স্মৃতি………

আমি শুধু মাত্র আমার মনের কষ্টের কথা গুলাই এখানে শেয়ার করেছি। কিন্তু সত্যি বলছি কাউকে কখনো কষ্ট দেবার কোনরকম ইচ্ছা আমার ছিল না বা হবেও না। তবে হয়তো নিজের অজান্তে আমার ইমোশনটা আমি সেরকম ভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। আশা করি কেউ অন্যভাবে নেবেন না।

cox's-bazar-Me-and-Rumee

ইমরান, মুসা, মহসিন,আখতার,মঈনুল,আহমেদভাইসহ আরো অনেক জন আছেন যারা আমাদের সংসারের শুরু থেকে আমাদেরকে অনেক সাহস ও সহযোগিতা করেছেন। আমার আগের কয়েকটা লেখার কোন একটাতে উল্লেখ করেছিলাম যে আমাদের সংসারের খরচটাও চলত আপনাদের সাহায্য সহযোগিতায়। ১২ ইনটেকের সবাই আমাকে আর হায়দার কে ভালো রাখতে অনেক হেল্প করেছিলেন। পিলখানার ঘটনার পরে আমার কোন সেন্স কাজ করে নাই। সে সময় আপনারা কাছে থেকে দূরে থেকে যে যেভাবে পেরেছিলেনন সাধ্য মত আমাকে সাহস দিয়েছিলেন। আমি দোয়া করি সবাই ভালো থাকেন। লেখার ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

football-childhood-Tanveer-Haider-Noor

মানুষের জীবনটা বড়ই বিচিত্র। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে মানুষকে কতই না কষ্ট করতে হয়।পুরোটা সময় শ্রম দিবার পর প্রাপ্তির মুখ কত জন দেখতে পারে! একদিন সে ফুরিয়ে যায়। শুধু থাকে তার উত্তরসুরি আর তাদের মাঝে থেকে চলে যাওয়া মানুষটার বহু স্মৃতি। আর সে যদি হয় সবচেয়ে প্রিয় কেউ তাহলে কখনও তাকে ভুলে থাকা যায় না। আমার জীবনেও ছিল এমন একজন……….

happy-moment

১৯৯৭-এ আব্বু অসুস্থ হবার পরে দেশে ফিরে আসলাম। আমার কাছে ছিল আমার বন্ধুরা,তাদেরকে আমিই ছেড়ে আসলাম। এখন যখন খুব একা ফিল করি,ওদেরকে মনে মনে খুজতে থাকি। যাই হোক, দেশে এসে ময়মনসিংহ ক্যাডেট কলেজ-এ এডমিশন টেস্ট দিতে রেডি হচ্ছিলাম। তেমন কিছু পড়াশুনা করি নাই তাই ভেবেছিলাম ঘোড়ার ডিম পাব। কিন্তু অবাক হলাম টিকে যাবার পরে। আব্বুকে বল্লাম ওদের খাবারে তেলপোকার পা থাকে, ব্যস আর পাঠানো হলনা আমাকে। আবার পুরানো স্কুলে ভ্যাকেশন শেষে চলে গেলাম। আচ্ছা ১৯৯৮-এ ময়মনসিংহ ক্যাডেটে চলে গেলে কি আমার প্রিয় মানুষটার বউ হতে পারতাম? ওর নাকি গার্লস ক্যাডেটদের বউ বানানোর জন্য ইচ্ছা ছিলনা। অবশ্য আমাকে পটানোর উদ্দেশ্যেও এগুলা বলে থাকতে পারে। যখন আমার সাথে ওর পরিচয় হয়েছিল তখন ভাব করেছিল যে মেয়েদের সাথে এ্যাফেয়ার করলে আল্লাহ গুনাহ দিবে, আম্মু বকা দিবে। আর মেয়েদের সাথে কারণ ছাড়া নাকি সে কথা বলে না। তারপর কোন মেয়েকে ফোন করে কথা বললে আব্বুর পারমিশন লাগে, সিও কে জানাতে হয়, আরো কত কি! ও কিন্তু আমাকে নিজেই ওর নম্বরটা দিয়েছিল। বলেছিল,আমার এই ফোন নম্বরটা প্রথম কোনো মেয়েকে দিচ্ছি। আমাকে ছাড়া আর কোন মেয়েকে নাকি কোনদিন খেয়ালই করে নাই।

horse-riding

এরপর যখন সংসার শুরু করলাম তখন আমাদের একটা সেল ফোন ছিল,সেটা আমার কাছেই ও রাখত। আমি প্রায়ই একগাদা মেয়ের ফোন রিসিভ করতাম। কেউ বলে আপনি কে? আপনি কেন ওর ফোন ধরেন? এটা তো ওর আম্মুর গলা না, ওর তো কোন বোন নাই! এরপরে যখন ওকে বল্লাম তুমি আমার সামনে ওই মেয়েদের সাথে কথা বল, তখন ওর ডায়রিয়া হয়েছিল। আর সেকি কান্না। বাচ্চাদের মত আমাকে শুধু বলত, রণা আমাকে ছেড়ে তুমি কখনো যেওনা।

early-days

আমার আর ওর জীবনে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু কখনও একজন একজনকে ছেড়ে থাকতে পারিনি। আমার এত সুখের সৃতি ও আমাকে দিয়ে গেছে যে, আমার দোয়া সারাজীবন ওর জন্য থাকবে। একটা কথা আমি অব্শ্য বুঝি যে, ক্যাডেট কলেজের ছেলেরা ফ্যামিলির প্রতি খুবই কেয়ারিং থাকে।

3-of-us

একবার আমার ইফাজ হবার আগে আমি খুব সিক হয়ে গেলাম। ও প্রতিদিন আমার কাছে এসে নফল নামাজ পড়তো। আমার মাথার কাছে বসে দোয়া পড়তো, ভোরে শুয়ে শুয়ে আমি সেই দোয়া শুনতাম। আমার বড় ছেলে হবার পরে নার্স বলেছিল তোয়ালে আর ফিডার আনতে। তখন অনেক বড় ছয়টা তোয়ালে আর দুইটা বড় সাইজের ফিডার নিয়ে এসেছিল। সবার তখন সে কি হাসাহাসি। সেটা দেখে ও বলেছিল, বেশী বেশী খেয়ে যেন তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়। তখন আমি আর তুমি বুড়াবুড়ি ঘুরে বেড়াব আর ও চাকরী-বাকরি করে আমাদের খাওয়াবে।

son-and-father

সব কিছুই এখন স্বপ্ন।

২৯ তারিখে ওর নাম দিয়ে লাশ দাফন হবে বনানী গোরস্হানে। আপনারা ওর জন্য আর সকল শহীদদের জন্য অনেক দোয়া করবেন।

৩,৬৯৩ বার দেখা হয়েছে

২৮ টি মন্তব্য : “স্মৃতি………”

  1. রকিব (০১-০৭)

    উপস্থিত থাকতে পারছি না। তাই দূর থেকেই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে যাবো। ভাইয়া, যেখানেই থাকুন, আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখবেন এই দোয়াই করি।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. সাদিক (২০০০-২০০৬)

    ভাবি
    আমি খুব ছোট্ট একটা ছেলে শরীরের সাইজেও আর সামাজিক স্ট্যাসেও কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলো অনেক বড়।আমার বিম্বাস আজ যে আমি স্বপ্ন দেখি কাল তা সবাই দেখবে আমি না পারলে আমার সন্তান পারবে কিন্তু একদিন সব এমন থাকবেনা।
    ভাবি কোন দরকার লাগলে এই ছোট ভাইটাকে মনে করেন

    জবাব দিন
  3. রহমান (৯২-৯৮)

    হায়দার ভাইয়ের জন্য দূর থেকে শ্রদ্ধা :salute: :salute: :salute:

    ভাবী, মনকে শক্ত রাখুন। নার্ভাস হবেন না। সবসময় বাচ্চাদুটোর কথা মাথায় রাখবেন। আল্লাহ আপনার সহায় হোক

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : rumana

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।