ছেলে ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। জেলা সমাজসেবা অফিসার। ফার্ষ্টক্লাস গেজেটেড অফিসার। একদিন সচিব হবেই। বিয়ের আগে এসবই বলেছিল পাত্রপক্ষ। আমিও রঙ্গীন স্বপ্নের জাল বুনছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত দুঃস্বপ্নে পরিণত হল। আমার অধমার্ধ আসলে গেজেটেড গরীব।
সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত কিন্তু নিজেই নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। যুগের সাথে তালও মিলাবে না। বড্ড সেকেলে। তারই এক সহকর্মী প্রায়শ বলে- “সাপ কুইচা ব্যাঙ, যা পায়াম খায়াম” । আরেক জন বলেন নাচতে নেমে ঘোমটা দিবেন ক্যান। এক দিন এক প্রাইভেট ব্যাংকের একজন মন্তব্য করলেন- “সরখারি খর্মচারীরার তো ভেতন লাগেনা। তারার মাত- আসি যাই ভেতন পাই, খাজ শেষে বকশিষ চাই। ভেতন বাড়ানর দরখার খিতা ?” আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী মনে করে সরকারী কর্মকর্তা মানেই বিশাল ব্যাপার। অফুরন্ত ধন দৌলত। তারা মনে করে উনি ভিষন কঞ্জুস। এবং আমিও। ইচ্ছা করলে অনেক কিছু করতে পারি কিন্তু না কি করিনা। বাচ্চা কাচ্চার অসুখ বিসুখ হলে কেউ কেউ বলে মানুষের টাকা মেরে খায় তাই আল্লায় অসুখ দেয়। একজন ইউএনও বলেছিলেন এসিআরে সততায় মোটে পাঁচ নাম্বার আছে, সেটি না থাকলেও ৯৫ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু সে তো কিছুই মানবে না। বলে ক্যাডেট কলেজ আমাকে সেই শিক্ষা দেয়নি। নচিকেতার গানের মত- তবু আমি বোকাই হব এটাই আমার অ্যাম্বিশন। গোঁয়ার গোবিন্দ আরকি।
একবার ওর কর্মস্থলে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা এসেছিলেন। ও সাহস করে বলেছিল- সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক ও কল্যাণমূলক কর্মসূচী আমরা বাস্তবায়ন করি। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি কি সরকার বাহাদুর বিবেচনা করবেন ? তখন নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, সরকারী কর্মচারীর চাকরী সহজে যায় না। এটাই সবচেয়ে বড় সামাজিক নিরাপত্তা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে বচসা করা যায় না বিধায় বিষয়টির ওখানেই সমাপ্তি ঘটলো।
অন্যদের মত আমিও মনে করতাম ও অনেক বেতন পায় কিন্তু সত্য গোপন করে। অনেক ঝাড়ি মারার পর একদিন পে স্কেলের গেজেট দেখালো। একজন প্রথম শ্রেণীর বেসামরিক কর্মকর্তার মূল বেতন ১১,০০০/= টাকা। বাড়ি ভাড়া ভাতা ৪০%। চিকিৎসা ভাতা ৭০০/= টাকা আর শিক্ষা সহায়ক ভাতা সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। সরকারী বাড়িতে বসবাস করলে বাড়ি ভাড়া ভাতা পাওয়া যাবে না তবে মূল বেতনের ৭.৫% কাটা যাবে। দুই ঈদে মূল বেতনের সমান উৎসব ভাতা পাওয়া যাবে। তিন বছর পরপর শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা যা একটি মূল বেতনের সমান। ব্যাস, তামাম শোধ। রেশন বা অন্য কোন আনুতোষিক পারিতোষিক নাই। মাসের শেষের দিকে উৎসব হলে নন গেজেটেড কর্মকর্তা কর্মচারীরা অগ্রীম বেতন তুলতে পারবেন কিন্তু গেজেটেড কর্মকর্তা পারেবন না। ভ্রমনের ক্ষেত্রে ৮ কিলোমিটারের ভিতর যতই খরচ হোক তা পাওয়া যাবে না। তবে এর চাইতে দূরে গেলে প্রতি কিলোমিটারে ২টাকা ৫০ পয়সা পথখরচা পাওয়া যাবে। সরকারী গাড়ীতে চড়ে আট ঘন্টা বা তার বেশি সময় ৮ কিমির বাইরে ভ্রমনে একটি দৈনিক ভাতা পাওয়া যাবে। বেসরকারী গাড়ীতে যতই খরচ হোক প্রতি কিলোতে ২ টাকা পঞ্চাশ। সবকিছু বিবেচনায় গেজেটেড গরীব।
পুনশ্চঃ সদাশয় সরকার বাহাদুর মূল বেতনের ২০% মহার্ঘ্য ভাতা দিচ্ছেন । এটি বাড়িয়ে ৪০% বা ৫০% করা যায় কি না , মাননীয় অর্থমন্ত্রী ভেবে দেখবেন আশা করি।
🙁 😕 =(( :bash: :brick: x-( :chup: :no:
এই সম্মান কোথায় রাখি ~x(
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
মোস্তাফিজ ভাই, আপনার কাছে বড় পাত্র-টাত্র থাকলে আমাকে একটু ভাগ দিয়েন। আমার কিছু সাবেকী সম্মান এত বছরে সুদে-আসলে বেড়ে অনেক বড় হয়ে গেছে। রাখার জায়গা পাচ্ছিনা। :-/ :-/ :bash:
গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।
😕 😕 🙁
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
কি বলি?
কিছুই বলার নাই যে......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:boss: :boss: :boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
::salute:: ::salute:: ::salute:: ::salute::
আহ্, দারুণ জিনিষ মনে করিয়ে দিলেন ভাবী! সেই ১৯৯৭ এর অক্টোবরে খুলনা ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করেছিলাম, লেকচারার হিসাবে। সেযুগে চাকরীর বাজারে কম্পিউটার সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপক কদর উপেক্ষা করে ২৮৫০/= টাকা বেসিক বেতনে, নন-গেজেটেড গরীব হিসাবে। কয়েকমাস পরে নতুন পে-স্কেল পেয়ে বেতনটা আরও একটু বেড়েছিল। :dreamy: :dreamy: :-B
গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।
দেড়বছরের সরকারী চাকুরীতে ছিলাম খাগড়াছড়িতে। পাহাড়ে পোস্টিং এর কারণে মাসে ১২০০ টাকা অতিরিক্ত পেতাম। কোন প্রাইভেট প্র্যাকটিস ছিলোনা, অফিস আওয়ারে টাকা নিতামনা রোগীদের কাছ থেকে, সার্টিফিকেট লিখেও পয়সা কামানোর ইচ্ছে ছিলোনা। ফলে কলিগদের চক্ষুশূল হচ্ছিলাম। আসতে যেতে ইউএনওকে সালাম না ঠোকার অপরাধে শুনতে হয়েছিলো ডাক্তাররা কসাই, অহংকারী। অথচ রাতবিরেতে পিয়ন পাঠিয়ে বিপি মাপিয়ে নিতেন ইচ্ছে হলেই। এই ছিল আমার প্রজাতন্ত্রের চাকুরী। (সম্পাদিত)
এই রাষ্ট্রীয় প্রতারনার বেড়াজালের মধ্যে থেকেও আর দশজন সরকারী অফিসারের মত গড্ডালিকা প্রবাহে ভাই যে গা ভাসিয়ে দেন নি সেজন্য গর্ব আমরা বোধ করতেই পারি। মোস্তাফিজ ভাইকে ::salute:: ::salute:: ::salute::
সরকারি বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবী আরো জোড়ালো হোক।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
:hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এই প্রসঙ্গে নতুন করে... প্রায় সকল পরিধির চাকুরিজীবি-র লেখা আশা করছি......
আমার নিজেরটা আসবে ...ইনশাআল্লাহ্ মাস কয়েক পরে...
সুন্দর লেখা...এমন প্রাসঙ্গিক...যে...... 😕 😕