ছোটবেলা,বড়বেলা আর ছেলেবেলা

১৯৮৫ ডিসেম্বরের ২১ ডিসেম্বরের রাত ২৩টা ৪০ মিনিটে আমার মায়ের সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে লন্ডন টাউনের এক হাসপাতালে আমার বোন পুর্ণতা ও আমি ভূমিষ্ট হই। সাত মাস বয়সে যখন আমরা পৃথিবীতে আসি তখন আমাদের চোখটাও ঠিক মত ফুটেনি। আমার ডান পায়ের সাথে আপির বাম হাতের চামড়া জোড়া লাগানো ছিল। ২মাস পরে আমাদের আলাদা করা হল। আমার মা প্রথম দুই বছর আমাদের নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। তার পর আরো ছয় মা পর আমার আব্বু আপিকে আমার দাদার কাছে নিয়ে চলে আসেন আর আমার মম আমাকে নিয়ে দারজিলিং চলে আসেন। সেখানে লরেন্স টিউটোরিয়ালে আমার মম স্কুল এডমিন্সট্রেটরের জব নেন। এরপর আরেকভাবে আমাদের জীবন চলা শুরু হল। এর মধ্যে অনেক আনন্দ বেদনার বহু সৃত্মি আছে সেসব বলতে ইচ্ছে করছেনা। যখন আমি স্কুলে যাওয়া শুরু করি ১৯৮৯ এর মার্চ মাস বয়স ছিল তিন বছর তিন মাস। আমি তখনও ফিডারে দুধ খেতাম। খুবই আল্লাদি মার্কা লুতুপুতু টাইপ আরকি। এরপর ১৯৯৬ তে পুরোপুরি বোডিং স্কুলে চলে গেলাম, এর আগে আমি পেয়িং গেষ্ট হিসাবে ন্যানির কাছে থাকতাম। এরমধ্যে আমার মম কুয়েত এয়ার লাইন্সের অফিস জব করতেন তো ভ্যাকেশনে আব্বুর সাথে দেখা করে কুয়েতে কয়েকবার যাওয়া হয়েছিল। খুবই নাটকীয় হলেও সত্য যে ১৯৮৯ ও১৯৯০ এ হায়দারের সাথে আমার দেখা হয় কুয়েতে। ওর বাবা কয়েক বার বিভিন্ন এয়ার লাইন্সে চাকরী করায় কোন না কোন ভাবে ওর সাথে আমার কথাবার্তা, খাওয়াদাওয়া এমনকি হয়দারের কোলেও উঠা হয় আমার। ও ছিল আমার ছয় বছরের বড়। ১৯৯১ থেকে কখনো ওকে আর দেখি নাই। ২০০৩ এ একদিন মেসের রুমে শুয়ে শুয়ে দুইজন পিচ্চি কালের কথা বলতে বলতে ওর কুয়েতের প্লে গ্রাউন্ডের সামনে ডে কেয়ারে মাহা নামের মুসলিম গোলাপি রঙের একটা মেয়ে পাঁচ/ছয় বছরেও ফিডার খাওয়ার কথা বলছিল। তখন আমার কথা ওর কথা যতটুকু দুইজনের মনে পরে তার সবই মিলে যায়। আমাদের দুইজনের রিলেশনশীপ আর লাইফ স্টোরিটা কেন যে এত ড্রামাটিক, আমি বুঝিনা। যাই হোক আমার বড় পিচ্চি লেখাপড়া দিয়ে তার লাইফটা শুরু করছে। ওর জন্য যে কত কিছু ভালমন্দ অপেক্ষা করছে, আমি জানিনা। ছেলেটা আমরা খুব সরল আর ইমোশনাল। ওকে নিয়ে খুব ভয় হয় আমার। ছোট বড় সবাই সহজেই ওর কাছ থেকে যে কোন কিছু নিয়ে নিতে পারে। আর পিচ্চিটা হল খুব শার্প আর সেন্সএবল। ও এখনই বড় কেউ আমাকে কিছু বলতে চাইলে আগেই রিঅ্যাক্ট করে। কারো সামনে ওকে বকা দিলে তিন/চার ঘন্টায় নরমাল হয় না। কানগুলো লাল হয়ে যায়। আমার বাচ্চাগুলো যেন মনুষের মত মানুষ হতে পারে আর কোন ভুল স্টেপ যেন আমার না দিতে হয় প্লিজ সবাই দোয়া করবেন।

২,০১৫ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “ছোটবেলা,বড়বেলা আর ছেলেবেলা”

  1. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    ওর বাবা কয়েক বার বিভিন্ন এয়ার লাইন্সে চাকরী করায় কোন না কোন ভাবে ওর সাথে আমার কথাবার্তা, খাওয়াদাওয়া এমনকি হয়দারের কোলেও উঠা হয় আমার।

    😮 :khekz: :boss:

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    হায় হায় ভাবীর সাথে(এবং ভাবীর বোনের সাথে)আমার জন্মের দিন তারিখ সবই দেখি এক-সেই সাথে সালটাও!

    ইয়ে মানে ভাবী,আপনি ত সেই ছুডুকাল থিকাই সেইরকম রোমান্টিক ছিলেন-আর হায়দার ভাইও ছয় বছর বয়েসেই সেইরাম রোয়ান্টিক ছিলো-ভবিষ্যতের স্ত্রীকে ছয় বছর বয়েসেই কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য সারা দুনিয়ায় কয়জনের হইছে সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত না 😛

    জবাব দিন
  3. মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)

    ভাবী,২১ তো একটা মহান দিন,তাই না?কারন ২১ ফেব্রুয়ারী,২১ নভেম্বর ইত্যাদি।এছাড়া আপনার ও মাস্ফু ভাইর জন্মদিন এটাও একটা কারন!
    এরপরও একটা কারনে ২১ মহান,কারনটা হলঃ ১৯২১ আমার ক্যাডেট নম্বর... 🙂 🙂

    জবাব দিন
    • প্রেরণা (অতিথি)

      আচ্ছা সিসিবির কেউ কি ছোট বেলায় ;)) কোলেই উঠে নাই? সবাই কি জন্মের সাথে সাথে ড্রিল পিটি :frontroll: করা শুরু করছে নাকি ভাই? ফাইন তো এটাও তো :hatsoff: মহান বিষয়। আর একটা কথা জামাই তাড়াতাড়ি চলে যাবে বলেই তো আগে আগে প্রেম, বিয়ে , বাচ্চা হওয়ানো , এমনকি পিচ্চিকালে কোলে উঠা, সবই সাকসেসফুল্লি জয় :thumbup: করা। তাই না, ঠিক না। আমার সাথে কমপিটিশনে কেউ জিততেই পারবেনা। হি হি হি। 😀 😀 😀 😀

      জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    হিসাব করে দেখলাম প্রেরণা, তোমার জন্মের ৬ মাস পর আমি আর তোমার ভাবী "সংসার" শুরু করি। এখন মনে হচ্ছে, আসলেই বুড়ো হয়ে গেছি!!


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হায়দার (৯৮ - ০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।