বন্ধু ! !

আমি শুধু এই কারণে ক্যাডেট কলেজের কাছে কৃতজ্ঞ নই যে এই প্রতিষ্ঠান আমাকে জীবন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছে। বরং, আমি এই কারণে কৃতজ্ঞ যে এই প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ আমার বন্ধুদেরকে পেয়েছি। মূলত আমার বন্ধুরাই আমাকে জীবনের নতুন দর্শন শিখিয়েছে, আমার দুঃসময়ে আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে, আমার ভুল হাসিমুখে শুধরে দিয়েছে, সবচেয়ে বড় কথা- আমাকে সব সময় স্বার্থহীনভাবে ভালবেসেছে।

যা হোক, এত কথা না বলে আমার অন্যতম বন্ধু আর আমার কথা বলি। যদিও আমরা সব সময় একে অপরকে বলি,” তোর মতো বন্ধু থাকলে আমার আর কোন শত্রুর দরকার নাই”।
আবার আমি যদি ফোন করে জিজ্ঞাসা করি, ” কিরে কেমন আছিস?”
প্রতিউত্তরে আমার বন্ধু বলবে, ” শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এবং তোর মুখে ছাই দিয়ে ভাল আছি”।
কিন্তু মুখে যাই বলি না কেন, অন্তরে বলে অন্য কথা ।

ক্যাডেট কলেজে প্রথমে যখন আমার বন্ধুর সাথে দেখা তখন তাকে পছন্দ করতে পারি নাই । যে ছেলে সারাদিন নিজের মাঝে থাকে, কারও সাথে কথা বলে না, তাকে নিশ্চয় পছন্দ করার কোন কারণ নাই। কিন্তু এক বছরের মাঝে সে আমার অন্যতম প্রিয় বন্ধু। এমনকি কলেজের প্রায় ৪ বছরই আমরা একই টেবিলে বসেছি। আমার জীবনের খুব কম ঘটনাই আছে যা আমি ওকে কম করে হলেও ৩/৪ বার বলি নাই। একই ঘটনা এতবার বললেও ও কিন্তু প্রত্যেকবারই মনযোগী শ্রোতা। এমন নয় যে, ও ভুলে যায়। হয়তবা আমার বন্ধুটি জানে আমি ওকে বলতে ভালবাসি তাই কখনই আমাকে বুঝতে দেয়না যে আমি একই কথা তাকে বার বার বলছি।

আমার বন্ধু যেখানেই থাকুক না কেন, ওর মনে যত কষ্টই থাকুক না কেন, ও সবাইকে মাতিয়ে রাখে। ওর হাস্যরস যে সবাই প্রথম প্রথম বুঝতে পারে তাও কিন্তু নয়। সেদিন যেমন আমি আর আমার বন্ধুটি বুমারস এ অন্য এক বন্ধু আর তার কলিগদের সাথে দেখা করতে গেলাম। আমারা সবাই ক্যামেরায় ছবি তুলছিলাম।
আমার বন্ধু খুব সিরিয়াস ভংগিতে ক্যামেরার লেন্স কাভার নিয়ে পানির বোতল এর মুখে নিয়ে বলল ” এটা লাগে না কেন?”
আমার সেই বন্ধুর কলিগ বলল, ” এটা ক্যামেরার লেন্স কাভার” ।
আমার বন্ধুটি আরো সিরিয়াস হয়ে বলল,” ও আচ্ছা। থ্যাংকস ম্যান। আমি তো খুব ই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম বোতলের মুখ এত বড় হইল কেম্নে?” 😉

ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হবার পর কর্মক্ষেত্র আলাদা হয়ে গেলে অনেকক্ষেত্রে বন্ধুত্বের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হলেও আমাদের মাঝে কোন দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। এমনকি আমার পরিবারের অনেকেরই ধারণা, আমি হয়তবা তাদের চেয়ে আমার বন্ধুদেরকেই সময় দিতে বেশী পছন্দ করি। আমার ছোট বোনের তো বদ্ধমূল বিশ্বাস, আমি তার চেয়ে আমার আমার বন্ধুকেই বেশী পছন্দ করি।

ওর মাঝে সবাইকে ভালবাসা আর আপন করে নেয়ার এক আশ্চর্য ক্ষমতা আছে। সত্যি কথা বলতে কি, ও যাদেরকে বন্ধু হিসেবে নেয় তাদেরকে কখনই দূরে ঠেলে দেয়না। যেমন ওর ছোটবেলার বন্ধু রতন এর সাথে ওর যোগাযোগ খুব বেশী না থাকলেও রতনকে কিন্তু ও ভুলে যায়নি । আমার এখনো মনে পড়ে, ২০০৪ সালে আমি বিএমএ ট্রেনিং শেষে যখন রংপুর এ গেলাম তখন আমার বন্ধু আমাকে এক চিঠির শেষে লিখেছিল,
” …… ঠিক করেছি একদম গুটিয়ে যাব, ঠিক শামুকের মত। কারো সাথেই কোন যোগাযোগ রাখব না, শুধু ২/১ জন ছাড়া। তবে unfortunately সেই ২/১ জন এর লিষ্টে তোর নাম আছে। আমি তোর নাম দেখে লিষ্টটা ভাল করে চেক করে দেখেছি । কিন্তু না, ঠিক ই আছে। …….. ”

আমার বন্ধু সম্পর্কে গুছিয়ে কিছুই বলা হলনা । লেখাটাই খাপছাড়া হয়ে গেল। আসলে ওর সম্পর্কে লেখার মত ভাষাজ্ঞান আমার নাই। ওর মতো করে মানুষকে ভালবাসা ও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু এই ভালবাসাই হয়ত ওকে সবচেয়ে বেশী কষ্ট দেয়।

যা হোক, আমার এই বন্ধুটিকে আপনারা মোটামুটি সবাই চিনেন। আপনাদের সবার অতি পরিচিত জুনায়েদ কবীর। ১১ মে তার জন্মদিন।

“শুভ জন্মদিন বন্ধু” ।
“জ়ীবনে সবসময় হাসিখুশি থাক, কোন কষ্ট যেন কখনই তোকে স্পর্শ না করে”।

১,৮৪২ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “বন্ধু ! !”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    শুভ জন্মদিন জুনা ভাই... কেক কুক খাইতে মঞ্চায় 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    জাফর, তোর মতন বন্ধু থাকলে শত্রুর কোন দরকার নাই... 😀
    তোরে এত করে বললাম 'চীনের দিনলিপি' টাইপ কিছু লিখতে আর তুই কিনা জন্মদিনের পোষ্ট দিলি... 😡
    রেফারেন্স হিসাবে এই মন্তব্য দেখালে অস্বীকার করব-এই শর্তে বলি...
    লাভু ম্যান... :hug:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    জুনাদা, আপনে একদিনের ছোট। 😛
    শুভ শুভ জন্মদিন। আর গিফট তো পার্সেল করছি, আপনি কেক্কুক পার্সেল কইরা দিয়েন। উই লাভু জুনাদা।
    অফটপিকঃ আপনারে গুলি করার হুমকি দিছে একজন। ~x( :gulli2:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    শুভ জন্মদিন।
    এম্বিয়েটা শেষ করে নে। তোরে নিয়া তিন প্রহরের বিল দেখতে যামু। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।