তখনই কামরুল ভাইয়ের টোকা। – কিরে আছোস নাকি? মনটা খ্রাপ করে বললাম – আছি।তবে এই হারে বাকি পরীক্ষাগুলাও খারাপ হইতে থাকলে আপনাদের মাঝে বেশিদিন মনে হয় থাকবোনা।
– কাম্রুল ভাই, একটা চাকরি দেন। পড়াশুনা আমারে দিয়া হবেনা।
কামরুল ভাই চোখের পলক ফেলার আগেই আমারে চাকরি দিয়া দিল।
– চাকরি আছে, কিন্তু তোর পছন্দ হবেনা।
-কিসের চাকরি?
– চা বাগানের । তুই হবি এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার।
আমি বল্লাম – ওয়াও!
শাইন পুকুর হোল্ডিংস লিমিটেডের এড এর মত চোখের সামনে সুন্দর ভবিষ্যত ও সাজুগুজু করা একটা বাগান বাড়ি, সামনে বাঁধানো পুকুর ঘাট এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপাতি ভেসে উঠলো।
– কিন্তু আমি কি পারবো কাম্রুল ভাই। আমার ম্যানেজ করার পাওয়ার তো শূন্যের কোঠায়। ম্যানেজার ক্যামনে হমু তাইলে?
কামরুল ভাই বলে – কিছু পারতে হবেনা।
আমি মনে মনে কই – কয় কি! কিন্তু কাম্রুল ভাই যখন বলসে তখন নিশ্চয়ই কিছু পারতে হবেনা।
কিন্তু তখনই তিনি আসল কথাটা পাড়লেন।
– তবে একটু কাজ করতে হবে।
– কি?
– এই ধর দেড়শো দুইশোর মত শ্রমিক সামলাতে হবে! এরা আবার একটু খ্রাপ টাইপের হয়। কাজেই তোকে সাহসী হতে হবে।

আমি শুনে বাঁধানো পুকুর ঘাটেও আছাড় খাইয়া পড়লাম। দিন রাত পড়াশুনা করে ভালো ছাত্র হওয়া যায়। কিন্তু সাহসী ক্যমনে হওয়া যায় সেইটা জানা নাই।

শুনে টুনে আমি বলি – ঠিকাছে। আমি একটু আসতেসি। BRB 😐

………………………

অনেকদিন পর আজকে রাতে আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলো।ঠিক করে বলতে গেলে- জানলার পাশে এখনো বৃষ্টির ছাঁট। এ বৃষ্টি যতোটা না স্বস্তির, আমার কাছে তারচে বেশি মন ভালো করার । বৃষ্টি জিনিসটা আমার দিনরাত সবসময়ই ভালো লাগে। তবে রাতে আরেকটু বেশি ভালো লাগে। আজকে ডিনার টাইমে ক্যাফেটেরিয়া থেকে ফিরতে ফিরতে দেখি ভিজবোনা ভিজবোনা করেও শরীর ভিজে যাচ্ছে অনেকখানি। জানি লাভ নেই। তারপরও আকাশের দিকে তাকাই। অন্ধকারে বেশিদূর চোখ যায়না। কিন্তু ভাবতে ভালো লাগে – না দেখা দূরত্বে কেউ আছেন। আর কেউ না বুঝলেও যিনি হয়তো বোঝেন – আমার মনটা আজকে বেশি ভালো নেই।

দিনের বেলায় বৃষ্টি না থাকলেও অনেক বড়সড় একটা আকাশ ঠিকই মাথার উপরে ঝুলে থাকে। আর সেই আকাশটা আজকাল দেখি একটু বেশি বেশিই সুন্দর থাকে।বিশেষ করে সকালের দিকে। কোন মতে হাঁচড়ে পাঁচড়ে ঘুম থেকে উঠে যখন ক্যাফেটেরিয়ার দিকে যেতে যেতে আকাশের দিকে তাকাই মনটা তখন সাদা মেঘের মতই হালকা মনে হয়। এমন ঝকঝকে সাদা সাদা মেঘে ছেঁয়ে থাকা নীল ক্যানভাস চোখে পড়লে কার না মন ভালো হবে। আমি আ.আ. মাহমুদ এর মত কবি মানুষ না। কিংবা আমার চৌদ্দপুরুষের মধ্যেও কেউ কবি ছিলনা। কিন্তু উদাস হইতে সমস্যা কি। উদাস হওয়া ইজ আ পাবলিক প্রোপার্টি। তাই ইদানিং আকাশের দিকে তাকাই আর উদাস হই। উদাস হই, আর আকাশের দিকে তাকাই। তাতে সুবিধাও আছে। ক্লাস মিস করে জোকোর কাছে ঝাড়ি খাওয়ার দু:খ তাতে বেমালুম ভুলে থাকা যায়। কিচ্ছু মনে হয়না। মনে হয়, এরকম সৌন্দর্য্য দুচোখ ভরে দেখার পর আর পার্থিব কোন কিছুরই তেমন মূল্য থাকতে পারেনা। আর তখন নির্দ্বিধায় হেসে হেসে বলে ফেলা যায় – এটেন্ডেন্স, তুমি কচু খাও। জোকো, তুমিও কচু খাও।

…………………..

পাশ করে বের হতে আর বেশি দেরী নাই। খুব বেশি হলে তিনমাস। কিংবা তারচেয়েও একটু কম। পোলাপান সবাই সিরিয়াস। কিন্তু সবাইই যদি সিরিয়াস হয় তাইলে ক্যামনে কি। আমি তাই স্বেচ্ছায় ব্যতিক্রম হই। সব সিরিয়াসনেস বালিশের তলায় রেখে নি:শ্চিন্তে ঘুমাচ্ছি প্রতিদিন দশটা এগারোটা পর্যন্ত। দেখা যাক কতদিন ঘুমানো যায়।তারপরও সেইদিন পেপারের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা কন্সট্রাকশন ফার্মের “চাকরি খালি” বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে গেল। ভাব্লাম আমিও একটু সিরিয়াস হই। চাকরির যোগ্যতা পড়তে পড়তে একেবারে নিচে এসে দেখি বোল্ড করে লেখা: তিন চিল্লার সাথী ভাইদের বিশেষ প্রাধাণ্য দেয়া হবে।

পুলাপান অলরেডি কয়েকজন IELTS দিয়ে ফেলসে। বাকিরা কয়েকদিনের মধ্যেই দিবে কিংবা GRE প্রিপারেশন নিয়ে বিজি। আমি ভাবতেসি পাশ করার পর এইবার তিন চিল্লা দিয়েই ফেলবো কীনা। আর কতো। এইবার তো একটু সিরিয়াস হওয়া দরকার, নাকি? :-B

৩,৮১৭ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “দিন রাত্রির গপ্পো – ১”

  1. রাশেদ (৯৯-০৫)

    লেখা পইড়া মন্টা বড়োই উদাস হইল। পড়াশুন করে আর কি হবে? তাই ঐটা আগেই আমার সিলেবাস থেকে বাদ।

    কিরে তুইও আমাদের ছাইড়া বিদেশ যাবি গা???? আইইল্টিস দিলে তো আর তোরে এই বৃষ্টি বাদলার দেশে পাওয়া যাবে না।

    বৃষ্টি জিনিসটা একদম খারাপ তার উপর এইরাতের বেলায় ঝমঝম বৃষ্টি, কত পুরান কথা মনে পইড়া গেল আজকে 🙁

    শিরনাম দেখে মন হইল সিরিজ খেলাপীর লম্বা খাতায় নাম লেখানোর মনে বড়োই খায়েশ জাগছে 😛


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  2. দিহান আহসান
    আমি বোধহয় মানুষ না!

    তাইলে কি তুমিও গাছেদের দলে নাম লেখাতে চাইছো? :-/

    বৃষ্টি জিনিসটা আমার দিনরাত সবসময়ই ভালো লাগে। তবে রাতে আরেকটু বেশি ভালো লাগে।

    সত্য কখনো এক্চাপা থাকেনা। ;;;

    জবাব দিন
  3. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    চাকরিডা নিলে পারতি। :grr:
    প্রতি সপ্তাহে একদিন চা বাগানে ম্যানেজারের সম্মানে মনিপুরী মেয়েদের নাঁচ হয়। আর সেই মনিপুরী মেয়েদের ফিগারও খুব চমৎকার, একেবারে সরু কোমর। ;;;


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  4. রকিব (০১-০৭)
    কয়েকদিন ধরে চারপাশ হাতড়েও মন ভাল করার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা। শুধু অশান্তি আর অশান্তি। এদের মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে মিড এক্সাম।

    এই লাইন ক'টা পড়ে মনে হলো নিজের কথাই পড়ছি।

    অনেকদিন পর আজকে রাতে আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলো।ঠিক করে বলতে গেলে- জানলার পাশে এখনো বৃষ্টির ছাঁট। এ বৃষ্টি যতোটা না স্বস্তির, আমার কাছে তারচে বেশি মন ভালো করার ।

    একই অবস্থা, কাল আমার এখানেও বৃষ্টি হচ্ছিল, তারপরো নাগরিক বিষণ্ণতার পেষণ থেকে (ক.রা. রাশেদ ভাই) বের হতে পারছি না।

    আপনিও একখান IELTS দিয়ে চইলা আছেন, পারমানেন্ট ভাবে জ্বালাবার জন্য আপনারে পামু :grr: । ভালো থাকবেন।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    দেশে থাকতে কামরুলের চাকরিটা পাইলে দৌড়ায়া জয়েন করতাম । আহা মনিপুরী :dreamy:
    জিহাদ ব্যাপারনা তিন চিল্লার কোর্সটা করে ফেল । কোন কোর্সই খারাপ না 😀

    জবাব দিন
  6. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ব্লগে আমার সবচে' ভালো লাগে দিনলিপি ধরণের লেখা পড়তে........পানিতে ভিজে টিজে সকালে অফিসে এসে তোর এই লেখা ধোযা ওঠা গরম চায়ের মত ভালো লাগল :awesome:

    অফটপিক: বৃষ্টি হইছে, অমনি লেখা নামছে.........বর্ষার প্রভাব ;;; ;;;


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  7. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    কথায় কয় সুখে থাকলে ভূতে কিলায় , এইটা তর কঠায় বুঝলাম।
    আরে ব্যাটা পাশ কইরা চাকরি ছাড়া থাকাটাই সবচে মজার সময়। এই সময় জীবনে এখনও পেলাম না বলে বড়ো আপসুস।
    তুই :frontroll: :frontroll: :frontroll: লাগা। সব ঠিক হয়া যাবে।

    অনটপিক: লেখা ভাল্লাগছে বরাবরের মতই।

    জবাব দিন
  8. জিহাদ,
    মাহমুদ নাকি কী যেন দেখলাম... তুই কি আমারে বাঁশ দিলি?
    কামটা ঠিক করলি না কইলাম :grr: :grr: :grr: :grr:

    দিনলিপি টাইপ লেখা আমার ভাল্লাগে। তয় এখন দিনলিপি লেখার সাহস পাইনা...

    ভাল লাগছে লেখা 🙂 🙂

    জবাব দিন
  9. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    যারা জব পেয়ে গেছে তারা কয় জব না পাওয়াই ভাল আবার যারা পায় না তারা কয় জব না পাওয়ার কষ্ট অন্য কেউ কেমনে বুঝব, শালার দুনিয়া জুইড়া বহুত গিয়ানজাম।
    ভাল লাগছে বর্ষা থুক্কু জিহাদ

    জবাব দিন
  10. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    দিন রাত পড়াশুনা করে ভালো ছাত্র হওয়া যায়। কিন্তু সাহসী ক্যমনে হওয়া যায় সেইটা জানা নাই।

    ভালোবাসতে সাহস লাগে না? ওইডা যখন অর্জন করে ফেলছ, তাইলে ভালো ছাত্র হওন আর সাহসী মানুষ হওন দুইডাই কুনু ব্যাপার না!! লাইগ্যা পড়ো ছুটু ভাই............ :grr:

    দিনলিপি ভালো হইছে, বিষন্নতা ঝেড়ে ফেল। জলদি......... B-)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  11. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)
    শুনছি ভালো ছাত্রদের নাকি পরীক্ষা খারাপ হলে এমন মন খারাপ হয়। আমি কি তবে খারাপ পরীক্ষা দিয়ে ভালো ছাত্র হয়ে যাচ্ছি?

    থাক আর বেশি ভাল ছাত্র হয়ার দরকার নেই...।। :teacup: খাও আর পড়তে বস...... 😡

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জিহাদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।