দ্যা গ্রেটেস্ট , মাই ওন স্টোরি- ১

সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধার আত্মজীবনী ‘দ্য গ্রেটেস্ট – মাই ওন স্টোরি’ । মোহাম্মদ আলীর জবানীতে লিখেছেন রিচার্ড ডায়হাম।
‘কালের কন্ঠ’তে ধারাবাহিক ভাবে অনুবাদ করছি আমি। ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ, সেই প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে সিসিবিতে দেয়ার লোভটাও সামলানো গেল না!
—————————-
‘আলীর দিন শেষ’
——
মুষলধারে বৃষ্টির মাঝে আবছাভাবে মাইলফলকটা চোখে পড়ল, ‘লুইভিল-১০০ মাইল’। ‘আমরা সকালের আগে পৌঁছাতে পারব না’ভেসে আসা কণ্ঠটা আমার ড্রাইভার হ্যারল্ড হ্যাজাড্রের। সে অনেকণ ধরেই স্টিয়ারিংয়ে বসে আছে, এবং আমার মনে হয় স্রেফ মনের জোরেই গাড়ি চালাচ্ছে।
‘অবশ্যই পারব, স্টিয়ারিংটা আমায় দাও’ বলে হ্যারল্ডকে পেছনের সিটে পাঠিয়ে দিলাম, যেখানে বেলিন্ডা ও মরিয়ম বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।
এই রাস্তার প্রতিটি অন্ধি-সন্ধি আমার হাতের তালুর মতোই চেনা, কারণ এই পথ চলে গেছে আমার নিজের শহর লুইভিলে। এ সময় হঠাৎ করে ক্রিস ডানডির সেই কথাটাই মনে হলো, ‘একজন পরাজিত মানুষ হিসেবে মাথা নিচু করে নিজের ফেরার পথটা অনেক লম্বা মনে হয়।’ আসলেই, মানুষ বিজয়ীদেরই মনে রাখে, পরাজিত মানুষের জন্য কোনো সংবর্ধনা অপক্ষা করে না। এত দিন ধরে লোকজন শুধু আমার বিজয়ী চেহারাটাই দেখেছে, দুটো গোল্ডেন গ্লাভস শিরোপা, বেশ কিছু অ্যামেচার অ্যাথলেটিক ইউনিয়ন শিরোপা, একটা অলিম্পিক স্বর্ণপদক, বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা… সবকিছু জিতে এখানে এসেছিলাম সম্রাট আলেকজান্ডারের মতো! এমনকি, যখন আমার বক্সিং লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হলো, তখনো পেয়েছিলাম বীরের সম্মান, আর এখন নিজেকে লুকানোর জায়গা খুঁজছি!
সময়টা ১৯৭৩-এর বসন্ত, এমন এক সময় নিজের শহরে ফিরছি যখন সেখানকার প্রতিটি শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ আমাকে হারতে দেখেছে অথবা আমার পরাজয়ের খবরটা শুনেছে। পত্রিকার পাতায় বড় বড় শিরোনাম, ‘আলীর দিন শেষ’, ‘আলী খতম হয়ে গেছে’, ‘আলীকে যে কেউই হারাতে পারে!’, ‘সব বড় বড় কথা বন্ধ’!
আমি ঘরে ফিরতে চাই, শান্তি চাই, বিশ্রাম নিতে চাই, নীল আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখি দেখতে চাই, আমার বাবাকে দেখতে চাই, পুরনো বন্ধুদের কাছে ফিরতে চাই। আমি দেখতে চাই আমি কোথায় ছিলাম, কোথা থেকে এলাম এবং কোথায় যেতে চাই! যেখানে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, আমার জীবনের প্রথম একুশটি বসন্ত। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে ‘বাড়ি’ কোনটা? সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনি আর চাবুকপেটা খাওয়ার পর কান্ত-শ্রান্ত ক্রীতদাসরা যেখানে ফেরে, সেটাই কি তাদের সত্যিকারের ‘ঘর’?
গাঢ় অন্ধকারে সামনের রাস্তা ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। অগত্যা গাড়ি থামাতে হলো। সামনে উঁকি দিয়ে দেখলাম, জমাট বাঁধা অন্ধকারে মাইলের পর মাইল। যেন একটা সিনেমায় একটাই দৃশ্য, রিল ঘুরছে কিন্তু ছবি সরছে না!
আমার মাথার ভেতরেও একটা সিনেমা চলছে, যেখানে আমি থাকলেও নায়ক অন্য কেউ। সান ডিয়েগো স্পোর্টস অ্যারেনা, শেষ রাউন্ড সমাপ্ত। আমি দাঁড়িয়ে আছি রিংয়ের এক কোণে। রেফারি বিচারকদের ভোট সংগ্রহে ব্যস্ত। লোকটা ভোট গোনা শেষ করল, আমার দিকে এক পলক তাকাল, এরপর তাকাল নরটনের দিকে। এবং ঘোষণা করল, ‘সম্মানিত বিচারকদের রায়ে আজকের বিজয়ী কে-এ-এ-ন… ন-অ-অ-রটন।’ রেফারির ঘোষণার রেশ বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই দর্শক-সারি থেকে ভেসে এল বিদ্রুপেরর উল্লাস, সেই সঙ্গে নরটনের নামে জয়ধ্বনি। ‘নরটন, নরটন’ ধ্বনিতে উল্লাসে ভেসে যাচ্ছে আকাশ-বাতাস।

চলবে…

১,৩০৪ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “দ্যা গ্রেটেস্ট , মাই ওন স্টোরি- ১”

  1. মুস্তাকিম (৯৪-০০)

    আলীর একটা জীবনী পড়েছিলাম কলেজে থাকার সময়। বইটার নাম ভুলে গেছি, কিন্তু ভাল লেগেছিল খুব। বইটার তিন চারটা কপি ছিল লাইব্রেরিতে।তাই ভাবলাম একটা কপি আমি নিয়া গেলে অন্যায় কিছু হবে না। নিয়ে আসলাম ঠিকই। কিন্তু কেউ একজন বাটপাড়ি করলো। আমার কালেকশন থেকে হাওয়া করে দিল! 🙁

    লেখাটা ভাল লাগছে। নিয়মিত দিও।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।