আমি কবি নই তবু কাক ভালবাসি

কাককে বলা হয় ‘স্মার্ট’ পাখি। সে নগরীতে বসবাসের জন্য নাকি তার ভাবগাম্ভীর্যের জন্য, তা আমার ঠিক জানা নেই।তবে সে যখন ঝট করে ঘাড় নাড়ায় তখন মাল্টিন্যাশনালগুলির তুখোড় এক্সিকিউটিভও হাত তালি দিতে বাধ্য হবেন।বাহ! জোশ একটা মোশন দিল তো!

বৃষ্টি দিনে কেউ ভিজে চুপসে হয়ে আছেন।সাথে সাথে সবার মন্তব্য- কাকভেজা ভিজছেন দেখছি। ভেজা কাককে কিন্তু মানুষের মত এমন চুপসে যেতে কোনদিনই দেখিনি। তবু কাকভেজা কেন বলে, আমার তাও জানা নেই।

গ্রামের দিকে ক্ষেত খামারে লাঠির মাথায় মাটির হাড়িতে চুন দিয়ে, আনাড়ী হাতে চোখমুখ একে, লম্বা একটা কুর্তা পরিয়ে কাকতাড়ুয়া বানানো হয়। এটি কি আসলেই কাকদের তাড়ানোর জন্য? কাক কি আসলেই ফসলের ক্ষতি করে? তবে এই কাকই কুমিল্লা থেকে কা কা কা কা করতে করতে উত্তরে রওয়ানা হয়।কিন্তু যখনই সে সিলেট এলাকায় ঢোকে তখনই নাকি ডকে খা খা খা খা ।

এই ঘোর কৃষ্ণবর্ণ পাখিটিকে আবার কবিদের সাথে তুলনা করা হয়।একটা কথা প্রায়শই শোনা যায় এদেশে নাকি কাক এবং কবিরা একই রকম। কাক কালো কবিরাও কালো? কবিরা কবিতা লেখে কাকও কবিতা লেখে? নাকি এদেশে কাকের সংখ্যা প্রচুর কবির সংখ্যাও প্রচুর, বাক্যটা সেজন্যই? আমার জানা নেই।

তবে কাক নিয়ে কবিদের প্রচুর কবিতা আছে। বিশেষত নামহীন কবিরাই এদের নিয়ে বেশি লিখেন। এরকমই একজন পার্টটাইম কবি আমাদের কাব্য নীল( নিজের নাম নিজেই দিয়েছে)। হঠাত করেই একদিন সে মহান কবিতা প্রসব করল
জানালায় কাক
আমিতো অবাক

তার কাব্য শুনে আমরা আরো বেশি অবাক।হূমায়ূন আহমেদের কবি বইয়ের কবিও(বলাই বাহুল্য হূমায়ুন সাহেব নিজেই) কাক নিয়ে কবিতা লিখেছেন
কাক ডাকে কা কা
জগতটারে খা খা

তবে চারুকলার এক বড় ভাইয়ের ধারে কাছেও নয় এই কাব্যগুলো। ইনি কথা বলেন চিঁ চিঁ করে। সেই কন্ঠই তিনি আবৃত্তি করেন তার যুগান্তকারী কাব্য( একটু অশ্লীল কিন্তু ওটা ছাড়া ভাল লাগবে না)।
টেলিফোনের তারে বসে
………………….কাক তুমি কালো
কত কথা আসে যায়
……………..বোঝ না তার বালও

আহা! কি গুঢ় কথা! কি জীবনবোধ! মানুষ এমন কেমন করে লেখে আমার জানা নেই।

কলেজে বিকেল বেলা আমাদের এ্যাকাডেমীর ছাদে প্রচুর কাক বসত। বিকেলে প্রেপ শেষে যখন আমরা সাদা ড্রেসে ফল-ইন হতাম ঠিক তখন থেকেই ওরা কালো ড্রেসে ফল-ইন হতে শুরু করত। সনধ্যার আগে ওদের যেন মেলা বসত। পুরো ছাদটাকে মনে হত কালো সামিয়ানা।
আমার বন্ধুরা গেমস শেষে গোসলের জন্য লাইন ধরতে দৌড়াত।কাকেরা তখন উতসবে মত্ত।ওদের তো আর গোসল নেই! ওদের তো আর বাথরুম বুকিং দেয়ার হ্যাপা নেই!

আমি মকরা ক্যাডেট। সবকিছুতেই লেট।এমনিই যথেষ্ট শ্রম দিয়ে খেলাধূলা করি ,তার উপর আবার দৌড়ে বাথরুম ধরা, আমার পোষায় না।আমি আস্তে আস্তেই ফিরতাম হাউসে।আর নয়ন ভরে দেখতাম কাকদের উতসব।ওরা আমায় দেখত কি? আমার জানা নেই

এই কর্পোরেট জীবনে শত ব্যস্ততায় থাকি।তবু আর সবার মতই, বিকেলটা ভারী বিষন্ন মনে হয়। চলে যাই বারান্দায়। দূরে একটি ছোট মাঠে ছোট ছোট দলে অনেকগুলো গ্রুপ খেলে।অভিজাত এলাকার বাক্সবন্দী তন্বীরা সেই খেলা দেখে মুগ্ধ হয়। স্বল্প জায়গায় এতগুলো গ্রুপ এক সাথে কেমন করে খেলে তা দেখে আমিও মুগ্ধ হই। তবু ক্ষণিকের জন্য হলেও হয়ে যাই আনমনা। চঞ্চল দুই চোখে কি যেন খুঁজি। কালো একটা সামিয়ানা? আমার তাও জানা নেই।

২,৬২৫ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “আমি কবি নই তবু কাক ভালবাসি”

  1. নাজমুল (০২-০৮)
    টেলিফোনের তারে বসে
    ………………….কাক তুমি কাল
    কত কথা আসে যায়
    ……………..বোঝ না তার বালও

    চরম কবিতা :khekz:

    এমনিই যথেষ্ট শ্রম দিয়ে খেলাধূলা করি ,তার উপর আবার দৌড়ে বাথরুম ধরা, আমার পোষায় না

    শেশ মেশ কি গোসল করা হতো :-B

    জবাব দিন
  2. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    খুব ভালো লাগলো। কলেজেও বিকেলে সবচেয়ে বিষন্ন থাকতাম। সেভেন-এইটে এই সময়টাতেই বাসার কথা সবচেয়ে বেশী মনে পড়তো। জীবনে খুব কম গেম্‌স আওয়ারই যথাযথ কাজে কাটাইছি। তবে লক্ষ্য করতাম, গেম্‌স টাইম ভালো কাটলে পরের গোসল আর মাগরিবের সময়টাও খুব ভালো কাটতো।
    কবিতাগুলা আল্টিমেট। কবিরা অনন্য, কাকেরাও অনন্য। কবিদের অনেক কষ্ট, কাকদেরও অনেক কষ্ট। এগুলা নতুন মনে হলো।

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    টেলিফোনের তারে বসে
    ………………….কাক তুমি কাল
    কত কথা আসে যায়
    ……………..বোঝ না তার বালও
    আহা! কি গুঢ় কথা! কি জীবনবোধ! মানুষ এমন কেমন করে লেখে আমার জানা নেই।

    =)) =)) দারুন হইছে টিটো । সো, ট্রাডিশন বজায় রাইখা :salute:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : দিহান

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।