আমরা কি পারব ?

( আমার পিতার বাইপাস অপারেশন গত ০৩ অক্টোবর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে তা জুনায়েদ এর লেখা থেকে আপনারা অনেকেই জ়ানেন। আপনাদের দোয়া তে এবং আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ আছেন। আপনাদের সকলকে আমার পিতার সুস্থতা কামনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি ভাবলাম, আমার অনুভূতি/ উপলব্ধি আমার আপনজন এর সাথে শেয়ার করব। তাই এ লেখার চেষ্টা । ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।)

আমার বাবাকে যখন অপারেশন এর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন আমি আমার বাবার হাতটা শক্ত করে আমার হাতের মাঝে ধরে রেখেছি। আমার বাবা অসহায় দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি যদিও অপারেশন এর আগে আমাদেরকে সাহস দিচ্ছিলেন, কিন্তু এখন অনেকটাই নার্ভাস। আমার বাবা আমার হাতে একটু চাপ দিয়ে আমাকে বললেন,” বাবু, আমি ফেরত আসব কিনা জানি না । তবে সব সময় তোমার বোন, তোমার মাকে দেখে রেখ। তোমার বড় বোন তাঁর ছেলেদের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই উদাসীন, ওদের পড়াশোনার দিকে খেয়াল রেখ। তোমরা সব ভাই-বোন সব সময় একসাথে থাকবে । আর, সব সময় সত্য কথা বলবে, সৎ পথে চলবে, তাহলে জীবনে কখনও বিপদে পড়বে না। “

আমি কোন কথা না বলে শুধু আমার বাবা’র কপালে চুমু দিয়ে অপারেশন থিয়েটারের দরজা থেকে চলে এলাম।

এরপর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। প্রতিটা মুহূর্তই আমার কাছে বছরের চেয়ে বড় মনে হচ্ছে। এর মাঝে শরীফ এল, ওকে দেখে মনে কিছুটা সাহস পেলাম। আরো অনেক আত্মীয়-স্বজন এল, তাঁরাও অনেক সাহস-সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল। আমি তখন অনুভব করলাম, আমি আমার বাবা’কে অনেক ভালবাসি। আমার বাবা’র প্রতি যে আমার এত ভালবাসা এতদিন লুকিয়ে ছিল, সেটা টের ই পাইনি। এর মাঝে আমার বাবা’র অপারেশন শেষ হয়ে গেছে। আমি আমার বাবা’কে অচেতন অবস্থায় দেখে এলাম। এখন বাবা’র জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছি। আমার মা এর মাঝে অন্য এক অপারেশন করা রোগীর আত্মীয়ের কাছ থেকে শুনেছেন যে, তাঁর রোগীর গত দুইদিনে জ্ঞান ফেরেনি, এ কথা শুনে অঝোরে কাঁদছেন । এদিকে পরবর্তী দিন আমার পরীক্ষা আর আমার ছুটিও শেষ। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমার বাবা’কে ফেলে আমাকে এই অবস্থায় যেতে হচ্ছে।

আমি যাওয়ার পথে ভাবছিলাম, ” আমার বাবা অপারেশন এ যাওয়ার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেভাবে আমাদেরকে ভালবেসে গেছে, আমরা কি পারব আমাদের মা-বাবা’কে সেভাবে ভালবেসে যেতে?? “

তাঁদের মতো করে ভালবাসতে না পারি, তবে তাঁরা যেন কখনো আমাদের কাছ থেকে কোন আঘাত না পান- এই কামনা করি…।

২২ টি মন্তব্য : “আমরা কি পারব ?”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    বাবা-মার মত করে তাদেরকে ভালবাসা আমাদের পক্ষে মনে হয় সম্ভব না। তারপরও আমাদের উচিৎ আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং তাদেরকে কোনমতেই আঘাত না দেয়া।

    আংকেল সুস্থ্য আছেন যেনে ভালো লাগল।

    জবাব দিন
  2. দিহান আহসান

    আংকেল সুস্থ আছেন তা আগেই জেনেছিলাম।

    তাঁদের মতো করে ভালবাসতে না পারি, তবে তাঁরা যেন কখনো আমাদের কাছ থেকে কোন আঘাত না পান- এই কামনা করি…।

    আমিও এই কামনা করি 🙂

    জবাব দিন
  3. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    জাফর,
    লেখাটি পড়ে মনের অজান্তেই চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। তোমার অনুভূতি এবং তার বহিঃপ্রকাশ সত্যি আমার অন্তর ছুয়ে গেছে। আমার বাবার বাইপাস হওয়ার সময়ে আমি ছিলাম কঙ্গো। মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অপারেশনে নিজের জীবনের জন্যও এতটা টেনশন হয়নি যতটা বাবার অপারেশনের সময়ে হয়েছে। হাজার মাইল দূরে থেকে কেবলই ছটফট করেছিলাম। তোমার লেখা পড়ে আমার সেই অনুভূতিগুলোর কথাই বার বার মনে পড়ে গেল।
    বাবা কে আমিও যে অনেক ভালোবাসি...কিন্তু কখনো তাকে জানানো হয়নি...জানাতে পারিনি...। তবে এটা ঠিক, বাবা-মা'র মতো করে তাদের ভালোবাসা সম্ভব না হলেও অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তাদের ভালোবেসে তাদেরকে কিছুটা হলেও শান্তি দিতে পারবো।

    আসুন আমরা সবাই পরস্পরের জন্য দোয়া করি যাতে আমরা মনের অজান্তেও কখনো বাবা-মা'র মনঃকষ্টের কারণ না হই...।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।