শাহবাগ আন্দোলন- বিভিন্ন দলের পজিটিভ চিন্তা

প্রধান বিরোধীদল চিন্তা করছে এটারে সরকার দলীয় আন্দোলনের ফাঁদে ফেলতে পারলে আগামী নির্বাচনে ফায়দা হাসিল করা যাবে । তাছাড়া এই আন্দোলনের ফলে জামাতের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হলে এদের বড় অংশ আমাদের দলেই পার্মানেন্ট হয়ে যাবে । তাই তারা মনে করে যদিও জামাতের সাথে বর্তমানে জোট থাকায়  গেঁড়াকলে পড়লেও শেষমেশ ফলাফল তাদের জন্য তেমন খারাপ হবে না ।

প্রধান সরকারি দল চিন্তা করছে যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি আর এরা যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করছে, নিশ্চয়ই এই আন্দোলনের ফল আমরাই খাবো ।

বামপন্থী দলগুলো চিন্তা করছে প্রথমসারির ব্লগারদের মধ্যে যেহেতু অনেকেই নাস্তিক আছে, সেহেতু এই আন্দোলন এক হিসেবে আমরাই করছি আর এই সুযোগে যদি আমাদের চার পাঁচজনের দলগুলোকে একটু বড় করা যায় তাহলে মন্দ কি ।

জামাত-শিবির চিন্তা করছে, আন্দোলনের ফলে যেটুকু আশা ছিল তাও নস্যাৎ হয়ে গেছে তাছাড়া এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাই শেষ ধাক্কা দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে ।

জামাত বিরোধী ইসলামিক দলগুলো  চিন্তা করছে, এতদিন পর ধর্ম ভিত্তিক সবচেয়ে বড় দল জামাতকে শায়েস্তা করা যাবে এবং এই সুযোগে জামাতের কর্মীরা যদি তাদের দলে যোগদান করে তাহলে তাদের দলও ভারী হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাধারন জনগণ মনে করছে এই আন্দোলনের ফলে আমরা একাত্তরের মানবতা বিরোধী এই কলঙ্ক হতে মুক্ত হতে পারবো যদিও এখনো অনেকের মধ্যে সংশয় আছে শেষপর্যন্ত কি হয় কারন এই দেশের রাজনীতির উপর মানুষের আস্থা অনেক কম। তবে সাধারন জনগনের একটি বড় অংশ মনে করে কিংবা আশা করে মানবতা বিরোধীদের বিচারের পর এই আন্দোলন থেকে দেশে নতুন কোন নেতৃত্ব কিংবা নতুন কোন রাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে যার মাধ্যমে এই দেশে সত্যিকার অর্থে শোষণ মুক্ত একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হবে।

সর্বশেষ,  শাহবাগের তরুনরা কি চায় তাতো আমরা প্রতিদিন দেখছি এবং শুনছি । যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পারবে ততক্ষন পর্যন্ত তাদের দাবির প্রতি এই দেশের  দেশপ্রেমিক সকল মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল হতে সাপোর্ট থাকবে।

এছাড়া আরও কিছু চিন্তা সাধারন মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আর তা হল, ধরি মানবতা বিরোধীদের বিচার হল এবং আন্দোলন থেমে গেলো তারপর কি হল ? দেশে যদি সেই বিশ্বজিতের মতো হাজারো মানুষের উপর হত্যা রাহাজানি চলতে থাকে,  ডাঃ ইভার মতো নারীদের ধর্ষণ চলতে থাকে , বর্তমানে চলতে থাকা অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়তে থাকে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে  বিভিন্ন দলের ছাত্রদের দখল, টেন্ডার বাজি চলতে থাকে তাহলে সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি দেশ আমরা অর্জন করতে পারবো না । তাই শাহবাগ থেকে শুরু করা সারাদেশে আন্দোলনরত  তরুণরা যেহেতু এই গণজাগরণকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা করেছে সেহেতু দেশপ্রেমিক সকলে আশা করে মানবতা বিরোধী বিচারের  মধ্য দিয়ে সাধারন জনগনের মনের গহীনে থাকা আরও যেসব অব্যক্ত দাবি রয়েছে তার প্রতিও শ্রদ্ধা রেখে এই আন্দোলন আরও গতিময় হবে ।

 

বাংলাদেশের জয় হোক

১,০০৪ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “শাহবাগ আন্দোলন- বিভিন্ন দলের পজিটিভ চিন্তা”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আন্দোলন হলো প্রেমের মতো, তাই পরিনতি যে কোন কিছুই হতে পারে। তবে প্রেমটা তো সত্যি। উচ্ছ্বাস, ভালবাসাটা তো মিথ্যা না। বড়দের সেটা নিয়ে সতর্ক অবস্থান, প্রশ্ন এবং ভ্রুকুঞ্চন উপেক্ষা করেই তরুণরা সেটা করে ফলাফলের তোয়াক্কা না করেই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে।

    সবকিছুতো শাহবাগ আন্দোলন দিয়ে তো সমাধান সম্ভব না। লক্ষ্য সুনিদ্রিষ্ট্র এবং সীমিত থাকলে বরং কিছু ফলাফল আসতে পারে।

    বাংলাদেশের জয় হোক

    এটা কি সতর্কতার সাথে মিডল গ্রাউন্ডে থাকার কারণে? 🙂


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

      শাহবাগ নিয়ে আমার একটু বেশী আশা ছিল এবং এখনো আশা রাখতে চাই ।
      আমি বাংলাদেশের জয় চাই, শুধু বাংলা বললে আমার কাছে স্বার্থপর মনে হয়। যদিও মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান হিসাবে জয় বাংলার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে । যেহেতু বলেছ মিডল পন্থী । এইজন্য বলি চারপাশের পন্থীদের যা অবস্থা তা দেখে আমি ওদের দলে ভিড়তে চাই না ।
      ভালো থেকো রাব্বি ।

      জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    ভালো বিশ্লেষণ। তবে বুঝলাম না বামপন্থি হতে হলে নাস্তিক হতে হবে কেন? এটা কি বাম হওয়ার প্রাথমিক শর্ত?
    বাংলাদেশের ইতিহাসে সব আন্দোলন শুরু হবার পেছনে তরুণদের ভূমিকা আছে। তবে আবেগ আর প্রজ্ঞার যথেষ্ট সেতুবন্ধন না ঘটলে আন্দোলন তার পরিপূর্ণতা পায় না। এই যেমন ধরো, আগে জানতাম ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রয়ারীর পরই বাংলাভাষা রাষ্ট্রঈয় মর্যাদা পেল। কিন্তু পরে দেখলাম বিষয়টা তা নয়। ১৯৫৪ সালে যখন যুক্তফ্রন্ট স্বপ্ন সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিল তখন তাঁরা আইন করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেন। এই যুক্তফ্রন্টে শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দীর মতো ডাকসাইটে নেতারা ছিলেন। আবার মুক্তিযুদ্ধের পেছনে তরুণ নেতৃত্বের অনেক ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই তরুণরাই স্বাধীন বাংলাদেশে পরিপক্ক বা প্রজ্ঞাময় আচরণ দেখাতে পারেননি। অনেকটা আশরাফুলের ব্যাটিংএর মতো। হঠাৎ পাওয়া খ্যাতি এবং ক্ষমতার চাপ সহ্য করতে না পেরে আন্ডারপারফর্মড (আরেক অর্থে) আত্নকেন্দ্রিক আর স্বার্থপর হয়ে পড়া।
    প্রেমের মতো আন্দোলনও কখন দানা বেঁধে উঠবে তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না - লোকে যতই বলুক এটা এ করাচ্ছে বা ও করাচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকলে আন্দোলনের রূপটা হয়ে পরে বুদবুদ প্রেমের মতো।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

      'দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকলে আন্দোলনের রূপটা হয়ে পরে বুদবুদ প্রেমের মতো'
      আপু , খুব চমৎকার বলেছেন । সাধারনত বামদের নাস্তিক দেখি , তাই বলেছি। এই ব্যাপারে সঠিক ধারণা নেই ।
      শাহবাগ আন্দোলনে দেশে একটা পরিবর্তন আসুক, এটাই চেয়েছি । কারন বর্তমান রাজনৈতিক দলগুলোর উপর আমার মোটেও আস্থা নেই ।
      আপু অত বিশ্লেষণ করে লিখিনি , যা মনে হয়েছে তাই লিখেছি । তাই অনেক ভুলভাল । 🙂

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাব্বী (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।