শুভ জন্মদিন স্যার ডন

ধর্মগ্রন্থগুলোতে স্বর্গ বলে একটা জায়গার কথা বলা হয়। পৃথিবীর ভূগোলে জায়গাটির অস্তিত্ব না থাকলেও অন্তহীন মহাকাশে কোথাও হয়তো ফুলে-ফলে শোভিত এমন একটা জায়গা আছে। যেখানে ডন ব্র্যাডম্যান আজ স্ত্রী জেসি আর স্বর্গবাসী বন্ধুদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটছেন, শ্যাম্পেনের বোতল খুলছেন। ভাগ্যিস, ব্র্যাডম্যানের জন্মটা আধুনিক যুগে হয়েছিল, যখন দেবতারা শুধু ধর্মগ্রন্থে আর মন্দিরে। যুগটা না পাল্টালে ডন নির্ঘাত ‘দেবতা’ হয়ে যেতেন! কারণ এক টুকরো উইলো কাঠ হাতে নিয়ে এ ‘মহাপুরুষ’ যা করে গেছেন, তা যেকোনো মানুষের পক্ষেই করা প্রায় অসম্ভব!

এ জেট যুগের ক্রিকেটে নয়, বাষ্পের জাহাজে চড়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার যুগে মাত্র ৫২ টেস্টে তাঁর যে কীর্তি, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। এরিক হলিসের বলে জীবনের শেষ ইনিংসে শূন্য রানে আউট না হয়ে মাত্র ৪ রান করতে পারলেই রানের গড়টা হতো ঠিক কাঁটায় কাঁটায় এক শ! তা হয়নি। কিন্তু যা হয়েছে, তা-ই বা কম কি! টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ৯৯.৯৪ গড়ের ধারেকাছেও তো কেউ নেই! অথচ তাঁকে পরাস্ত করতে কম ফন্দি আঁটতে হয়নি প্রতিপক্ষকে। ‘বডিলাইন বোলিং’ নামে স্টাম্পের বদলে ব্যাটসম্যানের শরীর লক্ষ করে বল করার যে কুৎসিত কূটকৌশল, এর বিরুদ্ধেও দারুণ সফল ‘স্যার ডন’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনেকটা সময় কেড়ে নিয়েছিল তাঁর জীবন থেকে। নইলে ব্র্যাডম্যানের কীর্তি যে কোন চূড়ায় গিয়ে ঠেকত, তা বলা এককথায় অসম্ভব!

যুদ্ধ নয়, রাজনীতি নয়, শুধু ক্রিকেট খেলেই যে একটা দেশের প্রতীকে পরিণত হওয়া যায়, খুব সম্ভবত ব্র্যাডম্যানই এর প্রধান উদাহরণ। তাঁর জনপ্রিয়তা আর আবেদন এতই বিশাল ছিল যে ২৭ বছর কারাবাসের পর নেলসন ম্যান্ডেলা যখন মুক্তি পেলেন, তখন একজন অস্ট্রেলিয়ান দর্শনার্থীর কাছে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘ব্র্যাডম্যান কি এখনো বেঁচে আছেন?’

ক্রিকেট মাঠে বোলারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো মানুষটি মাঠের বাইরে ছিলেন খুব সাদাসিধে। ১৯০৮ সালের আজকের দিনে নিউ সাউথ ওয়েলসের নিরুত্তাপ পাহাড়ি শহর কোতামুন্দ্রায় জন্মেছিলেন ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যান। ছোটবেলায় সময় কাটানোর জন্য নিজেই বানিয়েছিলেন অদ্ভুত এক খেলা, ‘সলো ক্রিকেট’। পাকা মেঝেতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে আঘাত করতেন গলফ বলে। সেই বল পানির ট্যাংকে আঘাত করে ফিরে আসত তাঁর কাছে। পাল্টা আঘাতে আবার বল ট্যাংকে লাগাতেন। এভাবে ছেলেবেলায়ই ব্যাটিংয়ের মৌলিক প্রশিক্ষণ অবচেতনভাবে হয়ে গিয়েছিল। একদিন বাবার সঙ্গে সিডনি ক্রিকেট মাঠে অ্যাশেজ দেখতে গিয়েছিলেন কিশোর ডোনাল্ড। তখন সবে স্থানীয় একটা দলের হয়ে খেলা শুরু করেছেন। বেশির ভাগ দিনই স্কোরার কিংবা দ্বাদশ ব্যক্তির ভূমিকায় থাকতে হতো তাঁকে। হয়তো ইংল্যান্ডের সঙ্গে সেই টেস্ট দেখতে গিয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘এ মাঠে না খেলা পর্যন্ত আমি থামব না।’

ভাগ্যিস, বাবা জর্জ সেদিন ছেলেকে মাঠে নিয়ে গিয়েছিলেন! তা না হলে স্যার ডনকে কি আমরা এমন অবিস্মরণীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পেতাম?

১,৬৯২ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “শুভ জন্মদিন স্যার ডন”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    শুভ জন্মদিন স্যার ডন

    আমাগো আশরাফুল পোলাডারে একটা ফু দিয়া দেন বস। হালায় ব্যাটিং পারে না।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. আশহাব (২০০২-০৮)

    ধন্যবাদ কামরুল ভাই 😀 তবে আশরাফুলকে মনে হয় ফু দিয়া কিছু হইবো না, ঝাড়ুর বাড়ি দিতে হইবো :gulli2:


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  3. সামীউর (৯৭-০৩)

    এই পোস্টের পুরা কৃতিত্ব কামরুল ভাই এর। আমি কালকে লেইখাই অফিস থেকে হাওয়া হয়ে গেসিলাম। কামরুল ভাই সকালে পত্রিকার ওয়েব এডিশন থেকে এইটা নিয়া সিসিবি তে পোস্ট দিসেন, তাই দায়দায়িত্ব সব কামরুল ভাইএর ;;; ।

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    স্যার ব্র্যাডম্যান, আপনারে স্বশস্ত্র সালাম... :gulli2: :salute:
    আপনার মতন আর কেউ ছিল না, কেউ কখনো আসবেও না... :boss:

    সামীউর, লেখাটার জন্য... :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সামীউর (৯৭-০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।