২৫ নভেম্বর ২০০৯: নয় মাস পর আবারো . . . আমার কিছু কথা . . .

ক্যাডেট কলেজ ব্লগের কথাগুলো গত একমাস ধরে পড়ছি। অনেক কিছুই জানলাম। সবার অনেক আনন্দ, কষ্ট, ক্ষোভের কথা শুনলাম। আজকে আমি কিছু বলতে চাই। আমি মিসেস ক্যাপ্টেন তানভীর। আমার সাথে তানভীরের বিয়ে হয় ২০০২-এর ২১ নভেম্বর। আমাদের নিজেদের পছন্দে দুই পরিবারের অমতে এ বিয়েটা হয়। আমার পরিবারের সাথে ওদের পরিবারের বনিবনা হয় নাই কোনভাবে। তানভীর আমাকে ১৪ তারিখ ফোনে জানায় যে, সে ছুটি নিয়েছে। সে কয়েকদিন চিন্তা করে একটা ডিসিশন দিবে। আর সে সময় আমাকে বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হতো না, সব সময় চোখে চোখে রাখা হতো আমাকে। তানভীর আমাকে একটা মোবাইল ফোন দিয়েছিল, সেটা আবার ছিল তার এক ক্যাডেট ফ্রেন্ডের। সারাক্ষণ সেটা বন্ধ করে রাখতাম, বাথরুমে গেলে কল ছেড়ে ওকে মিস কল দিলে আমাদের কথা হতো। আমাদের বাসা থেকে খুব চেষ্টা চলছিল আমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবার জন্য। ভীষণ টেনশনের মধ্যে ছিলাম। প্রতিদিন বাসা থেকে বকা-মার-ধোর আসত আমার উপর।

With-my-handsome-husband-Tanveer
তার কলেজের ৪র্থ রি-ইউনিয়নে একেকটি জায়গা আমাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল

২০ নভেম্বর হঠাৎ ও আমাকে বললো, ‘আমার বেতন মাত্র ৬,০০০ টাকা। বউ-কে রাখার সামর্থ্য এই মুহূর্তে আমার নেই। কিন্তু তুমি যদি চলে যাও আমাকে ছেড়ে, তাহলে আমি গাড়ির নিচে পড়ে আত্মহত্যা করবো। গত ৬ দিন আগে ২১ দিনের ছুটি নিয়েছি, এখন পর্যন্ত বাসায় যাই নাই, শুধু ঢাকার বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। যদি তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও, তাহলে লালমাটিয়ার আড়ং-এ রাত ৮:৩০-এর মধ্যে চলে আসবা।’ আমি কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিল! আমি ৮ ঘন্টা চিন্তা করলাম, শুধু ওর কথাগুলো মনে পড়ছিল। হঠাৎ বিকালের দিকে মা-ফুপুর কাছে মাফ চাইলাম, আর বললাম আমার ছোট ফুপুর বাসায় নিয়ে যেতে। এরপর আমার বড় ফুপু আমাকে ছোট ফুপুর বাসায় নিয়ে যাবার সাথে সাথে দরজার সামনে থেকে ব্যাগ নিয়ে সোজা মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আসলাম। আমার মায়ের আংটি আর চুড়ি সোনার দোকানে বিক্রি করে দিলাম মাত্র ১,৫০০ টাকায়।

Our-wedding-anniversary-21-11-2005
৩য় বিবাহ বার্ষিকীতে রাঙ্গামাটি হরিনার পথে, পাশে আমার তানভীর

তারপর আড়ং-এ আসলাম। এসে দেখি ও বাইকটা রাখছে। আমাকে দেখে বললো যে, ও বিশ্বাস করতে পারছে না। বললো, ‘তাড়াতাড়ি চলো এখান থেকে। আমার সিও লে. কর্নেল এনায়েত (বর্তমানে শহীদ) স্যার জানেন আমি আম্মুদের বাসায় পৌঁছাই নাই। এদিকে থাকলে সমস্যা আছে।’ এরপর আমরা আরামবাগ সিল্ক লাইন কাউন্টারে গেলাম। ও ওর কোর্সমেট রাব্বি ভাইকে বললো বাইকটা নিয়ে যেতে। আর বললো যে, ও ছুটিতে যাচ্ছে। রাব্বি ভাই আমাকে চিনতেন না। এরপর আমরা কক্সবাজার যাই এবং ওখানে এক কাজী অফিসে ইফতার করার পর আমাদের বিয়ে হয়। আমরা তারপর আবার রাতের বাসে ঢাকায় ফেরত আসি।

Me-and-Rumi-2003-ccc12-get-together
২০০৩ সিসিসি টুয়েল্ভটথ গেট-টুগ্যাদারে, তখনো আমাদের বিয়ের ১ বছরও হয়নি

ও আমাকে ওর রাজেন্দ্রপুর মেসে নিয়ে যায়, এবং সিও-কে ফোনে জানায় সব কথা। সিও ভাই আমাদের বাসায় ইনফর্ম করেন, এবং একটা গাড়িতে করে আমাকে আমাদের বাসায় পাঠানো হয়। তানভীরকে ১ মাস পর ক্যাপ্টেন পদবী পড়ানো হয়, আর তার পর পরই সাইকিক ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। আমাদের বাসায় আমাকে প্রথমে কেউ কিছু বলে না। কিন্তু আমার শ্বশুড় এসে আমার মায়ের সাথে কথা বললে আমাকে আবার স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ইংল্যান্ড যাবার জন্য ব্যবস্থা করে ফেলে। এর মধ্যে আমি আর ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারি নাই। ৩৬ এডির কিছু সিনিয়র অফিসার কোনভাবেই আমাদের যোগাযোগ করতে দিতেন না, এবং সংসার জীবনের শুরুর পরও তাদের অর্থাৎ ৩৬ এডির সেই সব অফিসারদের আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনে অযথা হস্তক্ষেপের কারনেই বলবো যে, প্রথম থেকে তারা বলতেন, ‘পোস্টিং দিয়ে বিডিআর-এর হিলে পাঠিয়ে দিলে প্রেম-পিরিতি ছুটে যাবে।’ যাই হোক, হঠাৎ সিএমএইচ-এর ডাক্তার ভাই আমাকে সাইকিক ওয়ার্ডে আসতে বলেন। আমি বাসা থেকে পারমিশন নিয়ে সেখানে গেলে তানভীরকে রিলিজ করা হয়।

My-Lonely-Moment
আমার একাকিত্বের মুহূর্তে কেউ একজন সেল ফোনে ফটোটা তুলে এই জুলাইতে

ও আমাকে নিয়ে মিরপুরে ওর ব্রিগেড কমান্ডারের সাথে দেখা করে, আর সেখানে আমার থাকার ব্যবস্থা করে। ৩৮ এডির যশোরে ওর পোস্টিং হয়। এরপর থেকে আমরা যশোরে প্রথমে মেসে, পরে রুপসা-২৫ এ থাকতে থাকি। প্রথমে চলতে খুবই কষ্ট হতো। এমন দিনও গিয়েছে আমরা মেসে প্রতিবেলা ১ জনের খাবার নিতাম, ওটাই খেতাম ২ জন ভাগ করে। ওর ক্যাডেটের ফ্রেন্ড আর আমার বড় ফুপু আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করতেন। এরপর আমাদের বড় ছেলেটা হলো। তখন তানভীরের ভীষণ কষ্ট হতো, কারন ইফাজের জন্য ৫ দিনে ২ টা করে দুধ লাগতো। আমি লুকিয়ে ইফাজকে সুজি, সাবু, ভাতের মাড়ের সাথে চিনি দিয়ে খাওয়াতাম। ওর বেতন ছিল মাত্র ৮,০০০ টাকা। রেশন ছিল মাত্র ১ জনের, কারন ও এলিজাবেল হয় ২০০৬-এর সেপ্টেম্বরে। তখন আমার ছোট ছেলেটা পেটে ছিল। এরপর থেকে আমরা ২ জনের রেশন পেতাম। আর্মির চাদর, কম্বল পেলাম ২০০৮-এ এই প্রথম ১ বার।

forcing-medicine-to-Ifaaz
ইফাজকে নাক চেপে হা করিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হতো, আমার খুব পছন্দের একটি ছবি

এরপর ওর ২০০৫-এর জুলাইয়ে বিডিআর-এ পোস্টিং হলো। আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির সাথেও মোটামুটি সম্পর্ক বাড়তে থাকলো। সেখানে আমাকে কয়েকদিন রাখার পর তানভীর আমাকে ৮ দিন পরই ছোট হরিনা চলে আসতে বললো। উল্লেখ্য এই ৮ দিনই ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেশি দিন একসাথে না দেখে থাকা। আমরা কখনো আলাদা থাকতে পারতাম না, না ও- না আমি। ও সবসময় বলতো, ‘মিশনে গেলে তো আমরা দুইজন পাগল হয়ে যাবো!’ বিডিআর রংপুরে বিওপি-তে ৫ রাত থাকতে হতো, ও মাঝ রাতেও ফোন করে খুব সুন্দর করে বলতো, ‘ফোনে একবার রাগারাগি করো না . . . প্লিজ . . . না হলে ঘুমাতে পারছি না . . .’

Monpura-Me-and-Tanveer-22-11-2005
মনপুরা . . . ৩য় বিবাহ বার্ষিকীর পরদিন, আমি আর তানভীর, ২২ নভেম্বর ২০০৫

একজন আর্মি অফিসার তার স্ট্যান্ডার্ডে কি বেতন পায়- কত যে কষ্ট করেছি আমরা। আমাদের ২ টা ছোট শিশুকে কত কিছু থেকে যে বঞ্চিত হতে হয়েছে। সবাই ভাবে জীপে বা অন্যান্য গাড়িতে আর্মি অফিসারদের ওয়াইফরা ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু কেউ কি জানে, এই গায়ের জামা-কাপড়গুলোর বেশির ভাগই থাকে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের উপহার? কোন অনুষ্ঠান বা পার্টি আসলে টেনশন, দেশে সিডর বা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত সমস্যা তৈরি হলে বেতন থেকে টাকা কাটা হয়। কতদিন কত পছন্দের জিনিস দোকানে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়! তারপরও যখন শুনি আমার তানভীর বা অন্যান্য ভাইয়েরা অসৎ, তখন আর জায়নামাযে বসে মনে মনে আল্লাহকে বলা ছাড়া কিছু করার থাকে না।

My-second-asset-Woada
আমার দ্বিতীয় আদরের সোনা-মানিক, তানভীরের কলিজার টুকরা ওয়াদা

আজকে দীর্ঘ ৯ মাস মনে মনে ওকে খুঁজছি, কেউই আমাকে সাহায্য করলো না ওকে খোঁজার জন্য। যাদের মুখে শুনতাম, ‘তানভীর আমার এডজুটেন্ট না হলে কর্নেল হতে পারতাম না।’ এমনকি তানভীর সেক্টরের জি-টু এর কাজটাও করে দেয়। ও না থাকলে অন্যান্য ব্যাটালিয়নের সাথে ম্যানেজ করতে সমস্যা হতো। ২৫ ব্যাটালিয়নের সিও এবং অপস (ওপিএস) ভাইয়ের চাকরি যায় যায় অবস্থা ছিল। কারন, বিএসএফ বাংলাদেশে ঢুকে কয়েকটা ফ্যামিলিকে এটাক করে। ব্যাটালিয়নের কেউ তৎক্ষণাৎ আসে নাই। সেখানেও এই ছোট্ট অফিসারের কোর্ট অফ এনকোইয়্যারি করে তাদের সেইফ করলো। সেক্টরের জি-টু ভাইয়ের গাড়িতে বিডিআর-এর ড্রাইভার এক্সিডেন্ট করে একজন মানুষকে মেরে ফেললো। সেখানেও সেই সৈনিককে তানভীর সেইফ করলো। জি-টু ভাইয়ের চাকরি নিয়ে সমস্যা হয়ে গেল। উনি তানভীরকে বলেছিলেন লোকটা ডেড বডি-কে দেখে তার বাবার কথা মনে হচ্ছিল, কারন সেই ভাইয়ের বাবা ভাইয়ের সামনেই রোড এক এক্সিডেন্টে মারা যান। ওখানেও উনি বেঁচে গেলেন। আর ৩৪ ব্যাটালিয়নের সৈনিকেরা এখনো তাদের অন্যান্য অফিসারের সামনে বলে ফেলে, ‘তানভীর স্যারের মতো স্যার আর জীবনেও কাউকে পাবো না।’ অথচ আজকে ৯ মাসেও এসে বলতে হয় আমার হাজবেন্ড অনেক দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্ম নিয়েছিল।

4th-from-left-34-rifle-battalion-2008
বাম দিক থেকে দাঁড়ানো ৪র্থ তানভীর, আর মাঝে একমাত্র সানগ্লাস পড়া শহীদ কর্নেল আফতাব ভাই

১ সেপ্টেম্বর ২০০৮-এ মেজর হতো। কিন্তু আর্লি ম্যারেজে তার ৬ মাস সিনিয়রিটি ডাউন হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পদবী পড়বে। ব্যাটালিয়নের অন্য অফিসারের নাম থাকলেও আর্মিতে পোস্টিং অর্ডার হওয়ার পর ক্যাপ্টেন পদে থাকা অবস্থায় প্যারেড এডজুটেন্ট হয়ে প্যারেড করায়। আমাকে বলে ১ মার্চ পড়বে। কিন্তু ওকে তো পেলামই না! কোথায় পদবী পড়বে? যে ভাই পড়াবেন কর্নেল আফতাব(শহীদ কর্নেল আফতাব) ভাই, তিনিও তো নাই! আমাকে মাননীয় পিএম কথা দেন যে, ওকে ‘মেজর’ পদবী দেওয়া হবে। ২ বার উনার সামনে মইন ভাইও কথা দেন আমাকে। কিন্তু কোথায় সেই কথা দেয়া? মেজর হবার প্রতিটি ফাইল তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এটা তো তার জন্য অনুগ্রহ, উপহার, বা অনুদান নয়, তার প্রাপ্য, তার কর্ম জীবনের অর্জন, তার ন্যায্য অধিকার। এখনো ব্যবস্থা হয় নাই কারো, শুধু অনুদানের টাকায় চলছি। শুনলাম কমপ্লিট ১০ বছর চাকরি হয় নাই, তাই পেনশনের ৫০% টাকাও এককালীন হয়তো আমি পাবো না। শুনেছিলাম আর্মির এই বাসাটাও ২ বছরের জন্য দেওয়া হয়েছে, পরে পার্মানেন্ট আবাসনের ব্যবস্থা হবে। ৯ মাস তো চলে যাচ্ছে, কোথায় যাবো এরপরে? ক্যান্টনমেন্ট থেকে চলে গেলে যে বিডিআর সৈনিকদের আইডেন্টিফাই করেছি, তারা কি আমাদের ছেড়ে দিবে? এখনো তো ফোনে যে সব হুমকি দেয়, তাতে তো অনিশ্চয়তায় বাইরে যেতেও ভয় হয়।

My-handsome-husband-with-happy-mood
আমার হাজবেন্ড ক্যাপ্টেন তানভীর আনন্দদায়ক মনে (ইলেকশন ডিউতে তখন ছিলেন)

২৫ ফেব্রুয়ারি আমি যখন লাস্ট কথা বলি তানভীরের সাথে, নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ও আমাকে বলেছিলো, ‘আমি ছাড়া তোমার তো কেউ নাই, তুমি গোলাগুলি হলে পালিয়ে যেও না। আমি তো বাঁচবো না, তুমিও বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে যেও না, তুমিও গুলির সামনে চলে যেও।’ ঠিক সে সময়ই আমার ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে আমার গলায় গুলি করার চেষ্টা করে। কিছু বুঝতে পেরে কিংবা না পেরেই আমি রাইফেলের মধ্যে ধরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেই, গুলি আমার কানের পাশ দিয়ে চলে যায়, আমার গলার বামদিকে ও ঘাড়ের মাঝামাঝি জায়গায় আঘাতটা লাগে। এরপর আমাকে সাথে সাথেই রুম থেকে বের করে। রাইফেল দিয়ে আঘাত করতে করতে কোয়াটার গার্ড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হতে থাকে। মাঝে মাঝে থেমে যেতে হচ্ছিল বলে বুট দিয়ে লাথি মারতে মারতে নিয়ে যেতে থাকে। ছোট ছেলেটা আমার এক কোলে, আর বড় ছেলেটা ভয়ে আতঙ্কে আমার এক পা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। এ অবস্থায় কি দ্রুত হাঁটা সম্ভব? আমার ৪ বছরের ইফাজ ও পোনে ২ বছরের ওয়াদা-কেও কাপড় খুলে মারতে থাকে। আমার বাচ্চাগুলোর শ্বাস-কষ্ট শুরু হয়ে যায়। এভাবে ২ দিন ওদের না খাইয়ে কোয়াটার গার্ডে নিয়ে থাকি।

Happy-Birth-Day-to-Ifaaz-14-11-2008
গাড়ির ডিজাইনের দুটি কেক দিয়ে গত বছর জন্মদিনে বাবার সাথে ইফাজ, কোলে ওয়াদা

১০ এপ্রিল ছোট ছেলেটার বাবা ছাড়া তার দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকী পালন করলাম। এই ১৪ তারিখ প্রথমবারের মতো বাবা ছাড়া আমাদের বড় ছেলেটারও জন্মদিন হয়ে গেল। তারপর আমার ম্যারেজ ডে হলো ২১ নভেম্বর।

One-of-the-happiest-moments-of-my-life
২১ নভেম্বর ২০০৫ আমার ম্যারেজ ডে, জীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক একটি দিন

গত বছর ও বলেছিলো, ‘নেক্সট ইয়ার আমাদের লাকি স্যাভেন ইয়ার হবে। অনেক অনেক মজা করবো।’ আরো বলতো, ‘আমাদের ম্যারেজ ডে-টা সশস্ত্র বাহিনী দিবসে- অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় দিন।’ ও কি জেনে বলতো যে, আমাদের জীবনের সব কিছুই . . .

Our-Wedding-Anniversary-21-11-2005
এই মুহূর্তগুলোর কথা সারা জীবন মনে থাকবে, ও যে কতটা হেল্পফুল এবং কেয়ারিং

সিসিবি-তে আমার স্বামী, তার সহযাত্রী, ও আমাদের নিয়ে লেখা বেশির ভাগ পোস্টই আমার পড়া হয়েছে। কমেন্টগুলোও দেখেছি। প্রচণ্ড কষ্টের মাঝেও ভালো লেগেছে, খুশীও হয়েছি খুব। এজন্য সিসিবি’র সকলকে ধন্যবাদ দেয়া ছাড়া আর কি করতে পারি?

Rajbari-Ifaaz-Tanveer-and-Me-12-Jan-2008
১২ জানুয়ারি ২০০৯ শীতের সময় রাজবাড়িতে ইফাজ, তানভীর, আর আমি

আমার আরেকটা কথা তাদের প্রতি, যারা জানেন না আর্মি অফিসারদেরকে। ভাই, সবাই সিভিলিয়ান হয়েই জন্ম নেয়। গায়ে হয়তো কেউ কেউ কোন ইউনিফর্ম পড়ে পেশার জন্য। কিন্তু তাদের কেউ কি আনসিভিলাইজড? তাহলে দুই/একজনের কথার জন্য কি পুরো আর্মি সোসাইটি কি খারাপ হতে পারে? কেন এত বিদ্বেষ আমাদের এই প্রিয় মানুষগুলোকে? আজ পর্যন্ত এই আর্মিকে ছাড়া দেশের কোন কাজ- তথাকথিত সিভিলিয়ান কি করে দেখাতে পেরেছে? আমাদের দেশের মিনিষ্টার- এনারাও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কিন্তু এই পোসাকধারীদেরকে সাথে রাখেন। তাদের খাবার আগে পোসাকধারীরা খেয়ে চেক করেন।

Some-bhabis-09-11-2008
মিসেস কর্নেল আফতাব (বামে ১ম), মিসেস মেজর জেনারেল শাকিল (বাম থেকে ৩য়),
আর আমি মিসেস ক্যাপ্টেন তানভীর (ডান থেকে ৩য়)

আমি খুবই সাধারণ একজন নারী। আমার অনুরোধ আপনারা সত্যকে জানুন। না জেনে ভুল বুঝে কোন কথা প্রকাশ্যে বলে প্লিজ উনাদের কাউকে অপমান করেন না। আমাদের কথা- যদি আপনারা কেউ সত্যটা জানতেন, তাহলে হয়তো নিজে আয়নার সামনে আসতে লজ্জা পেতেন।

Me-and-Ajij-bhabi
১১ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ তে, শিলিগুড়ির কাছাকাছি বিএসএফ-এর একটি অনুষ্ঠানে আমি ও ইফাজ এবং আজিজ ভাবী ও রুকাইয়া (শহীদ মেজর আজিজ ভাইয়ের ফ্যামিলি)।

আমি কাউকে হার্ট করতে (কষ্ট দিতে) চাই না। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমাদের সকল শহীদ ভাইদের প্রতি দোয়া করেন, এবং আমাদের দুর্ভাগা পরিবারগুলোর পাশে কোন আর্থিক সহায়তা নয়, শুধু ‘মনের শক্তি’ সহায়তা দিয়ে বেঁচে থাকার সামর্থ্য দিবেন।

My-Handsome-Husband-on-the-way-to-Rangamati
আমি কি পারবো কখনো আমার তানভীর-কে ভুলে থাকতে . . . ? কখনোই না . . .

১৬,০০৯ বার দেখা হয়েছে

৮৬ টি মন্তব্য : “২৫ নভেম্বর ২০০৯: নয় মাস পর আবারো . . . আমার কিছু কথা . . .”

        • জোবায়ের আহমেদ নবীন

          প্রেরণা.......
          পৃথিবীটা খুবই ছোট...তা আজই টের পেলাম। অনলাইনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে একটি ব্লগে একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো..প্রথমে ব্যাপারটা ফানি মনে হলেও, শেষ পযর্ন্ত মনের আকাশে একরাশ কালো মেঘ ছেয়ে গেল। আমি এখনো জানিনা হায়দার ভাইয়ের কি হয়েছিল,..জানার কথাও নয়! কারণ সে আমার পরিচিতের সীমানার বাইরের কেউ...
          কিন্তু তবুও....পৃথিবীর সব কেন?র যেমন জবাব হয়না, ঠিক তেমনি এক সহজ অথচ অনেক কঠিন একটি প্রশ্ন উকি দিচ্ছে মনের কোনে, কি হয়েছিল হায়দার ভাইয়ের?
          আমি জানতে চাই........নবীন, ঢাকা

          জবাব দিন
  1. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ইফাজ, ওয়াদা ভালোভাবে বেড়ে উঠুক, বাবার চেয়ে বড় হোক সবদিক থেকে, আপনার সমস্ত অপূর্ণতা ইনশাআল্লাহ তারা পূর্ণ করে দেবে।

    আপনাদের মত লড়াকু মানসিকতার মানুষের জন্য শ্রদ্ধা ছাড়া আপাতত কিছু নেই আমাদের কাছে, কিন্তু তবুও আমরা আছি, আপনার সংগে, তানভীরের অনেকগুলো বড় এবং ছোট ভাই।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ভাবী, এই ব্লগটা মনে হয় বুকের রক্ত দিয়ে লেখা... পড়তে পড়তে চোখ যে কখন ভিজে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। শুধু এইটুকু বলব- আমরা আছি আপনার সাথে। যখন যা লাগে এই ভাইবোনদের শুধু একবার বলবেন। অকৃতজ্ঞ সরকার বা অথরিটির কথা জানিনা, আমরা ক্যাডেট কলেজের যারা আছি তারা অন্তত আপনাকে ভুলে যাবে না- এটুকু কথা দিচ্ছি। আপনার যে ইস্পাত-কঠিন মনোবল দেখলাম, তাতে মনে হয় না কোন প্রতিকূল অবস্থাই আপনাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে। তারপরেও বলি ভাবী, আমরা ক্যাডেটরা শুধু কথা নয়- কাজেও আপনার পাশে আছি এবং থাকব।

    জবাব দিন
  3. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    আমি ছাড়া তোমার তো কেউ নাই, তুমি গোলাগুলি হলে পালিয়ে যেও না। আমি তো বাঁচবো না, তুমিও বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে যেও না, তুমিও গুলির সামনে চলে যেও।’

    :hatsoff:
    ভাবী,
    আমার চোখের জল ছাড়া অনুভূতির আর কোন ভাষা নেই। কখন দু'চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছে বুঝিনি।

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    বড় অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা । কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

    ভাবী আপনি সাহস হারাবেন না। ইফাজ, ওয়াদাকে অবলম্বন করেই আপনি শক্ত হোন। আল্লাহ ওদেরকে বাবার চেয়েও বড় হওয়ার তৌফিক দিন। এরাই বড় হয়ে আপনার সব না পাওয়াকে পূরন করবে।

    ভাইয়ার ত্যাগ ও আপনার সাহসিকতাকে লক্ষ সালাম।

    জবাব দিন
  5. রশিদ (৯৪-০০)

    ফয়েজ ভাইয়ের কথার প্রতিধ্বনি করতে চাই...... ইফাজ, ওয়াদা ভালোভাবে বেড়ে উঠুক, বাবার চেয়ে বড় হোক সবদিক থেকে, আপনার সমস্ত অপূর্নতা ইনশাআল্লাহ তারা পূর্ন করে দেবে.........

    ভালো থাকুন আল্লাহর কাছে এই-ই চাওয়া.........

    জবাব দিন
  6. রেশাদ (৮৯-৯৫)

    অনুমতি ছাড়া এই লেখাটার লিঙ্ক দিলাম আমার কয়েকজন বন্ধুকে।
    অনুরোধ...
    ১. কিছুদিন এটা স্টিকি করা হোক।
    ২. ভাবীকে লগইন আইডি দেয়া হোক। আমাদের এখানে guest ছাড়া একটা honorary মেম্বারশীপ এর ব্যবস্থা করা যায়না? ভাবীকে সেটাই দেয়া যেতে পারে।

    জবাব দিন
  7. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ভাবী কষ্ট অনেক হবে, বিপদও অনেক আসবে। আপনি সারা জীবনই অনেক কষ্ট সামাল দিয়ে আসছেন, সামনের গুলোও ঠিক এভাবেই পার করেন। শুধু জেনেন, আমরা সবাই পাশাপাশি আছি। ইফাজ ওয়াদা আপনাদের দুজনের মনের মত করে গড়ে উঠুক, এই দোয়া করি।

    জবাব দিন
  8. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    পুরোটা পড়তে পারিনি। তার আগেই চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। অনেক অনেক ভালো থাকবেন ভাবি।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  9. তখন তানভীরের ভীষণ কষ্ট হতো, কারন ইফাজের জন্য ৫ দিনে ২ টা করে দুধ লাগতো। আমি লুকিয়ে ইফাজকে সুজি, সাবু, ভাতের মাড়ের সাথে চিনি দিয়ে খাওয়াতাম।

    বাচ্চা খুব মায়ার ১টা জিনিস, তাই এই লেখাটা পড়ার পর কান্না আটকে রাখতে পারিনি।

    জবাব দিন
  10. মাফরুহা (২০০১-২০০৭)

    ভাবী, কি বলবো বুঝতে পাইতেছি না... লেখাটা পড়তে অনেক সময় লাগলো... কারন চোখটা বার বার ঝাপসা হয়ে যাইতেছিল... প্লিজ... এটুকু মনে রাখবেন... আমাদের ক্যাডেটদের দোয়া সব সময় আপনার, ইফাজ আর ওয়াদার সাথে থাকবে।

    জবাব দিন
  11. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    ভাবী,
    আমাদের সাথে থাকুন।
    স্বান্ত্বনা দিতে পারব না তবে কষ্টের ভাগীদার আমরাও।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  12. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    "যার গেছে শুধু সেই বোঝে,
    বিচ্ছেদে কি যন্ত্রণা..."

    ভাবী,

    তারপরেও বলি, যন্ত্রণা আমরাও বোধ করি...তবে অবশ্যই তা আপনার সাথে অতুলনীয়। শুধু এটুকু জেনে রাখুন, একা নন আপনি। আপনার এই ভাই-বোনগুলো সবাই আপনার সাথে আছে। শুধু একবার ডেকে দেখুন।

    ইফাজ আর ওয়াদা'র জন্য রইল বুক ভরা ভালোবাসা। সমস্ত শোক আপনার শক্তিতে পরিণত হোক।

    আমিন।

    ভালো থাকবেন।

    জবাব দিন
  13. সাব্বির (৯৫-০১)

    কিছু বলা উচিত, কিন্তু কি বলব বুঝতে পারছিনা 😕 😕 ভাবী আপনার মত সাহসীরাই সামনে এগিয়ে যেতে পারবে। ইফাজ এবং ওয়াদার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালবাসা।

    জবাব দিন
  14. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বয়সে আমার চেয়ে বড় না হলে কাউকে ভাবী ডাকি না। সিসিবির আর সব বোনের মতো তুমিও আর একজন বোন। তানভীর, তুমি, ইফাজ আর ওয়াদাকে এরই মধ্যে মোসাদ্দেক আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মোসাদ্দেকের ব্লগে যে তুমি লিখেছো, সেটা আধঘণ্টা আগে এই লেখাটা পড়তে গিয়ে টের পেলাম। পড়া শেষে পাতাটা অনেকক্ষণ ধরে খোলা। কি লিখবো, কি বলবো বোন? সহানুভূতি জানাতে চাই না, পারি না। তোমার সঙ্গে সহমর্মিতা, সংহতি জানাই। তুমিই তোমার যুদ্ধটা লড়বে। এই লড়াইয়ে তোমার জয় হবে জেনো নিশ্চিত। আমরা অবশ্যই তোমার পাশে থাকবো। আমাদের ভালোবাসা বর্ম হয়ে তোমাদের আগলে রাখবে। ভালো থেকো। সব শুভকামনা তোমাদের জন্য।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  15. মুহিব (৯৬-০২)

    আপনার কথাগুলো পড়ে চোখ ভিজে উঠেছে বারবার। আর আর্মি অফিসাররা কিভাবে সংসার চালায় এটা লিখার জন্য ধন্যবাদ। এই তথ্যগুলো আমরা কখনও বুঝাতে পারি না। শুধু প্রশ্ন, আমাদের প্রতি এত বিদ্বেষ কেন?

    জবাব দিন
  16. ভাবি অনেক কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্ট... আপনাদের পাশে আমরা আছি সব সময়। আল্লাহপাক আপনার এবং আপনার সন্তানদের জীবনকে সহজ করে দিবেন- এই প্রার্থনা করি উনার কাছে।

    জবাব দিন
  17. সাধারণত আমি কোথাও কমেন্ট করি না, ভালো লাগে না। কিন্তু এখন আর পারছি না। আমি কিছু লিখতে চাই, কারন আমার যে বলার কিছু নাই। অনেক সময়ই ভাষা জিনিসটা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, এখন আমরা তা বুঝলাম। আল্লাহ আপনার সাথে আছেন, আর আছে আপনার সন্তান। এটিই আপনাকে পথ দেখাবে- এই দোয়াই করছি।

    জবাব দিন
  18. অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা... আপনার কষ্টটা আপনি ছাড়া কেউই বুঝবেনা... যার যায় সে-ই বুঝে... তবে আপনার এই কষ্টের কথা গুলো শুনে খুব খুউব খারাপ লাগছে... এভাবে আপনার কষ্টের কথা গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবেন... হয়তো আমরা কেউ তা দূর করতে পারবোনা... তবে আপনার কষ্টটাতো একটু হলেও লাঘব হবে... ভালো থাকার চেষ্টা করবেন ভাবী... যতটুকুন সম্ভব... আপনি মোটেও একা নন ভাবী... আমরা আছি আপনার পাশে... মুখ না... মন থেকেই বললাম... আর মহান আল্লাহ আমাদের সবার সাথেই আছেন... আপনার জন্য, ইফাজ, ওয়াদার জন্য মন থেকে দোয়া থাকল।

    জবাব দিন
  19. যখন অনেককিছু লেখার থাকে তখন কিবোর্ডের বাটনগুলো যেন আঁঠালো হয়ে যায়। কিছু একটা লিখি, তারপর ব্যাকস্পেস চেপে পুরোটা মুছে দিই। কি লিখব বুঝে উঠতে পারি না। শোক, ক্ষোভ আর হতাশা একসাথে মনে জমা হলে লেখা যেন আরও কষ্টকর হয়ে যায়।

    শহীদ ক্যাপ্টেন তানভীর সহ ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ তারিখে পিলখানায় যেসব মানুষ প্রাণ দিয়েছেন সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আরও অনেক বলেছি, এখনও বলছি, ঐদিন যারা খুব অন্ধকারকে প্রত্যক্ষ করেছিল, তারা সারাটা সময়ই তার জবাব খুঁজে ফিরবে। আমরা যারা অন্ধকার রাতে অন্ধকার ঘরে জ্বলন্ত মনিটরের সামনে বসে একটার পর একটা ছবি দেখছিলাম আর খুব নীরবে অশ্রু ঝরাচ্ছিলাম, আমরাও জবাব খুঁজে ফিরব।

    জবাব দিন
  20. ভাবি, আপনার লেখাটা পড়ে বার বার চোখ ভিজে উঠেছে... বড় হতভাগ্য জাতি আমরা, যারা বীরের, শহীদের এবং আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কখনই তাদের প্রাপ্য সন্মান তো দূরে থাক, বিচারটাও দিতে পারলাম না... এসব চিন্তা করে নিজেকে বড় বেশি ছোট আর তুচ্ছ মনে হয়... আমাদের এই নির্লজ্জ সরকার কি করবে জানিনা, কোনো কিছু আশা ও করিনা এই জানোয়ারদের থেকে, তবে আমরা ক্যাডেট কলেজের যারা আছি, তারা অন্তত আপনাকে ভুলে যাব না- এটুকু কথা দিচ্ছি... আমাদের প্রতি বেলার প্রার্থনা এ তানভীর আছে এবং থাকবে... আমাদের শেষ সামর্থ্যটুকু দিয়ে চেষ্টা করব আপনাদের পাশে থাকার... মনে রাখবেন আপনার অনেকগুলো ভাই আছে যারা শুধু কথায় নয়, কাজেও আপনাদের পাশে থাকবে... অন্তরের অন্তস্থল থেকে প্রার্থনা করি ইফাজ আর ওয়াদার জন্য... ওরা ভালোভাবে বেড়ে উঠুক, পূর্ণ করে দিক আপনার সমস্ত অপূর্ণতা।

    মশি/৭ম ইন্টেক, সিসিসি

    জবাব দিন
  21. তানভীর, অপেক্ষা করো... সকল 'মিসজাজমেন্ট' ও 'কন্সপাইরেসি'... অন্ধকার খুব দ্রুত কেটে যাবে... শুধু সে সময়টুকুর জন্য চোখদুটো খোলা রাখো... এবং তারপর বুজে ফেলো চিরতরে...

    জবাব দিন
  22. ভাবি... আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া করি... প্রায়ই যে কথাটায় দু'চোখ ভিজে ওঠে, তা হলো- আর্মি অফিসাররা খারাপ... কিন্তু কেন তা হবে??

    ইফাজ ও ওয়াদা... আশা করি তোমরা ভালো থাকবে, এবং অনেক অনেক আনন্দে থাকবে।

    জবাব দিন
  23. লুবজানা (২০০৫-২০১১)

    সবাই হয়তো বলবে আমি ছোট, আমি কি বুঝি? কিন্তু আমার যদি এই শক্তি থাকতো, আমি ভাবিকে বলতাম..................... যাই হোক, নাই যেহেতু......... আমি সরি ভাবী, আমি কিছু বলতে পারবনা............ শুধু অনেক ভালবাসা রইল...... আপনার জন্যে, বাবুগুলার জন্যে।


    নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!

    জবাব দিন
  24. ভাবি, আমার সকল ভাবনা ও প্রার্থনাগুলো রইলো হায়দার ভাইয়ের জন্য। আমরা একই হাউজে ছিলাম, আর আমার রুমটা ছিল কমন রুমের কাছে। সময় সুযোগ পেলেই আমার দরজার কাছে এসে জিজ্ঞেস করতেন, 'রশিদ, এখন কি আমার সাথে একটু ক্যারাম খেলতে পারবা?'

    ওনার সাথে শেষবার আমার দেখা হয় কুমিল্লায়, প্রাইম বাস কাউন্টারে, ২০০৭-এ। আমি বিস্মিত হয়েছিলাম যে, উনি আমার নাম মনে রেখেছিলেন! আমরা একই সাথে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসি। অনেক কথা বলেছিলাম সেদিন। এগুলো সত্যিই আমাকে খুব কষ্ট দেয়।

    জবাব দিন
  25. আপনি অনেক লাকি, লিখে নিজের কষ্ট একটু হলেও লাঘব করতে পারলেন। কিন্তু সৈনিকদের স্ত্রীরা তাও পারলো না... সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

    জবাব দিন
  26. আমি পুরোটাই পড়লাম। কখনো আবেগের চেয়ে বাস্তবতাটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। আপনাকে এখন খুবই সাবধানে ডিসিশন নিতে হবে, প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। যে যাই বলুক, আপনার সব কিছু আপনাকেই অর্জন করতে হবে। অনেকে অনেক আশা দিবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন! ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কোন উপকার করতে পারবে না- এটাই বাস্তব। তাই দয়া করে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করে সামনে যাবেন, আমার প্রার্থনা রইলো, সম্মান রইলো।

    জবাব দিন
  27. আহমেদ রায়হান আমিন

    ভাবি আমরা আপনার সাথে আছি...... আপনি ওয়াদা এবং ইফাজকে ওদের বাবার মতন করে গড়ে তুলুন...... আর যা হয়েছে তাকে মেনে নেয়া ছাড়া সামনে আগাতে পারবেন না............ সুতরাং আপনাদের ২ সন্তান এর জন্য আপনাকে শক্ত হতে হবে............ ভায়া আর জন্য রইলো অনেক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা............... ইফাজ এবং ওয়াদা এর জন্য রইলো আশির্বাদ......

    জবাব দিন
  28. তোমার না পাওয়া সব কিছু একদিন তোমার ঐ ২ টা ছেলে করে দেবে ইনশাল্লাহ। কী যে কষ্ট পেয়েছি তোমার ব্লগটা পড়ে, বলতে পারবো না। আল্লাহ'র কাছে দোয়া করি শুধু। আল্লাহ তোমাদের সবার মঙ্গল করুন। তোমার বাচ্চারা একদিন অনেক অনেক বড় হবে।

    জবাব দিন
  29. আমি অজানা কেউ... ভাবী সব কিছু শুনে ভীষণ কষ্ট লাগছে... কি বলবো জানি না... ভালবাসা মানে কি শুধুই কষ্ট...? ভালবাসা কি কোন পাপ...? তা না হলে আল্লাহ কেন আপনাকে এত কষ্টের মাঝে ফেললো...? আপনার ফুলের মতো জীবনটাকে যারা এমন পরিণত করেছে, তাদের জন্য কোন ক্ষমা নাই... তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক... আর আল্লাহ যেন তাদের কোনদিন ক্ষমা না করে... এটাই আমার কামনা... ভাবী যদি আমি আপনার কষ্টগুলো সব নিতে পারতাম... আপনার মুখে হাসি ফুটাতে পারতাম...? যদি পারতাম, আপনার ফুলের মতো নিষ্পাপ জীবনটাকে যদি ফিরিয়ে দেয়া যেত, আর কিছু বলতে পারছি না... আমার দু'চোখ পানিতে বুক ভেসে যাচ্ছে...

    জবাব দিন
  30. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    কী আর লিখবো... শুধু ইচ্ছে করছে তোমার মতো সাহসী নারীকে সামনা সামনি একবার দেখতে। একদিন যার হাত ধরে স্বপ্নের পথে যাত্রা শুরু করেছিলে, আজ সে স্মৃতি, দুঃখ, শোক, ভালবাসা, সাহস, শক্তি... জানি না কিভাবে তোমার বুকে চেপে আছে... তবে যে দুটি স্বপ্ন এখনও তোমার সামনে জেগে আছে, সেদিকে তাকিয়ে তুমি আবার হেসে উঠবে, জীবনকে ভালবাসবে, আলোর সন্ধান করবে, আরো যত আঘাত আসবে, তা সামলিয়ে তোমার স্বপ্নগুলোকে রক্ষা করবে- দূর থেকে শুধু এ দোয়াই করে যাব।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  31. ভাবী, আল্লাহ আপনার সহায় হোন, ছেলেগুলা অনেক বড় মানুষ হোক, আমরা আছি আপনাদের সাথে। আমরা বাইরে থেকে জানতে পারতাম না ভিতরের কাহিনী। আজ জানলাম, যা বড়ই দুঃখের। কিন্তু আমরা আজও জানিনা কি কারনে এই কোন্দল, এই বিদ্রোহ। যদি জানা থাকে, জানাবেন?

    জবাব দিন
  32. মিস তানভীর, আমি আপনার জীবনের কষ্টের কথাগুলো সব পড়েছি। তবে আমি একটি মন্তব্যই করতে পারি যে, হারিয়ে যাওয়ার পরে সর্বশেষ একটি কথাই বেঁচে থাকে, তা হলো, এক তানভীর চলে গেছ, একটি স্ত্রীর জীবনের সমস্ত ভালোবাসা ও জীবন চলার সমস্ত স্বপ্নকে মিথ্যা করে। এক তানভীর চলে গেছে, তার দুটি নিস্পাপ সন্তানকে ফেলে ও চিরদিনের জন্য পিতৃহারা করে, আলোকময় এক প্রদ্বীপকে নিভিয়ে দিয়ে। কিন্তু এক তানভীর প্রাণ দিলেন তার জন্মভূমির মাটিতে, আর জন্ম দিয়ে গেলেন হাজারো তানভীরের। এক তানভীরের উত্তপ্ত রক্তকণিকা থেকে জন্ম নিয়েছে হাজারো নির্ভীক সাহসী তানভীরের। জন্মভূমির সব তানভীর কাহারো স্বামী, কাহারো সন্তান, আবার কাহারো বাবা। ভাবী, কিছুই বলার নেই। সব শেষে এইটুকুই বলতে ইচ্ছে হয়, সমস্ত তানভীরের কথা চিন্তা করে , তাদের সুখ-দুঃখের কথাকে ভেবে নিজের জীবনকে কিছুটা হলেও স্বান্তনা দিয়ে নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

    জবাব দিন
    • প্রেরণা (অতিথি)

      মানুষের এই ক্ষুদ্র জীবনটা কেন যেন এখন অনেক লং টাইমের মনে হয়। আজকে শত কষ্টের মধ্যে থেকে সামনে আমার এগিয়ে যেতেই হবে একলা, রুমি আমাকে কত বড় দায়িত্ব দিয়ে গেছে দুইটা সন্তানকে মানুষ করবার। আল্লাহ তায়ালা যেন আমার সামনের পথকে বাধাহীন করে দেন। কোন একটা কষ্ট যেন আর আমার পথকে আটকে না দেয়। কিভাবে বেঁচে আছি জানিনা; সমস্ত বোধ হারিয়ে ফেলেছি। আমার যদি কোন অসুখ হয়, যদি রাস্তাঘাটে কোন এক্সিডেন্টে মারা যাই, তাহলে কি হবে বাচ্চাদের? আমাদের ভাল থাকার জন্য সাহস ও দোয়া দিয়ে যাবেন সবাই।

      জবাব দিন
  33. আজকে ভাইয়ার নাম দিয়ে লাশ দাফন করে আসলাম। জানি ভাইয়ার লাশ ছিলনা। তবে যে সন্মানটা ভাইয়াকে দেওয়া হল তার জন্য আর্মির কাছে কৃতজ্ঞ। :salute: ভাইয়ার জন্য আমার ভালবাসা ও দোয়ার কোন কমতি কখনোই হবেনা। আমার ভাগ্নে দুজন যেন অনেক ভালভাবে মানুষের মত মানুষ হতে পারে তার জন্য সবাই দোয়া করবেন এবং আমার বোনটার সাহস ও শক্তি হয়ে পাশে দাঁড়াবেন।

    জবাব দিন
    • প্রেরণা (অতিথি)

      মনটা অস্থির হয়ে আছে। কিভাবে আমার জীবনটা চলবে রুমি আমাকে বলে যাও। কেন সেদিন অস্ত্র তুলে নিয়েছিলে সিনিয়ারের কথায়? না উনি বাঁচতে পেরেছেন, না তোমাকে খুঁজে পেলাম। শেষ পর্যন্ত তোমার লাশ ভেবে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এ আসতে হলো, শুধুই বাচ্চা দুজনের জন্য। একা থাকলে তোমার সহযাত্রী না হলেও তোমাকে কাছাকাছি যাবার ব্যবস্থা করতাম। এই মূল্যহীন জীবন কতদিন ধরে রাখতে পারব জানিনা। তবে আমি পরাজিত শুধু এতটুকু বুঝি। দুনিয়ার আর কাউকে ফেইস করার মত ক্যাপাবলিটি তো আমার নাই। তুমি কি একটাবার ফেরত আসতে পারোনা? আমি যদি চলে যাই তোমার দুনিয়ায়, তুমি কি আমার সঙ্গি হবে তখন?

      জবাব দিন
  34. খালেদ আল নাহিয়ান (২০০৫-২০১১)
    সবাই সিভিলিয়ান হয়েই জন্ম নেয়। গায়ে হয়তো কেউ কেউ কোন ইউনিফর্ম পড়ে পেশার জন্য। কিন্তু তাদের কেউ কি আনসিভিলাইজড? তাহলে দুই/একজনের কথার জন্য কি পুরো আর্মি সোসাইটি কি খারাপ হতে পারে? কেন এত বিদ্বেষ আমাদের এই প্রিয় মানুষগুলোকে? আজ পর্যন্ত এই আর্মিকে ছাড়া দেশের কোন কাজ- তথাকথিত সিভিলিয়ান কি করে দেখাতে পেরেছে? আমাদের দেশের মিনিষ্টার- এনারাও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কিন্তু এই পোসাকধারীদেরকে সাথে রাখেন। তাদের খাবার আগে পোসাকধারীরা খেয়ে চেক করেন।


    ভাবী আপনি নতুন করে বুঝতে শিখিয়েছেন...

    আপনার পাশে ক্যাডেট রা থাকবে...


    Nahian

    জবাব দিন
  35. ফারহানা মোস্তারী

    আপু, একবার লিখাটা পড়েই মনের কষ্ট চোখের পানিতে বেড়িয়ে এলো। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি উনি আপনাকে অনেক অনেক সাহস দিক এবং মনের সব কষ্টগুলো একেবারেই তুলে নিক। আপনাকে আল্লাহ অনেক ভালো রাখুক আর পিচ্চিগুলো ভালো এবং প্রতিষ্ঠিত মানুষ হোক। অনেক অনেক দোয়া আপনার জন্য। আমরা আপনার পাশে আছি, থাকব সব সময়ই।

    জবাব দিন
  36. ভাবি,সালাম নিবেন।অনেক আগেই আপনাকে লিখতাম কিন্তু কি লিখব বুঝতে পারছিলাম না।২৫ ফেব্রুয়ারী সকালে যখন টিভি তে জানতে পারলাম বি ডি আর এ গোলাগুলি হচ্ছে...সবাই যখন অফিসারদের জন্য উদবিগ্ম...তখন আমার এক সিভিল বন্ধু আমাকে এস এম এস করে বলছে।।"দেখেছ তোমাদের আর্মি কত করাপটেড,এই জন্ন্যই তো বি দি আর বিদ্রহ করেছে"তারপর যখন গনকবর খুড়ে একের পর এক আমার ভাই দের লাশ উদ্ধার হল ,তখনো এইসব মানুসদের কোনো বোধোদয় হয়নি।ভিতরের কষ্ট টা শুধু আমাদের জন্য।তানভীর ভাই আর আপনার মত সংসার এর আরথিক অবস্তা মনে হয় প্রায় প্রতিটা আর্মি অফিসার এর পরিবারের।সেটা শুধু আমরা যারা সংসার করি তারা ই জানি।আমরা অনেকটাই ভেতরে না খেয়ে থেকে বাইরে সেটা কাউকে বুঝতে দেই না।তাই তো সাধারন মানুস অবলীলায় আমাদের ২ নম্বর বলে গালি দিতে পারে।ভাল থাকবেন ভাবি।

    জবাব দিন
  37. আপু,
    আমি আপনাকে চিনি না। কিন্তু আপনার লেখাটা পড়ে আমি পাগলের মত কাঁদছি। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছি না। জানিনা এখন আপনি কেমন আছেন......!
    আমি আপনার জন্য কিছু করতে পারব কি না জানি না, তবু অনুরোধ আমার সাথে আপনি যোগাযোগ রাখবেন। কারণ আমি আপনাকে বড় বোন হিসেবে মনে জায়গা দিলাম।
    jafrinrezwana@yahoo.com

    জবাব দিন
  38. ভাবী, কি বলবো বুঝতে পাইতেছি না... লেখাটা পড়তে অনেক সময় লাগলো... কারন চোখটা বার বার ঝাপসা হয়ে যাইতেছিল... প্লিজ... এটুকু মনে রাখবেন... আমাদের দোয়া সব সময় আপনার, ইফাজ আর ওয়াদার সাথে থাকবে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : quyumtito

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।