একদিনের ম্যাচের সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যাক্তিগত ইনিংস

ক্রিস কভেন্ট্রি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১৯৪ রান করে একদিনের ম্যাচের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডবুকে সহবস্থান করছেন পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ারের সাথে। কিন্তু্ তামিমের সেঞ্চুরিতে শেষ হাসি বাংলাদেশের ।দীর্ঘ এক যুগ পর আবারো আলোচনায় সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪,সেই ধারাবাহিকতাতেই থাকছে একদিনের ম্যাচের সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যাক্তিগত ইনিংসের কথা।
১. চার্লস কভেন্ট্রি- ১৯৪* (১৫৬বল, ১৬x৪,৭x৬)- ২৬ বছর বয়সী চার্লস কেভিন কভেন্ট্রি’র ১৪ ম্যাচের ওডিআই ক্যারিয়ারের সেঞ্চুরি ছিলো না একটিও! সর্বোচ্চ ছিল চার বছর আগে ২০০৫ সালে, হারারে তে করা ভারতের বিরুদ্ধে ৭৪ রান। মাঝে জিম্বাবুয়ে দলে সাদা-কালোর দ্বন্দে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া কভেন্ট্রিকে হয়তো ক্রিকেট বিশ্ব ভূলেই যেত! কিন্তু কভেন্ট্রিকে বিশ্ব মনে রাখবে কারণ জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০০৯ এর গ্রামীণফোন সিরিজের আগে আবারো তাকে দলে ফিরিয়ে আনে। আর সিরিজে ফিরেই ২-১ এ পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে কভেন্ট্রি খেললেন এক অতিমানবীয় ইনিংস, যা তাকে একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহের চূড়ায় স্থান করে দিলো। বুলাওয়ের কুইন্স স্পোর্টস ক্লাব মাঠে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা কভেন্ট্রি খেলেছেন ইনিংসের শেষ বলটি পর্যন্ত, অপরাজিত ছিলেন ১৯৪ রানে যা সাঈদ আনোয়ারকে সরিয়ে তাকে স্থান দিয়েছে রেকর্ড বুকের প্রথম পাতায়। এই রান করতে তিনি বল খেলেছেন ১৫৬টি, চার মেরেছেন ১৬ টি আর ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৭টি। তবে একটি জায়গায় কভেন্ট্রি হারাতে পারেননি সাঈদ আনোয়ারকে, কভেন্ট্রি’র ব্যাট জেতাতে পারেনি জিম্বাবুয়েকে। চেন্নাইতে সাঈদ আনোয়ার আউট হয়ে গেলেও তার দল পাকিস্তান ম্যাচ থেকে আউট হয়নি, কিন্তু কভেন্ট্রি’র রেকর্ডস্পর্শী সেঞ্চুরিতেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ থেকে আউট জিম্বাবুয়ে।
২. সাঈদ আনোয়ার ১৯৪ (১৪৬ বল, ২২x৪, ৫x৬)- সালটা ১৯৯৭, প্রায় এক যুগ আগে বর্তমানে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজার নেতৃত্বে, ভারতের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আয়োজিত পেপসি ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ খেলতে ভারতে গেল পাকিস্তান। চার-জাতির এই টুর্নামেন্টের ৬ষ্ঠ ম্যাচে মুখোমুখি চির-প্রতিদ্বন্দী ভারত-পাকিস্তান। চেন্নাই এর চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে দিবারাত্রীর ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিলেন রমিজ রাজা, আর রমিজ রাজার মুখে হাসি ফোটাতেই যেন সাঈদ আনোয়ার খেললেন তার জীবনের অন্যতম সেরা একটি ইনিংস। অনিল কুম্বলে, ভেংকাটেশ প্রসাদ , রবীন সিং ও কুরিভিল্লাদের নাকের জল চোখের জল এক করে খেললেন এক প্রতাপশালী ইনিংস। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অনিল কুম্বলের এক ওভারে হাঁকালেন তিন ছক্কা।সাঈদ আনোয়ারের ব্যাটেই প্রথম মনে হয়েছিলো, ওয়ানডে ম্যাচেও ডাবল সেঞ্চুরি করা সম্ভব! তবে ডাবল সেঞ্চুরির খুব কাছে যেয়েও সৌরভ গাংগুলীর এক অসাধারাণ ক্যাচে থেমে যায় সাইদ আনোয়ারের ইনিংস। আর বোলার ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার! স্কোরকার্ডে এক সাথে ক্রিকেট বিশ্বের সেরা এই তিন মহারথী’র এমন সম্মেলন দূর্লভ বটে, যেমন দূর্লভ সাঈদ আনোয়ারের এই ইনিংস!
৩.স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস ১৮৯* (১৭০ বল,২১x৪,৫x৬) এবার ঘটনাস্থল ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড এর ম্যানচেস্টার। ১৯৮৪ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ইংল্যান্ড সফরে টেক্সাকো ট্রফি’র প্রথম ম্যাচ। দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতেই বিপদে ফেলে দিলো বোথাম-উইলিস-দের ইংল্যান্ড।১১ রানেই নেই হেইন্স-গ্রীনিজের মতো ব্যাটসম্যান। নামলেন স্যার ভিভ এবং আক্রমণের জবাব দেবার জন্য বেছে নিলেন সেরা ভাষাটাই-পাল্টা আক্রমণ। আর তার আক্রোশে পুড়লো ইংরেজ বোলাররা। অবশ্য অন্যপ্রান্তে আসা-যাওয়ার মিছিল অব্যহত ছিলো, তা নইলে কি আর স্কোরকার্ডে ১৮৯ এর পরের সেরা ব্যক্তিগত রান ২৬ হয়! সব মিলিয়ে তিন জন ব্যাটসম্যান এক অংকের কোটা পার করতে পারেন, ভিভ ১৮৯*,ব্যাপ্টিস্তা ২৬ ও মাইকেল হোল্ডিং ১০*! বাকীরা সবাই ১০ এর নিচে, তারপরও হোল্ডিং- গার্নার- মার্শালদের কারণে ম্যাচ জিততে অসুবিধে হয়নি ক্যারিবীয়দের। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৭, এক যুগেরও বেশী সময় ধরে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন আ্যন্টিগায় জন্ম নেওয়া বিশ্ব শাসনকারী এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান।
৪.সনাথ জয়সুরিয়া-১৮৮ (১৬১ বল, ২১x৪, ৪x৬)- ‘মাতারা হারিকেন’ শ্রীলংকার সনাথ জয়সুরিয়া শারজাহ এর মরুর বুকে তুললেন মরু-ঝড়! আর সেই ঝড়ে নুয়ে পড়লো ভারতের বোলিং আক্রমণ। ২০০০ সালে শারজাহ তে কোকাকোলা চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফির ফাইনালে আক্ষরিক অর্থেই ভারতীয় দলকে গুঁড়িয়ে দেয় শ্রীলংকা। আর শুরুটা হয় সনাথ জয়সুরিয়ার ব্যাট থেকে, যার ঝাঁঝটা বেশী বুঝেছেন অজিত আগারকার ও ভেঙ্কটেশ প্রসাদ। আগারকার ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬৭ আর প্রসাদ ৭ ওভারে ৭৩! শ্রীলংকার সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৯৯ আর তাতে জয়সুরিয়ার একক অবদান ১৮৯! জয়সুরিয়া ৪৯ তম ওভারের প্রথম বলে গাঙ্গুলীর বলে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্প হবার আগে মনে হচ্ছিলো যেন সাইদ আনোয়ারের রেকর্ড ভাঙ্গাটা কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেই ম্যাচে ভারতীয় দলকে মাত্র ৫৪ রানে অল-আউট করে ২৪৫ রানের বিশাল হারের লজ্জ্বায় ডোবায় লংকানরা, জিতে নেয় কোকাকোলা চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি।
৫. গ্যারি কারস্টেন ১৮৮* (১৫৯ বল,১৩ x৪,৪x৬)-১৯৯৬ এর উইলস বিশ্বকাপ। বি গ্রুপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিপক্ষ আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাত। রাওয়ালপিন্ডি’র মাঠে আরব আমিরাতের অঘটনের স্বপ্ন উড়ে গেল কারস্টেনের ব্যাটে। ভারতীয় দলের বর্তমান কোচ গ্যারী কারস্টেন রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন ‘ইউ এ ই’ এর অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণ নিয়ে, উদ্বোধন করতে নেমে ইনিংস শেষে ছিলেন অপরাজিত। একই সাথে ক্যারিং দ্যা ব্যাট থ্রু দ্যা ইনিংস এবং বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ইনিংস।

(পাঁচটি ইনিংসের মধ্যে কভেন্ট্রি , সাঈদ আনোয়ার ও জয়সুরিয়ার ইনিংস গুলো টিভিতে লাইভ দেখেছি, স্যার ভিভ এর সময় জন্মও হয়নি আর কারস্টেনের ইনিংস খুব সম্ভবত সম্প্রচার করা হয়নি বা দেখি নাই।
একই সাথে www.crickettomorrow.com এ প্রকাশিত।)

২,৩৪১ বার দেখা হয়েছে

৩৩ টি মন্তব্য : “একদিনের ম্যাচের সর্বোচ্চ পাঁচটি ব্যাক্তিগত ইনিংস”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    ধন্যবাদ সামিউর।
    খুব সুন্দর পোস্ট।
    আজকের খেলাটি মিস করলাম বলে খুব আফসোস হচ্ছে।
    সাঈদ আনোয়ারের ১৯৪ এখনো চোখে ভাসে।
    ওয়ানডে তে ২০০ কখন হবে কে জানে...

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সময়মতো গুড পোস্ট :clap: :clap:
    আজকে কভেন্ট্রির টা কিংবা তামিমের টা দুইটাইতো একা ফাইটের গল্প। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বোধহয় ৩৭ আর আমাদের ৩৮\৩৯
    কারস্টেনের ইনিংসটা সম্ভবতঃ দেখেছি, যতটুকু মনে পড়ছে। মানে লাইভ টেলিকাস্ট হয়েছিলো। সাইদ আনোয়ারের ইনিংসটা আমরা কলেজে থাকাকালীন ঘটনা। প্রেপ চলছিলো। আমাদের মাত্র অল্প কয়েকজন চুরি করে দেখতে পেরেছিলো 😀

    প্রথম স্ট্রিং এর পেসারের অভাব আজকে খুব ভালোমতোন টের পেল বাংলাদেশ। রবিন হতাশ করছে নিয়মিত। রাসেল রিদম পাচ্ছেনা আগের মতো 🙁 তাও তো ভালো বাংলাদেশের সুহৃদ প্রস্পার উতসেয়া সাহেব ছিলো। শেষের ওভার টাতে এরকম ছেলেমানুষী না করলে ওয়ান্ডেতে ডাবল টন এর ভয়াবহ রেকর্ডটা ঠিক ঠিক করে ফেলতো কভেন্ট্রি।
    আল্লায় বাচাইসে 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. কভেন্ট্রি, সাঈদ আনোয়ার, কারস্টেন ---- লাইভ দেখেছি।

    কারস্টেন এর ইনিংসটা লাইভ দেখিয়েছিল বিটিভি ৯৬ তে... ওপেনিং এ কারস্টেনের সাথে ছিলো এন্ড্রু হাডসন। সাঈদ আনোয়ার আমার সবচাইতে প্রিয় ব্যাটসম্যানদের একজন, সেদিন কাব্যিক একটা ইনিংস দেখেছিলাম... সেই সাথে সৌরভ গাঙ্গুলির একটা অসাধারণ ক্যাচের কথা মনে আছে, টেন্ডুলকারের বৈচিত্র্যময় বোলিং এ সজোরে হাঁকানো বলটা থার্ডম্যানে তালুবন্দী হন আনোয়ার।

    আজকের দিনটায় তামিম এইরকম নান্দনিক ইনিংস না খেললে ভীষণ কষ্ট থাকত। যেই ব্যাটসম্যানের ওয়ানডে ১৫টা, সে অতিমানবীয় ইনিংস খেলবে-- ক্রিকেট এতটা সহজ না। আজকে আম্পায়ারদের ভূমিকা কম ছিলনা। সাকিবের এক ওভারে নিশ্চিত দুইটা লেগ বিফোরের আবেদন নাকচ হয়ে গেল... এই রানের পিছনে অদ্ভূত বোরিং পিচটারও ভূমিকা আছে। ভালো লাগছিল না। এইরকম একজন ব্যাটসম্যান অন্য চারজন কিংবদন্তীতূল্যদের সমকক্ষ হবার কথা?
    সানাথ, আনোয়ার, স্যার ভিভ, সৌরভ...... (কভেন্ট্রি?? :no: :no: )

    জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভিভ রিচার্ডসেরটা বাদে বাকিগুলো দেখেছি 😀 তবে আমার দেখা সেরা ওয়ানডে ইনিংস গিবসের ১৭৫, ৪৩৮ চেজ করে ম্যাচ জিতিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সাথে। আউট হয়েছিল মনে হয় ৩২/৩৩ ওভারে। আহ অস্ট্রেলিয়ারে কি মাইরটাই না দিছিল :dreamy:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. তানভীর (৯৪-০০)

    সুন্দর একটা পোস্ট। :thumbup:

    খেলাটা দেখে বেশ মজা পেয়েছি। শুধু একটা জায়গা খারাপ লেগেছে- ব্যাটসম্যানদের উইকেট থ্রো করে আসাটা। ভালো বলে আউট হলে কষ্ট লাগেনা, কিন্তু বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা যখন নিজের উইকেটটা দান করে আসে তখন খুব খারাপ লাগে।

    জবাব দিন
  6. সাল্লু (৯২/ম)

    "১৯৯৬ এর উইলস বিশ্বকাপ। সদ্যই বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পুনরাগমণ ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার" -- আমার তো মনে হয় ৯২ বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল; তবে আমার ভুলও হইতে পারে।
    যাউকগা, লাইভ না দেখলেও সবকয়টা ইনিংসই পরে দেখা হইছে। কাইয়ূমের কমেন্ট দেইখা মনে পড়লো, আনোয়ারের ১৯৪ এর দিন আমদের সেকেন্ড প্রেপ চলতেছিল - অ্যাকাডেমি ব্লকের বাথরুমে বইস্যা রেডিও দিয়া শুনছিলাম।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।