“শাহাদাত”নামা

জনাব কাজী শাহাদাত হোসেন রাজীব শ্রীচরণেষূ
হে উদার
অর্ধ যুগ আগে, বিলাতের এক গ্রীষ্মকালে তোমার বদনখানি ভাসিয়া উঠিয়াছিলো বোকাবাক্সের চৌকোণায়। তুমি নাকি বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট খেলিতে নামিতেছ। পত্র পত্রিকা মারফত জানিয়ছিলাম, বহুদিন পর নাকি এই অভাগা বঙ্গে এমন এক মানবসন্তানের আগমণ হইয়াছে, যে ফাস্ট বোলিংটা করিতে জানে। আরও জানিয়াছিলাম, তোমার আছে তালগাছের ন্যায় উচ্চতা আর ভীমের ন্যায় শক্তি। লক্ষণের শক্তিশেলের মত তুমিও নাকি চামড়ার গোলকটাকে সবেগে ছুঁড়িতে পার। তুমি আসিলে, প্রতিপক্ষ হাসিল আর আমরা কাঁদিলাম। তোমার দাতা মহসীনের মত হৃদয়ের পরিচয় পাইয়া  বিলাতি ব্যাটসম্যানদের মন বর্ষার ময়ুরের ন্যায় নাচিয়া উঠিল। মার্কাস ট্রেসকোথিক ও মাইকেল ভন তোমার ছোঁড়া চর্মগোলায় দ্বারিক ঘোষের রসগোল্লার স্বাদ পাইল। মুহুর্মুহূ বেগে বল বাউন্ডারির দিকে ধাবিত হইতে লাগিল। হাততালি দেওয়ার লোক লর্ডসে এমনিতেই কম, যারাও বা আসিয়াছিলো তারাও প্রায় লোলচর্ম্যবৃদ্ধ। হাততালি দিতে দিতে অনেকে তাহার পাশের আসনে উপবিষ্ট জনের ক্ষীণপ্রায় শ্রবণশক্তি  ক্ষীণতর করিয়া দিলো। লৌহনির্মিত মস্তকাবরণের ফাঁকে ট্রেসকোথিক ও ভনের দন্তমূলরাজী বিকশিত হইতে লাগিলো, আর হাবিবুল বাশার আসন্ন সংবাদ সম্মেলনে তোমায় দলে লইবার যথাপোযুক্ত কারণ গরু খোঁজা করিতে করিতে মস্তিষ্কে অঙ্গুলিচালনা করিতে লাগিলেন। বল হাতে অভিষেক ইনিংসেই তুমি শতরান দিয়াছিলে (১২-০-১০১-০)। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় টানা দ্বিতীয় শতরান দেওয়ার যোগ্যতা তুমি অর্জন করিতে না পারিলেও, বাংগালী হৃদয়ে তুমি আপন আসন অধিকার করিয়া ছিলে।
হে উচ্চকন্ঠী
আমার দূরদর্শন যন্ত্রটির শব্দপ্রবাহে সমস্যা সন্দেহের হেতু আর কেউই নয়, সে তুমি। তুমি বল হাতে ধাবমান হইতেছিলে, আমিও দৃষ্টিনিবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলাম চৌকোণা পর্দায়। আচমকাই হোঁয়াক বলিয়া কি জেন ডাকিয়া উঠিল, আমি বলিলাম, দিনের আলোয় শেয়ায়ল লোকালয়ে কেন ডাকিতেছে। কিমাশ্চর্যম! পরে বুঝিলাম, শেয়াল নয়, ছানা বাঁচাইতে গলা ফুলাইয়া  আসা রাজহাঁস নয়, ইহা হচ্ছে তোমারই হর্ষধ্বনি! বল করিবার আনন্দে তোমার বাগযন্ত্র যে এত শব্দ উতপাদন করে, তাহা আমাদিগের পূর্বে জানা ছিল না।
তুমি ঝিঁঝিঁ পোকা খেলা ছাড়িয়া উচ্চাংগ সঙ্গীত সাধনা করিলে, নিঃসন্দেহে আমরা একজন বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ পাইতাম।

হে সুদর্শন
শাস্ত্রে আছে, নিজের ঢাক নিজে পিটাইতে নাই। কিন্তু এই ঘোর কলিযুগে নিজের ঢোল নিজেকেই পিটাইতে হয়। তুমি তাহাই করিয়াছ। দেশের বহুল প্রচলিত দৈনিকে নিজেই নিজের রূপের প্রশংসা করিয়াছ। নিজের কুতুব মিনার সদৃশ্য উচ্চতার প্রশংসা করিয়াছ, সটান দাঁড়ানো প্রশংসা করিয়াছ। অতি উত্তম, অতি খাসা তোমার নন্দনজ্ঞান। তুমি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বাসনা প্রকাশ করিয়াছ, ক্ষীণকটি তন্বী নায়িকাদিগের সঙ্গে অভিনয় করিবার অভিলাষ প্রকাশ করিয়াছ। আশা করি, তোমার সেই সাক্ষাতকার প্রকাশিত হইবার পর তোমার গৃহপ্রাঙ্গনে চলচ্চিত্র নির্দেশকরা কাঙ্গালীভোজের অন্নপ্রার্থীদের মত সারীবদ্ধ ভাবে দন্ডায়মান আছে। তোমার আগমণধ্বণীতে নিশ্চয় শীর্ষ নায়ক সাকিব খানের অটল সিংহাসন নড়িয়া উঠিয়াছে। আশা করি মাঠের ন্যায় রয়পালি পর্দাতেও তোমার রাজত্ব কায়েম হইবে। যেরূপে উদারহস্তে তুমি “রান” বিলাও, সেই রূপে উদারহস্তে সিনেমার টিকিট বিলাইবে। প্রতিটি শো হাউজফুল হইবে।
হে কৃতী
তোমার কীর্তি অগণিত, তাহা সংখ্যায় প্রকাশ করা ধৃষ্টতা মাত্র। একটি মাত্র টেস্টে কি করিয়া দুইবার কালের কন্ঠ নামক একটি অর্বাচীন দৈনিকের “ফ্লপ অব দ্যা ডে” হওয়া যায়, এমন অমানবিক কীর্তি একমাত্র তোমারপক্ষেই সম্ভব। অক্ষয় হউক তোমার কীর্তি। কামনা করি, তুমি শুধু ফ্লপ অব দ্যা “ডে” নয়, “মান্থ”, “ইয়ার”, “লাইটইয়ার”ও হইবার কৃতিত্ব দেখাও।
সবশেষে বলিতে হয়, রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছিলেন, ” তোমার পতাকা যারে দাও, পতাকা বহিবার তারে দেও শকতি।” ঈশ্বরেরকৃপায় তুমি এই পাললিক ব্ব-দ্বীপে জন্মিয়াছিলে। তা না হইলে তোমারমত এমন সর্বগূণময় মনীষীর দেখা আমরা কিভাবে পেতাম। বিপক্ষের ব্যাটসম্যানের রিক্ততায় তোমার মন কাঁদিয়া ওঠে, তাইতো তাদের প্রতি তোমার এই অনিঃশেষ উদারতা। প্রার্থনা করি, শতায়ু হও, তোমার বলে ব্যাটসম্যানরা “হিট” করুক আর নাই করুক, তোমার চলচ্চিত্র হিট হবেই। কারণ তোমার মত এমন গূণী ব্যক্তিকে দেখিতে তো রীতিমত গাঁটের কড়ি খরচা করেই আসতে হয়। আর মহাকালের কাছে সবাই হারমানলেও তুমি থাকিয়া যাবে সেলুলয়েডে, লোকে দেখিবে আর তালি বাজাইবে।
বিনীত
তোমারই গুণমুগ্ধ
জনৈক দর্শক

৫,৩৫০ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : ““শাহাদাত”নামা”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    হা হা হা ।
    এইটা পাঠায়া দে রাজীবের কাছে। আমি শিউর ব্যাটা মনে করবো ওর প্রশংসা কইরা কোন দর্শক পাঠাইছে। পরের সাক্ষাতকারে তোর নাম নিয়া গল্পও ফাইদা ফেলতে পারে।
    তবে ভাষার ব্যভার পুরা লা জওয়াব হইছে।

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    সিরাম !!!
    নায়ক রাজীব হইলো আমার ফেভারিট বোলার 😀
    সামিউর ভাই, আপনি রম্য লেখালেখিটা আরেকটু নিয়মিত দেন ভাইজান। 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. আসিফ (২০০১-'০৭)

    অত্যন্ত হয়েছে , খাসা হয়ছে, হয়েছে মাইরি ! অর্থব্যাক্তি ও প্রাঞ্জলতার উজ্জ্বল এই নিদর্শনখানা জাতির সম্মুখে তুলে ধরায় 'শাহাদাতের' পক্ষ থেকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিবাদন । সেই সাথে শাহরুখের নাম উল্লেখ না করায় 'শাহাদাতের পক্ষ থেকে কিঞ্চিৎ অনুযোগ আর হতাশা ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : টিটো

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।